ভাবিনি কখনও, পৃথিবীটা ঠিক এভাবে থমকে দাঁড়াবে! ব্যস্ত রাস্তায় বাজবে না আর যানবাহনের একটিও হর্নও, টংঘরের টুংটাং ধ্বনি থেমেই যাবে, চায়ের ধোঁয়া দোকানির ঠোঁট রাঙাবে না আর, শপিংমলের ব্যস্ততাটুকু হুট করেই হারাবে দূরে, থেমেই যাবে সব পদচারণা,---কখনও তো এমন ভাবিনি আগে! কোনও দিনই আসেনি মাথায়, পৃথিবী এমন একঘরে হবে, ফুচকার দোকানে থাকবে না ভিড়, রেস্তোরাঁতে কপোত-কপোতীর পড়বে না ছায়া, তিনরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালারা বলবে না আর, ‘মামা, কই যাইবেন?’ কখনও ভাবিই তো নি, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বনের পশুরা নির্ভয়ে নামবে পথদর্শনে, সমুদ্রের পাড়ে ঘন হয়ে উঠবে বেড়ে কত কাঁকড়া, উপকূলীয় পাখির বসত। জানতামই না, মানুষশূন্য সাগর পেয়ে জেগে উঠবে ডলফিনদের অবাধ কেলি, চলবে ওদের নিজের মতো বাঁচতে পারার মহোৎসবের দিবারাত্রি! আহা, সুযোগ পেলে প্রকৃতিও সাজতে পারে এমন রানির মতন! কখনও বুঝিই তো নি, রাস্তায় পেটের দায়ে ঘুরে-বেড়ানো ভিক্ষুকেরও, পুরো একটা পৃথিবীসমান হৃদয় থাকে, মানুষের প্রতি গভীর প্রেমে সারাজীবনের সঞ্চয়টুকু নিঃশর্তে ও নিঃস্বার্থেই বিলোবার মতো তার মনে সে জায়গা রাখে! এই মগজে ধরেই তো নি, খাটের তলায়ও থাকে তেলের খনি, দুর্ভিক্ষেও, কিছু বরাহশাবক চুরি করে ত্রাণ, গুদাম ভরে, বড়ো বড়ো মানুষ বলেই যাদের চিনি, এই দুর্দিনেও, তাদের রক্তে হন্তারক আর লুটেরা কাঁপে! কখনও সময় শেখায় তো নি, যা আছে আমার, তার সবটাই মূল্যবিহীন, আমিই যদি বেঁচে না থাকি! এই জীবনের দাম কী আছে, যদি কারও তা কাজেই না লাগে? এ জীবন কি আর কেবলই আমার নিজের জীবন?