কমিটমেন্ট কিংবা প্রমিজ হলো একপ্রকারের অলিখিত আইন। যে-কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারবেন না, সে কমিটমেন্ট কখনও কাউকে দেবেন না। শেষপর্যন্ত যে-সম্পর্কের পূর্ণতা দিতে পারবেন না, সে সম্পর্কটা অযথা টেনে নিয়ে লম্বা করে দু-জনেরই সময় ও সুযোগ নষ্ট করবেন না। যে-কথা শেষমেশ রাখতে পারবেন না, সেটা আগেই জানিয়ে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন—হোক সেটা প্রেম কিংবা ব্যাবসা। সম্পর্কে স্বচ্ছতা লাগে। আত্মসম্মানবোধ অনেক বড়ো একটা সম্পদ। কারও সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগেই হিসেব করে নিন আপনার পরিবার কিংবা সমাজ মানবে কি না। সম্পর্কের ঘনত্ব বাড়ার পর, অ্যাটাচমেন্ট স্ট্রং হয়ে অপরজন আপনার প্রতি মেন্টালি পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যাবার পর হুট করে আপনার পরিবারের কথা মনে পড়ে যাবে এবং ভাববেন, পরিবার মানবে না। তো প্রেমের শুরুতে আপনার পরিবার ছিল কোথায়? পরের তিতার চাইতে আগের তিতা মিঠা। আপনার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর কারণে হয়তো তার জীবনের অনেক হিসেব বদলে গেছে—তার জীবনে আরও ভালো ভালো অপশন ও সুযোগ হয়তো ছিল, যা আপনার কারণেই সে ত্যাগ করেছে। দেরি হয়ে যাবার পর সরি বলে যে, তাকে বেআক্কেল বলে। কিছু ক্ষতির ক্ষতিপূরণ কখনও কোনো কিছু দিয়েই পূরণ হয় না। যা শেষপর্যন্ত হবে না, তা শুরুতে শেষ করে দিন। নয়তো যা শুরু করেছেন স্বেচ্ছায়, তা শেষটা পর্যন্ত নিয়ে যান চেষ্টায়। আপনি হয়তো পরিবারের কথামতো অন্য কোথাও মনপ্রাণ সংসারে বসিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দেবেন, কিন্তু অপর মানুষটার কী যে ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলেছেন, তার হিসেব করেছেন? আপনার এই আচরণে সে দ্বিতীয় বার কাউকে ভেতর থেকে ভালোবাসতে পারবে না, হয়তো আপনি তার জীবন থেকে চলে যাবেন, কিন্তু মগজে থেকে যাবেন। আপনার জন্যই, তার জীবনে কোনো সঠিক মানুষ এলেও, সে তাকে ভরসা কিংবা বিশ্বাস কোনোটাই করতে পারবে না। একটা চাপা যন্ত্রণা, কলিজায় লেগে-যাওয়া একটা পোড়া দাগ সে সারাজীবন বয়ে চলবে নিভৃতে। বাইরে থেকে দেখাবে সব ঠিকঠাক, কিন্তু আদতে ভেতরে ভেতরে মানুষটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এর পুরো দায় কিন্তু আপনার! ঠোঁটজোড়া পুরোপুরি প্রসারিত করে হা হা করে হাসতে গিয়েও তার মুখে হাসিটা আসবে না। সে আর আগের মতো উচ্ছলতা, উচ্ছ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারবে না। অথচ আপনি না থাকলে তার জীবনটা অন্যরকম হতো। আপনার বদলে তার জীবনে সঠিক মানুষটা আসত। আপনি এসেছিলেন বলেই তার সব শেষ হয়ে গেছে। কারও উপকার না করতে পারুন, অন্তত ক্ষতিটুকু করবেন না; এ নিতান্তই পাপ—অন্তত এমন কারও ক্ষতি করবেন না, যে-মানুষটা আপনাকে পূজা করত, তার জীবনের মূল্যবান সময় আপনাকে দিত, আপনাকে নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করত। আপনি যাকে নরকে অনায়াসে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ছুতো-অজুহাত দেখিয়ে, সে মানুষটাকে হয়তো অন্য কেউ মাথার মুকুট করে রাখত। সম্পর্ক কোনো ঠুনকো বিষয় নয়, মন কোনো খেলনার বস্তু নয়। ন্যূনতম সততা, সামান্য কমনসেন্স প্রতিটি মানুষেরই থাকা উচিত। বস্তায় বস্তায় বইপত্র আর দামি দামি ডিগ্রি নিলেই মানুষ মানুষ কিংবা শিক্ষিত হয়ে যায় না। আপনি অন্য মানুষের প্রতি কতটুকু ন্যায়পরায়ণ, তার উপর নির্ভর করছে আদতে আপনি মানুষ, না কি পশু, সে ব্যাপারটা। পৃথিবীতে এমনিতেই মানুষের সংখ্যা কম। দুনিয়ায় বড়ো বড়ো ডিগ্রিধারী কিংবা দামি দামি মানুষের চেয়ে কাজেকর্মে নীতিবান মানুষেরই প্রয়োজন বেশি। কারণ আপনি যেমন মানুষ, আপনার প্রজন্মও তেমনই হবে। আপনি পশু হলে আপনার প্রজন্ম পশুই হবে, আপনি নীতিবান হলে আপনার প্রজন্মও নীতিবান হতে শিখবে। বড়ো বড়ো ডিগ্রিধারী শিক্ষিত হবার চেয়ে বরং ছোটো ছোটো কমনসেন্সধারী ভালো মানুষ হোন। পৃথিবীতে পশুর অভাব নেই, কেবল মানুষেরই অভাব। মানুষ হবার প্রতিযোগিতায় নামুন—ওখানে প্রতিযোগী কম।