আমি গত কয়েকদিন ধরে কিছু অ্যাকাডেমিক নোট আর ওয়ার্কশিট দিচ্ছি। বেশ কিছু প্রশ্ন আর আবদার পেয়েছি। যেমন…….
# উত্তর কই পাবো?
নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। উত্তর তৈরি করার সময় দিতে পারব না, তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। (আমি ‘খাইট্টা খা’ নীতিতে বিশ্বাসী!)
# উত্তর না দিলে এসব দিয়ে লাভ কী?
আমি আপনার লাভের জন্য দিচ্ছি না, যারা পরিশ্রম করতে পারবে, তাদের লাভের জন্য দিচ্ছি।
# উত্তর দিলে সমস্যা কী?
আমি এসব ওয়ার্কশিট আমার কোচিংয়ে সলভ করাতাম। হোমওয়ার্ক দিতাম, স্টুডেন্টরা করে নিয়ে আসতো। এরপর আমি ক্লাসে প্রত্যেকটা ধরে-ধরে গ্রামাটিক্যাল নিয়মসহ বুঝিয়ে দিতাম। এর সাথে একইরকম কয়েকটা একজাম্পল করাতাম। আমি গ্রামার শেখাতাম একজাম্পল দিয়ে। আমার নিজের জন্য সল্যুশন শিট লাগত না, ওদের জন্যও লাগত না, কারণ, আমি ক্লাসে প্রত্যেকটা বুঝিয়ে-বুঝিয়ে করিয়ে দিতাম।
# উত্তর না দিলে এসব জিনিস দেয়ার দরকার নেই।
আমি কি আপনাকে বাসায় গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এনেছি আমার এসব ফালতু জিনিস পড়ার জন্য? নাকি বলেছি, আমার পোস্ট না পড়লে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে?
# এসব জিনিস ম্যাট্রিক-ইন্টারের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন?
ঠিক না নয়। আমি যা পড়াতাম, এর বড়োজোর ১০% এখানে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। অন্তত ৩টা টেস্টপেপারস সলভ করাতাম, যেটা ওয়ার্কশিট আকারে দেয়া সম্ভব হয়নি। ৪-৫টা বই সলভ করাতাম। অসংখ্য বিদেশি লেখকের গ্রামার বই থেকে এক্সারসাইজ করাতাম।
# উত্তরগুলি দিলে স্টুডেন্ট পড়াতে একটু সুবিধা হতো।
যে জিনিস আপনি নিজে পারেন না, সেটা স্টুডেন্টকে না পড়ানোই তো ভাল!
# স্টুডেন্টরা এসব কঠিন-কঠিন জিনিস আসলেই পড়ত?
না, পড়ত না। মোটিভেট করে, বকাঝকা করে কিংবা পিটিয়ে পড়াতাম। স্টুডেন্ট নিজ থেকেই পড়বে, এটা আশা করে স্টুডেন্ট পড়াতাম না। আমি স্টুডেন্টদেরকে আছাড় মেরে-মেরে পড়ানোয় বিশ্বাসী।
# ওয়ার্কশিট তৈরি করার সময় কী কী জিনিস মাথায় রাখতেন?
আমার চাইতে বেশি প্র্যাকটিস চট্টগ্রামে আর কেউ করাবে না, এই চ্যালেঞ্জটা মাথায় রেখে পড়াতাম। আর মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ভার্সিটি অ্যাডমিশন টেস্টে কাজে লাগবে, এমন জিনিসও সিলেবাসে না থাকলেও পড়িয়ে দিতাম। ওগুলি পড়ানোর সময় কষ্ট করে যা করতে হত, তা হল, ওদেরকে বিশ্বাস করিয়ে দেয়া, ওরাও পারবে। ওই বয়সটা স্যারদের কথা বিশ্বাস করার বয়স। ওতে কাজ হত, ওদের দিয়ে পরিশ্রম করিয়ে নিতে পারতাম। শুধু মার্কস পাওয়ানোর জন্য নয়, কিছু শেখানোর জন্যও স্টুডেন্ট পড়াতাম।
# আমার অমুক প্যারাগ্রাফ/ রচনা কিংবা তমুক জিনিসের নোটটা লাগবে। একটু করে দেবেন কষ্ট করে?
কী যে বলেন ভাই! কষ্ট কীসের? আর কী কী লাগবে, প্লিজ বলেন! আপনার কোনও ফ্রেন্ডের কোনও ফরমায়েশ থাকলেও বলতে পারেন।
# সবকিছু একসাথে প্রিন্ট করে আমাকে একটা হার্ডকপি পাঠিয়ে দেয়া যাবে? আমি প্রয়োজনে প্রিন্ট আর ক্যুরিয়ার চার্জ পে করবো।
আরে ভাই! কী যে বলেন না আপনি! খালি লজ্জা দেন! পাঠাবো কেন? আপনার বাসার ঠিকানা দেন, আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসব! আমাকে গাড়িভাড়া দিতে হবে না, শুধু একবেলা ভাত খেতে দিয়েন।
# আমি আপনার কাছেই থাকি। আপনি কখন ফ্রি থাকেন, যদি বলতেন, আপনার বাসায় গিয়ে কিছু প্রবলেম সলভ করিয়ে নিয়ে আসতাম।
তারচে’ বরং আপনার ঠিকানাটা দেন, সময় থাকতে আপনার কাছ থেকে দৌড়ে পালাই।
# আপনার সব শিট একসাথে পিডিএফ করে আমার ইমেইলে পাঠিয়ে দিন। আমার ইমেইল অ্যাড্রেস: ……..
(মেসেজ সিন অ্যান্ড ডিলিটেড)
# আপনার কাজকাম নাই?
আছে তো, এই যে এইমাত্র আপনাকে ব্লক মারার কাজটি করলাম!
# এত ধৈর্য কোত্থেকে পান?
হাওয়া থেকে।
# আপনি আসলেই চাকরি করেন? চাকরি করে এত কাজ করা কীভাবে সম্ভব?
জ্বি ভাই, করি। করতে হয়, গরীবের ছেলে তো! সম্ভব দুইভাবে: আন্তরিকতা থাকলে, আর একই সময়ে অন্যদের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ কাজ করার ইচ্ছে থাকলে কিংবা কৌশল জানা থাকলে।
# স্টুডেন্টদেরকে ওরকম কঠিন-কঠিন নোট দিতেন কেন? শেখানোর জন্য? নাকি, নিজেকে জাহির করার জন্য?
দুটোই!
# আপনার কি আবার কোচিং খোলার ইচ্ছে আছে বলে এসব দিচ্ছেন?
না ভাই! কোচিংয়ে যারা পড়ান, তাদের বেশিরভাগই আমার স্টুডেন্ট কিংবা স্টুডেন্টতুল্য। স্টুডেন্টের সাথে কম্পিটিশন করার মত খারাপ অবস্থায় আমি এখনও পড়িনি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।
# অনেক একজাম্পলের স্ট্রাকচার বইতে নেই। ওটা কোথা থেকে পাবো?
সবকিছুই বইতে আছে। তবে বাজারের প্রচলিত বইতে নেই, সেটা হতে পারে। আপনি নেটে সার্চ করেও অনেক আনসার পেয়ে যাবেন।
# অমুক-অমুক জিনিস লাগবে। দিন!
আমি শুধু দুটো জিনিস দেবো: যা যা আমার সংগ্রহে আছে। যা যা আমার দিতে ইচ্ছে করবে। বাড়তি কিছু চাহিয়া লজ্জিত হইবেন না।
হ্যাপি রিডিং!!