আমি




আমি সঁপে দিই নিজেকে—
টুকরো টুকরো হয়ে।
এক বার নয়—
বার বার, পুনঃপুনঃ।

শব্দহীন মুহূর্তগুলোয়,
যা কেউ দেখে না...
যখন নিঃশ্বাস চেপে ধরি
আকস্মিক প্রতিক্রিয়ার আগে।
ছোটো ছোটো নীরব মৃত্যুতে,
যা মুক্তির মতো দেখায় না—
তবুও মুক্তিই।

আমি গর্ব সঁপে দিই,
যখন অন্যের সত্য
আমি নিজের মতো করে শুধরে দিই না—
যদিও ভেতরে ভেতরে আমি একমত নই।

আমি ভয় সঁপে দিই
যখন কাঁপা হাতে মিটিং-এ হাজির হই,
হৃদয় তবুও উজাড় করে দিই—
কারণ, জানি,
আরেকজন হয়তো নিরাপদে ভেঙে পড়তে চায়।

আমি সঁপে দিই নিজেকে,
যখন অন্যের কাছে আমার ব্যথা স্বীকার করি,
যদিও পুরোনো আমি-টা চাইত—
হেসে বলতে, “আমি ভালো আছি।”
কিন্তু এখন জানি—
অনুভূতি মুখ না খুললে
তার মাশুল কী হতে পারে।

আমি নিয়ন্ত্রণ সঁপে দিই,
যখন ট্রাফিকে বসে থাকি।
এবং, যে আমাকে কাটিয়ে যায়,
তাকে অভিশাপ দিই না।

যখন আমার ছেলে বলে—
সে আমাকে ঘৃণা করে, আর কখনও দেখতে চায় না—
তখন আমি তা ব্যক্তিগতভাবে নিই না।
কারণ, জানি,
অতিরিক্ত অনুভূতিকে প্রকাশ করতে না-পারার অভিজ্ঞতা কেমন।

আমি সঁপে দিই সেই মানুষটিকে,
যে আর হতে চাই না আমি—
প্রতিবার যখন ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত রই;
প্রতিবার যখন থেমে যাই
“যথেষ্ট” হবার অনুমতি চাওয়ার ভিখিরি হয়ে;
যখন বুঝতে পারি—
আমাকে অনুমোদন দেবার একমাত্র মানুষ
আয়নায়-তাকানো সেই আমিই!
যখন থেমে যাই—
মূল্যবোধকে বেছে নিই, স্বীকৃতির বদলে।

আমি সঁপে দিই নিজেকে,
যখন অতীতে ডুব দিই
এবং, চোখ ফিরিয়ে নিই না।
যখন শোকে বিহ্বল হয়ে সোফায় জায়গা দিই
না জিজ্ঞেস করে—সে কবে যাবে।
যখন বসি তার পাশে—
যে-ছেলেটিকে আমি ফেলে এসেছিলাম।
যখন নিজেকে ক্ষমা করি
সেই আমি না-হবার জন্য,
আজ যে আর নেই।
যখন আনন্দকে ঢুকতে দিই
তার পকেট খুঁজে না দেখেই।

এসব নিখুঁত কিছু নয়।
সুন্দরও নয়।
এ সবই গভীরভাবে, ভয়ংকরভাবে মানবিক।
এ হলো—
কাউকে হেঁটে চলে যেতে দেখা
এবং, পেছনে না দৌড়োনো।
এ হলো—
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে
ছুরিটা আঁকড়ে ধরা...
যতক্ষণ না ক্রোধ নিঃশ্বাসে মিশে শান্ত হয়।

এ সবই সাধারণ ঘটনা—
কিন্তু অসাধারণ সাহস দাবি করে।
ফোন করা।
অস্বস্তিকর নীরবতা মেনে নেওয়া।
নিজের কাজের দায় স্বীকার করা,
ক্ষমা চাওয়া—
প্রত্যুত্তরে ক্ষমা আশা না করেই।

এ হলো—
প্রত্যেক বিশ্বাস আর চতুর ধারণা ছেড়ে দেওয়া;
যেগুলো, ভেবেছিলাম, আমাকে রক্ষা করবে,
কিন্তু কেবল আমাকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল।

আমি পৌঁছোই না।
আমি অতিক্রম করি না।
আমি মরতে থাকি—
প্রতিদিন, অল্প অল্প করে—
যে-আমি আমি নই,
তার সবটুকুকে ফেলে দিয়ে।

আর আশ্চর্যের বিষয়,
এই নীরব খোলস ছাড়ার মধ্যে
কিছু সুন্দর জন্ম নেয়।
কিছু শেকড়-গাড়া দৃঢ়তা, সত্য।
এ কোনো ভালো কিংবা মন্দ সংস্করণ নয় আমার—
এ শুধুই আমি,
শব্দহীন, কলহহীন।
এবং, সেটাই…
সেটাই সবসময় যথেষ্ট ছিল।