অবিদ্যা-বিদ্যা: ৮৮



কাশ্মীর শৈব দর্শনে অব্যক্ত শূন্যতা (Śūnyatā) এক গভীর, জীবন্ত এবং নীরব বাস্তবতা—যা প্রচলিত “শূন্য” ধারণার মতো কোনো অভাব বা অনস্তিত্ব নয়, বরং চেতনার সর্বোচ্চ পূর্ণতা ও পরিপূর্ণ উপস্থিতি। এখানে “শূন্যতা” বলতে বোঝানো হয় সেই পরম, সীমাহীন, অচল ও আত্মজাগ্রত চৈতন্যকে—যা সব নাম, রূপ, কাল ও স্থান থেকে মুক্ত, অথচ সব কিছুর অন্তর্নিহিত উৎস ও আধার।

অদ্বৈত কাশ্মীর শৈবধর্ম, বিশেষত ত্রিক দর্শন, ঘোষণা করে যে, শূন্যতা হলো পরমশিব (Paraśiva)-এর স্বরূপ—সেই অসীম চিদাকাশ, যেখানে সমস্ত জগৎ, চিন্তা ও শক্তি এক ক্ষণস্থায়ী স্পন্দনমাত্র। এই শূন্যতা কোনো “Nothingness” নয়; এটি সেই “Everythingness without form”, যেখানে সব কিছু আছে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সীমানায় নয়। এটি হলো চেতনার অন্তর্গত পূর্ণ নীরবতা (Plenum of Consciousness)—এক অনন্ত সম্ভাবনার গর্ভ, যেখান থেকে সমস্ত সৃষ্টি উদ্ভূত হয়, আবার যেখানে সব কিছু বিলীন হয়ে যায়।

এ এমন এক অবস্থা, যেখানে চেতনা নিস্তব্ধ, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেই সব কিছুর সম্ভাবনা বিদ্যমান। অর্থাৎ, এটি কোনো শূন্য বা মৃত নীরবতা নয়, বরং জীবন্ত, সৃষ্টিশীল নীরবতা—যেমন বীজের মধ্যে সমগ্র গাছের সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে, তেমনি এই চেতনার নিঃশব্দ গভীরে সমগ্র সৃষ্টি লুকিয়ে আছে।

“অনন্ত সম্ভাবনার গর্ভ” বলতে বোঝায় যে, এই নীরব চেতনা থেকেই সমস্ত চিন্তা, শক্তি, রূপ ও জগতের উদ্ভব ঘটে। যখন সৃষ্টি প্রকাশ পায়, তখনও তার ভিত্তি এই নীরব চেতনা—আর যখন সৃষ্টি বিলীন হয়, তখনও তা এই চেতনার মধ্যেই ফিরে যায়। একটি উপমায় বলা যায়—যেমন সমুদ্রের তলদেশ স্থির, অথচ তার উপরে ঢেউ ওঠে-নামে, তেমনি চেতনার এই পূর্ণ নীরবতা থেকে সমস্ত সৃষ্টি-প্রপঞ্চ উঠে আসে এবং পুনরায় তাতেই মিলিয়ে যায়। এ হলো সেই অচঞ্চল, পরিপূর্ণ, নিঃশব্দ চেতনা, যা নিজের মধ্যেই সব সম্ভাবনা ধারণ করে, কিন্তু নিজে কখনও পরিবর্তিত বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।

পরমশিব (Paraśiva)—শৈব দর্শনের, বিশেষত কাশ্মীর শৈবধর্মের (ত্রিক-Trika / প্রত্যভিজ্ঞা-Pratyabhijñā) চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ বাস্তবতা। তিনি সেই একক, চিরন্তন চেতনা, যা একই সঙ্গে স্থির ও গতিশীল, শূন্য ও পরিপূর্ণ, অব্যক্ত ও প্রকাশিত। তিনি ব্যক্তিগত দেবতা নন, বরং সমস্ত অস্তিত্বের আধ্যাত্মিক ভিত্তি—নিজের আলো দ্বারা নিজেকে এবং জগৎকে প্রকাশ করেন, আবার সেই আলোতেই সব কিছু বিলীন হয়।

কাশ্মীর শৈব দর্শন বলে, পরমশিবের প্রকৃতিকে বুঝতে হলে তাঁকে দুই পরিপূরক দিক থেকে দেখতে হয়—বিশ্বাতীত (Transcendent) ও বিশ্বময় (Immanent)।

বিশ্বাতীত রূপে পরমশিব নির্গুণ, নিরাকার, অব্যক্ত—সব গুণ, নাম, রূপ, কাল, দেশ, ক্রিয়া, সীমা থেকে মুক্ত। তিনি চরম নীরবতা, এক অব্যক্ত শূন্যতা (Śūnyatā)—যা বৌদ্ধ শূন্যতার মতো শূন্যতার অনস্তিত্ব নয়, বরং অনন্ত সম্ভাবনার পূর্ণতা, এক নিঃশব্দ চেতনার গর্ভ। এই স্তরে তিনি পরব্রহ্মের সমার্থক—চিরস্থির, নিস্পন্দ চৈতন্য, যিনি নিজেই অস্তিত্বের আধার।

কিন্তু বিশ্বময় রূপে সেই একই পরমশিব নিজের শক্তি (Śakti) রূপে প্রকাশিত হন। শক্তিই শিবের আত্ম-প্রকাশ—তাঁর দীপ্তি, তাঁর সৃজনশীল উচ্ছ্বাস। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়—সবই এই শক্তির মধ্য দিয়ে ঘটে। তাই পরমশিব একই সঙ্গে নির্গুণ ও সগুণ, অব্যক্ত ও প্রকাশমান। তাঁর এই দ্বৈততা কোনো বিভাজন নয়; এটি চেতনার দুই দিক—নীরব স্থিতি ও সৃষ্টিশীল স্পন্দন, যা অবিচ্ছেদ্য।

কাশ্মীর শৈবধর্ম এই দ্বৈততাকে একতায় রূপান্তরিত করেছে ত্রিক তত্ত্বে, যেখানে পরমশিবের তিনটি মৌলিক দিক ধরা হয়েছে—প্রকাশ (Prakāśa), বিমর্শ (Vimarśa), ও স্বাতন্ত্র্য (Svātantrya)। প্রকাশ হলো সেই পরম দীপ্তি, যা নিজেই সব আলো ও জ্ঞানের উৎস; বিমর্শ হলো চেতনার আত্ম-অনুধ্যান—চেতনা নিজের সম্পর্কে সচেতন; আর স্বাতন্ত্র্য হলো শিবের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, যার দ্বারা তিনি নিজেকে নানা রূপে প্রকাশ করেন।

প্রকাশ মানে “আলো”—চেতনার সেই দীপ্ত স্বরূপ, যা কোনো বস্তু নয়, বরং সমস্ত বস্তুর অভ্যন্তরস্থ আলোক। যেমন সূর্য নিজের আলোয় জগৎকে দৃশ্যমান করে কিন্তু নিজে অপরিবর্তিত থাকে, তেমনি প্রকাশ হলো শিবের স্বরূপ—নিষ্কলঙ্ক, নিস্পন্দ চৈতন্য, যা সর্বদা জেগে থাকে।

বিমর্শ মানে “আত্ম-অনুধ্যান”—চেতনা নিজেই নিজের উপস্থিতি জানে। প্রকাশ যদি বলে, “আমি আছি,” তবে বিমর্শ বলে, “আমি জানি যে, আমি আছি।” এই আত্মসচেতনতা ছাড়া চেতনা জড় হয়ে যেত; তাই বিমর্শ চেতনার গতিশীল শক্তি। কাশ্মীর শৈব দার্শনিকরা বলেন—প্রকাশ ও বিমর্শ অবিচ্ছেদ্য, যেমন আগুন ও তার তাপ, সূর্য ও তার আলো। প্রকাশ হলো শিবের স্থির দিক, বিমর্শ হলো শক্তির গতিশীল দিক; একে অপর ছাড়া তারা অসম্পূর্ণ।

এই দুইয়ের ঐক্যই পরমশিব—যেখানে চেতনা নিঃসচেতন নয়, বরং আত্ম-সচেতন; নীরব নয়, বরং সৃষ্টিশীল। এই ধারণা মহামনীষী অভিনবগুপ্তের তন্ত্রালোক (Tantrāloka)-এ (১.৮২-৮৩) বলা হয়েছে: “প্রকাশ-বিমর্শ-ময় এব হি পরমশিবঃ” অর্থাৎ, "প্রকাশ (আলো) এবং বিমর্শ (প্রতিফলন বা শক্তি) স্বরূপই হলেন পরমশিব।" প্রকাশ ও বিমর্শ—এই দুইয়ের ঐক্যই পরমশিব।

এটি কাশ্মীর শৈবধর্মের ত্রিকা দর্শনের একটি মূল সূত্র, যা পরমশিবের (Paraśiva) স্বরূপকে সংক্ষেপে বর্ণনা করে। এই উক্তিটি অদ্বৈত শৈববাদের চূড়ান্ত সত্যের (Parama Satya) প্রকৃতি প্রকাশ করে, যেখানে কোনো দ্বৈততা বা বিচ্ছেদ নেই। পরমশিবের এই স্বরূপ দুটি অবিচ্ছেদ্য দিক নিয়ে গঠিত:

১. প্রকাশ (Prakāśa বা স্থির জ্ঞান): এটি হলো শিবের নিষ্ক্রিয়, স্থির (Static), অসীম এবং বিশুদ্ধ চৈতন্য বা জ্ঞান। এটি হলো সেই আলো, যা সবকিছুকে আলোকিত করে, কিন্তু নিজে অপরিবর্তিত থাকে। এটিই শিবের "অহং" (আমি) অংশ। এটি অনেকটা দর্পণের মতো—যা স্থির, কিন্তু সমস্ত প্রতিবিম্বকে প্রকাশ করে।

২. বিমর্শ (Vimarśa বা সক্রিয় শক্তি): এটি হলো শিবের সক্রিয়, গতিশীল (Dynamic) এবং সৃজনশীল ক্ষমতা বা ইচ্ছাশক্তি (Svātantrya)। এই শক্তিই প্রকাশকে প্রতিফলিত করে, তাকে প্রকাশিত করে এবং নিজেকে জগৎ-রূপে উন্মোচিত করে। এটি হলো শিবের "ইদং" (এই জগৎ) অংশ। এ হলো দর্পণের প্রতিফলন ক্ষমতা—যা প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে।

এই সূত্রটি জোর দিয়ে বলে যে, শিব এবং শক্তি (প্রকাশ ও বিমর্শ) ভিন্ন নয়, বরং একই সত্তার দুটি অবিচ্ছেদ্য দিক। যেমন—অগ্নি (প্রকাশ) এবং তার দাহিকা শক্তি (বিমর্শ) আলাদা করা যায় না, তেমনই শিব ও শক্তিও অবিচ্ছেদ্য। এই প্রকাশ-বিমর্শের সমন্বিত রূপটিই হলো "চেতনার ধনাত্মক পূর্ণতা" (Positive Plenitude), যা থেকে সমস্ত সৃষ্টি লীলাচ্ছলে উদ্ভূত হয় এবং যেখানে সব কিছু ফিরে যায়। জীবাত্মাকে এই প্রকাশ-বিমর্শের একত্ব উপলব্ধি করার মাধ্যমে তার অন্তর্নিহিত শিব-স্বরূপকে স্বীকৃতি দিতে হয় (প্রত্যভিজ্ঞা), যা মোক্ষলাভের পথ।

উৎপলদেবের ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞা (Īśvarapratyabhijñā) গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের পঞ্চম আহ্নিকের অষ্টম শ্লোকটি হলো—

নান্তর্বেদ্যবহিঃসত্ত্বং নাত্মনঃ ক্বচিদস্য হি।
দস্যাসংভবঃ কিঞ্চিদ্বেদ্যতাং তেন নাত্মনঃ।। (ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞা, ১.৫.৮)

অর্থাৎ, আত্মার মধ্যে বা বাইরে কোথাও এমন কোনো সত্তা নেই, যা এই আত্মার থেকে ভিন্ন। যেহেতু (ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের) ভেদের কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই আত্মা কোনো বস্তুরূপে জানার বিষয় (জ্ঞেয়) হতে পারে না।

এই শ্লোকটি অদ্বৈত শৈব দর্শন এবং প্রত্যভিজ্ঞা (Recognition) মতবাদের মূল যুক্তিকে তুলে ধরে:

আত্মার অদ্বৈততা: চরম সত্য (শিব) এক এবং অদ্বিতীয়। জীবাত্মার বাইরে বা ভিতরে কোনো ভিন্ন সত্তা নেই।

জ্ঞেয়ত্ব অস্বীকার: যেহেতু আত্মা নিজেই সর্বব্যাপী, তাই তিনি কোনো সীমিত জ্ঞেয় বস্তু (Object of Knowledge) হতে পারেন না। যদি তিনি জ্ঞেয় হতেন, তবে তা তাঁর অসীম (অনন্ত) স্বরূপকে সীমিত করে দিত।

মুক্তির পথ: এই শ্লোকটি প্রতিষ্ঠিত করে যে, ব্রহ্মকে সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমে 'জানা' (know) সম্ভব নয়, বরং 'স্বীকৃতির' (Recognition/Pratyabhijñā) মাধ্যমে তাঁকে উপলব্ধি করতে হয়। এই উপলব্ধিই প্রমাণ করে যে 'আমিই শিব'।

কাশ্মীর শৈবধর্মের ত্রিকা দর্শনের একটি মূল নীতি, যা শিবের শক্তি-কে বর্ণনা করে: “বিমর্শ-রূপা হি শক্তির্ ঈশ্বরস্য স্বভাবঃ” অর্থাৎ, "বিমর্শ-স্বরূপাই হলেন ঈশ্বরের (শিবের) শক্তি, যিনি তাঁর স্বভাব।" এই সূত্রটি কাশ্মীর শৈবধর্মের সর্বোচ্চ বাস্তবতা পরমশিব (Paraśiva)-এর প্রকৃতির একটি চূড়ান্ত বিবৃতি। এটি শিব এবং শক্তি-র অভিন্নতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

১. ঈশ্বর (Īśvara): এখানে ঈশ্বর বলতে পরম, স্থির এবং বিশুদ্ধ জ্ঞানস্বরূপ শিবকে বোঝানো হয়েছে, যাঁকে প্রকাশ (Prakāśa) বলা হয়।

২. বিমর্শ (Vimarśa): এটি হলো শিবের অভ্যন্তরীণ সক্রিয়তা, প্রতিফলন, ইচ্ছাশক্তি (Svātantrya), এবং সৃজনশীল ক্ষমতা। এটি হলো এমন শক্তি, যা শিবকে নিজেকে জানতে এবং জগৎ রূপে প্রকাশিত করতে সক্ষম করে। এটি কোনো অচেতন শক্তি নয়, বরং স্বয়ং চেতনা (Cit)-এরই গতিশীল দিক।

৩. স্বভাব (Svabhāva): এই শব্দটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ হলো অন্তরঙ্গ প্রকৃতি বা মৌলিক ধর্ম।

শিব এবং তাঁর শক্তি আলাদা কোনো সত্তা নন। শিবের পক্ষে তাঁর সৃজনশীল এবং সক্রিয় ক্ষমতা (বিমর্শ) ছাড়া থাকা অসম্ভব, ঠিক যেমন আগুনের পক্ষে দাহিকা শক্তি ছাড়া থাকা অসম্ভব। বিমর্শই হলো শিবের প্রকৃতি। এই গতিশীল শক্তি (বিমর্শ) ছাড়া স্থির জ্ঞান (প্রকাশ) কেবল 'আলো' (Light) হয়ে থাকত; কিন্তু বিমর্শ সেই আলোকে 'জানার আলো' (Self-awareness) এবং 'সৃষ্টির আলো'-তে পরিণত করে। বিমর্শই ঈশ্বরের প্রকৃতি, কারণ সেটিই তাঁকে আত্মজ্ঞ করে তোলে।

কাশ্মীর শৈবধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ চিদ্গগনচন্দ্রিকা (Cidgaganacandrikā)-তেও (শ্লোক ১.৫) বলা হয়েছে—

তত্র পদ্ম-রুচি-বেদ্য-মণ্ডলে স্বাদুনি প্রকটম্ এয়্যিবান্ লয়ম্
মায়য়াম্বপুরুষো নিমিলিতঃ
ত্বদ্ধিয়োন্নমিষতি বিদ্যয়াবৃতঃ।

(সেই পদ্ম-রুচির মতো সুন্দর এবং স্বাদু (আনন্দময়) বেদ্য মণ্ডলে (জ্ঞেয় কেন্দ্রে, বা চেতনার ক্ষেত্রে) প্রকাশিত হয়েই লীন হন (বা প্রকাশ পান)।)
(হে অম্বা (দেবী/শক্তি), (এই কারণে) পুরুষ (জীবাত্মা) মায়া দ্বারা নিমীলিত (চোখ বন্ধ) হয়ে আছেন,)
(কিন্তু আপনার (শিবের) বিদ্যা বা জ্ঞান দ্বারা আবৃত হয়ে তিনি উন্মীলিত (চোখ খোলেন/মুক্ত হন)।)

অর্থাৎ, "সেই আনন্দময় ও সুন্দর জ্ঞানময় মণ্ডলে (পরমশিবের চৈতন্যে), জীবাত্মা প্রথমে প্রকাশিত হয়ে বিলীন থাকেন। কিন্তু মায়ার প্রভাবে সেই পুরুষ (জীবাত্মা) চোখ বন্ধ করে থাকে (অজ্ঞানতা লাভ করে); আর হে অম্বা (দেবী), আপনার বিদ্যা বা জ্ঞান দ্বারাই আবৃত হয়ে সে চোখ খোলে (মুক্তি লাভ করে)।" সংক্ষেপে, প্রকাশ ও বিমর্শের যুগল নৃত্যের মধ্য দিয়েই শিবের জাগরণ ও সৃষ্টি সম্পন্ন হয়।

এই শ্লোকটিতে মুক্তি (মোক্ষ) এবং বন্ধন—এই দুটি অবস্থার মূল কারণকে চেতনার দুটি দশা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই শ্লোকটি কাশ্মীর শৈবধর্মের মূলনীতি অর্থাৎ শিব ও শক্তির দ্বৈত ভূমিকা প্রকাশ করে:

১. মায়াই বন্ধন: জীবাত্মা হলো মূলত শিব-স্বরূপ। কিন্তু শক্তি (মায়া) যখন নিজেকে গোপন করেন, তখন পুরুষ (জীব) অজ্ঞান হয়ে যায়—এটিই হলো চোখ বন্ধ থাকা (নিমীলিত) বা বন্ধন (Bandha)।

২. বিদ্যাই মুক্তি: মুক্তি হলো কোনো নতুন সৃষ্টি নয়। যখন সেই শক্তি নিজেই নিজেকে প্রকাশ করেন (বিদ্যা), তখন জীবাত্মার চোখ খুলে যায়—এটিই হলো উন্মীলিত হওয়া বা মুক্তি (Mukti)।

শিবের শক্তি একদিকে মায়া রূপে বন্ধন ঘটায়, আবার অন্যদিকে বিদ্যা রূপে মুক্তিও ঘটায়। মুক্তি হলো নিজের অন্তর্নিহিত শিব-স্বরূপকে স্বীকৃতি (প্রত্যভিজ্ঞা) দেওয়া।