অবিদ্যা-বিদ্যা: ৫২




রমণ মহর্ষির ব্যাখ্যা “সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”-এর প্রাচীন বেদান্তীয় ভাবকে একটি নতুন, জীবন্ত দার্শনিক অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করেছিল। তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে, এটি কেবলমাত্র একটি তত্ত্ব বা দর্শন ছিল না, বরং চেতনার অন্তর্লীন ও চিরন্তন সত্য। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, আত্ম-উপলব্ধি কোনো বাহ্যিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল নয়, ঠিক যেমন সূর্য নিজেকে আলোকিত করার জন্য অন্য কোনো আলোর উপর নির্ভর করে না। সূর্য স্বতঃপ্রকাশ, এবং একইভাবে আত্মাও স্বতঃপ্রকাশ। নিজেকে জানার জন্য কোনো বাহ্যিক প্রমাণ, সাধনা বা কৃত্রিম জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। জ্ঞান তখন আর কষ্টার্জিত অর্জন নয়, বরং নিজের প্রকৃত সত্তার প্রকাশ—একটি আচ্ছাদনমুক্ত, স্বতঃস্ফূর্ত উদ্‌ভাস যা চিরন্তন সত্যকে উন্মোচন করে।


এই মর্মার্থকে আরও স্পষ্ট করে রমণ মহর্ষি বলেছিলেন, “To see the world as separate from you is ignorance; to see the world as yourself is liberation.” অর্থাৎ, যখন আমরা বিশ্বকে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন বা পৃথক সত্তা হিসেবে দেখি, তখন তা অজ্ঞানতার প্রকাশ। এই অজ্ঞানতা দ্বৈততার জন্ম দেয়, যেখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়, দ্রষ্টা ও দৃশ্য—এই বিভেদ বিদ্যমান থাকে। কিন্তু যখন আমরা বিশ্বকে নিজেদেরই সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে দেখি, নিজেদেরই আত্মার প্রতিচ্ছবি হিসেবে অনুভব করি, তখন তা মুক্তির পথ খুলে দেয়। এই মুক্তি কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং এক সর্বজনীন ঐক্যের উপলব্ধি, যেখানে সমস্ত ভেদাভেদ বিলীন হয়ে যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, প্রতিটি জীব, প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি ঘটনা আমাদেরই অংশ, আমাদেরই আত্মার স্পন্দন।


এভাবেই রমণ মহর্ষির দৃষ্টিতে “Sarvam Khalvidam Brahma”—এই একটি বাক্যই জ্ঞান, করুণা ও মুক্তির এক পূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।


প্রথমত, এটি এই মহৎ জ্ঞানকে নির্দেশ করে যে, সব কিছুই এক, কোনো মৌলিক বিভেদ নেই। এই উপলব্ধিতে পৌঁছানো মানেই সত্যকে জানা, যা সমস্ত দার্শনিক বিতর্ক ও দ্বৈতবাদকে অতিক্রম করে যায়।


দ্বিতীয়ত, এই বাক্যটি অপার করুণার উৎস। যখন সব কিছুই এক, তখন অপরের মধ্যে নিজেকে দেখা সহজ হয়। অপরের দুঃখ নিজের দুঃখ বলে অনুভূত হয়, অপরের আনন্দ নিজের আনন্দ হয়। এই ঐক্যবোধ থেকেই নিঃস্বার্থ প্রেম ও করুণার জন্ম হয়, যা সমস্ত জীবের প্রতি প্রসারিত হয়।


তৃতীয়ত, এটি মুক্তির চূড়ান্ত পথ। পৃথকতার ধারণা, অর্থাৎ নিজেকে বিশ্ব থেকে আলাদা ভাবার যে ভ্রান্ত ধারণা, তার সমাপ্তি ঘটানোই মুক্তি। এই মুক্তি কেবল ভৌতিক বা মানসিক বন্ধন থেকে মুক্তি নয়, বরং অহংবোধের বিলুপ্তি এবং এক অদ্বৈত সত্তার সাথে একাত্ম হওয়া। এই অবস্থায় কোনো ভয়, উদ্‌বেগ বা সীমাবদ্ধতা থাকে না, কেবল অনন্ত শান্তি ও পূর্ণতার অভিজ্ঞতা হয়।


রমণ মহর্ষি এই তিনটি ধারণাকে একটি অবিচ্ছেদ্য সূত্রে বেঁধেছিলেন, যা আত্ম-অনুসন্ধান ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির এক গভীর পথ নির্দেশ করে।


“একমেবাদ্বিতীয়ম্” (Ekam Evādvitīyam)—অদ্বৈত বেদান্তের মূলস্তম্ভ এবং ছান্দোগ্য উপনিষদের (৬.২.১) একটি মহামন্ত্র, যার অর্থ—“একই, কেবল সেই এক, দ্বিতীয় কিছুই নেই।” এই একটিমাত্র বাক্যেই সমগ্র অদ্বৈত দর্শনের সারসংক্ষেপ নিহিত রয়েছে।


ঋষি উদ্দালক আরণি তাঁর পুত্র শ্বেতকেতুকে ব্রহ্মতত্ত্ব শেখাতে গিয়ে বলেন—“সদ্ এভ সোম্য ইদমগ্র আসীত্ একম্ এভ অদ্বিতীয়ম্”—“হে সোম্য (শ্বেতকেতু)! এই জগৎ সৃষ্টির আগে কেবল ‘সৎ’ অর্থাৎ অস্তিত্ব ছিল; সে ছিল এক এবং অদ্বিতীয়।”


এই মন্ত্রে চারটি শব্দে সম্পূর্ণ বেদান্তীয় মর্ম প্রকাশিত—সৎ (Sat) মানে অস্তিত্ব, যা চিরন্তন; একম্ (Ekam) মানে সেই অস্তিত্ব একমাত্র; এব (Eva) মানে শুধু, কেবল, অনন্যমাত্রে; আর অদ্বিতীয়ম্ (Advitīyam) মানে যার দ্বিতীয় নেই, যার সমান বা বিপরীত কিছুই নেই।


অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে, যখন কিছুই ছিল না—না নাম, না রূপ, না স্থান—তখনও এক চেতনা ছিল, যাকে উপনিষদ বলে “সৎ”। সেই সত্তাই এই সৃষ্টির উপাদান, কর্তা এবং পরিণতি—তিনই। যেমন স্বর্ণ থেকে নানান অলংকার সৃষ্টি হলেও, সবই স্বর্ণ—তেমনি ব্রহ্ম থেকেই জগৎ, কিন্তু শেষপর্যন্ত সবই ব্রহ্ম।


এই বাক্যের দার্শনিক তাৎপর্য গভীর। প্রথমত, এটি ঘোষণা করে যে, ব্রহ্ম একমাত্র সত্য—জগতের বহুত্ব কেবল মায়ার প্রক্ষেপ। দ্বিতীয়ত, এটি দ্বিত্ব বা ভেদবুদ্ধিকে অস্বীকার করে—কারণ যদি “দ্বিতীয়” কিছু থাকে, তবে ব্রহ্ম সীমিত হয়ে যায়, যা অসম্ভব। তৃতীয়ত, এটি প্রমাণ করে যে, মুক্তি মানে কোনো নতুন কিছু পাওয়া নয়; বরং বোঝা যে, “আমি চিরকালই সেই ব্রহ্ম ছিলাম”—অর্থাৎ আত্ম-পরিচয়ের জাগরণ।


শঙ্করাচার্য তাঁর ভাষ্যে বলেন, “একং এব অদ্বিতীয়ম্—অর্থাৎ, যে-ব্রহ্ম সমস্ত জগতের কারণ, তার সমান বা ভিন্ন কিছুই নেই।” অর্থাৎ, ব্রহ্মই কারণ, উপাদান, ফল—সব। জগৎ যেমন মায়ার প্রক্ষেপ, তেমনি তার ভিত্তি ব্রহ্ম; এবং জীবও সেই ব্রহ্মেরই চিদানন্দরূপ প্রতিফলন।


‘চিদানন্দরূপ’ (Cidānandarūpa) শব্দটি দুটি প্রধান সংস্কৃত শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে পরমাত্মা বা ব্রহ্মের স্বরূপ বর্ণনা করে। এর অর্থ হলো: "চৈতন্য, আনন্দ ও স্বরূপ।"


শব্দের বিশ্লেষণ: 'চিদানন্দরূপ' শব্দটি মূলত তিনটি ভিন্ন সত্তার অভিন্নতাকে নির্দেশ করে—ক) চিৎ (Cit): এর অর্থ হলো জ্ঞান বা চৈতন্য (Consciousness)। এটি সেই বিশুদ্ধ সত্তা, যা স্বয়ং প্রকাশিত এবং সমস্ত জ্ঞানের ভিত্তি। খ) আনন্দ (Ānanda): এর অর্থ হলো পরম সুখ বা আনন্দ (Bliss)। এই আনন্দ জাগতিক সুখের মতো পরিবর্তনশীল নয়, বরং এটি আত্মার শাশ্বত স্বরূপ। গ) রূপ (Rūpa): এর অর্থ হলো স্বরূপ বা প্রকৃত প্রকৃতি (Nature/Form)। তাই ‘চিদানন্দরূপ’ অর্থ—ব্রহ্মের প্রকৃত স্বরূপ হলো বিশুদ্ধ চৈতন্যময় আনন্দ।


এই শব্দটি অদ্বৈত বেদান্তের প্রধান দার্শনিক সূত্র ‘সৎ-চিৎ-আনন্দ (Sat-Cit-Ānanda)’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সৎ (Sat): নিত্য অস্তিত্ব (Being)। চিৎ (Cit): নিত্য জ্ঞান/চৈতন্য (Consciousness)। আনন্দ (Ānanda): নিত্য আনন্দ (Bliss)। চিদানন্দরূপ হলো সেই ব্রহ্মের স্বরূপ বা আত্মার স্বরূপ, যিনি এই তিনটি গুণে ভূষিত।


স্বরূপগত চৈতন্য—ব্রহ্ম কেবল চৈতন্যকে ধারণ করেন না, তিনি স্বয়ং চৈতন্যস্বরূপ। বন্ধনহীন আনন্দ—ব্রহ্মের আনন্দ কোনো বাহ্যিক বস্তুর ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি তাঁর নিজের স্বভাব। যখন জীব মোক্ষ লাভ করে, তখন সে এই চিদানন্দ স্বরূপকেই উপলব্ধি করে।


এই শব্দটি প্রমাণ করে যে, জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—দুঃখ ও বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে তার বিশুদ্ধ, জ্ঞানময় এবং আনন্দময় প্রকৃত স্বরূপকে জানা। ব্রহ্ম হলেন স্বয়ং সেই চৈতন্যময় আনন্দ (চিদানন্দরূপ)। তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো সত্য নেই। জীবাত্মা হচ্ছে ব্রহ্মের (বিম্ব) প্রতিফলন (প্রতিবিম্ব)—ব্রহ্মের অজ্ঞানজনিত প্রতিফলন মাত্র। এই ধারণাটি দুটি ন্যায়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়—


দর্পণ-প্রতিবিম্ব-ন্যায়: যেমন একটি দর্পণে (মায়া বা অবিদ্যা) সূর্যের প্রতিবিম্ব পড়ে, ঠিক তেমনই, শুদ্ধ ব্রহ্ম (বিম্ব) যখন অবিদ্যা (মন, বুদ্ধি ও দেহ)-র উপাধিতে প্রতিফলিত হন, তখন তিনি জীবাত্মা রূপে প্রতীয়মান হন।


চিদানন্দরূপের ভ্রান্তি: জীবাত্মা হলো এই চিদানন্দরূপ ব্রহ্মেরই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু উপাধির কারণে, জীব নিজের বিশুদ্ধ চিদানন্দ স্বরূপকে ভুলে যায় এবং নিজেকে সীমিত, দুঃখী ও কর্তা বলে মনে করে। জীব যখন শোক করে, তা আসলে ব্রহ্মের স্বরূপ নয়, বরং প্রতিবিম্বের বিকৃতি মাত্র।


আর মোক্ষ হলো এই প্রতিফলন বা প্রতিবিম্বের ভ্রম দূর হওয়া। যখন অজ্ঞান বা উপাধি দূর হয়, তখন জীবাত্মা উপলব্ধি করে যে, তার প্রকৃত স্বরূপটি সবসময়ই অসীম ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মের চিদানন্দরূপ ছিল এবং সে কখনও ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন ছিল না। এটিই "অহং ব্রহ্মাস্মি" (আমিই ব্রহ্ম) মহাবাক্যের উপলব্ধি।


আধুনিক বেদান্তিক ব্যাখ্যায়ও “একমেবাদ্বিতীয়ম্” মন্ত্রের গভীর অনুরণন শোনা যায়, যা একত্বের এই মূল ধারণাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশদভাবে তুলে ধরে। স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি পশ্চিমা বিশ্বে বেদান্ত প্রচারের অন্যতম পথিকৃৎ, এই মন্ত্রের সারমর্ম অত্যন্ত সহজ ও শক্তিশালী ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “This is the quintessence of Vedānta: there is but One Being in the universe—One existence without a second.” অর্থাৎ, এটিই বেদান্তের সারমর্ম: জগতে একমেবাদ্বিতীয়ম্ ব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কোনো সত্তা নেই। (অর্থাৎ, এক, কেবল এক, দ্বিতীয়-রহিত ব্রহ্ম।) এই বক্তব্য শুধুমাত্র একটি দার্শনিক ধারণা নয়, বরং সমগ্র সৃষ্টিকে এক অদ্বৈত সত্তার প্রকাশ হিসেবে দেখার একটি গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি। বিবেকানন্দের এই ব্যাখ্যা ব্রহ্ম এবং জগতের একত্বকে তুলে ধরে, যেখানে বহুত্ব শুধুমাত্র আপেক্ষিক এবং মায়ার ফল।


রমণ মহর্ষি, একজন আত্মজ্ঞানী সাধক, এই মন্ত্রের ব্যাবহারিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ দিকটির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “When the Upaniṣad says ‘Ekam Evādvitīyam,’ it means the Self alone exists; all multiplicity is imagination.” অর্থাৎ, উপনিষদের এই উক্তিটি নির্দেশ করে যে, কেবল আত্মাই (ব্রহ্ম) সত্য, এবং আমরা যা-কিছু বহুত্ব হিসেবে দেখি, তা সবই কল্পনার সৃষ্টি। রমণ মহর্ষি আত্ম-অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই একত্ব উপলব্ধির কথা বলতেন, যেখানে মন যখন তার সমস্ত কল্পনা ও বিভাজন ছেড়ে দেয়, তখন কেবল একমাত্র সত্য, অর্থাৎ আত্মা বা ব্রহ্মই অবশিষ্ট থাকে। তাঁর শিক্ষা ছিল মনকে শান্ত করে নিজের ভেতরের একত্বকে অনুভব করা।


স্বামী চিন্ময়ানন্দ, একজন আন্তর্জাতিক বেদান্ত প্রচারক, এই মন্ত্রের অভিজ্ঞতালব্ধ প্রকৃতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “Ekam Evādvitīyam is not a statement of belief but of experience; when the mind dissolves, only the One remains.” তাঁর এই উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি বোঝায় যে, 'একমেবাদ্বিতীয়ম' কোনো তাত্ত্বিক বিশ্বাস বা মতবাদ নয়, বরং এটি একটি গভীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। যখন মন তার দ্বৈততার সমস্ত ধারণা, তার সমস্ত ভাবনা এবং তার স্বাতন্ত্র্যবোধ বিলীন করে দেয়, তখন কেবল সেই অদ্বিতীয় সত্তাই অবশিষ্ট থাকে। এই অবস্থাটি সমাধি বা তুরীয় অবস্থার অনুরূপ, যেখানে জ্ঞান ও জ্ঞাতার ভেদ ঘুচে যায় এবং শুধুমাত্র বিশুদ্ধ একত্বই অনুভূত হয়।


এই আধুনিক ব্যাখ্যাকারগণ 'একমেবাদ্বিতীয়ম' মন্ত্রটিকে কেবল একটি প্রাচীন মন্ত্র হিসেবে না দেখে, বরং এটিকে আত্ম-উপলব্ধি এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির একটি সরাসরি পথ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাঁদের ব্যাখ্যাগুলো আমাদের আধুনিক মনকে এই জটিল দার্শনিক ধারণার গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে যে, এই মন্ত্রের আবেদন সময়ের সাথে সাথে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই মন্ত্রটি আমাদের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি এবং সমগ্র সৃষ্টির একত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যা ভেদাভেদ মুক্ত একটি সার্বজনীন সত্যের দিকে নির্দেশ করে।


“একমেবাদ্বিতীয়ম্” ঘোষণা করে—যা-কিছু আছে, ছিল এবং থাকবে—সবই সেই এক চেতনা। জগতের বহুত্ব কেবল অবিদ্যার প্রতিফলন; জ্ঞানের আলোয় যখন ভেদবুদ্ধি লীন হয়, তখন জানা যায়—ব্রহ্মই সত্য, জগৎ মিথ্যা নয়, বরং ব্রহ্মেরই প্রতিফলন। সেই মুহূর্তে আত্মা উপলব্ধি করে—“অহম্ ব্রহ্মাস্মি”—আমিই সেই এক, অদ্বিতীয় চেতনা।


মানুষ দেহকেই “আমি” মনে করে—যেমন জামাকে নিজের সত্তা ভেবে নেওয়া। কিন্তু দেহের পরিবর্তনে আত্মা অপরিবর্তিত থাকে। জন্ম, বার্ধক্য, মৃত্যু—সবই দেহের, আত্মার নয়। আত্মা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, বরং সে এই সমস্ত অবস্থার সাক্ষী।


আত্মাকে চতুষ্পাদ্‌ (Catuṣpād) বলা হয়েছে মাণ্ডুক্য উপনিষদে, যা উপনিষদসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরতম একটি গ্রন্থ। এখানে আত্মার চারটি অবস্থা বা পাদ—বিশ্ব, তৈজস, প্রাজ্ঞ এবং তুরীয়—বর্ণনা করা হয়েছে, যা মানবচেতনার চারটি স্তরকেই প্রকাশ করে।