যেমন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের মায়া প্রকাশিত হয় যে, সেটি কেবল আলোর অনুপস্থিতি ছিল, কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নয়। অন্ধকার নিজে কিছু নয়, শুধু আলোর অভাব। ঠিক তেমনি, অবিদ্যা কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নয়; এটি কেবল ব্রহ্মজ্ঞান বা আত্মজ্ঞানের অনুপস্থিতি। যখন জ্ঞান নামক সূর্য উদিত হয়, তখন অবিদ্যারূপী অন্ধকার বিলীন হয়ে যায়, এবং প্রকাশিত হয় যে, অন্ধকার কেবল একটি ভ্রম ছিল, একটি আরোপিত সীমাবদ্ধতা, যা বিশুদ্ধ চৈতন্যকে ঢেকে রেখেছিল। এই উপলব্ধিই মোক্ষ, যেখানে ব্যক্তি তার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে এবং ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে। এই অবস্থায় শোক, আকাঙ্ক্ষা এবং সকল বন্ধন থেকে মুক্তি ঘটে এবং জীবন্ত থাকাকালীনই চরম ও অনাবিল শান্তি লাভ হয়।
অবিদ্যা থেকে বিদ্যার যাত্রা তাই স্থানান্তর নয়, পরিবর্তন নয়—এটি স্বপ্ন থেকে জাগরণ। কেউ ঘুমের মধ্যে আগুনে পুড়ছে বলে স্বপ্ন দেখছে; জাগ্রত হলে বোঝে, কখনও কোনো দহন ঘটেনি। তেমনি জীবও, জ্ঞানের আলোয়, বুঝতে পারে—সে কখনও আবদ্ধ ছিল না। “দড়ি সর্বদা দড়িই ছিল”—সাপের ভ্রম ছিল কেবল দৃষ্টির ত্রুটি। জীব সর্বদা ব্রহ্মই ছিল, কিন্তু অজ্ঞতার কুয়াশায় নিজেকে অন্য কিছু মনে করেছিল।
অবিদ্যা শুরু হয় বিস্মৃতি (Vismṛti) হিসাবে—এক গভীর বিস্মৃতি, যেখানে জীব তার প্রকৃত স্বরূপ ভুলে যায়। এই বিস্মৃতির কারণ হল আত্মপরিচয়ের অভাব; নিজেকে কেবল দেহ-মন-প্রাণ রূপে সংকুচিত করে দেখা। এর ফলে জন্ম হয় এক সীমায়িত অহংকারের, যা মহাবিশ্বের সঙ্গে তার নিবিড় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই প্রথম ধাপ, যেখানে চেতনার আদিম শুদ্ধতা মেঘাচ্ছন্ন হয়, সৃষ্টি করে দ্বৈততার প্রথম স্ফুলিঙ্গ—আমি ও অন্য।
তারপর বিকশিত হয় প্রক্ষেপণ (Vikṣepa) রূপে—নিজের উপর অন্য কিছু আরোপ করা। বিস্মৃতির ফলে যে-শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তাকে পূরণ করার জন্য মন বাইরের বস্তুজগৎ এবং অভিজ্ঞতাকে নিজের সত্তার অংশ হিসেবে ভ্রমবশত গ্রহণ করে। এই ধাপে, জাগতিক সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, সম্মান-অসম্মানকে নিজের পরম পরিচয় বলে মনে করা হয়। জগৎকে সত্য বলে ধরে নিয়ে তাতে আসক্ত হওয়া, বন্ধন তৈরি করা এবং কর্মফল তৈরি করা এই প্রক্ষেপণেরই অংশ। এই পর্যায়টি এক জটিল গোলকধাঁধার মতো, যেখানে প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা পূর্ববর্তী ভুল ধারণাকে আরও দৃঢ় করে, এবং জীব অবিরাম এক বৃত্তাকার পথে ঘুরপাক খায়, মুক্তির পথ থেকে দূরে সরে যায়।
এই ভ্রমণ শেষ হয় জ্ঞানে (Jñāna)—নিজেকে পুনরায় জানায়। এই জ্ঞান কেবল বুদ্ধিগত উপলব্ধি নয়, বরং এক গভীর আত্মানুসন্ধান ও ধ্যানের মাধ্যমে লব্ধ অনুভব। যখন জীব তার ভুল বোঝাবুঝি, আসক্তি ও অজ্ঞানতার স্তর ভেদ করে, তখন সে তার প্রকৃত আত্মাকে চিনতে পারে। এই জ্ঞান হল সেই আদিম বিস্মৃতিকে অতিক্রম করে স্ব-স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়া—আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান। এই প্রক্রিয়াটিতে, প্রক্ষেপিত মিথ্যা পরিচয়গুলি একে একে বিলীন হয়, এবং শুদ্ধ চেতনা তার নিজস্ব দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়। এই জ্ঞানের ফলেই মোক্ষলাভ হয়, যেখানে জীব সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে অসীম আনন্দ ও শান্তিতে বিলীন হয়।
এই তিন ধাপেই অস্তিত্বের সমগ্র নাটক গঠিত হয়—মায়া থেকে অধ্যাস, নাম-রূপ থেকে বাধা, সংসার থেকে মোক্ষ পর্যন্ত। মায়া হলো সেই শক্তি, যা এক অদ্বিতীয় ব্রহ্মকে বহু রূপে প্রতিভাত করে। এই মায়ার কারণেই মিথ্যা ধারণাগুলি আমাদের চেতনায় অধ্যাস রূপে আরোপিত হয়। আমরা বস্তুজগতের নাম ও রূপকে সত্য বলে মনে করি এবং এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে বাধা বা বন্ধন তৈরি করি। এই বন্ধনই সংসার চক্রের কারণ, যেখানে জীব বারংবার জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে ঘুরতে থাকে। কিন্তু যখন মায়ার আবরণ ভেদ হয়, অধ্যাসের বিনাশ ঘটে, এবং নাম-রূপের আসক্তি দূর হয়, তখন মোক্ষলাভ হয়—চিরন্তন মুক্তি ও পরম শান্তি।
সব কিছু একটিমাত্র চেতনার খেলা, যা নিজেই নিজেকে আচ্ছাদিত করে, আবার নিজেই নিজেকে প্রকাশ করে। এই এক অদ্বিতীয় চেতনা বা ব্রহ্মই সকল অস্তিত্বের মূল উৎস। এটিই সব কিছুকে ধারণ করে আছে, এবং এটিই সব কিছুর মধ্যে বিরাজমান। খেলাটি এমন যে, এই চেতনা যেন নিজেই নিজেকে ভুলে গিয়ে, এক নাটকের মঞ্চ তৈরি করে, যেখানে সে নিজেই দর্শক এবং অভিনেতা উভয়ই। তারপর, নিজেই সেই মায়ার আবরণ ছিন্ন করে, নিজের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে। এটি কেবল এক লীলা, এক দিব্য খেলা, যেখানে সৃষ্টির বৈচিত্র্যময় প্রকাশ ঘটে।
জ্ঞানের চূড়ান্ত মুহূর্তে বোঝা যায়—জানার মতো কিছু ছিল না, জানার কেউও ছিল না; কেবল এক শুদ্ধ অস্তিত্ব-চেতনা-আনন্দ—ব্রহ্ম, যা সর্বদা দীপ্ত, সর্বদা মুক্ত, সর্বদা একমাত্র বাস্তব। যখন অবিদ্যা সম্পূর্ণরূপে দূর হয় এবং জ্ঞানের পূর্ণ আলো উদ্ভাসিত হয়, তখন দ্বৈততার সকল ধারণা বিলীন হয়ে যায়। জ্ঞাতা, জ্ঞেয় ও জ্ঞান—এই ত্রিমাত্রিক বিভেদ আর থাকে না। যা অবশিষ্ট থাকে, তা হলো অদ্বিতীয় ব্রহ্ম, যা সচ্চিদানন্দ স্বরূপ—সৎ (অস্তিত্ব), চিৎ (চেতনা), আনন্দ (পরম সুখ)। এটিই সেই পরম সত্য, যা নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ ও মুক্ত। এটিই একমাত্র বাস্তব, যার তুলনায় অন্য সব কিছুই আপেক্ষিক এবং অনিত্য। এই উপলব্ধিই জীবনের চরম লক্ষ্য এবং অস্তিত্বের গভীরতম রহস্যের উন্মোচন।
যখন ব্রহ্মে-স্থিত শান্তির ভেতরে অবিদ্যার সূক্ষ্ম কম্পন জেগে ওঠে, তখন সেই মহাজাগতিক রূপটিই ‘মায়া’ নামে পরিচিত হয়। মায়া কোনো সত্তা নয়, বরং এক শক্তি—“প্রকাশ-শক্তি” (Māyā-śakti)—যা দ্বারা অবিভক্ত চৈতন্য (Sat-Cit-Ānanda) বহুতার বিভ্রমে প্রকাশিত হয়। অসীম চেতনা যেন নিজেকে বহু রূপে দেখতে শুরু করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো পরিবর্তন ঘটে না; এটি কেবল প্রতিফলনের এক মহাজাগতিক খেলা। ব্রহ্ম, মায়ার এই আবরণে, যখন সর্বজ্ঞতা (Sarvajñatva) ও ইচ্ছাশক্তি (Icchā-śakti)-র গুণে দীপ্ত হয়, তখন তিনি ঈশ্বর নামে প্রকাশিত হন—সৃষ্টির নায়ক, নিয়ন্তা, পরম বুদ্ধি। আবার একই মায়া, যখন জীবের সীমাবদ্ধ মনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়, তখন তা অবিদ্যা নামে ব্যক্তিগত অজ্ঞানতা হয়ে ওঠে। এভাবে একই শক্তি দুটি স্তরে কাজ করে—মহাজাগতিক স্তরে মায়া, ব্যক্তিগত স্তরে অবিদ্যা।
এই দ্বৈত প্রকাশেই সমষ্টি (সামষ্টিক) ও ব্যষ্টি (ব্যক্তিগত) পার্থক্যের মূল নিহিত। মায়া হলো মহাজাগতিক বিভ্রম—যা সমগ্র জগতের রচয়িতা শক্তি, আর অবিদ্যা হলো সেই বিভ্রমের ব্যক্তিগত প্রতিচ্ছবি—প্রত্যেক জীবের অন্তরে যে-অন্ধকার-অজ্ঞানতা বাস করে। এই মায়ার মধ্যে ত্রিগুণ (Guṇa-Traya) সর্বদা স্পন্দিত—সত্ত্ব (Sattva), রজঃ (Rajas), ও তমঃ (Tamas)। সত্ত্ব গুণে আছে স্বচ্ছতা, আলো, এবং শান্তি—যা জ্ঞান, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের উৎস। রজঃ গুণে আছে কর্ম, গতি, আকাঙ্ক্ষা ও বাসনা—যা সৃষ্টি ও পরিবর্তনের কারণ। তমঃ গুণে আছে জড়তা, অন্ধকার, এবং অবিদ্যা—যা মনকে আচ্ছন্ন করে বিভ্রম সৃষ্টি করে। প্রতিটি উপাদান, প্রতিটি মন, প্রতিটি চিন্তা এই ত্রিগুণের বুননে গঠিত, যেন অস্তিত্বের বিশাল তাঁত এক অদৃশ্য ছন্দে বোনা হচ্ছে।
এই ত্রিগুণের ক্রিয়া ব্রহ্মকে কোনোভাবে পরিবর্তিত করে না, যেমন জবা ফুলের পাশে রাখলে স্ফটিক লাল দেখায়, কিন্তু তার নিজস্ব স্বচ্ছতা নষ্ট হয় না। এটি বিবর্তবাদ (Vivarta-vāda)—আপাত রূপান্তরের মতবাদ—যেখানে চৈতন্য নিজে অপরিবর্তিত থেকে নাম ও রূপের বহুবিধ প্রকাশ ধারণ করে। মহাবিশ্ব তাই ব্রহ্মের প্রকৃত রূপ নয়, বরং তার মায়াময় প্রতিফলন, যেন অসীম আকাশে চলমান মেঘের ছায়া। জ্ঞানীরা তাই বলেন—“ব্রহ্ম সত্যম্, জগৎ মিথ্যা”—অর্থাৎ, কেবল ব্রহ্মই বাস্তব, জগৎ কেবল চেতনার অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল এক প্রক্ষেপণ, এক মায়াময় প্রদর্শন।
মায়া, পরম সত্তারই এক রহস্যময়ী শক্তি, নিজেকে দুটি প্রধান উপায়ে প্রকাশ করে—আবরণ (Āvaraṇa) এবং বিক্ষেপ (Vikṣepa)। এই উভয় শক্তি একযোগে কাজ করে, যেন এক নিপুণ স্থপতি, যা আমাদের অভিজ্ঞতার বিভ্রমপূর্ণ জগৎ নির্মাণ করে।
আবরণ-শক্তি (Āvaraṇa-śakti) হলো অজ্ঞানের সেই নিবিড় পর্দা, যা আত্মার প্রকৃত, শুদ্ধ ও অসীম স্বরূপকে আচ্ছাদিত করে রাখে। এটি যেন এক ঘন মেঘের মতো, যা সূর্যের প্রখর দীপ্তিকে ঢেকে দেয়, আমাদের দৃষ্টি থেকে সত্যকে আড়াল করে রাখে। এই আবরণের কারণে আমরা নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ জীব বলে মনে করি, ব্রহ্মের সাথে আমাদের অভেদত্ব বিস্মৃত হই। এই আবরণই দ্বৈততার প্রথম ধাপ তৈরি করে, যেখানে দ্রষ্টা ও দৃশ্যের ভেদাভেদ প্রতীয়মান হয়, যদিও পরমার্থে তারা অভিন্ন। এটি আমাদের বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে রাখে, যার ফলে আমরা আত্মস্বরূপের জ্ঞান লাভে অক্ষম হই।
আবরণ-শক্তি যখন পরম সত্যকে ঢেকে রাখে, তখন বিক্ষেপ-শক্তি (Vikṣepa-śakti) সেই আবৃত ভূমির উপর নাম (ধারণা) ও রূপ (আকার) প্রক্ষেপণ করে। এটি হলো সেই সৃজনী শক্তি, যা বহুবিধ বস্তু, ঘটনা, জীব এবং জাগতিক অভিজ্ঞতার জগৎকে সৃষ্টি করে। যেমন, একটি সিনেমার প্রজেক্টর একটি সাদা পর্দার উপর বিভিন্ন চিত্র প্রক্ষেপণ করে এক ভিন্ন জগত তৈরি করে, ঠিক তেমনি বিক্ষেপ-শক্তি আত্মস্বরূপের উপর এই বিচিত্র সৃষ্টিকে প্রক্ষেপণ করে। এই শক্তিই আমাদের মনকে বহির্মুখী করে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে আসক্ত করে তোলে এবং জন্মান্তরের চক্রে আবদ্ধ রাখে। এই বিক্ষেপ-শক্তির প্রভাবেই সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি দ্বৈতভাবের অনুভূতি তৈরি হয়।
এই দুটি শক্তি, আবরণ ও বিক্ষেপ, অবিচ্ছেদ্যভাবে কাজ করে এবং সম্মিলিতভাবে 'আবরণ-বিক্ষেপ-দ্বয়-শক্তি' নামে পরিচিত। এই দ্বৈত প্রক্রিয়াই মায়ার অপার ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, যা ব্রহ্মকে জগৎরূপে প্রতিভাত করে এবং জীবাত্মাকে এই মায়িক জগতে আবদ্ধ রাখে। এই মায়ার প্রভাব থেকে মুক্তি লাভের পথ হলো আত্মজ্ঞান অর্জন, যেখানে আবরণ-শক্তি উন্মোচিত হয় এবং বিক্ষেপ-শক্তির দ্বারা সৃষ্ট বিভ্রমের অবসান ঘটে। তখনই জীব তার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে এবং ব্রহ্মের সাথে একত্ব লাভ করে।
যখন সত্ত্বগুণ চাপা পড়ে এবং তমোগুণ প্রবল হয়, তখন এক গভীর অন্ধকার নেমে আসে, যাকে বলা হয় আবরণ-দোষ (Āvaraṇa-doṣa)। এটি কেবল জ্ঞানের পথকে রুদ্ধ করে না, বরং এটি আমাদের উপলব্ধি এবং বোধগম্যতাকেও প্রভাবিত করে। এই আবরণ-দোষ এক ঘন কুয়াশার মতো, যা আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে তোলে, ফলে আমরা সত্যকে দেখতে বা বুঝতে পারি না। এই অবস্থা আমাদের মনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বা বাস্তবতাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। এটি আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ করে দেয় এবং আমরা যেন এক অন্ধকার গহ্বরে নিমজ্জিত হই।
এই আবরণ-দোষের ফলস্বরূপ জন্ম নেয় আবরণ-ব্যাপকত্ব (Āvaraṇa-vyāpakatva)। এটি কেবল একটি সীমাবদ্ধ অজ্ঞতা নয়, বরং এটি একটি সর্বব্যাপী অজ্ঞানতা, যা আমাদের সমগ্র অস্তিত্বকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে জ্ঞান কেবল অপ্রাপ্যই নয়, বরং যেন তার অস্তিত্বই নেই। এই ব্যাপক অজ্ঞানতা আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে নেয় এবং আমরা নিজেদেরকে এক বিভ্রান্তির জালে আটকে ফেলি। এই অবস্থায়, আমাদের আত্ম-অনুসন্ধান এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়, কারণ আমরা আমাদের ভেতরের সত্যকে অনুভব করতে পারি না।
তবে, এই গভীর অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়। যখন অবিদ্যার অপসারণ ঘটে এবং বিদ্যা (Jñāna) বা প্রকৃত জ্ঞান উদিত হয়, তখন ঘটে আবরণ-নিবৃত্তি (Āvaraṇa-nivṛtti)। এটি কেবল অজ্ঞানতার বিলুপ্তি নয়, বরং এটি এক গভীর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন। এই প্রক্রিয়ায়, অজ্ঞতার আবরণ সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হয়, যেমন সূর্যের আগমনে কুয়াশা কেটে যায়।