ন্যায় দর্শনের মতে, প্রতিটি ঘটনা বা বস্তুর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা যায় তার কারণ ও কার্য সম্পর্কের যৌক্তিক ক্রম অনুসারে। কারণ (kāraṇa) মানে যা দ্বারা ফল (kārya) উৎপন্ন হয়। ন্যায় দর্শন চার প্রকার কারণ স্বীকার করে—সমবায়ী কারণ (Samavāyi kāraṇa), যা ফলের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত থাকে (যেমন মাটির সঙ্গে হাঁড়ি); অসমবায়ী কারণ (Asamavāyi kāraṇa), যা সমবায়ী কারণে থাকে কিন্তু ফলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুক্ত নয় (যেমন মাটির রং, যা হাঁড়ির রঙের কারণ); নিমিত্ত কারণ (Nimitta kāraṇa), প্রবর্তক বা কারিগর (যেমন কুমোর); এবং অধিষ্ঠান বা উপাদান কারণ (Upādāna kāraṇa), যার দ্বারা বস্তু তৈরি হয় (যেমন মাটি)। এই কারণতত্ত্বে কারণ ও কার্য উভয়ই বাস্তব, এবং কার্য কারণের মধ্যে সম্ভাব্যভাবে বিদ্যমান থাকে—এটিই ন্যায়ের সৎকার্যবাদ (satkāryavāda)-এর বিশেষ রূপ।
সৎকার্যবাদ (Satkāryavāda) ভারতীয় দর্শনের একটি মৌল কারণতত্ত্ব, যার কেন্দ্রীয় বক্তব্য হলো—“ফল (কার্য) কারণের মধ্যেই পূর্বে সম্ভাব্যভাবে বিদ্যমান থাকে।” অর্থাৎ, কোনো নতুন জিনিস সম্পূর্ণ নতুনভাবে সৃষ্টি হয় না; যা ফল হিসেবে প্রকাশ পায়, তা আসলে কারণের মধ্যেই গোপনে বা অপ্রকাশিতভাবে আগে থেকেই উপস্থিত থাকে। সৃষ্টি মানে নতুন কিছু তৈরি করা নয়, বরং পূর্বস্থিত সত্যের প্রকাশ বা রূপান্তর।
এই তত্ত্বটি প্রধানত সাংখ্য দর্শন এবং পরে অদ্বৈত বেদান্ত দ্বারা গৃহীত ও রূপান্তরিত হয়েছে। সাংখ্যে বলা হয়—“অসৎ কার্য হতে পারে না (asatkārya anupatti),” অর্থাৎ যা কখনোই ছিল না, তা হঠাৎ অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না। যেমন, দুধ থেকে দই হয়—কিন্তু দই আসলে দুধের মধ্যেই সম্ভাব্যভাবে ছিল; তাই দই হলো দুধের রূপান্তরিত প্রকাশ।
এই ব্যাখ্যার দ্বারা দুটি ধারণা স্পষ্ট হয়—
কারণ ও কার্যের অবিচ্ছেদ সম্পর্ক: কারণ ছাড়া কার্যের অস্তিত্ব অসম্ভব। ফল কারণের মধ্যে অন্তর্গত, যেমন বীজের মধ্যে গাছ লুকিয়ে থাকে।
সৃষ্টির ধারাবাহিকতা ও যুক্তিসংগততা: জগৎ হঠাৎ করে শূন্য থেকে (ex nihilo) উৎপন্ন নয়; বরং পূর্বস্থিত শক্তির বিকাশ।
অসৎকার্য অনুপত্তি (Asatkārya Anupatti) ভারতীয় কারণতত্ত্বের এক মৌল নীতি, যা বলে—“অসৎ বা অস্তিত্বহীন বস্তু থেকে কোনো কার্য বা ফল কখনও উৎপন্ন হতে পারে না।” অর্থাৎ, যা আগে ছিল না, তা হঠাৎ করে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না। এই নীতি মূলত সৎকার্যবাদ (Satkāryavāda)-এর যুক্তিগত ভিত্তি; যেখানে বলা হয়, কার্য সর্বদাই কারণের মধ্যেই সম্ভাব্যভাবে উপস্থিত থাকে।
“অসৎকার্য অনুপত্তি” তিনটি শব্দে গঠিত—অসৎ (যা নেই), কার্য (ফল বা উৎপন্ন বস্তু), এবং অনুপত্তি (অসম্ভবতা)। এভাবে এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায়—“অস্তিত্বহীন থেকে কোনো কার্য উৎপন্ন হওয়া অসম্ভব।” এই ধারণাটি বোঝায় যে, সৃষ্টির প্রক্রিয়া মানে নতুন কিছু তৈরি হওয়া নয়, বরং পূর্বস্থিত সত্যের প্রকাশ।
এই নীতির সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হলো—হাঁড়ি কেবল মাটি থেকেই তৈরি হয়, শূন্য থেকে নয়। যদি মাটি না থাকে, তবে হাঁড়ি কখনও তৈরি হতে পারে না। অর্থাৎ, হাঁড়ির অস্তিত্ব মাটির মধ্যেই সম্ভাব্যভাবে আগে থেকেই ছিল; সৃষ্টি মানে সেই সম্ভাবনার রূপায়ণ।
সাংখ্য দর্শন এই নীতিকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করে বলে—“যা কখনও ছিল না, তা কখনও হতে পারে না” (asatkārya anupattiḥ)। প্রকৃতি (Prakṛti) চিরন্তন, এবং সমস্ত জগৎ তারই বিকাশ; তাই জগৎকে তারা বলে পরিণাম (pariṇāma)—অর্থাৎ কারণ সত্য থেকে কার্য সত্যরূপে রূপান্তরিত।
অদ্বৈত বেদান্ত একই নীতিকে গ্রহণ করেও এর ব্যাখ্যায় আনে এক সূক্ষ্ম পরিবর্তন। শঙ্করাচার্যের মতে, ব্রহ্মই একমাত্র চিরন্তন সত্য; জগৎ তারই মায়িক প্রতিভাস। এখানে সৃষ্টি বাস্তব রূপান্তর নয়, বরং বিভর্ত (vivarta)—যেখানে ব্রহ্ম অপরিবর্তিত থেকেও জগৎ হিসেবে প্রতীয়মান হন, যেমন দড়ি অপরিবর্তিত থেকেও অন্ধকারে সাপ বলে মনে হয়।
এভাবে দেখা যায়, অসৎকার্য অনুপত্তি সৃষ্টিতত্ত্বে এক গভীর যৌক্তিক ও অস্তিত্ববাদী সত্য প্রতিষ্ঠা করে—যা-কিছু প্রকাশ পায়, তা আসলে আগে থেকেই কোনো রূপে বিদ্যমান ছিল; অস্তিত্বহীনতা কখনও অস্তিত্বের কারণ হতে পারে না।
এই নীতির প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় ছান্দোগ্য উপনিষদে (৬.২.২): “সদ্ এবম্ আয়মগ্র আসীৎ, একমেবাদ্বিতীয়ম্।” অর্থাৎ, “এই জগৎ প্রথমে ‘সৎ’ (অস্তিত্ব) ছিল—এক ও অদ্বিতীয়।”
সৃষ্টি কখনোই “অসৎ” থেকে নয়; বরং “সৎ” থেকেই সব প্রকাশ পায়। অসৎকার্য অনুপত্তি এভাবেই সৃষ্টিতত্ত্বের এক চিরন্তন সূত্র—অস্তিত্বহীন থেকে কিছুই উদ্ভূত হতে পারে না; সমস্ত সৃষ্টিই পূর্বস্থিত সত্তার প্রকাশ মাত্র।
অদ্বৈত বেদান্ত এই তত্ত্বকে আরও গভীর স্তরে নিয়ে যায়। শঙ্করাচার্যের মতে, ব্রহ্মই সব কিছুর একমাত্র কারণ, এবং জগৎ সেই ব্রহ্মের মধ্যেই সম্ভাব্যভাবে (sat-rūpeṇa) বিদ্যমান। তবে এখানে কার্য বাস্তব রূপান্তর নয়—বরং বিবর্ত (vivarta), অর্থাৎ মায়ার আরোপে ব্রহ্ম অপরিবর্তিত থেকে জগৎ হিসেবে প্রতীয়মান। উদাহরণস্বরূপ, দড়ি অপরিবর্তিত থেকেও অন্ধকারে সাপ বলে মনে হয়—সাপ আসলে দড়িরই সম্ভাব্য প্রতিভাস, স্বতন্ত্র বাস্তব নয়।
সাংখ্য ও অদ্বৈত—উভয়েই সৎকার্যবাদে একমত যে, অসৎ থেকে সৎ উৎপন্ন হতে পারে না; পার্থক্য কেবল রূপান্তরের ধরনে। সাংখ্য বলে বাস্তব রূপান্তর (pariṇāma), অদ্বৈত বলে আপাত রূপান্তর (vivarta); যা ভারতীয় দর্শনে কারণতত্ত্ব (causality) বা সৃষ্টিতত্ত্ব (cosmology) সংক্রান্ত দুটি মৌলিক অবস্থানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে—সাংখ্য দর্শনের “পরিণামবাদ (pariṇāma-vāda)” এবং অদ্বৈত বেদান্তের “বিবর্তবাদ বা বিবর্তবাদ (vivarta-vāda)”।
সাংখ্য বলে—বাস্তব রূপান্তরই সৃষ্টি, অর্থাৎ, যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা কারণের প্রকৃত রূপান্তর বা রূপপরিবর্তনের ফল। এখানে কারণ (prakṛti) এবং ফল (jagat) উভয়ই বাস্তব; ফল কারণের মধ্যেই নিহিত ছিল, কিন্তু তা রূপান্তরের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। একে বলা হয় “সত্য-পরিণামবাদ”—যেমন দুধ থেকে দই হওয়া। দুধ ও দই—দুটিই বাস্তব, এবং দই হলো দুধের এক নতুন রূপে পরিণতি। সাংখ্য মতে প্রকৃতি (প্রকৃতিপ্রধান তত্ত্ব) অবিদ্যার দ্বারা বিকারিত হয়ে মহৎ, অহংকার, তন্মাত্র, পঞ্চভূত ইত্যাদি রূপে প্রকাশিত হয়—এই রূপান্তর বাস্তব, কল্পনানির্ভর নয়। তাই সৃষ্টিজগৎ সাংখ্যে সত্য ও বাস্তব, তবে তা পুরুষ থেকে পৃথক—পুরুষ চৈতন্যস্বরূপ, আর প্রকৃতি রূপান্তরশীল উপাদান।
অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে এটি মূলত ভ্রান্ত ধারণা। শঙ্করাচার্যের মতে, ব্রহ্ম অপরিবর্তনীয়, তাই তার কোনো বাস্তব রূপান্তর সম্ভব নয়। যদি ব্রহ্ম সত্য ও নিরাকার হয়, তবে তার কোনো অংশ বা বিকার হতে পারে না। কিন্তু আমরা যে-জগৎ দেখি, তা যেন পরিবর্তনের ফল—এই বিভ্রম কোথা থেকে আসে? শঙ্কর বলেন, এটি অবিদ্যা বা মায়ার কৃত “আপাত রূপান্তর (vivarta)”—বাস্তব নয়, প্রতিভাসমাত্র। যেমন দড়িকে সাপ বলে ভুল হয়, কিন্তু দড়ি কখনোই সাপে রূপান্তরিত হয় না—তেমনি ব্রহ্ম জগতে রূপান্তরিত হয়নি, কিন্তু অজ্ঞানের আচ্ছাদনে আমরা জগৎরূপে তাকে দেখি।
এইভাবে পরিণাম (pariṇāma) মানে বাস্তব পরিবর্তন—কারণ নিজ রূপ বদলে ফল হয়; আর বিবর্ত (vivarta) মানে আপাত পরিবর্তন—কারণ অপরিবর্তিত থেকেও অজ্ঞানের ফলে ফল বলে প্রতীয়মান হয়। সাংখ্যের সৃষ্টি-তত্ত্বে জগৎ প্রকৃতির বাস্তব বিকার, অদ্বৈতের তত্ত্বে জগৎ ব্রহ্মের অবাস্তব প্রতিফলন।
সাংখ্য বলে—“যা সৃষ্টি হয়, তা সত্যিকার পরিবর্তনের ফল”; অদ্বৈত বলে—“যা সৃষ্টি বলে মনে হয়, তা আসলে মায়ার বিভ্রম।” একদিকে প্রকৃতির গতিশীল রূপান্তর, অন্যদিকে ব্রহ্মের অবিচল অপরিবর্তন। এই দুইয়ের দ্বন্দ্বই ভারতীয় অধিবিদ্যার দুই ধারা—একটি বাস্তব পরিণামবাদ, অন্যটি অবাস্তব বিবর্তবাদ—যেখানে এক বলে “প্রকৃতি রূপান্তরিত হয়”, আর অন্য বলে “ব্রহ্ম কখনও রূপান্তরিত হয় না, শুধু প্রতিভাস ঘটে।”
দার্শনিকভাবে, সৎকার্যবাদ কারণতত্ত্বের মধ্যে এক গভীর অস্তিত্ববাদী সত্যকে প্রকাশ করে—“যা-কিছু প্রকাশ পায়, তা আগে থেকেই ছিল; সৃষ্টির অর্থ প্রকাশ, উৎপত্তি নয়।” এটি কার্যকারণ সম্পর্ককে একটি ধারাবাহিক, যুক্তিনির্ভর, ও বাস্তব সত্তার প্রকাশ প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
ন্যায় দর্শনের এই বাস্তববাদী কারণতত্ত্ব ঈশ্বরকেও বাস্তব বলে স্বীকার করে, কিন্তু ঈশ্বর এখানে কেবল দক্ষ কারণ, উপাদান কারণ নন। অর্থাৎ ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেন, কিন্তু যে-পদার্থ থেকে সৃষ্টি ঘটে, তা ঈশ্বরের বাইরে বিদ্যমান। ঈশ্বর প্রবর্তক, কিন্তু জগৎ তাঁর স্বরূপ নয়। এখানে causality সম্পূর্ণভাবে যুক্তিনির্ভর: এক বাস্তব কারণ থেকে এক বাস্তব ফল জন্মায়, এবং সেই কারণ-কার্যের সম্পর্ক সর্বদা নিয়মবদ্ধ ও বস্তুনিষ্ঠ।
অদ্বৈত বেদান্তের অবস্থান একেবারে বিপরীত। এখানে কারণ-কার্য সম্পর্ক কোনো বাস্তব রূপান্তর নয়, বরং অভিন্ন-নিমিত্ত-উপাদান কারণবাদ (Abhinna-nimitta-upādāna kāraṇa vāda)-এর দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা হয়। এই তত্ত্ব অনুসারে ব্রহ্মই জগতের একমাত্র কারণ—তিনি একই সঙ্গে প্রবর্তক (নিমিত্ত) ও উপাদান (উপাদান) উভয়। অর্থাৎ, যে-সত্তা সৃষ্টি করে, সে-ই সেই পদার্থ, যার দ্বারা সৃষ্টি হয়। তবে এই সৃষ্টি কোনো বাস্তব পরিবর্তন নয়, বরং ব্রহ্মের অপরিবর্তনীয় সত্তায় মায়ার আরোপজনিত এক আপাত প্রতিফলন। শঙ্করাচার্য এই প্রক্রিয়াকে বলেন বিবর্তবাদ (vivartavāda)—যেমন দড়ি অন্ধকারে সাপ বলে প্রতীয়মান হয়, অথচ দড়ি আসলে অপরিবর্তিত থাকে।
এভাবে, অদ্বৈত causality-কে তিন স্তরে ভাগ করে দেখে—পারমার্থিক (চূড়ান্ত সত্যে, যেখানে ব্রহ্ম একমাত্র বাস্তব), ব্যাবহারিক (অভিজ্ঞ জগতে, যেখানে কারণ-কার্য সম্পর্ক কার্যকর), এবং প্রাতিভাসিক (ভ্রমাত্মক বা স্বপ্নতুল্য স্তরে, যেখানে সমস্ত কার্যকারণ আপাত)। ফলে, causality এখানে এক জ্ঞানতাত্ত্বিক উপকরণ—অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনের উপায়, চূড়ান্ত সত্য নয়।
Epistemic device বা জ্ঞানতাত্ত্বিক উপকরণ বলতে বোঝায় এমন কোনো ধারণা, পদ্ধতি, বা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান লাভ করে, সত্য যাচাই করে, এবং বাস্তবতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। “Epistemic” শব্দটি এসেছে গ্রীক epistēmē থেকে, যার অর্থ জ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক বোধ; আর “device” মানে যন্ত্র বা উপকরণ—এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত, অর্থাৎ, এমন এক মানসিক বা তাত্ত্বিক যন্ত্র, যা জ্ঞানের উৎপত্তি বা যাচাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।
দর্শনের দৃষ্টিতে epistemic device হলো সেই মানসিক বা ধারণাগত ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আমরা জানি এবং বুঝি “কীভাবে জানি যে, আমরা জানি।” এটি জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া ও তার যৌক্তিক ভিত্তি উভয়ই নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কোনো জিনিসকে দেখি, শুনি, চিন্তা করি বা অনুমান করি—এই সবই জ্ঞানলাভের বিভিন্ন উপকরণ বা epistemic device।
ভারতীয় দর্শনে এই ধারণাটি প্রকাশিত হয়েছে প্রমাণতত্ত্বে। এখানে প্রমাণ (pramāṇa) মানে সেই উপায়, যার দ্বারা সত্য জ্ঞান জন্মায়। অর্থাৎ, প্রমাণই হলো ভারতীয় পরিভাষায় epistemic device। ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, মীমাংসা ও বেদান্ত—সব দর্শনই নিজস্ব প্রমাণতত্ত্ব স্থাপন করেছে। যেমন—
১. প্রত্যক্ষ (perception)—ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান লাভ।
২. অনুমান (inference)—যুক্তি ও চিহ্নের সাহায্যে অপ্রত্যক্ষ জ্ঞানলাভ।
৩. উপমান (comparison)—তুলনার দ্বারা অপরিচিত জ্ঞানের উপলব্ধি।
৪. শব্দপ্রমাণ (testimony)—শাস্ত্র বা বিশ্বাসযোগ্য বাক্যের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন।
এই প্রমাণগুলোই ন্যায় ও অন্যান্য ভারতীয় দর্শনে epistemic device হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ, এগুলি জ্ঞান উৎপন্ন করার প্রক্রিয়া বা মাধ্যম—যা আমাদের ভুল থেকে সত্যের দিকে নিয়ে যায়।
আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞানতত্ত্বেও “epistemic device” শব্দটি আরও বিস্তৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে এটি বোঝায় এমন কোনো তত্ত্বগত কাঠামো (theoretical framework) বা মানবীয় জ্ঞানের যাচাইয়ের পদ্ধতি, যেমন গণিতীয় মডেল, যুক্তিবিদ্যা, বা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, যা প্রমাণ করে, কোনো জ্ঞান কতটা যৌক্তিক বা সত্যের কাছাকাছি।