এই তিন গুণ একে অপরের সঙ্গে মিশে থাকে; কোনো মানুষই একটিমাত্র গুণে গঠিত নয়। কখনো সত্ত্ব প্রাধান্য পায়, কখনো রজঃ, কখনো তমঃ। গীতা (১৪.১০) বলে—“রজস্তমশ্চাভিভূয সত্ত্বং ভবতি ভারত”—অর্থাৎ, কখনো এক গুণ অন্য দুই গুণকে আচ্ছন্ন করে; এভাবেই মন ও কর্মের ওঠানামা ঘটে।
গীতায় যখন বলা হয়েছে—“রজস্তমশ্চাভিভূয সত্ত্বং ভবতি ভারত” (গীতা ১৪.১০)—অর্থাৎ, “কখনো সত্ত্ব রজঃ ও তমঃকে আচ্ছন্ন করে, কখনো রজঃ সত্ত্ব ও তমঃকে আচ্ছন্ন করে, আবার কখনো তমঃ সত্ত্ব ও রজঃকে আচ্ছন্ন করে”—এর অর্থ হলো, মানুষের চেতনা বা মানসিক অবস্থা কখনও একরকম থাকে না; জীবনের ভেতরে তিনটি গুণই সবসময় থাকে, কিন্তু এক সময়ে একটি গুণ প্রাধান্য পায় এবং বাকিগুলিকে আচ্ছন্ন বা দুর্বল করে রাখে।
এই “আচ্ছন্ন করা” মানে ধ্বংস করা নয়, বরং অস্থায়ীভাবে প্রভাবহীন করা—যেমন দিনে আলো থাকলে অন্ধকার থাকে না, কিন্তু অন্ধকার পুরোপুরি মুছে যায় না; সূর্য ডুবলেই আবার প্রকাশ পায়। তেমনি মন যখন শান্ত ও পবিত্র (সত্ত্বে প্রাধান্য পায়), তখন কামনা-ক্রোধ বা অলসতা (রজঃ ও তমঃ) নিস্তেজ হয়ে যায়। আবার যখন ইচ্ছা, প্রতিযোগিতা বা ফলের লোভ প্রবল হয় (রজঃ প্রাধান্য পায়), তখন জ্ঞানের শান্তি ও স্থিরতা (সত্ত্ব) আড়াল হয়ে যায়, এবং অজ্ঞানতা (তমঃ) অপেক্ষা করে। আবার যখন ক্লান্তি, অলসতা বা বিভ্রান্তি আসে (তমঃ প্রাধান্য পায়), তখন না জ্ঞান থাকে, না কর্ম—উভয়ই অন্ধকারে ঢেকে যায়।
এই তিন গুণের পরিবর্তন যেন ঢেউয়ের মতো—একটি উঠে আসে, আরেকটি থেমে যায়। মন তাই কখনো উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ (সত্ত্ব), কখনো উদ্যমী ও উদ্বেল (রজঃ), আবার কখনো ভারী ও নিস্তেজ (তমঃ)।
যেমন—ভোরে মন শান্ত ও পরিষ্কার থাকে—এ সময় সত্ত্বগুণ প্রাধান্য পায়। দিনের কর্মব্যস্ততায় মন তৎপর, উদ্যমী—এ সময় রজোগুণ কার্যকর। রাতে ক্লান্তি, ঘুম ও জড়তা এসে মন ঢেকে দেয়—এ সময় তমোগুণ প্রাধান্য পায়।
গীতা (১৪.১০) এই পরিবর্তনকে “গুণানাম্ পরিবর্তঃ” বলে—প্রকৃতি সর্বদা গুণের ওঠানামায় ভর করে থাকে, আর যতক্ষণ এই ওঠানামা চলবে, ততক্ষণ চেতনা অস্থির থাকবে।
মুক্তি বা আত্মজ্ঞান তখনই আসে, যখন সাধক এই গুণচক্রের ঊর্ধ্বে উঠে দাঁড়ায়—অর্থাৎ, বুঝতে পারে, “আমি গুণ নই; গুণেরা আমার নয়; তারা প্রকৃতির খেলা।” তখন সে থাকে এক নিঃস্পৃহ সাক্ষী হয়ে, যেখানে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ তিনেই আত্মার আলোয় প্রতিফলিত হয়, কিন্তু তাকে ছুঁতে পারে না।
অবশেষে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যে-ব্যক্তি এই তিন গুণকেই অতিক্রম করতে পারে—যিনি জানেন “গুণাইব গুণান্ বর্তন্তে” (গীতা ৩.২৮)—অর্থাৎ, “গুণই গুণে ক্রিয়া করে, আমি কর্তা নই”—তিনি মুক্ত। তিনি আর গুণের দাস নন, গুণের সাক্ষী হন।
সাত্ত্বিক গুণ আলো ও জ্ঞানের পথে, রাজস গুণ কর্ম ও আকাঙ্ক্ষার পথে, তামস গুণ জড়তা ও অজ্ঞানতার পথে চালিত করে। কিন্তু আত্মজ্ঞান তখনই আসে, যখন সাধক এই তিন পথের ঊর্ধ্বে উঠে যান—যখন তিনি জানেন, আমি কোনো গুণ নই, আমি সেই চৈতন্য, যার উপস্থিতিতে সব গুণ প্রকাশিত হয়, আবার লয় পায়।
“মনই রথের লাগাম”—এই উক্তিটি কঠ উপনিষদ-এর বিখ্যাত রথদৃষ্টান্ত থেকে এসেছে (কঠ উপনিষদ, ১.৩.৩-১.৩.৯), যেখানে মানবজীবন, শরীর, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি ও আত্মার সম্পর্ক এক গভীর উপমার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে।
উপনিষদে বলা হয়েছে—“আত্মানং রথিনং বিদ্ধি, শরীরং রথমেব তু; বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি, মনঃ প্রগ্রাহমেব চ।” অর্থাৎ, আত্মা হচ্ছে রথের আরোহী, শরীর রথ, বুদ্ধি সারথি বা চালক, আর মন হচ্ছে লাগাম। ইন্দ্রিয়গুলি রথের ঘোড়া, আর তাদের বিষয়—রূপ, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ হলো রথের চলার পথ।
এই উপমার তাৎপর্য হলো—মানুষের শরীর হলো এক রথের মতো বাহন, যা ইন্দ্রিয়ের ঘোড়া দ্বারা চালিত হয়। এই ঘোড়াগুলির লাগাম হিসেবে মন কাজ করে, আর বুদ্ধি সেই লাগাম ধরে রাখে ও দিশা নির্ধারণ করে। আত্মা হচ্ছে আসল আরোহী—সে এই রথে বসে অভিজ্ঞতার পথ অতিক্রম করে।
যদি মন (লাগাম) অস্থির হয়, দিশাহীন হয়, তবে ইন্দ্রিয়ঘোড়াগুলি ছুটে যায় নানা দিকে—তখন রথ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইন্দ্রিয় তখন বিষয়ভোগে মগ্ন হয়, আত্মা তখন জগতের আকর্ষণে বন্দি হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি মন স্থির হয়, বুদ্ধি দৃঢ়ভাবে লাগাম ধরে রাখে, তবে রথ সঠিক পথে চলে, আত্মা গন্তব্যে—আত্মজ্ঞান বা মুক্তিতে—পৌঁছে যায়।
এই দৃষ্টান্তের শিক্ষা হলো—মন হচ্ছে সেই সূক্ষ্ম শক্তি, যা ইন্দ্রিয়ের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন-লাগাম না থাকলে ঘোড়া ছুটে যায়; লাগাম থাকলে ঘোড়া চালকের ইচ্ছামতো (নির্দেশ অনুযায়ী) চলে। তেমনি মন যদি বুদ্ধির নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রিত হয়; আর যদি মন নিজেই ইন্দ্রিয়ের টানে ভেসে যায়, তবে আত্মা বন্ধনে পতিত হয়।
“মনই রথের লাগাম” মানে হলো—মন সেই মাধ্যম, যার দ্বারা ইন্দ্রিয় ও আত্মার মধ্যে সংযোগ ও নিয়ন্ত্রণ ঘটে। মন সংযত থাকলে জীবন সুশৃঙ্খল হয়, জ্ঞান উদিত হয়; আর মন চঞ্চল হলে ইন্দ্রিয় উন্মত্ত হয়, আত্মা বিভ্রান্ত হয়। তাই গীতা (৬.৫) বলে—“উদ্ধরেদ্ আত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত্”—মনই বন্ধন, মনই মুক্তি; লাগাম যদি হাতে থাকে, রথ আপনিই সঠিক পথে চলে।
বুদ্ধি (Buddhi) হলো সিদ্ধান্ত ও বিচারের শক্তি। মন যেখানে বিকল্প নিয়ে খেলে, বুদ্ধি সেখানে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। বুদ্ধিই বলে—“এটাই ঠিক, এটা ভুল”, “এটাই করণীয়”। এটি জ্ঞান ও বিচারবোধের আধার। গীতা (১৮.৩০) বলে—“বুদ্ধিরেন মাভি গচ্ছতি”—বুদ্ধির দ্বারা মানুষ পরম লক্ষ্যকে উপলব্ধি করে। তাই বুদ্ধি মনকে নির্দেশ দেয়, মন ইন্দ্রিয়কে চালায়, আর ইন্দ্রিয় জগৎ থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে।
অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে, বুদ্ধিই জ্ঞান ও বিচারবোধের আধার—জ্ঞান বা বিচারবোধ বুদ্ধির গুণ, অর্থাৎ, বুদ্ধি (buddhi) হলো সেই সূক্ষ্ম অন্তঃকরণ বা মানসিক অঙ্গ, যার মধ্যে আত্মচেতনার আলো প্রতিফলিত হলে জ্ঞান (জানার ক্ষমতা) ও বিবেক (বিচারবোধ) জন্ম নেয়। যেমন আয়না নিজে আলো নয়, কিন্তু আলোর প্রতিফলন ঘটলে তাতে রূপ দেখা যায়—তেমনি বুদ্ধি নিজে জ্ঞান নয়, কিন্তু চেতনার প্রতিফলন হলে তাতে জ্ঞান ও বিচার প্রকাশ পায়।
উপনিষদীয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী—আত্মা বা চৈতন্য সর্বদা স্বপ্রকাশমান, কিন্তু জড়প্রকৃতি (মন, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয় ইত্যাদি) নিজে অচেতনা। এই দুইয়ের সংযোগেই অভিজ্ঞতা সম্ভব। চৈতন্য যখন বুদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়, তখন সেই প্রতিফলিত বুদ্ধি “জানার” ক্ষমতা পায়—এই প্রতিফলনই জ্ঞান, আর সেই জ্ঞানের সূক্ষ্ম ব্যবহারই বিচারবোধ বা বিবেক।
“বুদ্ধি প্রতিবিম্বিতচৈতন্যাবাসাত্ সচেতনা ইতি অভিমান্যতে”—এই উক্তিটি অদ্বৈত বেদান্তের এক মৌলিক তত্ত্বের সংক্ষিপ্ত প্রকাশ। এর ভাব পাওয়া যায় শঙ্কর ও তাঁর পরবর্তী আচার্যদের রচনায়—বিশেষত ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, পঞ্চদশী, বেদান্তসার, ও বিবরণপ্রকাশিকা-তে। এই ধারণাকে বলা হয় চিদাবাস তত্ত্ব (চিদ্ অর্থাৎ, চৈতন্য, আবাস অর্থাৎ, প্রতিবিম্ব বা প্রতিফলন)।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আত্মা বা ব্রহ্ম চৈতন্য স্বয়ং নিস্পৃহ, সর্বব্যাপী ও অবিকৃত; কিন্তু যখন সেই চৈতন্য সূক্ষ্ম বুদ্ধিতত্ত্বে প্রতিফলিত হয়, তখন তার প্রতিফলনকে বলা হয় চিদাবাস—“প্রতিবিম্বিত চৈতন্য”। এই চিদাবাসের উপস্থিতিতেই বুদ্ধি সচেতন বলে মনে হয়, যদিও বুদ্ধি নিজে জড়। যেমন আয়না নিজে আলো নয়, কিন্তু সূর্যালোক পড়লে উজ্জ্বল মনে হয়, তেমনি বুদ্ধি নিজে অচেতন, কিন্তু চৈতন্যের প্রতিফলনে তা জ্ঞানের আধার হয়ে ওঠে।
বিদ্যারণ্য স্বামী পঞ্চদশী (২.১৩)-তে বলেন—“চিদ্ব্যাপ্তৌ বুদ্ধিনাভাসে চিদাবাসঃ প্রজায়তে”—অর্থাৎ, যখন সর্বব্যাপী চেতনা বুদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়, তখন চিদাবাস জন্ম নেয়। এই চিদাবাসই মানুষের অভিজ্ঞতাকে সচেতন করে তোলে—“আমি দেখি”, “আমি জানি”, “আমি ভাবি”—এই অনুভব আসলে আত্মার নয়, প্রতিফলিত চেতনার ক্রিয়া।
একই ভাব বেদান্তসার (৪১-৪২)-এও আছে—“চৈতন্যস্য বুদ্ধ্যুপাধৌ প্রতিবিম্বঃ চিদাবাসঃ। তদ্বৎ বুদ্ধিরপি চিদাবাসসংযোগাত্ সচেতনাবিমতিঃ।” অর্থাৎ, চৈতন্য যখন বুদ্ধির উপাধিতে প্রতিবিম্বিত হয়, তখন তাকে চিদাবাস বলা হয়; এবং সেই প্রতিফলনের কারণেই বুদ্ধিকে সচেতন মনে হয়।
এই কথাটিই শঙ্করাচার্যের ভাবানুসারে আরও স্পষ্টভাবে ব্রহ্মসূত্রভাষ্য (২.৩.৫০)-এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে—“যথা দর্পণাদৌ চিত্রাভাসঃ, তথৈব চৈতন্যমপি বুদ্ধ্যভাসমুপৈতি”—যেমন আয়না প্রভৃতির মধ্যে কোনো রূপের প্রতিফলন দেখা যায়, তেমনি চৈতন্যও বুদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়।
এখানে “দর্পণাদৌ” মানে কেবল আয়নায় নয়, বরং যে-কোনো প্রতিফলনকারী স্থানে—যেমন জলে, পালিশ-করা ধাতুতে, বা স্বচ্ছ কাচে—যেখানে মূল বস্তুর প্রতিচ্ছবি পড়ে। “দর্পণাদৌ” শব্দটি বেদান্তে আত্মা ও বুদ্ধির সম্পর্ক বোঝানোর এক সূক্ষ্ম রূপক—যেখানে বুদ্ধি হলো আয়না, আত্মা হলো আলোকস্বরূপ চৈতন্য, আর চিদাবাস বা প্রতিফলিত চেতনা হলো সেই আলোর প্রতিবিম্ব, যা “আমি জানি” বা “আমি দেখি”—এই অনুভবকে সম্ভব করে তোলে।
“বুদ্ধি প্রতিবিম্বিতচৈতন্যাবাসাত্ সচেতনা ইতি অভিমান্যতে” বাক্যটির সারার্থ হলো—বুদ্ধি নিজে জড়, কিন্তু আত্মার চেতনা তাতে প্রতিফলিত হওয়ার দরুন তা সচেতন বলে প্রতীয়মান হয়। সেই প্রতিবিম্ব থেকেই জন্ম নেয় জ্ঞান (চিন্তা, বোধ, উপলব্ধি) ও বিচারবোধ (সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণের ক্ষমতা)। আত্মা চেতনার উৎস, বুদ্ধি তার প্রতিফলনধারক, আর এই প্রতিফলন থেকেই মানুষের মধ্যে “আমি জানি” বা “আমি ভাবি”, এমন অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়। চৈতন্য নিজে অক্রিয়, কিন্তু তার প্রতিফলনের কারণে বুদ্ধি, মন ও ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয়; যেন চাঁদের আলোয় সাগর জ্বলে ওঠে, কিন্তু চাঁদ নিজে কখনও সাগরের ঢেউয়ে অংশ নেয় না।
তাই বলা যায়—আত্মা হলো চৈতন্যের উৎস। বুদ্ধি হলো সেই চৈতন্যের প্রতিবিম্ব ধারণের আধার। জ্ঞান ও বিচারবোধ হলো সেই প্রতিফলিত চেতনার কার্য বা প্রকাশ।
অন্যভাবে বললে—জ্ঞান ও বিচারবোধ বুদ্ধির মধ্যে “ঘটে”, কিন্তু তাদের উৎস আত্মচৈতন্য। যেমন জল চাঁদের প্রতিবিম্ব ধারণ করে, কিন্তু চাঁদ জলের মধ্যে নেই—তেমনি আত্মা বুদ্ধির মধ্যে প্রতিফলিত হয়, কিন্তু আত্মা বুদ্ধির অন্তর্গত নয়।
বুদ্ধিই জ্ঞান ও বিচারবোধের আধার; জ্ঞান বুদ্ধির আধার নয়—বরং বুদ্ধিতে আত্মচেতনার প্রতিফলন ঘটলেই জ্ঞান ও বিচারবোধ প্রকাশিত হয়।
চিত্ত (Citta) হলো স্মৃতিশক্তি বা সংস্কারভাণ্ডার। এটি অতীতের সব অভিজ্ঞতা, চিন্তা, অনুভব ও আবেগ সংরক্ষণ করে রাখে। যখন কোনো অভিজ্ঞতা পুনরায় মনকে স্পর্শ করে, চিত্ত সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। যেমন, আপনি যদি গোলাপের গন্ধ পান, চিত্ত সঙ্গে সঙ্গে আগের গোলাপের স্মৃতি জাগায়—“এ গন্ধ আমি আগে পেয়েছিলাম।” তাই চিত্ত হলো অবচেতনের ভাণ্ডার, যার উপর মনের কার্য নির্ভর করে।
বেদান্তে “চিত্ত সংস্কারভাণ্ডার” বলতে বোঝানো হয়—চিত্ত হচ্ছে তার নিজের মধ্যে সঞ্চিত সমস্ত অভিজ্ঞতা, স্মৃতি, বাসনা ও অভ্যাসের সংরক্ষণ-স্থান বা ভাণ্ডার। এটি মানুষের মানসিক গঠন ও পুনর্জন্মচক্র বোঝার একটি মৌলিক ধারণা।
চিত্ত (citta) শব্দের অর্থ মননের সেই স্তর, যা সংগ্রহশক্তি হিসেবে কাজ করে। মন চিন্তা করে, বুদ্ধি সিদ্ধান্ত নেয়, অহংকার “আমি”-বোধ সৃষ্টি করে—আর চিত্ত সেই সব চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও ক্রিয়ার চিহ্ন বা ছাপ (সংস্কার) সঞ্চয় করে রাখে।
প্রত্যেকটি চিন্তা—অনুভূতি বা কর্ম মনের উপর একটি সূক্ষ্ম ছাপ রেখে যায়—এটাই সংস্কার। যেমন একটি পাথরে বার বার জল পড়লে দাগ পড়ে, তেমনি প্রতিটি অভিজ্ঞতা চিত্তে এক-একটি রেখা ফেলে যায়। এই রেখাগুলিই পরবর্তীতে বাসনা (ইচ্ছা) হিসেবে ফিরে আসে—কখনো জাগ্রত জীবনে, কখনো স্বপ্নে, আবার কখনো ভবিষ্যৎ জন্মে।