অন্তর-প্রত্যক্ষতা অন্তর্দর্শনের ঠিক এই সীমা অতিক্রম করে। এটি বিশ্লেষণের নয়, অভিজ্ঞতার স্তর—যেখানে মন নিজের বিশ্লেষণ থামিয়ে সরাসরি নিজের আলোয় জেগে ওঠে। এখানে চিন্তা থেমে যায়, যুক্তি স্তব্ধ, ভাষা নীরব, তবু চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্রত। এটি এমন এক অবস্থান, যেখানে দেখা এবং দেখা-যাওয়া, জানার ক্রিয়া ও জানার বিষয়—সব একাকার হয়ে যায়। জ্ঞাতা ও জ্ঞান, বোধ ও বস্তুর মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকে না।
এই অবস্থায় আর কোনো প্রতিফলন নেই; মন আয়না নয়, নিজেই আলো। অন্তর্দর্শন যেখানে চিন্তার প্রতিফলন, অন্তর-প্রত্যক্ষতা সেখানে চিন্তার উৎস—অন্তরের দীপ্ত উপস্থিতি। এখানে “আমি জানি” বাক্যটিও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়, কারণ জানানো ও জানা একই মুহূর্তে ঘটে, একই সত্তায়।
এই নীরব উজ্জ্বলতাই জৈন দর্শনের “সজাগ নীরবতা”—যেখানে চেতনা কোনো বস্তুকে জানে না, বরং নিজের মধ্যেই জ্ঞানের উৎস হিসেবে দীপ্ত হয়। এটি আর চিন্তার ফল নয়, বরং স্বরূপের জাগরণ—এক এমন অন্তর্দৃষ্টি, যেখানে মানুষ সত্যকে বিশ্লেষণ করে না, সত্যের মধ্যেই অবস্থান করে। অন্তর্দর্শন যেখানে বিশ্লেষণ, অন্তর-প্রত্যক্ষতা সেখানে জীবন—নিঃশব্দ, কিন্তু সম্পূর্ণ জাগ্রত; শব্দহীন, কিন্তু সীমাহীনভাবে সচেতন।
এই অবস্থায় জ্ঞান আর তথ্য নয়, অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। মানুষ তখন সত্যকে বাইরে থেকে ধরে না, ভেতর থেকে বাঁচে (সত্যেই জীবনযাপন করে)। তাই বলা হয়, সত্য প্রকাশিত নয়, প্রত্যক্ষিত—কারণ এটি কোনো বক্তব্য নয়, এক জীবন্ত অনুভব। এই অন্তর-প্রত্যক্ষতা-ই জৈন দর্শনের নীরব সাধনার শেষ সোপান—যেখানে ভাষা নিঃশেষে থেমে যায়, কিন্তু চেতনার আলো অনন্তভাবে জেগে থাকে। এখানেই মানুষ প্রথম বুঝতে শেখে, জ্ঞান মানে জানা নয়, বরং থাকা—এক এমন থাকা, যা নিজের মধ্যেই পূর্ণ, নিঃশব্দ, তবু অসীমভাবে সচেতন।
তাই “স্যাদ অবক্তব্যঃ” শেষ কথা নয়, বরং শেষ ভঙ্গিমা—যেখানে চিন্তা-বাক্য আমাদের দুয়ার পর্যন্ত আনে, তারপর আমরা পদার্পণ করি নীরব অভিজ্ঞতায়। সেখানে সত্য কোনো তত্ত্ব নয়—জীবন্ত, স্পন্দিত, বর্ণনাতীত উপস্থিতি: কথা তার চারপাশে ঘোরে; দেখা তাকে ঠিকই চেনে। এখানেই জৈন সাধনার সিদ্ধি—শব্দকে শত্রু বানানো নয়, তাকে সৎ সীমা দেখিয়ে অভিজ্ঞতার দিকে নম্রভাবে সরিয়ে দেওয়া; যাতে জ্ঞান তীক্ষ্ণ হয়, বাক্য স্বচ্ছ হয়, আর নীরবতা—প্রাণবন্ত।
পঞ্চম দৃষ্টিকোণে, আমরা বলতে পারি—“ঘট আছে এবং তা সম্পর্কে অবক্তব্য”—এটি হলো অস্ত্য-বক্তব্য (syād asti ca avaktavyaḥ)। অর্থাৎ, ঘটের অস্তিত্ব বর্তমান, কিন্তু তার প্রকৃতি এত জটিল যে, ভাষা ও চিন্তা তা সম্পূর্ণভাবে ধরতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ঘট আছে, কিন্তু তার উপাদান, রূপান্তর ও কারণ-ফল সম্পর্ক এমন যে, “আছে” বললেও সেই “আছে”-র প্রকৃত বোধ ভাষায় সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় না।
“স্যাদ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” (syād asti ca avaktavyaḥ)—এই সিদ্ধান্তটি জৈন দর্শনের সপ্তভঙ্গি নয়-এর পঞ্চম ভঙ্গ, অর্থাৎ সেই অবস্থান, যেখানে অস্তিত্ব ও অবক্তব্য—দুটি ভিন্ন স্তর একসাথে অনুভূত হয়, কিন্তু ভাষায় সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায় না। এটি “স্যাদ অস্তি”, “স্যাদ নাস্তি” এবং “স্যাদ অবক্তব্যঃ”—এই তিন ভঙ্গের যৌথ রূপ, একপ্রকার সংশ্লেষ, যেখানে জৈন দার্শনিকতা তার সর্বাধিক সূক্ষ্ম ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন রূপে পৌঁছায়।
শব্দগত দিক থেকে “স্যাৎ” মানে “সম্ভবত” বা “কোনো এক প্রেক্ষিতে”, “অস্তি” মানে “আছে” বা “বিদ্যমান”, “চ” মানে “এবং”, এবং “অবক্তব্যঃ” মানে “যা বলা যায় না” বা “যা ভাষার বাইরে।” সুতরাং “স্যাদ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” অর্থ দাঁড়ায়—“কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তুটি আছে, কিন্তু তার অস্তিত্বকে পুরোপুরি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
এই অবস্থায় জৈন চিন্তা আমাদের এমন এক সূক্ষ্ম স্তরে নিয়ে যায়, যেখানে অস্তিত্ব ও ভাষার সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়ে। “স্যাদ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” বোঝায় যে, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব বাস্তব ও স্পষ্ট হতে পারে, কিন্তু সেই অস্তিত্বের পূর্ণ সত্য—তার সমস্ত দিক, পরিবর্তন, প্রেক্ষা (পর্যালোচনা) ও সম্ভাবনাকে—ভাষা ধারণ করতে পারে না। কারণ ভাষা রৈখিক, অথচ অস্তিত্ব বহুমাত্রিক; ভাষা একমুহূর্তে একটি দিককে ধরে, কিন্তু অস্তিত্ব একইসঙ্গে অসংখ্য দিক নিয়ে প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একটি শিখা—একটি দীপের জ্বলন্ত শিখা। এক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, শিখাটি আছে (স্যাদ অস্তি), কারণ আমরা তা দেখি, তার তাপ অনুভব করি। কিন্তু যখনই বলি “এই শিখাটি”, তখন আমরা একটি গতিশীল প্রক্রিয়াকে স্থির করে ফেলি, অথচ সেই মুহূর্তেই শিখার কণা, গ্যাস, আলো, তাপ বদলে যাচ্ছে—যা ভাষা ধারণ করতে পারে না। ফলে এই “আছে”-এর অভিজ্ঞতাটি একযোগে “অবক্তব্য”—বলা যায় না।
এইভাবেই “স্যাদ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” আমাদের শেখায় যে, অস্তিত্ব ও বাচ্যতার মধ্যে এক সূক্ষ্ম ব্যবধান রয়েছে। কোনো বস্তুর বাস্তব উপস্থিতি উপলব্ধিযোগ্য হলেও, তার সামগ্রিক রূপ প্রকাশযোগ্য নয়। এই উপলব্ধি একদিকে আমাদের যুক্তির সীমা দেখায়, অন্যদিকে এক গভীর দার্শনিক বিনয় শেখায়—জানা মানেই প্রকাশ নয়; অনেক সত্য কেবল অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেই ধরা দেয়, বাক্যের ক্ষেত্রে নয়।
জৈন আচার্যদের মতে জ্ঞান মানে শুধু জানা নয়, আবার না-জানাও জ্ঞানের বিপরীত নয়। দুটোই একসঙ্গে থাকতে পারে। তাঁরা একে বলেন ‘দ্বৈত ঐক্য’—যেখানে জানা ও না-জানার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, বরং সহাবস্থান আছে। এই ভাবনা থেকেই আসে অনেকান্তবাদ (anekāntavāda) বা বহুমুখী সত্য-তত্ত্ব। এর মূল কথা হলো—সত্যকে একমাত্রিকভাবে ধরা যায় না।
কোনো বিষয়ের অনেক দিক থাকে। আমরা যখন কোনো একটি দিক বুঝতে পারি, তখন সেটি হয় “স্যাদ্ অস্তি”—মানে, “এই দিক থেকে বললে এটি সত্য।” কিন্তু একই সত্যের অন্য দিকটি আমাদের জ্ঞান বা ভাষার নাগালের বাইরে থেকে যায়। সেই দিকটি হয় “অবক্তব্য”—মানে, “যা বলা যায় না।” অর্থাৎ, জৈন দর্শনের মতে সত্য কখনো পুরোপুরি ধরা পড়ে না। একদিকে যা আমরা বুঝি, তা আংশিক সত্য; অন্যদিকে যা আমাদের অগোচর, তা অব্যক্ত। এই দুইয়ের মিলেই সম্পূর্ণ বাস্তবতা গঠিত হয়।
এখানে ভাষা একধরনের আত্মসমর্পণ করে; কারণ “স্যাদ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” বলে—আমি জানি যে, এটি আছে, কিন্তু আমি একে নিয়ে সম্পূর্ণভাবে বলতে পারি না। এই স্বীকারোক্তি শুধু জৈন যুক্তির পরিণতি নয়, এক গভীর আধ্যাত্মিক নতিও—যেখানে মানুষ সত্যের কাছে বিনীতভাবে স্বীকার করে যে, জ্ঞান ও ভাষা উভয়েরই সীমা আছে।
অদ্বৈত বেদান্তে যেমন ঘোষণা করা হয়েছে—“যত্র বাচো নিবর্তন্তে, প্রত্যনু মানসা সহ” (তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ২.৯)—অর্থাৎ, যে-সত্যের কাছে পৌঁছালে বাক্য ও মন ফিরে আসে, কারণ সেখানে ভাষা ও চিন্তা দুটোই অক্ষম, সেই ব্রহ্মানুভব শব্দের সীমা ছাড়িয়ে যায়—তেমনি জৈন দর্শনের “স্যাদ্ অস্তি চ অবক্তব্যঃ” একই অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করে, তবে একক ব্রহ্মতত্ত্বের বদলে বহুমাত্রিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে।
অদ্বৈত বলে—ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, বাক্য ও মন তাকে প্রকাশ করতে পারে না, কারণ যা-কিছু বলা যায়, তা আপেক্ষিক জগতের অংশ; আর জৈন তত্ত্ব বলে—অস্তিত্ব আছে, কিন্তু তার পূর্ণ রূপ বলা যায় না, কারণ প্রতিটি উপলব্ধি সীমাবদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে আসে। একদিকে যেখানে শঙ্কর বলেন, “নেতি নেতি”—“এ নয়, ও নয়” (বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২.৩.৬)—অর্থাৎ ব্রহ্মকে কোনো নির্দিষ্ট রূপ বা বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা যায় না, সেখানেই জৈন আচার্য বলেন, “স্যাদ্ অস্তি চ অবক্তব্যঃ”—“এটি আছে, তবে অবর্ণনীয়।”
এই দুই দর্শনই শেষ পর্যন্ত নীরবতার অভিজ্ঞতায় মিলিত হয়—যেখানে জানা ও না-জানার, বলা ও না-বলার সীমা লুপ্ত হয়। বেদান্ত বলে, “একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি” (ঋগ্বেদ, ১.১৬৪.৪৬)—সত্য এক, কিন্তু জ্ঞানীরা তাকে নানা নামে ডাকে; আর জৈন দর্শন সেই নানা নাম, নানা দৃষ্টিকোণকেই স্বীকার করে বলে, সত্য বহুমুখী, তবু একাত্ম।
তাই পঞ্চম ভঙ্গ বা দৃষ্টিকোণ—“স্যাদ্ অস্তি চ অবক্তব্যঃ”—আমাদের চিন্তার প্রান্তে এনে দাঁড় করায় সেই নীরব স্থানে, যেখানে বাক্য থেমে যায়, কিন্তু চেতনা জেগে ওঠে। সেখানে বলা বা শোনা নয়, কেবল উপলব্ধিই সত্যের ভাষা—যেখানে বেদান্তের নিঃশব্দ ব্রহ্ম ও জৈন তত্ত্বের বহুরূপ বাস্তবতা একই পরম নীরবতায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
ষষ্ঠ অবস্থান হলো নাস্ত্য-বক্তব্য (syād nāsti ca avaktavyaḥ)। কখনো আমরা বলতে পারি—“ঘট নেই,” কারণ তা ভেঙে গেছে বা অন্যত্র চলে গেছে; তবুও তার চিহ্ন, স্মৃতি বা সম্ভাবনা কোনো না কোনোভাবে থেকে গেছে, যা ভাষায় ধরা যায় না। এই অবস্থায় ঘটের অনস্তিত্ব যেমন আংশিক সত্য, তেমনি তার অভিব্যক্তির সীমাবদ্ধতাও সত্য।
“স্যাদ নাস্তি চ অবক্তব্যঃ” (syād nāsti ca avaktavyaḥ)—এই ভঙ্গটি জৈন দর্শনের সপ্তভঙ্গী নয়-এর ষষ্ঠ সিদ্ধান্ত, যেখানে অনস্তিত্ব (nāsattva) ও অবাচ্যতা (avaktavyatva)—এই দুই দিকের যুগপৎ সত্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। “স্যাৎ” মানে “সম্ভবত” বা “কোনো এক প্রেক্ষাপটে”, “নাস্তি” মানে “নেই”, “চ” মানে “এবং”, আর “অবক্তব্যঃ” মানে “যা বলা যায় না”, “যা ভাষার সীমার বাইরে।” সুতরাং এর আক্ষরিক অর্থ—“কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তুটি নেই, এবং তার এই অনস্তিত্ব ভাষায় পুরোপুরি বলা যায় না।”
এই সিদ্ধান্তের দার্শনিক তাৎপর্য গভীর। “স্যাদ নাস্তি” বলেছিল—একটি বস্তু অন্য কোনো দৃষ্টিকোণ বা অবস্থায় নেই; কিন্তু যখন সেই অনস্তিত্বকে অস্তিত্বের প্রেক্ষাপটে, অর্থাৎ তার নিজস্ব পরিবর্তনশীল বা সম্পর্কিত বাস্তবতায় বিচার করা হয়, তখন দেখা যায়, সেই অনস্তিত্বকেও ভাষা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না। কারণ “নেই” বলার মধ্যেও কোনো এক স্তরে “আছে”-এর ছায়া রয়ে যায়। যেমন—“এই টেবিলটি এখানে নেই”—এই বাক্যটির মধ্যে “টেবিল”-এর ধারণা থেকেই “নেই”-এর অর্থ নির্ধারিত হচ্ছে। অর্থাৎ, অনস্তিত্ব কখনও পরম নয়, বরং সাপেক্ষ—এবং এই সাপেক্ষতা ভাষার পরিধি ছাড়িয়ে যায়।
ধরা যাক, একটি মাটির কলসি ভেঙে গিয়েছে। এক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়—“স্যাদ নাস্তি”—কলসি নেই, কারণ তার রূপ নষ্ট হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে বলা যায়—“স্যাদ অবক্তব্যঃ”—কারণ মাটির উপাদান এখনও আছে, তার চিহ্ন, তার স্মৃতি, তার রূপান্তর অন্য কোনো রূপে বিদ্যমান। সুতরাং যখন আমরা বলি “নেই”, তখন সেটি সম্পূর্ণ নৈরাশ্য বা শূন্যতা নয়; বরং এমন এক অবস্থা, যেখানে পূর্ববর্তী রূপ অনুপস্থিত হলেও তার সত্তা কোনো অজ্ঞেয় স্তরে রয়ে যায়। এই রূপান্তরের অবস্থাই অবক্তব্য—যা বলা যায় না, কিন্তু নীরবে অনুভব করা যায়।
“স্যাদ নাস্তি চ অবক্তব্যঃ”-এর মধ্যে নিহিত আছে জৈন দর্শনের সেই সূক্ষ্ম উপলব্ধি, যা “নাস্তি”-কে নিঃশেষ নয়, বরং এক প্রকার অপ্রকাশিত অস্তিত্ব হিসেবে দেখে। এটি বলে—যা নেই, সেটিও কোনো না কোনোভাবে আছে; শুধু আমাদের বোধ ও ভাষার সীমা তাকে ধরতে পারে না। এভাবেই জৈন যুক্তিবিদ্যা অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের দ্বন্দ্বকে মিটিয়ে ফেলে এক বৃহত্তর বাস্তবতায়, যেখানে “নেই”-এর মধ্যেও “আছে”-এর সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে।
এই ভঙ্গিটি আমাদের শেখায় যে, “নেই”-ও একপ্রকার সত্য, কিন্তু সেই সত্য বলা যায় না, কারণ ভাষা কেবল স্থির রূপকে ধারণ করতে পারে—যেখানে পরিবর্তন, অনিশ্চয়তা, সম্ভাবনা—এইসব চলমান বাস্তবের প্রকাশ অসম্ভব। জৈন চিন্তায় “স্যাদ নাস্তি চ অবক্তব্যঃ” তাই একপ্রকার অস্তিত্বের নেতিবাচক দ্যুতি—যেখানে অনস্তিত্বও জ্ঞেয়, কিন্তু অবর্ণনীয়।