যেমন একজন মানুষ ভাবে—“আজ সকালে ধ্যান করব”—এটা সংকল্প। পরক্ষণেই ভাবে—“কিন্তু সময় হবে তো?”, “আগে খেয়ে নেব নাকি?”—এটা বিকল্প। মন এভাবেই এক থেকে অন্য চিন্তায় ছুটে চলে, কখনও স্থির হয় না। এই চলমানতা ও দোলাচলই মনের স্বরূপ (আত্মক)।
বুদ্ধি এর বিপরীতে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়—মন যেখানে প্রশ্ন করে, বুদ্ধি সেখানে উত্তর দেয়। তাই বেদান্ত বলে—মন সংকল্প-বিকল্প-আত্মক, বুদ্ধি সিদ্ধান্ত-আত্মিকা। মন জলের মতো তরল, বুদ্ধি পাথরের মতো স্থির। মন ছুটে চলে সম্ভাবনায়, বুদ্ধি সেখানে স্থিরতা আনে।
মন হলো সেই অভ্যন্তরীণ প্রবাহ, যেখানে চেতনা নানা চিন্তা, ইচ্ছা ও দ্বিধার আকারে প্রকাশ পায়; আর বুদ্ধি হলো সেই শক্তি, যা সেই প্রবাহে স্থিরতা আনে। আত্মা নিজে এইসব ক্রিয়ার সাক্ষী—সে না সংকল্প করে, না বিকল্প; কিন্তু তার আলোকেই মন ও বুদ্ধি উভয়ই সক্রিয় হয়।
“বুদ্ধি সিদ্ধান্ত-আত্মিকা”—এই বাক্যটি বেদান্তের সূক্ষ্ম মানসিক বিশ্লেষণের একটি বিশেষ সংজ্ঞা, যার অর্থ হলো—বুদ্ধির প্রকৃত স্বরূপই সিদ্ধান্ত নেওয়া। অর্থাৎ, মন যেখানে চিন্তা ও দ্বিধায় দোলায়, বুদ্ধি সেখানে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছায়—এই সিদ্ধান্তগ্রহণই বুদ্ধির স্বভাব বা আত্মা (আত্মিকা)।
বেদান্তে বলা হয়েছে—মানবচেতনার অন্তঃকরণ চার ভাগে বিভক্ত: মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার। মন সংকল্প-বিকল্প-আত্মক—অর্থাৎ তার কাজ হলো ইচ্ছাপোষণ করা, ভাবা, সন্দেহ করা, বিকল্প বিচার করা। আর বুদ্ধি সিদ্ধান্ত-আত্মিকা—অর্থাৎ, তার কাজ হলো স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া: “এটাই সত্য”, “এটাই করণীয়”, “এটা ভুল”—এই বিচারক্ষমতাই বুদ্ধির স্বরূপ।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কেউ যদি ভাবে—“আজ বাইরে যাব কি যাব না?”—এই প্রশ্ন বা দ্বিধা হলো মনের কাজ। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর সে যদি স্থির করে—“না, আজ যাব না”—এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বুদ্ধির কাজ।
কঠ উপনিষদে (১.৩.৩-১.৩.৯) বোঝাতে বলা হয়েছে—“বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি, মনঃ প্রগ্রাহমেব চ।” অর্থাৎ, বুদ্ধি হলো রথচালক, আর মন হলো লাগাম। চালক যেমন সিদ্ধান্ত নেয়, কোন পথে রথ যাবে, তেমনি বুদ্ধি সিদ্ধান্ত নেয়, মন ও ইন্দ্রিয়কে কোন পথে পরিচালিত করতে হবে।
বুদ্ধি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে “বিচার” (বিবেক) শক্তির মাধ্যমে। এটি মন ও ইন্দ্রিয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, চিত্ত থেকে স্মৃতি নেয়, অহংকার থেকে “আমি”-বোধ পায়, তারপর বিচার করে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, শাশ্বত-অস্থায়ী পার্থক্য নির্ধারণ করে। এই বিচারশক্তিকেই বলা হয় বিবেকবুদ্ধি।
যখন বুদ্ধি অশুদ্ধ থাকে, তখন সে অহংকারের প্রভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়; কিন্তু যখন বুদ্ধি শুদ্ধ ও নির্মল হয়, তখন সে আত্মার দিকে দৃষ্টি দেয়—তখন সে জানে, “আমি দেহ নই, আমি চেতনা।” গীতা (১৮.৩০) এই অবস্থাকে বলে—“যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং চাকার্যমেব চ”—যে-বুদ্ধি ধর্ম-অধর্ম, করণীয়-অকরণীয় বিচার করতে পারে, সেটিই শুদ্ধ বুদ্ধি।
বেদান্তে বিবেক (viveka) ও বুদ্ধি (buddhi) শব্দ দুটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও একই নয়। দুটিই চেতনার সূক্ষ্ম স্তরে কাজ করে, কিন্তু তাদের ভূমিকা ও প্রকৃতি আলাদা।
বুদ্ধি হলো অন্তঃকরণের (অন্তরের যন্ত্রের) এক অঙ্গ, যার কাজ নির্ণয় করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া। এটি মন, চিত্ত ও অহংকারের সঙ্গে মিলে আত্মার জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটায়। বুদ্ধি তথ্য গ্রহণ করে, বিশ্লেষণ করে, এবং একটি স্থির মতামতে পৌঁছায়—“এটা ঠিক”, “এটা ভুল”, “এটাই করণীয়।” তাই বুদ্ধিকে বলা হয় সিদ্ধান্ত-আত্মিকা। এটি মানসিক ক্রিয়ার অংশ, যার পরিসর দৈনন্দিন বিচার থেকে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান পর্যন্ত বিস্তৃত।
অন্যদিকে, বিবেক হলো বুদ্ধির বিশুদ্ধ রূপ, বা বলা যায়, বুদ্ধির জ্ঞানময় পরিণতি। বিবেক মানে “বিভাগ-জ্ঞান”—যা সত্য ও মিথ্যা, নিত্য ও অনিত্য, আত্মা ও অনাত্মার মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম।
শব্দতাত্ত্বিকভাবে, “বিবেক” এসেছে সংস্কৃত বিচ্ ধাতু থেকে—“বি + বিচ্”—অর্থাৎ “যা পৃথক করে বুঝতে পারে”। তাই বিবেক হলো সেই আলোকিত বুদ্ধিশক্তি, যা সব বিভ্রান্তির মধ্যে ভেদ জ্ঞান স্থাপন করে।
“বি” উপসর্গের অর্থ “পৃথকভাবে”, “বিশেষভাবে” বা “ভেদসহকারে”, আর “বিচ্” ধাতুর অর্থ “বিচার করা”, “অনুসন্ধান করা”, “ভেদ করা”। তাই “বি + বিচ্” ধাতু থেকে গঠিত বিবেক শব্দের আক্ষরিক অর্থ—“যে পৃথকভাবে বিচার করে” বা “যে ভেদ করতে জানে”—অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যা, স্থায়ী ও অস্থায়ী, আত্মা ও অনাত্মার মধ্যে পার্থক্য বোঝার শক্তি।
বুদ্ধি যেমন সিদ্ধান্ত নেয়—“এটা করব”, “ওটা ছাড়ব”—বিবেক তেমন বলে—“এটা আত্মা নয়”, “এটা ক্ষণিক”, “এটাই সত্য”। বুদ্ধি কার্যক্ষেত্রে কাজ করে, বিবেক সত্তাজ্ঞান বা সত্য-অসত্য নির্ধারণে কাজ করে।
একটি সহজ উদাহরণে বলা যায়—যখন আপনি বলেন, “এই কাজটা এখন করলে ভালো হবে”—এটা বুদ্ধির সিদ্ধান্ত। আর যখন আপনি উপলব্ধি করেন, “আমি দেহ নই, আমি চেতনা”—এটা বিবেকের জ্ঞান।
বুদ্ধি তখনই সত্যরূপে কার্যকর হয়, যখন তা বিবেক দ্বারা শুদ্ধ হয়। অশুদ্ধ বুদ্ধি অহংকার ও ইন্দ্রিয়ের প্রভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়; কিন্তু শুদ্ধ বুদ্ধি—যা বিবেকবুদ্ধি নামে পরিচিত—সেই আত্মজ্ঞানমুখী জ্ঞান জন্ম দেয়।
গীতা (১৮.৩০) এই পার্থক্যটি সুন্দরভাবে বোঝায়—“যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং চাকার্যমেব চ, অযথা বর্ততে বুদ্ধিঃ সা সাত্ত্বিকী।” অর্থাৎ, যে-বুদ্ধি ধর্ম ও অধর্ম, করণীয় ও অকরণীয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, সেটিই সাত্ত্বিক বা বিবেকসমৃদ্ধ বুদ্ধি।
বুদ্ধি হলো যন্ত্র, বিবেক হলো সেই যন্ত্রের আলোক। বুদ্ধি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বিবেক সত্যকে চিহ্নিত করে। বুদ্ধি হতে পারে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ; বিবেক সর্বদা শুদ্ধতার প্রকাশ। যখন বুদ্ধি বিবেকময় হয়, তখনই জ্ঞান উদিত হয়, আর সেই জ্ঞানই মুক্তির দ্বার—যেখানে আত্মা ও অনাত্মার ভেদ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
বেদান্তে বুদ্ধি হলো সেই সূক্ষ্ম অন্তঃকরণ, যা মন, চিত্ত ও অহংকারের সঙ্গে মিলে জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু এই বুদ্ধি সর্বদা সমান স্বচ্ছ নয়—তার উপর অবিদ্যা, কামনা, রাগ, দ্বেষ, লোভ ইত্যাদির প্রভাব পড়লে সেটি মলিন হয়; আর যখন সেই প্রভাব দূর হয়, তখন তা নির্মল, দীপ্ত ও সত্যনিষ্ঠ হয়। এই দুটি অবস্থাকেই বলা হয় অশুদ্ধ বুদ্ধি ও শুদ্ধ বুদ্ধি।
অশুদ্ধ বুদ্ধি হলো সেই বুদ্ধি, যা কামনা ও অহংকারের দ্বারা আচ্ছন্ন—যেখানে সিদ্ধান্তের ভিত্তি হয় ব্যক্তিগত স্বার্থ, ভয়, লোভ, বা আসক্তি। এ অবস্থায় বুদ্ধি সঠিক বিচার করতে পারে না, কারণ তা স্পষ্ট নয়, কুয়াশায়-ঢাকা আয়নার মতো। যেমন কেউ জানে যে, অন্যায় কাজ ভুল, তবুও লোভ বা ক্রোধে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়—এটাই অশুদ্ধ বুদ্ধির কাজ। গীতায় (২.৪৪) বলা হয়েছে—“ভোগৈশ্বর্যপ্রসক্তানাং তযাপহৃতচেতসাম্, ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিদীয়তে”—অর্থাৎ, যারা ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আসক্ত, তাদের বুদ্ধি স্থির হতে পারে না। এই বুদ্ধিই অশুদ্ধ, কারণ তার বিচার কামনায় বিকৃত।
অশুদ্ধ বুদ্ধি আত্মার আলোক প্রতিফলিত করলেও তা বিকৃতভাবে করে, যেন অস্থির জলের উপর সূর্যকিরণ। এতে সত্য ও মিথ্যা মিশে যায়—মানুষ ভাবে, “আমি দেহ”, “আমি কর্তা”, “আমি সুখী বা দুঃখী।” এ অবস্থায় বুদ্ধি জগতের বিষয়েই আবদ্ধ থাকে, আত্মার দিকে ফেরে না।
অন্যদিকে, শুদ্ধ বুদ্ধি হলো সেই অবস্থা, যখন বুদ্ধি মলিনতা থেকে মুক্ত, শান্ত, স্বচ্ছ ও সত্যবোধী। এতে কামনা বা ভয় নেই, ফলের আসক্তি নেই, কেবল সত্যের প্রতি একনিষ্ঠ আকাঙ্ক্ষা থাকে। শুদ্ধ বুদ্ধি নিজের সিদ্ধান্তে অহংকারের ছায়া রাখে না—এ জানে, “আমি কর্তা নই, ব্রহ্মই একমাত্র কর্তা।”
গীতা (১৮.৩০) শুদ্ধ বুদ্ধি সম্পর্কে বলে—“যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং চাকার্যমেব চ, অযথা বর্ততে বুদ্ধিঃ সা সাত্ত্বিকী”—অর্থাৎ, যে-বুদ্ধি ধর্ম-অধর্ম, করণীয়-অকরণীয় সঠিকভাবে পৃথক করতে পারে, সেই সাত্ত্বিক বা শুদ্ধ বুদ্ধি। আবার (১৮.৩১)-এ বলা হয়েছে, যখন বুদ্ধি ধর্ম ও অধর্মে বিভ্রান্ত হয়, সেটিই রাজস বা তামস বুদ্ধি—অর্থাৎ অশুদ্ধ বুদ্ধি।
শুদ্ধ বুদ্ধি স্থির, নিস্পৃহ, শান্ত ও আত্মমুখী; অশুদ্ধ বুদ্ধি চঞ্চল, আসক্ত ও বাহ্যমুখী। শুদ্ধ বুদ্ধি ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়, অশুদ্ধ বুদ্ধি সংসারের দিকে টানে। শুদ্ধ বুদ্ধি জ্ঞানের জন্ম দেয়, অশুদ্ধ বুদ্ধি মায়ার জাল ঘন করে।
তাই, শুদ্ধ বুদ্ধি মানে সেই অন্তঃকরণ, যা কামনা, রাগ ও অহংকার থেকে মুক্ত হয়ে সত্যকে যেমন আছে তেমনি দেখতে পারে। এটি আয়নার মতো, যেখানে আত্মার প্রতিচ্ছবি বিকৃত নয়—যেখানে চেতনা স্বচ্ছভাবে প্রতিফলিত হয়। অশুদ্ধ বুদ্ধি সেই আয়না, যেখানে ধুলো জমে; তাই আলো প্রতিফলিত হলেও তা মলিন, বিকৃত, অস্পষ্ট।
শুদ্ধ বুদ্ধি অর্জনের পথই যোগ ও সাধনা—ধ্যান, আত্মানুশীলন, নিঃস্বার্থ কর্ম ও ভক্তি। যখন মন শান্ত, বুদ্ধি নির্মল, আর হৃদয় বিনম্র হয়, তখন আত্মার আলো বুদ্ধিতে স্বচ্ছভাবে প্রতিফলিত হয়—এবং সেই প্রতিফলনই প্রকৃত জ্ঞান, যা মুক্তির দ্বার খুলে দেয়।
তাই, “বুদ্ধি সিদ্ধান্ত-আত্মিকা” মানে হলো—বুদ্ধির প্রকৃতি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো, স্থিরতা আনা। মন দোলায়, বুদ্ধি স্থির করে; মন দেখে সম্ভাবনা, বুদ্ধি বলে কোনটা সত্য; মন ইন্দ্রিয়ের টানে ছুটে চলে, বুদ্ধি তার দিক ঠিক করে। আর আত্মা এই সমস্ত ক্রিয়ার নীরব সাক্ষী—যিনি না চিন্তা করেন, না সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু যাঁর আলোকেই মন ও বুদ্ধি সক্রিয় হয়।
গীতায় (বিশেষত অধ্যায় ১৪ ও অধ্যায় ১৭-এ) সাত্ত্বিক, রাজস ও তামস—এই তিনটি শব্দ মানুষের চেতনা, চরিত্র ও কর্মের তিন মৌলিক গুণ বা প্রবণতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলিকে বলা হয় ত্রিগুণ (ত্রিগুণপ্রকৃতি)—প্রকৃতির তিন ধারা, যার দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি ও মানবচেতনার সমস্ত গতি পরিচালিত হয়।
এই ত্রিগুণের ধারণা সাংখ্য দর্শন থেকে উদ্ভূত—যেখানে বলা হয়, প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক শক্তি এই তিন গুণের সমন্বয়ে গঠিত। প্রত্যেক গুণই চেতনার ভিন্ন রং—যেমন আলো, গতি ও অন্ধকার একসঙ্গে মিলে জগতের রূপ দেয়, তেমনি সাত্ত্বিক, রাজস ও তামস মিলে মানুষের মন ও কর্মকে রচনা করে।
সাত্ত্বিক (সত্ত্বগুণ) মানে পবিত্রতা, স্বচ্ছতা, জ্ঞান, শান্তি ও সমতা। গীতা (১৪.৬) বলে—“সত্ত্বং নির্মলতাত্ প্রাকাশকমনাময়ম্, সন্নিবদ্ধাত্”—অর্থাৎ, সত্ত্বগুণ নির্মল ও আলোকময়; এটি সুখ ও জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত। সাত্ত্বিক ব্যক্তি স্বভাবত শান্ত, সংযত, সত্যনিষ্ঠ, সদাচারী এবং আত্মজ্ঞানমুখী। সে কর্ম করে, কিন্তু ফলের আসক্তি রাখে না, মন স্থির রাখে, অন্যের মঙ্গল চায়। সাত্ত্বিকতার প্রতীক হলো স্বচ্ছ আলো—যেখানে কিছুই আড়াল নেই।
রাজস (রজোগুণ) মানে গতি, উদ্যম, কামনা, আকাঙ্ক্ষা ও অস্থিরতা। গীতা (১৪.৭) বলে—“রজঃ রাগাত্মকং বিদ্ধি, তৃষ্ণাসঙ্গসমুদ্ভবম্”—অর্থাৎ, রজোগুণ কামনা ও আসক্তি থেকে জন্মায়। রাজস মানুষ কর্মপ্রবণ, কিন্তু তার কর্মে থাকে ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও ফলের প্রত্যাশা। সে উদ্যমী, লড়াকু, উচ্চাভিলাষী, কিন্তু স্থির নয়—সাফল্যে আনন্দিত হয়, ব্যর্থতায় বিষণ্ণ হয়। রাজসের প্রতীক হলো আন্দোলিত আগুন—যা জ্বলে, দাহ করে—শান্ত নয়।
তামস (তমোগুণ) মানে অন্ধকার, জড়তা, অজ্ঞতা ও অলসতা। গীতা (১৪.৮) বলে—“তমস্ত্বজ্ঞানজং বিদ্ধি মোহনং সর্বদেহিনাম্”—অর্থাৎ, তমোগুণ জন্ম দেয় মূর্খতা, ভ্রান্তি ও নিস্ক্রিয়তা। তামস মানুষ অলস, উদাসীন, ভয় ও সন্দেহে আচ্ছন্ন, সহজে ক্রুদ্ধ বা হতাশ হয়। তার মধ্যে সচেতনতা বা বিবেক কম থাকে; সে ঘুম, বিভ্রান্তি, ও নেতিবাচক প্রবৃত্তির দিকে ঝোঁকে। তমসের প্রতীক হলো ঘন অন্ধকার—যেখানে আলো নেই, গতি নেই।