অবিদ্যা-বিদ্যা: ১০৯


জৈন দর্শনের স্যাদ্বাদ (syādvāda) বা সপ্তভঙ্গী-নয় (saptabhaṅgī-naya) যুক্তিতত্ত্ব বলে—কোনো বাস্তব বস্তুকে একক, স্থির বা চূড়ান্ত সত্যে নির্ধারণ করা যায় না। কারণ, সমস্ত বস্তুর অস্তিত্ব আপেক্ষিক, বহুমাত্রিক ও পরিবর্তনশীল। কোনো সত্যই একক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ নয়; প্রতিটি সত্য আংশিক, এবং তার নির্ভরতা নির্দিষ্ট শর্ত, স্থান, কাল ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। এই কারণে, জৈন যুক্তিবিদ্যা বলে যে, প্রত্যেক বক্তব্যই “স্যাৎ” (syāt)—অর্থাৎ, “যেমন দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়।” সত্য তাই একটি শর্তসাপেক্ষ বিবৃতি; একে সম্পূর্ণ বোঝার জন্য আমাদের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই সত্যের সাতটি সম্ভাব্য রূপ বা সপ্তভঙ্গী-নয় নির্ণীত হয়েছে—অস্তি, নাস্তি, অস্তি-নাস্তি, অবক্তব্য, অস্ত্য-বক্তব্য, নাস্ত্য-বক্তব্য এবং অস্ত্য-নাস্ত্য-বক্তব্য। এই সাতটি রূপ কোনো একক সত্যের সাতটি ভিন্ন দিক, যা একত্রে মিলিয়েই কোনো বাস্তব বস্তুর পূর্ণ উপলব্ধি সম্ভব করে।

যেমন একটি ঘট, অর্থাৎ মাটির পাত্র—এই মুহূর্তে চোখের সামনে উপস্থিত; সুতরাং বলা যায়, “ঘট আছে”। এই অবস্থাটি হলো প্রথম দৃষ্টিকোণ—অস্তি (syād asti)। এখানে বর্তমান কাল, বর্তমান স্থান ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটের অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে সত্য।

“স্যাদস্তি” (syād asti)—এই এক শব্দেই জৈন দর্শনের বহুস্তরীয় বাস্তবতার বীজ নিহিত। এটি “স্যাৎ” ও “অস্তি”—এই দুটি সংস্কৃত শব্দের সংযোগে গঠিত; “স্যাৎ” মানে সম্ভবত, কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে, আর “অস্তি” মানে আছে, বিদ্যমান। সুতরাং “স্যাদস্তি” অর্থ, “একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এটি আছে”—অর্থাৎ, অস্তিত্ব সর্বদা শর্তাধীন ও প্রেক্ষাপটনির্ভর।

উমাস্বাতি ও পরবর্তী জৈন আচার্যদের দৃষ্টিতে “স্যাদস্তি” কেবল একটি যুক্তিগত বা বিশ্লেষণমূলক ধারণা নয়; এটি এক গভীর অন্তঃসত্তাগত বা অস্তিত্বতাত্ত্বিক (ontological) বোধ। “Ontology” শব্দটি এসেছে গ্রিক ontos (অস্তিত্ব) এবং logos (জ্ঞান বা আলোচনা) থেকে—অর্থাৎ, এটি সেই দার্শনিক শাখা, যা অনুসন্ধান করে ‘কী আছে’ এবং ‘অস্তিত্ব মানে কী’। জৈন আচার্যরা যখন “স্যাদস্তি” বলেন, তখন তাঁরা কেবল বস্তুর সম্পর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন না; তাঁরা বলছেন, অস্তিত্বের প্রকৃতি নিজেই আপেক্ষিক, বহুস্তরীয় এবং পরস্পরনির্ভর।

অদ্বৈত বেদান্তে যেখানে অস্তিত্বকে এক পরম, অখণ্ড ব্রহ্মতত্ত্ব হিসেবে ধরা হয়, সেখানে জৈন দর্শন অস্তিত্বকে দেখে এক গতিশীল সম্পর্কের জাল হিসেবে—যেখানে প্রতিটি সত্তা অন্যের সঙ্গে যুক্ত, পরিবর্তনশীল, কিন্তু নিজের মৌল সত্তা বজায় রাখে। এই ভাবনায় অস্তিত্ব কোনো স্থির বা স্বতন্ত্র জিনিস নয়; বরং তা এক চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে “আছে” ও “নেই” একে অপরের মধ্যে ক্রমাগত রূপান্তরিত হচ্ছে।

এই অস্তিত্বতাত্ত্বিক (ontological) দৃষ্টিকোণ থেকেই “স্যাদস্তি” প্রকাশ করে—কোনো বস্তুর অস্তিত্ব কখনও পরম বা স্বতন্ত্র নয়; তা সর্বদা নির্ভর করে দ্রব্য (substance), ক্ষেত্র (space), কাল (time) ও ভাব (mode)—এই চারটি উপাদানের পারস্পরিক সমন্বয়ের উপর। এরা যেন অস্তিত্বের চার স্তম্ভ, যার মিলিত কার্যেই বাস্তবতার অভিব্যক্তি ঘটে।

দ্রব্য হলো কোনো বস্তুর মৌল সত্তা বা উপাদান, যা পরিবর্তনের মধ্যেও তার পরিচয় বহন করে। যেমন, সোনার অলঙ্কারের রূপ বদলালেও সোনা তার দ্রব্যরূপে অটল থাকে।

ক্ষেত্র হলো স্থান, যেখানে সেই দ্রব্য নিজেকে প্রকাশ করে; স্থানই অস্তিত্বকে দিক ও সীমা দেয়—যেমন, একটি গাছ নির্দিষ্ট ভূমিতে রোপিত না থাকলে তার অস্তিত্ব কার্যকর হয় না।

কাল হলো সময়, যা পরিবর্তনের ধারা নির্ধারণ করে; কাল ছাড়া কোনো বস্তুর সৃষ্টি, বিকাশ বা বিনাশ বোঝা যায় না।

ভাব হলো বস্তুর অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা রূপান্তরের পরিমণ্ডল—একটি গাছের ফুল ফোটা, শুকিয়ে যাওয়া, পুনরায় কুঁড়ি ধরা—সবই তার ভাবের পরিবর্তন।

এই চার উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়া থেকেই কোনো বস্তুর “আছে” বা “অস্তি” অবস্থা প্রকাশ পায়। দ্রব্য তাকে স্থায়িত্ব দেয়, ক্ষেত্র তাকে অবস্থান দেয়, কাল তাকে প্রবাহ দেয়, আর ভাব তাকে চেতনা বা অবস্থা দেয়। তাই অস্তিত্ব কোনো একক বৈশিষ্ট্য নয়; এটি একটি সম্পর্কিত সত্তা—এক নিত্য গতি, যেখানে প্রতিটি বস্তু নিরন্তর অন্যের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেকে প্রকাশ করে।

জৈন আচার্য উমাস্বাতির ভাষায়, অস্তিত্ব কোনো পরম সত্তা নয়, বরং “দ্রব্য-ক্ষেত্র-কাল-ভাবনির্ভর সাপেক্ষ বাস্তবতা।” এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বোঝা যায়—বাস্তবতা কখনও স্থির নয়; তা সর্বদা সম্পর্কের ও পরিবর্তনের ছন্দে গতিশীল। এই চার উপাদানের মিলনেই সৃষ্টি হয় সেই ontological সত্য, যেখানে জগৎ এক নিঃসঙ্গ বস্তু নয়, বরং অসংখ্য সম্পর্কিত অবস্থার এক অবিরাম সহাবস্থান।

তাই কোনো বস্তুকে একদিক থেকে দেখা হলে তা “স্যাদস্তি”—আছে, কিন্তু অন্য দিক থেকে দেখা হলে তা “স্যাদ নাস্তি”—নেই। যেমন, একটি গাছ এখন মাটিতে রোপিত, তাই “আছে”; কিন্তু তার বীজরূপে সে আর নেই, আবার ভবিষ্যতে কাঠে রূপান্তরিত হলে তার বর্তমান রূপও থাকবে না। অথচ প্রতিটি অবস্থাতেই তার অস্তিত্ব কোনো-না-কোনো ভাবে বা উপায়ে বা দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে।

এইভাবে “স্যাদস্তি” কেবল অস্তিত্বের স্বীকৃতি নয়, অস্তিত্বের পরস্পরনির্ভর ও বহুমাত্রিক প্রকৃতির উপলব্ধি। এখানে “আছে” মানে চূড়ান্ত অস্তিত্ব নয়, বরং নির্দিষ্ট অবস্থায়, নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণে, নির্দিষ্ট সময়ে—একটি সম্পর্কিত বাস্তবতা।

উমাস্বাতির এই চিন্তা আমাদের শেখায় এক গভীর অস্তিত্বতাত্ত্বিক (ontological) বিনয়—বাস্তবতা কখনও একক, স্থির, বা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; তা সর্বদা অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের ভিতরেই বিদ্যমান। কোনো কিছুই একা “আছে” বলা যায় না, কারণ “আছে” মানে-ই হলো সম্পর্ক, প্রেক্ষাপট ও নির্ভরতা। এক বস্তু অন্য বস্তুর সঙ্গে, এক অবস্থা অন্য অবস্থার সঙ্গে, এক সময় অন্য সময়ের সঙ্গে—এই সমস্ত যোগসূত্রই মিলিত হয়ে গড়ে তোলে অস্তিত্বের বুনন।

এখানে “স্যাদস্তি” শুধু “অস্তিত্ব আছে”, এই সরল বক্তব্য নয়; বরং এটি এক জীবন্ত অস্তিত্বের নৃত্য—যেখানে প্রতিটি সত্তা একে অপরের সঙ্গে ছন্দে জড়িত, নিরন্তর পরিবর্তনশীল এবং কখনও পরম নয়। জগৎকে এইভাবে দেখা মানে তাকে এক স্থির ছবি হিসেবে নয়, বরং এক প্রবহমান সিম্ফনি হিসেবে দেখা—যেখানে দ্রব্য (উপাদান), ক্ষেত্র (স্থান), কাল (সময়) ও ভাব (অবস্থা) মিলেমিশে এক অবিরাম সুরসংগীত সৃষ্টি করে।

উমাস্বাতির মতে, সত্য কোনো একমাত্র বিন্দু নয়, বরং বহুবিন্দুতে বিকীর্ণ এক পূর্ণতা। প্রতিটি দৃষ্টিকোণ বাস্তবতার একাংশকে প্রকাশ করে, কিন্তু কোনো দৃষ্টিই পুরোটা ধরে রাখতে পারে না। তাই “স্যাদস্তি” মানে এমন এক দৃষ্টি, যা জানে—আমার দেখা সত্যও আপেক্ষিক, কারণ অন্যের দেখা সত্যও তার জায়গা থেকে ততটাই (আমার সত্য যতটা, ঠিক ততটাই) প্রাসঙ্গিক।

এই উপলব্ধিই সত্যিকার অর্থে জৈন দর্শনের হৃৎস্পন্দন—যেখানে অস্তিত্ব কোনো নিঃসঙ্গ বা স্থির সত্তা নয়, বরং এক সহাবস্থার অনন্ত প্রকাশ, এবং জ্ঞান কোনো একান্ত অধিকার নয়, বরং বহু দৃষ্টির সমবায়ে জন্ম-নেওয়া বিনয়ী বোধ। এখানে প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি সত্তা অন্যের সঙ্গে মিলে একটি বৃহত্তর সমগ্রে পরিণত হয়—যেন এক অসীম বস্ত্রের সূক্ষ্ম তন্তুগুলি, যারা আলাদা হয়েও পরস্পরকে ছাড়া কিছুই নয়।

“স্যাদস্তি” এই গভীর বিনয়েরই প্রতীক—এটি কেবল একটি দার্শনিক সূত্র নয়, বরং এক ধ্যানমগ্ন চেতনা, যা বলে: “আমি আছি, কারণ অন্যরাও আছে; আমি সত্য, কারণ বহু সত্য আমাকে পরিবেষ্টন করে।” এই উপলব্ধিতে ব্যক্তি ও জগৎ, জ্ঞানী ও জ্ঞেয়, আছে ও নেই—সব সীমারেখা নরম হয়ে যায়। অস্তিত্ব আর কোনো কঠিন বস্তু নয়; তা এক প্রবহমান ছন্দ, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত সৃষ্টি ও বিলয়ের মধ্যবর্তী এক অবিরাম রূপান্তর।

এইভাবেই “স্যাদস্তি” আমাদের শেখায় যে, অস্তিত্ব কোনো পরম ঘোষণা নয়—যেমন “আছে” বা “নেই” বলে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা যায় না। বরং তা এক সম্পর্কিত প্রক্রিয়া—এক চলমান নৃত্য, যা দ্রব্য (উপাদান), ক্ষেত্র (স্থান), কাল (সময়) ও ভাব (অবস্থা)-এর অবিরাম পারস্পরিক ক্রিয়ায় গঠিত। এই ক্রিয়ার মধ্যেই বাস্তবতার সংগীত বেজে ওঠে—নিত্য পরিবর্তনের, নিত্য নবায়নের, নিত্য সৃষ্টিশীলতার।

জৈন আচার্যদের এই অন্তর্দৃষ্টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সত্য কখনও স্থির নয়, জগৎ কখনও সম্পূর্ণ বর্ণনাযোগ্য নয়, এবং জ্ঞান কখনও শেষ নয়। তাই “স্যাদস্তি”-র দর্শন শেষপর্যন্ত এক অস্তিত্বতাত্ত্বিক নম্রতা—যেখানে জ্ঞানী জানেন, তিনি জানেন না সব কিছু, কিন্তু এই অজ্ঞতার মধ্যেই জ্ঞানের আলো সবচেয়ে উজ্জ্বল।

ধরা যাক, একটি কাঠের টেবিল—“স্যাদস্তি” অর্থে আমরা বলি, টেবিল আছে, কারণ নির্দিষ্ট সময়, স্থানে, কাঠের রূপে এটি বিদ্যমান। কিন্তু সেই টেবিলের “অস্তিত্ব” কোনো চিরন্তন সত্য নয়; কাঠ পুড়ে গেলে টেবিল আর থাকে না, কেবল কাঠের উপাদান রূপে থাকে। এইভাবে “স্যাদস্তি” একটি আপেক্ষিক সত্য—যা অবস্থান, সময় ও উপাদান নির্ভর।

এই দৃষ্টিভঙ্গিই অনেকান্তবাদের (anekāntavāda) কেন্দ্রে। জৈন দার্শনিকেরা বলেন, কোনো বস্তুকে কখনও নিঃশর্তভাবে “আছে” বলা যায় না, কারণ তার অস্তিত্ব সর্বদা আপেক্ষিক। “স্যাদস্তি” তাই একরৈখিক চিন্তার বিপরীতে বহু-দৃষ্টির দর্শন। এটি একই সঙ্গে বৌদ্ধিক বিনয় শেখায়—যে-ব্যক্তি বোঝে, “আমার দেখা সত্যও কোনো এক প্রেক্ষিতে সত্য”—সে আর অন্যের মতকে অস্বীকার করতে পারে না।

এখানেই “স্যাদস্তি”-র নৈতিক তাৎপর্য। এটি অহিংসার এক গভীর বৌদ্ধিক রূপ—চিন্তার অহিংসা। যিনি জানেন যে, তাঁর দেখা সত্য সীমাবদ্ধ, তিনি অন্যের দৃষ্টিকে স্বীকার করতে শেখেন; আর এই গ্রহণযোগ্যতাই সত্যের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। তাই জৈন দর্শনে “স্যাদস্তি” শুধু একটি যুক্তিগত অনুমান নয়, বরং জীবনের এক দার্শনিক দৃষ্টি—যেখানে প্রতিটি অস্তিত্ব তার নিজস্ব প্রেক্ষাপটে সত্য, আর সেই প্রেক্ষাপটের বাইরে সব কিছুই আংশিক, পরিবর্তনশীল, অনিত্য।

এইভাবেই “স্যাদস্তি” শব্দটি মানুষের জ্ঞানের একান্ত সীমাকে চিহ্নিত করে, আবার সেই সীমা অতিক্রমের নম্রতাও শেখায়—যাতে আমরা শিখি, সত্য সর্বদা সম্পর্কিত, আর বাস্তবতার প্রতিটি দিক একে অপরের সঙ্গে জড়ানো এক অসীম জাল।

দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, কালান্তরে এই ঘট ভেঙে যাবে, মাটি হয়ে যাবে, অথবা অন্যত্র সরে যাবে; তখন এখানে আর ঘট থাকবে না। তাই বলা যায়, “ঘট নেই”—এটাই নাস্তি (syād nāsti)। দুটি উক্তিই যুক্তিসঙ্গত, কারণ সত্যের নির্ভরতা শর্তের ওপর।

“স্যাদ নাস্তি” (syād nāsti)—এই উক্তিটি জৈন দর্শনের সপ্তভঙ্গী নয়-এর দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, যা “স্যাদস্তি”-র বিপরীত দিক উন্মোচন করে। “স্যাৎ” শব্দটি যেমন আপেক্ষিকতা বা শর্তনির্ভর সত্যের প্রতীক, তেমনি “নাস্তি” বোঝায় অনস্তিত্ব বা অপ্রকাশ। সুতরাং “স্যাদ নাস্তি” মানে—“সম্ভবত নেই”, বা “কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে নেই।” এই ‘নেই’ শব্দটির অর্থ জৈন দর্শনে কখনও পরম শূন্যতা নয়; বরং এটি হলো অস্তিত্বের সীমা নির্ধারণের এক সূক্ষ্ম পদ্ধতি। জৈন দার্শনিকরা কখনও ‘নেই’ বলতে “সম্পূর্ণ অভাব” বোঝাননি, বরং বলেছেন—যে-প্রেক্ষাপটে কোনো বস্তু বা সত্তা নেই, সেই প্রেক্ষাপটেই সে অনুপস্থিত; অন্য প্রেক্ষাপটে, অন্য শর্তে, অন্য অবস্থায় সে থাকতে পারে।

অর্থাৎ, “নেই” মানে অস্তিত্বের পরিসর সীমিত, তার উপস্থিতি নির্দিষ্ট দ্রব্য, ক্ষেত্র, কাল ও ভাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন—একটি কলসি যদি ঘরে থাকে, তবে উঠোনে তার অনস্তিত্ব বাস্তব; আবার উঠোনে তার “নেই”-এর সত্যই ঘরে তার “আছে”-এর সত্যকে পরিপূর্ণ করে। এইভাবে “নেই” বা “স্যাদ নাস্তি” আসলে “আছে”-এর বিপরীতে নয়, বরং তার ভারসাম্য রক্ষা করে—যা একটিকে বাস্তব, অন্যটিকে প্রেক্ষাপটসম্মত করে তোলে।