অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: সাতাত্তর



দৃষ্টান্ত (dṛṣṭānta): এই যুক্তিকে দৃঢ় করার জন্য বক্তা উদাহরণ দেন—“আত্মা।” আত্মা স্বপ্রকাশমান, চিদ্রূপ (চিৎ-রূপ বা চেতনার রূপ), এবং তত্ত্বাবেদনের বিষয়। যেমন উপনিষদীয় শাস্ত্র আত্মাকে তাত্ত্বিকভাবে প্রকাশ করে, তেমনই—বক্তার মতে—জগৎও, যেহেতু গুণের আধার, তাই আত্মার মতোই তত্ত্বাবেদনের যোগ্য। এখানে দৃষ্টান্তের কাজ হলো অনুষঙ্গ (vyāpti) দেখানো—যেখানে ধর্মিত্ব আছে, সেখানে তত্ত্বাবেদন সম্ভব; আত্মা তার প্রমাণিত উদাহরণ।

উপনয় (upanaya): এখন বক্তা দৃষ্টান্তের যুক্তিকে জগতের ওপর প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন—জগতে সত্যিই ধর্মিত্ব আছে। ঘটের গাত্রবর্ণ, বৃক্ষের বৃদ্ধি, পত্রের সবুজ রং, অগ্নির তাপ—সবই জগতের মধ্যে গুণ হিসাবে থাকে। তাহলে, আত্মার মতোই, জগতও তত্ত্বাবেদনের বিষয় হতে পারে। এভাবে অনুষঙ্গটি পক্ষের ওপর প্রয়োগ করা হয়—এটাই উপনয় ধাপ।

নিগমন (nigamana): সবশেষে বক্তা উপসংহার টানেন—অতএব, জগৎ তত্ত্বাবেদক প্রমাণের বিষয়; অর্থাৎ, জগৎ এমন এক বস্তু, যাকে জানার মাধ্যমে চূড়ান্ত বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব।

এইভাবে পুরো যুক্তি পাঁচটি ধাপে সম্পূর্ণ হয়:
১. প্রতিজ্ঞা—জগৎ তত্ত্বাবেদক প্রমাণের বিষয়।
২. হেতু—কারণ জগৎ ধর্মের আধার।
৩. দৃষ্টান্ত—যেমন আত্মা, যার মধ্যে ধর্ম আছে এবং যা তত্ত্বাবেদ্য।
৪. উপনয়—জগতে বাস্তবিকভাবে ধর্ম আছে।
৫. নিগমন—তাহলে জগৎও তত্ত্বাবেদ্য, তাত্ত্বিক প্রমাণের যোগ্য।

‘তত্ত্বাবেদন’ শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত—“তত্ত্ব” এবং “আবেদন”। “তত্ত্ব” মানে চূড়ান্ত সত্য, পরম বাস্তবতা বা ব্রহ্ম, আর “আবেদন” মানে প্রকাশ, উপলব্ধি বা জানানো। তাই তত্ত্বাবেদন অর্থ দাঁড়ায় “চূড়ান্ত সত্যের উপলব্ধি” বা “তত্ত্বকে জানা ও অনুভব করা”।

সহজভাবে, তত্ত্বাবেদন হলো এমন এক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা, যার মাধ্যমে মানুষ চূড়ান্ত বাস্তবতাকে সরাসরি জানে। এটি কেবল তর্ক বা মানসিক ধারণা নয়; বরং এমন এক অন্তর্দৃষ্টি, যা অবিদ্যা বা অজ্ঞান দূর করে ব্রহ্মজ্ঞান অর্জনের দিকে নিয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি শাস্ত্র পড়ে জেনে নেয় যে, “ব্রহ্ম একমাত্র সত্য”, তা তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান বা তত্ত্ববোধ। কিন্তু যখন সেই সত্যটি তার নিজের চেতনায় প্রত্যক্ষভাবে প্রতিভাত হয়—যখন সে অভিজ্ঞতায় অনুভব করে, “আমি ব্রহ্ম”—তখন সেটিই তত্ত্বাবেদন। তাই তত্ত্বাবেদন মানে কেবল জানা নয়, বরং জানা সত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি। তাই, ব্রহ্ম তত্ত্বাবেদনের বিষয়।

অদ্বৈত বেদান্তে তত্ত্বাবেদন বলতে বোঝায় ব্রহ্মের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যাকে অপরোক্ষানুভব বলা হয়। এটি কোনো অনুমান বা ইন্দ্রিয়জ প্রমাণের ফল নয়, বরং শ্রুতি, মনন এবং নিদিধ্যাসনের মাধ্যমে উদ্ভূত জ্ঞান, যেখানে জানার, জানানো এবং জাননীয়—এই তিনের ভেদ বিলীন হয়ে যায়। তত্ত্বাবেদন হলো সেই চূড়ান্ত উপলব্ধি, যেখানে জ্ঞান ও বাস্তবতা এক হয়ে যায়—যেখানে মানুষ সরাসরি উপলব্ধি করে যে, ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, আর নিজ অস্তিত্ব তারই অবিচ্ছেদ্য প্রকাশ।

বক্তা যে মূল কৌশলটি গ্রহণ করেন, তা হলো—জগৎ কেবল ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুর সমষ্টি নয়; জগৎ “ধর্মের ধারক” বলেই এখানে তত্ত্ব বা চূড়ান্ত সত্যের প্রকাশ ঘটতে সক্ষম। এই দাবিটি প্রথম নজরে আকর্ষণীয় মনে হলেও, দার্শনিকভাবে তা টেকসই কি না, তা নির্ভর করে দুটি সূক্ষ্ম গিঁটের ওপর—অনুষঙ্গ সত্যিই অনুপাধিভাবে স্থির হয় কি না, এবং পক্ষধর্মতা সত্যিই নিরবিবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় কি না। এই দুই গিঁট আলাদা আলাদা স্তরে খোলা দরকার, নইলে যুক্তির ভিত ফাঁপা থেকে যাবে।

“অনুষঙ্গ সত্যিই অনুপাধিভাবে স্থির হয় কি না”, আর “পক্ষধর্মতা সত্যিই নিরবিবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় কি না”—এই কথাটার মানে দেখা যাক:

প্রথম অংশে, অনুষঙ্গ বলতে বোঝানো হচ্ছে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে যে-সম্পর্কটি স্থাপন করা হয়—অর্থাৎ কারণ ও ফল বা প্রমাণ ও প্রমাণ্য বিষয়ের যোগসূত্র। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে”—এই সম্পর্কই অনুষঙ্গ। কিন্তু এই সম্পর্ক তখনই সঠিক হবে, যখন তা নিঃশর্ত বা অনুপাধি হবে। ‘অনুপাধি’ মানে কোনো গোপন বা অপ্রকাশিত শর্তের ওপর নির্ভর না করা। যদি দেখা যায়, ধোঁয়া আগুনের (হেতুর) সঙ্গে যুক্ত থাকে কেবল নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায়—যেমন আর্দ্র কাঠ পুড়লে—তবে সেই সম্পর্ক আর সর্বত্র খাটে না। অর্থাৎ অনুষঙ্গটি উপাধিযুক্ত হয়ে পড়ে, এবং যুক্তিটি দুর্বল হয়ে যায়। তাই যখন বলা হচ্ছে, “অনুষঙ্গ সত্যিই অনুপাধিভাবে স্থির হয়েছে কি না”, তখন বোঝানো হচ্ছে—এই সম্পর্কটি কি সত্যিই সর্বত্র, সব অবস্থায় এবং কোনো শর্ত ছাড়াই খাটে, না কি তা কিছু সীমাবদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে?

দ্বিতীয় অংশে, ‘পক্ষধর্মতা’ মানে সেই ধর্ম বা গুণের পক্ষ বা বিষয়ের মধ্যে উপস্থিত থাকা। উদাহরণ হিসেবে, “পাহাড়ে আগুন আছে, তাই ধোঁয়া আছে”—এখানে পাহাড় হলো পক্ষ, ধোঁয়া হলো সাধ্য, আর আগুন হলো ধর্ম বা হেতু। এই সম্পর্ক বৈধ হবে তখনই, যখন পাহাড়ে ধোঁয়া সত্যিই উপস্থিত থাকে; যদি ধোঁয়া বলে যা দেখা যাচ্ছে, তা আসলে কুয়াশা হয়, তাহলে পক্ষধর্মতা মিথ্যা হয়ে যায়। একইভাবে, বর্তমান আলোচনায় বলা হচ্ছে, “জগতে ধর্মিত্ব আছে”—অর্থাৎ জগৎ গুণের আধার। কিন্তু এই বক্তব্য কি সকল দর্শনের কাছে নিরবিবাদে স্বীকৃত? অদ্বৈতমতে, জগৎ অনিত্য ও মায়াজাত, তাই প্রকৃত আধার বা ধামি হলো ব্রহ্ম, জগৎ নয়। ফলে জগতের ধর্মিত্ব নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়। এই কারণেই বলা হয়—“পক্ষধর্মতা সত্যিই নিরবিবাদে প্রতিষ্ঠিত কি না”—অর্থাৎ সত্যিই কি সবার কাছে নির্দ্বিধায় স্বীকৃত যে, জগতে এই গুণ আছে, না কি এই ধারণা নিজেই সন্দেহপ্রসূত।

সংক্ষেপে, এখানে আসলে দুটি মূল প্রশ্ন এসেছে: প্রথমত, কারণ ও ফলের সম্পর্কটি কি নিঃশর্তভাবে সর্বত্র খাটে; দ্বিতীয়ত, যে-বিষয়ের ওপর যুক্তি গঠিত হচ্ছে, সেখানে সেই ধর্ম বা গুণ সত্যিই আছে কি না। যদি এই দুইটির যে-কোনো একটিতে সন্দেহ থাকে, তাহলে অনুমান বা যুক্তিটি বৈধ থাকে না।

“ধর্মিত্ব” ও “তত্ত্বাবেদন”-এর মধ্যে অনুষঙ্গ স্থাপনের দাবিটি দর্শনের একটি মৌলিক আলোচনা, বিশেষত ন্যায় দর্শনে হেতুর বৈধতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনুষঙ্গ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি অপরিহার্য, অবিচ্ছিন্ন এবং শর্তহীন (অনুপাধি) সম্পর্ক, যেখানে একটির উপস্থিতি অন্যটির উপস্থিতিকে অনিবার্য করে তোলে। এখানে দাবিটি হলো—"যেখানে ধর্মিত্ব, সেখানে তত্ত্বাবেদন।" অর্থাৎ, যে-সত্তা কোনো গুণের আধার (ধর্মিত্ব), সেটি অবশ্যই জ্ঞানযোগ্য বা তত্ত্ব-উন্মোচনযোগ্য (তত্ত্বাবেদন)। ধর্মিত্ব হলো কোনো বস্তুর ধর্ম বা গুণ ধারণ করার ক্ষমতা। যেমন, ঘটের ঘটত্ব ধর্ম, বৃক্ষের বৃক্ষত্ব ধর্ম। তত্ত্বাবেদন বলতে কোনো বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ উদ্ঘাটন বা জ্ঞান লাভের ক্ষমতা বোঝায়। এই দাবি অনুসারে, যদি কোনো বস্তু ধর্ম বা গুণ ধারণ করে, তবে তা অবশ্যই জ্ঞানযোগ্য হবে।

এই ধরনের অনুষঙ্গ স্থাপন করতে হলে সপক্ষ-বিপক্ষ উভয় দিক থেকে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন:

সপক্ষে (Positive Cases): এমন উদাহরণ দেখাতে হবে, যেখানে ধর্মিত্ব এবং তত্ত্বাবেদন উভয়ই বিদ্যমান। অর্থাৎ, বস্তুটি গুণ ধারণ করে এবং তার জ্ঞানও সম্ভব। যেমন, একটি সচল টেবিল (ধর্মিত্ব) সম্পর্কে আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি (তত্ত্বাবেদন)।

বিপক্ষে (Negative Cases): এমন উদাহরণ দেখাতে হবে, যেখানে ধর্মিত্ব নেই এবং তত্ত্বাবেদনও নেই। অর্থাৎ, বস্তুটি গুণ ধারণ করে না এবং তার জ্ঞানও সম্ভব নয়। যেমন, 'আকাশকুসুম'-এর কোনো ধর্মিত্ব নেই এবং তার জ্ঞানও হয় না।

যদি এই দুটি শর্ত পূরণ না হয়, অর্থাৎ—
যদি ধর্মিত্ব না থাকে, অথচ তত্ত্বাবেদন ঘটে (যেমন, শূন্য থেকে হঠাৎ জ্ঞানলাভ)।
যদি ধর্মিত্ব থাকে, অথচ তত্ত্বাবেদন ঘটে না (যেমন, এমন কোনো বস্তু, যা গুণ ধারণ করে, কিন্তু তার জ্ঞান অসম্ভব)।
—তবে অনুষঙ্গটি ভেঙে যায় এবং হেতুর মধ্যে "সব্যভিচারী" দোষ দেখা দেয়। সব্যভিচারী হেতু হলো এমন হেতু, যা সাধ্যের (তত্ত্বাবেদন) সঙ্গে সব জায়গায় থাকে না, অর্থাৎ ব্যভিচার করে। এটি একটি অবৈধ হেতুমাত্র।

এই অনুষঙ্গের সবচেয়ে বড় সংকট হলো "ধর্মিত্ব" ধারণাটির অতি-বিস্তৃতি। ঘট, বৃক্ষ, দেহ, মন—সবই নানা গুণের আধার। কিন্তু এই সর্বজনীন "আধারত্ব" থেকে সরাসরি "তত্ত্বাবেদন" টানা যায় না। এর কারণ হলো:

শঙ্খে রৌপ্যের ভ্রান্তি: যখন একটি শঙ্খকে রুপা বলে ভুল করা হয়, তখন সেই ভ্রান্তির মুহূর্তে 'রূপ', 'দীপ্তি', 'লৌকিক-মূল্য'—এই সমস্ত গুণের আধার যেন সেই 'রুপো'। কিন্তু এখানে কোনো তত্ত্বাবেদন ঘটে না; বরং পরে বিচারের মাধ্যমেই ভ্রান্তি ধরা পড়ে। অর্থাৎ, গুণের আধার মনে হলেও এখানে প্রকৃত জ্ঞান হয় না।

এই উদাহরণে ধর্মিত্ব (শঙ্খের মধ্যে রৌপ্যের গুণ-আরোপ) থাকলেও তত্ত্বাবেদন অনুপস্থিত। একটি স্বপ্ননগরীর কথা ভাবি। স্বপ্ননগরী বিভিন্ন গুণে (সুন্দর অট্টালিকা, নদী, মানুষ ইত্যাদি) পরিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এটি কোনো চূড়ান্ত সত্য উন্মোচিত করে না, কারণ স্বপ্ন হলো একটি অবাস্তব জগৎ। এখানেও ধর্মিত্ব (স্বপ্নের মধ্যে গুণের উপস্থিতি) থাকলেও তত্ত্বাবেদন অনুপস্থিত। এই উদাহরণগুলি প্রমাণ করে যে, "ধর্মিত্ব তত্ত্বাবেদনের উপাদান", অর্থাৎ, ধর্মিত্ব থাকলে তত্ত্বাবেদন থাকবে—এই অনুষঙ্গটি অনুপাধিভাবে (শর্তহীনভাবে) স্থির হয় না। অর্থাৎ, এই সম্পর্কটি নিঃশর্ত নয়।

যদি এই অনুষঙ্গটি শর্তাধীন হয়, তবে সেই শর্তটির নামই "উপাধি"। উপাধি হলো এমন একটি শর্ত, যা হেতুর (ধর্মিত্ব) সঙ্গে সর্বদা থাকে না, কিন্তু সাধ্যের (তত্ত্বাবেদন) সঙ্গে সর্বদা থাকে। উপাধি থাকলে অনুষঙ্গটি ভেস্তে যায়, কারণ তখন হেতু-সাধ্য সংযোগটি আর নিঃশর্ত থাকে না। একটি অবৈধ উপাধি হেতুকে ব্যভিচারী করে তোলে। যেমন, যদি "ধর্মিত্ব মানেই তত্ত্বাবেদন", এই অনুষঙ্গের একটি উপাধি থাকে "সত্যতা" বা "বাস্তবতা", তবে এর অর্থ দাঁড়ায়—"যে-ধর্মিত্ব বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই তত্ত্বাবেদন।" কিন্তু মূল দাবি ছিল, যে-কোনো ধর্মিত্বেই তত্ত্বাবেদন ঘটবে, যা বাস্তবতার শর্ত ছাড়া প্রযোজ্য নয়।

এই অনুষঙ্গকে বাঁচাতে হলে "ধর্মিত্ব" ধারণাকে এমনভাবে সংকুচিত করতে হবে যে, সেটি প্রায় আত্মার স্ব-প্রকাশমান চৈতন্য-আধারত্বের সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ, ধর্মিত্বকে কেবল সেই বস্তুর গুণধারণ ক্ষমতা হিসেবে দেখতে হবে, যা intrinsically জ্ঞানযোগ্য এবং স্বয়ংপ্রকাশ। কিন্তু এই পথে গেলে যুক্তিটি "তুচ্ছ-সিদ্ধ" বা "সিদ্ধসাধনতা" দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। "সিদ্ধসাধনতা" হলো সেই দোষ, যেখানে যা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা ইতিমধ্যেই স্বীকৃত। যেমন, যদি "ধর্মিত্ব"-কে কেবল আত্মার জ্ঞানযোগ্যতার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়, তবে "আত্মা তত্ত্বাবেদ্য", এই ধারণাটি আগেই স্বীকৃত—নতুন করে জগতের অন্যান্য বস্তুর জন্য নতুন কিছু প্রমাণ করা হয় না। এটি যুক্তির কোনো নতুন জ্ঞান দেয় না, কেবল যা জানা আছে, তা-ই পুনরাবৃত্ত করে।

সুতরাং, "যেখানে ধর্মিত্ব, সেখানে তত্ত্বাবেদন", এই অনুষঙ্গটি তার বর্তমান রূপে অকার্যকর। "ধর্মিত্ব"-এর ব্যাপকতা এবং উপাধির উপস্থিতি এই সম্পর্ককে দুর্বল করে তোলে। একে কার্যকর করতে হলে হয় "ধর্মিত্ব"-কে সংকীর্ণ করতে হবে, যা আবার সিদ্ধসাধনতা দোষ তৈরি করবে, অথবা অনুষঙ্গটিকে শর্তসাপেক্ষ বলে স্বীকার করে নিতে হবে এবং সেই শর্ত (উপাধি) কী, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এই আলোচনা ভারতীয় দর্শনে জ্ঞানের উৎস ও বৈধতা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।