অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: সাইত্রিশ



কুমারিল ভট্টের সূক্ষ্ম সমাধান: কুমারিল ভট্ট বললেন—শুধু “অপবাদ” ব্যবহার করলে মনে হবে বেদ নিজের কথায় নিজেই বিরোধ করেছে। তাই তিনি একটি নতুন ব্যাখ্যা দিলেন: অহিংসা-নিষেধ আসলে সর্বজনীন নয়। এটি প্রযোজ্য শুধু “ফলস্বরূপ হিংসা”-র ক্ষেত্রে; যেমন রাগে কাউকে মারা, স্বার্থে পশু হত্যা। কিন্তু যজ্ঞে উদ্দেশ্যপ্রসূত হিংসা (যেখানে উদ্দেশ্য হলো দেবতার উপাসনা, ফলস্বরূপ হিংসা নয়)—এটাকে অহিংসার নিয়ম ভঙ্গ বলা যাবে না। এই পদ্ধতিতে—অহিংসার সাধারণ আদেশও টিকে গেল, যজ্ঞের বিশেষ আদেশও টিকে গেল। দুটো আদেশই বৈধ হলো, কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য। আরেকটি দৃষ্টান্ত: আইন বলে, “কারও গায়ে হাত তুলবে না।” কিন্তু ডাক্তার অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর শরীরে ছুরি চালাচ্ছে। এটাকে “সহিংসতা” বলা যায় না, কারণ উদ্দেশ্য ক্ষতি নয়, বরং চিকিৎসা।

সাংঘর্ষিক আদেশ মেটাতে সাধারণত—বিশেষ নিয়ম (অপবাদ) সাধারণ নিয়মকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু কুমারিল ভট্ট আরও সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা দিলেন। তাই, হিংসার নিষেধ হবে এর ফলস্বরূপ ক্ষতির ওপর। যজ্ঞের হিংসা উদ্দেশ্যপ্রসূত, তাই নিষেধ ভঙ্গ নয়। এতে বেদের সব আদেশের অখণ্ডতা বজায় রইল। কুমারিল ভট্ট দেখালেন—বেদের আদেশ কখনও একে অপরকে বাতিল করে না, বরং প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আলাদা অর্থ বহন করে।

বিকল্প (Vikalpa): যখন বেদে বা শাস্ত্রে দুই সমান শক্তিশালী নির্দেশ দেওয়া হয়, কিন্তু তাদেরকে একসাথে পালন করা যায় না (পারস্পরিকভাবে অসংগত), তখন মীমাংসা বলে—এখানে বিকল্প (পছন্দ) মানতে হবে। অর্থাৎ, দুটির মধ্যে যে-কোনো একটি বেছে নেওয়া যাবে।

উদাহরণ ১: ভৃহিয়ব বিকল্প (Vṛhiyavat Vikalpa): এক শাস্ত্র বলে, যজ্ঞে চাল (vṛhi) দাও। আরেক শাস্ত্র বলে, যজ্ঞে যব (yava) দাও। দুটো একসাথে দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে সম্পাদনকারী চাল বা যব—একটা বেছে নেবেন।

উদাহরণ ২: জ্যোতিষ্টোম যজ্ঞ: শাস্ত্রে বলা আছে, এই যজ্ঞে “বৃহৎ” সংগীত গাও। আবার বলা আছে, “রথান্তর” সংগীত গাও। যেহেতু একসাথে সম্ভব নয়, তাই যজ্ঞকারী যে-কোনো একটি বেছে নেবেন। (রথান্তর ও বৃহৎ (Bṛhat)—“সামযুগল”—এই দুটি হলো সামবেদের দুই প্রধান সংগীত। যেমন আজকের দিনে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা পূজায় নির্দিষ্ট ভজন/কীর্তন গাওয়া হয়, যেগুলো ছাড়া অনুষ্ঠান “পূর্ণ” মনে হয় না, তেমনি বৈদিক যজ্ঞে রথান্তর ছিল একটি অপরিহার্য সংগীত, যা পরিবেশিত হতো।)

বিকল্প বাছাই কীভাবে হবে? পছন্দ করার জন্য কিছু মানদণ্ড থাকতে পারে—যুক্তি (যেটা বেশি উপযোগী), শব্দের স্পষ্টতা (যেটা শাস্ত্রে বেশি স্পষ্টভাবে বলা আছে), সম্পাদনকারীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা। বিকল্প প্রক্রিয়ায় শাস্ত্রের বিরোধ মেটানো গেলেও, মীমাংসাকারীরা বলেছেন, এতে “একটা ত্রুটি” থাকে; কারণ বিকল্প মানে হলো—আমরা পুরোপুরি একটা সংঘাতমুক্ত ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। তাই বিকল্পকে “শেষ ভরসা” হিসেবে ধরা হয়, অন্য উপায়ে মিল না হলে তখনই এটা প্রযোজ্য, তবে এটি একটি কম-বাঞ্ছনীয় সমাধান।

বিকল্প শব্দের ভিন্ন ভিন্ন মানে: মীমাংসা দর্শনে, বিকল্প মানে হচ্ছে আচার-অনুষ্ঠানে দুই সমান শাস্ত্রীয় নির্দেশের মধ্যে যে-কোনো একটিকে বেছে নেওয়া। যেমন যজ্ঞে চাল বা যব, বৃহৎ বা রথান্তর সংগীত। যোগ ও বৌদ্ধ দর্শনে, বিকল্প মানে হচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কিছু—ভ্রান্ত ধারণাকরণ বা মনের বানানো ছবি, মানে মন যা দেখে, তাকে নিজের মতো সাজিয়ে নেয়, নাম দেয়, শ্রেণীভুক্ত করে, আর তাতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

যোগাচার ও যোগসূত্রে বিকল্প: অভিধর্ম ও যোগাচারে বিকল্প তিনভাবে বোঝানো হয়—

ক) সরল অনুভব (সেন্সরি পারসেপশন): চোখ শুধু রং দেখল, কিন্তু ভেদ বোঝল না। যেমন, “লাল কিছু দেখছি”, কিন্তু বুঝলাম না, এটা আপেল, না টমেটো।

খ) মানসিক কার্যকলাপ: ইন্দ্রিয় থেকে আসা তথ্য গুছিয়ে নেওয়া, মনোযোগ দেওয়া। যেমন, ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ একজন বন্ধুর কণ্ঠস্বর আলাদা করে চিনতে পারা।

গ) ধারণাকরণ (Conceptualization): যা দেখছি, তাতে নাম, ধারণা, স্মৃতি বসানো। যেমন, লাল ফল দেখে সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো “এটা আপেল”—এটা সরাসরি দেখা নয়, বরং মনের দেওয়া লেবেল।

বিকল্পের ভ্রান্তি (Reification): সমস্যাটা হয় তখন, যখন মন “যা দেখা হচ্ছে” আর “যে দেখছে”—এই দুটিকে একেবারে আলাদা বাস্তব সত্তা বলে ধরে নেয়। এতে বিভাজন তৈরি হয়—আমি আর বস্তু, আসলে যা মনের নির্মাণ। উদাহরণস্বরূপ, স্বপ্নে আমরা অনেক মানুষ দেখি, আলাদা আলাদা। কিন্তু আসলে সব কিছুই আমাদের নিজের মনের তৈরি।

নির্বিকল্প (Nirvikalpa)—আধ্যাত্মিক লক্ষ্য: যোগ ও ধ্যানের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বিকল্প অবস্থা লাভ করা। ‘নির্বিকল্প’ অবস্থায় ভুল ধারণা নেই, নাম-রূপের লেবেল নেই, শুধু জিনিসটিকে যেমন আছে তেমন দেখা। এটা পেতে দরকার—মন শান্ত করা (samatha, samādhi); মন কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা (prajñā, vipassanā বা অন্তর্দৃষ্টি)।

‘নির্বিকল্প’ শব্দটি যোগ ও ধ্যানের ক্ষেত্রে একটি আধ্যাত্মিক লক্ষ্য বা চূড়ান্ত অবস্থা নির্দেশ করে। এর অর্থ হলো: 'বিকল্প’ (Vikalpa) মানে হলো ভুল ধারণা, কল্পনা, বা মানসিক প্রক্ষেপণ। 'নিঃ বা নির্' (Nir) মানে হলো ছাড়া বা absence (অনুপস্থিতি)। সুতরাং, নির্বিকল্প মানে হলো—ভুল ধারণা বা কল্পনামুক্ত অবস্থা, যেখানে—কোনো ভুল ধারণা নেই, কোনো নাম-রূপের লেবেল চাপানো নেই, জিনিসটাকে যেমন আছে তেমনই দেখা হয়। যেমন, শিশু প্রথম বার ফুল দেখে শুধু “রঙিন কিছু” অনুভব করে। সে তখনও বলে না—“এটা গোলাপ।” এই “সরাসরি দেখা”-ই নির্বিকল্প দৃষ্টির কাছাকাছি।

যোগ ও ধ্যানের আসল উদ্দেশ্য—এই নির্বিকল্প অবস্থা অর্জন করা। কারণ এই অবস্থায় মন ভ্রম তৈরি করে না। তখন বাস্তবকে তার খাঁটি রূপে ধরা যায়। নির্বিকল্প অবস্থায় পৌঁছাতে যা দরকার:

ক. মন শান্ত করা (samatha, samādhi), যার মানে: অস্থির মনকে স্থির করা, ঢেউ-তোলা হ্রদকে শান্ত করার মতো। উদাহরণ: স্থির জলে যেমন আকাশ স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়, তেমনি শান্ত মনে সত্য স্পষ্ট হয়।

খ. মনের কাজকর্ম বোঝা (অন্তর্দৃষ্টি) (prajñā, vipassanā), যার মানে: মন কীভাবে চিন্তা তৈরি করে, নাম-রূপ বসায়, বিভাজন করে—তা গভীরভাবে বোঝা। উদাহরণ: আগুন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় “গরম”—এটা সরাসরি দেখা নয়, বরং মনে বসানো ধারণা। ধ্যানের মাধ্যমে বোঝা যায়—মন কীভাবে এই ধারণা চাপায়।

সংক্ষেপে, মীমাংসায় বিকল্প হচ্ছে—আচার-অনুষ্ঠানে একাধিক বৈধ বিকল্পের মধ্যে বেছে নেওয়া। যোগ-বৌদ্ধ চিন্তায় বিকল্প হচ্ছে মনের বানানো ধারণা, যা বাস্তবতার ওপর ভুল বিভাজন চাপায়। আধ্যাত্মিক লক্ষ্য—নির্বিকল্প অবস্থায় পৌঁছা, অর্থাৎ নাম-রূপের লেবেল ছাড়াই বাস্তবকে সরাসরি দেখা। এককথায়, মীমাংসায় বিকল্প মানে পছন্দ; যোগে বিকল্প মানে ভ্রান্ত ধারণা। আর নির্বিকল্প মানে সেই ভ্রান্তি অতিক্রম করে সরাসরি দেখা।

যোগসূত্র ১.৯ অনুযায়ী বিকল্প এমন শব্দ বা ধারণা, যার কোনো বাস্তব বস্তুর সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই (vastu-śūnya)। মানে, এটা বাস্তব কোনো জিনিসকে বোঝায় না, বরং ভাষার প্রতীকী বা রূপক ব্যবহার। বিকল্প হলো রূপক বা প্রতীকী ভাষা। এটি বাস্তবের ওপর ভিত্তি না করেও অর্থ প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “চৈতন্য হলো পুরুষের সারসত্তা” —এখানে চৈতন্য আর পুরুষকে আলাদা আলাদা ধরে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু অদ্বৈত মতে তারা আলাদা নয়। তাই এটা বিকল্প। “সময় উড়ে যায়”—সময় আসলে পাখির মতো ওড়ে না, তবু আমরা সবাই অর্থ বুঝি। এটাও বিকল্প।

বিকল্প বনাম অন্য মানসিক পরিবর্তন: যোগসূত্রে মানসিক পরিবর্তন (vṛtti)-এর কয়েকটি ধরন আছে—প্রমাণ (Pramāṇa): সঠিক জ্ঞান। বিপর্যয় (Viparyaya): ভুল ধারণা। বিকল্প (Vikalpa): বাস্তব বস্তু ছাড়া শব্দ/ধারণা, কিন্তু বোঝা যায়। তাই বিকল্প—না পুরো ভুল, না পুরো সত্য। এটা হলো ভিত্তিহীন হলেও অর্থবোধক মানসিক নির্মাণ।

বিকল্প ধারণা দেখায়—মন কীভাবে বাস্তব বস্তুর বাইরে গিয়ে শব্দ, রূপক, প্রতীক তৈরি করে। এই বিশ্লেষণ বোঝা না গেলে, মনের প্রকৃত কাজকর্ম বোঝা যায় না। আর যোগের উদ্দেশ্য হলো—মনকে গভীরভাবে বোঝা এবং অতিক্রম করা। বিকল্প মনের মানসিক প্রক্রিয়া (vṛtti) বোঝার ভিত্তি দেয়। অদ্বৈত বিশ্লেষণে সাহায্য করে—কারণ অনেক পার্থক্য আসলে মনের বানানো বিকল্প। এককথায়, বিকল্প হলো—বাস্তব বস্তু ছাড়াই মনের বানানো প্রতীকী ধারণা, যা ভুল না হলেও সত্য নয়, কিন্তু যোগাযোগে অর্থপূর্ণ।

যোগসূত্রে মানসিক পরিবর্তনের (vṛtti) পাঁচ ধরন ব্যাখ্যা করছি—

ক) প্রমাণ (Pramāṇa)—সঠিক জ্ঞান: যখন মন কোনো জিনিসকে যেমন আছে, তেমনই ধরে ফেলে। এর উৎস হতে পারে—প্রত্যক্ষ (চোখে দেখা), অনুমান (যুক্তি), বা শাস্ত্রীয় সাক্ষ্য। যেমন, আগুনের ধোঁয়া দেখে বুঝলাম, আগুন আছে।

খ) বিপর্যয় (Viparyaya)—ভুল ধারণা: যখন মন আসল সত্য উলটে ধরে ফেলে। যেমন অন্ধকারে দড়িকে সাপ মনে করা।

গ) বিকল্প (Vikalpa)—বাস্তবহীন ধারণা: যখন কোনো বাস্তব বস্তু নেই, কিন্তু শব্দ বা প্রতীক দিয়ে অর্থ বোঝানো হয়। যেমন, “সময় উড়ে যায়।” (সময় আসলে ওড়ে না, কিন্তু আমরা বুঝি।)

ঘ) নিদ্রা (Nidrā)—ঘুম: ঘুমও একটি মানসিক পরিবর্তন। এখানে মন কাজ করে না, কিন্তু “অচেতনার অভিজ্ঞতা” থেকে যায়। যেমন, ঘুম থেকে উঠে বলা—“আজ গভীর ঘুম হয়েছিল।”

ঙ) স্মৃতি (Smṛti)—স্মরণ: আগে দেখা বা শোনা কিছু মন আবার তুলে আনে। এতে নতুন বস্তু নেই, কেবল পুরনো অভিজ্ঞতা ফিরে আসে। যেমন, শৈশবের বন্ধুর মুখ মনে পড়া।

অর্থাৎ, প্রমাণ = সঠিক জানা; বিপর্যয় = ভুল জানা; বিকল্প = বাস্তব নেই, কিন্তু শব্দে অর্থ তৈরি; নিদ্রা = ঘুমের অভিজ্ঞতা; স্মৃতি = পুরোনো জিনিস মনে পড়া। যোগসূত্র বলে, মন সবসময় কোনো না কোনোভাবে কাজ করছে (vṛtti)। ধ্যানের উদ্দেশ্য হলো, এই পরিবর্তনগুলো বুঝে মনকে শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত করা।

অদ্বৈত বেদান্ত: সত্তাতত্ত্ব, বাধ ও বাস্তবতার স্তর

মূল প্রতিজ্ঞা এবং সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থা: অদ্বৈত বেদান্ত, যার আক্ষরিক অনুবাদ "অ-দ্বিতীয়তা," মূলত একত্বের সাথে সমতুল্য, যা ব্রহ্মকে একমাত্র সত্য অস্তিত্ব হিসাবে দাবি করে। মূল নীতিটি হলো যে, জীবাত্মা (ব্যক্তিগত অনুভবকারী সত্তা), যা ভুলবশত নিজেকে দেহ ও ইন্দ্রিয়ের সাথে অভিন্ন মনে করে, শেষপর্যন্ত বিশুদ্ধ সচেতনতা এবং আত্মা/ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন, যা সর্বোচ্চ বাস্তবতা। অদ্বৈতের সম্পূর্ণ দার্শনিক কাঠামোটি তিনটি মৌলিক প্রতিজ্ঞা দ্বারা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে:

১. ব্রহ্ম সত্যম্: ব্রহ্ম, যা অসীম, সর্বজনীন চেতনা, তা হলো একমাত্র সত্য।
২. জগৎ মিথ্যা: মায়ার কারণে সম্পূর্ণ অনুভূত মহাবিশ্বটি কেবল একটি উপস্থিতি, বা বিভ্রম।
৩. জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ: স্বতন্ত্র চেতনা ব্রহ্মের সাথে অভিন্ন।

অদ্বৈত বলে, ব্রহ্ম, স্বয়ং চেতনা, বস্তুগত মহাবিশ্ব যেখান থেকে উদ্ভূত হয়, তার উপাদানগত এবং নিমিত্তগত উভয় কারণ হিসাবে কাজ করে। তবে, পরম-এর অ-দ্বৈত প্রকৃতি সংরক্ষণ করার জন্য, এই ঐতিহ্য ব্রহ্মকে একটি "মূলত অপরিবর্তনীয় এবং স্থির বাস্তবতা" হিসাবে বিবেচনা করে। এই অবস্থানটি ব্রহ্মের অন্য কিছুতে পরিবর্তিত হওয়ার (যা এর বিলুপ্তি বোঝাবে) বা আংশিক পরিবর্তনের (যা ব্রহ্মকে বিভক্ত করে দেবে) যৌক্তিক অসম্ভবতার মোকাবিলা করে।

মায়া হলো ব্যাখ্যাতীত শক্তি, যা এই অপরিবর্তনীয় বাস্তবতাকে পরিবর্তন বা মহাবিশ্ব হিসাবে প্রকাশ হতে দেয়। মুক্তি (mokṣa) অর্জিত হয় বিদ্যা (জ্ঞান) দ্বারা নিজের প্রকৃত পরিচয় আত্মা/ব্রহ্ম হিসাবে জানার মাধ্যমে, যা স্ব-প্রভ (svayaṁ prakāśa) সচেতনতার একটি অবস্থা। এই মুক্তিদায়ক জ্ঞানটিতে এই বোঝাপড়াও অন্তর্ভুক্ত যে, আত্মাই সকলের আত্মা।