ভারতীয় দর্শনে একাধিকরণত্বম্ (Ekādhikaraṇatvam) এমন একটি মৌলিক নীতি, যা বাস্তবতা ও চিন্তার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখে। এর মূল ধারণা অত্যন্ত সরল কিন্তু গভীর—একই স্থানে বা একই ধারণাগত ক্ষেত্রে কোনো সত্তা এবং তার অনস্তিত্ব একসাথে থাকতে পারে না। এই নীতি বাস্তব জগতের সবচেয়ে সাধারণ বিষয় থেকে শুরু করে সবচেয়ে বিমূর্ত ধারণাতেও প্রযোজ্য। যেমন—একটি ঘরে যদি একটি চেয়ার থাকে, তবে সেই একই সময়ে বলা যায় না যে, “চেয়ারটি নেই”। আবার, যদি “ন্যায়” (justice) আছে বলা হয়, তবে একই সঙ্গে “ন্যায় নেই” বলা আত্মবিরোধী। অর্থাৎ, যা আছে, তা তার না-থাকার থেকে পৃথক, এবং যা নেই, তা তার থাকার থেকে স্বতন্ত্র।
একাধিকরণত্বম্ হচ্ছে বিশেষ স্থানের নীতি। “একাধিকরণ” মানে এক অধিকরণ/আধার বা এক স্থান, আর “ত্বম্” মানে সেই গুণ বা ধর্ম। অর্থাৎ, “একাধিকরণত্বম্” হলো সেই ধর্ম, যা বলে—একই আধারে দুই বিপরীত অবস্থা সহাবস্থান করতে পারে না। একটি জিনিস একই সাথে অস্তিত্বশীল ও অনস্তিত্বশীল হতে পারে না। এই নীতি তাই কেবল বাস্তব বস্তুর ক্ষেত্রে নয়, বরং চিন্তা, ধারণা, ভাষা এবং যুক্তির প্রতিটি স্তরে কার্যকর। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বাস্তবতার ধারাবাহিকতা ও যুক্তির নির্ভুলতা রক্ষার জন্য “থাকা” এবং “না থাকা”—এই দুই অবস্থাকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে চিনতে হবে।
একাধিকরণত্বম্ কোনো ভাষাগত বা প্রথাগত নিয়ম নয়, বরং একটি অন্টোলজিক্যাল নীতি—অর্থাৎ এটি অস্তিত্বের গঠন কাঠামোর একটি মৌলিক নিয়ম। এটি যুক্তির ভেতরে ধারাবাহিকতা ও স্থিরতা রক্ষা করে। যদি এই নীতি না মানা হয়, তবে কোনো কিছুই স্পষ্টভাবে “সত্য” বা “মিথ্যা” বলা যায় না। কারণ, একই সাথে কিছু “আছে” এবং “নেই”—এই বিরোধ যুক্তির ভিতকেই ধ্বংস করে দেয়। তখন সত্য ও মিথ্যা, সত্তা ও অসত্তা, একে অপরের মধ্যে মিশে যায়—ফলে দার্শনিক বিচার অসম্ভব হয়ে পড়ে। একাধিকরণত্বম্ এই বিশৃঙ্খল অবস্থাকে প্রতিরোধ করে। এটি নিশ্চিত করে যে, প্রতিটি ধারণা তার বিপরীত থেকে পৃথক থাকবে, এবং কোনো দুটি পরস্পরবিরোধী অবস্থা একই স্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না।
এই নীতি সরাসরি প্রতিরোধ করে অর্থান্তরতা ভ্রান্তি—অর্থাৎ, এক বস্তুকে ভুলভাবে অন্য বস্তু হিসেবে ধরে নেওয়া। যেমন, রাতে অল্প আলোয় দড়িকে দেখে কেউ সাপ মনে করল। একাধিকরণত্বম্ বলে—দড়ি ও সাপ একই স্থানে একসাথে থাকতে পারে না। যে-বস্তু “দড়ি”, সেটি “সাপ” নয়; এবং যে-বস্তু “সাপ”, সেটি “দড়ি” নয়। এই নীতির মাধ্যমে যুক্তি ও জ্ঞানের প্রক্রিয়ায় একটি স্পষ্ট সীমানা তৈরি হয়। এটি ভুল অনুমান বা মিথ্যা আরোপ থেকে চিন্তাকে রক্ষা করে। যেখানে সংযোগ বা প্রমাণ অনুপস্থিত, সেখানে কল্পনাগত যোগসূত্র স্থাপন করা এই নীতির পরিপন্থী। ফলে একাধিকরণত্বম্ যুক্তিকে বাস্তবতার ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখে—অনুমান বা বিভ্রমের ওপর নয়।
একাধিকরণত্বম্ শুধু বাস্তবতা বোঝার জন্য নয়, চিন্তা ও দর্শনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার জন্যও অপরিহার্য। এটি চিন্তার ভেতরে “অস্তিত্ব” ও “অনস্তিত্ব”-এর মধ্যে একটি স্পষ্ট সীমানা টানে। যদি এই নীতি উপেক্ষা করা হয়, তবে ধারণাগত বিশৃঙ্খলা শুরু হয়—“আছে” আর “নেই”-এর মধ্যে বিভাজন মুছে যায়, “সত্য” ও “মিথ্যা” একত্রে অবস্থান করতে শুরু করে, ফলে যুক্তি, জ্ঞান, এবং দর্শন—সব কিছু অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই নীতি সেই বিশৃঙ্খলা ঠেকায়। এটি এমন এক অভ্যন্তরীণ নিয়ম, যা নিশ্চিত করে—চিন্তা ও যুক্তি যেন পরস্পরবিরোধী অবস্থার মধ্যে আটকে না পড়ে। দর্শন তখন এক সংগত, সামঞ্জস্যপূর্ণ, ও যুক্তিনিষ্ঠ সাধনা হয়ে ওঠে।
ভারতীয় দর্শনের প্রায় সব ধারায়—ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা, এমনকি বেদান্ত—এই নীতি কোনো না কোনোভাবে উপস্থিত। ন্যায়-দর্শনে এটি জ্ঞানের সঠিকতা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বৈশেষিক দর্শনে এটি বস্তু ও গুণের স্বতন্ত্রতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। বেদান্তে এটি “ব্রহ্ম” ও “মায়া”-র পার্থক্য নির্ধারণে কার্যকর—যাতে যা চিরন্তন (ব্রহ্ম), তা যা অস্থায়ী (মায়া)-এর সাথে তালগোল পাকিয়ে না যায়।
একাধিকরণত্বম্ হলো চিন্তা ও অস্তিত্বের যৌক্তিক ভিত্তি। এটি শেখায়—একই স্থানে বা একই ধারণায় কোনো সত্তা ও তার অনস্তিত্ব একসাথে থাকতে পারে না। এভাবে এই নীতি সত্য ও মিথ্যা, বাস্তব ও বিভ্রম, সত্তা ও অসত্তা—এসব পার্থক্যকে পরিষ্কারভাবে আলাদা করে। ফলে দার্শনিক অনুসন্ধান যুক্তির বিশুদ্ধ পথে চলতে পারে।
যেখানে “অস্তিত্ব” আছে, সেখানে “অনস্তিত্ব” থাকতে পারে না; আর যেখানে “অনস্তিত্ব” আছে, সেখানে “অস্তিত্ব” থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এইভাবে একাধিকরণত্বম্ চিন্তার বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যুক্তির রক্ষাকবচ—যা দর্শনের প্রতিটি স্তরে সত্যের সুনির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে।
দর্শনে অনুমান (Inference) কেবল যুক্তির হাতিয়ার নয়—এটি সত্য ও মিথ্যার সূক্ষ্ম পার্থক্য প্রকাশের একটি পদ্ধতিগত দর্শন। একাধিকরণত্বম্ (Ekādhikaraṇatvam)—অর্থাৎ “একই স্থানে কোনো সত্তা ও তার অনস্তিত্ব একসঙ্গে থাকতে পারে না”—এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই অনুমান তত্ত্ব মিথ্যাত্ব বা ফালসিটির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে। এখানেই অনুমান হয়ে ওঠে অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের মধ্যবর্তী জ্ঞানতাত্ত্বিক সেতুবন্ধন।
দার্শনিক বিশ্লেষণে অনুমান ব্যবহৃত হয় কোনো সত্তার “মিথ্যা বা অস্থায়ী প্রকৃতি” প্রদর্শনের জন্য। এটি কেবল এ বলা নয় যে, “এই বস্তু নেই”, বরং দেখানো—কেন এবং কীভাবে একটি বস্তু বা গুণ তার নির্দিষ্ট আধারে (substratum)-এ অনস্তিত্ব বহন করে। এ বিষয়টি একটি বিখ্যাত সংস্কৃত সূত্রে প্রকাশিত—যার অর্থ—“Something is the counter-positive of the absolute non-existence abiding in its own part/substratum, because it has parts, like a cloth, and also like qualities, etc., in the whole.”
এই দার্শনিক বাক্যটির সহজ ব্যাখ্যা এমন—“যে-বস্তুটির অংশ আছে, সেটি তার নিজের অংশগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে থাকে না। অর্থাৎ, তার ‘পুরো রূপ’ বা ‘সম্পূর্ণ অস্তিত্ব’ অংশগুলির মধ্যে অনুপস্থিত থাকে। তাই, সেই বস্তুটিকে বলা হয় তার নিজের অংশগুলিতে থাকা অনস্তিত্বের প্রতিযোগী (counter-positive)।” যে-বস্তুর অংশ আছে, সেটি তার নিজের অংশগুলির মধ্যে কখনোই সম্পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকে না। যখন সেই অংশগুলো নির্দিষ্ট বিন্যাসে যুক্ত হয়, তখনই “পূর্ণ বস্তু”টি প্রকাশ পায়।
প্রতিযোগী (Counter-positive / Pratiyogī)—এটি ভারতীয় দর্শনে অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত একটি সূক্ষ্ম ধারণা। সহজভাবে বললে, প্রতিযোগী হলো সেই সত্তা, যার অনুপস্থিতি (অনস্তিত্ব) আমরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বা আধারে লক্ষ করি। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর “না-থাকা” বোঝাতে যে “থাকা”-র ধারণাটি লুকিয়ে থাকে, সেটিই প্রতিযোগী।
‘প্রতিযোগী’ ধারণা আসলে “অস্তিত্ব” ও “অনস্তিত্ব”-এর পারস্পরিক নির্ভরতা বোঝায়। কোনো কিছুর না-থাকা আমরা বুঝতে পারি, কারণ তার “থাকা”-র ধারণা আগে থেকেই আমাদের বোধে উপস্থিত। এইভাবে, ‘প্রতিযোগী’ ধারণা বলে—অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব পরস্পরের বিপরীত হলেও একে অপরকে শর্ত করে। কোনো অনুপস্থিতি অর্থবহ হয় কেবল তখনই, যখন আমরা জানি—কোন সত্তা অনুপস্থিত।
ধরা যাক, কাপড় হলো বহু সুতোর দ্বারা গঠিত একটি যৌগিক বস্তু। প্রত্যেকটি সুতো আলাদা অবস্থায় থাকলে সেখানে “কাপড়ত্ব” অনুপস্থিত—অর্থাৎ, কাপড়ের অত্যন্ত অনস্তিত্ব (চরম না-থাকা) সুতার মধ্যে বিদ্যমান। যখন সেই সুতোগুলো একত্রে বোনা হয়, তখন এই অনস্তিত্ব দূর হয়—“কাপড়” প্রকাশ পায়। এখানে কাপড়ই হলো তার সুতোগুলোর মধ্যে থাকা “কাপড়ত্বের অনস্তিত্ব”-এর প্রতিযোগী।
এই সূত্র বোঝার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো—অত্যন্তাভাব (atyantābhāva) ও প্রতিযোগী (pratiyogī)। অত্যন্তাভাব মানে চরম অনস্তিত্ব—অর্থাৎ কোনো সত্তা বা গুণের সম্পূর্ণ ও চিরন্তন অনুপস্থিতি। যেখানে কোনো কিছুর অস্তিত্বের কোনো সম্ভাবনাই নেই, সেটিই অত্যন্তাভাব। প্রতিযোগী হলো সেই সত্তা, যার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে—যা কোনো নির্দিষ্ট আধারে “থাকে না”।
উদাহরণস্বরূপ, কাপড়ের অনুপস্থিতি একক সুতার মধ্যে থাকে। অতএব, কাপড় হলো “কাপড়ত্বের অনস্তিত্বের প্রতিযোগী”—অর্থাৎ কাপড় সেই জিনিস, যার পূর্বে সুতাগুলির মধ্যে “কাপড়ত্ব” অনুপস্থিত ছিল।
অনস্তিত্ব থেকে উদ্ভব হচ্ছে সত্তার প্রক্রিয়াগত উত্থান। এখন দেখা যাক, এটি কীভাবে বাস্তব উদাহরণে কাজ করে। একটি কাপড় (paṭaḥ) হলো অনেকগুলো সুতোর (tantu) সমন্বয়ে তৈরি একটি যৌগিক বস্তু। প্রত্যেকটি সুতো আলাদাভাবে থাকলে, সেখানে “কাপড়ত্ব” অনুপস্থিত। একটি সুতো কখনোই “কাপড়” নয়; বরং কাপড়ত্ব তার মধ্যে নেই—এটাই “চরম অনস্তিত্ব”। কিন্তু যখন সেই সুতোগুলো নির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত হয়, বোনা হয়, তখন সেই অনস্তিত্ব দূর হয়। যা আগে অনুপস্থিত ছিল (কাপড়ত্ব), তা এখন প্রকাশ পায়। অর্থাৎ, “অনস্তিত্ব” বিলুপ্ত হয়ে “অস্তিত্ব” উদ্ভাসিত হয়। এইভাবে, কাপড় আসলে সেই অনস্তিত্বের প্রতিযোগী—যে-অনুপস্থিতি পূর্বে সুতার মধ্যে ছিল।
এই ধারণাটি কেবল কাপড়ের মতো বস্তুর ক্ষেত্রে নয়, বরং সব যৌগিক সত্তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন রং, গতি, গন্ধ, রূপ বা জাতি—এসবের কোনোটি তাদের আধারে পূর্বে বিদ্যমান থাকে না। তারা উদ্ভব লাভ করে নির্দিষ্ট সংগঠিত মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে।
যেমন, “লালত্ব” কোনো বস্তুর ভেতরে আগে থেকে থাকে না; বস্তু, আলো, চোখ ও মন—এই সম্পর্কগুলো একত্রে কাজ করলে তবেই “লাল রং” দেখা যায়। তেমনি “গতি”ও কোনো স্থির বস্তুর অন্তর্গত গুণ নয়; নির্দিষ্ট সময়-স্থান-শক্তির সম্পর্কের মধ্যে সে প্রকাশ পায়। এই দৃষ্টিতে, প্রত্যেক যৌগিক সত্তাই তার উপাদানগুলোর মধ্যে নিজস্ব অনস্তিত্বের প্রতিযোগী—অর্থাৎ, তারা আগে থেকে “ছিল না”, কিন্তু সংগঠনের ফলে “প্রকাশিত” হয়েছে।
এই বিশ্লেষণ থেকে একটি গভীর দার্শনিক উপলব্ধি জন্ম নেয়—যে-বস্তু সংগঠনের মাধ্যমে উদ্ভূত, তার কোনো স্বাধীন, শাশ্বত সত্তা নেই। তার অস্তিত্ব নির্ভর করে শর্ত ও অংশের সম্পর্কের ওপর। এই নির্ভরতা-নির্ভর অস্তিত্বই “মিথ্যা”—অর্থাৎ, পরম সত্য নয়। এভাবে অনুমান (inference) কেবল কোনো বস্তুর উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নয়, বরং তার মিথ্যা বা আপেক্ষিক প্রকৃতি প্রদর্শনের একটি যুক্তিপূর্ণ পথ।
একাধিকরণত্বম্ এখানে যুক্তির সীমা নির্ধারণ করে—যেখানে সত্তা ও অনস্তিত্ব কখনও একসঙ্গে থাকতে পারে না। অন্যদিকে অনুমান সেই সীমার মধ্যে থেকে দেখায়—কীভাবে এক অবস্থা (অনস্তিত্ব) থেকে আরেক অবস্থা (অস্তিত্ব) উদ্ভূত হয়, এবং কেন এই উদ্ভবই মিথ্যাত্বের প্রমাণ।
একাধিকরণত্বম্ চিন্তার যৌক্তিক সীমানা স্থির করে—যাতে থাকা ও না-থাকা গুলিয়ে না যায়। আর অনুমান সেই সীমানার ভেতর থেকে দেখায়—যা এখন আছে, তা আগে ছিল না; আর যা আগে ছিল না, তার বর্তমান অস্তিত্ব নির্ভরশীল ও আপেক্ষিক। এই নির্ভরশীলতাই “মিথ্যাত্ব”। অর্থাৎ, সত্য কোনো স্থায়ী পদার্থ নয়—বরং শর্তনির্ভর প্রকাশ, যা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে উত্থিত হয় এবং আবার বিলীন হয়—ঠিক যেমন সুতো থেকে কাপড় হয়, আবার কাপড় থেকে সুতোয় ফিরে যায়।
ভারতীয় দর্শনে কারণ (Kāraṇam) ও প্রভাব (Kāryam)-এর সম্পর্ক একটি দার্শনিক রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এই সম্পর্ককে বোঝার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি একসঙ্গে কাজ করে—একাধিকরণত্বম্ (একই স্থানে থাকা ও না-থাকা একসঙ্গে সম্ভব নয়) এবং অনুমান (তর্কনির্ভর উপলব্ধি)। এই দুই নীতি মিলে ব্যাখ্যা করে, কীভাবে কোনো প্রভাব তার কারণের মধ্যে পূর্বে অস্তিত্বশীল নয়, বরং উদ্ভূত হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বলা হয় অসৎকার্যবাদ—কারণের মধ্যে প্রভাবের অনস্তিত্ব—অর্থাৎ, “প্রভাব” (effect) তার “কারণ”-এর (cause) মধ্যে আগে থেকে থাকে না। যখন বলা হয়, “একটি প্রভাব সৃষ্টি হলো”, তখন তার অর্থ দাঁড়ায়—একটি নতুন রূপ বা অবস্থা বাস্তব হয়ে উঠল, যা আগে ছিল না।