উদাহরণস্বরূপ, বৈষ্ণব দার্শনিক বলদেব বিদ্যাভূষণ (Baladeva Vidyābhūṣaṇa) তাঁর তত্ত্ব-দীপিকা-য় (Light on The Truth) পনেরোটি অ-বৈষ্ণব দর্শনের যুক্তি ও সিদ্ধান্ত বিশদভাবে আলোচনা ও খণ্ডন করেন। সেখানে তিনি অদ্বৈতের “মায়া” ও “অবিদ্যা”-র ধারণাকে অযৌক্তিক বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন; এই যুক্তি দেন যে, “যদি অবিদ্যা ব্রহ্মের মধ্যে থাকে, তবে ব্রহ্মও অজ্ঞ হবে; আর যদি অবিদ্যা ব্রহ্ম থেকে পৃথক হয়, তবে দ্বৈততা অনিবার্য”।
এ ধরনের সমালোচনার মুখে, অদ্বৈত পণ্ডিতদের (বিশেষত শঙ্কর, মন্দন মিশ্র, সুরেশ্বর, বাচস্পতি মিশ্র, ও পরে মধুসূদন সরস্বতী) নিজেদের ধারণাকে দার্শনিকভাবে সুসংগঠিত করতে হয়েছে। তাঁদের কাজ ছিল অবিদ্যার “অস্তিত্ব” ও “অস্তিত্বহীনতা”-র মধ্যবর্তী সূক্ষ্ম অবস্থানকে ব্যাখ্যা করা—যেখানে অবিদ্যা বাস্তবও নয়, অবাস্তবও নয়, বরং “অনির্বচনীয়” (Anirvacanīya) অর্থাৎ “অবর্ণনীয়” এক বাস্তবতা।
এভাবে “অবিদ্যা”-র বিশ্লেষণ কেবল তত্ত্বচর্চা নয়, এক সূক্ষ্ম দ্বান্দ্বিক প্রতিরক্ষা। অদ্বৈতকে তার প্রতিপক্ষদের যুক্তি মোকাবিলায় প্রমাণ করতে হয়েছে যে, অবিদ্যা কোনো চূড়ান্ত সত্তা নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতার স্তরে তার কার্যকারিতা অস্বীকার করা যায় না।
ফলে, অদ্বৈতের অবিদ্যা-তত্ত্ব দাঁড়ায় এক দার্শনিক ভারসাম্যের উপর—যেখানে “অস্তিত্ব” ও “নাস্তিত্ব”-এর মধ্যবর্তী একটি অনির্বচনীয় অবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটিই “অজ্ঞানের দ্বান্দ্বিকতা”—যেখানে জগৎ, অভিজ্ঞতা ও আত্মার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয় সেই সীমারেখায়—যেখানে যুক্তি ও অভিজ্ঞতা মিলিত হয় কিন্তু কোনোটি একে অপরকে অতিক্রম করতে পারে না।
অদ্বৈত বেদান্তে সত্তার বা সত্যের (Satya) ধারণাটি একক নয়—বরং তা উপলব্ধির স্তরভেদে তিনভাবে প্রকাশিত হয়। অদ্বৈত বলে, চূড়ান্ত বাস্তবতা (Brahman) এক ও অদ্বিতীয়, কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতায় বহুত্ব দেখা যায়। এই আপাত বৈপরীত্য ব্যাখ্যা করার জন্য অদ্বৈত তিন স্তরের সত্য বা বাস্তবতার শ্রেণীবিন্যাস প্রস্তাব করে। এটি কোনোভাবেই বোঝায় না যে, সত্য নিজেই তিন ভাগে বিভক্ত, বরং এটি মানুষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও চেতনার বিভিন্ন স্তরের প্রতিফলন।
পারমার্থিক সত্য (Pāramārthika Satya) হলো সত্তার সর্বোচ্চ স্তর—যা একমাত্র চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং অবিভাজ্য সত্য। এই স্তরটি সম্পূর্ণভাবে নির্গুণ ব্রহ্ম (Nirguṇa Brahman)-এর সাথে অভিন্ন, অর্থাৎ এমন এক সত্তা, যা কোনো গুণ, সীমা বা দ্বৈততার অধীন নয়। দার্শনিক দিক থেকে এটি সেই পরম বাস্তবতা, যার অস্তিত্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ—যা নিজের দ্বারা টিকে থাকে এবং যার অস্তিত্বের জন্য অন্য কোনো বাহ্যিক কারণ বা সমর্থনের প্রয়োজন হয় না। অন্য সব কিছুই এর তুলনায় আপেক্ষিক।
এই চূড়ান্ত স্তরের দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্রহ্ম ও জগৎ-এর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হয় বিবর্তবাদ (Vivartavāda)-এর মাধ্যমে—যা “আপাত রূপান্তর”-এর মতবাদ। এর অর্থ, ব্রহ্ম কোনো প্রকৃত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়নি, বরং শুধু প্রকাশের কারণে পরিবর্তন প্রতীয়মান হয়েছে। যেমন সূর্যের আলোয় জল ঝিলমিল করলে মনে হয়, সূর্য কাঁপছে, কিন্তু আসলে সূর্য অপরিবর্তিত থাকে। তেমনি ব্রহ্ম অপরিবর্তিত থেকেও জগতের রূপে (প্রতিফলন) প্রতীয়মান হয়। এটি প্রতিদ্বন্দ্বী দর্শনসমূহে প্রচলিত পরিণামবাদ (Pariṇāmavāda)-এর বিপরীত, যেখানে কারণ আসলেই রূপান্তরিত হয়ে ফল সৃষ্টি করে।
পারমার্থিক স্তরে সমস্ত উপাধি (upādhi)—অর্থাৎ সীমাবদ্ধতা বা আপাত পৃথকীকরণ—সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়। আত্মা ও ঈশ্বর, জ্ঞান ও জ্ঞেয়, সত্তা ও অসত্তা—এইসব পার্থক্য এই স্তরে আর থাকে না। এখানে চেতনাই একমাত্র সত্য, আর বাকি সব কেবল তার প্রতিফলন বা আরোপ (adhyāsa)।
এই চূড়ান্ত সত্তার উপলব্ধি চেতনার চতুর্থ অবস্থায় (Turiya) প্রকাশ পায়—যা জাগ্রত (jāgrat), স্বপ্ন (svapna), ও গভীর নিদ্রা (suṣupti)-এর ওপরে ও বাইরে অবস্থিত। তুরীয় হলো শুদ্ধ চেতনা (Śuddha Caitanya)—অবিভক্ত, স্বয়ংপ্রকাশমান, এবং সমস্ত অভিজ্ঞতার পেছনের নীরব সাক্ষী। এই স্তরে পৌঁছানো মানেই অদ্বৈতের চূড়ান্ত সত্যের উপলব্ধি—যেখানে জানা, জানানো ও জানা-বস্তু—সব এক হয়ে যায়।
ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Satya) অদ্বৈতের সেই স্তর, যেখানে আমরা প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার জগৎকে দেখি, অনুভব করি, কাজ করি ও প্রতিক্রিয়া জানাই। এটি প্রচলিত বা লেনদেনমূলক বাস্তবতার স্তর—যেখানে কারণ-কার্য সম্পর্ক, নীতি, সমাজ, ধর্ম, নৈতিকতা—সবই অর্থবহ ও কার্যকর। কিন্তু এই বাস্তবতা চূড়ান্ত নয়; এটি নির্ভরশীল, পরিবর্তনশীল এবং সীমিত।
এই জগৎ বা বহুত্বের জগৎ (jagat / prapañca) আসলে মায়া (Māyā)-এর ফল। মায়া ব্রহ্মের সৃষ্টিশক্তি, যার দ্বারা ব্রহ্ম নিজে অপরিবর্তিত থেকেও বহুবিধ রূপে প্রতীয়মান হয়। তাই জগৎকে আপেক্ষিকভাবে সত্য (relative reality) বলা হয়—এটি ব্যাবহারিক অর্থে সত্য, কিন্তু পরমার্থে (ultimate sense) মিথ্যা (mithyā)। এর কারণ, এই জগতের প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ব অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল; কোনো কিছুই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবশেষে, সমস্ত অস্তিত্বই ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা-ই এর সীমিত বাস্তবতার প্রমাণ।
অদ্বৈতের ব্যাখ্যায় ব্যাবহারিক সত্যকে বোঝাতে প্রায়শই আয়নার প্রতিচ্ছবির (reflection in a mirror) উদাহরণ দেওয়া হয়। প্রতিচ্ছবি বাস্তব মনে হয়—রং, আকার, গতিবিধি সবই আছে—কিন্তু এর কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই; এটি সম্পূর্ণরূপে মূল বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। একইভাবে, জগৎ বাস্তব বলে মনে হলেও, তার অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে ব্রহ্মের ওপর নির্ভরশীল। যে-ব্যক্তি এখনও ব্রহ্মজ্ঞান (Brahma-vidyā) অর্জন করেনি, তার কাছে এই জগৎই একমাত্র বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়।
এর নিচে আছে প্রাতিভাসিক সত্য (Prātibhāsika Satya)—যা হলো ব্যক্তিগত, মায়াময় এবং ক্ষণস্থায়ী বাস্তবতার স্তর। এটি পুরোপুরি আত্মনিষ্ঠ (subjective) এবং কোনো স্থায়ী বা বস্তুগত ভিত্তি নেই। এর ক্লাসিক উদাহরণ হলো, স্বপ্নে-দেখা বাস্তবতা বা আধো-অন্ধকারে দড়িকে সাপ মনে করা। এখানে যা দেখা যায়, তা নিজে সত্য নয়, কিন্তু তা মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে—যেমন স্বপ্নে-দেখা বাঘ আমাদের মনে ভয় জাগায়, অথবা দড়িকে সাপ মনে করে আমরা আতঙ্কিত হই। এই স্তরে ভুল ধারণা নিজস্ব ক্ষেত্রে কার্যকর প্রভাব সৃষ্টি করে, যদিও তা বাস্তব নয়।
অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, এই প্রাতিভাসিক স্তর বোঝা জরুরি—কারণ এর মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, “অবাস্তবও অভিজ্ঞতায় কার্যকর হতে পারে”। যদি কেউ বলে—“যদি বিশ্ব অবাস্তব হয়, তবে নৈতিকতা বা সাধনা অর্থহীন”—অদ্বৈত তার উত্তর দেয়: অবাস্তবতা বা মিথ্যাত্বও স্তরভেদে বোঝা যায়। দড়িকে সাপ মনে করার বিভ্রম দূর হয় দড়িকে জানার পর (অর্থাৎ প্রাতিভাসিক মিথ্যা মুছে যায় ব্যাবহারিক জ্ঞান দ্বারা)। আবার, এই ব্যাবহারিক জগৎও অবাস্তব প্রমাণিত হয়, যখন ব্রহ্মজ্ঞান (Pāramārthika Satya) অর্জিত হয়।
অতএব, সত্যের এই তিন স্তর একে অপরের পরম্পরায় যুক্ত। প্রতিটি স্তর পরবর্তী স্তর দ্বারা অতিক্রান্ত হয়—স্বপ্নের জগৎ জাগরণে মুছে যায়, জাগরণের জগৎ ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তিতে বিলীন হয়।
অদ্বৈতের আধুনিক ব্যাখ্যায়, বিশেষ করে স্বামী সচ্চিদানন্দেন্দ্র সরস্বতী প্রমুখ চিন্তকদের মতে, এই তিন স্তর আসলে “বাস্তবতার তিন অবস্থা” নয়, বরং এক ও একমাত্র সত্যের তিন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি—একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক (epistemic) কাঠামো। অর্থাৎ, একটিই ব্রহ্ম, কিন্তু আমরা জ্ঞান ও উপলব্ধির ভিন্ন স্তরে সেটিকে ভিন্নভাবে দেখি। এই উপলব্ধি অদ্বৈতের মূল শিক্ষা—বাস্তবতা কখনো তিন ভাগ নয়, বরং উপলব্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে তা তিনভাবে প্রতীয়মান।
অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা (Avidyā) বা অজ্ঞান হলো সমগ্র মিথ্যা অভিজ্ঞতার মূল কারণ—যে-অজ্ঞানের কারণে মানুষ নিজেকে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় এবং চিন্তার সঙ্গে ভুলভাবে অভিন্ন করে দেখে। এই ভুল পরিচয় থেকেই সৃষ্টি হয় দ্বৈততা, আসক্তি, দুঃখ ও পুনর্জন্মের বন্ধন (saṃsāra)।
আদি শঙ্কর এই অবিদ্যাকে ব্যাখ্যা করেছেন “অধ্যাস” (adhyāsa) বা অধিরোপণ হিসেবে—অর্থাৎ আত্মার উপর অনাত্মাকে ভুলভাবে আরোপ করা। যেমন দড়িকে সাপ বলে ভুল দেখা, বা দেহকে আত্মা বলে ভাবা। মন স্বভাবতই এমন ভুল করে, কারণ তা সীমিত এবং পরিবর্তনশীল। তাই অবিদ্যা মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মূল বিভ্রম।
এই অবিদ্যা কোনো স্থূল বস্তু নয়, আবার সম্পূর্ণ অপ্রকাশ্যও (সূক্ষ্মও) নয়। অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, এটিকে অস্তিত্ব (সৎ, sat) বা অনস্তিত্ব (অসৎ, asat)—কোনোটিরই মধ্যে ফেলা যায় না। এটিকে বলা হয় অনির্বচনীয় (anirvacanīya)—অর্থাৎ “যা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না”। কারণ অবিদ্যা না সম্পূর্ণ বাস্তব, না পুরোপুরি মিথ্যা। যদি এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা হতো, তবে তার কোনো প্রভাবই দেখা যেত না; আবার যদি পুরোপুরি সত্য হতো, তবে জ্ঞানে তা নিবারিত বা বাধিত হতো না। তাই এর অবস্থান দুইয়ের মধ্যবর্তী—অস্তিত্বের সীমান্তে, যেখানে ভুলের অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়।
এইভাবে, অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা হলো মায়ার মূল কারণ—যে-শক্তি ব্রহ্মের অপরিবর্তিত বাস্তবতাকে বহুরূপে প্রতীয়মান করে তোলে। অবিদ্যা ব্যক্তিগত জ্ঞানের স্তরে “আমি দেহ”, “আমি কর্তা” বা “আমি সুখী–দুঃখী”—এই ভুল ধারণাগুলির জন্ম দেয়। জ্ঞানের (vidyā) উদয় হলে এই ভুল চিন্তা বিলীন হয়, এবং প্রকাশ পায় আত্মার প্রকৃত স্বরূপ—যা চিরন্তন, অখণ্ড, এবং একক ব্রহ্ম।
অবিদ্যার (Avidyā) ধারণাকে শঙ্করের সময় পর্যন্ত কেবল একপ্রকার “অভিজ্ঞতাগত ভুল” বা “অধ্যাস” (adhyāsa) হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল—অর্থাৎ আত্মার উপর অনাত্মার ভুল আরোপ। কিন্তু শঙ্কর-পরবর্তী অদ্বৈত ঐতিহ্যে এই ধারণা ক্রমে গভীর অধিবিদ্যাগত (metaphysical) রূপ পায়। পরবর্তী আচার্যরা দেখতে পান যে, কেবল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়ে জগতের উদ্ভব বা মায়ার প্রসারকে বোঝানো যায় না; তাই তারা অবিদ্যাকে এক সর্বজনীন, মৌলিক নীতি হিসেবে স্থাপন করেন—যা “মূলাবিদ্যা” (Mūlavidyā) নামে পরিচিত।
মূলাবিদ্যা অর্থাৎ “মূল অজ্ঞতা” অদ্বৈত বেদান্তে সেই প্রাথমিক শক্তি বা অন্ধকার, যা সমস্ত বিভ্রম ও মায়ার উৎস। “মূল” মানে আদি বা ভিত্তি, আর “অবিদ্যা” মানে অজ্ঞতা—তাই মূলাবিদ্যা হলো সেই প্রথম অজ্ঞতা, যেখান থেকে জগৎ, জীব এবং দ্বৈততার সমস্ত অভিজ্ঞতা উৎপন্ন হয়।
অদ্বৈত মতে, ব্রহ্ম একমাত্র চূড়ান্ত বাস্তবতা—চিরসত্তা, চিরচেতনা ও চিরআনন্দ। তবু আমরা বহুত্ব, পরিবর্তন, এবং সীমাবদ্ধতা দেখি। এই অভিজ্ঞতার কারণই মূলাবিদ্যা। এটি কোনো ব্যক্তিগত ভ্রান্তি নয়, বরং মহাজাগতিক স্তরে কার্যকর এক অচিন্ত্য শক্তি—ব্রহ্মের চেতনার উপর একপ্রকার আচ্ছাদন। এই শক্তির প্রকাশই মায়া, যার দ্বারা অদ্বৈত ব্রহ্ম বহুরূপী জগৎ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
তবে ব্রহ্ম নিজে কখনো অবিদ্যায় আবদ্ধ নয়; অবিদ্যা কেবল জীবের দৃষ্টিতে কার্যকর। এই কারণে বলা হয়, মূলাবিদ্যা অনাদি—এর কোনো শুরু নেই—কিন্তু এটি নিবারণযোগ্য, অর্থাৎ জ্ঞান উদিত হলে এটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়। ব্রহ্মজ্ঞানের আলোয় মায়ার আবরণ সরে যায়, আর জগৎ ও জীবের বিভেদ মিথ্যা বলে প্রতিভাত হয়।
মূলাবিদ্যা ব্যক্তিগত অবিদ্যা থেকে পৃথক। ব্যক্তিগত অবিদ্যা সীমিত জীবের চেতনার বিভ্রম; মূলাবিদ্যা সমগ্র অস্তিত্বের স্তরে সক্রিয়। এটি যেন বৃক্ষের মূল, যার শাখা-প্রশাখা রূপে অসংখ্য ব্যক্তিগত অজ্ঞতা প্রসারিত।
অতএব, মূলাবিদ্যা সেই পরম আচ্ছাদনশক্তি, যা ব্রহ্মের নিখিল চেতনা থেকে বিভেদ, বহুত্ব ও মায়ার জগত সৃষ্টি করে। জ্ঞান লাভের সঙ্গে সঙ্গেই এই আচ্ছাদন বিলীন হয়, এবং আত্মা উপলব্ধি করে যে, সে কখনোই অজ্ঞ ছিল না—সে নিজেই ব্রহ্ম, চিরস্বরূপ চেতনা।