যেহেতু ব্রহ্ম একক, নিঃসংশয় সত্য, তাই জগতের বহুত্বকে বাস্তব বলা যায় না। জগৎ ব্রহ্ম থেকে পৃথক কোনো সৃষ্টি নয়, বরং আপাত প্রকাশ বা বিভ্রম (Vivarta)—ব্রহ্মের উপর আরোপিত এক মায়াময় প্রতিচ্ছবি। যেমন দড়িকে সাপ মনে হয়—দড়ি বাস্তব, কিন্তু সাপ নয়; অজ্ঞতা থাকলে সেই সাপকেই বাস্তব বলে মনে হয়। ঠিক তেমনই, ব্রহ্মই সত্য, কিন্তু অজ্ঞতার কারণে তার উপর নানা রূপ, নাম ও কর্ম আরোপিত হয়—এই আরোপই মায়া (Māyā)।
মায়া (Māyā) হলো বিভ্রমের শক্তি, আর মিথ্যা (Mithyā) হলো সেই আপাত-বাস্তব, যা দেখা যায়, কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে টেকে না। এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে অদ্বৈত বেদান্ত প্রবর্তন করে অনির্বচনীয় খ্যাতি (Anirvacanīya Khyāti) তত্ত্ব—অর্থাৎ “ত্রুটির ব্যাখ্যাহীন প্রকাশ”। এই তত্ত্ব বলে যে, আধ্যাত্মিক অজ্ঞানতা (Avidyā) এমন কিছু, যা না পুরোপুরি সত্য, না পুরোপুরি মিথ্যা; একে যুক্তি বা ভাষায় নির্ধারণ করা যায় না।
যদি Avidyā-কে সম্পূর্ণ সত্য বলা হয়, তবে ব্রহ্মের সঙ্গে দ্বিতীয় এক বাস্তবতার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, যা অদ্বৈত নীতি ভঙ্গ করে। আবার যদি একে পুরোপুরি মিথ্যা বলা হয়, তবে জগৎ ও অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই অদ্বৈতের দৃষ্টিতে Avidyā “অব্যাখ্যেয় কিন্তু কার্যকর”—এটি ব্রহ্মকে আচ্ছন্ন না করলেও জীবের অভিজ্ঞতায় বাস্তবতার ছায়া ফেলে।
Avidyā ব্যাখ্যা করে, কেন একক চেতনা নানা অবস্থায়—জাগরণ (Jāgrat), স্বপ্ন (Svapna), গভীর নিদ্রা (Suṣupti)—বহুবিধ রূপে প্রতীয়মান হয়। এই বহুত্ব কোনো নতুন বাস্তবতা নয়, বরং চেতনার উপর ভুল আরোপ (Adhyāsa)। যতক্ষণ না জ্ঞান (Vidyā) আসে, ততক্ষণ এই আরোপই সত্য বলে মনে হয়; কিন্তু বিদ্যা বা জ্ঞান উদিত হলে বিভ্রম মিলিয়ে যায়—যেমন আলো উঠলে অন্ধকার নিজে থেকে সরে যায়।
এভাবে অদ্বৈত ব্যাখ্যা করে যে, অজ্ঞতা কেবল মানসিক ভুল নয়, বরং একটি অধিবিদ্যাগত (Metaphysical) প্রক্রিয়া—যা দেখায়, কীভাবে একমাত্র ব্রহ্ম, সেই অবিনাশী চেতনা, আপাতভাবে বহুরূপী জগতে প্রকাশিত হয় এবং কীভাবে সেই বিভ্রম জ্ঞানের দ্বারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
অবিদ্যা (Avidyā) বা আধ্যাত্মিক অজ্ঞানতা অদ্বৈত বেদান্তে মানুষের দুঃখ, বিভ্রম ও পুনর্জন্মের চক্র (saṁsāra)-এর মূল ব্যাখ্যামূলক নীতি। এটি কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি নয়, বরং এক কার্যকর ও ইতিবাচক অধিবিদ্যামূলক শক্তি, যা আত্মার সীমাহীন, শুদ্ধ প্রকৃতির উপর এক পর্দা বিস্তার করে। এই মূল অজ্ঞানতা, যা মূলোপাধি বা মূল অবিদ্যা (Mūla Avidyā) নামে পরিচিত, আত্মাকে সীমাবদ্ধ ও পৃথক হিসেবে প্রতীয়মান করে তোলে। এর ফলে একক, অনন্ত আত্মা (Ātman) মিথ্যা পরিচয়ের দ্বারা আবৃত হয়, এবং ব্যক্তি নিজেকে শরীর, মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অভিন্ন মনে করে। এই ভুল পরিচয়ই সকল দুঃখ ও বন্ধনের কারণ।
শঙ্করাচার্য অবিদ্যার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে যে-ধারণাটি ব্যবহার করেন, সেটি হলো অধ্যাস (Adhyāsa) বা আরোপণ। অধ্যাস মানে হলো, এক বস্তু বা সত্তার উপর অন্য কিছুর বৈশিষ্ট্য আরোপ করা—যেমন দড়িকে সাপ বলে ভুল করা বা আয়নায় প্রতিফলনকে বাস্তব বস্তুর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা। আত্মার প্রেক্ষিতে, এই অধ্যাস ঘটে, যখন চেতনার (Ātman) শুদ্ধ, অচল প্রকৃতিকে দেহ-মন-ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেখা হয়। ফলে আত্মা নিজের স্বরূপ ভুলে শরীর ও মানসিক গুণাবলিকে নিজের বৈশিষ্ট্য বলে মনে করে। এই ভুল ধারণা থেকেই “আমি সুখী”, “আমি দুঃখী”, “আমি কর্মী”—এইসব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অহংবোধের সৃষ্টি হয়।
এই আরোপণ বা বিভ্রম কেবল কল্পনা নয়; এর একটি অধিবিদ্যামূলক ভিত্তি থাকে, যা হলো আধার (locus)। কোনো বিভ্রম টিকতে হলে তার ওপর একটি সত্য ভিত্তি বা আধার থাকা দরকার—যেমন দড়িকে সাপ ভাবার ক্ষেত্রে দড়িটিই আধার। অদ্বৈতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দৃশ্যমান জগতের সমস্ত বিভ্রম বা মায়াময় প্রজেকশনের চূড়ান্ত আধার হলো ব্রহ্ম। জগৎ নিজে স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল নয়; এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত এক অনির্বচনীয় প্রতিচ্ছবি। ফলে ত্রুটির অস্তিত্বও আধারের অজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল—অর্থাৎ ব্রহ্ম সম্পর্কে অজ্ঞতাই জগতের অভিজ্ঞতাকে সম্ভব করে তোলে।
এভাবে দেখা যায়, অবিদ্যা নিছক কোনো নিষ্ক্রিয় অবস্থা নয়; এটি সক্রিয়ভাবে কাজ করে। শাস্ত্রের ভাষায়, এটি দ্বিগুণ কাজ সম্পন্ন করে—একদিকে এটি ব্রহ্মকে আবৃত করে (āvaraṇa), অন্যদিকে জগৎকে প্রকাশ করে (vikṣepa)। এই দুই ক্রিয়া পরস্পর-সম্পূরক: যখন আত্মার প্রকৃতি আচ্ছাদিত হয়, তখনই মিথ্যা জগতের অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়। এই দ্বৈত কার্যপ্রণালীই মানুষকে কর্ম, ইচ্ছা ও ভোগের জগতে আবদ্ধ করে রাখে—যেখানে সে কর্তা (kartā) ও ভোক্তা (bhoktā) উভয় হিসেবেই ক্রিয়াশীল। অবিদ্যা তাই নিছক অন্ধকার নয়; এটি এমন এক সক্রিয়, প্রক্ষেপণক্ষম শক্তি, যা চেতনার সীমাহীন আলোকে আংশিকভাবে ঢেকে রেখে অভিজ্ঞতামূলক জগৎকে টিকিয়ে রাখে। জ্ঞান (vidyā) উদয় হলে এই পর্দা সরে যায়, এবং আত্মা নিজের স্বরূপে ব্রহ্মরূপে প্রকাশিত হয়।
অবিদ্যার কার্যপ্রণালীকে অদ্বৈত বেদান্তে বোঝানো হয় দুটি সক্রিয় শক্তির মাধ্যমে—আবরণ শক্তি (Avaraṇa Śakti) এবং বিক্ষেপ শক্তি (Vikṣepa Śakti)। এই দুই শক্তিই একসঙ্গে কাজ করে, যার ফলে একক, অসীম চেতনা বহুবিধ জগৎ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতার রূপে প্রকাশিত বলে প্রতীয়মান হয়। আবরণ শক্তি ঢেকে রাখে সত্যকে, আর বিক্ষেপ শক্তি গঠন করে মায়ার জগৎ। একে বলা যায়—অবিদ্যার দ্বৈত ইঞ্জিন, যা একই সাথে সত্যকে আড়াল করে এবং মিথ্যাকে প্রকাশ করে।
আবরণ শক্তি (Avaraṇa Śakti) হচ্ছে অবিদ্যার প্রথম ও মৌলিক কার্যক্ষমতা। এর কাজ হলো আবৃত করা—অর্থাৎ আত্মা বা ব্রহ্মের প্রকৃত, অসীম চৈতন্যকে আচ্ছন্ন করে রাখা। ভামতি শাখার ব্যাখ্যানুসারে, এই শক্তিই ব্যক্তিগত অজ্ঞানতা (tula-avidyā)-র মাধ্যমে ব্রহ্মকে “আচ্ছন্ন” করে। এর ফলে চেতনার প্রকৃত স্বরূপ মানুষের উপলব্ধি থেকে গোপন থাকে। আত্মার পরম, সর্বব্যাপী, চিরন্তন সত্তা যেন সীমাবদ্ধ, ব্যক্তিগত, আংশিক চেতনায় সংকুচিত হয়ে পড়ে। এই আবরণই জন্ম দেয় সীমাবদ্ধতার ও ভেদবোধের—যার ফলে ব্যক্তি নিজেকে “আমি” হিসেবে আলাদা সত্তা বলে মনে করে।
মূলত, ব্রহ্ম সম্বন্ধে এই অজ্ঞতাই অধ্যাস বা আরোপণের জন্য প্রাথমিক শর্ত তৈরি করে। আধার সম্পর্কেই জ্ঞান যখন অনুপস্থিত, তখনই ভুল পরিচয় সম্ভব হয়—যেমন দড়িকে সাপ বলে মনে করতে হলে প্রথমে দড়ি সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। সেই অর্থে, আবরণ শক্তিই অবিদ্যার মূল শিকড়, যা বাস্তব চেতনার অসীম আলোককে আচ্ছাদিত করে রাখে।
বিক্ষেপ শক্তি (Vikṣepa Śakti) হচ্ছে অবিদ্যার দ্বিতীয় দিক—যা সৃষ্টি করে বিভ্রমের গতিশীল জগৎ। আবরণের কারণে যে-শূন্যতা বা অজ্ঞতার অন্ধকার সৃষ্টি হয়, তার ওপরই এই বিক্ষেপ শক্তি নানা রূপ, গঠন ও নাম-রূপ (nāma–rūpa) প্রক্ষেপণ করে। এই প্রক্ষেপণই হচ্ছে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব—সময়, স্থান, কার্যকারণ, বস্তু, প্রাণী, চিন্তা, অনুভূতি—সবই এই বিক্ষেপ শক্তির প্রকাশ। একক ব্রহ্ম যেন বহুবিধ আকারে বিভক্ত বলে মনে হয়, যদিও বাস্তবে কোনো রূপান্তর ঘটে না। এই কারণেই অদ্বৈত বেদান্ত এই প্রক্রিয়াকে বলে পরিণাম নয়, বিবর্ত বা আপাত-রূপান্তর (vivarta)। একক চেতনা নিজেকে না বদলিয়েও যেন অসংখ্য বস্তু, শক্তি ও ব্যক্তিতে বিভক্ত হয়ে প্রতিফলিত হয়।
‘পরিণাম’ অর্থ প্রকৃত রূপান্তর, যেখানে ‘কারণ’ নিজে পরিবর্তিত হয়ে ‘ফল’-এর রূপ নেয়। দুধ দই হলে যেমন দুধের আসল স্বরূপ বদলে যায়, তেমনি পরিণামে কারণ আর পূর্বাবস্থায় থাকে না। এটি বাস্তব পরিবর্তনের তত্ত্ব। সাংখ্য ও ন্যায় দর্শনে জগতের সৃষ্টি এইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়—প্রকৃতি নিজে রূপান্তরিত হয়ে বিশ্বরূপে প্রকাশ পায়।
‘বিবর্ত’ অর্থ ক্রমবিকাশ বা ধীরে ধীরে প্রসারণ। এখানে ‘কারণ’ নিজে বদলায় না, বরং তার ভেতরে থাকা সম্ভাবনা বা শক্তি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। যেমন বীজ থেকে অঙ্কুর, অঙ্কুর থেকে বৃক্ষ; বীজের সত্তা নষ্ট হয় না, কেবল বিকশিত হয়।
পরিণামে কারণ ফলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু বিবর্তে কারণ ফলের মধ্যেও থেকে যায়। পরিণামে রূপান্তর বাস্তব, বিবর্তে রূপান্তর আপাত; পরিণামে পরিবর্তন হঠাৎ ঘটে, বিবর্তে পরিবর্তন ক্রমোন্নতির পথে এগোয়। তাই বলা হয়—পরিণাম হলো “রূপান্তর”, আর বিবর্ত হলো “প্রকাশ।”
বিক্ষেপ শক্তির কার্যক্রম আবরণ শক্তির স্বাভাবিক পরিণতি। যা ঢেকে রাখা হয়েছে, সেটিই নতুন রূপে প্রকাশিত হয়—তবে বিকৃতভাবে, ভুলভাবে। যেমন ঘন কুয়াশায় চাঁদের আলো বিকৃত হয়ে হাজার রঙে প্রতিফলিত হয়, তেমনি অবিদ্যার আবরণের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মের আলো বিকৃত হয়ে জগৎরূপে প্রতীয়মান হয়। এইভাবে, আবরণ শক্তি অজ্ঞতার সম্ভাবনাকে সৃষ্টি করে, আর বিক্ষেপ শক্তি সেই অজ্ঞতাকে গতিশীল বাস্তবতার অভিজ্ঞতায় রূপ দেয়।
অদ্বৈতের ব্যাখ্যায়, এই দুই শক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল—আবরণ ছাড়া বিক্ষেপের কোনো ভিত্তি নেই, আর বিক্ষেপ ছাড়া আবরণের প্রভাবও অনুভব করা যায় না। আবরণ চেতনার স্বরূপ গোপন রাখে, আর বিক্ষেপ সেই অজ্ঞতার ভেতর থেকে সৃষ্টি করে বহুত্বের ভ্রান্ত প্রতিফলন। এই দুই শক্তির সম্মিলিত ক্রিয়াই মানব অভিজ্ঞতার জগৎকে গঠন করে—যেখানে সত্য (Satya) পর্দার আড়ালে থাকে, আর মিথ্যা (Mithyā) কার্যত বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়।
অবিদ্যার এই দ্বৈত ইঞ্জিনের মধ্যেই মায়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিহিত—একদিকে আত্মার পরম চেতনা অদৃশ্য হয়ে যায়, অন্যদিকে তারই বিকৃত প্রতিচ্ছবি “বিশ্ব” নামে প্রতীয়মান হয়। জ্ঞান (Vidyā) উদয় হলে এই দুটি শক্তিরই কার্যক্ষমতা লোপ পায়—আবরণ সরে যায়, আর বিক্ষেপ বিলীন হয়; তখন প্রকাশ পায় ব্রহ্মের একক, অদ্বৈত, সীমাহীন জ্যোতি।
সংসারের ধারাবাহিক প্রবাহ বা বন্ধন (bandhana) মূলত অবিদ্যার দুটি সক্রিয় শক্তি—আবরণ (Avaraṇa) ও বিক্ষেপ (Vikṣepa)—এর পারস্পরিক ও চক্রাকার ক্রিয়ার ফল। এই দুই শক্তি একে অপরের পরিপূরক; একটির অস্তিত্ব ছাড়া অপরটি কার্যকর হয় না। আবরণ শক্তি আত্মার অসীম প্রকৃতিকে গোপন করে সীমাবদ্ধতার ধারণা সৃষ্টি করে, আর বিক্ষেপ শক্তি সেই সীমাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা ঘটানোর জন্য পুরো মিথ্যা জগৎকে গঠন করে। এই দুইয়ের যুগল প্রক্রিয়া মিলেই সৃষ্টি করে বন্ধনের (saṁsāra) “অপারেশনাল লুপ”—যেখানে জ্ঞান হারায়, অজ্ঞতা জন্মায়, আর জীব বার বার জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে ফিরে আসে।
আবরণ শক্তির প্রাথমিক কাজ হলো সীমাবদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা—অর্থাৎ, আত্মাকে তার অসীম, সর্বব্যাপী স্বরূপ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে অনুভব করানো। একক চেতনা তখন নিজেকে “আমি” নামক পৃথক সত্তা হিসেবে উপলব্ধি করে, যা দেহ, মন, ইন্দ্রিয় ও কর্মের মাধ্যমে নিজেকে চিনতে শুরু করে। এই বিভাজনই ব্যক্তিকেন্দ্রিক আত্মার জন্ম দেয়। একবার সীমাবদ্ধ আত্মার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে, বিক্ষেপ শক্তি সক্রিয় হয়। এই শক্তি সেই সীমাবদ্ধ “আমি”-এর জন্য একটি কার্যক্ষেত্র সৃষ্টি করে—দেহ, মন, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা ও বাইরের জগৎ।
এভাবে, আবরণের দ্বারা তৈরি শূন্যতাকে পূরণ করতে বিক্ষেপ শক্তি জন্ম দেয় বহুবিধ অভিজ্ঞতার। ফলস্বরূপ, জীব নিজেকে ক্রমাগত কর্তা (doer) ও ভোক্তা (enjoyer) বলে মনে করে—সে কাজ করে, ভোগ করে, সুখ-দুঃখ অনুভব করে এবং সেইসব অভিজ্ঞতার ফলে নতুন কর্ম সৃষ্টি করে। কর্ম আবার নতুন জন্মের কারণ হয়, আর নতুন জন্ম আবার অজ্ঞানতার নতুন পর্দা সৃষ্টি করে। এইভাবে, বন্ধনের চক্র (saṁsāra-chakra) অবিরাম ঘুরতে থাকে।