অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: পঁয়ষট্টি



চূড়ান্ত ঐক্য: শেষে দুটি পথ এসে মিশে যায় একবিন্দুতে—যেখানে সব নাম, সব শব্দ, সব দর্শন নিঃশেষ হয়। সেই নিঃশেষই আসল পূর্ণতা। অদ্বৈতের ভাষায়, “সেই ব্রহ্ম, যিনি অনির্বচনীয়, তিনিই সব কিছু।” বৌদ্ধের ভাষায়, “যা নির্বচনীয়তীত, তা-ই পরম শূন্যতা।” দু-জনেই সেই এক অভিজ্ঞতার দিকে ইঙ্গিত করে—এক নিঃশব্দ দীপ্তির, এক স্বচ্ছ নীরবতার, যেখানে না ঈশ্বর, না মানব, না চিন্তা—শুধু থাকা, এমনভাবেই থাকা।

ব্রহ্মের অনির্বচনীয়তা এবং শূন্যতার নির্বচনীয়তীততা—দুটি শব্দ, দুটি ধারা, কিন্তু এক নীরব সত্যের দুই দিক। একজন বলে, “তাঁকে বলা যায় না, কারণ তিনি সব বচনের উৎস।” অন্যজন বলে, “তাঁকে বলা যায় না, কারণ বলা মানেই ভেদ।” ব্রহ্ম বলে, “আমি আছি।” শূন্যতা বলে, “যা-কিছু আছে, তা-ও এমনই।” একজন চেতনার পূর্ণতা, অন্যজন চেতনার শূন্যতা—কিন্তু উভয়ই অদ্বৈত, অচিন্ত্য, অব্যক্ত, বচন-অসাপেক্ষ। সেই অনির্বচনীয় নিঃশব্দ স্থিরতাই—চূড়ান্ত মুক্তি, নির্বাণ বা মোক্ষ। যেখানে কিছু বলার নেই, কারণ যা বলা যায়, তা আর সত্য নয়।

ভাষার অন্তিম পরিসর—নীরবতা, শূন্যতা ও ব্রহ্মানুভব:

ভাষার ক্ষমতা ও সীমা: মানবমস্তিষ্ক সব কিছু প্রকাশ করতে চায় শব্দের মাধ্যমে। ভাষা হলো চিন্তার বাহন, আর চিন্তা হলো আত্মবোধের প্রক্ষেপণ। তবে ভাষার গঠনই এমন—যেখানে সব কিছু ভেদ আর সংজ্ঞার ওপর দাঁড়িয়ে। কোনো শব্দ মানে দাঁড়ায় তখনই, যখন তার বিপরীত শব্দ থাকে: আলো-অন্ধকার, জীবন-মৃত্যু, আছে-নেই। এই দ্বন্দ্ব ছাড়া কোনো উচ্চারণ অর্থবোধক হয় না। কিন্তু চূড়ান্ত সত্য—ব্রহ্ম হোক বা শূন্যতা—এমন এক বাস্তবতা, যা ভেদের আগের অবস্থা, যেখানে “অস্তিত্ব” ও “অনস্তিত্ব” দুটিই মিলে যায়। এই কারণে ভাষা যতই এগোয়, নিজেই নিজের মধ্যে ঘুরে-ফিরে সীমায় এসে থেমে যায়।

ব্রহ্মানুভব—ভাষার আত্মবিলোপ: অদ্বৈত বেদান্ত বলে, যখন আত্মা নিজের স্বরূপে জাগে, তখন মন ও বাক্যের প্রয়োজন থাকে না। মন থেমে যায়, কারণ জানবার কিছু অবশিষ্ট থাকে না; ভাষা থেমে যায়, কারণ বলবার কেউ থাকে না। এ অবস্থাই ব্রহ্মানুভব—এক অপরোক্ষ অভিজ্ঞতা, যেখানে জানা ও জানার পার্থক্য মুছে যায়। এখানে জ্ঞান, জ্ঞাতা, ও জ্ঞেয়—তিনটি এক হয়ে যায়। উপনিষদ বলে, “যে জানে, সে বলে না; যে বলে, সে জানে না।” অর্থাৎ, ব্রহ্মকে যিনি সত্যিই জানেন, তিনি আর তাকে বলার প্রয়োজন বোধ করেন না, কারণ সেই জ্ঞান নিজেই চেতনার পূর্ণতা। ব্রহ্ম সেখানে আর একটি ভাব নয়, বরং চেতনার নিজস্ব দীপ্তি—যা কোনো প্রকাশ নয়, বরং প্রকাশের উৎস।

শূন্যতার নীরবতা: মহাযান সূত্রে বলা হয়, “যে শূন্যতাকে জানে, সে নীরব থাকে; যে শূন্যতাকে ভাষায় বাঁধে, সে বিভ্রান্ত।” নাগার্জুনের দৃষ্টিতে, শূন্যতা ভাষার নৈরাশ্য নয়, বরং তার অতিক্রম। ভাষা যেখানে দ্বৈততার মাধ্যমে জগৎ ব্যাখ্যা করে, শূন্যতা সেই দ্বৈততার মূলকাঠামোকে গলিয়ে দেয়। এইজন্য শূন্যতা নিঃশব্দ, কিন্তু সেই নীরবতা মৃত নয়—এটি এমন এক নীরবতা, যা সমস্ত ধ্বনির ভিত্তি। যেমন, সংগীতে নোটগুলোর মাঝে যে-বিরতি থাকে, সেই নীরবতাই তো সংগীতকে প্রাণ দেয়। ঠিক তেমনি, শূন্যতার নীরবতা সব চিন্তা, ভাষা, ও অভিজ্ঞতার আশ্রয়। এখানে “না বলা” মানে “অজ্ঞতা” নয়; বরং তা হলো চূড়ান্ত জানা—যেখানে জানার ক্রিয়া থেমে গিয়ে জ্ঞান নিজেই হয়ে যায় নিঃশব্দ দীপ্তি।

নীরবতার দার্শনিক অর্থ: নীরবতা কেবল শব্দের অনুপস্থিতি নয়; এটি অবিভাজ্য চেতনার স্বরূপ। যেখানে বলার কিছু নেই, কারণ কিছুই “অন্য” নেই। ব্রহ্মানুভবের নীরবতা মানে—চেতনার স্বয়ং দীপ্তি; শূন্যতার নীরবতা মানে—চেতনার নিজস্ব নিঃস্বার্থতা। দুটোই এক স্থিতিতে পৌঁছায়—এক অচঞ্চল, অদ্বৈত সচেতনতা—যেখানে চিন্তা নেই, তবু বোধ আছে; যেখানে ভাষা নেই, তবু প্রকাশ আছে; যেখানে আমি নেই, তবু এক পূর্ণ উপস্থিতি আছে।

ভাষা থেকে নীরবতায়, নীরবতা থেকে জ্ঞানে: ব্রহ্মানুভব বা শূন্যতার উপলব্ধি কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক উপলব্ধি নয়; এটি এক গভীর অন্তর্মুখ যাত্রা—যেখানে ভাষা যত গভীরে যায়, ততই নিজেকে মুছে ফেলে। বুদ্ধ ও উপনিষদের ঋষি উভয়েই বলেছেন—শেষে জ্ঞানের পরিণতি নীরবতা। বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর নীরব ছিলেন; উপনিষদের ঋষিও বলেছিলেন—“যে-ব্রহ্মকে বলা যায় না, তাকেই উপাসনা করো।” ভাষা শুরু হয় সীমা থেকে, কিন্তু নীরবতা শুরু হয় সীমাহীনতা থেকে। ভাষা বর্ণনা করে অভিজ্ঞতা; নীরবতা নিজেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।

নীরবতার মধ্যে শূন্যতা ও ব্রহ্মের মিল: যখন নীরবতা পরিপূর্ণ হয়, তখন “ব্রহ্ম” ও “শূন্যতা”-র পার্থক্য মুছে যায়। একটি বলে—চেতনা চিরন্তন, অন্যটি বলে—চেতনা নির্বিশেষ। কিন্তু যখন চেতনা সব ভেদ অতিক্রম করে, তখন সে হয়ে ওঠে অচিন্ত্য উপস্থিতি। অদ্বৈতের ভাষায়, সেটিই আত্মস্বরূপ। বৌদ্ধের ভাষায়, সেটিই তথতা। উভয়ের ভাষায়, সেটিই নীরবতা—যেখানে কিছু যোগ করার নেই, কিছু বর্জনেরও নেই।

ভাষা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করি, চিন্তার সাহায্যে এগোই, কিন্তু শেষপর্যন্ত পৌঁছোতে হলে ভাষাকে সব পেরিয়ে যেতে হয় নীরবতায়। ব্রহ্মকে সেখানে বলা যায় না, কিন্তু তার দীপ্তিতে সব বলা সম্ভব। শূন্যতা সেখানে ধরা যায় না, কিন্তু তার প্রশস্ততায় সব ধারণ সম্ভব। সেই নীরবতার মধ্যেই ব্রহ্ম ও শূন্যতা এক হয়—না চিন্তা, না শব্দ, না রূপ—শুধু নিঃশেষ স্বচ্ছতা, যেখানে সমস্ত সত্তা, সমস্ত অসত্তা এক হয়ে থাকে এক নিঃশব্দ সংগীতে। “যেখানে বাক্‌ থেমে যায়, সেখানেই সত্য শুরু হয়।”

নির্বাণ (নিব্বান) ও বোধি—এই দুটি শব্দ প্রায়শই একে অন্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু দার্শনিকভাবে তারা এক নয়। দুটোই মুক্তি ও জাগরণের প্রতীক, তবে তাদের অর্থ, অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশ ভিন্ন স্তরে অবস্থান করে।

প্রথম দিকের অর্থবোধ: বুদ্ধের সময়ের পালি সূত্রগুলোতে “নিব্বান” শব্দটি সবচেয়ে প্রাচীন, আর “বোধি” শব্দটি পরে ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট অবস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে। নিব্বান (Nibbāna) এসেছে “nir- / nis-”, যার অর্থ “না, অ-” (নিষেধসূচক উপসর্গ) এবং “vā / vāṇa / vāna”, যার অর্থ “বাতাসে ওড়া / ফুঁ ফেলা / শ্বাস-প্রবাহ / জ্বালা” ধরনের ক্রিয়া-রূপ—তাই nirvāṇa / nibbāna-র মানে দাঁড়ায়, “বাতাসে ফুঁ ফেলার মাধ্যমে নিভে যাওয়া”—যেমন বাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া—অর্থাৎ, এর মানে “নির্বাপন করা”, “নিভে যাওয়া” বা “ম্লান হওয়া”। যেভাবে আগুন নিজের ইন্ধন শেষ হলে নিভে যায়, তেমনি আকাঙ্ক্ষা, ক্রোধ ও মোহ নিভে গেলে মন পৌঁছে যায় শান্তির চরম অবস্থায়—সেটিই নিব্বান। অন্যদিকে, বোধি (Bodhi) এসেছে ধাতু “বুধ্” থেকে, যার অর্থ “জাগা”, “উপলব্ধি করা”। অর্থাৎ, বোধি মানে—জ্ঞান, জাগরণ, বা সম্পূর্ণ প্রজ্ঞা। একটি হলো নিভে-যাওয়া আগুনের শান্তি, অন্যটি হলো সূর্যোদয়ের আলোকিত চেতনা।

নির্বাণের দিক—নিভে যাওয়া: নির্বাণ মানে দহন, তৃষ্ণা, আসক্তি, দুঃখ—সব কিছুর শম (শেষ)। যেখানে আর জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তন নেই, যেখানে মন সম্পূর্ণ শান্ত, আকাঙ্ক্ষাহীন। বুদ্ধ বলেছেন—“যেখানে না কিছু আসে, না কিছু যায়—না জন্ম, না বিনাশ—সেটিই নির্বাণ।” অর্থাৎ, নির্বাণ হলো সংসার-চক্রের অবসান। এটি “শান্তি” (śānti), “অশোক” (sorrowless), এবং “অপরামত্ত” (utter stillness)—এক নিঃশব্দ মুক্তি। নির্বাণ কোনো স্থান নয়, কোনো ধ্বংসও নয়; এটি সেই অবস্থা, যেখানে সব দহন নিভে গেছে।

বোধির দিক—জাগরণ: বোধি মানে জাগরণ—অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, অজ্ঞান থেকে জ্ঞানের দিকে। যিনি বোধি অর্জন করেন, তিনি জানেন জগতের প্রকৃত রূপ—সব কিছু অনিত্য, অনাত্ম ও দুঃখময়। এই জ্ঞানের কারণে সমস্ত মোহ ভেঙে যায়, এবং মন মুক্ত হয় অজ্ঞতার বন্ধন থেকে। এই “জাগরণ” থেকে মুহূর্তেই বুদ্ধত্ব উস্‌ভাসিত হয়। বোধি কোনো শেষ নয়, বরং জ্ঞানের পরিপূর্ণ জাগরণ—যার মধ্যে করুণা ও প্রজ্ঞা দুই-ই জেগে ওঠে।

সম্পর্ক ও ক্রম: দুটি শব্দ আলাদা হলেও, তারা একে অপরের অন্তর্গত। বোধি হলো সেই চেতনা, যার মাধ্যমে নির্বাণ উপলব্ধ হয়। অন্যভাবে বলা যায়—বোধি হলো জাগরণের মুহূর্ত, নির্বাণ হলো সেই জাগরণের ফল বা অবস্থা। যেমন, আগুন নিভে গেলে শান্তি আসে—এই শান্তিই নির্বাণ। আর আগুন নিভে যাবার কারণ হিসেবে যে-উপলব্ধি—“এই দহনই দুঃখ”—সেটিই বোধি।

বুদ্ধ নিজে নির্বাণলাভের পরে তাঁর অভিজ্ঞতাকে বলেছেন বোধি—“আমি জেগে উঠেছি, জগতের অনন্ত নিদ্রা থেকে।” তাঁর বোধির মাধ্যমে তিনি নির্বাণ উপলব্ধ (প্রাপ্ত) হলেন, আর নির্বাণের মধ্যে তিনি স্থিত রইলেন।

দার্শনিক স্তরে পার্থক্য: বোধি সক্রিয়—এটি এক অন্তর্দৃষ্টি, যা অজ্ঞতার ঘোমটা সরিয়ে দেয়। নির্বাণ স্থির—এটি সেই নিঃশর্ত শান্তি, যেখানে কোনো আকাঙ্ক্ষা অবশিষ্ট নেই। বোধি জাগরণ, নির্বাণ প্রশম। বোধি আলোক, নির্বাণ নীরবতা। একটি “বুঝে ফেলা”, অন্যটি “বুঝে ফেলার পর সম্পূর্ণ স্থিতি”।

অভিজ্ঞতার দিক থেকে: একজন সাধক ধীরে ধীরে মন পরিষ্কার করে, দুঃখের উৎপত্তি ও নাশ বোঝে। যখন তাঁর জ্ঞানে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়—যখন তিনি জানেন, “এই অনিত্যতাই সত্য, এখানে কোনো স্থায়ী আত্মা নেই”—তখন তাঁর মধ্যে জাগে বোধি। এই বোধি যত গভীর হয়, তৃষ্ণা ও আসক্তি ততই নিভে যায়। যখন একেবারে নিভে যায়, তখন যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই নির্বাণ।

পরম দৃষ্টিতে: যখন জ্ঞানী বলেন, “আমি নির্বাণ পেয়েছি”—তিনি আসলে কোনো স্থান বা বস্তুর কথা বলছেন না। তিনি বলছেন, “আমি জেগে উঠেছি সেই অবস্থায়, যেখানে কিছুই অর্জন করার নেই, কিছুই হারানোর নেই।” তখন বোধি ও নির্বাণ আলাদা থাকে না; থাকে শুধু—একই চেতনাকে দুই দিক থেকে দেখা। যখন জাগরণ সম্পূর্ণ হয়, শান্তিও সম্পূর্ণ হয়। বোধি নির্বাণে পরিণত হয়, নির্বাণ বোধির নিঃশব্দ রূপ নেয়।

বোধি হলো চেতনার জাগরণ—যেখানে অজ্ঞতা দূর হয়ে সত্য উপলব্ধ হয়। নির্বাণ হলো চেতনার বিশ্রাম—যেখানে সমস্ত আকাঙ্ক্ষা, দহন ও পুনর্জন্মের সম্ভাবনা নিভে গেছে। একটি “জাগরণ”, অন্যটি “শান্তি”; একটি সূর্যোদয়, অন্যটি সায়াহ্নের স্থিতি। কিন্তু উভয়ই মুক্তি, উভয়ই অদ্বৈত। বুদ্ধ নিজেই এই দু-কথায় তাঁর জীবনকে সংক্ষেপে প্রকাশ করেছিলেন—“আমি জেগে উঠেছি (বোধি), এবং সমস্ত আগুন নিভে গেছে (নির্বাণ)।” এভাবে বলা যায়—বোধি হলো প্রজ্ঞার আলো, নির্বাণ হলো আলোর পর নীরব দীপ্তি। দুটো মিলেই বোঝায়—সম্পূর্ণ মুক্তি, যেখানে কিছু আর বলা যায় না, কারণ যা বলার, তা সব পেরিয়ে গেছি আমরা।

নয় ব্রহ্ম, নয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা: মাধ্যমক দর্শনের মূল তত্ত্ব—শূন্যতা—যা অস্তিত্বের ভিত্তিহীনতা ও আপেক্ষিকতার পরম সত্য। আচার্য নাগার্জুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমক (অর্থাৎ 'মধ্যপন্থা') বৌদ্ধদর্শন ভারতীয় চিন্তাধারার এক বিপ্লবী বাঁক। এই মতবাদ সেই সমস্ত সনাতনী ধারণাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে, যা কোনো শাশ্বত, স্বাধীন সত্তা (যেমন অদ্বৈত বেদান্তের ব্রহ্ম)-এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। মাধ্যমকের মতে, পরম সত্য কোনো ইতিবাচক, অপরিবর্তনীয় 'সত্তা' হতে পারে না। সমগ্র দার্শনিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক নিগূঢ় উপলব্ধি এবং বিশ্লেষণের ওপর, যার নাম শূন্যতা।

প্রতীত্য-সমুৎপাদই নির্ভরশীল উৎপত্তির অপরিহার্য নিয়ম। মাধ্যমক দর্শনে বাস্তবতাকে বোঝার মূল সূত্র হলো প্রতীত্য-সমুৎপাদ (Dependent Origination) বা নির্ভরশীল উৎপত্তি। এটি কোনো সরল কার্য-কারণ সম্পর্ক নয়, বরং অস্তিত্বের মূল কাঠামোকে তুলে ধরে। এই নীতি জোর দেয় যে, জগতের সমস্ত ঘটনাময় বস্তুর (Phenomena)—তা জড় হোক বা মানসিক—উত্থান ও সমাপ্তি ঘটে কেবল অসংখ্য কারণ ও শর্তের এক জটিল জালিকার ওপর নির্ভর করে।