অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: দুই



সংশয় (Saṁśayaṁ): এটি অনিশ্চয়তার একটি অবস্থা, যেখানে কেউ সত্য নির্ণয় করতে অক্ষম। এটি দুই বা ততোধিক পরস্পরবিরোধী বিকল্পের মধ্যে দোদুল্যমানতা, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।

বিপর্যয় (Viparyayaṁ): এটি বাস্তবতার একটি ভুল উপলব্ধি, যেখানে মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি ভ্রম বা মিথ্যাজ্ঞান, যেমন দড়িকে সাপ বলে ভুল করা।

অন্যান্য অভ্যন্তরীণ গুণ (Guṇāntaraṁ): অন্যান্য অভ্যন্তরীণ গুণ, যা সত্য জ্ঞানের বিরোধী বা বিপরীত হতে পারে, যেমন প্রমাদ বা অলসতা, যা সঠিক জ্ঞান অর্জনে বাধা দেয়।

এগুলি অবশ্যই জ্ঞানের বিপরীত, এবং সিদ্ধান্তী যুক্তি দেন যে, এদের জন্য "অনির্বচনীয়ত্ব (Anirvacanīyatvam) উপযুক্ত নয়।" উদাহরণস্বরূপ, সংশয় এবং বিপর্যয় হলো সংজ্ঞায়িত মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বা জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া। এগুলিকে জ্ঞানের কাঠামোর মধ্যে বর্ণনা, বিশ্লেষণ এবং বোঝা যেতে পারে। একজন ব্যক্তি কেন সংশয়ে ভুগছে বা কেন বিপর্যয় ঘটছে, তা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এগুলির একটি শুরু এবং শেষ আছে, এবং এগুলি জ্ঞানের দ্বারা অপসারিত হতে পারে।

এ ছাড়াও, যদি জ্ঞানের এই বিপরীতগুলির উপর অনির্বচনীয়ত্ব আরোপ করা হয়, তবে "তাদের ভাবরূপত্ব (Bhāvarūpatvaṁ, ইতিবাচক সত্তা) বিরোধী বা ক্ষুণ্ণ হবে।" সংশয় এবং বিপর্যয় কেবল অনুপস্থিতি নয়; এগুলি ইতিবাচক মানসিক অবস্থা বা প্রক্রিয়া। এদের একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতি রয়েছে এবং এগুলি অনুভূত হতে পারে। একজন ব্যক্তি সংশয় বা বিপর্যয় অনুভব করে এবং তার মনস্তাত্ত্বিক জগতে এগুলির একটি বাস্তব উপস্থিতি থাকে। যেহেতু তারা "ভাবরূপ সত্তা," অর্থাৎ ইতিবাচক অস্তিত্বসম্পন্ন, তাই তাদের অবিদ্যা হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না।

অদ্বৈত ঐতিহ্যে অবিদ্যাকে একটি এক, অনাদি, এবং অনির্বচনীয় শক্তি হিসাবে বোঝা হয়, যা আত্মার প্রকৃত প্রকৃতিকে আবৃত করে। অবিদ্যা কেবলই একটি মানসিক অবস্থা নয়, যা জ্ঞান দ্বারা সহজে অপসারিত হয়; এটি এমন এক মৌলিক শক্তি, যা সমগ্র মায়াময় জগৎ সৃষ্টি করে। সিদ্ধান্তীর (অদ্বৈত বেদান্তীর) কাছে অবিদ্যা এমন এক ধারণা, যা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। একে বলা হয় “অনির্বচনীয়”—অর্থাৎ না একেবারে সত্য (sat), না একেবারে মিথ্যা (asat)। ব্রহ্ম-জ্ঞানের আলোয় দেখা যায়: অবিদ্যার কোনো চূড়ান্ত অস্তিত্ব নেই। ব্রহ্মই একমাত্র সত্য; তাই অবিদ্যা আসলে অস্তিত্বহীন। অর্থাৎ, পরমার্থে অবিদ্যা কোনো বাস্তব সত্তা নয়। কিন্তু দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় (vyāvahārika স্তরে) আমরা অবিদ্যার প্রভাব দেখি। অবিদ্যা এখানে একটি ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করে—এটি সত্যকে ঢেকে রাখে (আবরণ-শক্তি, āvaraṇa-śakti); এটি ভ্রম বা মায়ার মাধ্যমে জগতকে প্রতীয়মান করে তোলে (বিক্ষেপ-শক্তি, vikṣepa-śakti)। অবিদ্যা চূড়ান্ত সত্যে অস্তিত্বহীন হলেও, ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতায় এটি কার্যকর শক্তি। যেমন স্বপ্ন আসলে নেই, কিন্তু ঘুমের মধ্যে তা বাস্তবের মতো কাজ করে। তেমনি, অবিদ্যা চূড়ান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে মিথ্যা, কিন্তু অভিজ্ঞতামূলক জগতে এটি মায়ার মাধ্যমে জগত সৃষ্টি করে কার্যকর হয়। অবিদ্যা চরম সত্যে নেই, কিন্তু অভিজ্ঞতার স্তরে আছে বলেই আমরা জগৎকে দেখি ও ভোগ করি।

অতএব, অবিদ্যাকে কেবল জ্ঞানের সংজ্ঞায়িত বিপরীতগুলির সাথে সমীকৃত করা এর মৌলিক অনির্বচনীয় চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। অবিদ্যা কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত মানসিক অবস্থা নয়, বরং এটি এক অনাদি এবং সর্বজনীন সত্তা, যা জীবের মুক্তি পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। এই গভীরতর এবং মৌলিক প্রকৃতিই অবিদ্যাকে কেবল অভাব বা বিপরীত জ্ঞান থেকে পৃথক করে তোলে।

জ্ঞান (Vidyā) ব্যতীত আর সব কিছুই শেষপর্যন্ত অবিদ্যার (অজ্ঞতা) অবস্থায় পর্যবসিত হয়—এই গভীর দাবি বাস্তবতা ও উপলব্ধির প্রকৃতি নিয়ে একটি মৌলিক দার্শনিক অনুসন্ধানের ভিত্তি স্থাপন করে। ভারতীয় দর্শনে, বিশেষত অদ্বৈত বেদান্তে, অবিদ্যা শুধু তথ্যের অভাব নয়, বরং এটি একটি মৌলিক ভুল বোঝাবুঝি, যা আমাদের প্রকৃত সত্তা এবং জগতের প্রকৃতি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দেয়। এই অনুসন্ধানের কেন্দ্রে রয়েছে একটি মূল নীতি: অবিদ্যার কোনো সংজ্ঞা বা প্রমাণ নেই। এই দাবিকে প্রতিপক্ষ বিভিন্ন প্রস্তাবিত সংজ্ঞার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করে, যা পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা ও খণ্ডন করার মাধ্যমে মূল অবস্থানকে আরও সুসংহত করা হয়। এই দার্শনিক যাত্রা কেবল অবিদ্যার প্রকৃতি অনুধাবনই নয়, বরং জ্ঞান ও অস্তিত্বের সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলিও উন্মোচন করে।

অবিদ্যার প্রকৃতি অনুধাবনের জন্য বিভিন্ন দার্শনিক ধারা থেকে যে-সংজ্ঞাগুলি প্রস্তাবিত হয়েছে, একে একে বিচার করে সেগুলির দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে। এই খণ্ডন-প্রক্রিয়া অবিদ্যার প্রকৃত সারমর্মকে আরও সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করে।

১. জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্তিই অজ্ঞতা (Jñāna-nivartya ajñānam):

এই আপাতসরল সংজ্ঞাটি দাবি করে যে, অজ্ঞতা কেবল তা-ই, যা জ্ঞান দ্বারা পরাভূত বা বাতিল হয়। এই সংজ্ঞা প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে হতে পারে, যেখানে নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ভুল ধারণা দূর হয়। যেমন, অন্ধকার ঘরে দড়িকে সাপ মনে করা (রজ্জু-সর্প ভ্রম) আলোর দ্বারা দড়িকে জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই দূর হয়ে যায়। এই দৃষ্টান্তটি প্রমাণ করে যে, জ্ঞান অজ্ঞতার নিবারক।

তবে, এই সংজ্ঞাটি অবিদ্যার জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ এটি একটি মৌলিক যৌক্তিক ত্রুটি সৃষ্টি করে, যা "অতিব্যাপ্তি" নামে পরিচিত। এর মূল কারণ হলো: পূর্বজ্ঞান (pūrva-jñāna) নিজেই পরবর্তী জ্ঞান (uttara-jñāna) দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা কোনো বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা লাভ করি এবং পরবর্তীতে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করি, তখন প্রাথমিক ধারণাটি নতুন জ্ঞানের দ্বারা সংশোধিত বা বাতিল হয়ে যায়। প্রাচীনকালে ‘পৃথিবী সমতল’ ধারণাটি একসময় জ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হলেও, পরবর্তীতে গোলাকার পৃথিবীর ধারণা সেই পূর্বজ্ঞানকে বাতিল করেছে। যদি এই সংজ্ঞাটি গ্রহণ করা হয়, তবে পূর্বজ্ঞান, যেহেতু তা বাধা-সাপেক্ষ, তাকেও অবিদ্যার একটি রূপ বলে গণ্য করতে হবে।

এটি একটি চক্রাকার সমস্যা তৈরি করে, যা জ্ঞান ও প্রকৃত অজ্ঞতার বিভিন্ন স্তরের মধ্যকার পার্থক্যকে অস্পষ্ট করে তোলে। এর নিহিতার্থ হলো: জ্ঞান দ্বারা যা-কিছু বাধাপ্রাপ্ত হয়, তা-ই যদি অবিদ্যা হয়, তবে জ্ঞান নিজেই, তার পূর্ববর্তী রূপে, অজ্ঞতার আওতায় পড়ে যাবে—যা বিদ্যায় থেকে অবিদ্যাকে পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত করার লক্ষ্যে-থাকা একটি ব্যবস্থার জন্য একটি স্ববিরোধী পরিণতি। এই সংজ্ঞা জ্ঞানের নিজস্ব প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অবিদ্যাকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে ব্যর্থ হয়, যা তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরতে পারে। অবিদ্যাকে যদি কেবল জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্তির মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবে তা তার মৌলিক ও অনাদি সত্তাকে উপেক্ষা করে।

২. অনাদি ভাবরূপ সত্তা হয়েও, যা জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত, তা অজ্ঞতাই (Anādi-bhāvatve sati jñāna-nivartya ajñānam)

আগের সংজ্ঞার সীমাবদ্ধতাগুলি দূর করার জন্য একটি আরও সূক্ষ্ম প্রস্তাবনা আনা হয়েছে: অবিদ্যা কেবল জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্তই নয়, এটি একটি "অনাদি ভাবরূপ সত্তা" (beginningless positive entity)-ও। এই বিশেষীকরণটি ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী ভুলগুলি থেকে অবিদ্যাকে আলাদা করার লক্ষ্য রাখে। এতে বোঝাতে চাওয়া হয় যে, অবিদ্যা কোনো আকস্মিক ভুল বা ভ্রান্ত ধারণা নয়, বরং এটি একটি মৌলিক এবং সময়হীন ইতিবাচক সত্তা, যা জগৎসৃষ্টির মূল কারণ। ভারতীয় দর্শনে "ভাবরূপ" বলতে অস্তিত্বশীল, ইতিবাচক এবং গুণসম্পন্ন সত্তাকে বোঝায়, যা নিছক অভাব বা অনুপস্থিতি নয়। ‘অনাদি’ শব্দটি এর উৎপত্তিহীনতা নির্দেশ করে, অর্থাৎ অবিদ্যার কোনো শুরু নেই। তবে, নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করলে এই সংজ্ঞাটিও টিকে থাকে না।

অবিদ্যা হলো—একটি অনাদি (anādi), ইতিবাচক সত্তা, যা জ্ঞানে নিবারিত হয়; এর অর্থ—অবিদ্যা শুধু ভুল বা অস্থায়ী নয়, বরং এটি শুরুহীন (অনাদি), কিন্তু যখন সত্যজ্ঞান আসে, তখন এটি বিলীন হয়। “অতিব্যাপ্তি” (ativyāpti) দোষ হলো: কোনো সংজ্ঞা এমন বিস্তৃত হলো যে, সেটি আসল বিষয় ছাড়াও অন্য, অপ্রাসঙ্গিক জিনিসকেও ধরতে শুরু করে—তখন তাকে অতিব্যাপ্তি বলে। যেমন আত্মা (Ātman) নিজেও অনাদি (শুরুহীন) এবং ভাবরূপ বস্তু (চেতনার স্বরূপ সত্তা)। যদি কেবল বলা হয়—“অবিদ্যা অনাদি ভাবরূপ এবং জ্ঞানে নিবারিত”—তাহলে এর ভেতরে আত্মাকেও টেনে আনা হবে।

আত্মা অনাদি হলেও কখনোই জ্ঞান দ্বারা নিবারিত হয় না। আত্মা তো নিজেই চিরন্তন জ্ঞানের স্বরূপ। অথচ সংজ্ঞা যদি যথাযথভাবে সীমিত না করা হয়, তবে আত্মাকে ভুল করে অবিদ্যার দলে ফেলা হবে—যেন আত্মাকেও জ্ঞান দ্বারা দূর করা সম্ভব। এটি দার্শনিকভাবে ভ্রান্তি (doṣa)। ধরা যাক, কেউ বলল, “শশকশৃঙ্গ (খরগোশের শিং) মানে এমন জিনিস, যা কখনও জন্মায়নি (অনাদি)।”—এ সংজ্ঞা কেবল শশকশৃঙ্গ নয়, বরং আরও বহু জিনিসকেও ধরবে, যেগুলো জন্মায়নি। এটাই অতিব্যাপ্তি।

আত্মা হলো পরম সত্য, অবিনশ্বর এবং অনাদি, যা কোনো জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে না। অবিদ্যা অতিব্যাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সমস্যা, কারণ আত্মাকে প্রায়শই এই ধরনের বাধা থেকে ঊর্ধ্বে বলে মনে করা হয়। আত্মা পরম জ্ঞানস্বরূপ এবং কোনো জাগতিক জ্ঞান দ্বারা এটিকে প্রভাবিত বা নিবারিত করা যায় না। আত্মা চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়, তাই এটি যদি জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, তবে তার শাশ্বত প্রকৃতি ক্ষুণ্ণ হবে। অতএব, সংজ্ঞাটি তার আওতায় অতিব্যাপ্তি ঘটায়, ভুলভাবে এমন সত্তাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা এটির আওতায় আসার কথা নয়।

তা ছাড়া, প্রাচীন মত (Prācīna-mata) উল্লেখ করে একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে: অনাদি ভাবরূপ সত্তা (Anādi-bhāva-rūpaṁ), যেমন অজ্ঞতা, কীভাবে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে? যদি কিছুর শুরু না থাকে, তবে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তার শেষ কীভাবে হতে পারে? উপমা হিসাবে পরমাণুতে কৃষ্ণত্ব (Śyāmatvaṁ) দেওয়া হয়েছে, যা ঈশ্বরের জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে মনে করা হয়। কিছু দার্শনিক ব্যবস্থায়, পরমাণুর সহজাত গুণাবলী, যেমন তাদের রং, শুরুরহিত বলে বিবেচিত হয়। যদিও ঈশ্বরের (Īśvara) সর্বজ্ঞ জ্ঞান এই গুণাবলীকে বুঝতে বা প্রভাবিত করতে পারে, তবে ভুল ধারণা যেভাবে মানুষের জ্ঞান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেভাবে সেগুলি বাধাপ্রাপ্ত হয় না। আর যদি অনাদি ভাবরূপ সত্তার জন্য বাধাপ্রাপ্তি (Nivarttyatvam) দাবি করা হয়, তবে তা অতিব্যাপ্তির অনুরূপ সমস্যা তৈরি করে।

“পরমাণুর কৃষ্ণত্ব” (Śyāmatvaṁ in atoms) বিষয়টি মূলত ন্যায়-বৈশেষিক দর্শন থেকে এসেছে। তারা মনে করত, জগতের সব পদার্থ চার ধরনের মূল পরমাণু থেকে গঠিত: ভূমি (পৃথিবী), জল, তেজ (অগ্নি), বায়ু। প্রতিটি পরমাণুর নিজস্ব কিছু সহজাত গুণ (svābhāvika guṇa) আছে, যা চিরন্তন ও অনাদি। “কৃষ্ণত্ব” মানে কালো রং বা কালোভাব, অর্থাৎ সেখানে কোনো রঙের উপস্থিতি নেই। কিছু আচার্য বলেছিলেন, নির্দিষ্ট কিছু পরমাণুর সহজাত রং হলো কালো। এই রং জন্মায়নি (সেখানে কোনো রংই নেই), অর্থাৎ অনাদি (শুরুহীন)। এটি কোনো ভ্রান্তি নয়, বরং পরমাণুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।

ন্যায়-বৈশেষিক মতে, ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, তাই ঈশ্বর এই পরমাণুর কৃষ্ণত্ব জানেন। কিন্তু এই জানাটা ভুল ধারণা দূর করার মতো নয় (যেমন মানুষের অবিদ্যা জ্ঞান দ্বারা দূর হয়), কারণ কৃষ্ণত্ব কোনো ভ্রম নয়—এটি আসলেই আছে, পরমাণুর সহজাত গুণ। কোনো বিদ্যমান ভ্রম দূর করার মাধ্যমে পরমাণুর কৃষ্ণত্বকে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। অদ্বৈতীরা বললেন: যদি অবিদ্যাকে “অনাদি ইতিবাচক সত্তা” বলা হয়, তবে সেটি পরমাণুর কৃষ্ণত্বের মতো চিরন্তন হয়ে যাবে। কিন্তু অবিদ্যা তো চিরন্তন হতে পারে না—কারণ ব্রহ্মজ্ঞান এলে অবিদ্যা দূর হয়। তাই অবিদ্যাকে কৃষ্ণত্বের সঙ্গে এককাতারে রাখা ভুল হবে।