অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: চৌত্রিশ



অদ্বৈত বেদান্ত: ব্রহ্মের অদ্বৈত সত্তার একটি সমালোচনামূলক সম্পাদনা ও তাত্ত্বিক শুদ্ধিকরণ

প্রথম অংশ: সমালোচনামূলক পাঠ্য শুদ্ধিকরণের পদ্ধতি ও নীতিসমূহ

অদ্বৈত বেদান্তের মতো ধ্রুপদী দর্শনগ্রন্থ ব্যাখ্যা করতে গেলে কেবল শিক্ষামূলক পুনরাবৃত্তি যথেষ্ট নয়। এখানে দরকার এমন একটি সমালোচনামূলক ও সতর্ক পদ্ধতি, যেখানে একই কথা বার বার না বলে মূল দার্শনিক ভাবের গভীরতা ও বিশ্বস্ততা বজায় রাখা হয়; কারণ বার বার পুনরাবৃত্তি করলে যে মহাবাক্য বা মহাসত্যগুলো (যেমন "তত্ত্বমসি", "অহং ব্রহ্মাস্মি") অনন্য ও চূড়ান্ত সত্য হিসেবে ধরা হয়—তাদের বিশেষ গুরুত্ব কমে যেতে পারে। তাই এই সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য কেবল লেখার রূপ সুন্দর করা নয়, বরং এমনভাবে সাজানো, যাতে প্রতিটি বক্তব্য ব্রহ্মের সত্তা ও অদ্বৈত সত্যের মূল শিক্ষায় একেবারেই অপরিহার্য ও স্বতন্ত্র অবদান রাখে।

১) অপ্রয়োজনীয়তা বা পুনরাবৃত্তি চিহ্নিত করার মানদণ্ড: অদ্বৈত দর্শনের মতো গভীর গ্রন্থ বিশ্লেষণ করতে গেলে, প্রথমে আমাদের দেখতে হবে, কোথায় লেখায় অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি আছে। এই অপ্রয়োজনীয়তাকে ধরা হয় দু-ভাবে—

ক) অর্থগত অতিব্যাপ্তি (Semantic Overlap): যখন দুটি ভিন্ন অনুচ্ছেদ বা ব্যাখ্যা আসলে একই দার্শনিক বক্তব্য বার বার বলছে। যেমন: ব্রহ্ম অসীম—এটা একবার বিশদভাবে বোঝানো হলো। আবার অন্য জায়গায় একই বিশদ পুনরাবৃত্তি হলো। এতে নতুন কিছু যোগ হয় না, কেবল একই তথ্য বার বার আসে। তাই এমন পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে লেখা আরও পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্ত হয়।

খ) কার্যগত অপ্রয়োজনীয়তা (Functional Redundancy): যখন কোনো অনুচ্ছেদ কেবল আগের প্রমাণকে আবার অন্যভাবে বলে দেয়, কিন্তু নতুন কোনো ধারণা যোগ করে না। উদাহরণ: যদি আগেই প্রমাণ করা হয়—“ব্রহ্ম অবিভাজ্য, তাই ভেদ মানা যায় না।” পরে আবার আলাদা একটি অনুচ্ছেদ শুধু সারসংক্ষেপ আকারে বলে—“তাহলে ব্রহ্ম অবিভাজ্য।” এখানে নতুন কিছু পাওয়া গেল না, কারণ আগের প্রমাণ থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এই অংশকে বলা হয় কার্যগতভাবে অপ্রয়োজনীয়।

অল্পকথায়, অপ্রয়োজনীয়তার দুটি ধরন—একই কথা বার বার বলা (অর্থগত অতিব্যাপ্তি), কেবল পুরোনো কথার সারসংক্ষেপ (কার্যগত অপ্রয়োজনীয়তা)।

২) দার্শনিক বক্তব্যের গুরুত্বের শ্রেণীবিন্যাস: অদ্বৈত দর্শনে সব বক্তব্য সমান গুরুত্ব পায় না। একটা স্পষ্ট শ্রেণীভেদ আছে।

ক) শ্রুতি (শাস্ত্রীয় উক্তি)—সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব: উপনিষদের মূল বাক্যগুলো (মহাবাক্য) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; যেমন “একই, দ্বিতীয়বিহীন” (ekameva advitīyam)। এগুলো হলো চূড়ান্ত সত্যের ঘোষণা—এগুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যায় না।

খ) ব্যাখ্যাসূচক অনুচ্ছেদ: এই মহাবাক্যগুলির আগে বা পরে যে ব্যাখ্যা বা উদাহরণ দেওয়া হয়, সেগুলোকে খুব সতর্কভাবে দেখা হয়। সেগুলো রাখা হবে তখনই, যদি নতুন ধারণা যোগ করে। যেমন মায়াকে যদি বুদ্ধির কার্যকলাপ (buddhi-vṛtti)-এর সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাখ্যা করা হয়, তবে সেটা নতুন অন্তর্দৃষ্টি—তাই রাখা হবে। কিন্তু যদি শুধু আগের কথার সারসংক্ষেপ হয়, তবে সেটা বাদ যাবে।

৩) এই পদ্ধতির ফলাফল: এভাবে বিশ্লেষণ করলে চূড়ান্ত ফলাফল হয়ে ওঠে অতিরিক্ততা-মুক্ত, সরল, অথচ গভীর। মূল দর্শন (অদ্বৈত)-এর ভিত্তিগত নীতি এতে অক্ষুণ্ণ থাকে। পাঠ্য অযথা পুনরাবৃত্তি বা বাড়তি ভাষায় ভারী হয় না। প্রতিটি বাক্য তখন হয়ে দাঁড়ায় একেবারেই অপরিহার্য ও অনন্য দার্শনিক উপাদান।

এককথায়, এই সমালোচনামূলক পদ্ধতির লক্ষ্য হলো: পুনরাবৃত্তি বাদ দেওয়া; কেবল মূল ও অপরিহার্য বক্তব্য রাখা; শ্রুতি (শাস্ত্র)-কে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব হিসেবে ধরে রাখা; আর শুধুই সেই ব্যাখ্যা সংরক্ষণ করা, যা নতুন ধারণা যোগ করে। ফলে চূড়ান্ত পাঠ হয়ে ওঠে—সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল, এবং দার্শনিকভাবে শক্তিশালী।

দ্বিতীয় অংশ: ব্রহ্মের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য (শুদ্ধিকৃত পাঠ্য)

নিম্নলিখিত পাঠ্যটি ব্রহ্মের তত্ত্ববিদ্যার সর্বাধিক সংক্ষিপ্ত ও দার্শনিকভাবে বিশুদ্ধ বক্তব্যকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা মূল উৎস উপাদান থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অনন্য ধারণাগত বিবৃতিকে সংরক্ষণ করে।

২.১. পরম অনন্যতা এবং অদ্বৈতিক ভিত্তি: পরম বাস্তবতার অনুসন্ধান একটি শক্তিশালী এবং দ্ব্যর্থহীন নীতির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত: "একই, দ্বিতীয়বিহীন" (Ekameva-advitīyam)। এই মৌলিক ঘোষণা, যা অদ্বৈত বেদান্তের ভিত্তিপ্রস্তর, পরম অদ্বৈততার একটি জোরালো স্বীকৃতি। এটি ব্রহ্মকে সমস্ত অস্তিত্বের একক, পরম ভিত্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে, যা এমন একটি পরম বাস্তবতা নির্দেশ করে, যা সম্পূর্ণরূপে তুলনাহীন। অনুভূত যে-কোনো বহুত্বকে এই একক বাস্তবতার উপর একটি আপাতদৃষ্টি বা আরোপণ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যা পৃথকত্বের ভ্রমকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে।

এই অদ্বৈতিক সত্তাকে সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, ব্রহ্মকে ভেদের সমস্ত সম্ভাব্য শ্রেণীর পদ্ধতিগত অনুপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয় (Sajātīya-vijātīya-sva-gata-bheda-rahitam)। ভেদের পদ্ধতিগত অস্বীকৃতি, যা ত্রি-ভেদ-নিরাকরণম্ নামে পরিচিত, তিনটি শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করে।

১) সজাতীয়-ভেদ (Sajātiya-bheda) অর্থ: একই ধরনের বা একই শ্রেণির (species/class) অন্য কোনো সত্তা না থাকা। এর মানে, ব্রহ্মের মতো দ্বিতীয় কোনো ব্রহ্ম নেই। এর ফল: ব্রহ্ম একটিই, তাই সে-ই একমাত্র পরম সত্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাছের মতো আরও অনেক গাছ আছে, কিন্তু ব্রহ্মের মতো আরেকটা ব্রহ্ম নেই।

২) বিজাতীয়-ভেদ (Vijātiya-bheda) অর্থ: অন্য শ্রেণি বা ভিন্ন ধরনের সত্তার অস্তিত্ব না থাকা। এর মানে, ব্রহ্মের বাইরে কোনো অন্য স্বাধীন বাস্তবতা নেই। এর ফল: ব্রহ্ম সর্বব্যাপী, তার বাইরে কিছু আলাদা বা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। উদাহরণস্বরূপ, জগৎ বা মায়াকে আলাদা সত্য ভাবলে সেটা বিজাতীয় ভেদ হত, কিন্তু অদ্বৈত বলে এগুলো আলাদা সত্য নয়—শুধু ব্রহ্মই আছে।

৩) স্বগত-ভেদ (Svagata-bheda) অর্থ: কোনো সত্তার ভেতরে অংশ, গুণ বা আলাদা করা যায়, এমন ভিন্নতা না থাকা। এর মানে, ব্রহ্মের ভেতরে কোনো ভাগ, বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা বা অভ্যন্তরীণ ভেদ নেই। এর ফল: ব্রহ্ম সম্পূর্ণ সরল, অবিভাজ্য, নির্গুণ (nirguṇa)। উদাহরণস্বরূপ, মাটির ঢেলার ভেতরে অনেক কণা থাকে, তাই ওটা স্বগত-ভেদযুক্ত। কিন্তু ব্রহ্মের মধ্যে কোনো কণা, ভাগ বা বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা নেই।

সজাতীয়-ভেদ: ব্রহ্মের মতো দ্বিতীয় আর কিছু নেই—অনন্যতার প্রমাণ। বিজাতীয়-ভেদ: ব্রহ্ম ছাড়া অন্য স্বাধীন কিছু নেই—সর্বব্যাপিতার প্রমাণ। স্বগত-ভেদ: ব্রহ্মের ভেতরে কোনো ভিন্নতা নেই—অবিভাজ্যতা ও সরলতার প্রমাণ। এই তিন ভেদ না থাকাতেই ব্রহ্ম হলো—একটিই, সর্বত্র একটিই, আর ভেতরে অবিভাজ্য একটিই।

২.২. অন্তর্নিহিত সংজ্ঞা ও যৌক্তিক নিহিতার্থ: ব্রহ্ম উপনিষদিক উক্তির মাধ্যমে এর অপরিহার্য গুণাবলী দ্বারা সংজ্ঞায়িত: "সত্য, জ্ঞান, অনন্ত" (Satyam jñānam anantaṁ)। এই পদগুলি আনুষঙ্গিক গুণাবলী নয়, বরং ব্রহ্মের অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য এর সারসত্তা বা অস্তিত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে।

সত্য (Satyam): ব্রহ্ম পরম সত্যকে মূর্ত করে, একটি অপরিবর্তনশীল ও চিরন্তন বিদ্যমান বাস্তবতা, যা সমস্ত ক্ষণস্থায়ী ঘটনাকে অতিক্রম করে। এটি সমস্ত অস্তিত্বের চূড়ান্ত, শর্তহীন এবং স্বয়ং-বিদ্যমান আধার।

জ্ঞান (Jñānam): ব্রহ্ম হল বিশুদ্ধ চৈতন্য নিজেই, সমস্ত সচেতনতার মৌলিক উৎস এবং সার। এটি সেই স্বতঃ-প্রভ আলো, যার দ্বারা অন্য সব কিছু জানা যায়, যা এর কার্যকারিতার জন্য কোনো বস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়—এমন একটি অভ্যন্তরীণ ও নিরবচ্ছিন্ন সচেতনতা।

অনন্ত (Anantaṁ): ব্রহ্ম সম্পূর্ণরূপে কোনো প্রকার সীমা ছাড়াই বিদ্যমান, যা স্থান (সর্বব্যাপী), কাল (চিরন্তন) এবং গুণগত বৈশিষ্ট্য (নিখুঁত) সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে। এর অসীমতা পরম স্বাধীনতা ও পূর্ণতাকে বোঝায়।

ব্রহ্ম থেকে সত্যিই আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই—এটিকে যৌক্তিকভাবে জোরদার করার জন্য, অদ্বৈত পরোক্ষভাবে সহকারী চিন্তাধারা, যেমন অভাব সংক্রান্ত ন্যায় (Nyaya) থেকে নেওয়া নেতিবাচক যৌক্তিক সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে:

অন্যোন্যাভাবঃ (Mutual absence): এই ধারণা, যা এক বস্তুর সাথে অন্য বস্তুর অ-অনন্যতাকে বোঝায়, তা এটি দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয় যে, পরম সত্যের (paramarthika satyam) চূড়ান্ত স্তরে, "এটি" এবং "ওটি"-এর মধ্যে অনুভূত পার্থক্য বিলীন হয়ে যায়, যখন উভয়কেই একক ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন হিসাবে বোঝা হয়।

প্রাগ্-উত্তর-কালীন-অভাবঃ (Subsequent absence): এটি কোনো কিছুর ধ্বংসের পরে তার অ-অস্তিত্বকে বোঝায়। যেহেতু ব্রহ্ম চিরন্তন এবং সর্বব্যাপী, তাই আপাতসৃষ্টি এবং ধ্বংসমায়ার মধ্যে অ-বাস্তব উপস্থিতি মাত্র। এটি নিশ্চিত করে যে, ব্রহ্ম অপরিবর্তনীয় থাকে, যা উৎপত্তি ও বিলয়ের চক্র দ্বারা অস্পৃষ্ট।

২.৩. বহুত্বের আপাতদৃষ্টি এবং এর পরিণতি: জাগতিক বিশ্বের পরম বাস্তবতা গভীর শাস্ত্রীয় ঘোষণার দ্বারা সরাসরি খণ্ডন করা হয়েছে: "এখানে কোনো বহুত্ব নেই" (Neha nānāsti kiñcana)। এই নীতিটি দাবি করে যে, সমস্ত অস্তিত্বের মৌলিক ভিত্তি ও আধার—ব্রহ্ম—স্বভাবতই অ-বহুত্বময়, ঐক্যবদ্ধ এবং সমসত্ত্ব, যা চূড়ান্ত সত্য হিসেবে বহুত্বের বদলে ঐক্যকে নিশ্চিত করে।

এই আপাত বহুত্ব মায়ার রহস্যময় এবং ব্যাখ্যার অতীত শক্তির মাধ্যমে উদ্ভূত হয়: "ইন্দ্র (Indro)... তার মায়ার দ্বারা, বহু রূপ ধারণ করেন" (Māyābhiḥ puru-rūpa īyate)। মায়া হলো ব্রহ্মের একটি অনির্বচনীয় (অ-বর্ণনাযোগ্য) জাগতিক শক্তি, যা অন্তর্নিহিত বাস্তবতাকে গোপন করার ক্ষমতা (āvaraṇa śakti) এবং মিথ্যা উপস্থিতিকে প্রক্ষেপ করার ক্ষমতা দ্বারা কাজ করে, যা নাম ও রূপের জগতের ভ্রম সৃষ্টি করে (vikṣepa śakti)। এটি স্পষ্ট করে যে, Māyābhiḥ-এর অর্থ হলো, "যথাক্রমে ইন্দ্রিয় অঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট মানসিক পরিবর্তন (Buddhi-vṛtti)"। এটি বোঝায় যে, বহুত্বের উপলব্ধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মন ও সংবেদনশীল অনুষদের মিথস্ক্রিয়া দ্বারা মধ্যস্থতাকৃত ও নির্মিত হয়, যা পৃথকত্বের ভ্রমকে চিরস্থায়ী করতে ব্যক্তির জ্ঞানীয় ভূমিকার উপর আলোকপাত করে।

এটি পৃথকত্বের ভ্রমে আঁকড়ে-থাকা আধ্যাত্মিক বন্ধনকে চিরস্থায়ী করে, যা এই গুরুতর সতর্কবাণী দ্বারা জোর দিয়ে বলা হয়েছে: "যে এখানে বহুত্ব দেখে, সে মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে যায়" (Mṛtyoḥ sa mṛtyum āpnoti ya iha nāneva paśyati)। ভেদের (bheda) পরম বাস্তবতাকে নিশ্চিত করা হলো জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের (samsara) অন্তহীন চক্রে জড়িত থাকা, যা পরম মুক্তি (moksha) অর্জনে বাধা দেয়।

২.৪. জ্ঞানতাত্ত্বিক সংঘাত: শাস্ত্র এবং উপলব্ধি: শাস্ত্র (Āgama) আপেক্ষিক (Sāpekṣa) বলে বিবেচিত হয়, কারণ এর চূড়ান্ত কার্যকারিতা এর শব্দ, অর্থ এবং প্রসঙ্গের সঠিক ব্যাখ্যার উপর heavily নির্ভর করে। কঠোর বৌদ্ধিক উপলব্ধি ছাড়া ("শব্দ এবং তার অর্থ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই কেবল কার্যকলাপ থাকবে"), শাস্ত্রের নির্দেশনা অকার্যকর থাকে।

প্রত্যক্ষ উপলব্ধি (Pratyakṣaṁ) দৈনন্দিন বোধের জন্য অপরিহার্য—এই স্বীকারোক্তি দ্বারা এটি আরও জটিল হয়। যদিও শাস্ত্র অভেদকে (Abheda-grāhī) প্রকাশ করে, চূড়ান্ত ঐক্যকে প্রকাশ করে, দৈনন্দিন প্রত্যক্ষ উপলব্ধি সহজাতভাবে ভেদকে (Bheda-grāhī) ধরে, যা স্বতন্ত্র বস্তু ও বিভাজন সহ একটি জগৎ উপস্থাপন করে। এই জ্ঞানতাত্ত্বিক টানাপোড়েন অভিজ্ঞতার বৈধতা স্বীকার করে সমাধান করা হয়: "শাস্ত্র দ্বারা বিশ্বকে (Prapañcaṁ) প্রকাশ করা হলেও, বিশ্বের বাস্তবতা (Satyatvam) অভিজ্ঞতার প্রকৃতি তথা প্রত্যক্ষ (Pratyakṣaṁ) দ্বারা প্রমাণিত হয়"। এর অর্থ হলো, বিশ্ব ব্যাবহারিক অর্থে বাস্তব (vyavahārika satyam), কর্ম ও অভিজ্ঞতার জন্য একটি বৈধ স্তর হিসাবে কাজ করে, যদিও এটি ব্রহ্মের মতো একই অর্থে পরম অর্থে বাস্তব (paramārthika satyam) নয়। আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য শাস্ত্র দ্বারা প্রকাশিত ঐক্য উপলব্ধির জন্য ভেদের উপলব্ধিগত বাস্তবতা অতিক্রম করা প্রয়োজন।