প্রত্যেক প্রভাবই তার কারণের মধ্যে থাকা চরম অনস্তিত্বের প্রতিযোগী—অর্থাৎ, সেই প্রভাবটি কারণের ভেতরে আগে অনুপস্থিত ছিল, এবং পরে নির্দিষ্ট শর্ত ও বিন্যাসে প্রকাশিত হয়। একাধিকরণত্বম্ এই নীতিকে সমর্থন করে, কারণ কোনো সত্তা এবং তার অনস্তিত্ব একই স্থানে থাকতে পারে না। অতএব, যদি প্রভাব আগে থেকেই কারণের মধ্যে পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকত, তবে সেই অবস্থায় তার অনস্তিত্বও থাকতে পারত না—যা যুক্তিগতভাবে অসম্ভব। ফলে, বলা হয়—প্রভাব কারণের মধ্যে সম্ভাবনা আকারে থাকে, বাস্তব আকারে নয়।
এখন একটি সহজ উদাহরণে বিষয়টি দেখা যাক—বীজ এবং গাছ। একটি বীজের মধ্যে গাছের সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু প্রকৃত গাছটি সেখানে নেই। যখন বীজ মাটিতে পড়ে, জল পায়, সূর্যের আলো ও উষ্ণতা পায়—তখন তার অভ্যন্তরে থাকা সম্ভাবনাগুলি সক্রিয় হয়। এই প্রক্রিয়ায় “গাছত্ব” প্রকাশ পায়, অর্থাৎ যে-“গাছ” আগে বীজের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল, এখন তা বাস্তবে রূপ নেয়। বীজের ভেতরে গাছের “চরম অনস্তিত্ব” ছিল; যখন গাছ জন্ম নেয়, তখন সেই অনস্তিত্বের অবসান ঘটে। অতএব, গাছ হলো বীজের মধ্যে থাকা গাছত্বের অনস্তিত্বের প্রতিযোগী। এইভাবে কারণ ও প্রভাবের সম্পর্ক কেবল “লুকানো জিনিসের প্রকাশ” নয়, বরং এক প্রকৃত রূপান্তর—যেখানে নতুন রূপের উদ্ভব ঘটে।
এই দৃষ্টিতে, কার্য-কারণ সম্পর্ক কোনো স্থির বিন্যাস নয়, বরং একটি প্রবাহমান প্রক্রিয়া। ‘কারণ’ শুধুই একটি বস্তুর পূর্বাবস্থা নয়; এটি এমন এক অবস্থা, যা নতুন রূপে পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ ও প্রভাব তাই পরস্পর সংযুক্ত হলেও অভিন্ন নয়—কারণ হলো সম্ভাবনা (potentiality), আর প্রভাব হলো সেই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন (actualization)। প্রভাবের উত্থান কোনো “গুপ্ত” সত্তার প্রকাশ নয়; এটি নতুন অস্তিত্বের আবির্ভাব। এই উত্থানকে বোঝাতে ভারতীয় দার্শনিকেরা বলেন—“অস্তিত্ব অনস্তিত্বকে অতিক্রম করে”—অর্থাৎ, যা আগে ছিল না, তা প্রকাশিত হয়।
এই তত্ত্বের গভীরে রয়েছে এক মৌলিক উপলব্ধি—বাস্তবতা কখনও স্থির নয়; এটি রূপান্তর ও নির্ভরতার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক সৃষ্টি, প্রতিটি উদ্ভব—কোনো পূর্বনির্দিষ্ট সারসত্তার পুনরাবৃত্তি নয়, বরং একটি নতুন প্রকাশ—যেখানে অনুপস্থিতি (অনস্তিত্ব) নিজেকে অতিক্রম করে প্রকাশিত হয় অস্তিত্বে।
এভাবে অসৎকার্যবাদ ও একাধিকরণত্বম্ একত্রে শেখায়—কারণ ও প্রভাবের মধ্যে সম্পর্ক কেবল যুক্তিগত নয়, অস্তিত্বগতও। কারণ তার প্রভাবে রূপান্তরিত হয়, আর প্রভাব কারণের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়।
প্রত্যেক প্রভাব (কার্যম্) তার কারণ (কারণম্)-এর মধ্যে পূর্বে “অস্তিত্বহীন” থাকে—তবু কারণের ভেতরেই থাকে তার সম্ভাবনা। যখন উপযুক্ত শর্ত ও পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন সেই সম্ভাবনা “অস্তিত্বে” রূপ নেয়—একটি নতুন সত্তা জন্ম নেয়, যা আগে ছিল না। বীজে গাছ নেই, কিন্তু গাছের সম্ভাবনা আছে; যখন গাছ জন্ম নেয়, বীজের মধ্যে থাকা “গাছত্বের অনস্তিত্ব” মুছে যায়। এটাই কার্য-কারণের গতিশীল সত্য—অস্তিত্ব মানে অনস্তিত্বকে অতিক্রম করা, আর সৃষ্টি মানে সম্ভাবনার বাস্তবায়ন।
দার্শনিক যুক্তিতে একাধিকরণত্বম্ এবং অনুমান নীতি দেখায় যে, কোনো যৌগিক বা সম্পর্কনির্ভর সত্তা তার উপাদানগুলোর মধ্যে পূর্বে অনুপস্থিত ছিল, এবং নির্দিষ্ট বিন্যাস ও সম্পর্কের মধ্য দিয়েই তা “উদ্ভূত” হয়। অর্থাৎ, যে-কোনো সৃষ্টি বা ঘটনা হলো এক অনস্তিত্বের অতিক্রমণ—এক নতুন উপস্থিতির প্রকাশ।
পাত্র (বস্ত্র) ও সুতা—একটি পাত্র বা কাপড় তার নিজের অংশগুলোর মধ্যে আগে থেকে সম্পূর্ণভাবে থাকে না। যেমন কাপড় তার সুতাগুলোর মধ্যে নেই; সুতোগুলো উপাদান মাত্র। যখন সেই সুতাগুলো নির্দিষ্ট ক্রমে, বিশেষ সম্পর্কের মধ্যে বোনা হয়, তখন “কাপড়ত্ব” প্রকাশ পায়—অর্থাৎ, যা আগে অনুপস্থিত ছিল, তা এখন উদ্ভূত হয়। তাই কাপড় হলো তার সুতার মধ্যে থাকা কাপড়ত্বের অনস্তিত্বের প্রতিযোগী। এটি প্রমাণ করে যে, কোনো সমগ্র (whole) তার অংশগুলির মধ্যে পূর্বে পূর্ণভাবে থাকে না; বরং অংশগুলির সংগঠন ও সম্পর্কের মাধ্যমেই নতুন সত্তা জন্ম নেয়।
গুণাবলী বা গুণ (Guṇa) কোনো বস্তুর স্থায়ী বা অন্তর্নিহিত গুণ নয়—এটি উদীয়মান (emergent)। যেমন একটি লাল কাপড়ের “লালত্ব” প্রতিটি সুতোয় আগে থেকেই থাকে না। লালত্ব প্রকাশ পায়, যখন সুতোগুলির মধ্যে রং, আলো ও প্রতিফলনের নির্দিষ্ট মিথস্ক্রিয়া ঘটে। অর্থাৎ, “রং” তার উপাদানগুলোর মধ্যে আগে অনুপস্থিত ছিল—এখন যখন সমস্ত শর্ত একত্রিত হয়েছে, তখনই তা প্রকাশিত হয়েছে। তাই রং হলো তার অরঞ্জিত, স্বতন্ত্র সুতাগুলির মধ্যে থাকা রংত্বের অনস্তিত্বের প্রতিযোগী। এভাবে দেখা যায়—গুণাবলী কোনো বস্তুর ভেতরে স্থির নয়; তারা সম্পর্ক, সংযোগ, এবং পরিবেশের নির্ভরতায় উদ্ভূত হয়।
ক্রিয়া বা গতি কোনো স্থির উপাদানের ভেতরে লুকিয়ে থাকে না। একটি একক সুতো স্থির—তাতে “গতি” নেই। কিন্তু যখন বহু সুতো একত্রে চলে, যখন বুনন বা চলন শুরু হয়, তখন সেই সমষ্টিগত সম্পর্ক থেকে “গতি” উদ্ভূত হয়। এই গতি একক উপাদানে অনুপস্থিত ছিল, এবং এখন তার সংগঠিত সমন্বয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
অতএব, “গতি” হলো স্থির উপাদানগুলির মধ্যে থাকা গতিত্বের অনস্তিত্বের প্রতিযোগী। এখানে বোঝা যায়—ক্রিয়া নিজেই একটি সম্পর্কনির্ভর প্রক্রিয়া; এটি একক বস্তুর গুণ নয়, বরং সংগঠনের ফল। অর্থাৎ, চলন ও কার্যকলাপ কোনো অন্তর্নিহিত “গুণ” নয়, বরং বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক বিন্যাস থেকে উদ্ভূত নতুন সত্য।
জাতি বা সর্বজনীনতা (Jāti) বলতে বোঝানো হয় কোনো বস্তুর সর্বজনীন ধারণা—যেমন “সুতা-ত্ব”, “গাছ-ত্ব”, “মানুষ-ত্ব” ইত্যাদি। কিন্তু এই “-ত্ব” কোনো একক বস্তু বা দৃষ্টান্তের মধ্যে পুরোপুরি থাকে না। একটি নির্দিষ্ট সুতো “সুতা-ত্ব”-এর সম্পূর্ণ ধারণাকে ধারণ করে না; সে কেবল তার এক দৃষ্টান্ত। “সুতা-ত্ব” প্রকাশ পায় বহু উদাহরণের মধ্যে সাধারণতা খুঁজে পাবার মাধ্যমে। অর্থাৎ, সর্বজনীনতা (universality) উদ্ভূত হয় আমাদের বুদ্ধিগত স্বীকৃতি ও শ্রেণীকরণের দ্বারা—যা একাধিক দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার সমন্বয় থেকে জন্ম নেয়। তাই “সুতা-ত্ব” নামক সর্বজনীন ধারণা একক সুতার মধ্যে অনুপস্থিত ছিল; এটি বহু উদাহরণের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বোধ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এইভাবে সর্বজনীনতা নিজেও একটি অনস্তিত্বের প্রতিযোগী—যা কোনো একক বস্তুতে নেই, কিন্তু সম্পর্ক ও চেতনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এসব উদাহরণে মূল সত্যটি এক—যে-কোনো সত্তা, গুণ, গতি বা ধারণা তার উপাদান বা শর্তের মধ্যে আগে থেকে বিদ্যমান থাকে না। তারা সম্পর্কের ফল—সংগঠন, মিথস্ক্রিয়া ও নির্ভরতার মধ্য থেকে উদ্ভূত। এই ধারণা অসৎকার্যবাদী বাস্তবতাকে সমর্থন করে—যেখানে সৃষ্টি মানে পূর্বের অনস্তিত্বের অতিক্রম, এবং অস্তিত্ব মানে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশ।
ফলে একাধিকরণত্বম্ ও অনুমান একত্রে শেখায়—বাস্তবতা কোনো স্থায়ী সত্তা নয়, বরং অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে, নিশ্চলতা থেকে গতি, অংশ থেকে সমগ্রে—এক অবিরাম রূপান্তরের প্রবাহ। এই প্রবাহেই নিহিত সত্যের গতিশীলতা—যেখানে প্রতিটি অস্তিত্ব, প্রতিটি গুণ, প্রতিটি ধারণা—তার পূর্বের অনস্তিত্বকে অতিক্রম করে, নিজেকে সম্পর্কের জালে প্রকাশ করে।
একাধিকরণত্বম্—“থাকা” ও “না-থাকা”-র পারস্পরিক একচেটিয়াত্ব (mutual exclusivity) যুক্তির ভিত্তি স্থাপন করে, আর অনুমান তার ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা করে, কীভাবে কোনো সত্তা বা ঘটনা তার পূর্বের অনস্তিত্ব অতিক্রম করে “উদ্ভূত” হয়।
এই কাঠামোর প্রথম স্তর হলো একাধিকরণত্বম্—চিন্তার ভেতরে “অস্তিত্ব” ও “অনস্তিত্ব”-এর মধ্যকার সীমানা স্পষ্ট রাখে। দ্বিতীয় স্তর হলো অনুমান—যা একাধিকরণত্বম্-কে কার্যকর রূপে প্রয়োগ করে দেখায়, কীভাবে কোনো সত্তা বা প্রপঞ্চ (phenomenon) তার পূর্বের অনস্তিত্বের অবসানের মাধ্যমে বাস্তবে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, অনুমান শেখায়—“অস্তিত্ব মানে অনস্তিত্বকে অতিক্রম করা।” এই উপলব্ধিই মিথ্যাত্ব (অর্থাৎ অস্থায়ী, নির্ভরশীল বাস্তবতা)-র প্রকৃত স্বরূপ বোঝার উপায়।
এই পদ্ধতি বাস্তবতাকে বুঝতে কেবল বাহ্যিক পর্যবেক্ষণে থেমে থাকে না; বরং তা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে। যখন কোনো বস্তু বা ঘটনা তার কারণের মধ্যে ছিল না—তখনই তার উদ্ভব প্রকৃত রূপান্তরকে নির্দেশ করে।
এই রূপান্তর দেখায়—বাস্তবতা স্থির নয়, বরং পরিবর্তনশীল ও সম্পর্কনির্ভর। প্রত্যেক সৃষ্টি তাই তার পূর্বের অনুপস্থিতির সীমা ভেঙে উঠে আসে; এভাবে মিথ্যাত্ব বা আপেক্ষিকতা প্রকাশ পায়—যা পরম সত্য নয়, কিন্তু কার্যকর বা ব্যাবহারিক সত্য।
এই কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো ভ্রান্তি প্রতিরোধ। যখন আমরা জানি যে, কোনো সত্তা ও তার অনস্তিত্ব একই স্থানে থাকতে পারে না, তখন আমরা ভুলভাবে একটিকে অন্যটির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি না। উদাহরণস্বরূপ, দড়িকে দেখে সাপ মনে করা একাধিকরণত্বম্-র বিরোধী, কারণ একই স্থানে “দড়ি” ও “সাপ”—এই দুই বিপরীত সত্তা একসঙ্গে থাকতে পারে না। অতএব, এই নীতি আমাদের জ্ঞানের অভ্যন্তরে যুক্তিগত সংহতি আনে, আর অনুমান এই সংহতির ওপর ভিত্তি করে বাস্তব সত্য ও ভ্রান্ত জ্ঞানের পার্থক্য নির্ধারণ করে।
এই বিশ্লেষণাত্মক কাঠামো আমাদের শেখায়—সমগ্র কীভাবে অংশ থেকে তৈরি হয়, গুণাবলী ও ক্রিয়াগুলো কীভাবে সংগঠনের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়, এবং সর্বজনীন ধারণা বা জাতি কীভাবে বুদ্ধির প্রক্রিয়া থেকে জন্ম নেয়।
একটি কাপড় তার সুতাগুলির মধ্যে আগে থেকে নেই, লাল রং প্রতিটি ফাইবারে আলাদা করে থাকে না, গতি স্থির উপাদানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে না, আর “সুতা-ত্ব” কোনো একক সুতার গুণ নয়—এসব উদাহরণ দেখায়, প্রতিটি “অস্তিত্ব” তার অংশগুলির অনস্তিত্ব অতিক্রম করে প্রকাশিত হয়। এখানে একাধিকরণত্বম্ যুক্তির সীমানা রক্ষা করে, আর অনুমান সেই সীমানার মধ্যে থেকেই বোঝায়, কীভাবে সংগঠন, সম্পর্ক ও রূপান্তরের মাধ্যমে বাস্তবতা গঠিত হয়।
এই সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবতাকে একটি প্রক্রিয়া (process) হিসেবে দেখে—যেখানে সত্তাগুলি স্থির নয়, বরং নির্ভরশীল, পরিবর্তনশীল, ও উদীয়মান। এটি কেবল অস্তিত্বের প্রশ্ন নয়; এটি, অস্তিত্ব কীভাবে ঘটে—তার প্রশ্ন। ফলত, এই ব্যবস্থা দেখায়—বাস্তবতা বোঝার জন্য বাহ্যিক রূপ যথেষ্ট নয়; আমাদের দেখতে হয় অভ্যন্তরীণ যৌক্তিক কাঠামো, যেখানে অনুপস্থিতি ও উপস্থিতি পরস্পরকে শর্ত করে, এবং প্রতিটি নতুন সৃষ্টি পূর্বের অনুপস্থিতির সীমা অতিক্রম করে।
একাধিকরণত্বম্ ও অনুমান একত্রে গড়ে তোলে একটি সুসংগত বিশ্লেষণাত্মক দর্শন, যা যুক্তির শৃঙ্খলা রক্ষা করে, মিথ্যা ও বিভ্রম প্রতিরোধ করে, এবং অস্তিত্ব, গঠন ও কার্যকারণ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি দেয়। এই কাঠামোর মধ্যে প্রকৃত জ্ঞান জন্ম নেয় নিয়মিত যুক্তির প্রয়োগ থেকে—যেখানে “থাকা” ও “না-থাকা”-র সীমা ও সীমানা রক্ষিত হয়, এবং প্রতিটি সৃষ্টি উপলব্ধ হয় এক রূপান্তরের ফল হিসেবে—যেখানে অনুপস্থিতি অতিক্রম করে উদ্ভূত হয় নতুন উপস্থিতি।
একাধিকরণত্বম্ এমন এক মৌলিক দার্শনিক নীতি, যা চিন্তা ও অস্তিত্বের মধ্যে যৌক্তিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে, যুক্তিকে আত্মবিরোধ থেকে রক্ষা করে, কারণ এটি বলে—যেখানে “অস্তিত্ব” আছে, সেখানে “অনস্তিত্ব” থাকতে পারে না; আর যেখানে “অনস্তিত্ব” আছে, সেখানে “অস্তিত্ব” থাকতে পারে না।
এই একাধিকরণত্বম্-ই হয়ে ওঠে সমস্ত দার্শনিক বিশ্লেষণের ভিত্তি, যেখানে “থাকা” ও “না-থাকা”-র সম্পর্ক একটি কঠোর ও নির্ভুল যুক্তিগত কাঠামোয় স্থাপিত হয়। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে অনুমান (inference) বাস্তবতার সূক্ষ্ম গঠন ব্যাখ্যা করে।
অনুমান কেবল তর্কের হাতিয়ার নয়—এটি এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মিথ্যাত্ব (অস্থায়িত্ব, আপেক্ষিকতা) প্রদর্শিত হয়। এটি দেখায়—কীভাবে প্রতিটি সমগ্র (whole), গুণ (quality), ক্রিয়া (activity), এবং সর্বজনীনতা (universality) তাদের উপাদান বা শর্তের মধ্যে পূর্বে অনুপস্থিত ছিল, এবং নির্দিষ্ট বিন্যাস ও সম্পর্কের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে। অর্থাৎ, অনুমান প্রমাণ করে যে, কোনো সত্তা, রূপ, বা গুণ তার উপাদানগুলির মধ্যে আগে থেকে “ছিল না”; বরং সেই অনুপস্থিতি অতিক্রম করেই তা “প্রকাশ” পায়। এই অতিক্রমণই মিথ্যাত্বের মূল প্রমাণ—যা দেখায়—সব সৃষ্টি আপেক্ষিক, শর্তনির্ভর এবং পরিবর্তনশীল।