অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: এক-শো উনিশ



অদ্বৈতের সারমর্ম এই এক বাক্যে ধরা যায়—যে-সত্তা প্রতীয়মান, কিন্তু উচ্চতর সত্তা দ্বারা নিজের আধারে বাধযোগ্য, সেটিই মিথ্যা। মিথ্যা মানে অস্তিত্বহীন নয়, বরং এমন কিছু, যা-দেখা যায়, কিন্তু যার স্বতন্ত্র বাস্তবতা নেই। দড়িতে সাপ যেমন প্রতীয়মান, কিন্তু দড়ির বাইরে কোনোদিনও সাপের অস্তিত্ব নেই, তেমনি জগৎও প্রতীয়মান, কিন্তু তার ভিত্তি ও অধিষ্ঠান কেবল ব্রহ্ম।

জগৎ ব্রহ্মের উপর প্রতিফলিত, ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু ব্রহ্ম থেকে স্বাধীন নয়। এটি সেই রশ্মির মতো, যা সূর্য ছাড়া থাকতে পারে না। যতক্ষণ অবিদ্যা আছে, ততক্ষণ জগৎ বাস্তব বলে মনে হয়; কিন্তু যখন জ্ঞান উদিত হয়, তখন এই বাস্তবতার দাবিই নিভে যায়। তবে এই নিভে যাওয়া কোনো ধ্বংসের মতো নয়; বরং এটি উজ্জ্বলতর বোধের সান্নিধ্যে ঘটে—যেমন প্রদীপের আলোয় প্রদীপের নিচের ছায়া নিজে থেকেই মিশে যায় আলোর সঙ্গে।

ব্রহ্ম-জ্ঞান সেই উচ্চতর আলোক, যার উপস্থিতিতে জগৎ-ছায়ার প্রভাব মুছে যায়। তবু এতে বাস্তবতার কিছু নষ্ট হয় না—বরং সত্য আরও স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। কারণ ছায়া চলে গেলেও আলো কমে না; বরং তখনই আলো নিজের গভীরতা প্রকাশ করে।

তাই অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, মুক্তি কোনো ধ্বংস নয়, কোনো অর্জনও নয়—এটি এক দৃষ্টির রূপান্তর। আগে যা ছায়া বলে মনে হচ্ছিল, এখন বোঝা যায়—সেটিও আলোর খেলা। জগৎ থেকে ব্রহ্মে যাওয়া মানে কোথাও গমন নয়, বরং দেখা বদলে যাওয়া। ছায়া চলে গেলে যা অবশিষ্ট থাকে, তা কেবল সেই চির-প্রকাশমান আধার—ব্রহ্ম, চৈতন্য, স্বয়ং-আলোক।

যা জানা যায় বা জ্ঞেয় বা প্রমেয় (prameya), তা সর্বদাই কোনো আধারের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতাই তার সীমা, আর সেই সীমাই তাকে মিথ্যা করে তোলে। জ্ঞেয়তা নিজেই এক আপেক্ষিক ধর্ম—এটি কখনও স্বতঃসিদ্ধ নয়, সর্বদা কোনো ধারকের (dharmin) উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন শুভ্রতা বা রূপ কেবল কোনো বস্তুর মধ্যে থাকে, ধারক ছাড়া তার অস্তিত্ব নেই; তেমনি “জ্ঞেয়তা”-ও কোনো নির্দিষ্ট আধারে প্রতীয়মান হয়।

অদ্বৈত বেদান্তে এই ধারণার ভিত্তি পাওয়া যায় শঙ্করাচার্যের অধ্যাস-ভাষ্যে—“অধ্যাসঃ নাম অতস্মিন্‌ তদ্‌বুদ্ধিঃ।” অর্থাৎ, যে-জিনিস নয়, তাতে সেই-জিনিসের বোধ। এই অধ্যাসের ফলেই জ্ঞেয় জগতের উদ্‌বব।

চেতনা (cit) নিজে স্বপ্রকাশ, নির্ভরহীন এবং অবাধিত। এটি কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে না; বরং সমস্ত জ্ঞেয়তা চেতনার উপর নির্ভরশীল। কেন উপনিষদ (১.৩) বলে—“ন তত্র চক্ষুঃ গচ্ছতি, ন ভাষা গচ্ছতি, ন মনঃ।” অর্থাৎ, সেখানে চোখ-ভাষা-মন পৌঁছায় না। চেতনা কোনো জানার বিষয় নয়—এটি সব জ্ঞানের অধিষ্ঠান।

বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৪.৪.১৯) বলে—“নেহ নানাস্তি কিঞ্চন।” অর্থাৎ, এখানে কোনো দ্বিতীয়তা নেই। অতএব, যা চেতনার বাইরে প্রতীয়মান, সেটি আপেক্ষিক, সীমাবদ্ধ, এবং তাই মিথ্যা।

জ্ঞেয়তার দাগ পড়লেই বোঝা যায়—এটি পরতন্ত্র, সীমিত ও বাধযোগ্য। অদ্বৈতের কঠোর যুক্তিতে বলা হয়—যা জ্ঞেয়, তা বাধযোগ্য; আর যা বাধযোগ্য, তা পারমার্থিক সত্য নয়। অতএব, জ্ঞেয় মানেই মিথ্যা।

এভাবেই মুণ্ডক উপনিষদ (১.২.৭) বলে—“প্লবা হ্যেতে অধৃতা যজ্ঞরূপাঃ।” অর্থাৎ, যজ্ঞাদি ও ক্রিয়ামূলক জ্ঞান দুর্বল নৌকার মতো; তারা পার করাতে পারে না, কেবল পথের সূচনা করে। এই উপমা বোঝায়—প্রতীতি বা ধারণার স্তরে যা ধরা পড়ে, তা ব্রহ্মজ্ঞান উদিত হলে নিবারিত হয়।

যে-বস্তু প্রতীয়মান হয় কিন্তু যার নিজ আধারে কোনো অস্তিত্ব নেই—সেই অবস্থাকেই বলে অত্যন্ত-অভাব। যেমন দড়িতে সাপ প্রতীত হয়, অথচ দড়িতে কখনও সাপ ছিল না, নেই, থাকবে না। তেমনি চেতনার আধারে প্রতীয়মান জগতও নিজের অধিষ্ঠানে অনুপস্থিত—ত্রিকালাবাধিত অভাবযুক্ত।

চেতনা একমাত্র অবাধিত সত্য। ছান্দোগ্য উপনিষদ (৬.২.১) বলে—“সত্ত্বমেব সোম্য ইদমগ্র আসীত্‌, একমেবাদ্বিতীয়ম্‌।” অর্থাৎ, আদিতে ছিল কেবল “সৎ”, এক ও অদ্বিতীয়। এই “সৎ”ই চেতনা—যা কখনও জ্ঞেয় নয়, কারণ সেটিই সব জ্ঞানের আলো।

গীতা (৪.৩৮) বলে—“ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।” এই জগতে জ্ঞানের মতো পবিত্র কিছু নেই। এই জ্ঞানই পরাবিদ্যা—যা চেতনার স্বরূপজ্ঞান, আর কোনো মাধ্যম নয়।

গীতা (৬.৮) বলে—“জ্ঞানোপমতৃপ্তচেতাঃ।” অর্থাৎ, যে আত্মজ্ঞানেই তৃপ্ত, সে-ই প্রকৃত যোগী।

গীতা (২.৭২) বলে—“এষা ব্রাহ্মী স্থিতি পার্থ, নৈনাং প্রাপ্য বিমুহ্যতি।” অর্থাৎ, এই ব্রাহ্মী-স্থিতি লাভ করলে আর কোনো বিভ্রম থাকে না।

যা জানা যায়, তা আপেক্ষিক ও মিথ্যা; আর যা কখনও জানার বিষয় হতে পারে না—যা স্বয়ংপ্রকাশ ও অবাধিত—সে-ই চেতনা, সেই আত্মাই একমাত্র সত্য।

অদ্বৈতের ভাষায় যখন বলা হয় যে, ব্রহ্ম “ব্যবহারযোগ্য অথচ অজ্ঞেয়”, তখন তার মানে হলো—ব্রহ্ম কোনো “জ্ঞেয় বস্তু” নন, যাকে অন্য কিছুর মাধ্যমে জানা যায়। তিনি নিজেই সেই চেতনা, যার উপর নির্ভর করে জানা, দেখা, চিন্তা, অনুভব—সব ঘটে। কিন্তু ব্রহ্ম নিজে কখনও কোনো প্রমাণ বা ইন্দ্রিয়ের অধীন হয়ে জানার বিষয় হন না।

চোখ দিয়ে যেমন সব দেখা যায়, কিন্তু চোখকে চোখে দেখা যায় না—এই উপমা কিছুটা মানায়, কিন্তু পুরোপুরি নয়। আরও যথাযথ উদাহরণ হলো প্রদীপের। প্রদীপ যেমন নিজের আলোয় নিজেও আলোকিত হয় এবং অন্যকেও আলোকিত করে, তেমনি ব্রহ্ম বা চেতনা নিজেই নিজের দ্বারা প্রকাশিত, আর সেই আলোতেই সব কিছু প্রতীয়মান হয়।

“ব্যবহারযোগ্য অথচ অজ্ঞেয়” কথাটির অর্থ:

প্রথমত, ব্যবহারযোগ্য মানে হলো—ব্রহ্ম বা চেতনা সমস্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিষ্ঠান। তাঁর মাধ্যমেই দেখা, শোনা, চিন্তা, অনুভব—সব সম্ভব হয়। সমস্ত প্রমাণ, যেমন চোখ, কান, মন বা বুদ্ধি—সবই চেতনার উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ যেমন নিজে দেখা যায় না, কিন্তু তার দ্বারাই পাখা, আলো বা যন্ত্র কাজ করে, তেমনি ব্রহ্মকেও আমরা সরাসরি দেখি না, কিন্তু তাঁর দ্বারাই সমস্ত জগত প্রতীয়মান হয়। এই কারণে বলা হয়, ব্রহ্ম ব্যবহারযোগ্য—কারণ সমস্ত ব্যবহার তাঁর উপর নির্ভর করে।

দ্বিতীয়ত, অজ্ঞেয় মানে হলো—ব্রহ্ম কোনো জানার বস্তু নন। তাঁকে চোখে দেখা যায় না, মনে ভাবা যায় না, বুদ্ধিতে ধরা যায় না। কারণ তিনি নিজেই সমস্ত জ্ঞানের ভিত্তি। কোনো বস্তু জ্ঞেয় হয় তখনই, যখন তা চেতনার সামনে আসে; কিন্তু ব্রহ্ম নিজেই সেই চেতনা, যার সামনে সব কিছু প্রকাশিত হয়। তাই তিনি কখনও জানার বস্তু হতে পারেন না। কেন উপনিষদে বলা হয়েছে—“ন তত্র চক্ষুঃ গচ্ছতি, ন ভাষা গচ্ছতি, ন মনঃ।” অর্থাৎ, সেখানে চোখ, ভাষা বা মন পৌঁছাতে পারে না—কারণ সেই ব্রহ্মই সমস্ত দৃষ্টি, বাক্য ও চিন্তার উৎস।

তৃতীয়ত, এই দুইটি দিক একত্র করলে অর্থ দাঁড়ায়—ব্রহ্মকে আমরা সব কাজে ব্যবহার করি, কারণ তাঁর মাধ্যমেই সব জানা ও অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়, কিন্তু তাঁকে জানা যায় না, কারণ তিনি কোনো জানার বস্তু নন। তিনি সেই চেতনা, যার আলোয় সব জানা যায়, কিন্তু যিনি নিজে অজ্ঞেয়।

যেমন প্রদীপ নিজের আলোয় নিজেও আলোকিত হয় এবং অন্যকেও আলোকিত করে, তেমনি চেতনা বা ব্রহ্ম নিজেই স্বপ্রকাশ—নিজেকে জানায় এবং তাঁর আলোতেই জগৎ প্রতীয়মান হয়। তাই বলা হয়, ব্রহ্ম ব্যবহারযোগ্য অথচ অজ্ঞেয়—তিনি সব জ্ঞানের কারণ, কিন্তু কখনও জানার বিষয় নন।

চেতনা সর্বপ্রকাশক (sarva-prakāśaka), অর্থাৎ সমস্ত কিছু তার আলোয়ই প্রকাশিত হয়। কিন্তু সে নিজে অপর-প্রকাশ্য (apara-prakāśya)—অন্য কোনো কিছু দিয়ে তাকে প্রকাশ করা যায় না। যে-চেতনা দ্বারা সব জানা হয়, তাকেই জানার চেষ্টা করা মানে তাকে বস্তু করে ফেলা, অথচ চেতনা কোনো বস্তু নয়। কারণ বস্তুর অস্তিত্ব অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল, কিন্তু চেতনার বাইরে “অন্য কিছু” নেই—তাঁর কোনো প্রতিপক্ষ বা বাহ্যতা নেই।

অতএব, ব্রহ্ম বা চেতনার “জ্ঞান লাভ” মানে তাকে জানার চেষ্টা নয়; কারণ তাকে জানা মানেই তাকে সীমাবদ্ধ করা। যখন আমরা কোনো কিছু জানি, তখন আমরা সেটিকে প্রমাণ-যন্ত্র (pramāṇa)—যেমন চোখ, মন, বুদ্ধি—এর অধীন করি। কিন্তু ব্রহ্মকে এমন কোনো প্রমাণে ধরা যায় না; কারণ সমস্ত প্রমাণই ব্রহ্মের দ্বারাই সচল। কেন উপনিষদের উচ্চারণই এখানে চূড়ান্ত—সেখানে চোখ, ভাষা ও মন পৌঁছাতে পারে না।

শাস্ত্রও তাই ব্রহ্মকে “জানায়” না; সে কেবল পথ দেখায়। শাস্ত্রের ভূমিকা সূর্যের দিকে ইঙ্গিত করা আঙুলের মতো—আলো দেখায়, কিন্তু আলো সৃষ্টি করে না। ব্রহ্ম নিজেই সেই চির-আলোক, যার প্রভায় জ্ঞান, জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়—সবই জ্বলে।

এই জন্য ব্রহ্ম-জ্ঞান কোনো বস্তুর মতো অর্জন নয়; এটি কেবল নিজের স্বরূপে প্রত্যাবর্তন। যখন মিথ্যা আরোপের অন্ধকার সরে যায়, তখন চেতনা নিজের মধ্যেই নিজেকে চিনে ফেলে—কোনো জানার প্রচেষ্টা ছাড়াই। ব্রহ্ম-জ্ঞান মানে “নতুন কিছু জানা” নয়, বরং “যা চিরকাল জানা ছিল, তা নিজের স্বরূপে উপলব্ধ হওয়া।”

অদ্বৈত বেদান্তে “অভিজ্ঞতা স্বয়ংপ্রকাশ (svayam-prakāśa-anubhava)” একটি মূল জ্ঞানতাত্ত্বিক সত্য। এটি বোঝাতে দুটি ধারণা কেন্দ্রে থাকে—স্বতঃসিদ্ধতা (svataḥ-siddhatā) এবং স্বয়ংপ্রকাশতা (svayam-prakāśatā)।

“আমি আছি”—এই জ্ঞান কোনো যুক্তি বা ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রমাণ করতে হয় না। এটি নিজেই নিজেকে প্রকাশ করে। এই নির্ভরহীন উপস্থিতিই আত্মার স্বতঃসিদ্ধতা। শঙ্করাচার্য বলেন—“ন হি স্বপ্রকাশস্য আত্মনঃ প্রমাণান্তরাপেক্ষা অস্তি।”—আত্মা স্বপ্রকাশ; তাই তাঁকে জানাতে অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই (ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য, ২.৩.৭)। বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৪.৩.২৩) বলে—“ন তত্র দ্রষ্টা অন্যো ভবতি, ন শ্রোতা অন্যঃ, ন মনতা, ন বিজ্ঞাতা।” অর্থাৎ, সেখানে অন্য কোনো দ্রষ্টা, শ্রোতা, চিন্তক বা বিজ্ঞাতা নেই—চেতনা নিজেই একমাত্র সাক্ষী। অতএব, আত্মার অস্তিত্ব স্বতঃসিদ্ধ—কারণ তার জানা নিজেই তার প্রমাণ।

স্বতঃসিদ্ধতা বোঝায় অস্তিত্বে স্বাধীনতা; আর স্বয়ংপ্রকাশতা বোঝায় জ্ঞানে স্বাধীনতা। আত্মা নিজের আলোয় নিজেকে প্রকাশ করে এবং অন্য সব কিছুকেও জানায়। কেন উপনিষদ (১.৩) বলে—“ন তত্র চক্ষুঃ গচ্ছতি, ন ভাষা গচ্ছতি, ন মনঃ।” অর্থাৎ, সেখানে চোখ, ভাষা বা মন পৌঁছাতে পারে না। শঙ্করাচার্য বলেন—“জ্ঞানস্বরূপ আত্মা অন্য আলো দ্বারা প্রকাশ্য নন; তিনি নিজে প্রকাশক।” (ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য, ১.১.৪)। যেমন প্রদীপ নিজের আলোয় নিজেও জ্বলে, আবার অন্যকেও আলোকিত করে—তেমনি আত্মা নিজেই স্বয়ংপ্রকাশ; অন্য কোনো আলোকপ্রদ মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।

যদি বলা হয়, “জ্ঞানকে জানাতে আবার আরেক জ্ঞান দরকার”, তাহলে সেই দ্বিতীয় জ্ঞানকে জানাতে তৃতীয় জ্ঞান লাগবে, এভাবে চলবে অসীম শৃঙ্খল—এটাই অনবস্থা (anavasthā)। অদ্বৈতের যুক্তি হলো, জ্ঞান নিজের উপস্থিতিতেই প্রকাশিত; তাকে জানাতে অন্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। শঙ্করাচার্য বলেন—“আত্ম-জ্ঞানস্য স্বয়ং-প্রকাশত্বাত্‌ ন অন্যজ্ঞানাপেক্ষা।”—আত্মজ্ঞান স্বয়ংপ্রকাশ; তাই তাকে জানাতে অন্য জ্ঞান লাগে না (ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য, ২.৩.৭)। যেমন সূর্যকে আলাদা আলো দিয়ে দেখা যায় না, তেমনি চেতনাকে জানাতে অন্য আলো কল্পনা করলে সেটি চেতনার অস্বীকার হয়ে যায়।

অন্য কিছু দর্শনে, “অনুব্যবসায়” মানে মূল জ্ঞানের পরে আরেকটি “জ্ঞানের জ্ঞান”। অদ্বৈত বলে—এটি নতুন কোনো জ্ঞান নয়; এটি মূল জ্ঞানের প্রতিফলন বা স্মৃতি। যেমন “আমি জানি যে, আমি জানি”—এখানে দ্বিতীয় “জানা” কোনো নতুন আলো নয়; এটি মূল জ্ঞানের প্রতিধ্বনি মাত্র। বেদান্ত পারিভাষা ব্যাখ্যা করে—“অনুব্যবসায়ঃ ন নবীন-জ্ঞানম্‌, কিন্তু পূর্বজ্ঞানস্য স্মৃতি-রূপঃ।” অর্থাৎ, অনুব্যবসায় নতুন জ্ঞান নয়; আগের জ্ঞানের স্মৃতিরূপ।