অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: এক



অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের গভীর আলোচনায়, যখন মিথ্যাত্বের (falsity) ধারণা—তার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও অকাট্য প্রমাণাদিসহ—দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন সিদ্ধান্তীরা, অর্থাৎ এই মহান দর্শনের প্রবক্তারা, তাঁদের মনোযোগ নিবদ্ধ করলেন এই মায়াময় জগতের অন্তর্নিহিত কারণের উপর। তাঁদের নিরন্তর অনুসন্ধান এক অবিস্মরণীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হলো: এই সমগ্র জাগতিক প্রকাশ, আমাদের দ্বারা অনুভূত বাস্তবতার এই জটিল ও বহুস্তরীয় জাল—আত্মায় (Ātmani) অবস্থিত এক অনির্বচনীয় (Anirvacanīyā), অনাদি (Anādyā) অবিদ্যার (Avidyā) "ক্রীড়া" বা "প্রকাশ" (vilasita) ছাড়া আর কিছুই নয়। এই মৌলিক সিদ্ধান্তটি উপস্থাপন করার পর, তাঁরা ঘোষণা করলেন যে, মিথ্যাত্বের প্রকৃতি নিয়ে আর অতিরিক্ত বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই, কারণ মিথ্যাত্বের সম্ভাবনাই যারা অস্বীকার করে, সেই পূর্ব-পক্ষকে (Pūrva-pakṣa) তাঁরা যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে যথেষ্টভাবে খণ্ডন করেছেন। তাঁদের মতে, অবিদ্যাই হলো মিথ্যাত্বের মূল ভিত্তি, এবং অবিদ্যার স্বরূপ উন্মোচিত হলে মিথ্যাত্বের বিচার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সম্পন্ন হয়।

তবে, সিদ্ধান্তীদের এই চূড়ান্ত এবং আপাতদৃষ্টিতে সমাধানসূচক বিবৃতিটি, বিশেষ করে "অনাদি এবং অনির্বচনীয় অজ্ঞতা" বা অবিদ্যার উল্লেখ, সঙ্গে সঙ্গেই এক নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের দিগন্ত উন্মোচন করে। প্রতিপক্ষ, যারা সর্বদা সিদ্ধান্তীর বক্তব্যকে গভীরতার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে এবং তার দুর্বলতা প্রমাণ করতে আগ্রহী, তারা দ্রুত একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করে: "এই অনির্বচনীয় অবিদ্যা (Anirvacanīyā-avidyā) আসলে কী?" প্রতিপক্ষ এরপর দৃঢ়তার সাথে যুক্তি দেখায় যে, এই ধরনের একটি সত্তার অস্তিত্ব বা প্রকৃতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোনো সঠিক সংজ্ঞা (Lakṣaṇaṁ) নেই এবং এর বৈধতা প্রমাণ করার জন্য কোনো বৈধ প্রমাণ (Pramāṇaṁ)ও নেই। তাদের মতে, যা সংজ্ঞাতীত ও প্রমাণাতীত, তার অস্তিত্ব মেনে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।

অবিদ্যার প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ:

প্রতিপক্ষের আক্রমণের প্রধান দিক হলো: অবিদ্যার ধারণাকে কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতিতে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। তারা একটি সরল কিন্তু কার্যকরি প্রস্তাব উপস্থাপন করে: "তা জ্ঞানের অনুপস্থিতি (Jñānābhāvaṁ) ছাড়া অন্য কোনো সত্তা নয়।" এই আপাতদৃষ্টিতে সরল দাবিটির লক্ষ্য হলো সিদ্ধান্তীর অবিদ্যার ধারণাকে—যা একটি ইতিবাচক, যদিও অনির্বচনীয়, সত্তা হিসাবে বিবেচিত—ভেঙে দেওয়া। তাদের যুক্তি হলো, যদি অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব হয়, তবে এর জন্য আলাদা করে কোনো স্বতন্ত্র সত্তা বা জটিল ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

বেদান্তে “ইতিবাচক” (bhāvarūpa, positive) শব্দটির অর্থ সাধারণত কোনোভাবে সত্তা বা অস্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়, নিছক অনুপস্থিতি (অভাব) নয়। নেতিবাচক (অভাব) (negation/absence) হলো: যা নেই, যা কেবল অভাব বা শূন্যতা হিসেবে ধরা হয়। যেমন—“এ টেবিলে বই নেই।” এখানে “বইয়ের অনুপস্থিতি” একটি নেতিবাচক ধারণা। আর ইতিবাচক (bhāva) হলো: যা কিছু-না-কিছু উপায়ে বা ভাবে আছে, কিংবা উপস্থিত—হোক তা মিথ্যা/অসত্য/অস্থায়ী। যেমন—“রুপোর ভ্রান্ত ধারণা” (ঝিনুকে ভ্রমে রুপার অভিজ্ঞতা) আসল রুপা না হলেও, একটি ইতিবাচক ভ্রান্ত অভিজ্ঞতা হিসেবে বিদ্যমান।

কখনো সূর্যের আলোয় ঝিনুকের চকচকে অংশ দেখে কেউ ভুল করে ভাবে—“এটি রুপা।” আসলে সেখানে রুপা নেই, তবু মানুষের মনে “রুপার অভিজ্ঞতা” তৈরি হয়। এখানে রুপা বাস্তবে নেই, তাই এটি অভাব। কিন্তু রুপার অভিজ্ঞতা (রুপা দেখছি ভেবে অনুভব করা) সত্যিই ঘটছে। এ অভিজ্ঞতা নিছক “অভাব” নয়, বরং একটি ইতিবাচক ভ্রান্ত অভিজ্ঞতা। বেদান্ত এ উদাহরণ দিয়ে বোঝায়—যেমন ঝিনুককে রুপা মনে হয়, তেমনই ব্রহ্মকে না জেনে জগতকে বাস্তব মনে হয়।

অবিদ্যা কেন ইতিবাচক ধরা হয়? অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা (Avidyā) বা মায়া কেবল “জ্ঞানের অভাব” (jñānābhāva) নয়। যদি অবিদ্যা কেবল অভাব হতো, তবে এটি “অভাবপ্রমাণ” (যেমন অনুপলব্ধি) দ্বারা ধরা যেত। কিন্তু শাস্ত্র বলে, অবিদ্যা অভাব দিয়ে ধরা যায় না। অবিদ্যা ইতিবাচক অর্থে ধরা হয়—কারণ এর একটি কার্যকারিতা আছে: এটি আত্মার প্রকৃত স্বরূপ আচ্ছাদন করে (āvaraṇa-śakti), এটি ভ্রান্ত জগত প্রকাশ করে (vikṣepa-śakti)।

আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক। অভাব (নেতিবাচক): “এ ঘরে হাতি নেই।” ইতিবাচক অবিদ্যা: স্বপ্নে হাতি দেখা। স্বপ্নের হাতি বাস্তবে নেই, কিন্তু অভিজ্ঞতা হিসেবে “ইতিবাচক” কিছু আছে—যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। বেদান্তে “ইতিবাচক” মানে হলো—যা কোনোভাবে “অস্তিত্বের রূপে” ধরা পড়ে, কেবল অনুপস্থিতি নয়। অবিদ্যা বাস্তব নয় (পরমার্থত: মিথ্যা), কিন্তু এটি নিছক শূন্যও নয়। কারণ, এর কার্যকারিতা আছে—এমন শক্তি, যা সত্যকে আচ্ছাদন করে এবং মায়াময় জগতকে প্রতীয়মান করে। তাই একে বলা হয় অনাদি-অনির্বচনীয়-ইতিবাচক (bhāvarūpa) অবিদ্যা।

সিদ্ধান্তী প্রতিপক্ষের হ্রাসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ব্যাখ্যা করে বলেন যে, "আমি জানি না" (Na jānāmi), এই বাক্যের সাধারণ ব্যবহার প্রধানত জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত সুপরিচিত অনুপস্থিতির প্রকারসমূহকে বোঝায়। এরা হলো:

জ্ঞানের প্রাগভাব (Prāg-abhāva), যা জ্ঞান বিদ্যমান থাকার পূর্ববর্তী অবস্থাকে বোঝায়, অর্থাৎ জ্ঞানের উৎপত্তির আগে-থাকা অভাব; এবং

জ্ঞানের ধ্বংসাভাব (Dhvaṁsābhāva), যা জ্ঞান বিলীন হওয়ার পরবর্তী অবস্থাকে বোঝায়, অর্থাৎ জ্ঞানের ধ্বংসের ফলে সৃষ্ট অভাব।

এই উভয় প্রকারের অভাবই স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত এবং কালিক (সময়-নির্ভর) ধারণা। এগুলির একটি নির্দিষ্ট শুরু এবং শেষ আছে, বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি বীজ থেকে বৃক্ষ উৎপন্ন হওয়ার আগে বৃক্ষের প্রাগভাব থাকে, এবং বৃক্ষটি ধ্বংস হলে তার ধ্বংসাভাব হয়। অবিদ্যাকে কেবল এই সংজ্ঞায়িত ও কালিক অভাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা—এর গভীরতা ও অনাদিত্বকে খর্ব করে।

অবিদ্যাকে কেবল অনুপস্থিতির সাথে সমীকরণের অপ্রতুলতা ও অগ্রহণযোগ্যতা আরও বিশদভাবে তুলে ধরার জন্য, সিদ্ধান্তী অভাবের প্রতিষ্ঠিত বিভাগগুলি প্রবর্তন করেন। ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে (Nyāya–Vaiśeṣika) “অভাব” (অনুপস্থিতি, abhāva)-কে স্বতন্ত্র পদার্থ (padārtha) হিসেবে ধরা হয়, এবং এটি চার প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে:

১. প্রাগভাব (Prāgabhāva): কোনো বস্তুর উৎপত্তির পূর্ববর্তী অনুপস্থিতি। যেমন ঘট তৈরি হওয়ার আগে ঘটের অভাব।

২. প্রধ্বংসাভাব (Pradhvaṁsābhāva): কোনো বস্তুর বিনাশের পর তার অনুপস্থিতি। যেমন ঘট ভেঙে গেলে আর ঘট থাকে না, তখন ঘটের অভাব।

৩. অত্যন্তাভাব (Atyantābhāva): এক বস্তু অন্য বস্তুর মধ্যে কখনোই থাকবে না—এই ধ্রুব অনুপস্থিতি। যেমন “ঘটে কাপড় নেই” বা “গাছে ঘড়া নেই।”

৪. অন্যোন্যাভাব (Anyonyābhāva): দুই ভিন্ন বস্তুর পারস্পরিক ভিন্নতা। যেমন “ঘট কাপড় নয়,” “গাছ পাথর নয়।”

সিদ্ধান্তী এদের মধ্যে তিনটির উপর জোর দেন:

১. অন্যোন্যাভাব (Tadanyonyābhāvaṁ): এটি একটি বস্তুতে অন্যটির অনুপস্থিতিকে বোঝায়, অর্থাৎ একটি বস্তুর নিজস্ব সত্তা দ্বারা অন্য বস্তু থেকে পার্থক্য। যেমন, কাপড়ে ঘটের (পাত্রের) অনুপস্থিতি। কাপড়ের ধর্ম কাপড়, ঘটের ধর্ম ঘট। তারা একে অপরের থেকে ভিন্ন এবং একে অপরের মধ্যে থাকতে পারে না। এগুলি ভিন্ন সত্তা, যা একে অপরকে পারস্পরিকভাবে বর্জন করে। এই অভাব একটি পরিচায়ক অভাব, যা বস্তুর স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে।

২. অত্যন্তাভাবের একটি রূপ—তদ-বিরোধী তথা ‘তার বিপরীত’ (Tad-virodhi): এটি এমন কিছুকে বোঝায়, যা সহজাতভাবে অন্যটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা বিরোধী, অর্থাৎ এক সত্তার উপস্থিতি অন্য সত্তার উপস্থিতিকে বাতিল করে। যেমন, আলো ও অন্ধকার। যেখানে আলো থাকে, সেখানে অন্ধকার থাকতে পারে না এবং এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী। এরা একই স্থানে একই সময়ে সহাবস্থান করতে পারে না।

৩. অত্যন্তাভাবের আরেকটি রূপ—তদন্যাম তথা ’যা, তা ছাড়া অন্য কিছু’ (Tadanyam): এটি এমন যে-কোনো কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা প্রদত্ত সত্তা থেকে কেবলই ভিন্ন। এটি অন্যোন্যাভাব থেকে সূক্ষ্মভাবে পৃথক, যেখানে অন্যোন্যাভাব স্বাতন্ত্র্যকে জোর দেয়, সেখানে তদন্যাম কেবল ভেদাভেদ বোঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে, যদি 'ক' একটি বস্তু হয়, তবে 'ক' ছাড়া বাকি সব কিছুই 'তদন্যাম'।

সিদ্ধান্তী এরপর যুক্তি দেন যে, যদি অবিদ্যা কেবলই "জ্ঞানের অনুপস্থিতি (Vidyābhāvaḥ Avidyā)" হতো, তবে "অনির্বচনীয়ত্ব" (Anirvacanīyatvaṁ) বৈশিষ্ট্যটি অবিদ্যার জন্য সম্পূর্ণরূপে অনুপযুক্ত হতো। প্রতিপক্ষের যুক্তি হলো যে, "যা অনির্বচনীয় নয় (যেমন, ‘একটি পাত্রের অনুপস্থিতি’-র বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়)", তার দ্বারা বোঝানো হয়, অবিদ্যা যদি কেবল একটি অনুপস্থিতি হয়, তবে তা সম্পূর্ণরূপে সংজ্ঞায়িত করার যোগ্য হবে।

একটি পাত্রের অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা এবং বোঝা যেতে পারে—যেমন, "এখানে পাত্র নেই", যা একটি সুস্পষ্ট ও নির্বচনীয় বাক্য। একইভাবে, জ্ঞানের অনুপস্থিতিকেও জ্ঞান উপস্থিত না থাকার অবস্থা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। অতএব, যদি অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি হতো, তবে তা নিজেই "নির্বচনীয় (Nirvacanīyam)" হতো এবং এর মধ্যে কোনো অনির্বচনীয়তা থাকত না। আবার অদ্বৈত মতে, অবিদ্যা নির্বচনীয়, অর্থাৎ একে সৎ বা অসৎ কোনোভাবেই বলা যায় না। কিন্তু কেন? দেখা যাক।

অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যাকে বলা হয় অনির্বচনীয় (anirvacanīya) বা “নির্বচনীয় নয়”—অর্থাৎ, একে স্পষ্টরূপে সৎ (sat, সত্য/অস্তিত্ব) বা অসৎ (asat, অনস্তিত্ব) কোনোভাবেই নির্ধারণ করা যায় না।

১. অবিদ্যা সৎ নয়—যদি অবিদ্যা সৎ (অস্তিত্বশীল) হতো, তবে তার কখনও নাশ হতো না। কিন্তু অবিদ্যা জ্ঞান উদিত হলে নিবারিত হয়। তাই অবিদ্যাকে “সৎ” বলা যায় না।

২. অবিদ্যা অসৎ নয়—যদি অবিদ্যা একেবারেই অসৎ (শূন্য) হতো, তবে এর কোনো কার্যকারিতা থাকত না। অথচ আমরা দেখি, অবিদ্যা থেকেই জগতের অভিজ্ঞতা, ভ্রম, দুঃখ-সুখ ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। তাই একে ‘অসৎ’ও বলা যায় না।

৩. অবিদ্যা সৎ ও অসৎ উভয়ই নয়—কেউ যদি বলে, অবিদ্যা একইসাথে সৎ ও অসৎ, তবে সেটা যুক্তিগতভাবে অসম্ভব (এতে বিরোধ হবে)।

তাহলে অবিদ্যা কী? অদ্বৈত মত বলে: অবিদ্যা হলো অনির্বচনীয় (anirvacanīya)—এটি অস্তিত্বশূন্য নয় (কারণ কার্যক্ষমতা আছে), আবার চিরন্তন সত্যও নয় (কারণ জ্ঞান এলে বিলীন হয়)। এটি কেবল বৈভাবিক স্তরে (vyāvahārika satya) কার্যকর, কিন্তু পরমার্থত (pāramārthika satya) অস্বীকৃত।

শঙ্করাচার্য তিন ধরনের সত্যের কথা বলেছেন:

প্রাতিভাসিক সত্য (Prātibhāsika Satya)—ভ্রান্ত বা বিভ্রমজনিত সত্য (যেমন: শুক্তিতে রূপা দেখা, স্বপ্নে দেখা কোনো বস্তু)।

বৈভাবিক সত্য (Vyāvahārika Satya)—ব্যাবহারিক সত্য, যা আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতা ও লেনদেনে কার্যকর (যেমন: জগৎ, কর্ম, নৈতিকতা)।

পরমার্থিক সত্য (Pāramārthika Satya)—চূড়ান্ত সত্য: শুধু ব্রহ্মই সত্য, জগৎ মিথ্যা; আত্মা ও ব্রহ্ম অভিন্ন।

উদাহরণ দিই। স্বপ্নে-দেখা সিংহ: স্বপ্নের সময় সিংহ সত্যি বলে মনে হয়—প্রাতিভাসিক সত্য। জাগ্রত অবস্থায় সিংহ: বনে সিংহ দেখলে সেটি সত্য, ভয় জাগায়, শিকার করে—বৈভাবিক সত্য। পরমার্থত: ব্রহ্মজ্ঞানে বোঝা যায়—জগৎ (সিংহ-সহ) অবিদ্যাজনিত, তাই শেষ বিচারে সত্য নয়—পরমার্থিক সত্য।

অবিদ্যা নিয়ে বুঝতে স্বপ্নের হাতির উপমা দেওয়া যায়—ঘুমের মধ্যে হাতি দেখা যায়, এটি সত্য নয় (কারণ জেগে উঠলে হাতি নেই), আবার একেবারেই মিথ্যা নয় (কারণ ঘুমের মধ্যে অভিজ্ঞতা তো হয়েছিল)। একইভাবে অবিদ্যা—না পুরোপুরি সত্য, না পুরোপুরি মিথ্যা। অর্থাৎ, অবিদ্যা অনির্বচনীয়—এটি এমন এক শক্তি, যাকে “সৎ”, “অসৎ” বা “সৎ-অসৎ” কোনো শ্রেণিতেই সম্পূর্ণরূপে ফেলা যায় না।

অনুপস্থিতি বা বিরোধিতার দ্বিতীয় বিভাগটিতে এসে প্রতিপক্ষ হয়তো পরামর্শ দিতে পারে যে, অবিদ্যা হলো "জ্ঞানের বিপরীত (Vidyā-virodhi)"। সিদ্ধান্তী আবারও জোর দিয়ে বলেন যে, "যুক্তি তো তা-ও অনুসরণ করে না।" তাঁরা জ্ঞানের বিপরীত হিসেবে সাধারণত বোঝা যায়, এমন সত্তার উদাহরণ দেন, যেমন: