তাই, এই দুটি সূক্ষ্ম দিক, অনুষঙ্গ (হেতু ও সাধ্যের অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক) এবং পক্ষধর্মতা (হেতুর পক্ষে অবস্থান), উভয়ই কঠোর যৌক্তিক পরীক্ষা এবং গভীর দার্শনিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অনুমানের বৈধতার জন্য, হেতুর আধারত্ব এবং সাধ্যের আধারত্বের মধ্যে একটি সংগতিপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। যদি আত্মিক আধারত্বকে জগতের আধারত্বের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে সেই মানদণ্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে গভীর দার্শনিক বিশ্লেষণ অপরিহার্য, যাতে কোনো প্রকারের তারতম্য বা বিভ্রান্তি না ঘটে। এই দুটি দিকের যথার্থ উপলব্ধি ছাড়া কোনো দার্শনিক অনুমানই সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
এইভাবে ভেতরের সুতোগুলো স্পষ্ট করলে দেখা যায়, বক্তার মূল কৌশল হলো, ‘আধারত্ব’ নামক একটি বিস্তৃত বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে আত্মা ও জগতের মধ্যে একটি অনিবার্য সাদৃশ্য স্থাপন করা, তারপর সেই সাদৃশ্যের ওপর ভর করে জগৎকে তাত্ত্বিক-প্রমেয়তার আঙিনায় নিয়ে আসা। পরবর্তী পর্যায়ে সিদ্ধান্তী ঠিক এখানেই উপাধি (upādhi) দেখিয়ে সংশয় তোলেন—আত্মার ‘আধারত্ব’ ও জগতের ‘আধারত্ব’ এক ধরনের নয়; একটির সঙ্গে তত্ত্বাবেদন অনুপাধিভাবে যুক্ত, আর অন্যটির সঙ্গে তা শর্তসাপেক্ষ। কিন্তু সেই খণ্ডন আলোচনায় যাবার আগে, পাঁচ-অঙ্গের এই প্রস্তাবিত অনুমানটি—পক্ষ, সাধ্য, হেতু, দৃষ্টান্ত, উপনয় ও নিগমন—কীভাবে ধাপে ধাপে দাঁড়ায়, সেটিই ছিল এখানে বিশদে উন্মোচনের উদ্দেশ্য।
বক্তার যুক্তি শুরু হয় এক আপাত সরল ধারণা দিয়ে—আত্মা যেমন সমস্ত অভিজ্ঞতার আশ্রয় বা আধার, তেমনি জগৎও গুণ, ধর্ম ও ক্রিয়ার আধার। আকাশে রং, বায়ুতে গতি, জলে তরলতা—সব কিছুই যেন জগৎ নামক একটি বৃহৎ আধারে প্রতিষ্ঠিত। এই তুলনাটির মাধ্যমে বক্তা একটি গভীর সম্পর্ক (ব্যাপ্তি, vyāpti) স্থাপন করতে চান। তাঁর যুক্তি এইরূপ: যেখানে “আধারত্ব” আছে, সেখানে তত্ত্বাবেদন বা চূড়ান্ত বাস্তবতা রয়েছে। আত্মায় যেমন অভিজ্ঞতার আধারত্ব আছে এবং সে চূড়ান্ত সত্য, তেমনি জগতেও আধারত্ব আছে, সুতরাং জগৎও কোনো না কোনোভাবে চূড়ান্তভাবে সত্য। এর মাধ্যমে বক্তা মূলত অদ্বৈত বেদান্তের অবস্থানের বিরোধিতা করতে চান, যেখানে জগৎকে কেবল ব্যাবহারিক সত্য (vyāvahārika satya) বলে মানা হয়, কিন্তু চূড়ান্ত সত্য নয়।
কিন্তু সিদ্ধান্তী, অর্থাৎ অদ্বৈত দর্শনের প্রতিনিধি, এই যুক্তিকে এক বাক্যে ভেঙে দেন: “হেতুটি সোপাধিকম্”—অর্থাৎ প্রদত্ত কারণটি শর্তযুক্ত, নিঃশর্ত নয়।
এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের ভেতরে দার্শনিকভাবে এক বিপুল অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে আছে। এখানে উঠে আসে উপাধি (upādhi) নামক ধারণা, যা ভারতীয় যুক্তি-পরম্পরায় এক সূক্ষ্ম কিন্তু মৌলিক সত্য উদ্ঘাটন করে।
‘উপাধি’ মানে সেই অনুক্ত বা গোপন শর্ত, যার উপস্থিতিতে কোনো সম্পর্ক সত্য বলে মনে হয়, কিন্তু যার অনুপস্থিতিতে সম্পর্কটি ভেঙে যায়। এটি যুক্তির এক সূক্ষ্ম কলুষতা—যে-সম্পর্ক বাইরে থেকে সর্বজনীন বলে মনে হয়, আসলে তা নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায়ই সত্য। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলি—“যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে।” এটি দেখতে অনুপাধি সম্পর্ক বলে মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে তা সোপাধিক, কারণ এই সম্পর্কটি সত্য তখনই, যখন দাহ্য পদার্থে দহন চলছে। সেই দাহ্য পদার্থে দহনের শর্তটিই উপাধি। যদি ধোঁয়া বাষ্প বা ধূলা থেকে উৎপন্ন হয়, সেখানে আগুন থাকে না। অতএব, “ধোঁয়ার জন্য আগুন লাগবেই” অনুষঙ্গটি আসলে উপাধিসাপেক্ষ।
অদ্বৈত সিদ্ধান্তী এই ধারণাকে ব্যবহার করে বলেন, জগৎ ও আত্মার মধ্যে “আধারত্ব” নামক যে-মিলন দেখা যাচ্ছে, সেটিও সোপাধিক, নিঃশর্ত নয়। আত্মার আধারত্ব অনুপাধি—আত্মা নিজেই চৈতন্যময়, চিরন্তন ও স্বতঃসিদ্ধ। তার চেতনা কোনো অন্য কিছুর দ্বারা নির্ভরশীল নয়; সে নিরালম্ব (nirālamba)—অর্থাৎ যার কোনো বাহ্য আধার নেই। এই আধারত্ব চৈতন্যের নিজস্ব স্বরূপ, যার মধ্যে কোনো গোপন শর্ত নেই।
কিন্তু জগতের আধারত্ব ভিন্ন প্রকৃতির। জগৎ ধর্মের ধারক হলেও, সেই ধর্মগুলো চৈতন্যের প্রতিফলন মাত্র—নিজস্ব আলো নয়, ধার-করা দীপ্তি। জগতের আধারত্ব মায়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ, এবং সেইজন্য তার অস্তিত্ব সোপাধিক, অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষ। জগৎ গুণ, রূপ, রঙ, কর্ম ধারণ করে বটে, কিন্তু সেই ধারণক্ষমতা ব্রহ্মের প্রতিফলিত চৈতন্যের দ্বারা উদ্ভূত; নিজে থেকে নয়। আত্মার আধারত্ব তাই পারমার্থিক (pāramārthika), আর জগতের আধারত্ব কেবল ব্যাবহারিক (vyāvahārika)। একটির ভিত্তি চৈতন্যের অবিকৃত ঐক্য, আর অন্যটির ভিত্তি মায়ার ভ্রান্ত দ্বৈততা।
এই পার্থক্য বোঝার পর বক্তার স্থাপিত ব্যাপ্তি (vyāpti) ভেঙে যায়। কারণ ব্যাপ্তি তখনই টেকে, যখন হেতু (ধর্মিত্ব) সর্বত্র একই প্রকৃতির হয় এবং কোনো উপাধির দ্বারা সীমাবদ্ধ না থাকে। কিন্তু এখানে দেখা গেল, জগৎ ও আত্মার আধারত্ব একরকম নয়; একদিকে অনুপাধি, অন্যদিকে সোপাধিক। তাই বলা যায়—“যেখানে আধারত্ব আছে, সেখানে চূড়ান্ত সত্য আছে”—এই সম্পর্ক সর্বত্র খাটে না। জগৎ সেই ব্যতিক্রম, যেখানে আধারত্ব থাকলেও তা চূড়ান্ত বাস্তবতার লক্ষণ নয়।
এইভাবেই উপাধি ধারণাটি এক মৌলিক সত্য প্রকাশ করে—কোনো সম্পর্ক আপাতভাবে সর্বজনীন মনে হলেও, তার ভেতরে যদি শর্ত লুকিয়ে থাকে, তবে সেই সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন নয়। “সোপাধিক” সম্পর্ক মানে হলো শর্তাধীন বাস্তবতা, আর “নিরুপাধিক” সম্পর্ক মানে নিঃশর্ত সত্য। ব্রহ্ম-চৈতন্য অনন্ত, অনুপাধি ও নিরালম্ব; কিন্তু জগৎ সীমিত, সোপাধিক ও নির্ভরশীল।
ফলে জগতের বাস্তবতা চূড়ান্ত নয়—এটি অবিদ্যা-নির্ভর বাস্তবতা, যা জ্ঞান উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়। উপাধি-তত্ত্ব এখানে শুধু যুক্তিগত ব্যাখ্যা নয়, অস্তিত্বতাত্ত্বিক সত্যও বটে। এটি দেখায় যে, জগৎ ও আত্মার মিলন আপাত, এবং সেই আপাত মিলনের ভিতরেই নিহিত থাকে ভেদ। আত্মা স্বতঃসিদ্ধ, স্বয়ম্ভূ ও অনুপাধি; জগৎ মায়াসাপেক্ষ, সোপাধিক ও অনিত্য।
অতএব, উপাধি-তত্ত্বের আলোকে বোঝা যায়—অদ্বৈত বেদান্তের মূল দৃষ্টিভঙ্গি হলো, যেখানে উপাধি আছে, সেখানে আপাত সত্য; যেখানে উপাধি নেই, সেখানেই চূড়ান্ত সত্য। জগৎ উপাধিসাপেক্ষ বলে ব্যাবহারিকভাবে বাস্তব, কিন্তু আত্মা অনুপাধি বলে পরমার্থে একমাত্র সত্য। এইভাবেই এই ক্ষুদ্র শব্দ—“সোপাধিকম্”—অদ্বৈত দর্শনের অন্তর্নিহিত সমগ্র অস্তিত্বতত্ত্বকে আলোকিত করে।
অদ্বৈত দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তির অন্তর্নিহিত ত্রুটি উপাধি (Upādhi) বা কলুষিত শর্ত-এর কারণে উদ্ভূত হয়। সিদ্ধান্তীর ব্যাখ্যানুযায়ী, বক্তার স্থাপিত হেতু—“আধার হওয়ার গুণ (Dharmitva)”—প্রকৃত অর্থে শর্তহীন (anupādhika) নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট শর্তের উপস্থিতির উপর নির্ভরশীল, আর সেই শর্তটি হলো “আত্মা হওয়ার গুণ” (Ātmatvam)।
অর্থাৎ, আত্মা ও জগৎ—দুটিতেই “আধারত্ব” আছে বলে বক্তা যে-সমতা স্থাপন করতে চেয়েছেন, সেটি কেবল তখনই বৈধ, যখন সেই আধারত্ব আত্মাস্বরূপের মধ্যেই বিদ্যমান। কিন্তু জগৎ, যেহেতু অনাত্মা (anātma)—অচেতন, পরিবর্তনশীল ও অবিদ্যা-নির্ভর—তাহলে তার মধ্যে “আত্মা হওয়ার গুণ” অনুপস্থিত। ফলে “ধর্মিত্ব” নামক হেতু জগতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তী আসলে একটি গভীর যুক্তিগত তত্ত্ব তুলে ধরছেন—কোনো বৈশিষ্ট্য বা ধর্মের দ্বারা একটি সর্বজনীন নিয়ম স্থাপন করতে গেলে সেই ধর্মটি সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সমপ্রকার হতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্র (এখানে জগৎ) সেই ধর্মের অন্তর্নিহিত শর্ত (এখানে Ātmatvam) পূরণ না করে, তবে সেই ধর্ম আর সর্বজনীন থাকে না; এটি উপাধিসাপেক্ষ হয়ে যায়।
এখানেই নিহিত রয়েছে বক্তার মূল ভ্রান্তি। তিনি মনে করেছিলেন, “যেখানে ধর্মিত্ব আছে, সেখানে তত্ত্বাবেদন আছে” এই সম্পর্কটি নিঃশর্ত বা অনুপাধি। কিন্তু বাস্তবে এই সম্পর্কটি তখনই সত্য, যখন সেই ধর্মিত্ব আত্মাস্বরূপের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, এই অনুষঙ্গটি আসলে সোপাধিক—এর অন্তর্নিহিত শর্ত হলো “Ātmatvam”-এর উপস্থিতি। জগতে যেহেতু Ātmatvam নেই, সেহেতু হেতুটি সেখানে খাটে না।
ফলত, বক্তা শর্তযুক্ত সহাবস্থানকে শর্তহীন সহাবস্থান বলে ভুল করেছেন—এটাই তাঁর যুক্তিগত পতন। তিনি ভেবেছিলেন যে “আধারত্ব” সর্বত্র একই ধরনের; অথচ জগতে তা মায়াসৃষ্ট ও অনিত্য, আর আত্মায় তা অনন্ত ও স্বচৈতন।
দার্শনিকভাবে এর অর্থ এই যে, চূড়ান্ত বাস্তবতা (pāramārthika-sattā) আত্মার গুণ নয়—বরং আত্মাই সেই চূড়ান্ত বাস্তবতা। জগৎ, যেহেতু অনাত্মা ও পরিবর্তনশীল, তাই তার ধর্মগুলি (যেমন গুণধারণ, রূপ, গতি ইত্যাদি) আত্মার মতো চৈতন্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য নয়; বরং এগুলি আপাত বা ব্যাবহারিক (vyāvahārika) স্তরের।
অতএব, সিদ্ধান্তীর বক্তব্যে “Ātmatvam” হলো সেই কলুষিত শর্ত (upādhi), যা বক্তার অনুমানের বৈধতাকে নষ্ট করে দেয়। “যেখানে আধারত্ব আছে, সেখানে তত্ত্বাবেদন আছে”—এই ব্যাপ্তি তখনই টেকে, যখন আধারত্ব আত্মাস্বরূপের, অনাত্মাস্বরূপের নয়।
এভাবে উপাধি-চিহ্নিতকরণ কেবল যুক্তির ত্রুটি নির্ণয় নয়; এটি একটি গভীর অস্তিত্বতাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি। এটি দেখায় যে, জগৎ ও আত্মার সাদৃশ্য বাহ্যিক ও আপাত—চূড়ান্ত সত্যের আলোতে, আত্মাই অনুপাধি আধার, আর জগৎ তার মায়াসৃষ্ট প্রতিফলনমাত্র।
এখানে “উপাধি” যে কীভাবে যুক্তিটিকে কলুষিত করে, তা বুঝতে একবার প্রতীকীভাবে সম্পর্কগুলো সাজাই। ধরা যাক—H = ধর্মিত্ব (আধার হওয়ার গুণ), U = আত্মত্ব (Ātmatvam), S = তত্ত্বাবেদক-প্রমেয়তা (চূড়ান্ত সত্যের বিষয় হওয়া)। বক্তার প্রস্তাবিত অনুষঙ্গ ছিল: H থাকলে S থাকবেই—যেখানে আধারত্ব আছে, সেখানে তত্ত্বাবেদন আছে। সিদ্ধান্তী দেখালেন, আসলে টিকে থাকে যে-সম্পর্কটি, তা হলো: H-এর সাথে U যুক্ত হলেই S আসে; অর্থাৎ আধারত্ব থাকলেই নয়, আত্মত্ব যোগ হলে তবেই তত্ত্বাবেদন ঘটে। এখানেই উপাধি (U) ঢুকে পড়ে এবং অনুষঙ্গকে নিঃশর্ত থেকে শর্তযুক্ত করে দেয়।
এই আলোকে প্রথম ভাঙনটি বোঝা যায় “সাধনাভ্যাপকত্ব-হার” দ্বারা (Sādhanāvyāpakatvaṁ)। এর অর্থটি সহজ: উপাধি U হেতু H-কে সর্বত্র ব্যাপ্ত করে না—U, H-এর চেয়ে সংকীর্ণ। উদাহরণে, জগৎ H ধারণ করে—জগৎ নানা গুণ-ধর্মের আধার; কিন্তু জগতে U নেই—জগৎ অনাত্মা। ফলে এমন উদাহরণ পাওয়া গেল, যেখানে H সত্য, কিন্তু U মিথ্যা; সেখানেই S (তত্ত্বাবেদন)ও অনুপস্থিত। এই একটিমাত্র শ্রেণি (জগৎ) প্রমাণ করে দেয় যে, H একা S-কে টানে না; অতএব বক্তার ‘H থাকলে S থাকবেই’ অনুষঙ্গ ভেঙে পড়ে। যুক্তিবিদ্যার ভাষায়, হেতু-সাধ্য সম্পর্ক “উপাধি-নির্ভর”—হেতুতে যে-“সর্বজনীনতা” দেখানো হচ্ছিল, তা আসলে মুখোশ; বাস্তবে U নামের গোপন শর্ত উপস্থিত না থাকলে S আসে না। তাই বলা হয়, উপাধি “হেতুকে ব্যাপ্ত করে না”—কারণ U থাকেই H থাকলে, তবে U আর H এক নয়।
দ্বিতীয় ভাঙনটি ধরা পড়ে “সাধ্যব্যাপকত্ব” (Sādhya-vyāpakatvam) দিয়ে। এখানে দেখা গেল, S থাকলে U থাকবেই—যত বার কোনো সত্তাকে তত্ত্বাবেদক-প্রমেয় বলা যাবে, তত বারই তার মধ্যে আত্মত্ব থাকা চাই। অর্থাৎ, উপাধি U-ই সাধ্য S-কে ব্যাপ্ত করছে—S-র জন্য U একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এই ফলটি দার্শনিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: আত্মার চূড়ান্ত বাস্তবতা কেবল “আধার” হওয়ার কার্যতাত্ত্বিক অবস্থান থেকে আসে না; আসে তার স্বরূপগত, অনুপাধি, স্বপ্রকাশমান প্রকৃতি থেকে। যে-কারণে আত্মা অনুপাধি আধার, জগৎ সোপাধিক আধার। ফলত যে-কেউ S পেতে চাইলে তাকে U মেনে নিতেই হবে; কেবল H কখনোই যথেষ্ট নয়।
এই দুই দিক—একদিকে U হেতুকে ব্যাপ্ত করে না (U সংকীর্ণ; তাই H একা যথেষ্ট নয়), অন্যদিকে U সাধ্যকে ব্যাপ্ত করে (S ঘটলেই U ঘটতেই হবে)—মিলে বক্তার প্রস্তাবিত সর্বজনীন সহাবস্থানকে ভেঙে দেয়। অন্বয়–ব্যতিরেক পরীক্ষায়ও একই ছবি: আত্মায় H-U-S একত্রে (অন্বয়) সত্য; জগতে H আছে, U নেই, তাই S-ও নেই (ব্যতিরেক)। সুতরাং কার্যত টিকে যায় যে-নিয়ম, তা “H থাকলে S থাকবেই” নয়, বরং “U থাকলে S থাকবেই” (অথবা সর্বোচ্চ H আর U-এর মধ্যে যা যা অভিন্ন, তা থাকলে S থাকবেই); এখানে U-ই বাস্তব অনুষঙ্গের কুঞ্জি।