: পালিয়ে গিয়ে নিশ্চয়ই খুব ভালো আছ? একটা প্রশ্নের উত্তর খুব করে জানতে ইচ্ছে হয় আজও...নিজের কাছে থেকে পালাতে পেরেছিলে তো তুমি?
: তুমি যে এখনও আমায় ক্ষমা করতে পারোনি, এ কথা আমার অজানা নয়, নীড়।
: কাকে ক্ষমা করব? তোমাকে? তোমার জন্য জমিয়ে-রাখা অনুভূতির বিশ্বস্ততা সরিয়ে ফেলেছি বহুপথ আগেই।
: আজও আমায় তাচ্ছিল্য করবে, নীড়? তোমার সেদিনের অযাচিত আঘাত আমাকে এখনও ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে। কখনো খোঁজ নিয়ে জানতে চেয়েছিলে, আমি ভালো আছি কি না? আমি তোমার অপেক্ষায় থাকতে পারব না বুঝি?
: কেন এসেছ, তিথি? আবার আমায় ভেঙেচুরে দিতে? আর পারবে না! তোমার জন্য কোনো সময় আমার নেই।
: মিথ্যে কেন বলছ? পারলে আমার চোখে তাকিয়ে বলো। তাকাও আমার দিকে, নীড়।
: এসব কোরো না। আমি তোমার জন্য কখনও এতটা কষ্ট দিতে পারব না নিজেকে। তোমাকে আগেই বলেছি, আমার কাছে নিজের মনের শান্তি আর নিজেকে ভালো রাখা বেশি জরুরি। আমাকে বিরক্ত কোরো না।
: আজও ঠিক একই রকম থেকে গেলে তুমি, একটুও বদলাওনি। জানতে চাও, সেদিন কেন পালিয়ে গিয়েছিলাম?
: নাহ্, আজ না। না তোমার আমাকে জানানোর কোনো অধিকার আছে, না আমার শোনার।
: শুনতে তোমাকে হবেই। যে-মুহূর্তে জেনেছি, আমার সাথে থেকে নিজেকে ভালো রাখতে পারবে না তুমি, নিঃশব্দে সরে গিয়েছি তোমার জীবন থেকে।
: অনেকটা সময় ভালোবাসার অসুখে ভোগার পর বুঝেছিলাম, আমি আসলে তোমার মনের মতো কখনোই হতে পারব না। নিজেকে আঘাত করেও যে-অপারগতা আমার পিছু ছাড়েনি, তা নিয়ে কী করেই-বা ভালোবাসার দাবি নিয়ে বার বার তোমার সামনে এসে দাঁড়াতাম, বলো?
: তোমার সাথে খারাপ আচরণ করার দুঃখ এখনও আমার আছে, তিথি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমায় কখনও আমার জীবন থেকে চলে যেতে বলিনি। তোমাকে রোজ আমি আমার নিজের করে নিতে চেয়েছি, কেবলই তোমার চোখের মায়ায় আটকে থাকতে চেয়েছি, আর কিচ্ছু নয়। তুমি কি তা এক বারের জন্যও বুঝতে পারলে না? এতটা অবুঝ তো তুমি নও।
: যদি বলি, আমি নিজের থেকেও বেশি বুঝেছি শুধু তোমাকেই, তুমি কি তা মেনে নেবে? শুধু তোমার মতো আলোকিত মানুষের অস্তিত্বে আমার অন্ধকার সময়টার স্থায়িত্ব বাড়াতে চাইনি।
: আর কত ঘোরে জীবনটা কাটাবে, তিথি? এসব কেবলই বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাবার প্রয়াস মাত্র, বিশেষ কিছুই নয়। দূরত্বই যদি চাইতে, তবে তোমার নিখোঁজ আবেগের ভারটা আমার কাছে রেখে গিয়েছিলে কেন?
: তোমার সাথে আজ এতটা সময় পর এভাবে দেখা হয়ে যাবে, ভাবিনি।
: তোমার ভাবনার শেষটা জুড়ে আমায় আজও রেখেছ, বুঝি?
: কী মনে হয় তোমার?
: জানা নেই।
: আজ আমাদের দিনটা ভীষণ অন্যরকম হতে পারে, নীড়। তুমি অনুমান করতে পারছ?
: কীভাবে?
: আর কিছু সময় পরেই আমাকে ফিরে যেতে হবে।
: যাবার এত তাড়া? তবে সামনে এসেছ কেন? খুব বড়ো মানুষ হয়ে গিয়েছ বুঝি?
: কেন এভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলো, নীড়? আর একদমই তুচ্ছই আমি। আজও ঠিক আগের মতোই, যে শুধু তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসতেই পারে।
: তোমার অধিক ভালোবাসতে পারার আশ্চর্য রকমের ক্ষমতা আমাকে বার বার মুগ্ধ করেছে, তিথি। এ কথা অস্বীকার করবার সুযোগ তুমি কখনও রাখোনি। যা হোক, কী অন্যরকম হবে বলছিলে?
: এই মুহূর্তে সব অভিমান, অভিযোগ ভুলে কি আমায় একটা বার জড়িয়ে ধরতে পারো না, নীড়? আরও একবার ছুঁয়ে দেখো আমায়। সব বিবর্ণ স্মৃতির ভার আমি আর একা বয়ে নিতে পারছি না তোমায় ছাড়া। তোমাকে দেখার পর থেকে আমি আর নিজের ভেতরে নেই, তুমি কি বুঝতে পারছ, নীড়? আমার তোমার আলিঙ্গনে নিজেকে রাখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। খুব যন্ত্রণায় পুড়ে যাচ্ছে ভেতরটা।
: ক্ষণিকের মায়ায় আবার আমাকে বাঁধতে চাইছ?
: ভালো থেকো। দুঃখিত, তোমার সময় নষ্ট করার জন্য।
: কোথায় যাচ্ছো, পাগলি! আমার বুকের ভেতরটা না দেখেই চলে যাবে?
: কতদিন পর তুমি আমায় এত গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলে, নীড়! মনে হচ্ছে, এই জীবনটায় আমার আর কোনো অপূর্ণতা নেই।
: তোমাকে আর-একটা প্রহর এভাবে করে কাছে পাবার জন্য কত যে অপেক্ষায় থেকেছি, তা তুমি জানো না, তিথি। তোমার স্পর্শ আমার আত্মার ভেতরটা নিঃশেষ করে দেয়। বুঝতে পারছ, তুমি?
: ভালোবাসি।
: তোমার চোখে পানি দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না। কেঁদো না, তিথি।
: জানো, তোমাকে নিয়ে লিখব ভেবেছিলাম, কিন্তু পারিনি। তোমার স্পর্শ, তোমার ঘ্রাণ, তোমার দৃষ্টি ছাড়া তা একেবারেই অসম্ভব ছিল। আজ থেকে মনে হচ্ছে, আবার পারব। তোমাকে এতদিন শুধুই আমার অনুভূতির দেয়ালে বন্দি করে রেখেছিলাম।
: তোমার মতো এতটা শুদ্ধ অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ আমি আর কখনও দেখিনি।
: তুমিই তো আমি, এই আমি একান্তই তোমার।