অন্তর্মার্গ: ২



দু-জন একসাথে (ধীরে ধীরে আবৃত্তি): আমি ব্রহ্ম—এই অনুভবই আসল তীর্থ। সব সাধনা যখন থেমে যায়, তখন আত্মা নিজেই জেগে ওঠে… নামহীন, রূপহীন, কিন্তু অনন্ত জ্যোতিস্বরূপ।

কণ্ঠ ১ (বিষণ্ণ জিজ্ঞাসার সুরে): এই জগত... এই মাটি, জল, আকাশ—এদের জন্ম কোথা থেকে? আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, যদি চারপাশেই শূন্যতা?
কণ্ঠ ২ (ধীরে, দৃঢ়তায় আবৃত্তি): এ সবই অখণ্ড আনন্দের প্রকাশ। প্রতিটি কণা, প্রতিটি রশ্মি, প্রতিটি প্রতিধ্বনি—একই চৈতন্যের ছায়া মাত্র।
কণ্ঠ ১ (একটু চমকে উঠে, দৃষ্টি প্রসারিত করে): তাহলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব—এরা? আমার শরীর, মন, জ্ঞান—সবই কি এই এক চৈতন্য?
কণ্ঠ ২ (শান্ত আত্মবিশ্বাসে): হ্যাঁ। শরীর-মন, সুখ-দুঃখ, গুরু-শিষ্য, জন্ম-মৃত্যু, দিবা-রাত্রি—সবই সেই চৈতন্যের বিভঙ্গ। তুমি যা, সেটাই চূড়ান্ত সত্য। বাকি সবই শুধু মুখোশ।
কণ্ঠ ১ (কিছুটা বিস্ময়ে, কিছুটা বিশ্বাসে): আমি তো ক্ষুদ্র, জড়, সীমিত! কীভাবে আমি সেই অনন্ত?
কণ্ঠ ২ (স্নেহময় উচ্চারণে): কারণ ‘তুমি’ বলে কিছু নেই—‘আমি’ বলাটাই আসল বদ্ধতা। যেখানে ভাবনার অবসান, সেখানেই তুমি—চিরঞ্জীব, অচল, নির্বিকার।
কণ্ঠ ১ (গভীর উপলব্ধিতে কাঁপা কণ্ঠ): তবে এই পাঁচভূত? এই সম্পর্ক, এই প্রেম? সবই কি তবে বিভ্রম?
কণ্ঠ ২ (নিরপেক্ষ সুরে, শান্তস্বরে): যতক্ষণ তুমি ভাবছ—‘আমি এই দেহ’, ততক্ষণ সব কিছুই সত্যের মতোই অনুভব হবে। কিন্তু বাস্তবতা একটাই—চৈতন্য ছাড়া কিছু নেই।

দু-জন একসাথে (ধীরে ধীরে, গভীর মর্মস্পর্শী সুরে): এ-ই আমি—না ক্ষুদ্র, না বৃহৎ। না জন্ম, না মৃত্যু। আমি সে-ই, যার কোনো নাম নেই, রূপ নেই। আমি পরম আনন্দ, নিঃশব্দ চৈতন্য। এক আমি ছাড়া আর কিছু নেই।

কণ্ঠ ১ (হতচকিত প্রশ্নে ভরা কণ্ঠ): আমি যা দেখি… শুনি… স্পর্শ করি—সবই কি এক বিভ্রম? এই দেহ, এই মন—এরা কি শূন্যেরই রূপ?
কণ্ঠ ২ (অচঞ্চল, নির্বিকার স্বরে; ধীরে, নিঃসীম নিশ্চয়তায়): হ্যাঁ… এই জগৎ হরিণের শিঙের মতোই অদৃশ্য—না ছিল, না আছে, না থাকবে।
কণ্ঠ ১ (মিশ্র দ্বিধা ও বিস্ময়ে): তবে দেহ, ইন্দ্রিয়, কর্ম, ধর্ম? তীর্থ, তপস্যা, গুরু, ঈশ্বর? তোমার ভাষায়—এ-ও কি মিথ্যা?
কণ্ঠ ২ (গভীর মৌনভাব থেকে উঠে আসে কণ্ঠস্বর): সবই মিথ্যা—শ্রবণ, মনন, ধ্যান, সিদ্ধি, শক্তি—যতই জ্বলুক বহির্বাহু, সবই বিভ্রমের আলোকছায়া। যা দৃশ্যমান, যা ধৃত—সবই কল্পনা।
কণ্ঠ ১ (যেন আকুল হয়ে): তবে কি কিছুই নেই? সবই অসত্য? তুমি কি বলছ—ঈশ্বরও স্বপ্ন?
কণ্ঠ ২ (ধীর, অথচ মর্মভেদী সত্যপ্রকাশের ভঙ্গিতে): না ঈশ্বর, না জ্ঞান, না পাপ, না পুণ্য। না সংসার, না মুক্তি। যা-কিছু দুইয়ের বোধ আনে, তা-ই বিভ্রম।