ভাবনা: সাতশো আট ............................................................... এক। দেখো, হঠাৎ একদিন তোমার সামনে আসব। সেদিন, বিনা কারণেই, কোনও-না-কোনও কথার অজুহাতে, আমার দিকে তাকাবে তুমি,...অনেক কৌতূহল নিয়ে, মনে রেখো! যদি তুমি বদলেও যাও, তবুও আমি আবার আমার মতো করে তোমাকে বানিয়ে নেবো। শুধু তোমার জন্যই একদিন ঠিকই ফিরে আসব। মনে রেখো! দুই। ঝগড়া করাও একটা আর্ট, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয় আরকি। নিচের দুইভাবের যে-কোনও একভাবে করলে সেটাকে আর্ট বলব আমি: ১. একদম চুপ করে থেকে ঝগড়া করা, মানে ওপাশ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন, কোনও উত্তর দেওয়া যাবে না। কারণ ওপাশের মানুষটার হুদাই ভ্যাজরভ্যাজর করার স্বভাব থাকতে পারে, এরকম স্বভাবের মানুষ শুধু চেঁচামেচি করে বাড়ি বা মহল্লা মাথায় তুলতে পারলেই জিতে যায়। তাই আমার মনে হয়, এদের আত্মতৃপ্ত হবার সুযোগ দিয়ে জিতিয়ে দেয়াই ভালো! হি হি হি। তবে বাবা, মা কিংবা বয়সে বড়ো বা ছোটো কোনও শ্রদ্ধেয় মানুষের ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাটাই নিয়ম। তাদেরকে প্রত্যুত্তর দিয়ে ছোটো করলে তো নিজেকেই ছোটো করা হয়। ২. যুক্তির বিপরীতে পালটা যুক্তি দেওয়া, কোনও খোঁড়া যুক্তি না, যেখানে যে পয়েন্ট বলতে হবে, সেখানে ঠিক সেটাই বলতে পারা, মানে পরীক্ষার খাতার মতন আরকি। সঠিক যুক্তিতর্ক এইজন্য দেখানো যে, এই ঝগড়ার পর তার সাথে হয় আপনি আপনার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন, নাহয় তাকে জীবন থেকে বিদায় করে দেবেন, সেজন্য এখানে খুব বেশি নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। আর খোঁড়া যুক্তি কোনটা? যেমন ধরুন, আপনার শিক্ষক আপনাকে বললেন, ‘তুমি যে কলেজের নাম করে ঘুরে বেড়াও, এটা বাসায় জানে?’ এটার উত্তরে আপনি সামনাসামনি কিংবা মনে মনেই বললেন, ‘আপনি যে একসাথে দুটো প্রেম করেন, সেটাও তো কেউ জানে না।‘ (এখনকার আলট্রামডার্ন স্মার্ট স্টুডেন্টরা অবশ্য শিক্ষকের মুখের উপরেই কথা বলে!) এটাকে বলে খোঁড়া যুক্তি। আমিও খোঁড়া যুক্তি দিতাম ছেলেবেলায়, তবে মনে মনে, মুখটা ঢ্যাঁড়শের মতন করে রেখে। এসব ঝগড়াঝাঁটি ছোটবেলাতেই মানানসই। বড়ো হবার পরে আর এসব করতে হয় না। যারা ভ্যাজরভ্যাজর করে আর খোঁড়া যুক্তি দেয়, তাদের জন্য কেউ নতুন ধরনের একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল বানিয়ে দিলে তাদের খুব উপকার হতো---তাদের যে কথা বলার মানুষের ভীষণ অভাব! তিন। একটা সময় একজনকে অনেক ভালোবাসতাম। এমনই পাগলের মতো যে, তার অবহেলা আর প্রতারণার জন্য সুইসাইড পর্যন্ত করতে চেয়েছি! আজ এতগুলো বছর পর সেই মানুষটাই আমার ভালোবাসা পেতে বার বার রিকোয়েস্ট করে যাচ্ছে। কিন্তু আজ তার সেই সেদিনের অবহেলা তাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি। প্রকৃতি কখনওই অবিচার করে না, কৃতকর্মের প্রতিদান সবাই-ই পায়। যে আমাকে ভালোবাসে না জেনে একদিন কষ্ট পেয়েছি, আজ সেই মানুষটাই আমি তাকে আর ভালোবাসি না জেনে কষ্ট পাচ্ছে। এতগুলো বছর পর হলেও হিসাব ঠিকই বরাবর হয়ে গেল, তাই না? চার। কারও সাথে বা কারও সামনে অনর্গল বকে যাই যখন, তখন যা যা বলতে পারি না, কিংবা যা যা বলাটা অসংগত বলে মনে হয় ওই মুহূর্তে, ওরকম কিছু জিনিস আমি লিখে ফেলি বা লিখে ফেলার চেষ্টা করি। এইসব গোপনীয় কিছু নয়, তবে এইসব এমন কিছু, যা লোকে না বুঝেও বুঝেছে ভেবে আমাকে জাজ করতে বসবে। এই জগতে অন্যকে জাজ করে তিন ধরনের মানুষ: শিক্ষক। বিচারক। অপদার্থ। প্রথম দুই ধরনের মানুষ শ্রদ্ধেয়, কেননা ওটাই ওঁদের পেশা। তৃতীয় ধরনের মানুষ কেমন? নামেই তো ওদের পরিচয়! ওটাই ওদের নেশা! এই নেশার কারণ বেকারত্ব নয়, মানসিক দৈন্য। যা বোঝার আদৌ কোনও দরকার নেই, যখন আমরা তা-ও বুঝতে চাই, চেষ্টা করি, তখনই বাধে বিপত্তিটা। সবার মস্তিষ্কের দৌড় সমান নয়। কিছু জিনিস থাকে, যা না-বুঝে বুঝতে নেই। ওতে ক্ষতি হয়, নিজের মূর্খতাকে প্রমোট করা হয়। গাধার প্রধান দুর্বলতাটা কোথায়, জানেন? সে বুঝতেই পারে না, সে যদি মুখটা খোলেও, তা-ও দামি কিছু বেরোয় না, সেটা শেষঅবধি গাধার ডাকই থেকে যায়। নিজের নামটা অন্যদের মুখে শোনার লোভটা সংবরণ করতে না পেরে সে ডাকটা দিয়েই দেয়, আর লোকে যথারীতি বলে---গাধার বাচ্চা গাধাটা চেঁচায় কেমন, দ্যাখো! এমনিই একটা কথা বলি, কেমন? এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, যাদের কারণে লোকে স্ত্রীর ছোটো ভাই বাদেও আরও কাউকে কাউকে 'শালা' শব্দটা ব্যবহার করে ডাকতে পারে। পাঁচ। মানুষ মৃতদের সহ্য করতে পারে না, কেবল মৃতদের স্মৃতি সহ্য করতে পারে। মৃত্যুর পর আমরা অসহনীয় হয়ে উঠি, উঠবই। তাই 'আমাকে দেখতে কেমন দেখাচ্ছে', তা মাথায় রাখার চাইতে 'আমার কাজগুলিকে দেখতে কেমন দেখাচ্ছে', এটা মাথায় রাখাটা বেশি জরুরি। ছয়। মনের বিচার? ...সে তো কেবল মনের মালিকই জানেন! তোমায় ভুলে থাকতে পারি না, একটুও দূরে রাখতে পারি না, ছেড়ে থাকতে তো পারি না ভুলেও! অথচ একধরনের বাধ্যতা থেকেই সব কিছু ভুলে থাকতে চেষ্টা করি, আর করেই যাই শুধু... কোনও ফলই হবে না, জানি যদিও! আমার মতন একটা অপদার্থ কেন যে এসেছি এ পৃথিবীতে, সেটাই মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে ঠিক পারি না! সাত। তোমায় দেখি, তোমার মানুষটাকে দেখি। আমায় দেখি, আমার শূন্যতাকে দেখি। ভালো থেকো; মানুষটা তোমায় ভালো রাখুক, ঈশ্বর মানুষটাকে ভালো রাখুক। আমি আছি তোমার আশেপাশেই। কখনও গল্পে, কখনও কবিতায়। কখনওবা জলের কয়েক ফোঁটা বিন্দুতে। আমি আছি তোমার যতটুকু বাইরে, তারও বেশি ভেতরে। কখনও কাঁদতে ইচ্ছে হলে আমায় খুঁজে নিয়ো, কেমন? আট। দোষ করতে করতে মানুষ যতটা নিজেকে শেষ করে দেয়, তার চাইতে অনেক বেশি শেষ করে দেয় নিজের দোষগুলি ঢাকতে ঢাকতে। যে নিজের দোষগুলিকে দোষ হিসেবে মানতেই পারে না, তার সাথে বন্ধুত্ব কিংবা অন্য যে-কোনও সম্পর্ক রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। ভাবনা: সাতশো নয় ............................................................... এক। তোমার সম্মান মানেই তো আমার সম্মান! কিন্তু আমার সম্মান মানেই কি তোমার সম্মান? ---এই সংশয়ে থাকতে থাকতে তোমার কাছে যাবার সাহসটাই আর করে উঠতে পারলাম না এখন অবধি! দুই। Remember, everyone is available for you only when you are ready to pay the price they want, or they deserve. Be out of the concept that price is paid through only money. A good relationship with someone can buy many things that money cannot buy. First, be that precious person, the rest will follow automatically, don't worry! তিন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে, সব থেকে বড়ো কথা, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার পৃথিবীর সব কিছুর চাইতে বেশি ভালোবাসি। এতদিন প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তোমাকে আঘাত করে করে যা-কিছু আমি বলেছি, তার একটাও আমার হৃদয়ের কথা ছিল না। প্রতি বার যা-কিছু বলতে গেছি, সবসময় আমার ভেতরটা এক কথা বলেছে, কিন্তু আমি তার বিপরীতে চলেছি। আমি আমার হৃদয়ের বিরুদ্ধে আমার স্রষ্টার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত করেছি, যা আমি আমার পুরো জীবনের কোনও কিছুর বিনিময়েও মন থেকে মুছে ফেলতে পারব না। কথার তীরে মানুষকে মেরেও ফেলা যায়, ওতে মানুষের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত স্রষ্টাকে কষ্ট দেওয়া হয়, আমি জানি; কিন্তু জীবনের কঠিন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আমিই সে জ্ঞানকেই কাজে লাগাতে পারিনি। তোমাকে করা প্রতিটি আঘাত তোমার চাইতে বেশি ক্ষতবিক্ষত আমাকে করেছে, যা তোমার পক্ষেও হয়তো কোনওভাবেই বোঝা সম্ভব না, কেননা প্রত্যেকের নিজের ভালোবাসা কেবল সে-ই অনুভব করতে পারে। যা-কিছু বলে ফেলেছি, সেইসব কিছু, সারাজীবন এর দ্বিগুণের চাইতে বেশি ভালোবাসার সুযোগ পেলেও, এর চাইতে বেশি ভালোবেসেও, সেইসব দাগ আমি তুলতে পারব না কখনওই। এই ক্ষত আমি সারাতে পারব না, আমি জানি। তুমি যেখানে যেভাবেই থাকো, সব অবস্থায় ভালো থাকো, সুস্থ আর খুশি থাকো। তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমার দেওয়া, তোমার সহ্য-করা প্রতিটি আঘাতের বিনিময়ে হলেও, সুন্দর হোক; সবসময় তোমার জন্য সেই প্রার্থনা হৃদয়ের মধ্য থেকেই থাকবে। আমি আমার সারাজীবনেও এতটা ঘৃণ্য, নীচ ব্যবহার আর কারও সাথেই করিনি, কিন্তু যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, তাকেই সব থেকে বেশি আঘাত করে গেলাম। তুমি আমাকে কখনও ক্ষমা কোরো না। আমি তোকেই ভালোবাসি, প্রতিদিন, যুগে যুগে, জন্মজন্মান্তরে। শেষ কিংবা অশেষ, পূর্ণতা কিংবা শূন্যতা, অথবা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি---সব কিছুরই চিরদ্বিধাদ্বন্দ্বে। আমি তোকেই ভালোবাসি, প্রিয়, কারণে কিংবা অকারণে। প্রয়োজন কিবা অপ্রয়োজনের সাতকাহনে, শব্দ কিংবা শব্দহীনতার মৌনযাপনে। আমি তোমাকেই ভালোবাসি, প্রিয়,…তখনও, এখনও, এবং আজন্মই! চার। হে প্রভু! প্রতিটি কথাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে রাখার বিরল ক্ষমতাটি মেয়েদের দিলেই যদি, কেন ছেলেদের একই কথা দ্বিতীয় বার বলবার সময় আগের মতোই একইভাবে বলবার ক্ষমতাটুকু দিলে না তুমি? কেন ছেলেরা একই কথা, সকালবেলায় একটা বলে, বিকেল হলেই আরেক বলে, রাত নামলেই বলতে থাকে অন্য কথা...বিন্দুমাত্রও দোষ না করেও? খুঁটিনাটি ভুলটুকুও ক্ষমা করার হৃদয় কেন দিলে না মেয়েদের? কেন সত্যটুকু বলবার সময় ভয়ে, আশঙ্কায়, সংশয়ে মিথ্যের মতো করে বলতেই হয় ছেলেদের, কোনও স্বার্থ ছাড়াই? কেন ছেলেদের চোখের ভাষা আর ঠোঁটের ভাষা দুই হয়ে যায় মেয়েদের ভয়ে? কেন মেয়েদের জেরার ঠ্যালায় পুরুষমানুষ ছাগলকেও হরিণ বলে? আর মেয়েরা চাইলেই, পুরুষ, হরিণকেই ছাগল বানায় হাসিমুখেই? ছেলে মাত্রই ধরা কেন খায়...বিনা কারণেই, বিনা পাপেই, বিনা লাভেই...শুধুই মনের ভয়ে? চোর-পুলিশের খেলায় কেন চোর ছেলেরাই আর মেয়েরা পুলিশ? কেন কেন কেন??? হোয়াই দিস কলাভেরি কলাভেরি কলাভেরি ডি? পাঁচ। তোমার কপালে চুমুটা খেতে চাইলে, হয় আমাকে কোনও টুল কিংবা পিঁড়ির উপরে উঠে দাঁড়াতে হয়, না হয় তোমার পায়ের উপর ভর করে আমি দাঁড়াই। এর পরে তুমি খানিকটা নিচু হলে আমার ঠোঁট তোমার কপাল স্পর্শ করতে পারে। কী একটা লজ্জার কথা! তোমার পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে তোমাকেই নিচু হতে বাধ্য করছি! ভালোবাসার জন্য যে ওরকম একটু আধটু খাটো হতে জানতেই হয় গো! তোমার কপালে চুমু খেয়ে বোঝাতে চেয়েছি যে, শুধু তোমার কামনাসিক্ত ঠোঁটজোড়াই নয়, তোমার কপাল কিংবা চোখজোড়াও আমার কাছে অনেক দামি। জানি না কতটা কী বোঝাতে পেরেছি তোমাকে। আমি জানি না ওসব কাকে উদ্দেশ করে লেখা, আর যাই হোক, আমাকে উদ্দেশ করে লেখার কথা না, আমি ওসব প্রত্যাশাও করি না, পছন্দও করি না। আমি একটু পণ্ডিতি করি বেশি, সেটা তো তুমিও জানো। তাই, যদি আমাকে লিখতে, আমার উত্তরটা হতো এরকম, আমি উচ্চতায় খাটো না, কিন্তু তুমি একটু বেশি লম্বা হয়েই ঝামেলাটা বাধিয়েছ। তোমার মতন নচ্ছারকে সামলে রাখা বিশাল কঠিন একটা ব্যাপার! বিশ্বাস না হলে আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখো। তবুও সামলে চলার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। আমিও তোমার মতোই এটাই বলতে চাই যে, তুমি ভালোবাসলে কি না, আমারও সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই, আমি একতরফা ভালোবাসার ক্ষেত্রে বিশাল রকমের পটু। আমিও যদি ‘সহমত, ভাই!’ কিংবা তোমার লেখা না পড়েই, ‘আপনি যা-ই লিখেন, দারুণ হয়, কোনও ভুল পাই না!’ অথবা তোমার আবেগমিশ্রিত কোনও প্রেমের কবিতার কমেন্টে গিয়ে ‘আপনি আমার জীবনের মোটিভেশন, ভাই!’ এরকম করে বলা লোকদের মধ্যেই পড়তাম, আর তাদের মধ্যে থেকেই তোমাকে ভালোবাসতাম, তবে এতদিনে নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে যেতাম, কিংবা একটা ভালো চাকরি পেলে পালিয়ে যেতাম। ওই দলে নেই বলেই তোমাকে নিয়ে আমি সেইসময়েও ভাবি, যেই সময়টায় পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে..., এই তো গত রাতেও ভেবেছি। ওসব মিথ্যে আবেগ-প্রদর্শন আমার বোধে সত্যি হলে কখনওই তোমার ছোটোখাটো ভুলগুলো আমার চোখে পড়ত না। আর লজিকের কথা বললে? হা হা হা…আমি আমার লজিক্যাল পার্টটাই তোমাকে দেখিয়েছি। আমার ইমোশনাল পার্টটা আমি লুকিয়েই রাখি। আমি নিজেই তো নিজের আবেগে ডুবে যাই প্রায় প্রায়ই, তাই বলে তোমাকেও সাথে করে ডোবাব? তা হয় না। আরও অনেক অনেক কিছুই বলার ছিল, কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে আমার গলাবাজি করতে মোটেও ভালো লাগে না, তাই থেমে গেলাম। তুমি ভালো থেকো, প্রিয়তম। আমি যে এতটা ভালোবাসি, তা আর কবে বুঝবে তুমি? ছয়। ভালো মানুষ সবসময়ই সত্যের পক্ষে। ভালো প্রেমিক সবসময়ই প্রেমিকার পক্ষে। ভালো প্রেমিকা সবসময়ই ভালো প্রেমিকের পক্ষে। সাত। যে ব্যক্তি প্রশংসা পাবার যোগ্য নয়, তার প্রশংসা করার নাম তোষামোদ। যে ব্যক্তি প্রশংসা পাবার যোগ্য, তার প্রশংসা না-করার নাম ঈর্ষা। ভাবনা: সাতশো দশ ............................................................... এক। বাবু রে, তুমি মগজের মধ্যে ভালো করে সেট করে নিয়ো যে তোমাকে আমি ভালোবাসি। আর এতটা ভালোবাসি যে তোমার সাতজনম কেটে যাবে, তা-ও এই ভালোবাসা শেষ হবে না! এর মানে কিন্তু এটা নয়, আমার এ ভালোবাসার বিনিময়ে তোমাকেও ভালোবাসতে হবে। আমি ভালোবাসি তো ভালোবাসিই! কিছু পাবার আশা আমি করিনি। তুমি ভালো আছ, এটা দূর থেকে দেখলেই আমি ভালো থাকব। আর আমার একটা সমস্যাটা হলো, আমি লোকালবাস হতে পারি না। সহজে কাউকে ভালোবাসতে পারি না, তার চেয়ে বরং একা থাকতে ভালোবাসি। কাউকে একবার ভালোবাসলে মন থেকে সরাতে আর পারি না। আমাকে এরকম একঘেয়ে টাইপের মনে হবে সবার কাছেই, বার বারই মনে হবে। তাই আমাকে কেউ সামলে রাখতে পারবে না এই পৃথিবীতে। তাই আমি এমনই একা থাকব, তুমি শিওর থেকো। তুমি আমায় ভালোবাসো না, এটা তোমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছে। হয়তো তুমি মাঝেমধ্যে ভাবো, আমি কে? কী? কোথা থেকে এসেছি? শুধু শুধু বক বক করছি, অর্থই তো নেই কোনও এই কথাগুলোর! হ্যাঁ, তুমি এ-ও বলতে পারো, তুমি তো ভালোবাসার মতোই একজন মানুষ, তোমাকে অনেকেই ভালোবাসে, আমিও সে দলের একজন। আমি জানি, তুমি এমনটাই ভাবো, কারণ তুমি তো সব কিছু লজিক দিয়েই ভাবো! তুমি আমার এমন ইমোশনাল কথাবার্তা শুনেও কিছুই বুঝবে না আমাকে। যা-ই হোক, ভালো থেকো! দুই। পুরুষমানুষ এক নিজের বউ বাদে আর কিছুকেই পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারে না। নিজের অজান্তেই, ফিরে ফিরে যায়... ফিরে ফিরে চায়...বারে বারে আনে...বারে বারে টানে! এলে টান, ধরে ভান, ভুলে মান, ... পুরুষের জান! প্রেমিকার ঠোঁট, সিগ্রেটের ফোঁক, হুইস্কির জোট, পুরুষের ঝোঁক! ---হয় না এসব বাসি, পুরুষ গেলেও কাশী! তিন। আমি সাধারণত তার সাথেই প্রতিযোগিতায় যাই, যার উচ্চতা আমার উচ্চতার চেয়ে কম, যার গায়ের রং আমার গায়ের রঙের চেয়ে একটু হলেও ময়লা, যে বংশমর্যাদায় আমার থেকে পিছিয়ে, কিংবা কিছু কাগজপত্র বা সার্টিফিকেট যার তুলনায় আমার কাছে বেশি আছে। আমি সবসময় তাদের সাথেই প্রতিযোগিতায় যাই। আমি কখনওই এটা মাথায় রাখি না যে, উচ্চতা, গায়ের রং কিংবা বংশপরিচয়, এসব আমার হাতেই ছিল না, আর সার্টিফিকেটগুলোও পেয়েছি বাবার সচ্ছলতার সুবাদে। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? হ্যাঁ, ঠিকই, এগুলোর একটাও আমার নিজের অর্জন না। তবুও যে আমার চেয়ে উচ্চতায় খাটো, তাকে অন্য সবার মতনই আমি খাটো করে দেখি, আর যার গায়ের রং ময়লা, তাকে আমি কালো বলতে কখনওই ছাড়ি না, এটাও বলি, ‘ও, তুমি ওই জাতের? সেজন্যই তো তুমি এমন!’ অথবা, ‘তুমি কী এমন পড়াশোনা করেছ যে আমাকে শেখাবে?’ আমি এসব বলে, এভাবে বেঁচেই তৃপ্তি পাই, কারণ এগুলো করাই হচ্ছে সহজ, আলাদা করে কোনও ব্রেইন খরচ করতে হয় না ওরকম করতে। যারা ভালো আর বড়ো মনের মানুষ, আমি তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা তো দূরে থাক, তাদের সাথে একই রাস্তায় হাঁটিও না। নিজেকে প্রতিদিনই এটা সেটা শিখিয়ে, নিজের কামনা, বাসনা, লোভ, হিংসা, অহংকারের সাথে যুদ্ধ করে করে, নিজেকে রোজ রোজ ঘষে মেজে ঠিকঠাক করতে যাবেটা কে? আমি কি পাগলা কুকুরের কামড় খেয়েছি যে নিজের হামবড়ো ভাবটা দেখানোর এত শর্টকাট থাকতেও ওরকম কঠিন পথ ধরে সারাটা জীবন হেঁটে যাব? চার। যারা কখনও ঘোড়া দেখেনি, তাদের কাছে এসে ছাগল নিজেকে ঘোড়া হিসেবে পরিচয় দিলে তারা সেটাই বিশ্বাস করে এবং ছাগলকে ঘোড়া ভেবেই লাফায়। আর যাদের ঘোড়া দেখা শেষ, তারা ছাগলকে ছাগলই বলে, ঘোড়া কখনও বলে না। পাঁচ। যার উপর আপনার হুটহাট রাগ বা অভিমান হয় না, আবার কখনও তার উপর রাগ হলে, তার মায়াবী একটা হাসি দেখে কিংবা তার মুখের কিছু কথা শুনে টুপ করে সেই রাগ উধাও হয়েও যায় না, ট্রাস্ট মি, সে আপনার তেমন কিছুই হয় না। সে সম্পর্কে যে-ই হোক, তার থাকা না থাকা আপনার লাইফের জন্য খুব জরুরি কিছু না। আবার এমন একজনও থাকে, যার উপর হুট করেই আপনার রাগ হবে, যেখানে রাগ করার কোনও কারণই নেই! আবার কখনওবা, অভিমানে মন ভারী হয়ে উঠবে এতটাই যে, আপনি নিশ্চুপ হয়ে যাবেন। মনে হবে, ‘এই কাজটা সে এভাবে করলেও পারত।’ কিংবা ‘এই কথাটা সে আমাকে বলে দিলেও হতো।’ কিছুটা সময় গড়াবে, তারপর আবার যা হবার, তা-ই হবে। আপনি কী কারণে রাগ করেছিলেন, সেটাও ভুলে যাবেন, আবার কেন রাগ তুলে নিয়েছেন, সেটাও ভুলে যাবেন। কিছুক্ষণ আগেই যার চুল ছিঁড়তে চেয়েছেন, ‘তাকে কেন ওসব বলতে গেলাম?’ ভেবে এখন নিজেরই চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করবে। তার চেহারা দেখলেই ভুলে যাবেন যে, ‘আরে, আমি তো ওর উপর রেগে ছিলাম!’ খুব মায়া হবে, আরও বেশি করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে মানুষটাকে। অবশ্য, সবসময় চেহারা দেখে না, বেশিরভাগ সময় আমরা সেই মানুষটির অনুপস্থিতিতে তাকে নিয়ে এরকম করে বেশি ভাবি। অনুপস্থিত একজন মানুষের জন্য এরকম অনুভূতির অদৃশ্য উপস্থিতিকে আমার কাছে ম্যাজিক বলে মনে হয়। অথচ যে মানুষটা উপস্থিত, মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধানেই যার সাথে দাঁড়িয়ে আছি, তাকে নিয়ে আমি কিছুই ভাবতে পারছি না! মন রে মন, এটা তোর কেমন খেলা? এসব মনের খেলা বড়ো বড়ো মন-বিশারদরাই কেউ ধরতে পারেন না, আর আমি আপনি তো ডালভাত! ছয়। অনুপ্রেরণা দিয়ে তেমন কিছুই হয় না, যতক্ষণ না আপনি নিজে কাজটি শুরু করছেন এবং শত প্রতিকূলতার মধ্যেও করে যাচ্ছেনই! ভাবনা: সাতশো এগারো ............................................................... এক। অনুভূতি বড়োই অদ্ভুত এক জিনিস। বলা নেই, কওয়া নেই, উড়ে এসে জুড়ে বসে। হয়তো খুব সুন্দর কোথাও যাচ্ছি, সবাই মিলে হইচই করছি, এমন সময়ে কোথা থেকে কী যেন একটা মনে এসে ধক্ করে উঠবে বুকটা, কিছুই ভালো লাগবে না তখন, কোনও কিছুতে জোর করেও মন বসানো যাবে না। ওই সময় মন খারাপ করে থাকতে হবে, এটাই যেন নিয়ম। আবার হয়তো একদিন মন মেজাজ খারাপ, অসহ্য লাগছে সবই, এরকম সময়ে সেই কোনকালের কী একটা দারুণ কিছু মনে পড়ে হুট করে মনটা ভালো হয়ে যাবে। কোনও কথা নেই, বার্তা নেই, মনটা পাখির মতো ডানা মেলতে চাইবে। পরে কখনও ভেবে দেখলে এই হুট করে মন খারাপ বা ভালো হওয়া, এর কোনওটিরই একটিও ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে না। আসলে অনুভূতিগুলো সত্যিই বড়ো অনুভূতিপ্রবণ। এরা তৈরিই হয় অনেক দিন আগের কোনও স্মৃতিতে ভালোমতো নাড়া দিতে! তাই তো বেশিরভাগ অনুভূতিই হয় নামসম্পর্কহীন। আর কোনও যুক্তি, তর্ক, বিচার, ব্যাখ্যা দিয়ে অনুভূতিগুলোকে বর্ণনা করা যায় না, এরা কেবলই জমা থাকে মনের স্মৃতিকোটরে। দুই। আমি যে তোকে ভালোবাসি, সে ব্যাপারটারই তো দাম নাই তোর কাছে, আবার আমার ইচ্ছার দাম! আমিও যে একটা মানুষ, এটা বোধহয় ভাবতেও তোর কষ্ট হয়, তাই না? তুই আমাকে আর কত অবহেলা করবি? আমার অবহেলা পাওয়ার কৌটাটা পূরণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন আর গায়েও লাগে না। আমি তো জানিই যে, এখন এই কোভিড-নাইনটিন পরিস্থিতি না থাকলেও তুই আমাকে দেখতে আসতিস না। আসিস না রে, তোর সবার জন্যই সময় আছে, আর আমার জন্য আছে কিছু দয়া বা সিমপ্যাথি। লাগবে না ওইটুকুও! তোদের কাউকেই আমার লাগবে না। আমি এই অবহেলার স্বাদ আগে কখনওই এতটা গভীরভাবে পাইনি, তোকে ধন্যবাদ রে! অবহেলা করার জন্য তোকে আমি একটা উপহার দেবো, এত নিখুঁতভাবে একটা মানুষকে অবহেলা করতে তোর মতন ভালো আর কেউ পারে না। আর হ্যাঁ, উপহারের জন্য আমাকে দেখা দিতে হবে না। তুই তোর উপহারটা সময়মতো পেয়ে যাবি। আমার ভালোবাসা, আমার কান্না, আমার কষ্ট, আমার তোর জন্য আবেগ এগুলোর দুইপয়সার দাম নাই তোর কাছে, আবার মুখে বলিস…ভালোবাসি! ওই শব্দটা আমাকে আর বলিস না কোনও দিনই, লজ্জা লাগে শুনতে। আমাকে কোনও পুরুষই ভালোবাসে না, বাসেনি কখনও। সেটার কারণও আমি জানি, কারুর কাছে আমি খুব অসাধারণ কেউ হতে পারিনি আজও। তুইও বলিস আমাকে ‘তুই খুব ভালো মেয়ে!’---এই প্রশংসাই আমার একমাত্র সান্ত্বনা। আমার মতন মেয়েদের প্রেমিকরা এসব বলেই আমাদের বিদেয় করে দেয়। তোকে এসব না বলে তো আমি মরতেও পারব না, সব বলে বলে অভ্যেস হয়ে গেছে যে! আমি গত বছরও অসুস্থতার সময় অনেক অনেক মেসেজ পাঠিয়েছি তোকে, তুই তো পড়েও দেখিসনি। একটা প্রেমিকা না হোক, ম্যাচিউর একজন বন্ধু অন্তত খুঁজে নিস নিজের জন্য। আমার জন্য দোয়া করিস, সব ভুলে যাস, একেবারেই সব কিছু। আমিও যে তোর একজন স্টুডেন্ট, এটা অন্তত মনে রাখিস। পা ছুঁয়ে সালাম করলাম এখান থেকে, আমার জন্য দোয়া করিস। আমার যত ভুল আর বেয়াদবি ছিল, তার সবই ক্ষমা করে দিস। আমি প্রেমিকা হিসেবে ব্যর্থ হতে পারি, তবে স্টুডেন্ট হিসেবে আমি খুব বাধ্য। আমার মাথায় তোর ক্ষমার হাতটা রাখিস। এটা চাইলাম, সেটা চাইলাম, পেলাম না সেসবের কিছুই। এই ভালোবাসা আমাকে ভিখারি বানিয়ে ছাড়ল। মাথায় হাত রাখতে অত সময় লাগে না। রাখিস, কেমন? আর দু-এক মিনিট সময় নিয়ে আমার জন্য দোয়া করিস। একটা মিনিট মাত্র। ভালো কথা, আমি এর পরেও যদি এসব দেখা করতে চাওয়া আর হাবিজাবি নিয়ে বাড়াবাড়ি করি, তুই লাস্ট বার যেমন লাত্থি মেরেছিলি না,---মনে নেই? আমার কাছে ওইসব মেসেজ আছে এখনও!---সেরকম করে আমার বুকে আবার একটা লাত্থি মারবি! অনেক দিন তোর লাত্থি খাই না। দুই বছর ধরে তোর অবহেলা আর লাত্থি খেয়ে খেয়েই তো আমি টিকে আছি! তিন। সে প্রায়ই বলত, দেখো, আমি আর বেশি দিন নেই। ...কেউই তার কথা বিশ্বাস করত না। কেউ তার দিকে কখনও একটুও নজর দেয়নি। সে আজ আর সত্যিই নেই। ...কেউই তার প্রস্থানটা বিশ্বাস করতে পারছে না। এখন সবারই নজর তার দিকে। চলে যাবার পর সবাই মানুষটাকে খোঁজে। তখন এক স্মৃতি ছাড়া আর কী-ইবা পড়ে থাকে? কিছু কিছু মানুষ থাকে, যারা ভীষণ নিঃসঙ্গতাপ্রিয়, ওদের তো স্মৃতিটুকুও থাকে না। খুঁজতে চাইলে তখনই খোঁজো, যখন খুঁজে পাওয়া যায়। কথা বলতে চাইলে তখনই বলো, যখন সে কথা বলার কাউকেই পাশে পায় না। কাঁদতে চাইলে তখনই কাঁদো, যখন সে দেখতে পায় যে এ পৃথিবীতে তার জন্য কাঁদার মতো একজন হলেও আছে। হাতটা ধরতে চাইলে তখনই ধরো, যখন তার হাত দুইটি ক্রমাগত হাতড়ে বেড়ায়। ফুল দিতে চাইলে তখনই দাও, যখন সে ফুলের ঘ্রাণটা নিতে পারে। যারা চুপচাপ থাকে, ওদের দিকেও তাকাও---দেরি হয়ে যাবার আগেই। ওরা প্রায়ই চুপচাপ চলে যায়, টেরই পাবে না। ওদের যেন চলে গিয়ে প্রমাণ করে দিতে না হয়---এই আমিও একদিন বেঁচে ছিলাম! মনে রেখো, এই পৃথিবীতে পুরোপুরি অভিযোগহীনভাবে অনেক মানুষই বেঁচে থাকে। কারও কারও নীরবতায় কয়েক সমুদ্রের কান্না লুকিয়ে থাকে। যাকে কখনও বোঝোইনি, তার মৃত্যুর পর ওরকম করে কেঁদো না। কপটতা এতটা হয়ে গেলে আর মেনে নেওয়া যায় না। চার। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানেন যে, আপনি যে কাজটা করছেন, সেটা ভালো কাজ---আপনার জন্য এবং বাকিদের জন্যও, তবে সেটা যত ছোটো কাজই হোক না কেন; আর যা-ই হোক, ওটা করার ফলে কারুর ক্ষতি অন্তত হবে না, এটা যদি সত্য হয়, সেক্ষেত্রে সেই কাজটি করার সময় কোনও কুণ্ঠাবোধ করা কিংবা পেছনে ফিরে তাকানো চলবে না। যে যা ইচ্ছা বলুক, যা ইচ্ছা মন্তব্য করুক---হোক তা ফেইসবুকে, হোক তা বাস্তবে; ওসব কথাকে শুধুই কিছু অহেতুকই সৃষ্ট শব্দ আর অক্ষর হিসেবে ধরে নিতে হবে। ওগুলোর জন্য কোনও অনুভুতিই তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। নিজের মধ্যে অনুভূতি তৈরি হওয়া আর ওসবের পালটা জবাব দিতে যাওয়ার মানেই হচ্ছে, ওসব মানুষকে জিতিয়ে দেওয়া। এ ধরনের মানুষরূপী নর্দমার আবর্জনা দুনিয়াতে কোনও কারণ ছাড়াই এসেছে, আর কোনও কারণ ছাড়াই দুনিয়া থেকে চলে যাবে। তারা এ পৃথিবীর তেমন কোনও কাজে লাগে না---অতীতেও যেমনি লাগেনি, ভবিষ্যতেও তেমনি লাগবে না। পাঁচ। আমাকে যাদের বোঝা দরকার, তারা আমাকে বোঝে না, এই ধরনের আফসোস করতে করতে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে, যাদেরকে আমার বোঝা দরকার, আমি তাদেরকে বুঝি না। এরকম না-বোঝা ও ভুলবোঝার মধ্যেই জীবন কেটে যাচ্ছে। ছয়। জ্ঞানী বলেন, পচা কাঠে খোদাই করা যায় না। মূর্খ বলে, যে কাঠে খোদাই করা যায় না, সে কাঠ পচা। কর্মী বলে, কাঠ পচে যাবার আগেই ওতে খোদাই করে ফেলতে হবে। ভাবনা: সাতশো বারো ............................................................... এক। আমাকে কেউ একটু বিষ এনে দিবে? আমাকে কেউ একটু ঘুমের ওষুধ এনে দিবে? ...আচ্ছা, এইসব রিকোয়েস্টের মানেটা কী? সে কি আসলেই ডিপ্রেসড? সে কি আসলেই ইনসমনিয়াক? না কি সে এতটাই ফইন্নির পুত/কইন্যা যে ওই সামান্য টাকাটাও তার কাছে নাই? না কি সে দোকানে গিয়ে ওইসব চাইতে শরম পায়? না কি এইগুলা সবই ঢং? দুই। কেউ যদি এমন কাউকে পেয়ে যায়, যাকে সে কোনওভাবেই ডিজার্ভ করে না, তাহলে সাধারণ তিনটা ব্যাপারের যে-কোনওটি ঘটতে পারে: তিন। সেই মানুষটা রাতারাতি অহংকারী হয়ে ওঠে, আর তার আচারআচরণ, কথাবার্তায়ও সেই ভাবটা ফুটে ওঠে। সে নিজেকে ধীরে ধীরে ওই মানুষের সমকক্ষ হিসেবে মানতে শুরু করে দেয়; অথচ সে এটা বোঝে না যে, প্রকৃতির খেয়ালে কিংবা ভাগ্যের জোরে কখনও কখনও মানুষ এমন অনেক কিছুই পেয়ে যায়, যা সে হয়তো সাতজন্মের সাধনায়ও পেত না। সবই বিধাতার লীলা। কাকে যে কী দেন, আর কার কাছ থেকে কখন যে কী কেড়ে নেন, শুধু তিনিই তা জানেন। তো, সেই পেয়ে-যাওয়া মানুষটা কখনও একলা বসে এ নিয়ে ভাবে না, ভেবে দেখেই না যে, যেটা তার পাওয়ার কথাই না, সেটা যদি ঈশ্বর তাকে পাইয়ে দিতে পারেন, তাহলে সেই ঈশ্বরই যে-কোনও মুহূর্তে সেটা কেড়েও নিতে পারেন। ঈশ্বর এভাবে আমাদেরকে অনেক পরীক্ষায় ফেলেন, আমরা বুঝি না, ভেবেও দেখি না। তিনি আমাদের দিয়েও দেখেন, নিয়েও দেখেন। চার। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এমন হয় যে, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু পেয়ে যাওয়ার পর সে একরকমের ঘোরের মধ্যে চলে যায়। সে বুঝতে পারে না, সত্যিই এরকম কিছু ঘটেছে, না কি এটা শুধুই তার কল্পনা। সে তখন মাতালের মতন আচরণ করতে থাকে। তার কাছে রাতকে দিন আর দিনকে রাত মনে হয়, সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। সে ওই মানুষটার সাথে থাকতেও চায়, আবার সেই মানুষটার কাছ থেকে পালাতেও চায়। আসলে কী যে করবে, সেটাই সে বুঝে উঠতে পারে না। প্রায়ই, তার নিজেকে পাগল মনে হয়। পাঁচ। এক্ষেত্রেও সে প্রথমে ঘোরের মধ্যে থাকে, কিন্তু এই মানুষটার আবার জীবন নিয়ে ভেবেটেবে দেখার অভ্যেস আছে। তিনি সবসময়ই ভেবে দেখেন, কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। ঘোর কেটে যাবার পর উনি বোঝেন, 'আমি যা পেয়েছি, তা ভাগ্যের জোরেই পেয়েছি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এটাকে ধরে রাখার।' ঈশ্বরের করুণা সম্পর্কে মানুষটি বুঝতে পারে, প্রতিদিন সেই বাড়তি প্রাপ্তির জন্য সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। পারলে কান্নাকাটি করে হলেও ঈশ্বরকে বলে, 'তুমি যা দিয়েছ, তা ধরে রাখার ক্ষমতাও আমাকে দিয়ো। যদি ধরে রাখতে না পারি, তবে সসম্মানে আমাকে যা পাইয়ে দিয়েছ, তা তোমার কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে যেয়ো।' এই ব্যক্তিটি তার এই আশ্চর্য প্রাপ্তিটি ঘটবার পর থেকে এক অনন্য মানুষে পরিণত হতে থাকে। তার অন্তর ধীরে ধীরে আলোকিত হতে থাকে। অনুভব করার এই ক্ষমতা তাকে স্বর্গের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সে ধীরে ধীরে নিজের এক বা একাধিক সত্তার সাথে পরিচিত হতে থাকে, যেগুলো তার মধ্যে আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সে কখনও সেটা বুঝতে পারেনি। ছয়। জানো, আমি না ইচ্ছে করেই তোমাকে নিয়ে আজকাল কম কম ভাবি। আমি শুনেছি, কেউ কাউকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে থাকলে, ওই পাশের মানুষটাও নাকি একসময় ভুল করেই সেই ভাবনার সাথে যুক্ত হয়ে যায়, আর নিজের অজান্তেই দুজন একইসাথে দুপাশ থেকে দুজনকে ভাবতে থাকে। আমি এটা জানার পর থেকে অন্য অনেক কিছু করেটরে নিজেকে ব্যস্ত রাখি, যাতে তোমাকে আমার এই সাবকনশাস মাইন্ডের সাথে কানেক্টেড না করতে হয়। আমি একাই ভেবে ভেবে কষ্ট পাবো, যন্ত্রণা পাবো। তুমি ওসব কেন পাবে, বলো? তোমার সময় বাঁচিয়ে দিতেই আমার ভালো লাগে। আমাকে নিয়ে তুমি ভুল করেও ভেবো না। তোমার যে সময় আমি নষ্ট করেছি, তা এবার সুদে আসলে ফেরত দিতে চাই। আমার হাতে অফুরন্ত সময় আছে। তোমারও আছে, কিন্তু আমার জন্য নেই, সে আমি জানি। নাও, একটু একটু করে সবই ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমার সব ঋণ কিন্তু চুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, হিসেব রাখছ তো? উপরে গিয়ে কিন্তু বোলো না আবার যে আমার কাছে কিছু পাওনা আছে তোমার, তাহলে যে ঈশ্বর আমায় শাস্তি দেবেন! সাত। যে মরে যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি দুর্ভাগা হলো সে, যে মরতে চেয়েও মরতে পারে না। মৃত্যু মাত্র একমুহূর্তের, অন্যদিকে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় সারাজীবন ধরে, তিলে তিলে! সারাক্ষণই পুড়ে পুড়ে মরার চাইতে একবারেই পুড়ে মরে যাওয়াও অনেক সুখের। নিজেকে নাহয় চোখ বন্ধ করে খুন করে ফেলা যায়, কিন্তু যে কয়েকটি পিছুটানের কারণে মানুষ জোর করে হলেও বেঁচে থাকে, সেগুলিকে শত চাইলেও খুন করে ফেলা যায় না। এ বড়োই যন্ত্রণার, এ বড়োই পরাজয়ের। আট। আমার এখনও ভীষণ কান্না পাচ্ছে, কেঁদেই চলেছি সকাল থেকে। তুমি ঠিক আছ তো? আমার খুব মনকেমন করছে। ইচ্ছে করছে, এখুনিই পায়ে হেঁটে রওনা হয়ে যাই তোমার ঠিকানায়। ওহ্ হো! আমাকে তো তুমি কখনও তোমার ঠিকানা বলোইনি! কেন বললে না? এখন কী করে দেখতে পাবো তোমায়? আচ্ছা, ধরো, কোনও একভাবে একে ওকে ধরেটরে আমি ঠিকানাটা ম্যানেজ করেই ফেললাম। যদি তোমার বাড়িতে হুট করেই চলে যাই, তুমি কি তাড়িয়ে দেবে? দারোয়ানকে বলবে, আমায় বের করে দিতে? তুমি তো আর আমায় ভালোবাসো না, তাই বোঝোই না, আমার প্রাণটা কেমন করে যে পুড়তে থাকে তোমাকে একটু দেখার জন্য! এটুকু আবদার পূরণ করবে না আমার? আর একটি বার আমাকে দেখা দেবে না, বলো? নয়। সত্য কথাটিকে সবাই একরকম করে বলে না। কেউ বলে একেবারে সরাসরি, কেউবা বলে একটু রয়ে সয়ে কিংবা ঘুরিয়ে। আবার বলার ধরনের কারণে একই সত্য হয়ে যায় কখনও অর্ধসত্য, কখনওবা প্রায়সত্য। এমনও হয়, সত্যটা যাদের সামনে বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে মাত্র কয়েক জন তা বুঝতে পারে---বক্তা যাদের কাছে সত্যটা পৌঁছাতে চাইছেন, কেবল তারাই! কারও সত্য বলার ধরন দেখে বোঝা যায়, তিনি কতটা স্বাধীনতা ভোগ করেন। যে যত স্বাধীন, তার মুখে সত্যের প্রকাশ তত অবারিত। ভাবনা: সাতশো তেরো ............................................................... এক। গভীর রাতে আমার ভীষণ কান্না পায়। সরি, ভুল বললাম, পায় নয়, পেত। কী যে হয়েছে আজকাল, জানো, কান্নাটান্না আর পায় না। ইদানীং আমার আর কিছুই পায় না। আমি শুধু চোখ মেলে তাকাই, আবার চোখ বন্ধ করি, আবার তাকাই। আজকাল কিছুই আর ছোঁয় না, জানো? আমি প্রায়ই ভাবি, তুমি অতটা সুন্দর করে আমায় অবহেলা করো কী করে গো? আমার মতন চঞ্চল, ডাকাবুকো, হাসিখুশি একটা মানুষকেও তুমি এরকম শান্ত নদী বানিয়ে ফেললে! অবহেলার এত ক্ষমতা! শোনো, অনেক রাত হয়েছে, তোমাকে এই মেসেজটা লিখেই ঘুমিয়ে পড়ব। তুমি এই যে অবহেলাটা করে করে আমায় অভ্যস্ত করলে, আবার নতুন করে ভালোবাসতে এসো না যেন কখনও ভুলেও! তুমি তোমার ভালোবাসার পরিমাণটা দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েও আবার আমার কাছে ফিরে এসে দেখবে, আমি কেমন জ্যান্ত লাশ হয়ে গেছি। তুমি আমায় আর দেখতেও এসো না গো! এখন আমায় দেখলে ভয় পাবে, তুমি ভীষণ ভয় পাবে! সেই প্রথম দিনটার মতো প্রথম দেখায় তোমাকে প্রেমে ফেলে দেবার রূপটা আজ আর নেই। তাই যা আছে এখন, তা দিয়ে তোমায় বিতৃষ্ণায় ডোবাতে আমি চাই না। আমার সামনে এসো না তুমি! দুই। মগজের শক্তির চাইতে পেশির শক্তি বাড়ানো সহজ বলেই সব জায়গায় লাইব্রেরির চাইতে জিমের কদর বেশি। অভিজ্ঞতা বলে, পেশির জোর ও মগজের জোর পরস্পরের ব্যস্তানুপাতিক---একটা বাড়লে অন্যটা কমে। পেশি বাড়লে পুরো পৃথিবীকেই দেখানো যায়, অপরদিকে মগজ বাড়লে কেবল মগজওয়ালাদেরকেই বোঝানো যায়। তাই জনপ্রিয়তার বিচারে পেশিওয়ালাদেরই জয়জয়কার! তিন। কারও বিষণ্ণতা দূর করতে তাকে কিছু পরামর্শ দিলে যা কাজ হয়, তার চাইতে অনেক বেশি কাজ হয় তার মনের কথাগুলি সময় দিয়ে শুনলে। পৃথিবীর প্রতিটি বিষণ্ণ মানুষের মনে অনেক অনেক কথা জমানো থাকে, যেগুলি বলার জন্য বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কাউকে সে পাশে পায় না। সেই মানুষটির ভূমিকায় নিজেকে রাখলে তার বিষণ্ণতা অনেকখানি কমে যায়। চার। একজন ভালো মানুষের দায়িত্ব হলো বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে যারা দাঁড়ায়, তাদের সবাই কিন্তু ভালো মানুষ নয়। অনেকেই সেই মানুষটার মানসিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে নানান সুবিধা আদায় করতেও ওই অবস্থায় পাশে এসে দাঁড়ায়। পাঁচ। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ, এই কথাটি সব ক্ষেত্রে খাটে না। মানুষ অনেকসময় ভয়েও নীরব থাকে। তাই নীরবতা, কখনও কখনও, ভয়েরও লক্ষণ। যার সাথে শক্তিতে পারব না, কিংবা যার জন্য শক্তিক্ষয় করার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই, সে যা-ই বলুক না কেন, নীরব থাকাই হচ্ছে বিচক্ষণতা। অপদার্থ এবং ক্ষমতাবান মূর্খ, এই দুই শ্রেণির লোকের সামনে একটিও বাক্য ব্যয় করার কোনও মানেই হয় না। এমনকি, লোকের উসকানিতেও সেখানে মুখ খোলা উচিত নয়। কেননা এর ফলটা ভোগ করতে হবে নিজেকেই, ওসব লোক তখন উদ্ধার করতে আসবে না। ছয়। ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হলে দুটো কাজ করা দরকার: জ্ঞান অর্জন করা এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। এর কারণ হলো, দেখা গেছে, মূর্খরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের সহ্য করতে পারে না এবং আক্রমণ করার চেষ্টা করে। জ্ঞানী ব্যক্তিরা মূর্খদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেই ভালো। যারা জ্ঞানীও নয়, মূর্খও নয়, এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থানের সাধারণ মানুষ, তাদের উচিত, জ্ঞানীদের জ্ঞানকে গ্রহণ করার চেষ্টা করা, তবে যথাসম্ভব জ্ঞানীদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে। জ্ঞানীরা সবসময়ই দূর থেকেই সুন্দর। কাছে গেলে সেই ব্যক্তিকে নিতান্তই একজন নগণ্য মানুষ মনে হবে, তাঁর সকল অসৌন্দর্য চোখে প্রকট হয়ে ধরা পড়বে, এবং তাঁর কাছ থেকে যা শেখার আছে, তা কিছুতেই শেখা যাবে না। টেনডুলকারকে দেখে মুগ্ধ হতে চাইলে তাঁকে দেখতে হবে খেলার মাঠে...দূর থেকে, আপনার পাশে বসিয়ে চা খেতে খেতে তাঁর সাথে গল্প করে নয়। জ্ঞানীরা সকল ধরনের তর্কে মূর্খদের জিতিয়ে দেন। মূর্খরা তর্কে জিতে নিজেদের মূর্খতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তৃপ্তিলাভ করে। প্রকৃত জ্ঞান অর্জিত হয় নিজের সাথে তর্কে হেরে গিয়ে, অন্যের সাথে তর্কে জিতে গিয়ে নয়। অন্যের সাথে তর্কে জিততে হলে একজন মেধাবী মানুষ হলেই চলে, কিন্তু নিজের সাথে তর্কে হেরে যেতে চাইলে জিনিয়াস হতে হয়। সাত। যে একা একাই স্বপ্ন দেখে, কাউকে স্বপ্ন দেখাতে পারে না, সে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্লান্তি এড়াতে স্বপ্নকে ভাগ করে নিতে জানতে হয়। আট। মানুষ সাধারণত দুইটি কারণে জ্ঞাতসারে পাপ করে: পাপের সুখটা লাভের জন্য কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়। একসময়, তোমাকে আমার অনেক দামি মনে হতো। এখন বুঝি, ধ্যাৎ! কীসব ছাইপাঁশ ভাবতাম তখন! দশ। ক্ষুব্ধ না হয়ে দারিদ্র্যকে বরণ করা যেমনি কঠিন, ঠিক তেমনি কঠিন উদ্ধত না হয়ে ঐশ্বর্যকে উপভোগ করা। তাই জ্ঞানী ব্যক্তি সবসময়ই দরিদ্রদের রাগ এবং ধনীদের অহংকারকে সহজভাবে গ্রহণ করেন। ভাবনা: সাতশো চৌদ্দ ............................................................... এক। সঠিক সময়ে, সঠিক সমালোচনা করতে পারাটাও, আমার চোখে, বিশাল একটা যোগ্যতা। অথচ আপনার আশেপাশে তাকান, কী দেখবেন, জানেন? যাঁরা সঠিক এবং গঠনমূলক সমালোচনা করতে জানেন, তাঁরা ওটা করেনই না। অন্যদিকে, তাঁরাই সমালোচনা করেন, যাঁরা মুখটা বরং বন্ধ রাখলেই দেশটা বেঁচে যায়। তাঁরাই এসে দুনিয়ার আলতু ফালতু কথা বলেন, যাঁরা সমালোচনা কী, সেটা জানেনই না। কেউ কেউ আবার এটাও মানেন, ‘যাকে ভালোবাসি, তাকে আমি যা ইচ্ছে বলতে পারি, এটা আমার অধিকার!’ ওয়াও! দারুণ বিচার আপনার। এই বিচার ধুয়ে শুকিয়ে সরিষার তেল দিয়ে মেখে আচার বানিয়ে বয়ামে ভরে রাখলেই তো পারেন। ভালোবেসে কারুর ভুল ঠিক করে দেওয়া, আর তার উপরে নিজের মতামত ইচ্ছেমতো চাপিয়ে দেওয়া, এই দুই কি এক? মোটেও না। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় ইংরেজিতে ফেইল করেছিলেন। তখন খুব লজ্জাও পেয়েছিলেন। কিন্তু আজকে আপনার নিজের ছেলেই হয়তো স্কুলে যায়। আপনিও সবারই মতন ওই ক্লাস সেভেনের কথা ভুলেই গেছেন। এখন আপনার ছেলের এক দূরসম্পর্কের চাচাত ভাই পরীক্ষায় ফেইল করার পর ওর দাদি, মানে আপনার চাচি যদি আপনার ছেলেরও সামনে আপনাকে দেখিয়ে বলেন, ‘ওরে যদু রে, কাঁদিস না! তোর মধু চাচাও তো তোর মতনই সেভেনে থাকতে ফেইল করেছিল! তো কী হয়েছে? আজকে দেখ, ও বিদেশ থেকেও পড়াশোনা করে এসেছে। কী রে মধু, ঠিক বলেছি না? ওকে একটু বোঝা তো তুই!’ এটা শুনে কেমন লাগবে আপনার? হাসি পাবে হয়তো। কিন্তু কী, জানেন, ওই ফেইলের কথা আজকে আপনারই মনে নেই, অথচ সেটাকে কেউ-না-কেউ উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। হয়তো তিনি আপনাকে ভালোবাসেন, তবে তার এই উদাহরণ দেবার ধরনটা ভুল। এরকম যে মানুষ প্রতিক্ষেত্রেই এসে এসে বলবে, ‘অ্যাই, তুমি না অমুক ভুলটা করেছিলে, মনে আছে? কেন মনে নেই? এক্ষুনি মনে করো।’ নিতান্ত অপরিহার্য না হলে এই টাইপের মানুষকে জীবনে রাখার সত্যিই কোনও প্রয়োজন দেখি না। যে মানুষ আপনাকে আপনার ব্যর্থতার কথাই কেবল মনে করিয়ে দেয়, সে আর যা-ই হোক, আপনার বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। দুই। আমি আসলে কোনও মেকি আচরণ আজকাল কেন যেন আর করতে পারি না। কেন পারি না, তা আমি জানি না, কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও সত্যিই পারি না। আমার চারপাশটা মুখোশধারী মানুষে ভরে গেছে। আমি এদেরকে আমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাই। এঁদের সাথে থাকার চেয়ে বরং সারা দিন একা কাটিয়ে দেওয়াও খুব ভালো। অনায়াসেই একা একা খুব ভালোভাবে দিন পার করে দেওয়া যায়। অনেক কাজ থাকে, সেগুলো করে ফেলা যায়। অযথা মেকি সম্পর্কে থেকে নিজেকে আর কষ্ট দেবো না আমি। যা হয়ে গেছে, যা চলে গেছে, যাক গিয়ে। যার যাবার, সে আজ হোক কাল হোক, ঠিকই চলে যায়। কেউ কারও জন্য থেমে থাকে না। কাউকে কোনওভাবেই, কোনও কিছু দিয়েই আটকে রাখা যায় না। সুতরাং কাউকে আটকাবার চেষ্টা না করে বরং তাকে তার মতো করে থাকতে দেওয়া এবং নিজেও নিজের মতো থাকাই সবচেয়ে জরুরি। আর জীবনের এতগুলো বছর পার করে অন্তত এতটুকু বুঝেছি, ফেইক একটা সম্পর্ক, আজ হোক কাল হোক, ঠিকই শেষ হয়ে যায়। আমার তো আর কাউকেই দরকার নেই। কাউকে ছাড়া একাই দিব্যি এই জীবনটা পার করে দিতে পারব। হ্যাঁ, এখনও অনেক কিছু মেনে নিতে কষ্ট হয়, কিন্তু আমি বাস্তববাদী মানুষ। যে-কোনও কিছু, যা সত্যি, তা মেনে নিতে কষ্ট হলেও, আমি জানি, আমার মানিয়ে নিতে কখনও কষ্ট হবে না। দিনশেষে সেই তো নিজের সাথেই থাকি একা। কে কতই-বা খোঁজ নেয়! কেউই নেয় না। কেউ নেয়নি, আর কেউ খোঁজ না নিলে, কেউ ভালো না বাসলে খারাপ তো লাগেই। পৃথিবীতে লড়াই করতে হলেও ভালোবাসার একজন মানুষ অন্তত থাকতে হয়। যখন দেখি, সেই একজন আমার পাশে নেই, তখন সত্যিই খারাপ লাগে। কিন্তু তারপরও একজন ভুল মানুষের সাথে থাকার চাইতে বরং একা থাকা অনেক ভালো। ভুল মানুষ কে? কাদের ভুল মানুষ বলা হয়? যারা আমাকে আমি যেমন, তেমনভাবে শ্রদ্ধা করে না; যারা আমাকে তাদের বন্ধু, তাদের কাছের মানুষ, তাদের ভালোবাসার মানুষ বলে পরিচয় দিতে ভয় পায়; যারা আমার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চায়, কিন্তু লোকের সামনে আমার সাথে তার সম্পর্ককে অস্বীকার করে, লুকিয়ে রাখে, তারাই আমার জন্য ভুল মানুষ। এসব মানুষ জীবনে না থাকলেও আমার কিছু এসে যায় না। আবার কিছু সুবিধাবাদী মানুষও আছে, যারা আমার নামে কুকথা রটিয়ে আমাকে বিয়ে করার ধান্দা করে, কারণ ওরা জানে, আমি ওদের বিয়ে করব না। তাদেরকেও আমি ভালোভাবে এড়িয়ে চলি। আমি আজকাল মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখে দেখে, মানুষের আসল রূপ দেখতে দেখতে মানুষকে খুব চিনতে পারি। বলে দিতে পারি কার মনে কখন কী চলছে। কেউ কিছু না বললেও পারি। আমার কোনও অসুবিধা নেই একা থাকতে। একা একা দিব্যি আমি ভালোভাবে জীবন পার করে দিতে পারব, তবু এমন কাউকে জীবনে চাই না, যে থাকবে কেবলই আমাকে ব্যবহার করার জন্য, যে কেবলই তার সুবিধার জন্য আমাকে ব্যবহার করবে। আমি তো নিজেকে অনেক আগেই বলেছি, আর কারও ব্যবহার্য হব না কোনও দিনই। যত কষ্টই আসুক, যত খারাপই লাগুক, তা-ও একাই থাকব এভাবেই। হ্যাঁ, সম্পূর্ণই একা। আমি কাউকে ভালোবাসি, সেও আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসে, মুখে কিছুই বলে না। ঠিক আছে, ও ওর মতো থাকুক, আমি আমার মতো থাকি। আমার এখন এসব নিয়ে ঝামেলা পছন্দ নয়। আমার পক্ষে জোর করে ওর সাথে থাকাও সম্ভব নয়। ও যদি আমার বিষয়ে সৎ না হয়, তাহলে আমি সরে থাকব, দূরে থাকব। যত কষ্টই হোক, আমাকে তা করতেই হবে, কেননা আমার একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। তিন। একজন মানুষ নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে পারে আত্মঅহমিকা দিয়ে। আমার মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো কিংবা দামি মানুষটিরও আত্মঅহমিকা করার কিছু নেই। কেন, জানেন? কেননা, বেস্ট বলেই তো আসলে কিছু নেই। বেস্ট ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। পৃথিবীর কেউ একজন যতই বেস্ট কাজ করুক, কিংবা নিজেই বেস্ট হয়ে যাক না কেন, ওই একই সময়েই পৃথিবীর অন্য কোনও-না-কোনও প্রান্তে বসে হয়তো কেউ-না-কেউ তার নিজের কাজটিকে কিংবা নিজেকেই তৈরি করছে সত্যিই ‘বেটার দ্যান দিস বেস্ট’ হিসেবে। কে তা বলতে পারে! আমি একটা চমৎকার কবিতা লিখে ফেলতে পারি, একটা দারুণ ছবি এঁকে ফেলতে পারি। যাদের আমি চিনি, হয়তো ওদের কেউই আমার চাইতে ভালো লিখতে বা আঁকতে পারে না। তাই নিজেকে আমি অনেক বড়ো কিছু ভাবতেই পারি। তবু এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের আমি চিনিই না, আর যাদের কাজের মান এতটাই উঁচুতে যে, সেগুলির কাছে আমার সৃষ্টি নিতান্তই শিশুতোষ। এটা আমরা অনেকেই মানতে চাই না। হয় নিজেই নিজেকে বেস্ট বলে দাবি করি, নয়তো অন্য কারও মুখে নিজেকে বেস্ট শুনে শুনে তৃপ্ত হই। আপনি কোনও একটা কাজ করে, বিরাট এক সফলতা লাভ করে, যেই মুহূর্ত থেকে মনে করবেন যে আপনি চূড়ান্ত পর্যায়ের সফল, আপনার পথচলার আর তেমন কিছু নেই, সেই মুহূর্তেই আপনি আসলে চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ হয়ে গেলেন। হ্যাঁ, তখন থেকে আপনি শুরু করলেন ব্যর্থতার পেছনেই ছোটা। আত্মতৃপ্তি ব্যাপারটা মূলত মৃত্যুরই তৃপ্তি! বাঁচতে হলে মানুষকে আজীবনই অতৃপ্ত থেকে যেতে হয়। আজকের সফলতাকেই কালকের দিনে গিয়ে আপনাকে বলতে হবে ‘অতীত সাফল্য’। জীবনের রাস্তায় চলতে থাকার মানেই হচ্ছে জীবনকে যাপন করা। এই যাপনে সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার জন্য আলাদা আলাদা করে পুরস্কার কিংবা তিরস্কার কিছুই নেই। যা আছে, তা হচ্ছে কিছু অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা। এই যাপনের নিয়মটাই হচ্ছে যা-ই ঘটে যাক না কেন, গায়ে না মেখে জীবনের শেষসময়টা আসার আগ পর্যন্ত দৃঢ়পায়ে অবিচলভাবে হেঁটে চলা।