আমি সবসময়ই এমন একজনকে খুঁজেছি, যার থাকবে হরিণীর চোখ এবং তার পাশাপাশি, সেই সম্পদ দিয়ে তাকে ঠিক কার চোখে চোখ রাখতে হবে, সেটা বুঝতে পারার মতন অনন্য সক্ষমতা।
এমনই এক রমণীকে চেয়েছি, যাকে রাতের বেলায় ঠোঁটে অজস্র চুমু খেলেও সকালে অফিসে যাবার আগে কপালে চুমু দিতে অবশ্যই ইচ্ছে করবে।
আমি চাইতাম, সে দশদিক দশহাতে সামলাক; তার চেয়ে আরও বেশি করে চাইতাম, সে সামলাতে না জানলেও সামলে চলার ভানটা না করুক। সে থাকুক ঠিক তার মতনই; হলে হোক না তা এলোমেলো! যা-কিছু এলোমেলো, তা গোছানো যায়; কিন্তু অভিনয় যা-কিছু, তা-ও গোছাই কী করে!
চেয়েছি তাকেই, যে মানুষটা 'মাথাভর্তি জবজবে তেল নিয়েই কি বের হব? না কি বের হবার আগে চুলে শ্যাম্পুটা করে নেব?' এমন প্রশ্ন না করে নিজেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবে...'চলো, বের হব।'
এমন কাউকেই মনে মনে কামনা করে এসেছি, যার সঙ্গে রাজনীতি নিয়েও কথা বলা যায়, আবার ঝগড়া বাধানো যায় আমার প্রিয় ভলিবলের রিসেন্ট আপডেটগুলো নিয়েও।
এমন মানুষ জীবনে চেয়েছি, যে নিজ থেকেই মাঝেমধ্যে আমার যত্ন করবে। পুরুষমানুষই শুধু যত্ন নেবে, কেবল পুরুষেরই কাঁধ হবে নির্ভরতার...এইসব বস্তাপচা তত্ত্বে আমি আর বিশ্বাসী নই।
এমন একটা কাঁধ পেতে চেয়েছি, যে কাঁধে মাথা রেখে আমি ওর কালিপড়া চোখ-মুখ আরও স্পষ্ট করে দেখতে পাবো। সেই মানুষটার জন্যই অপেক্ষায় থেকেছি, যার শাড়ির কুঁচি ধরে ঠিক করে দেবার সময় একটুও মনে হবে না...'এটাও কী আমার কাজ!?' যৌনতার স্বচ্ছন্দ যাপনে সেই সাহসী নারীকেই বরাবর স্বপ্নে দেখেছি, যার কাছে চুম্বনের একমাত্র স্থান কেবলই ওষ্ঠযুগল নয়।
আমি এমন কাউকেই আকাঙ্ক্ষা করেছি আজীবন, যার না মানে না, আর হ্যাঁ মানে সত্যি সত্যিই হ্যাঁ।
আমি এমন কারও পথ চেয়ে আছি, যার নানান দায়িত্ব সবসময়ই আমাকে নিতে হবে না, মাঝেমধ্যে সে-ও আমার কিছু দায়িত্ব নিতে স্বাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে আসবে।
এমন কাউকেই খুঁজেছি, যার বেলায়, 'এই সমস্যার ও কী বুঝবে!'-র বদলে 'এটার সমাধান একমাত্র ও-ই দিতে পারবে!' মাথায় আসবে।
আমি চাইতাম, এমন কেউই আমার হাতটা ধরবে, যে আমার প্রতিপক্ষ না হয়ে হবে একান্তই নিজের একটা মানুষ। সে হবে এমনই এক সেনাপতি, যাকে ছাড়া আমার পুরো রাজ্যই হয়ে পড়বে অচল, কেননা আমিই, মানে স্বয়ং রাজাই হয়ে পড়ব অচল! হ্যাঁ, সেই রানিকেই চেয়েছি সবসময়ই, যে পাশে থাকলে নিজেকে তার রাজা ভাবতে ইচ্ছে করে।
সংসারে কার অবদান কতটুকু, তার হিসেবে না গিয়ে যার দিকে তাকিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারব...আমাদের দু-জনের সংসার! যাকে মন থেকেই সম্মান করতে ইচ্ছে করে, যার সামনে সম্মানপ্রদর্শনের অভিনয় করে যেতে হয় না, তাকেই পেতে চেয়েছি খুব করে!
আমি চেয়েছি এমন কাউকে, যে ওয়েস্টার্ন কিংবা শাড়ি দুটোকেই সমানভাবে ক্যারি করতে জানবে; না থাকুক এমন কোন পোশাক, যা আড়াল করতে পারবে তার ব্যক্তিত্বকে। কনজারভেটিভ কিংবা জাজমেন্টাল নারীর সঙ্গে জীবনযাপন করতে বাধ্য হবার চাইতে বরং আমার মৃত্যু হোক, এমনটাই চেয়ে এসেছি খুব আন্তরিক প্রার্থনায়।
আমি চেয়েছি সেই মানুষটাকে, যে বন্ধুদের আড্ডায় আমাকে নিয়ে আক্ষেপের পরিবর্তে আমার ভুলগুলো আমাকে দিয়েই ঠিক করিয়ে নিতে পারবে। চেয়েছি, সে জানুক তৃতীয় পক্ষকে না জড়িয়ে নিজেদের মধ্যেই সব ঠিকঠাক করতে।
আমি এমন একজনের খোঁজ করে এসেছি, যে আমার মতন পরিশ্রমী মানুষের চেয়েও অধিক পরিশ্রম করার মানসিক ক্ষমতা রাখে, যার কাছে দুর্বলতার মানেই পাপ।
আমি খুঁজেছি তাকেই, যাকে সব থেকে প্রিয় বিশ্বস্ত বন্ধুর জায়গাটা দেওয়া যাবে, যাকে মন খুলে সব বলা যায়; কেবলই নিজের পুণ্যের খেরোখাতা মেলে ধরে ধরে যার সঙ্গে বাঁচতে হয় না, আমার সমস্ত পাপও যে সাদরে গ্রহণ করতে পারে। ভুল করার অধিকার যার কাছে পাওয়া যায় না, তেমন কোনও নারীর সঙ্গে বাঁচতে আমি কখনোই চাইনি।
আমি সারাটা জীবন সাধনা করেছি সেই নারীর, যাকে বিয়ের রাতেই ফুরিয়ে ফেলা যায় না, বরং প্রতিটি দিনই আবিষ্কার করতে হয় নতুন করে, নতুন মুগ্ধতায়। এ জীবনে এমন কাউকে পেলে আমার সমস্ত প্রাপ্তকে তার প্রাপ্য করে দিতে রাজি আছি দ্বিতীয় বার বিন্দুমাত্রও না ভেবেই!