প্রেম নয়, বন্ধুত্ব

আমি প্রথম প্রেমে পড়ি ১৩ বছর বয়সে, দাদুবাড়ি গিয়ে। আমার এখনও মনে আছে সেসব দিনের কথা। নতুন নতুন সালোয়ার-কামিজ পরা শুরু করেছি, বার বার আয়না দেখি; পারলে বাসায় পরার জামাটাও আয়রন করে রাখি, ভাঁজ পড়তে দিই না।




সেসময় আমার যার সাথে প্রেম হয়, তার নাম ছিল তন্ময়। নামের মতোই সুন্দর, আকর্ষণীয় ছিল সে। খাটো গড়নের ছিল, লিকলিকে ধরনের ছিল, মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া টাইপের ‘অদ্ভুত’ও ছিল। এককথায়, তার প্রেমে পড়ার কোনও কারণই ছিল না, তবুও আমি প্রেমে তলিয়ে গিয়েছিলাম। তখন যদিও বুঝতাম না যে ওটাকেই প্রেম বলে। কেমন যেন মাতাল মাতাল লাগত; মনে হতো, পৃথিবীতে রোদ-গরম বলে কিছু নেই, শুধুই মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি। আমার কখনও তন্ময়কে বলার সুযোগ আর সাহসই হয়নি যে আমি তার প্রেমে পড়েছি।




দু-বছর পর আমি আবারও প্রেমে পড়লাম। আসলে সুদীপই আগে আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিল। আমি অবাক হয়েছিলাম শুনে। যে সুদীপ আমার সামনাসামনি কখনও কোনও কথাই বলত না, সেই সুদীপ ফোনে বলছে আমাকে নিয়ে ঘরসংসার সাজানোর কথা। যে মানুষটাকে আমি ক্লাসে-কলেজে ভাইয়া বলেই জানতাম, সবসময় ফার্স্ট হয় বলেই জানতাম, সেই ছেলেও সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ভাবে, এটা ভেবে ভেবে আমি আকাশ থেকে পড়তাম। সেই ভাইয়া আমাকে আপনি থেকে তুমিতে নামাতে যেমন বেশি সময় নেয়নি, তেমনি আমার সাথে হুট করেই কোনও একদিন থেকে অপরিচিতের ভান করতেও দেরি করেননি। সেসব আরও লম্বা কাহিনি। সে সময় আমার কিংবা সুদীপের কারুরই ফেইসবুক ছিল না, তবে সে সময় যে কথাটা জনপ্রিয় ছিল, সেটা হচ্ছে ‘রিয়েল লাভ’।




সুদীপের পর আমার জীবনে এল তমাল। ততদিনে আমি খুব স্ট্রেইটফরওয়ার্ড হয়ে গেছি। লাজুক, কম কথা-বলা, অতিমাত্রায় ভদ্র তমালকে আমিই প্রথম প্রপোজ করি। সে বলেছিল, “আমি তো তোমাকে বিয়ে করতে পারব না।” রাগের চোটে প্রচণ্ড হেসেছিলাম সেদিন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিজেকে বললাম, “ওকে কেন বিয়ে করতে চাইব? আমি তো শুধু প্রেম করতে চেয়েছিলাম!” হিসেবি তমালদের কখনও প্রেম হয় না। ওরা প্রেমপরবর্তী বিয়ের জন্য প্রেমিকা খুঁজতে খুঁজতে একসময় বিয়ের প্রতিই বিতৃষ্ণ হয়ে যায়। তখন বিয়েটা হয়তো হয়, কিন্তু প্রেম আর হয় না।




তমালের পর এল আরাফ। আরাফের মতন কেউ যে নিজে থেকে আমার জীবনে আসবে, এটা আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। আরাফ নাকি আমাকে ভালোবাসে খুব, মুখে প্রথম দিকে তা-ই বলত। এখন আর কিছু বলে-টলে না। সব আমিও বুঝি, সে-ও বোঝে। তবু দু-জন‌ই না বোঝার ভান করে করে সম্পর্ক চালিয়ে নিচ্ছি। আসলে এগুলোকে অভ্যস্ততা বলে।




একটা বয়সে না খুব করে প্রেম চাইতাম, অ্যাটেনশন চাইতাম, প্রশংসা চাইতাম!
এখন আর প্রেমিক কিংবা ভালোবাসার মানুষ চাই না। চাই না শরীরের উত্তাপটুকুও। মনে-প্রাণে হাড়-হাভাতের মতন শুধুই একটু বন্ধুত্ব চাই। প্রেমিক তো রাস্তাঘাটে, বন্ধু কোথায় পাই?! বিশুদ্ধ বন্ধুত্বের কাছে গভীর প্রেমও নস্যি!
Content Protection by DMCA.com