ক্যারিয়ার নিয়ে

আপনাদের একটা গল্প বলি। আমার বন্ধুটার নাম আমি বলছি না, সে আমার খুব কাছের বন্ধু। আমার সেই বন্ধুটা, যখন আমরা চুয়েট থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করি, আমাদের সাথে সে-ও শেষ করে। হ্যাঁ, সে একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ভিওআইপি নামে একটা প্রযুক্তি রয়েছে, যা ব্যবহার করে তখন সে বেশ কিছু কাজ করেছিল এবং ওসব কাজের মাধ্যমে সে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হয়। আমি এটাকে তেমনভাবে সাপোর্ট করছি না। ভিওআইপি-র অনেক ধরনের আইনি জটিলতা রয়েছে, বেশ কিছু আইনি বাধাও আছে। বাট হি ইউজড ইট! সেটাকে সে জায়গামতো ব্যবহার করেছে। এখন যেটা হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে তো আসলে কিছু বলার নেই। পরবর্তীতে কাজগুলো কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা বলতে পারি।




সে কাজটা করেছে এবং এর মাধ্যমে অনেক টাকা-পয়সা কামাই করেছে। অনেক মানে কিন্তু অনেক! এর বেশি কিছু আমি বলব না, বাকিটা আপনারা বুঝে নিন। পরবর্তীতে সরকার খেয়াল করে বিষয়টা এবং আইনি প্রক্রিয়ায় যায়। তাই তাকে বেশ সাফার করতে হয়েছে। এরপর সে ধীরে ধীরে ব্যাপারগুলো সলভ করেছে। সে তার ভুলটা বুঝতে পেরেছে এবং সে এখান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু কথা সেটা না। কথা হচ্ছে, আমার সেই বন্ধুটা ওই সময়ে যা যা করেছে, যা পয়সা কামাই করেছে, সে পয়সা কামাইয়ের যে প্রক্রিয়াটা, সেই প্রক্রিয়াটা সাময়িক হতে পারে, কিন্তু পৃথিবীতে পয়সা কখনোই সাময়িক হয় না! আপনার পকেটে যখন পয়সা চলে আসে, তখন তা তো চলেই এল এবং সেটা আপনি তখন ব্যবহার করতে পারেন; এমনকী সেই সময় থেকে দশ বছর পরেও ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ You can use it. So, money can never be temporary. The process of accumulating money can be temporary.




তো সেজন্য বলছি, আপনারা যারা আইটি’কে ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করেন এবং সেগুলো করে পয়সা কামাই করেন, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। যদি সেটা বৈধ পথে হয়, তাহলে তো তা নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। সেদিন আমি, আপনার ফেইসবুক আইডি বন্ধ করলে আপনি কী কী পেতে পারেন, আপনার লাইফে কী কী পজিটিভ পরিবর্তন আসতে পারে, সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম। সেখানে আমি একজন ভাইয়ের কমেন্ট দেখছিলাম। ভাইটা বলছিলেন, ‘ভাইয়া, আমি তো ফেইসবুকে বসেই প্রতিমাসে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ইনকাম করি। আমিও কি ফেইসবুকিং ছেড়ে দেবো?’ এই প্রশ্নটাই উনি করেছেন ফাজলামো করে। আমি যদি তাঁকে ছাড়তে বলিও, উনি কি কখনোই তা ছাড়বেন?




এখন দেখুন, যারা ফ্রিল্যান্সিং করে, যারা আউটসোর্সিং করে, এই ধরনের মানুষের সংখ্যা কিন্তু বেশি নয়। তারা যদি ফেইসবুকটাকে ইনকাম-জেনারেটিং প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে, তারা কেন ফেইসবুকিং ছেড়ে দেবেন! তাই না? কিন্তু আপনি আমি আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যারা, ফেইসবুক থেকে যাদের তেমন কোনও প্রাপ্তি নেই, তা-ও তো ধরুন, আমি লেখালেখি করি আর ফেইসবুকে তা দিই, কিন্তু আপনি আসলে কী করেন এখানে, যা আপনার জীবনের জন্য জরুরি? আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন! আপনি ফেইসবুক যে ব্যবহার করেন, এতে আপনার আত্মিক কী উন্নতি হচ্ছে? আর্থিক কী উন্নতি হচ্ছে? এই দুইটা উন্নতির কথা মাথায় রাখবেন সবসময়। একটা হচ্ছে আত্মিক উন্নতি, আরেকটা হচ্ছে আর্থিক উন্নতি। যদি কোনও কিছুতে আপনার আর্থিক উন্নতিও না হয়, আত্মিক উন্নতিও না হয়, তাহলে সেখান থেকে সরে আসাটা আপনার দায়িত্ব।




তো যারা আউটসোর্সিং করে কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করে পয়সা কামাই করে, তাদের প্রতি আমার একধরনের শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা একটা ভালো কাজ করছে এবং এই কাজটা যতই সাময়িক হোক না কেন, তারা এর মাধ্যমে যে পয়সাটা কামাই করছে, সেটা কিন্তু সাময়িক নয়! আমি যদি একটু ভেঙে বলি, তারা যদি কোনও একটা চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করতেন এবং চাকরিটা পেয়ে যেতেন, সেখানেও তো তাদের এরকম সময় খরচ করেই পয়সাটা কামাতে হতো, তাই না? একই তো কথা!




আমি বেশ কিছু নিয়োগপ্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার সুযোগ পেয়েছি চাকরির সুবাদে। সেই কারণে এই ব্যাপারটা কীভাবে হয় আমি জানি। কীভাবে আমরা লোকজনকে চাকরি দিই, সেটা আমরা জানি। কিংবা বিভিন্ন কোম্পানিতে যারা টপমোস্ট পজিশনে আছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সেবাদান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবার সুবাদে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়। যেহেতু আমরা সরকারি কর্মচারি, তাঁদের সেবা দিই, সেই সূত্রে তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় নানান বিষয় নিয়ে। কথা হতে হতে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেই আমার বন্ধুস্থানীয়, তাঁদের অনেকের সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তাঁদের পারিবারিক কথা, তাঁদের ব্যক্তিগত কথা, সেগুলোও জানার সুযোগ হয়। শুধু তা-ই না, তাঁদের পেশাগত কথাগুলো জানার সুযোগ হয়।




এভাবে অসংখ্য কোম্পানির মালিক, যাঁদেরকে আমরা ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলি, বিভিন্ন বড়ো বড়ো কোম্পানির, নাম বলব না, তাঁদের সঙ্গে কথা বলারও আমার সুযোগ হয়েছে। ওঁদের আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনারা যখন কাউকে রিক্রুট করেন, তখন আপনারা কোন কোন বিষয় দেখেন? আপনারা তার মধ্যে কী কী খোঁজেন? এসব নিয়েও কথা বলেছি। তারা আসলে অনেক কিছুই দেখে, যেগুলো নিয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে কথা বলি, অনেকসময় লিখি, সুযোগ পেলে ক্যারিয়ার আড্ডায় বলি। যাদের সঙ্গে ওসব ক্রাইটেরিয়া ম্যাচ করে না, তাদের আমি রিমাইন্ডার দিই। বলি, ভাই কিংবা বোন, তুমি যে কাজগুলো করছ, তা তোমাকে খুব বেশিদূর নিয়ে যাবে না। তুমি সেখান থেকে সরে আসো। অনেকে আবার এসব শুনলে খুব রাগ-টাগ করে। ঠিক আছে, রাগ করা ভালো। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার সে চাকরিটা দরকার নাই বা বিজনেসটা দরকার নাই, আপনি রাগ করলে তো অসুবিধা নাই। আরও ভালো হয়, আপনি আমার ওয়াল থেকে বিদায় হলে।




কিন্তু তাদের রাগ দেখে দেখে অন্যরাও যারা রাগ করো, তারা একটু ফেইসবুকের কমেন্টের দিকে তাকানোর আগে, বাসায় বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ো, তোমার বাসার অবস্থার দিকে তাকিয়ো, তোমার পকেটে-থাকা মানিব্যাগটার দিকে তাকিয়ো। তাকানোর পরে মন্তব্যগুলো কোরো। কারণ ফেইসবুকে তুমি একটা মন্তব্য করে অনেক লাইক-কমেন্ট পাচ্ছ, হা-হা রিঅ্যাক্ট পাচ্ছ, লাভ রিঅ্যাক্ট পাচ্ছ! কিন্তু এটা দিয়ে তো পয়সা আসবে না, এটা দিয়ে তো তোমার ঘরের চাল কিনতে পারবে না। তো আপনি বেঁচে আছেন শুধু চালের দাম বাড়ানোর জন্য। এতে আসলে কী হবে? তোমার চাইতে একটা রিকশাওয়ালা ভালো অবস্থানে আছে, যে রিক্সাওয়ালা কিছু পয়সা ইনকাম করে। এটা কিন্তু মাথায় রেখো। এগুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন।




সাময়িকভাবে আমরা যেই কাজটা করে কিছু পয়সা ইনকাম করতে পারি বা ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে পারি, আমি সেটাকে খুবই পজিটিভ ওয়েতে দেখি। যদি সেইটা বৈধ কিছু হয়, তবে অবশ্যই আমি সেটাকে সাধুবাদ জানাই। এবং যারা ওই কাজগলো করছেন, মানে ফ্রিল্যান্সিং করছেন, তাঁরা কিন্তু এমন করে ভাবেন না যে তাঁরা সারাজীবনই ফ্রিল্যান্সিং করে যাবেন। তাঁরা যদি বেটার কোনও অপরচুনিটি পান, তবে সেখানে চলে যাবেন। আর যদি মনে করেন, আমার জীবনটা এভাবে চালাতে পারব, তাহলে তাঁরা সেটাই করবেন। আমি এমন ফ্রিল্যান্সারকেও চিনি, যে হয়তো কোনও একটা সময় এত পয়সা ইনকাম করে ফেলেছে, এত পয়সা কামাই করে ফেলেছে যে, এখন তার চাকরি না করলেও চলে। তার বাকি জীবনটাতে সে ওয়ার্ল্ডট্যুরে বের হবে, বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াবে, নিজের লাইফটাকে এনজয় করবে। এর থেকে চমৎকার ক্যারিয়ার প্ল্যান কী হতে পারে, বলুন!? আমি সারাজীবনই চাকরি করব, এইটা কোনও ক্যারিয়ার প্ল্যান হয়? যদি এমন হয় যে, আপনি কিছু একটা করছেন, যে কাজটা করার পর আপনি কোনও একটা সময় চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ওয়ার্ল্ডট্যুরে বের হতে পারছেন, পৃথিবী দেখছেন, পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তবে ইট ইজ ভেরি কুল!