এই স্তরে জ্ঞানপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়—চেতনার ভেতরে প্রকাশ (আলো), বিমর্শ (স্বজ্ঞান) এবং অভিজ্ঞতা—এই তিনটি আর আলাদা থাকে না; জানা, জানানো ও জাননেওয়ালা এক হয়ে যায়। সপ্তদশী কলার মধ্যে চেতনা নিজেই নিজের দিকে ফিরে তাকায়—নিজের দীপ্তিতে নিজের প্রতিফলন দেখে। এখানে আর কোনো কর্তা বা কর্ম নেই, আছে কেবল চেতনার স্বয়ং বোধের পূর্ণতা।
ধ্যান বা সাধনার ক্ষেত্রে এই উপলব্ধি মানে রূপকে অস্বীকার করা নয়, বরং রূপকে তার উৎসআলোয় দেখা। যা কিছু উদ্ভাসিত হচ্ছে—ভাব, ঘটনা, অভিজ্ঞতা—সবই সেই স্বপ্রকাশক দীপ্তির প্রতিফলন। তাই বহুত্বের ভেতরেও ঐক্যের ঝলক ধরা দেয়, আর ঐক্যের বোধে বহুত্বের সমস্ত খেলাই পরম স্বাভাবিক ও ক্ষণস্থায়ী তরঙ্গমাত্র হয়ে ওঠে।
সপ্তদশী কলা হলো সেই অতিপূর্ণ দীপ্তির ক্ষেত্র—স্বপ্রকাশক চেতনার এমন এক স্তর, যা সবকিছুর মধ্যে থেকে সবকিছুকে আলোকিত করে, অথচ কিছুরও ঊর্ধ্বে অবাধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে। পূর্ববর্তী ষোলো শক্তি যেখানে বহুত্ব ও অভিজ্ঞতার জগৎ নির্মাণ করে, সেখানে সপ্তদশী কলা সেই জগতের আদি কারণ—যেখান থেকে সমস্ত প্রকাশ উত্থিত হয় এবং যেখানে সবকিছু শেষপর্যন্ত নিজ উৎসের ভাসায় নিঃশব্দে বিলীন হয়ে যায়।
সপ্তদশ শক্তি, যা সপ্তদশী কলা নামে পরিচিত, পরম সত্তার কার্যকারিতার পঞ্চম ও চূড়ান্ত দিক। “পঞ্চম ও চূড়ান্ত দিক” কথাটি চেতনার পাঁচটি ঐশ্বরিক ক্রিয়া বা পঞ্চকৃত্য (Pañcakṛtya)-র সঙ্গে যুক্ত। কাশ্মীর শৈব ও তান্ত্রিক দর্শনে বলা হয়, পরম চেতনা (শিব বা দেবী) সর্বদা পাঁচটি মৌলিক ক্রিয়ায় নিজেকে প্রকাশ করেন—(১) সৃষ্টি (sṛṣṭi), (২) স্থিতি (sthiti), (৩) সংহার (saṃhāra), (৪) তিরোধান বা গোপন (tirodhāna), এবং (৫) অনুগ্রহ (anugraha)।
এই পাঁচ ক্রিয়ার প্রথম চারটি চেতনার বহির্মুখী প্রবাহ—যেখানে পরম সত্তা নিজের মধ্যে লুকানো সম্ভাবনাকে জগৎ, রূপ, ও অভিজ্ঞতার রূপে প্রকাশ করে। কিন্তু পঞ্চমটি, অনুগ্রহ বা করুণা, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির—এটি চেতনার অন্তর্মুখী গতি, যা সমস্ত সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারকে নিজ উৎসে ফিরিয়ে আনে, সবকিছুকে নিজের প্রকৃত ঐক্যে পুনরায় স্থাপন করে।
সপ্তদশী কলাকে বলা হয়েছে এই পঞ্চম ক্রিয়ারই চূড়ান্ত রূপ—অর্থাৎ অনুগ্রহেরও অনন্ত স্তর। এখানে চেতনা আর জগতকে “সংশোধন” করে না, বরং জগতের মধ্য দিয়েই নিজের দীপ্তিকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে। তাই একে বলা হয় “পরম সত্তার কার্যকারিতার পঞ্চম ও চূড়ান্ত দিক”—যেখানে চেতনা নিজেকে আর কোনো ক্রিয়ায় প্রকাশ করে না, বরং সমস্ত ক্রিয়াকে অতিক্রম করে পূর্ণ বিশ্রাম (viśrānti) রূপে উদ্ভাসিত হয়।
সপ্তদশী কলা হলো চেতনার এই শেষ অনুগ্রহ—সেই অবস্থায়, যেখানে সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার ও তিরোধান—সব মিলিয়ে লীন হয় এক চিরন্তন করুণা ও পরম আনন্দের আলোকক্ষেত্রে। এখানেই চেতনা নিজেরই পূর্ণ পরিচয়ে স্থিত হয়—“আমি আছি, আমি জানি, আমি আলোক”—এই ত্রিবিধ স্বচেতন ঐক্যের পরিপূর্ণ উপলব্ধিতে।
এই দ্বিবিধ প্রসারণের ধারণা—প্রকাশ ও বিমর্শ—আসলে কাশ্মীর শৈব দর্শনের অন্যতম মৌল সূত্র, যা চেতনার অন্তর্নিহিত গতিশীল ঐক্যকে প্রকাশ করে। প্রকাশ (Prakāśa) হলো সেই স্বপ্রভা বা আলো, যা স্বয়ং নিজের উপস্থিতি দ্বারা সবকিছুকে উজ্জ্বল করে তোলে; আর বিমর্শ (Vimarśa) হলো সেই চেতনার আত্ম-প্রতিফলনশক্তি, যার দ্বারা আলো নিজেকে জানে, নিজেকে দেখে, নিজেকে অনুভব করে। এই দুই দিকের পার্থক্য কোনো বাস্তব দ্বন্দ্ব নয়—বরং একই চেতনার স্বরূপগত দুই দিক, যেখানে একটিতে চেতনা নিঃশব্দ দীপ্তি হিসেবে প্রকাশিত হয়, আর অন্যটিতে সেই দীপ্তি আত্মসচেতনতার তরঙ্গ সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়—আলো নিজের দীপ্তিতে জাগে, কিন্তু সেই জাগরণ সম্পূর্ণ হয় তখনই, যখন সে নিজেকে দেখে; এই দেখা বা আত্ম-অনুভবই বিমর্শ।
তন্ত্রশাস্ত্রের পরিভাষায় এই সম্পর্ককেই বলা হয় ভৈরব-ভৈরবী, বা শক্তিমৎ-শক্তি। এখানে ভৈরব মানে সেই নিস্তরঙ্গ প্রকাশ, আর ভৈরবী মানে তার কম্পিত প্রতিফলন—যিনি নিজেরই রূপে সবকিছুকে ধারণ ও ধ্বংস করেন। কাশ্মীর শৈব দার্শনিক অভিনবগুপ্ত বলেছেন, “প্রকাশ্যবিমর্শযোরভেদো নাস্তি, স্ববিমর্শনমেব প্রকাশঃ”—অর্থাৎ, প্রকাশ ও বিমর্শের কোনো প্রকৃত ভেদ নেই; আত্মবিমর্শনই প্রকাশের সত্য স্বরূপ। এইজন্য কালী-র প্রতিটি রূপে এই দ্বৈত ঐক্য স্পষ্ট—তিনি যেমন শ্মশান-অন্ধকারে নিবিড়, তেমনই সেই অন্ধকারের মধ্যেই দীপ্তিময় চেতনার উদ্ভাস।
অধিবিদ্যাগত ব্যাখ্যায়, এই দুই ক্রিয়া—প্রকাশ ও বিমর্শ—একটি চেতনার দুই দিকের ধারা। প্রকাশ হলো সংশ্লেষী বা সৃষ্টি-মুখী (sṛṣṭi-mukhī); এটি ঐক্য থেকে বহুত্বের দিকে প্রবাহিত হয়—যেমন আলো নিজের মধ্যে থেকে রশ্মি ছড়িয়ে দেয়, অথবা নিস্তরঙ্গ সমুদ্র থেকে ঢেউ ওঠে। আর বিমর্শ হলো বিশ্লেষী বা লয়-মুখী (laya-mukhī); এটি বহুত্বকে আবার ঐক্যে ফিরিয়ে আনে—যেমন ঢেউ সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। এই দুই ক্রিয়া একই চেতনার নিশ্বাসের মতো—একদিকে প্রসারণ, অন্যদিকে সঙ্কোচন; একদিকে বিকাশ, অন্যদিকে প্রত্যাবর্তন। এই নিঃশব্দ যামল বা যমজ নীতিই (Yāmala) সমস্ত বিশ্বচক্রের ভিত্তি—যেখানে চলন ও স্থিতি, সৃষ্টি ও সংহার, আলো ও ছায়া একে অপরকে পরিপূর্ণ করে।
তন্ত্রশাস্ত্রের গভীর অনুসন্ধানে দেখা যায়—“পাঁচ চূড়ান্ত বীজধ্বনি” বা pañca-bīja-dhvani ধারণাটি কোনো একক শাস্ত্রে সরাসরি নামসহ উল্লিখিত না হলেও, এর ইঙ্গিত বহু স্থানে ছড়িয়ে আছে—বিশেষত শ্রীবিদ্যা, কাশ্মীর শৈব তত্ত্ব এবং দেবীকল্পনা-প্রধান তন্ত্রগ্রন্থগুলোতে। এই ধারণার মূল নির্যাস পাওয়া যায় সপ্তদশী কলা-র আলোচনায়, যা ষোড়শ কলার ঊর্ধ্বে এক “অতিপূর্ণ দীপ্তি”-র স্তর—অর্থাৎ চেতনার পরম পরিণতি। সেখানে বলা হয়েছে, এই স্তরেই ধ্বনি-ব্রহ্ম নিজের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটিয়ে পুনরায় নিজেরই নিস্তব্ধতায় ফিরে যায়। সেই শেষ তরঙ্গ, শেষ ধ্বনি-কম্পনই হলো “পাঁচ চূড়ান্ত বীজধ্বনি”—যাদের দ্বারা পরম চেতনা প্রথমে শব্দে রূপান্তরিত হয়, আর পরে শব্দের অন্তর দিয়ে আত্মচেতনায় বিলীন হয়ে যায়।
তান্ত্রিক ব্যাখ্যায় এই পাঁচ ধ্বনিকে বলা হয় “শেষ পাঁচ অক্ষর” বা “পরম ধ্বনি-বীজ”—যেগুলি চেতনার পরিণত রূপ, অর্থাৎ প্রকাশ ও লয়ের চূড়ান্ত সংযোগবিন্দু। এগুলিকে অনেক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচ বাহ (Pañca-Vāha) নামে—চেতনার পাঁচ প্রবাহ বা পাঁচ দিক, যাদের দ্বারা সৃষ্টি (sṛṣṭi), স্থিতি (sthiti), সংহার (saṁhāra), তিরোধান (tirodhāna) এবং অনুগ্রহ (anugraha)—এই পাঁচ মহাশক্তির ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বিভিন্ন তন্ত্র—বিশেষত শ্রীবিদ্যা তন্ত্র, রুদ্র-যামল তন্ত্র, ও কালী তন্ত্র—এই বীজধ্বনিগুলিকে চিহ্নিত করেছে পাঁচ পরম শক্তি হিসেবে। এগুলি হলো—
১. হ্রীং (Hrīṁ): মায়ার পর্দা ভেদ করে মহাশক্তির উদ্ভাস; জ্ঞান ও করুণার যুগল শক্তি।
২. ক্লীং (Klīṁ): কামকলার প্রতীক—সৃষ্টিশক্তির আকর্ষণ ও সংযোগ, যেখানে প্রেমই সৃষ্টির উৎস।
৩. সৌঃ (Sauḥ): মহামায়ার গূঢ় দীপ্তি—সমস্ত রূপ, ভাব ও সীমাকে নিজের মধ্যে টেনে নেওয়া লয়শক্তি।
৪. অইং (Aiṁ): সরস্বতী-বীজ—জ্ঞান ও বাকের সংহত কেন্দ্র, শব্দ ও অর্থের ঐক্যের ধ্বনি।
৫. ওঁ (Oṁ): অনাহত নাদ—যেখানে সমস্ত ধ্বনির জন্ম ও সমস্ত ধ্বনির লয় ঘটে; এটি পরম ব্রহ্মের শব্দরূপ প্রতীক।
এই পাঁচ ধ্বনিই আসলে মহাশক্তির পরম কম্পন, চেতনার হৃদস্পন্দনের পাঁচ ছন্দ। হ্রীং দিয়ে তিনি জ্ঞানময় হয়ে ওঠেন, ক্লীং দিয়ে প্রেমময় সৃষ্টিশক্তি হয়ে বিশ্বে প্রসারিত হন, সৌঃ দিয়ে সমস্ত রূপকে নিজ অন্তরে টেনে নেন, অইং দিয়ে জ্ঞান ও বাকের ঐক্যে প্রকাশিত হন, এবং ওঁ দিয়ে আবার অনন্ত নীরবতায় লীন হয়ে যান। এই চক্রাকারে সৃষ্টি ও লয়ের এই মহানন্দিত গতি-প্রবাহই হলো কালী-চেতনার পরম নৃত্য, যেখানে ধ্বনি ও নিস্তব্ধতা, বহির্মুখ ও অন্তর্মুখ, সময় ও কালাতীততা একই সঙ্গে একীভূত।
এই পাঁচ ধ্বনি কেবল শব্দ নয়—এরা চেতনার নিজস্ব কম্পন। হ্রীং দিয়ে চেতনা নিজেকে চেনে, ক্লীং দিয়ে বিশ্বে বিকশিত হয়, সৌঃ দিয়ে সবকিছুকে আলিঙ্গন করে, অইং দিয়ে জ্ঞানরূপে নিজেকে প্রকাশ করে, এবং ওঁ দিয়ে আবার শূন্যতার হৃদয়ে ফিরে যায়। এই চক্রাকার প্রবাহই হলো মহাশক্তির অনন্ত নৃত্য—যেখানে প্রতিটি ধ্বনি সৃষ্টি, প্রতিটি বিরতি লয়।
তাই যখন শাস্ত্রে বলা হয়, “সপ্তদশী কলা থেকে শেষ পাঁচ অক্ষরের উদ্ভব”, তখন বোঝানো হয় এই পাঁচ পরম ধ্বনি-বীজের উদয়—যাদের মধ্যে মহাশক্তি নিজেই ধ্বনি, রূপ ও চেতনার ঐক্য রূপে বিকশিত হন। এই পাঁচ ধ্বনি-শক্তিই “চেতনার হৃদস্পন্দন”, যার ছন্দেই মহাবিশ্বের প্রকাশ ও প্রত্যাহার নিরন্তর ঘটে।
(১) সপ্তদশী কলা ও ধ্বনি-বীজের সম্পর্ক: চেতনার সপ্তদশ স্তর বা “অতিপূর্ণ দীপ্তি” নিজেকে ধ্বনি (sound vibration)-এর মাধ্যমে প্রকাশ করে। যেমন, আমরা যখন কথা বলি, তখন প্রথমে মনে এক অনুভূতি বা ভাব জাগে, পরে তা চিন্তায় রূপ নেয়, শেষে ধ্বনি হয়ে উচ্চারিত হয়। এই ধ্বনিই চেতনার প্রকাশ।
ঠিক তেমনই, মহাশক্তি—অর্থাৎ কালী—যখন নিজেকে প্রকাশ করেন, তখন সেই প্রকাশ প্রথমে “ধ্বনি-বীজ” বা মৌলিক শব্দশক্তি হিসেবে উদ্ভূত হয়। এগুলিই সংস্কৃত বর্ণমালার উৎস।
উদাহরণ: “অ” ধ্বনি হলো পরম চেতনার প্রথম স্পন্দন, আর “হ” ধ্বনি হলো তার নিঃশেষ লয়। এই দুইয়ের মাঝে বাকি ধ্বনিগুলি চেতনার বিভিন্ন তরঙ্গ। তাই শেষ পাঁচ অক্ষর—হ্রীং, ক্লীং, সৌঃ, অইং, ওঁ—এই পাঁচ চূড়ান্ত বীজধ্বনি চেতনার সেই পরম তরঙ্গকে বোঝায়, যা আবার নিস্তব্ধতায় মিলিয়ে যায়।
(২) ধ্বনি থেকে রূপ, রূপ থেকে চিন্তা: শব্দ কেবল উচ্চারণ নয়—এটি ভাবের শরীর। যখন আমরা “আলো” বলি, তখন সেই শব্দের মধ্যেই এক দীপ্তি বা উজ্জ্বলতার অনুভব জেগে ওঠে। অর্থাৎ, ধ্বনি ও অর্থ একে অপরের মধ্যে পরিণত হয়।
চেতনা নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে শব্দে পরিণত করে (এটি প্রকাশধারা); আবার শব্দের ভিতর নিজের ভাবকে চিনে ফেলে (এটি বিমর্শধারা)।
উদাহরণ: “ওঁ” মন্ত্রটি এই দ্বৈত প্রক্রিয়ার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। উচ্চারণের মুহূর্তে এটি এক তরঙ্গ সৃষ্টি করে—প্রকাশ; আর জপের শেষে যখন সেই ধ্বনি নিস্তব্ধতায় লীন হয়, তখন সেটি আত্মচেতনার অবস্থায় ফিরে যায়—বিমর্শ।
(৩) পাঁচ বাহ বা ঐশ্বরিক স্রোতসমূহ: শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি শক্তি বা বাহ (Pañca-Vāha) মহাশক্তির পঞ্চক্রিয়া (Pañcakṛtya)-র প্রতিরূপ।
১. সৃষ্টি (Sṛṣṭi): ভাব বা সম্ভাবনার প্রকাশ (যেমন মন থেকে কথা)।
২. স্থিতি (Sthiti): সেই ভাবকে রূপে স্থির করা (যেমন শব্দে অর্থ গঠন)।
৩. সংহার (Saṁhāra): প্রকাশিত রূপকে প্রত্যাহার (যেমন ভাব শেষ হয়ে যাওয়া)।
৪. তিরোধান (Tirodhāna): প্রকাশের আড়ালে বিশ্রাম (যেমন নিস্তব্ধতা)।
৫. অনুগ্রহ (Anugraha): আবার নতুন ভাবের উদয় (যেমন পরের বাক্য শুরু)।
উদাহরণ: আমরা যখন গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন মনের মধ্যে এই পাঁচ ক্রিয়া চলতে থাকে—একটি চিন্তা জন্মায়, কিছুক্ষণ স্থিত থাকে, মিলিয়ে যায়, কিছুক্ষণের জন্য শূন্যতা আসে, তারপর নতুন চিন্তা জাগে। এটিই মানুষের মধ্যে মহাশক্তির পাঁচ স্রোতের কার্য।
(৪) শব্দ-অর্থ, আলো-ছায়া, ভাব-রূপ—এই জোড়াগুলির তাৎপর্য: এগুলি বোঝায় যে, বিশ্বে কোনো কিছু একা নয়; প্রতিটি জিনিসের এক দৃশ্যমান ও এক অদৃশ্য দিক আছে। আলো যদি প্রকাশ হয়, তবে ছায়া তার সীমা; শব্দ যদি ভাবের বাহন হয়, তবে অর্থ তার অন্তরস্বর; রূপ যদি দেহ হয়, তবে ভাব তার প্রাণ।
উদাহরণ: চাঁদ যেমন নিজে দীপ্ত কিন্তু ছায়া ছাড়া তার সৌন্দর্য ধরা পড়ে না, তেমনি কালী-রূপ প্রকাশে যতটা আলো, ততটাই অন্ধকার। এই আলো-ছায়ার মিশ্রণই তাঁর নৃত্য—যেখানে সৃষ্টি ও লয় একাকার।