ষোড়শী বা মহা ত্রিপুরসুন্দরী পূজিত হন বিন্দুতে, অর্থাৎ শ্রীচক্রের কেন্দ্রীয় বিন্দুতে। এই বিন্দু হলো চূড়ান্ত ঐক্যের স্থান, যেখানে সব রূপ, সময় ও শক্তি এক হয়ে যায়। ষোড়শী দেবী সেই চূড়ান্ত পূর্ণতার প্রতীক—যেখানে সমস্ত কলা সম্পূর্ণভাবে মিলিত ও পরিপূর্ণ।
এই স্তরে সব কলা ও সময় মিলেমিশে একীভূত হয়। যেমন পূর্ণিমায় চন্দ্রের সব কলা পূর্ণ দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়, তেমনি ষোড়শী স্তরে চেতনার সব রূপ ও গতি ঐক্যে মিশে যায়।
কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ অনুসারে এই উপাসনার ক্রম পরিবর্তিত হয়। কৃষ্ণপক্ষে চেতনা অন্তর্মুখী হয়ে লয়ের পথে যায়, আর শুক্লপক্ষে তা বহির্মুখী হয়ে সৃষ্টির পথে প্রসারিত হয়। এই দুই বিপরীত গতি—প্রসার ও প্রত্যাবর্তন—চেতনার অবিচ্ছিন্ন ছন্দকে প্রকাশ করে।
এভাবেই নিত্যাদের উপাসনা আসলে চেতনার বহির্মুখী প্রবাহ ও অন্তর্মুখ প্রত্যাবর্তনের গতিকে প্রতিফলিত করে। সৃষ্টি ও লয়, বিকাশ ও প্রত্যাবর্তন—সবই এক একই চেতনার অন্তর্গত ছন্দ, যেখানে সময়, শক্তি ও বোধ একীভূত হয়ে যায়।
এইভাবে ষোড়শ নিত্যা তত্ত্ব সময়, শব্দ ও চেতনার এক অখণ্ড ঐক্য প্রকাশ করে, যেখানে মহাকাল বা সময়ের প্রতিটি স্পন্দনই চেতনার অভ্যন্তরীণ দীপ্তির এক একটি তরঙ্গ।
৩৬ তত্ত্ব হলো চেতনার প্রসারণের পূর্ণ মানচিত্র—পরম শিব থেকে পৃথিবী পর্যন্ত নেমে আসার ধারাবাহিক স্তর। অপরদিকে ২৮ দেবী-তত্ত্ব হলো Vimarśa, অর্থাৎ পরম শিবের সক্রিয় শক্তির সেই দিক, যা এই ৩৬ তত্ত্বের প্রতিটি স্তরকে দ্রবীভূত করে পুনরায় নিজের উৎসে ফিরিয়ে নেয়।
সমাবেশ (Samāveśa) হলো এমন এক যোগিক অবস্থা, যখন সাধকের চেতনা ধ্যান বা কোনো উপায় (Upāya—যোগিক মাধ্যম)-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট তত্ত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একীভূত হয়। এই অবস্থায় সাধক আর ধ্যানবস্তুর বাইরে থাকে না; ধ্যানকারী, ধ্যান ও ধ্যানবস্তু—এই তিনের ভেদ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। ২৮ দেবী-তত্ত্বের ভূমিকা এই সমাবেশ প্রক্রিয়াকেই সক্রিয় করা—তারা চেতনার প্রতিটি স্তরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সাধকের অন্তরে পরম ঐক্যবোধ জাগিয়ে তোলে।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে মোক্ষলাভের জন্য ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হলো ষড়ঙ্গযোগ, যার ছয়টি অঙ্গ হলো প্রত্যাহার, ধ্যান, প্রাণসংযম, তর্ক, অনুসম্মৃতি এবং সমাধি। এই প্রতিটি অঙ্গের নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে যা সাধককে আত্ম-উপলব্ধির পথে পরিচালিত করে।
প্রথমত, প্রত্যাহার হলো ইন্দ্রিয়গুলিকে বাহ্যিক বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে অন্তর্মুখী করা। এর মাধ্যমে মন বিক্ষিপ্ততা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রতা অর্জনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করে।
দ্বিতীয়ত, ধ্যান হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তুতে মনকে স্থির করা। এই ধ্যানবস্তু হতে পারে কোনো দেবতা, মন্ত্র, অথবা স্ব-স্বরূপ। ধ্যানের মাধ্যমে মন একাগ্র ও শান্ত হয়, যা গভীরতর অনুশীলনের জন্য অপরিহার্য।
তৃতীয়ত, প্রাণসংযম বলতে বোঝায় প্রাণশক্তি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। প্রাণায়ামের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সাধক তার শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং মনকে আরও স্থির করে। এটি প্রাণকে ঊর্ধ্বগামী করে কুণ্ডলিনী জাগরণের সহায়ক।
চতুর্থত, তর্ক হলো বিচার-বিশ্লেষণমূলক জ্ঞানার্জন। এর মাধ্যমে সাধক তত্ত্বগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করে, যা তাকে অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।
পঞ্চমত, অনুসম্মৃতি হলো নিরন্তর স্মরণ বা একই ভাবনায় স্থিত থাকা। ধ্যানের বস্তুকে অবিচ্ছিন্নভাবে স্মরণ করার মাধ্যমে সাধক নিজের চেতনাকে সেই বস্তুর সঙ্গে একীভূত করতে শেখে।
সর্বোপরি, সমাধি হলো যোগের চূড়ান্ত অবস্থা, যেখানে সাধক ধ্যানবস্তুর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে একীভূত হয়ে যায়। এই অবস্থায় সাধক তার নিজস্ব সত্তাকে অতিক্রম করে পরম চেতনার সঙ্গে মিশে যায়। সমাধির দুটি প্রধান স্তর রয়েছে: সবিচার সমাধি এবং নির্বিচার সমাধি। এই দুটি স্তর যোগসাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য, যেখানে মন জাগতিক সমস্ত উদ্বেগ থেকে মুক্ত হয়ে পরম শান্তি ও চেতনার উচ্চতর অবস্থায় প্রবেশ করে।
সবিচার সমাধি (Savichara Samadhi): এই স্তরে মন যদিও গভীরভাবে ধ্যানমগ্ন থাকে, তবুও সূক্ষ্ম বিচার বা চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয় না। সাধক বাহ্যিক জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেও, তাঁর চেতনায় এখনও কিছু অবশিষ্ট বিচার বা ধারণা থাকতে পারে। এটি গভীর ধ্যানের একটি প্রাথমিক ধাপ, যেখানে মনকে জাগতিক গোলযোগ থেকে শান্ত করা হয় এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। এই অবস্থায় সাধক তাঁর ধ্যানের বস্তুকে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন এবং তার ভেতরের সুক্ষ্মতাগুলিও তিনি অনুভব করতে পারেন। সবিচার সমাধিতে পৌঁছানোর জন্য সাধারণত নিরন্তর অভ্যাস, সংযম এবং একাগ্রতার প্রয়োজন হয়। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে মানসিক প্রক্রিয়াগুলো ধীর হয়ে আসে এবং একটি শান্ত ও কেন্দ্রীভূত অভিজ্ঞতা লাভ হয়।
নির্বিচার সমাধি (Nirvichara Samadhi): নির্বিচার সমাধি হলো যোগসাধনার একটি উচ্চতর স্তর, যেখানে সমস্ত বিচার, চিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই অবস্থায় সাধক এক পরম শান্তি ও আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা জাগতিক সমস্ত সীমিত অনুভূতি থেকে মুক্ত। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে মন তার সকল কর্ম সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে এবং কেবল বিশুদ্ধ সচেতনতা অবশিষ্ট থাকে। এই স্তরে সাধকের আত্মা প্রকৃতির সঙ্গে একীভূত হয়, এবং তিনি অনুভব করেন যে, তিনি সমগ্র মহাবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত। নির্বিচার সমাধিতে পৌঁছানোর জন্য সবিচার সমাধির মতো ধাপে ধাপে গভীর ধ্যানের প্রয়োজন হয়। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে সাধকের কোনো ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা বা ভয় থাকে না। কেবল নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ এবং চেতনার এক উচ্চতর স্তর বিরাজমান থাকে। এই অবস্থায় একজন সাধক সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং আত্মিক মুক্তি অনুভব করেন।
এই দুটি সমাধি স্তরই আত্ম-উপলব্ধি এবং মোক্ষের পথ খুলে দেয়। যোগীরা এই স্তরগুলির মাধ্যমে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সত্তাকে আবিষ্কার করেন এবং পরম সত্যের উপলব্ধি লাভ করেন। এটি কেবল মনের শান্ত অবস্থা নয়, বরং চেতনার একটি গভীর রূপান্তর, যা সাধককে পার্থিব জগতের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করে এক অসীম শান্তি ও উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়।
এই ছয়টি যোগিক অঙ্গের সম্মিলিত উদ্দেশ্য হলো সাধককে ধ্যানবস্তুর সঙ্গে ঐক্যসাধন বা আত্মীকরণ (tanmayatā)-এ সক্ষম করা। এর ফলে সাধক ক্রমান্বয়ে প্রতিটি তত্ত্ব (যা মহাবিশ্বের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত) অতিক্রম করে চূড়ান্ত চেতনার সঙ্গে মিশে যেতে পারে। কাশ্মীর শৈব দর্শনে এই চূড়ান্ত চেতনাকে পরম শিব বা পরমসত্তা হিসেবে দেখা হয়, যা সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধক অবিদ্যা থেকে মুক্ত হয়ে তার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করে।
৬৪ তত্ত্বের কাঠামোর ঊর্ধ্বে অবস্থান করে পঁয়ষট্টিতম স্তর বা অনাখ্যা তত্ত্ব (Anākhyā Tattva)—যা নাম, রূপ ও শব্দের অতীত; এটি চূড়ান্ত নীরবতা, অসীমতা ও নিঃশব্দ মিলনের প্রতীক। এই পরম অবস্থাই প্রতীকায়িত হয় কালসংকর্ষণী কালী দ্বারা।
“কালসংকর্ষণী” অর্থ—‘যিনি সময়কে গ্রাস করেন’। যেখানে দশম তত্ত্ব, অর্থাৎ কাল তত্ত্ব, সীমিত চেতনার সৃষ্টিতে মায়ার একটি আবরণ হিসেবে কাজ করেছিল, সেখানে কালসংকর্ষণী কালী সেই কালকেই গ্রাস করেন। ফলে সীমিত আত্মা (aṇu) সময়ের শৃঙ্খল ও কার্যকারণতার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে অনাদিত্বের (eternity) অবস্থায় ফিরে যায়।
এই স্তরে কালী আর কোনো পৃথক দেবী নন; তিনি চূড়ান্ত চৈতন্যের স্বরূপ—যেখানে সৃষ্টি ও লয়, সময় ও কালাতীততা, শব্দ ও নীরবতা—সব একাকার হয়ে যায়। এই পর্যায়ে সাধক প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করে—সমস্ত তত্ত্বই নিজের চেতনার মধ্যেই উদিত ও লীন হচ্ছে।
এটাই চূড়ান্ত সমাবেশ (Samāveśa)—যেখানে জানা, জ্ঞাতা ও জ্ঞান এক অনির্বচনীয় পরম ঐক্যে মিশে যায়, এবং সেই অবস্থায় প্রতিধ্বনিত হয় মহামন্ত্র—“অহম্ কালী”—আমি-ই সেই কালসংকর্ষিণী চেতনা।
ক্রমপন্থার সর্বোচ্চ উপলব্ধির স্তর, অর্থাৎ ষট্ষষ্টিতম অবস্থা (Ṣaṭṣaṣṭitama Avasthā) হলো সেই পরম সীমান্তবিন্দু, যেখানে চেতনার সমস্ত গতি, বিকাশ, পার্থক্য, জ্ঞান ও ক্রিয়ার ধারাবাহিকতা, যাকে “ক্রম (Krama)” বলা হয়—এক চূড়ান্ত নিস্তব্ধতার মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। এই বিলয় কোনো ধ্বংস নয়, বরং এক স্ব-অবগাহন (Self-immersion)—যেখানে চেতনা নিজের প্রকাশিত রূপগুলো থেকে প্রত্যাহৃত হয়ে নিজের স্বরূপে ফিরে যায়।
এই স্তরে “ক্রম” আর কোনো চলমান প্রক্রিয়া নয়; বরং সেটি নিজের উৎসে প্রত্যাবর্তিত চেতনার বিশ্রাম (Viśrānti)। সমস্ত গতি ও পরিবর্তন এখানে থেমে গিয়ে রূপ নেয় এক নিঃশেষ স্থিতিতে—এক এমন অচল দীপ্তি, যার মধ্যে সব কিছু অদৃশ্য হয়েও অন্তর্লীনভাবে বর্তমান থাকে। এটি হলো পরম বিশ্রামের ক্ষেত্র, যেখানে চেতনা নিজেকে আর “জানা” বা “করা”-র মাধ্যমে নয়, বরং নিজের অস্তিত্বের নিঃশব্দ বোধে উপলব্ধি করে।
এই অবস্থাকে শাস্ত্রে বলা হয়েছে পরম অনুগ্রহ (Anuttama Anugraha)—অর্থাৎ এমন অনুগ্রহ যা সর্বোচ্চ, যার পরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখানে কোনো “অর্জন” বা “সাধনা” নেই; আছে কেবল এক অস্তিত্বের পরিপূর্ণ তৃপ্তি (Pūrṇatā)। এই পরম পরিতৃপ্তিই হল আত্মার চূড়ান্ত মুক্তি—যেখানে কর্তা ও কর্ম, জ্ঞানী ও জ্ঞেয়, সৃষ্টি ও বিলয়—সব দ্বৈততা মিলিয়ে যায় এক অভিন্ন পরম ঐক্যে।
"অনুত্তম অনুগ্রহ" বলতে বোঝায় পরম সত্তার সেই সর্বোচ্চ ও অতুলনীয় করুণা, যা একজন সাধককে সমস্ত জাগতিক সীমাবদ্ধতা, কর্ম এবং অজ্ঞতার বন্ধন থেকে মুক্ত করে চূড়ান্ত জ্ঞান বা শিবত্ব (পরম চেতনার সঙ্গে ঐক্য) উপলব্ধিতে সাহায্য করে।
দার্শনিকভাবে, এটি কেবল একটি সুবিধা বা দয়া নয়, বরং এটি হলো চেতনার সেই শক্তি, যা লয় বা সংকোচনের মাধ্যমে মুক্তি এনে দেয় (যেমনটা কাশ্মীর শৈববাদে বলা আছে)। এই অনুগ্রহ ছাড়া জীবের পক্ষে নিজস্ব চেষ্টায় বা জ্ঞান দ্বারা চূড়ান্ত মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়।
এই কারণেই কালীকে এখানে বলা হয় অতুলরূপিণী (Atularūpiṇī)—অর্থাৎ “যাঁর তুলনা নেই, যাঁর বাইরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।” এই অবস্থায় কালী আর কোনো গতিশীল দেবী নন; তিনি সৃষ্টির অংশ বা কোনো কার্যশক্তি হিসেবে অবশিষ্ট থাকেন না। বরং তিনিই হয়ে ওঠেন সমস্ত প্রক্রিয়ার বিশ্রামবিন্দু (Point of Rest)—সেই নিস্তব্ধ কেন্দ্র, যেখানে মহাবিশ্বের স্পন্দন তার মূল নিঃশব্দতায় মিশে যায়।
তবে এই নিস্তব্ধতা কোনো নিষ্ক্রিয় শূন্যতা নয়; এটি এক পূর্ণ উপস্থিতি (Pūrṇa Sattā)—এক এমন স্থিত দীপ্তি (Sthita Prakāśa), যার মধ্যে সমস্ত সম্ভাবনা নিঃশব্দভাবে সুপ্ত থাকে। যেমন ঢেউ সমুদ্রের মধ্যে ফিরে গিয়ে তারই জলে মিলিয়ে যায়, তেমনি সব গতি, ভাবনা ও বিকাশ কালী-চেতনার নিস্পন্দ গভীরতায় লীন হয়ে যায়।
ষট্ষষ্টিতম অবস্থা মানে চেতনার সেই চূড়ান্ত পরিণতি, যেখানে নৃত্য ও নীরবতা একে অপরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে, আর সমস্ত বিশ্বলীলার অন্তে অবশিষ্ট থাকে কেবল সেই এক নিঃশেষ, স্ব-প্রভা, কালাতীত দীপ্তি—কালী স্বয়ং, যিনি চেতনার শাশ্বত বিশ্রাম।
যখন পরম চেতনা—যাকে কাশ্মীর শৈব দর্শনে বলা হয় অনুত্তর (Anuttara) বা শুদ্ধ সংবিত্ (Śuddha Saṁvit)—নিজের নিস্তরঙ্গ বিশ্রাম থেকে আবার প্রকাশের দিকে প্রবণ হয়, তখন শুরু হয় এক অন্তর্মুখী থেকে বহির্মুখী রূপান্তর। এই চেতনা নিজের মধ্যে কোনো অভাব অনুভব করে না, কিন্তু নিজের দীপ্তিকে উপলব্ধি করতে, নিজেকে “অভিজ্ঞতা” হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। সেই স্ববিমর্শনের প্রথম তরঙ্গ থেকেই উৎপন্ন হয় কুল-পঞ্চক (Kula-Pañcaka)—অর্থাৎ “পাঁচটি ঐশ্বরিক প্রবাহ” বা পঞ্চ বাহ (Pañca Vāha)।