কলনের পাঁচ দিক ও শব্দ-চেতনার (পরা-বাকের) ঐক্যই একসঙ্গে কালী-চেতনার পূর্ণ প্রকাশ। সৃষ্টির প্রত্যেক ধ্বনি, প্রত্যেক গতিশীলতা, প্রত্যেক নীরবতাই তাঁরই আত্ম-প্রতিধ্বনি—যেখানে চেতনা নিজেকে ভাষা, লয় ও করুণার মহামিলনে চিনে ফেলে।
এই দৃষ্টিতে নাদ কেবল কোনো ধ্বনিগত প্রতিধ্বনি নয়, বরং চেতনার অবিরাম স্পন্দন। এটি সেই চেতনার অন্তরস্বর, যেখানে আত্মা নিজের মধ্যেই অনবরত অনুরণিত। এই গভীর অনুরণনই স্বাত্মপরামর্শ (Svātma-parāmarśa)—আত্মার নিজের প্রতিই নিবিড় সচেতনতা। এখানে "জানা" ও "থাকা" অবিচ্ছেদ্যভাবে এক হয়ে যায়; জ্ঞান আর অস্তিত্বের মধ্যে কোনো সামান্যতম ফারাক থাকে না, তারা একে অপরের পরিপূরক।
এই চেতনা একাধারে নীরব এবং সংগীতময়—এটি এক "বিধৃত ধ্বনি" (resonant silence), যা আপাত শান্ত হলেও এর গভীরে এক মহাজাগতিক স্পন্দন নিহিত। এই স্পন্দনের মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সকল প্রকাশ, সৃষ্টি এবং প্রত্যাবর্তনের লয় নির্ধারিত হয়। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে অস্তিত্বের মূল উৎস তার নিজেরই প্রতিধ্বনি, এবং এই প্রতিধ্বনিই মহাবিশ্বের চিরন্তন নৃত্যের ছন্দ। এই অনাহত নাদ একাধারে পরম সত্য, পরম জ্ঞান এবং পরম আনন্দের উৎস, যা সকল দ্বৈততার ঊর্ধ্বে এক অখণ্ড সত্তারূপে বিরাজমান।
কালী-তত্ত্বে “কাল” (Kāla) কেবল ঘড়ির সময় নয়; এটি এক দ্বিমুখী নীতি। প্রথমত, অনুক্রমিক (sequential)—যেখানে ঘটনা ও পরিবর্তন ধারাবাহিকভাবে একটির পর একটি ঘটে; দ্বিতীয়ত, অতি-অনুক্রমিক (trans-sequential)—যেখানে সেই চেতনা অবস্থান করে, যে নিজেই অনুক্রমের বাইরে থেকে অনুক্রমকে জন্ম দেয়। এই দ্বিমুখীতাই “কালী” নামের দ্বিতীয় দার্শনিক ভিত্তি।
কলন ও কাল পরস্পরের গভীর সম্পর্কযুক্ত। কলন হলো পরম চেতনার স্ব-প্রকাশের নিয়ম ও ছন্দ—চেতনা নিজেকে “সময়” হিসেবে সাজায়, স্তর-স্তরে উন্মোচিত করে, উন্মেষ থেকে ক্ষেপ, সংখ্যান থেকে প্রত্যাহার পর্যন্ত। এই “সময়ায়ন”-ই আমাদের দেখা বাহ্য ইতিহাস ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ধারাকে গঠন করে। স্মৃতি, প্রসঙ্গ, পরিবর্তনের প্রতিটি স্তর আসলে চেতনার অন্তর্লীলার বাহ্যিক প্রতিফলন।
কালী হলেন সেই শক্তি, যিনি অকাল থেকে কালে অনুবাদ ঘটান। পরম সত্তা অকাল—তিনি নিজে সময়ের ঊর্ধ্বে। কিন্তু কালী সেই স্বাতন্ত্র্য-শক্তি (Svātantrya-Śakti), যিনি অকাল চেতনার নীরব দীপ্তিকে কালের ছন্দে প্রকাশ করেন। তিনি নীরবতাকে ধারাবাহিকতায়, অচলতাকে গতিতে, একত্বকে বহুরূপে রূপান্তরিত করেন। ফলে “কাল” কোনো বাহ্যিক প্রক্রিয়া নয়; এটি কালী-শক্তির প্রকাশভঙ্গি—চেতনার সেই গীত, যেখানে নাদ নীরবতা থেকে সুর হয়ে ওঠে।
কালী সময়ের উৎস, কিন্তু সময় দ্বারা আবদ্ধ নন। তাঁর মধ্যেই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়—এই সমস্ত সময়ীয় ঘটনা জন্ম নেয় ও বিলীন হয়, অথচ তিনি চিরকাল স্থিত থাকেন সেই আদি নীরব কেন্দ্রে। তাই কালী একইসঙ্গে ক্রিয়া ও নৈঃশব্দ্যের ঐক্য—চলায় স্থিরতা, স্থিরতায় সূক্ষ্ম গতি।
এই সময়চক্রই কাশ্মীর শৈব দর্শনের পঞ্চকৃত্য (Pañcakṛtya)—সৃষ্টি (sṛṣṭi), স্থিতি (sthiti), সংহার (saṁhāra), তিরোধান (tirodhāna), অনুগ্রহ (anugraha)। সৃষ্টি মানে অকাল দীপ্তির কালে প্রকাশ—“শুরু”-র অভিজ্ঞতা। স্থিতি হলো সেই ধারাবাহিকতার স্থায়িত্ব, সংহার রূপ ও ক্রিয়ার প্রত্যাহার। তিরোধান হলো আচ্ছাদন, যাতে লীলা সম্ভব হয়, আর অনুগ্রহ হলো সেই আচ্ছাদনের ভেতর থেকে অকাল স্মৃতির ঝলক, যেখানে সময় নিজের উৎসকে চিনে ফেলে। এই পাঁচ ক্রিয়াই চেতনার মহাজাগতিক ছন্দ—সময় তাদের ক্যানভাস, কালী তাদের নৃত্য।
এই ধারণাকে বোঝাতে কয়েকটি উপমা ব্যবহার করা যায়।
প্রথমত, প্রজেক্টর-ফিল্ম-স্ক্রিন: অদৃশ্য আলো (অকাল) ফিল্মের ফ্রেম (কাল)-এর অনুক্রম পেরিয়ে ছবিতে প্রাণ পায়; আলোই আসল, ফ্রেম কেবল অনুবাদ। কালী সেই অনুবাদের শক্তি।
দ্বিতীয়ত, রাগ-তাল: রাগের স্বরলিপি সম্ভাবনা (অকাল); তালে সাজালে ধারাবাহিক শ্রুতি (কাল) শোনা যায়। যেমন গায়িকা রাগকে তালে “জীবন্ত” করেন, কালী তেমনি ঐক্যকে ক্রমে গাইতে দেন।
তৃতীয়ত, প্রিজম-আলো: সাদা আলো (অকাল) প্রিজমে পড়ে বর্ণালিতে (কাল) ভেঙে যায়। রং আলাদা দেখা গেলেও উৎস এক; কালী সেই বিভক্তির মধ্যে ঐক্যের স্বাক্ষর।
অভ্যাসে এই তত্ত্ব স্পষ্ট হয় তিনভাবে।
প্রথমত, শ্বাস-স্মৃতি—নিশ্বাস ও প্রশ্বাসের মধ্যে উন্মেষ-নিমেষের ছন্দ দেখা যায়; প্রতিটি মুহূর্ত অকাল স্মৃতি থেকে উঠছে ও তাতেই ফিরে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, মনন—ঘটনার অনুক্রম দেখা সত্ত্বেও তার আগে যে নিস্তব্ধতা রয়েছে তা অনুভব করা; সেই নীরব মঞ্চে সব দৃশ্য বদলায়।
তৃতীয়ত, প্রত্যক্ষ স্বীকৃতি—যে-মুহূর্তে “আমি” ও “এটা”র ভেদ আলগা হয়, তখন দেখা যায় অনুক্রম (কাল) কেবল কালী-নৃত্যের পদক্ষেপ, নৃত্যশিল্পী (অকাল চেতনা) অপরিবর্তিত।
এই সমগ্র ভাবনার সারনির্যাস হলো—“কাল” দ্বিমুখী: ধারাবাহিক প্রকাশ এবং সেই প্রকাশের উৎস-নীরবতা। “কালী” সেই শক্তি, যিনি অকালকে কালে উন্মোচন করেন—সময়ের ভিতর নৃত্য এবং সময়ের পর নীরবতা, দুই-ই এক চেতনার খেলা। তাই কালী একযোগে কালের অধিষ্ঠাত্রী এবং কালাতীতের প্রতিমূর্তি—নিজেই সৃষ্টি, নিজেই লয়, আর তাদের অনুক্রমের অন্তর্লীন ঐক্যবিন্দু।
এভাবে “কালী” নামের দ্বিত্বভিত্তি সম্পূর্ণ হয়—তিনি একদিকে কলন-এর কার্যকারী শক্তি, অপরদিকে কাল-এর অন্তর্নিহিত আত্মা। তিনি সময়ের স্রষ্টা, আবার সময়েরও অতীত; তিনি চেতনার কর্ম, আবার সেই কর্মেরও অতিক্রম। কালী তাই পরম চেতনার সেই দিক, যিনি অচল সত্যকে চলমান জগতে প্রকাশ করেন—নীরবতাকে শব্দে, একত্বকে বহুত্বে, অকালকে কালে রূপ দেন—এবং আবার সেই কালের মধ্য দিয়েই অকালেই প্রত্যাবর্তন ঘটান।
ক্রমদর্শনের ভাষায় “কাল” কোনো ঘড়ির সময় নয়, বরং এটি এক অধিবিদ্যাগত প্রতীক—চেতনার নিজস্ব প্রকাশের সূত্র। পরম চেতনা আসলে নীরব আলোক, কিন্তু এই নীরবতা নিজেকে প্রকাশ করে দুটি পথে—একটি হলো দেশাধ্বন (দেশ আর অধ্বন), অর্থাৎ স্থানের পথ; আর অন্যটি হলো কালাধ্বন (কাল আর অধ্বন), অর্থাৎ সময় ও ধ্বনির পথ। এই দুই পথ মিলে সৃষ্টি ও অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ মানচিত্র তৈরি করে।
একদিকে চেতনা স্থানিকভাবে নিজেকে সাজিয়ে তোলে—“কী আছে”, তা প্রকাশ পায় স্তর স্তর বিন্যাসে; অন্যদিকে চেতনা সেই প্রকাশকে ছন্দ, শব্দ ও সময়ের ধারায় প্রবাহিত করে—“কেমন করে”, তা প্রকাশ পায়। এই দুই তরঙ্গ—স্থান ও সময়, নীরবতা ও শব্দ—পরস্পরের সম্পূরক।
দেশাধ্বন হলো সেই পথ, যেখানে চেতনা নিজেকে স্থানিক বা বস্তুরূপে স্থাপন করে। এখানে প্রথম স্তরটি হলো “কাল”—যা সময় নয়, বরং সীমা বা ভেদরেখার নাম। অসীম চেতনা এই ভেদের রেখা টেনে “এটা” ও “ওটা”, “এখান” ও “ওখান” বানায়। সেই সীমার ভিতরেই দ্বিতীয় স্তর “তত্ত্ব”—যেখানে সৃষ্টির মৌল নীতি ও উপাদানগুলো গঠিত হয়, যেমন শিব-শক্তি, মন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি ইত্যাদি। এই তত্ত্বগুলির বহিরঙ্গ রূপই তৃতীয় স্তর “ভূবন”—যেখানে চেতনা নিজেকে বিভিন্ন জগৎ, লোক ও অভিজ্ঞতার আকারে প্রকাশ করে। এই তিন স্তরের সমষ্টিই “কী প্রকাশ পেল”—তার এক বাস্তব বা অবজেক্টিভ মানচিত্র, যাকে বলা হয় বাচ্য বা Vācya।
অন্যদিকে কালাধ্বন হলো সময়ের বা ধ্বনির পথ, যেখানে চেতনা নিজেকে প্রকাশ করে ছন্দ ও শব্দের ধারায়। এর প্রথম স্তর “বর্ণ”—যা আদিস্বরের ক্ষুদ্রতম কম্পন, ধ্বনির ন্যূনতম একক। বর্ণ মিলেই গড়ে ওঠে “পদ”—অর্থবাহী বাক্যাংশ, যার মাধ্যমে ধ্বনি অর্থে রূপান্তরিত হয়। সেই সংগঠিত শব্দ যখন চেতনার গভীর স্পন্দনে রস হয়ে ওঠে, তখন তাকে বলে “মন্ত্র”—যেখানে শব্দ আর অর্থ আলাদা থাকে না, কেবল চেতনার কম্পন অনুভূত হয়। এই তিন স্তর দেখায় “কীভাবে প্রকাশ পেল”—যা প্রকাশের মাধ্যম বা বাচক (Vācaka) নামে পরিচিত।
এই দুই পথ—দেশাধ্বন ও কালাধ্বন—আসলে বাচ্য ও বাচক, অর্থাৎ বস্তু ও ভাষার দুই রূপ। বাচ্য হলো যা প্রকাশিত, আর বাচক হলো যে প্রকাশ ঘটায়। তাদের সম্পর্ক ঠিক চোখ ও আলোর মতো; দৃশ্য আছে, কিন্তু দেখা যায় কেবল আলোর মধ্য দিয়ে। তেমনি বস্তুর জগৎ আছে, কিন্তু তা ধরা পড়ে শব্দ, ছন্দ ও প্রকাশের মাধ্যমে। কাশ্মীর শৈবদর্শনে বলা হয়, চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে, পরা বাক বা পরম বাণীতে এই বাচ্য-বাচক দ্বৈততা মুছে যায়—সেখানে শব্দই অর্থ, আর অর্থই চেতনা। শব্দ, ধ্বনি ও স্পন্দন তখন একাকার হয়ে ওঠে আত্মস্বরূপের সঙ্গে।
এই দুই পথের যুগলছন্দেই সম্পূর্ণ বাস্তবতা প্রকাশিত হয়। দেশাধ্বন দেয় গঠন, স্তর ও বিন্যাস—অর্থাৎ “কী” প্রকাশ পেল; কালাধ্বন দেয় ছন্দ, উচ্চারণ ও প্রকাশের ধারা—অর্থাৎ “কেমন করে” তা প্রকাশ পেল। তারা একসাথে মিলে সৃষ্টি, ভাষা ও অভিজ্ঞতার পূর্ণ লীলা তৈরি করে।
শহরের মানচিত্রের মতো দেশাধ্বন বলে দেয় কোন এলাকা কোথায়, কিন্তু শহরের জীবনের ছন্দ, চলাচল ও শব্দ হলো কালাধ্বন।
আবার কম্পিউটার সিস্টেমে হার্ডওয়্যার, মডিউল, নেটওয়ার্ক টপোলজি হলো দেশাধ্বন; আর কোড, প্রোটোকল, সিগন্যালের প্রবাহ হলো কালাধ্বন।
রাগসংগীতে রাগের কাঠামো ও স্বরবিন্যাস দেশাধ্বন, আর তার তাল, গতি ও উচ্চারণের ছন্দ কালাধ্বন; যখন সুর ও শব্দ অর্থের সীমা ছাপিয়ে সরাসরি চেতনার রসে বাজে, তখন তা মন্ত্র-স্তর।
এই ধারণা সাধনায়ও প্রযোজ্য। দেশাধ্বন-অভ্যাসে সাধক চেতনা স্থাপন করে স্থানিক ধ্যানে—তত্ত্ব, চক্র, মণ্ডল, মূর্তি, দিক ইত্যাদি স্তরে মন স্থির করে দেখে বিশ্ব কীভাবে সাজানো। কালাধ্বন-অভ্যাসে সে জপ, উচ্চারণ, অন্তর্নাদ বা নাদ-ধ্যানের মাধ্যমে শব্দকে চেতনার স্পন্দনে রূপান্তরিত করে—বর্ণ থেকে পদ, পদ থেকে মন্ত্র পর্যন্ত অনুশীলন করে।
এই দুই অনুশীলনের লক্ষ্য একটাই: “যা” প্রকাশিত এবং “যেভাবে” প্রকাশিত, সেই দুইকে এক করা। যখন এই মিলন ঘটে, তখন সাধক পরা বাকে স্থিত হয়—যেখানে শব্দেই নীরবতা, আর নীরবতায়ই শব্দের প্রতিধ্বনি।
এখানেই “কাল”-এর প্রকৃত অর্থ স্পষ্ট হয়। দেশাধ্বনের প্রথম স্তরে কাল মানে ভেদরেখা—অসীমে সীমারেখা টানা; আর কালাধ্বনে বর্ণ মানে সেই ভেদরেখার ধ্বনি-রূপ, যেখানে শব্দের প্রথম সীমা টানা হয়। অর্থাৎ, অস্তিত্ব ও শব্দ—দুটোই সীমা টেনে রূপ পায়। সত্তার সীমা হয়ে ওঠে কাল, আর ধ্বনির সীমা হয়ে ওঠে বর্ণ। এই দুই মিলেই চেতনা নিজেকে প্রকাশ করে।
শেষপর্যন্ত, দেশাধ্বন প্রকাশ করে “কী” আছে—সৃষ্টির গঠন; কালাধ্বন প্রকাশ করে “কেমন করে” তা স্পন্দিত হচ্ছে—চেতনার প্রবাহ। দুই তরঙ্গ একত্রে গলে যায় পরম চেতনার মধ্যে, যেখানে কাল আর দেশ, শব্দ আর অর্থ, রূপ আর রস—সব এক হয়ে যায়।
সেই মিলনের মুহূর্তেই কালী-শক্তি নিজেকে প্রকাশ করেন—একযোগে স্থানিক বিন্যাস ও সময়িক ছন্দে, নীরব আলো ও শব্দের নৃত্যে চিরন্তন লীলায়।
এভাবে দেশাধ্বন্ (নির্দেশিত বা বাচ্য) ও কালাধ্বন্ (নির্দেশক বা বাচক) একে অপরের প্রতিবিম্ব। যেমন শব্দ অর্থকে প্রকাশ করে, তেমনি সময় ও স্থান একে অপরকে অনুবাদ করে বাস্তবতার পূর্ণতা প্রকাশ করে। মহাবিশ্ব তাই এক বাচ্য-বাচক (signifier-signified) সম্পর্কের নিখুঁত প্রতিধ্বনি—যেখানে প্রকাশ ও প্রকাশিত, বাক ও অর্থ, সময় ও স্থান—সবই একই চেতনার পরস্পর-নির্ভর দুই মুখ।
এই দুই ধারার একমাত্র উৎস কালী; তিনি সেই চেতনা, যিনি একই সঙ্গে দেশাধ্বন্ ও কালাধ্বন্ উভয়ের অন্তরতম প্রাণ। তাঁর মধ্য দিয়েই প্রকাশ ঘটে এবং তাঁর মধ্যেই তা পুনরায় লয় পায়। এই কারণে ক্রম দর্শনে “কাল” শব্দটি প্রতীকীভাবে সময় ও স্থানের ঐক্য, যা একান্তভাবে কালী-চেতনার মধ্যেই নিহিত।