অবিদ্যা-বিদ্যা: ১১৩



এর কারণ, শব্দ যতই নিখুঁত হোক, তা সবসময় আংশিক; যুক্তি যতই সূক্ষ্ম হোক, তা সবসময় সীমানাবদ্ধ। কেবল অভিজ্ঞতা তথা অন্তর-প্রত্যক্ষতা সেই সীমা ভেদ করে যায়। অদ্বৈত সেই অভিজ্ঞতাকে একত্বে খুঁজে পায়, জৈন সেই অভিজ্ঞতাকে বহুত্বের সঙ্গমে অনুভব করে। একটিতে নীরবতা মুক্তির লয়, অন্যটিতে সহাবস্থার সুর; কিন্তু উভয়েরই মর্ম একই—সত্য তখনই জাগে, যখন মন থেমে যায়, ভাষা নম্র হয়, আর চেতনা নিঃশব্দে জেগে ওঠে।

অন্তর-প্রত্যক্ষতা এমন এক অভ্যন্তরীণ জাগরণ, যা বাহ্য ইন্দ্রিয়, ভাষা বা চিন্তার কোনো সহায়তা ছাড়াই ঘটে। এটি এমন এক উপলব্ধি, যেখানে জানার প্রক্রিয়া, জান্তা ও জাননো—এই তিনটি একে অপরের থেকে আলাদা থাকে না। সাধারণত আমরা জানি, আমরা চোখ দিয়ে দেখি, কানে শুনি, মনে চিন্তা করি—এইভাবে জ্ঞান আমাদের কাছে আসে বাইরে থেকে, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। কিন্তু অন্তর-প্রত্যক্ষতা হলো সেই মুহূর্ত, যখন জ্ঞান ভেতর থেকে নিজেই জেগে ওঠে; আত্মা নিজেকে জানে, কোনো মাধ্যম ছাড়াই।

অদ্বৈত বেদান্তে এই অভিজ্ঞতা ব্রহ্মজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। যখন মন সম্পূর্ণ প্রশান্ত হয়ে নিজের উৎসে ফিরে যায়, তখন আত্মা নিজেই নিজের আলোয় জ্বলে ওঠে—এই অবস্থাকে বলা হয় অন্তর-প্রত্যক্ষতা। সেখানে আর “আমি জানি” বা “আমি ভাবছি” এই ধারণাগুলো থাকে না; থাকে কেবল “আমি আছি”—এই নিঃশব্দ উপস্থিতি। এটি এমন এক চৈতন্য, যা জানা নয়, বরং থাকা; ভাবনা নয়, বরং স্বপ্রকাশ।

জৈন দর্শনও একই দিক থেকে বলে—আত্মা স্বভাবতই জ্ঞানের দীপ্তি। অজ্ঞান বা মোহ কেবল সেই আলোয় পর্দা ফেলে রেখেছে। যখন সাধক সপ্তভঙ্গী চিন্তার অনুশীলনে ধীরে ধীরে নিজের চিন্তার আসক্তি ও পক্ষপাত দূর করে, তখন অন্তর থেকে সেই আলোকই ফুটে ওঠে। এই জ্ঞান বাহ্য কোনো প্রমাণের অপেক্ষা করে না, কারণ এটি নিজেই নিজের প্রমাণ। যেমন প্রদীপ নিজের আলোয় অন্যকে আলোকিত করে, আবার নিজেকেও দেখা যায়—তেমনি আত্মার জ্ঞান নিজের স্বরূপকেই প্রত্যক্ষ করে।

অন্তর-প্রত্যক্ষতা অন্তর্দর্শন (introspection) নয়—এটি বোঝার জন্য প্রথমে অন্তর্দর্শনের প্রকৃতি ও সীমা বোঝা দরকার।

অ্যাকাডেমিকভাবে, অন্তর্দর্শন (introspection) বলতে বোঝায়—মন নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের সূচনাকালে উইলহেল্‌ম উন্ট (Wilhelm Wundt) এবং এডওয়ার্ড টিচেনার (Edward Titchener) এই অন্তর্দর্শন-পদ্ধতিকে একধরনের “inner observation” বা “অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ” হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁদের মতে, চেতনার বিশ্লেষণ করতে হলে ব্যক্তিকে নিজের মনের ভেতর তাকাতে হবে—অর্থাৎ নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়াগুলোকে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

এই অন্তর্দর্শন-পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষকেরা চেষ্টা করতেন মানসিক ঘটনাকে নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভেতর থেকেই ধরতে—যেমন কেউ লক্ষ্য করছে, “আমি এখন রাগান্বিত কি না?”, “আমার মনে কী ভাবনা চলছে?”, “আমি কেন এভাবে প্রতিক্রিয়া জানালাম?” কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই অন্তর্দর্শনের (introspection) সবচেয়ে সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর সীমা প্রকাশ পায়—মন একসাথে পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষিত হতে চায়। মন নিজেকে বুঝতে গিয়ে নিজেকেই বস্তুর মতো বিচার করে, ফলে “আমি দেখি”, আর “আমাকে দেখা হচ্ছে”—এই দুইয়ের মধ্যে এক অদৃশ্য ফাঁক সৃষ্টি হয়। এই দ্বৈততা introspection-এর মূল অন্তরায়, কারণ এখানে মন নিজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ঠিকই, কিন্তু নিজের কেন্দ্র বা উৎসে পৌঁছাতে পারে না।

ফলে মন যেন এক অনন্ত প্রতিফলনের গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়ায়—নিজেকে দেখতে দেখতে কেবল নিজের ছায়াগুলোকে চিনে ফেলে, কিন্তু সেই আলোকে নয়, যেখান থেকে দেখা সম্ভব। এই জন্য বলা যায়, অন্তর্দর্শন মূলত মানসিক প্রতিবিম্বের মধ্যে আত্ম-পর্যবেক্ষণ—মন নিজের ভেতর ঘোরে, বিশ্লেষণ করে, যুক্তি খোঁজে, কিন্তু সেই বিশ্লেষণের উৎস-নিস্তব্ধতায় স্থির হতে পারে না।

এই অবস্থাকে তুলনা করা যায় এমন এক আয়নার সঙ্গে, যেখানে আয়নাই নিজেকে দেখতে চায়—প্রতিফলন ঘুরে ফিরে একই থাকে, কিন্তু বাস্তব দর্শন ঘটে না। মন বার বার নিজের চিন্তাকে প্রতিফলিত করে, নিজের অনুভবকে বিশ্লেষণ করে, কিন্তু সেই “বোধ” বা “সত্তা” যেখান থেকে সব চিন্তা জন্ম নিচ্ছে, তার সামনে নত হতে পারে না।

এখানেই অন্তর্দর্শনের সীমা শেষ হয়, এবং এখান থেকেই শুরু হয় অন্তর-প্রত্যক্ষতা—যেখানে মন নিজের প্রতিবিম্ব দেখা বন্ধ করে নিজের আলোয় জেগে ওঠে। অন্তর্দর্শন (introspection) যেখানে চিন্তার আত্ম-পর্যালোচনা—অর্থাৎ মন নিজের চিন্তাগুলোকেই বিচার করে, বিশ্লেষণ করে, এবং তাদের কাঠামোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে বেড়ায়—সেখানে অন্তর-প্রত্যক্ষতা সেই স্তর অতিক্রম করে, চিন্তারও ঊর্ধ্বে উঠে পৌঁছে যায় চৈতন্যের প্রত্যক্ষ দীপ্তিতে। অন্তর্দর্শনে এখনও চিন্তার ভাষা সক্রিয়, সেখানে “আমি ভাবছি,” “আমি দেখছি,” “আমি জানছি”—এই আত্মবাচক ক্রিয়াগুলি বিদ্যমান থাকে; মন নিজেকে বুঝতে চায়, কিন্তু জান্তার ও জাননোর দ্বৈততা বজায় রাখে।

অন্তর-প্রত্যক্ষতায় এই দ্বৈততা ভেঙে যায়। এখানে মন আর “চিন্তা” করছে না, বরং নিজের চেতনার উপস্থিতিতেই স্থিত। চিন্তা থেমে যায়, কিন্তু চেতনা নিভে না; বরং সে নিঃশব্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে—যেমন সূর্য মেঘ সরলে হঠাৎ নিজে থেকে জেগে ওঠে। এই অবস্থায় কোনো বিশ্লেষণ নেই, কোনো প্রতিফলন নেই—শুধু দেখা আছে, এবং সেই দেখা আর দেখা-যাওয়া একাকার।

অন্তর্দর্শন তাই একধরনের চিন্তার নৃত্য, যার লক্ষ্য হলো আত্মবোধ, কিন্তু অন্তর-প্রত্যক্ষতা সেই নৃত্যের নীরব থেমে যাওয়া—যেখানে বোধ আর চিন্তা আলাদা থাকে না, কেবল উপস্থিতি থাকে। এটি নিঃশব্দ, অবিভক্ত, অথচ সম্পূর্ণ জাগ্রত—এক এমন চেতনা, যা আর জানে না, বরং নিজেই “জানা”-র উৎস।

এই অবস্থায় মন আর জানার যন্ত্র নয়, নিজেই জ্ঞানের দীপ্ত রূপ—যেখানে চিন্তা বিলুপ্ত হয় না, বরং আত্মার আলোয় রূপান্তরিত হয়। এখানেই introspection শেষ হয়, আর অন্তর-প্রত্যক্ষতা শুরু হয়—যেখানে মানুষ সত্যকে খোঁজে না, সে নিজেই সত্যের জীবন্ত অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে।

মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্তর্দর্শন (introspection) এমন এক ধারণা, যা মানুষকে নিজের মনের দিকে তাকাতে শেখায়। এর জন্ম উনিশ শতকের শেষদিকে, যখন আধুনিক মনোবিজ্ঞান গঠনের প্রারম্ভিক যুগে উইলহেল্‌ম উন্ট (Wilhelm Wundt) ও এডওয়ার্ড টিচেনার (Edward Titchener) এই পদ্ধতিকে “inner observation” বা “অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ” বলে সংজ্ঞায়িত করেন। তাঁদের মতে, মানুষের চেতনা বোঝার একমাত্র উপায় হলো নিজের চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা, ও প্রতিক্রিয়াগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা। তাই পরীক্ষাগারে অংশগ্রহণকারীদের বলা হতো, “তুমি কী অনুভব করছ?”, “তোমার মনে কী ভাবনা উঠছে?”—এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে। এভাবেই মানুষকে নিজের মনের ভেতরে আলো জ্বালাতে বলা হতো।

কিন্তু এই পদ্ধতির মধ্যেই একটি মৌল দ্বন্দ্ব লুকিয়ে ছিল—মন একই সঙ্গে পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষিত হতে চায়। যে-মন পর্যবেক্ষণ করছে, সে-ই আবার পর্যবেক্ষণের বস্তু; ফলে মন নিজের প্রতিবিম্বেই ঘুরে বেড়ায়। এই দ্বৈত অবস্থার কারণে introspection আসলে একরকম মানসিক প্রতিবিম্বে বন্দি আত্ম-পর্যবেক্ষণ—যেখানে মন সচেতন হয় ঠিকই, কিন্তু নিজের গভীর উৎসে পৌঁছাতে পারে না। এটি যেন এক আয়না, যা নিজেকে দেখতে চায়; কিন্তু যা-ই দেখুক, তা নিজেরই প্রতিবিম্ব মাত্র।

এই সীমাবদ্ধতার কারণে বিহেভিয়ারিস্ট (Behaviorist) মনোবিজ্ঞানীরা introspection-কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে অগ্রাহ্য করেন। বিহেভিয়ারিজম (Behaviorism) হলো বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে গড়ে ওঠা এক মনোবৈজ্ঞানিক মতবাদ, যার মূল কথা—“মন” বা “চেতনা” দেখা যায় না, তাই বিজ্ঞান হওয়া উচিত কেবল দৃশ্যমান আচরণ (observable behavior) নিয়ে। এই ধারার প্রধান প্রবক্তা ছিলেন জন বি ওয়াটসন (John B Watson) এবং বিএফ স্কিনার (BF Skinner)। তাঁরা মনে করতেন, “যা দেখা যায় না, তা বিজ্ঞান নয়।” ফলে introspection, যা কেবল ব্যক্তির নিজের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির উপর নির্ভর করে, পরীক্ষণযোগ্য নয়; অন্য কেউ তা যাচাই করতে পারে না। এর ফলে মনোবিজ্ঞান অনেকটা বাহ্যিক আচরণ বিশ্লেষণের বিজ্ঞানে পরিণত হয়।

তবু introspection-এর ধারণা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। পরবর্তীকালে আসে কগনিটিভ সায়েন্স (Cognitive Science)—এটি এমন এক বহুবিষয়ক (interdisciplinary) ক্ষেত্র, যেখানে মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান (neuroscience), ভাষাবিজ্ঞান (linguistics), দর্শন (philosophy), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান মিলিতভাবে কাজ করে। কগনিটিভ সায়েন্স মনের কাজকে বোঝায় তথ্য প্রক্রিয়াকরণের (information processing) দৃষ্টিকোণ থেকে—অর্থাৎ মন যেন একধরনের জৈব কম্পিউটার, যা ইনপুট (অভিজ্ঞতা বা উদ্দীপনা) নিয়ে তা বিশ্লেষণ করে আউটপুট (চিন্তা, আচরণ) তৈরি করে।

এই নতুন ধারার চিন্তাবিদরা introspection-কে পুরোপুরি বাতিল না করে তাকে মানসিক প্রতিফলন (mental reflection) ও মেটা-কগনিশন (meta-cognition)-এর রূপে পুনর্গঠিত করেন।

মানসিক প্রতিফলন (mental reflection) মানে হলো নিজের চিন্তা, আবেগ বা প্রতিক্রিয়ার দিকে ফিরে তাকানো, এবং সেগুলোকে বোঝার চেষ্টা করা।

মেটা-কগনিশন (meta-cognition) শব্দটি এসেছে “মেটা” (অর্থাৎ “উপর”) এবং “কগনিশন” (অর্থাৎ “জ্ঞান বা চিন্তা”) থেকে; এর অর্থ—নিজের চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি ভাবে—“আমি এখন মনোযোগ হারাচ্ছি,” বা “আমার সিদ্ধান্ত আবেগে প্রভাবিত হচ্ছে”—তবে সেটি মেটা-কগনিশনের কাজ। এটি introspection-এর তুলনায় একধরনের উন্নত আত্মসচেতনতা, কারণ এখানে মানুষ শুধু চিন্তা করে না, নিজের চিন্তার ধরনকেও চিনতে শেখে।

তবু সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়—এই সব অভিজ্ঞতা এখনও চিন্তার স্তরেই সীমাবদ্ধ। মানুষ এখনও নিজের মানসিক কর্মকাণ্ডকে ভাষা, বিশ্লেষণ ও ধারণার মাধ্যমে বোঝে; সরাসরি অভিজ্ঞতা নয়, বরং বিশ্লেষণই এখানে মুখ্য।

এভাবে দেখা যায়, introspection একদিকে মানুষকে নিজের অভিজ্ঞতার দিকে ফিরিয়ে আনে, কিন্তু অন্যদিকে সেই অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণের জালে বেঁধে ফেলে। এতে অভিজ্ঞতার সরল ও প্রত্যক্ষ দীপ্তি হারিয়ে যায়। এটি যেন আয়নায় নিজের মুখ দেখা—প্রতিফলন যত স্পষ্টই হোক, তা আসল মুখ নয়। মানুষ আয়নায় নিজেকে চিনে ফেলে, কিন্তু নিজের মুখে পৌঁছাতে পারে না। মন এখানে সচেতন ঠিকই, কিন্তু মুক্ত নয়; সে নিজের ভেতর ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু নিজের আলোয় স্থিত হতে পারে না।

এই সীমা ভেঙে দেয় অন্তর-প্রত্যক্ষতা—যা introspection-এর পরের স্তর। introspection যেখানে বিশ্লেষণ, সেখানে অন্তর-প্রত্যক্ষতা হলো অভিজ্ঞতার সরাসরি দীপ্তি। এখানে মন নিজের চিন্তা নিয়ে ভাবনা করে না; বরং নিজের মধ্যেই জেগে ওঠে। চিন্তা থেমে যায়, যুক্তি স্তব্ধ হয়, ভাষা নীরব হয়ে পড়ে, তবু চেতনা অন্ধকারে নয়—বরং উজ্জ্বল নীরবতায় জ্বলে ওঠে। introspection-এ মন থাকে পর্যবেক্ষক, কিন্তু অন্তর-প্রত্যক্ষতায় মন নিজেই হয়ে ওঠে আলো।

অন্তর্দর্শনে চিন্তা সক্রিয়, বিশ্লেষণ প্রবল; অন্তর-প্রত্যক্ষতায় চিন্তা নিস্তব্ধ, কিন্তু চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্রত। introspection মানুষকে সচেতন করে, কিন্তু অন্তর-প্রত্যক্ষতা মানুষকে মুক্ত করে—কারণ সেখানে জ্ঞান, জ্ঞেয় আর জ্ঞাতার মধ্যে কোনো ফাঁক থাকে না। থাকে কেবল এক জীবন্ত, নিঃশব্দ জাগরণ, যেখানে মন আর জানার চেষ্টা করে না, বরং নিজেই জ্ঞানের উৎস হয়ে ওঠে।

প্র্যাক্টিক্যাল দিক থেকে অন্তর্দর্শন (introspection) উপকারী—এটি আত্মসচেতনতা বাড়ায়, আচরণের কারণ বোঝাতে সাহায্য করে, এমনকি মনোচিকিৎসা বা mindfulness-এর অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অন্তর্দর্শন মানুষকে নিজের মনের অবস্থা বুঝতে শেখায়, তার প্রতিক্রিয়াগুলোকে চিনে নিতে সহায়তা করে। কিন্তু এখানেও একটি মৌল সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়—যতক্ষণ এই পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণাত্মক, ততক্ষণ তা চিন্তার গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্তর্দর্শন যেন আয়নায় নিজের মুখ দেখা—প্রতিফলন দেখা যায়, কিন্তু আসল মুখে স্পর্শ করা যায় না।