অবিদ্যা-বিদ্যা: ১০৪



“নির্বাণ ষট্কম্” অদ্বৈত বেদান্তের এক অনন্য আত্মজাগরণমূলক স্তোত্র—যেখানে আত্মাকে চিহ্নিত করা হয়েছে—না কোনো দৃশ্যমান সত্তা হিসেবে, না কোনো ভাবনার প্রতিফলন হিসেবে, বরং বিশুদ্ধ চেতনা (Pure Consciousness) হিসেবে, যা কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না, কখনও পরিবর্তিত হয় না। আত্মা নিজেকে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় ও উপাদানের সীমা থেকে মুক্ত করে নিজের চৈতন্যস্বরূপে জাগ্রত হয়। “নির্বাণ ষট্কম্”—অর্থাৎ “মুক্তির ছয় শ্লোক”—কখনও “আত্ম-ষট্কম্” নামেও পরিচিত। এটি এক গীতিময় আত্মবোধগ্রন্থ, যা অদ্বৈত দর্শনের সারসংক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

প্রথম শ্লোকের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সমগ্র অদ্বৈত দর্শনের হৃদয়। শঙ্করাচার্য এই স্তোত্র রচনা করেছিলেন এমন এক দার্শনিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে মানুষের আত্মপরিচয় সীমাবদ্ধ ছিল দেহ ও মন পর্যন্ত। তিনি এই ভ্রান্ত সীমা ভাঙতে চাইলেন “নেতি নেতি”—অর্থাৎ “এ নয়, ও নয়”—এই উপনিষদীয় পদ্ধতিতে। তাঁর গুরু শ্রী গোবিন্দপাদ যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন—“কোঽসি? (Ko’si?)”—“তুমি কে?”—তখন শঙ্করাচার্য ছয়টি শ্লোকে উত্তর দেন, যেগুলির প্রতিটি এক একটি স্তরে আত্মাকে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় ও প্রকৃতি থেকে মুক্ত করে সত্যস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করে।

প্রথম শ্লোকে তিনি একে একে পাঁচটি আবরক বা উপাধি (Upādhi) ভেঙে দেন।

প্রথমত, মনোবুদ্ধ্যহংকারচিত্তানি নাহং—আমি মন নই (manas), আমি বুদ্ধি নই (buddhi), আমি অহংকার নই (ahaṅkāra), আমি চিত্তও নই (citta)। অর্থাৎ, আমি সেই মানসিক প্রক্রিয়াগুলি নই, যেগুলি ভাবনা, যুক্তি, স্মৃতি, বা আত্ম-চিন্তার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন করে। মন আসে ও যায়; চিন্তা উদয় হয় ও লুপ্ত হয়; কিন্তু যে-সত্তা এই পরিবর্তনগুলির সাক্ষী, সে কখনও পরিবর্তিত হয় না—সে-ই আমি।

দ্বিতীয়ত, ন চ শ্রোত্রজিহ্বে ন চ ঘ্রাণনেত্রে—আমি শ্রবণেন্দ্রিয় নই, জিহ্বা নই, ঘ্রাণেন্দ্রিয় নই, দৃষ্টিও নই। ইন্দ্রিয়গুলি কেবল জগতের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যম, কিন্তু আত্মা এই সংযোগের সাক্ষীমাত্র। আত্মা—না দেখায়, না শোনায়, কিন্তু দেখা ও শোনার সম্ভাবনা বা সংযোগ তার মাধ্যমেই সম্ভব।

তৃতীয়ত, ন চ ব্যোম ভূমির্ন তেজো ন বায়ুঃ—আমি আকাশ, ভূমি, অগ্নি বা বায়ু নই। অর্থাৎ, আমি সেই পাঁচ ভূত (পঞ্চমহাভূত)-এর কোনো উপাদান নই, যেগুলো দেহ গঠন করে। দেহ ভেঙে গেলে উপাদানগুলো প্রকৃতিতে ফিরে যায়, কিন্তু আত্মা থাকে অবিকৃত।

চতুর্থত, এই সমস্ত নাকচের পরে শঙ্কর বলেন, আত্মা হলো চিদানন্দরূপঃ (Cid-ānanda-rūpaḥ)—যার রূপই চেতনা (Cit) ও আনন্দ (Ānanda)। চিত্ মানে সেই আলোকিত সচেতনতা, যা প্রতিটি অভিজ্ঞতার ভিত্তি; আনন্দ মানে সেই পরিপূর্ণতা, যা নিজের মধ্যেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই চেতনা কখনও “কিছু জানে” না, বরং “সব জানার আলো”—যেমন সূর্য কিছু আলোকিত করে না, বরং আলোক নিজেই, তেমনই আত্মা জ্ঞান নয়, বরং জ্ঞানের অস্তিত্বের ভিত্তি।

অবশেষে তিনি বলেন, শিবোহম্ শিবোহম্—“আমি শিব, আমি শিব।” এখানে “শিব” কোনো পৌরাণিক দেবতা নন, বরং পরম চেতনা (Paramacit)—যে সর্বব্যাপী, অবিনশ্বর, অপরিবর্তনীয় সত্তা। এই “শিবোহম্”-এর পুনরুক্তি শুধু ভাষাগত নয়; এটি আত্মার আত্মদর্শনের প্রতিধ্বনি—যেন উপলব্ধি ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর স্তরে প্রবেশ করছে।

শঙ্করাচার্য এইভাবে “দেহ”, “মন”, “ইন্দ্রিয়” এবং “পঞ্চভূত”-এর সব স্তর অতিক্রম করে আত্মাকে স্থাপন করেন তার নিঃশর্ত অস্তিত্বে। এই স্তোত্রের প্রতিটি শ্লোক “নাহং” দিয়ে শুরু ও “শিবোহম্” দিয়ে শেষ হয়—এ যেন “অসত্য” থেকে “সত্য”-র দিকে এক আরোহন: নাহং (আমি নই) থেকে অহং (আমি আছি), তা থেকে শিবোহম্ (আমি শিব)।

এই উপলব্ধিই অদ্বৈত বেদান্তের মর্ম—আত্মা ও ব্রহ্ম এক, জগৎ ও চেতনা অবিচ্ছেদ্য। “মনোবুদ্ধ্যহংকারচিত্তানি নাহং…” শ্লোকটি এই জ্ঞানকে ধ্বনিত করে সেই আত্মস্বরূপ উপলব্ধিতে পৌঁছে দেয়, যেখানে মানুষ বলে উঠতে পারে—আমি দেহ নই, আমি মন নই, আমি ইন্দ্রিয় নই; আমি সেই শুদ্ধ চেতনা, আমি সেই পরম আনন্দ, আমি সেই অবিনশ্বর শিব—চিদানন্দরূপঃ শিবোহম্ শিবোহম্।

“Cognitive event” বা জ্ঞানঘটনা বলতে বোঝানো হয় এমন এক মুহূর্ত, যখন কোনো অভিজ্ঞতা বা চিন্তা সচেতনভাবে মনের মধ্যে উদ্‌ভাসিত হয়। এটি কেবল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ নয়, বরং চেতনার এমন এক স্বতঃস্ফূর্ত উন্মেষ, যেখানে জানা, অনুভব করা, বা উপলব্ধি করা—এই সমস্ত মানসিক ক্রিয়াগুলি বাস্তবতার আলোয় ধরা পড়ে। অর্থাৎ, cognitive event হলো সেই সূক্ষ্ম বিন্দু, যেখানে চেতনা নিজের মধ্যেই কিছু জানে।

দার্শনিক অর্থে এটি “intentional act of consciousness”—অর্থাৎ, চেতনার এক অভিমুখী কার্য, যা সর্বদা কোনো বস্তুর বা ভাবের দিকে নির্দেশিত। হুসার্লের (Edmund Husserl) ফেনোমেনোলজিতে এই ধারণা মূলত noesis-noema দ্বন্দ্বের মধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে—যেখানে noesis মানে জানার ক্রিয়া, আর noema মানে সেই জানা বস্তু। প্রত্যেক জ্ঞানঘটনা তাই চেতনার একটি সুনির্দিষ্ট অভিমুখী অবস্থা; চেতনা কখনোই শূন্য নয়, বরং সর্বদা “কিছুর দিকে” (about something) নির্দেশিত থাকে।

মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় cognitive event হলো মনের বিভিন্ন স্তরে ঘটে-যাওয়া চিন্তা, উপলব্ধি, সিদ্ধান্ত, বা স্মৃতির উদ্‌ভাস। যখন আমরা কিছু উপলব্ধি করি, হঠাৎ কোনো ধারণা পাই, অথবা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাই, তখন স্নায়ুতন্ত্রের কর্মকাণ্ড চেতনার আলোয় পরিণত হয়—সেই মুহূর্তটিই cognitive event। নিউরোলজিক স্তরে এটি মস্তিষ্কের জৈব ক্রিয়া, কিন্তু অভিজ্ঞতার স্তরে এটি এক চেতন অভিব্যক্তি, যেখানে মস্তিষ্কীয় ক্রিয়া “আমি জানি” বলে আত্মসচেতন হয়ে ওঠে।

অদ্বৈত বেদান্ত ও কাশ্মীর শৈব দর্শনে এই ধারণা আরও গভীর অর্থ ধারণ করে। এখানে জ্ঞানঘটনা মানে কোনো পৃথক মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া নয়, বরং চেতনার নিজের প্রতি প্রত্যাবর্তন—চেতনা নিজেকে জানে, নিজের মধ্যেই নিজের প্রকাশ উপলব্ধি করে। কাশ্মীর শৈব দর্শনের Spanda তত্ত্বে বলা হয়, চেতনার প্রতিটি স্পন্দনই এক ধরনের cognitive event—একটি ক্ষণিক কম্পন, যেখানে শিব নিজেকে নিজের প্রকাশ (Śakti) রূপে চিনে নেন।

অভিনবগুপ্ত এই আত্ম-উপলব্ধির ঘটনাকে বলেছেন vimarśa—চেতনার সেই আত্মবোধ, যেখানে জানা ও জানার বস্তু মিলেমিশে এক হয়ে যায়। তাঁর মতে, “প্রকাশ” (prakāśa) চেতনার আলো, আর “বিমর্শ” (vimarśa) হলো সেই আলোর নিজের দিকে ফিরে দেখা। যখন এই ফিরে দেখা ঘটে, তখনই cognitive event ঘটে—জ্ঞান আর কোনো বাহ্যিক বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে না, বরং নিজেকে নিজের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করে।

এইভাবে ফেনোমেনোলজি, মনোবিজ্ঞান, ও তন্ত্র-বেদান্তের দৃষ্টিতে cognitive event হলো এক মৌল চেতনা-ঘটনা—একমুহূর্তের মধ্যে চেতনার আত্মপ্রকাশ। এখানে জ্ঞাতা, জ্ঞান ও জ্ঞেয়—এই ত্রয়ী মুছে গিয়ে চেতনার একক স্পন্দনে রূপ নেয়। তখন জানা মানে কিছু শেখা নয়, বরং চেতনার নিজের দীপ্তি জ্বলে ওঠা। এ অবস্থায় জ্ঞান আর কোনো ক্রিয়া নয়—এটি অস্তিত্বেরই প্রকাশ, যেখানে চেতনা বলে ওঠে: “অহম্”—আমি আছি, আমি জানি, আমি সেই জ্ঞানেরই রূপ।

ফেনোমেনোলজি (Phenomenology) হলো এমন একটি দার্শনিক পদ্ধতি, যা মানুষের অভিজ্ঞতা, চেতনা এবং উপলব্ধির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বাস্তব জগত বা বস্তুকে “বাইরে” থেকে নয়, বরং চেতনার মধ্যে যেমনভাবে প্রতীয়মান হয়, সেই অবস্থায় বোঝা। অর্থাৎ, ফেনোমেনোলজি বাস্তবতার কোনো বাহ্যিক ব্যাখ্যা নয়, এটি অভিজ্ঞতার ভিতরে ডুব দিয়ে দেখে—“আমরা যেভাবে জগৎকে দেখি, অনুভব করি ও বুঝি, সেই দেখা বা অনুভবের প্রকৃতি কী।”

এই দর্শনের আধুনিক প্রবর্তক ছিলেন জার্মান দার্শনিক এডমুন্ড হুসার্ল (Edmund Husserl, ১৮৫৯–১৯৩৮)। তাঁর মতে, দর্শনের আসল কাজ হলো জগৎকে নয়, বরং জগৎ আমাদের চেতনায় যেভাবে প্রকাশিত হয়, সেটিকে বোঝা। হুসার্ল বলেন, “আমাদের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার মূল প্রশ্ন হলো—কীভাবে জিনিসগুলো আমাদের চেতনায় প্রতীয়মান হয়?” তাই দর্শনের কেন্দ্রে থাকা উচিত অভিজ্ঞতার বিশুদ্ধ বিশ্লেষণ—কোনো অনুমান, ধর্মীয় বিশ্বাস বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ছাড়াই।

ফেনোমেনোলজির প্রথম মৌলিক ধারণা হলো ইনটেনশনালিটি (Intentionality)—অর্থাৎ, সব চেতনা সবসময় কোনো কিছুর প্রতি নির্দেশিত থাকে। যখন আমরা ভাবি, দেখি বা অনুভব করি, তখন চেতনা কখনও শূন্য অবস্থায় থাকে না; এটি সর্বদা কোনো বিষয়ের দিকে “মুখ করে” থাকে—আমি এই গাছটি দেখি, আমি কোনো বেদনা অনুভব করি, আমি একটি চিন্তা ভাবি। ফলে চেতনা মানে শুধু “সচেতন থাকা” নয়, বরং “কিছুর প্রতি সচেতন থাকা।” এই সম্পর্কই চেতনা ও বস্তু, অভ্যন্তর ও বহিরের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।

হুসার্লের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো এপোখে (Epoché) বা ব্র্যাকেটিং (Bracketing)। তিনি বলেন, যখন আমরা অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করব, তখন আমাদের উচিত বাইরের বাস্তবতার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন বন্ধ রাখা। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা বলি “একটি লাল ফুল”, ফেনোমেনোলজি বলবে—“ফুলটি সত্যিই বাইরে আছে কি না”, সেটা আপাতত স্থগিত রাখো; বরং দেখো, ফুলটি কীভাবে আমার চেতনায় উপস্থিত হচ্ছে—রং, গন্ধ, আকৃতি, স্মৃতি—এইসব অনুভবের সমন্বয়েই আমার কাছে সেটি “ফুল” হিসেবে প্রতীয়মান। এইভাবেই আমরা পৌঁছাই “বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতার বর্ণনা”-য়, যেখানে চেতনার প্রকাশ নিজস্ব আলোয় উদ্‌ভাসিত।

হুসার্লের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো—“Zurück zu den Sachen selbst!”, যার অর্থ—“বস্তুর কাছে ফিরে চলো।” অর্থাৎ ধারণা, ব্যাখ্যা, তত্ত্ব বাদ দিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দিকে ফিরে যাও। আমরা সাধারণত জিনিসগুলো দেখি আমাদের ধারণার ফিল্টার দিয়ে, কিন্তু ফেনোমেনোলজি শেখায় কীভাবে সেই ফিল্টার সরিয়ে দেখে যেতে হয়, যা সত্যিই অভিজ্ঞতায় উপস্থিত।

হুসার্লের ছাত্র মার্টিন হাইডেগার (Martin Heidegger) এই ধারণাকে অস্তিত্ববাদী দিক দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ফেনোমেনোলজি কেবল চেতনার বিশ্লেষণ নয়; এটি মানুষের অস্তিত্বের (Being) অনুসন্ধান। মানুষ কেবল দেখে না, সে “বিশ্বে অবস্থিত এক সত্তা” (Being-in-the-world)। তাই চেতনা মানে শুধু দেখা বা জানা নয়, বরং “বিশ্বে থাকা,” “অর্থ নির্মাণ করা,” এবং “সত্তার অভিজ্ঞতা অর্জন করা।”

পরে মরিস মের্লো-পোঁতি (Maurice Merleau-Ponty) ফেনোমেনোলজিকে শরীর ও উপলব্ধির দর্শন হিসেবে বিকশিত করেন। তাঁর মতে, অভিজ্ঞতা মানে শুধু মন নয়, বরং শরীরের মাধ্যমেই জগৎকে ছোঁয়া। শরীরই সেই জীবন্ত সেতু, যার মাধ্যমে জগৎ ও চেতনা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। জঁ-পল সার্ত্র (Jean-Paul Sartre) এই ধারাকে অস্তিত্ববাদে রূপান্তর করেন, এবং বলেন—মানুষের স্বাধীনতা, দায়িত্ব ও অর্থ-নির্মাণ সবই তার চেতনার কাঠামোর মধ্যেই নিহিত।

ফেনোমেনোলজির প্রভাব তাই শুধু দর্শনে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে মনোবিজ্ঞান, সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, এমনকি চেতনা-বিজ্ঞান (Consciousness Studies) পর্যন্ত। এটি শেখায়—বাস্তবতা কোনো বাইরে-থাকা জিনিস নয়; বরং আমরা যেভাবে অনুভব করি, দেখি, ও ব্যাখ্যা করি, সেই অভিজ্ঞতাই আমাদের কাছে বাস্তব।

সহজ ভাষায়, ফেনোমেনোলজি বলছে—“জগৎ যেমন আছে, তেমন নয়; বরং আমি যেভাবে তা অনুভব করি, সেইভাবে জগৎ আমার কাছে বিদ্যমান।” তাই ফেনোমেনোলজি হলো অভিজ্ঞতার শুদ্ধ বর্ণনা (Pure Description of Experience) এবং চেতনার বিজ্ঞান (Science of Consciousness)—যেখানে সত্য মানে কোনো বাহ্যিক প্রমাণ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ প্রতীতি—অর্থাৎ চেতনার মধ্যেই সত্যের জাগরণ।

যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ (Vijñānavāda) বৌদ্ধ দর্শনের সেই শাখা, যা চেতনা ও অভিজ্ঞতার প্রকৃতি নিয়ে সর্বাধিক গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও অধিবিদ্যাগত বিশ্লেষণ করেছে। মহাযান বৌদ্ধধর্মের এই ধারা মূলত ভারতীয় চিন্তার ইতিহাসে “চেতনা-মাত্রবাদ” নামে পরিচিত—একটি এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা ঘোষণা করে যে, সমস্ত অস্তিত্ব আসলে চেতনার প্রকল্পন; যা-কিছু আমরা উপলব্ধি করি, তা বাহ্যিক কোনো বস্তু নয়, বরং চেতনারই অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন।