আমি যখন কোনো কিছু দেখি বা জানি, তখন প্রথম যে-জ্ঞানটি জন্মায় সেটি হলো “ব্যবসায়” (vyavasāya)। যেমন, আমি একটি ফুল দেখলাম এবং মনে হলো—“এটি একটি ফুল।” এই সরাসরি উপলব্ধিটিই মূল জ্ঞান বা ব্যবসায়।
এরপর যদি মনে হয়—“আমি জানি যে, আমি ফুলটি দেখেছি”—তাহলে সেটিই “অনুব্যবসায়” (anuvyavasāya)। অর্থাৎ, আমি মূল জ্ঞানের পর আবার সেই জ্ঞানকেই চিনছি বা স্মরণ করছি। কিন্তু এখানে নতুন করে ফুল দেখা হচ্ছে না; শুধু আগের দেখা অভিজ্ঞতাটিই মনে ফিরে আসছে।
অনুব্যবসায় কোনো নতুন জ্ঞান নয়, এটি কেবল আগের জ্ঞানের স্মৃতি বা প্রতিফলন। অদ্বৈত বেদান্তের ভাষায়, যদি আমি ভাবি—“আমি জানি যে, আমি জানি”—এটি আসলে একটিই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, দুটি জ্ঞান নয়। কারণ যদি প্রত্যেক জ্ঞানকে জানাতে আবার আরেক জ্ঞান লাগে, তাহলে সেই দ্বিতীয় জ্ঞানকে জানাতে তৃতীয় জ্ঞান লাগবে, এভাবে চলতে থাকবে অসীম ধারা—যাকে বলে “অনবস্থা” (anavasthā)।
বেদান্তের ভাষায় “অনবস্থা (anavasthā)” মানে হলো অসীম প্রত্যাবর্তন, অর্থাৎ এক ক্রিয়ার প্রমাণের জন্য যদি আরেকটি প্রমাণ লাগে, আবার তার জন্য আরেকটি লাগে—তাহলে সেই ধারার কোনো শেষ থাকে না। অদ্বৈত দর্শনে এটি একটি তাত্ত্বিক দোষ (doṣa), কারণ এতে জ্ঞান ও চেতনার স্বতঃপ্রকাশ ধারণা ধ্বংস হয়ে যায়।
আমি যদি বলি, “জ্ঞানকে জানাতে আরেক জ্ঞান লাগে,” তাহলে সেই দ্বিতীয় জ্ঞানকেও জানাতে তৃতীয় জ্ঞান দরকার হবে, চতুর্থ জ্ঞান দরকার হবে পঞ্চমের জন্য—এভাবে চলতে থাকবে অন্তহীন শৃঙ্খল। এর ফলে কখনও কোনো জ্ঞান ‘পূর্ণভাবে জানা’ সম্ভব হবে না। কোনো জ্ঞানই সম্পূর্ণ হবে না, কারণ প্রতিটি জ্ঞান আরেকটির অপেক্ষায় ঝুলে থাকবে।
শঙ্করাচার্যের মতে, এটি আত্মজ্ঞানের ধারণাকে অসম্ভব করে তোলে। আত্মা বা চেতনা যদি নিজে নিজে প্রকাশ না হয়, তবে তাকে জানার জন্য একটানা অসংখ্য জ্ঞান দরকার হবে—যা যুক্তিগতভাবে অস্বীকার্য। তাই তিনি বলেন—“আত্মা স্বপ্রকাশ; অন্য কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন নেই।” (ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য ২.৩.৭)
বেদান্তে বলা হয়—যদি অনবস্থা সত্য হতো, তবে কোনো “প্রমাণ” (pramāṇa) কখনও ফল দিত না। কারণ প্রতিটি প্রমাণের বৈধতা যাচাই করতে আরেক প্রমাণ লাগত, এবং প্রমাণের শৃঙ্খল কখনো সম্পূর্ণ হতো না। ফলে জ্ঞানই হতো অসম্ভব, মুক্তিও অপ্রাপ্য।
“অনবস্থা” দোষ মানে হলো—যেখানে জ্ঞানের জন্য অনন্ত নির্ভরতা সৃষ্টি হয়, ফলে জ্ঞান কখনও সিদ্ধ হয় না। বেদান্তে এটি দূর করা হয় এই বলে যে, আত্মা বা চেতনা স্বয়ংপ্রকাশ (svayam-prakāśa)—সে নিজেই নিজের জ্ঞাপক ও প্রমাণ; তার জন্য আরেক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। ফলে প্রমাণের ধারাবাহিক গতি সেখানেই থেমে যায়।
যেমন সূর্যের আলোকে দেখাতে অন্য আলো লাগে না, তেমনি চেতনার জ্ঞানও আরেক জ্ঞানের দ্বারা প্রকাশ্য নয়। এইভাবেই অদ্বৈত “অনবস্থা” দোষ দূর করে আত্মাকে একমাত্র স্বতঃসিদ্ধ ও স্বপ্রকাশ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
অনুব্যবসায় নতুন কোনো জানার ক্রিয়া নয়; এটি মূল চেতনার প্রতিধ্বনি মাত্র। যেমন আয়নায় সূর্যের প্রতিবিম্ব পড়লে নতুন সূর্য সৃষ্টি হয় না, বরং আগের সূর্যের আলোই প্রতিফলিত হয়—তেমনি আমার মনে জ্ঞানের প্রতিফলন নতুন জ্ঞান নয়, বরং মূল জ্ঞানের স্মৃতি বা উপস্থিতির প্রতিধ্বনি।
চেতনা এমন এক সত্তা, যেখানে “জানা”, “জানন”, এবং “জ্ঞেয়”—এই তিনটি পৃথক নয়। জ্ঞান কোনো বস্তু নয়, জ্ঞাপকই জ্ঞান—এই চেতনার স্বরূপই ব্রহ্ম। গীতা (১৩.২) বলে—“ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি।” অর্থাৎ, আমি সেই ক্ষেত্রজ্ঞ—যে জানে, কিন্তু যাকে কেউ জানতে পারে না। অতএব, আত্মা সর্বপ্রকাশক (sarva-prakāśaka) কিন্তু অপর-প্রকাশ্য (apara-prakāśya)। সে সব কিছুকে জানায়, কিন্তু তাঁকে জানানো যায় না। ব্রহ্ম-জ্ঞান মানে কোনো বস্তুকে জানা নয়; এটি নিজের স্বরূপে প্রত্যাবর্তন—চেতনার নিজের চেতনতায় জেগে ওঠা।
তাই, আত্মা নিজের অস্তিত্বে স্বাধীন; অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। আত্মা নিজেরই আলো, অন্য কোনো চেতনা তাঁকে জানাতে পারে না। জ্ঞানের জ্ঞান কল্পনা করলে অসীম প্রত্যাবর্তন ঘটে, তাই আত্মাজ্ঞান স্বয়ংপ্রকাশ। অনুব্যবসায় দ্বিতীয় কোনো জ্ঞান নয়, মূল চেতনার প্রতিফলনমাত্র। চেতনা সর্বপ্রকাশক কিন্তু অজ্ঞেয়; ব্রহ্ম-জ্ঞান কোনো অর্জন নয়, বরং নিজের মধ্যেই নিজের স্বরূপ চিনে ফেলা—“আমি সেই আলো, যেখান থেকে সব আলো জ্বলে।”
অদ্বৈত বেদান্তে যখন প্রশ্ন ওঠে—“তবে আত্মাকে জানা হবে কীভাবে?”—তখন এর উত্তরই তার তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রকাশ করে। আত্মাকে “জানা” যায় না, কারণ আত্মাই জানন স্বয়ং। তিনি কোনো “জ্ঞেয় বস্তু” নন; তিনি সেই চেতনা, যার আলোয় জানা, দেখা, ভাবা—সব সম্ভব হয়। আত্মা জানার বিষয় নন, বরং জানন নিজেই—এটাই অদ্বৈতের মূল উপলব্ধি। এই অবস্থাকেই বলা হয় অপরোক্ষ অভিজ্ঞতা (aparokṣānubhava)—অর্থাৎ, এমন জ্ঞান, যা মধ্যস্থতাহীন, যেখানে জানা ও জানন এক হয়ে যায়।
“অপরোক্ষ” মানে এখানে ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষ নয় (যেমন ঘট দেখা), বরং “মধ্যের অভাব”—অর্থাৎ প্রমাণ, চিন্তা বা মানসিক ক্রিয়ার কোনো সেতু নেই। ইন্দ্রিয় বা মন এখানে মাধ্যম নয়। যে-চেতনা নিজে সকল জ্ঞানের অধিষ্ঠান, তার জ্ঞান প্রমাণের মাধ্যমে নয়, বরং অবিদ্যা বা অজ্ঞান আবরণের নিবারণ দ্বারা ঘটে।
আপনি যদি এক-শো বই পড়েন, তাহলে কী লাভ? বইয়ের কিছুই তো মাথায় বা মনে থাকবে না। বই পড়ার পর আপনি সেই মানুষ হবেন, যে-মানুষ আপনি বই পড়ার আগে ছিলেন না। এটাই লাভ, এখানে অর্জিত জ্ঞানই অপরোক্ষ জ্ঞান—সেই চেতনার অধিষ্ঠান।
বেদান্ত বলে—প্রমাণ এখানে কোনো “বস্তু প্রকাশ” করে না, বরং “অবিদ্যার পর্দা” সরায়। সূর্য যেমন আকাশে সর্বদা আছে, মেঘ সরলে কেবল দেখা যায়—তেমনি আত্মা সর্বদা প্রকাশমান, কিন্তু অজ্ঞানের মেঘ তাকে আড়াল করে রাখে। প্রমাণের কাজ কেবল সেই মেঘ সরানো, আলো সৃষ্টি করা নয়।
এই নিবারণের মাধ্যম হলো শ্রুতি-বাক্য, বিশেষত মহাবাক্য “তৎ ত্বম্ অসি” (তুমি সেই)—ছান্দোগ্য উপনিষদের (৬.৮.৭) বিখ্যাত বাক্য। এই বাক্য কোনো নতুন তথ্য দেয় না; বরং একটি বিশেষ “অখণ্ডাকার-বৃত্তি” (akhaṇḍākāra-vṛtti) সৃষ্টি করে। এই বৃত্তি কোনো বস্তুর জ্ঞান নয়, বরং ভুল নাম-রূপের অবলুপ্তি—অর্থাৎ “আমি দেহ”, “আমি মন”, “আমি কর্তা”—এইসব অধ্যাস বা ভুল আরোপ দূর করে দেয়।
যতক্ষণ এই মিথ্যা আরোপ থাকে, ততক্ষণ আত্মার স্বপ্রকাশ চোখের সামনেই থেকেও আড়ালে পড়ে থাকে। কিন্তু যখন শ্রুতির অর্থ অন্তরে স্থির হয়, তখন অবিদ্যার পর্দা সরে যায়—এবং আত্মা নিজের মতো জ্যোতির্ময়ভাবে প্রকাশিত হয়। এখানে আত্মা কোনো “জানার বস্তু” নয়; বরং জানন স্বয়ং। চেতনার আলোই নিজেকে চেনে—এই আত্মসাক্ষাৎ-অভিজ্ঞতাই অপরোক্ষ জ্ঞান।
এই কারণে ব্রহ্ম-জ্ঞান কোনো নতুন বস্তুকে জানার নাম নয়। এটি “আমি-স্বরূপের প্রত্যভিজ্ঞা”—অর্থাৎ নিজের প্রকৃত চেতনার স্বীকৃতি। আমি যে জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি—সব অবস্থায়ও অবিচল সাক্ষী, সেই “আমি”কেই চিনে ফেলা।
উপনিষদে বলা হয়েছে—“অহং ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম) (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১.৪.১০)। এই উপলব্ধিতে কিছু নতুন অর্জন হয় না, কারণ ব্রহ্ম তো সর্বদাই নিজের মধ্যে বর্তমান। একে বলে “প্রাপ্তস্য প্রাপ্তি”—অর্থাৎ যা চিরকাল ছিল, কেবল তাকেই চিনে নেওয়া। এইভাবে জ্ঞানে কিছু আসে না; কেবল মায়া সরে যায়। যা ছিল, তা-ই প্রতীয়মান হয়—নিজেই সেই চিরসাক্ষী চেতনা, সেই অখণ্ড “আমি”, যার নাম ব্রহ্ম।
“প্রাপ্তস্য প্রাপ্তি” মানে হলো—যা আগে থেকেই আছে, সেটিকেই আবার পাওয়া। বেদান্তের ভাষায়, এটি বোঝায় যে, আত্মা বা ব্রহ্মকে নতুন করে অর্জন করা যায় না, কারণ তিনি কখনও হারিয়ে যাননি; তিনি সর্বদা বর্তমান।
কেউ যখন “ব্রহ্মজ্ঞান” পায়, তখন কোনো নতুন জিনিস পায় না; বরং তার ভুল ধারণা, মায়া বা অবিদ্যা সরে যায়। ফলে যা ছিল, সেটিই প্রকাশিত হয়। এই কারণেই বলা হয়—ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তির নয়, বরং আবরণ-নিবৃত্তির ফল।
যেমন, আমার গলায় একটি হার আছে, কিন্তু আমি ভুলে ভাবছি, হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গলায় হাত দিয়ে দেখি, হার তো সবসময় ছিল! এখন যে আমি সেটি পেলাম, আসলে কোনো নতুন কিছু পেলাম না—শুধু ভুলটা সরে গেছে। এটিই “প্রাপ্তস্য প্রাপ্তি”।
অদ্বৈত বেদান্ত বলে—আত্মা চিরসিদ্ধ (nitya-siddha), চিরকাল সম্পূর্ণ, চিরকাল উপস্থিত। তাঁকে জানার মানে নতুন কোনো সৃষ্টি নয়; কেবল অবিদ্যার অপসারণ। শঙ্করাচার্য বলেন—ব্রহ্মজ্ঞান ব্রহ্মকে নতুন করে সৃষ্টি করে না, কেবল অজ্ঞান দূর করে।
সূর্যের আলো সবসময় থাকে, কিন্তু মেঘে ঢাকা পড়লে আমরা দেখি না। মেঘ সরে গেলে আমরা বলি “সূর্য উঠেছে”, কিন্তু আসলে সূর্য নতুন করে ওঠেনি—সে ছিলই। মেঘের অবসানেই তার প্রকাশ। এই অবস্থাকেই বেদান্ত বলে “প্রাপ্তস্য প্রাপ্তি”—যেখানে যা প্রাপ্ত, সেটিই আবার প্রাপ্ত বলে মনে হয়, কারণ মায়া সরে গেছে।
অতএব, ব্রহ্মজ্ঞান মানে কোনো নতুন কিছু অর্জন নয়, বরং নিজের মধ্যেই নিজের চিরপরিচিত স্বরূপকে চিনে ফেলা। আমি সে-ই, যে চিরকাল আছে; জ্ঞান কেবল সেই উপলব্ধিটাকে জাগিয়ে তোলে।
অভিজ্ঞতায় যা প্রতীয়মান—বস্তু, শব্দ, রং, ভাব, স্পর্শ, অনুভূতি—সবই জ্ঞেয়। এই সব কিছুরই কোনো-না-কোনো আধার আছে, যার উপর এগুলি নির্ভরশীল। তাই এগুলি সীমাবদ্ধ, পরিবর্তনশীল, এবং উচ্চতর জ্ঞানে বাধযোগ্য।
এই সমস্ত জ্ঞেয় বস্তুর পেছনে এক অবিচ্ছিন্ন আলোকধারা জেগে থাকে—জানবার উপস্থিতি, যা কখনও বদলায় না। বস্তু আসে ও যায়, কিন্তু এই জানন-ধারা স্থির থাকে। এই স্থায়ী জ্ঞাপনী উজ্জ্বলতাই চিত্ বা চেতনা।
চেতনাকে বস্তু করা যায় না, কারণ বস্তু করতে গেলেই সেটিকে জ্ঞেয় বানাতে হয়। আর যা জ্ঞেয়, তা আর চেতনা নয়; সেটি কেবল চেতনার উপর প্রতিফলিত নাম-রূপ। চেতনা হচ্ছে প্রকাশক, প্রকাশ্য নয়।
সংবেদিতা অপরোক্ষ। ব্যাপারটা কীরকম? এর মানে বোঝার জন্য দুটি অংশ আলাদা করে ধরতে হয়—“সংবেদিতা” (saṃveditā) ও “অপরোক্ষ” (aparokṣa)।
“অপরোক্ষ” মানে “যা পরোক্ষ নয়”—অর্থাৎ, কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি জানা যায়। ইন্দ্রিয় বা যুক্তির সাহায্যে যা জানা যায়, তা “পরোক্ষ”। কিন্তু আত্মা বা চেতনা এমন, যাকে জানাতে কোনো প্রমাণ-যন্ত্র লাগে না। “আমি আছি”—এই বোধের জন্য চোখ, কান বা চিন্তা দরকার হয় না। এই জ্ঞান নিজের মধ্যেই উদ্ভাসিত; তাই এটি অপরোক্ষ।
“সংবেদিতা” মানে “নিজের দ্বারা জানা” বা “নিজের উপস্থিতিতেই জ্ঞাত হওয়া।” চেতনা অন্য কিছুর সাহায্যে প্রকাশ পায় না, সে নিজেই জানায়, আবার নিজেকেও জানায়। যেমন আলো নিজেই নিজের উজ্জ্বলতায় দৃশ্যমান, তেমনি আত্মা নিজেই নিজের উপস্থিতিতে জ্ঞাত।
দুটো শব্দ একত্র করলে “সংবেদিতা অপরোক্ষ” মানে দাঁড়ায়—চেতনার এমন অভিজ্ঞতা, যা নিজের দ্বারাই প্রকাশিত, অন্য কোনো মাধ্যম ছাড়া। এই অভিজ্ঞতা কোনো চিন্তা বা প্রমাণের ফল নয়, বরং চেতনার নিজের চেতনতায় উদ্ভাস।
আমি যখন বলি, “আমি আছি”—এই বোধে কোনো বাহ্য ইন্দ্রিয় বা যুক্তি কাজ করছে না। এটি আমার নিজের জ্ঞানের আলোয় স্বতঃপ্রকাশ। এই সরাসরি আত্মসচেতনতা, যেখানে জানন ও জানা একাকার—সেটিই সংবেদিতা—অপরোক্ষ জ্ঞান।
বেদান্ত বলে, আত্মাকে জানা মানে, তাকে কোনো বস্তু হিসেবে ধরা নয়, বরং নিজের চৈতন্যরূপে উপলব্ধ হওয়া। শঙ্করাচার্য বলেন, আত্মা কখনও জ্ঞেয় নয়; তিনি সমস্ত জ্ঞানের অধিষ্ঠান (ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য ২.৩.৭)। এই আত্ম-উপলব্ধিই—সংবেদিতা, যা অপরোক্ষ—যেখানে আমি নিজেই সেই জানন, যার আলোয় সব প্রতীয়মান।
সংবেদিতা অপরোক্ষ, অর্থাৎ, এটি আত্মার এমন অভিজ্ঞতা, যা স্বয়ংপ্রকাশ ও মধ্যস্থতাহীন—যেখানে জানা, জানন ও জ্ঞেয় এক এবং অবিভক্ত। চেতনাকে জানার জন্য ইন্দ্রিয় বা প্রমাণের সাহায্য লাগে না; সে নিজেই নিজেকে সদা-উপলব্ধ।