অদ্বৈত বেদান্ত হলো প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের এক গভীর শাখা, যার অর্থ “দ্বিতীয়হীন এক”—অর্থাৎ একমাত্র চূড়ান্ত বাস্তবতা বা ব্রহ্ম (Brahman) ছাড়া আর কিছুই স্বতন্ত্রভাবে সত্য নয়। এটি উপনিষদ (Upaniṣad), ব্রহ্মসূত্র (Brahma Sūtra) এবং ভাগবত গীতা (Bhagavad Gītā)-র ত্রয়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ঋষি বাদরায়ণ (Bādarāyaṇa) ব্রহ্মসূত্র রচনা করেন এবং আদি শঙ্করাচার্য (Ādi Śaṅkarācārya) তার অদ্বৈত ব্যাখ্যা দেন।
অদ্বৈতের মূল লক্ষ্য হলো এই উপলব্ধি করা যে, ব্যক্তিগত আত্মা (Jīvātman) এবং সর্বব্যাপী আত্মা বা ব্রহ্ম (Ātman/Brahman) মূলত একই—তাদের মধ্যে কোনো মৌলিক ভেদ নেই। “অদ্বৈত” (Advaita) শব্দের আক্ষরিক অর্থ “দুই নয়”—অর্থাৎ কোনো দ্বিতীয় সত্তা নেই। এই ধারণা বোঝায় যে, ব্রহ্মই একমাত্র পরম সত্য, যা সব কিছুর ভিত্তি, উৎস ও পরিসমাপ্তি।
ব্রহ্ম একই সঙ্গে অন্তর্নিহিত (Immanent) এবং অতীন্দ্রিয় (Transcendent)—অর্থাৎ এটি একদিকে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান, অন্যদিকে সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে অবস্থিত। এটি অপরিবর্তনীয় (Immutable), চিরন্তন (Eternal) এবং অখণ্ড (Non-dual) বাস্তবতা, যা চিন্তা বা বুদ্ধি (Intellect) দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ধরা যায় না, কিন্তু আধ্যাত্মিক জ্ঞানের (Spiritual Knowledge) মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।
অদ্বৈতের মতে, মানুষের দুঃখ ও বন্ধনের মূল কারণ হলো বিভ্রান্তি বা অবিদ্যা (Avidyā)—অর্থাৎ “আমি শরীর, মন, ইন্দ্রিয়”—এই ভুল পরিচয়। প্রকৃতপক্ষে, আমি সেই বিশুদ্ধ চেতনা (Pure Consciousness), যা সব কিছুর সাক্ষী। জীবাত্মা (Jīvātman) আসলে সেই একক চৈতন্যের (Universal Consciousness) প্রতিফলন, যা সীমিত দেহ-মন কাঠামোর মধ্যে ভুলভাবে আবদ্ধ বলে মনে হয়।
এই বিভ্রান্তি বা অজ্ঞতা দূর করার মাধ্যম হলো জ্ঞান (Jñāna)। যখন মানুষ উপলব্ধি করে যে, আত্মা ও ব্রহ্ম একই, তখন সমস্ত দ্বৈততা বিলীন হয়, এবং মুক্তি (Mokṣa) লাভ হয়।
অদ্বৈতের চূড়ান্ত সত্য সংক্ষেপে এই তিনটি বাক্যে প্রকাশিত—“ব্রহ্মই একমাত্র সত্য” (Brahma Satyam), “জগৎ মিথ্যা” (Jagan Mithyā), “আত্মা ব্রহ্ম থেকে আলাদা নয়” (Jīvo Brahmaiva Na Aparaḥ)। অর্থাৎ, জগৎ অভিজ্ঞতায় সত্য মনে হলেও তা পরিবর্তনশীল ও নির্ভরশীল, তাই পরমার্থে সত্য নয়; একমাত্র ব্রহ্মই স্থায়ী, অবিকৃত, এবং স্বতন্ত্র বাস্তবতা।
অদ্বৈতের পরবর্তী দার্শনিক ব্যাখ্যাকারগণ, যেমন মধুসূদন সরস্বতী (Madhusūdana Sarasvatī), ব্রহ্মকে নেতিবাচক (‘নাস্তি’ বা ‘নেই’ বা ‘অস্তিত্ব নেই’ অর্থে) সংজ্ঞায় প্রকাশ করেছেন—এটি এমন এক সত্তা, যা মিথ্যাত্বের অনুপস্থিতি (Absence of Falsity), অজ্ঞানের অনুপস্থিতি (Absence of Ignorance), এবং দুঃখ বা সীমাবদ্ধতার অনুপস্থিতি (Absence of Sorrow or Limitation) দ্বারা চিহ্নিত। এইভাবে ব্রহ্ম হলো “সৎ-চিত্-আনন্দ” (Sat–Cit–Ānanda)—অর্থাৎ অস্তিত্ব (Being), চেতনা (Consciousness), ও আনন্দ (Bliss)-এর চিরন্তন ঐক্য।
অদ্বৈতের দৃষ্টিতে পার্থক্য ও বহুত্বের অভিজ্ঞতা আসলে ভুল পরিচয়ের ফল—যেমন দুর্বল আলোতে দড়িকে ভুল করে সাপ মনে হওয়া। দড়ি (Rope) আসলে ব্রহ্মের প্রতীক, আর সাপ (Snake) হলো মায়া (Māyā)—অর্থাৎ ভুল আরোপ বা অধ্যাস (Adhyāsa)। এই ভুল ধারণাই অবিদ্যা, যা জ্ঞান দ্বারা বিলীন হয়।
অদ্বৈতের মতে, ব্রহ্মই চূড়ান্ত সত্য, আর জগৎ কেবল তার প্রতিফলন বা আপাত প্রকাশ (Empirical Manifestation)। জগতের বাস্তবতা ব্যাবহারিক (Vyāvahārika), কিন্তু চূড়ান্ত নয় (Pāramārthika)। এইভাবে অদ্বৈত বেদান্ত একদিকে আত্মা ও ব্রহ্মের অভিন্নতা ঘোষণা করে, অন্যদিকে জগতের আপাত সত্যতাকে ব্যাখ্যা করে।
ফলত, অদ্বৈত দর্শনের সাধনা হলো এই উপলব্ধিতে পৌঁছানো যে—“আমি ব্রহ্ম” (Aham Brahmāsmi)। যখন এই জ্ঞান জন্মায়, তখন মায়া ও অবিদ্যা দূর হয়, এবং তখনই মানুষ উপলব্ধি করে সেই একক চেতনা—যা সর্বত্র, সর্বকালে, এবং সব অভিজ্ঞতার পেছনে একমাত্র সত্য।
জাগতিক বিশ্ব—অর্থাৎ যে দৃশ্যমান বাস্তবতায় আমরা বাস করি, চিন্তা করি, কাজ করি—সেটিই অদ্বৈত দর্শনের ব্যাখ্যায় “প্রপঞ্চ” (Prapañca) বা “জগৎ” (Jagat) নামে পরিচিত। এই জগৎ অদ্বৈতের সত্তাতত্ত্বে এক জটিল অবস্থান দখল করে আছে: এটি একদিকে “অস্তিত্বের প্রকাশ” হলেও, অন্যদিকে “চূড়ান্ত বাস্তবতা” নয়।
অদ্বৈত বেদান্ত বলে—ব্রহ্মই একমাত্র চূড়ান্ত সত্য, আর এই জগৎ তার তুলনায় আপাত বা “মিথ্যা” (Mithyā)। এখানে “মিথ্যা” বলতে সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীনতা বোঝানো হয়নি; বরং এর অর্থ হলো “যা বাস্তব মনে হয়, কিন্তু চূড়ান্তভাবে স্বাধীন বা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রাখে না”। জগৎ বাস্তবতার প্রতিফলন, কিন্তু সেই বাস্তবতার সমান নয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গির সারসংক্ষেপ একটি শ্লোকে প্রকাশিত—“Brahma Satyam Jagan Mithyā; Jīvo Brahmaiva Na Aparaḥ”। অর্থাৎ, “ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, জগৎ মিথ্যা, আর আত্মা (জীব) ব্রহ্মের থেকে আলাদা নয়”। এই নীতিটি অদ্বৈতের সমগ্র দার্শনিক কাঠামোর ভিত্তি। ব্রহ্ম হলো চূড়ান্ত সত্য (Pāramārthika Satyam), যা অপরিবর্তনীয়, অসীম, এবং সমস্ত কিছুর অধিষ্ঠান। অন্যদিকে, জগৎ এই ব্রহ্মের প্রকাশ বা প্রতিফলনমাত্র—যা সময়, স্থান ও কারণের (Time, Space, Causation) শর্তে সীমাবদ্ধ। ফলে, এটি সত্য হলেও “শর্তাধীন সত্য” বা ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Satyam) মাত্র।
অদ্বৈত এখানে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য টানে—“মিথ্যা” (Mithyā) আর “অসৎ” (Asat) এক নয়। “অসৎ” মানে সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন, যেমন “আকাশে ফুল”। কিন্তু “মিথ্যা” মানে এমন কিছু, যা অভিজ্ঞতায় প্রকাশ পায়, কার্য-কারণ অনুসারে কাজ করে, কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্লেষণে ব্রহ্মের ওপর নির্ভরশীল বলে স্বাধীন সত্য নয়।
অদ্বৈতের মতে, এই জগতের বহুত্ব বা পরিবর্তনশীলতা আসলে আমাদের জ্ঞানগত ভুলের (Cognitive Error) ফল। যখন চেতনা (Consciousness) নিজেকে দেহ-মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ভুলভাবে অভিন্ন করে দেখে, তখনই সৃষ্টি হয় “আমি” ও “বিশ্ব”-এর বিভাজন। এই বিভাজনের নামই “অবিদ্যা” (Avidyā)।
অবিদ্যা মানেই সেই মূল ভুল, যার ফলে চিরন্তন ব্রহ্মের ঐক্য ভেঙে বহুত্বের অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। ফলে, বহুত্বের এই অভিজ্ঞতা আসলে একটি রায়-ভ্রান্তি (Error of Judgment)—বাস্তবতার ভুল পাঠ। জগৎকে আমরা “স্বাধীন বাস্তবতা” হিসেবে গ্রহণ করি, অথচ তা আসলে ব্রহ্মের প্রতিফলিত রূপ, যা কেবল মায়ার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় আসে।
এইভাবে অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, জগৎকে পুরোপুরি অবাস্তব বলা যায় না, আবার চূড়ান্ত সত্যও বলা যায় না। এটি দুইয়ের মাঝামাঝি—অনির্বচনীয় (Anirvacanīya), অর্থাৎ যা “না পুরো সত্য, না পুরো মিথ্যা”।
সুতরাং, জগৎ অদ্বৈতের দার্শনিক কাঠামোয় “অভিজ্ঞতার স্তরে বাস্তব”, কিন্তু “চূড়ান্ত বিশ্লেষণে অবাস্তব”। আর এই পার্থক্য বুঝতে পারাই অদ্বৈতের জ্ঞানতাত্ত্বিক চর্চার মূল—কারণ জ্ঞান জন্মায় তখনই, যখন বোঝা যায় যে, যা দেখা যায়, তা কেবল প্রতিফলন, আর যা অপরিবর্তনীয়, সেটিই একমাত্র বাস্তবতা—ব্রহ্ম।
অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে মুক্তি বা মোক্ষ (Mokṣa) কোনো আকাশকুসুম আদর্শ নয়; এটি মানবজীবনের চূড়ান্ত উপলব্ধি—নিজের প্রকৃত স্বরূপকে জানার জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিণতি। মোক্ষ শব্দের অর্থ সাধারণভাবে মুক্তি, কিন্তু অদ্বৈতের ব্যাখ্যায় এর মানে হলো দুঃখ, অজ্ঞতা এবং পুনর্জন্মের অন্তহীন চক্র থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া।
এই মুক্তি কোনো কর্মের ফল নয়, কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়, এবং কোনো দূরবর্তী স্বর্গীয় অবস্থা নয়। এটি বিদ্যা (Jñāna) বা প্রকৃত জ্ঞানের ফল—সেই জ্ঞান, যা মানুষকে উপলব্ধি করায় যে, “আমি এই দেহ বা মন নই, আমি সেই চৈতন্য, যা সব কিছুর সাক্ষী”।
অদ্বৈতের মতে, যতক্ষণ মানুষ নিজেকে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় বা কর্মফলভোগী আত্মা হিসেবে চিনে, ততক্ষণ সে মায়ার (Māyā) জালে বন্দি থাকে। এই ভুল পরিচয়ই অজ্ঞতা (Avidyā), যার ফলে মানুষ মনে করে, সে ‘কর্তা’ (Doer), ‘ভোক্তা’ (Enjoyer), বা ‘ভোগের অধিকারী’। কিন্তু প্রকৃত আত্মা (Ātman) কখনোই কর্তা বা ভোক্তা নয়—এটি কেবল সাক্ষী, নির্লিপ্ত চৈতন্য।
তাই মুক্তির সাধনা (Sādhanā) হলো এই ভুল পরিচয় ভেঙে ফেলা। এর পথ জ্ঞানমার্গ (Jñāna-mārga): শ্রবণ (śravaṇa)—শাস্ত্রের বাণী মনোযোগ দিয়ে শোনা, মনন (manana)—যুক্তি ও চিন্তার দ্বারা সন্দেহ দূর করা, এবং নিদিধ্যাসন (nididhyāsana)—গভীর ধ্যানের মাধ্যমে এই জ্ঞানকে জীবনের সত্য অভিজ্ঞতায় রূপ দেওয়া।
অদ্বৈত বলে, মুক্তি কোনো নতুন কিছু “অর্জন” নয়, বরং যা সবসময় ছিল, কিন্তু অজ্ঞতা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, সেই চিরন্তন সত্যের “উন্মোচন”। যেমন সূর্য কখনও অস্ত যায় না, কিন্তু মেঘে ঢেকে গেলে দেখা যায় না—তেমনি আত্মাও কখনও হারায় না, কেবল অবিদ্যার অন্ধকারে আড়াল হয়ে থাকে। যখন জ্ঞানের উদয় হয়, তখন সেই অন্ধকার দূর হয়, আর আত্মার স্বরূপ নিজেই প্রকাশিত হয়।
অতএব, মোক্ষ মানে কোনো নতুন অবস্থায় প্রবেশ নয়; বরং অজ্ঞতার বিলোপ—এক গভীর “অহংকার-বিলয়”, যেখানে জানা যায়, “আমি কখনোই আবদ্ধ ছিলাম না”। এই জ্ঞানই চূড়ান্ত স্বাধীনতা, যেখানে দেহ-মনসের সমস্ত ভ্রান্ত পরিচয় বিলীন হয়, আর অবশিষ্ট থাকে কেবল সেই এক চৈতন্য—ব্রহ্ম, যা সর্বব্যাপী, স্বতঃপ্রকাশিত এবং চিরমুক্ত।
অদ্বৈত বেদান্তের দার্শনিক কাঠামোয় “অজ্ঞান” বা “অবিদ্যা” (Avidyā) কেবল একটি ধারণা নয়; এটি সমগ্র তত্ত্বব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সমস্যা। ব্রহ্ম, আত্মা, জগৎ—সব কিছুর সম্পর্ক বোঝাতে অদ্বৈতকে অবিদ্যা-তত্ত্বের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাই অদ্বৈতের অজ্ঞানের বিশ্লেষণ শুধু মেটাফিজিক্স (অধিবিদ্যা বা সত্তাতত্ত্ব—অর্থাৎ, যা বাস্তবতার মূল প্রকৃতি ও চূড়ান্ত কারণ নিয়ে আলোচনা করে) নয়, এক গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক ও দ্বান্দ্বিক অনুসন্ধান।
এই “অবিদ্যা”-র প্রশ্নটি কেবল অদ্বৈতের অভ্যন্তরীণ ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি ভারতীয় দর্শনের বৃহত্তর বৌদ্ধিক পরিসরে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অদ্বৈতের “অবিদ্যা” ধারণাকে অনেকসময় “মায়া” (Māyā) নামেও বোঝানো হয়—যা ব্রহ্মের সঙ্গে একসাথে থেকে জগতের আপাত-অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে, কিন্তু নিজের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত বাস্তবতা রাখে না।
অদ্বৈত যখন বলল, “অবিদ্যা আছে, কিন্তু তারও কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই”, তখনই অন্যান্য দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতেরা এর যৌক্তিক সামঞ্জস্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই বিতর্ক থেকেই “অজ্ঞানের দ্বান্দ্বিকতা” (Dialectics of Ignorance) গড়ে ওঠে। অর্থাৎ, “অবিদ্যা” যদি থাকে, তবে তার অস্তিত্বের ধরন কী? সেটি যদি না থাকে, তবে জগৎ কীভাবে প্রতীয়মান হয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে অদ্বৈতকে নিজের ধারণাকে কঠোর যুক্তির পরীক্ষায় প্রমাণ করতে হয়েছে। “Dialectics of Ignorance” মানে হলো—অজ্ঞতা নিজেই জ্ঞানের বিপরীতে এক দার্শনিক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে, যার মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত সত্য উপলব্ধ হয়।
ভারতীয় দার্শনিক ঐতিহ্যে “দ্বান্দ্বিক শিক্ষাবাদ” (Dialectical Scholasticism) বলতে বোঝায় সেই বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি, যেখানে প্রতিটি মতবাদ (Siddhānta) একটি প্রতিপক্ষ মত (Pūrvapakṣa) দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা হয়। এই পদ্ধতিতেই ভারতীয় দর্শন নিজের বিকাশ ঘটিয়েছে। Dialectical Scholasticism এমন এক দার্শনিক পদ্ধতি, যেখানে শাস্ত্রীয় (ধর্মগ্রন্থভিত্তিক) যুক্তিবিদ্যা ও দ্বান্দ্বিক অনুসন্ধান পরস্পর মিলিত হয়ে সত্যের ব্যাখ্যা নির্মাণ করে। অর্থাৎ, এটি এমন এক চিন্তাধারা, যেখানে ধর্মতত্ত্বকে যুক্তি ও তর্কের কাঠামোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়—যেখানে প্রতিটি ধারণা নিজের বিপরীতের সঙ্গে সংলাপে প্রবেশ করে এবং সেই তর্ক-সংঘর্ষ থেকেই উচ্চতর সত্য জন্ম নেয়।
অদ্বৈতের অবিদ্যা-তত্ত্বও ঠিক এই ঐতিহ্যের মধ্যেই স্থাপিত। বহু শাস্ত্রীয় রচনায় অন্যান্য দর্শন—যেমন বৈষ্ণবের অচিন্ত্যভেদাভেদ (Acintya-Bhedābheda), দ্বৈত বেদান্ত (Dvaita Vedānta), বা বৌদ্ধ মাধ্যমক (Mādhyamika)—অদ্বৈতের অবিদ্যা-তত্ত্বের বিরুদ্ধে বিস্তারিত সমালোচনা করেছে।