অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: আটাত্তর



অদ্বৈত বেদান্তে, পক্ষধর্মতার ধারণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক বিতর্কের জন্ম দেয়, যা জগতের আধারত্ব এবং ব্রহ্মের পরম সত্যতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাথমিকভাবে, 'পক্ষধর্মতা' বলতে বোঝায় যে, কোনো বিষয়ের (পক্ষ) কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম (ধর্ম) বিদ্যমান। যেমন, জগতে আমরা রং, আকার, গতি, কার্য-কারণ সম্পর্ক ইত্যাদি দেখি এবং এগুলিকে জগতের ধর্ম হিসেবে স্বীকার করি। ব্যাবহারিক স্তরে, 'জগতে ধর্মিত্ব আছে'—এই কথাটি সহজে বোধগম্য এবং প্রামাণ্য বলে বিবেচিত। আমরা প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় বস্তুর গুণাবলিকে তাদের ধর্ম হিসেবেই জানি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এই 'আধারত্ব' বা ধর্মসমূহের অধিষ্ঠানকে কি আত্মার সমতুল্য তাত্ত্বিক মর্যাদা দেওয়া যায়? অর্থাৎ, জগৎ কি এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা, যা তার ধর্মসমূহকে নিজস্ব আধার রূপে ধারণ করে, না কি এর আধারত্ব অন্য কোনো পরম সত্তার উপর নির্ভরশীল?

অদ্বৈত বেদান্ত এই প্রশ্নের উত্তরে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। অদ্বৈতের মতে, জগতের আধারত্ব 'মায়াসাপেক্ষ'। এর অর্থ হলো, জগৎ যেমনটি আমরা দেখি, তা পরম সত্য নয়; এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি প্রতিভাস মাত্র। ব্রহ্মই একমাত্র সত্য সত্তা বা 'অধিষ্ঠান-রূপে সত্য সত্তা'। জগতের 'ধামিত্ব' (অর্থাৎ ধর্মসমূহকে ধারণ করার ক্ষমতা) আসলে 'অধ্যাস-জনিত প্রতিভাস'। 'অধ্যাস' বলতে বোঝায় এক বস্তুর উপর অন্য বস্তুর মিথ্যা আরোপ। এর বিখ্যাত উদাহরণ হলো 'দড়ি-সাপ' ভ্রম। অন্ধকারে একটি দড়িকে সাপ বলে মনে হতে পারে, যেখানে 'সাপ' রূপে যে-গুণাবলি (যেমন গতি, ভয়ংকরতা) প্রতীয়মান হয়, তা আসলে দড়ির উপর আরোপিত। বিশ্লেষণের পর যখন দড়ির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়, তখন বোঝা যায় যে, 'ধ্রুবণ (ধর্ম যে-সত্তায় অবস্থান করে) দড়ি, সাপ নয়'। অর্থাৎ, সাপের ধর্মগুলি দড়িতে থাকলেও, দড়ি কিন্তু সাপ নয়। তেমনি, জগতের যাবতীয় ধর্ম ব্রহ্মের উপর আরোপিত হলেও, জগৎ ব্রহ্ম নয়।

এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, যদি বিতর্কটি পারমার্থিক স্তরে উন্নীত হয়, তবে 'জগৎ ধামি'—এই পক্ষধর্মতাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পারমার্থিক স্তরে জগৎ ধামি নয়, বরং 'ধামি-বিভ্রমের ক্ষেত্র'। অর্থাৎ, জগৎ নিজেই একটি ভ্রমের আধার, যেখানে ধর্মগুলি মিথ্যাভাবে আরোপিত হয়। যখন পক্ষধর্মতা নিজেই বিতর্কিত, তখন কোনো যুক্তির 'হেতু' (কারণ) 'অসিদ্ধ' বা 'অস্থির' হয়ে যায়। হেতু যদি নিশ্চিত না হয়, তবে পুরো 'পঞ্চাবয়ব অনুমান'-এর (ভারতীয় যুক্তিশাস্ত্রের একটি প্রধান পদ্ধতি) চাকা থেমে যায়, কারণ অনুমানের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে যায়।

‘পঞ্চাবয়ব অনুমান’ ন্যায়দর্শনের একটি সুসংহত যুক্তি-পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্তকে স্পষ্ট ও অবিচ্ছিন্ন যুক্তির ধারায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। “পঞ্চ” অর্থ পাঁচ, আর “অবয়ব” অর্থ অংশ। তাই “পঞ্চাবয়ব অনুমান” মানে পাঁচটি ধারাবাহিক ধাপে গঠিত এক পূর্ণাঙ্গ যুক্তি, যেখানে প্রতিটি ধাপ চিন্তার যৌক্তিক প্রবাহকে মজবুত করে তোলে।

প্রথম অংশ হলো প্রতিজ্ঞা (Pratijñā)—এটি বক্তার প্রস্তাব বা বক্তব্য। উদাহরণস্বরূপ, “আকাশে মেঘ জমেছে, তাই শীঘ্রই বৃষ্টি হবে”—এটাই প্রতিজ্ঞা।
দ্বিতীয় অংশ হলো হেতু (Hetu)—অর্থাৎ কারণ বা যুক্তি। বক্তা বলেন, “কারণ, মেঘ ঘন ও কালো হয়ে গেছে”—এটি সেই কারণ, যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত টানা হচ্ছে।
তৃতীয় অংশ হলো দৃষ্টান্ত (Dṛṣṭānta)—এখানে একটি পরিচিত উদাহরণ দেওয়া হয়, যা হেতু ও সাধ্যের সম্পর্কটি প্রমাণ করে। বক্তা বলেন, “যেমন বর্ষাকালে এমন ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে সবসময় বৃষ্টি হয়”—এই উদাহরণটি দেখায় যে, মেঘের ঘনত্ব ও বৃষ্টির মধ্যে একটি নিয়মিত সম্পর্ক আছে।
চতুর্থ অংশ হলো উপনয় (Upanaya)—এই ধাপে বক্তা সেই সাধারণ নিয়মকে বর্তমান ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, “এখনও তেমন ঘন কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে”—অর্থাৎ যে-অবস্থায় বৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে, সেই অবস্থা এখানে উপস্থিত।
পঞ্চম অংশ হলো নিগমন (Nigamana)—এটি চূড়ান্ত উপসংহার বা সিদ্ধান্ত। বক্তা বলেন, “অতএব, আজ বৃষ্টি হবে”—এভাবে যুক্তি সম্পূর্ণ হয় এবং প্রতিজ্ঞা প্রমাণিত হয়।

এই পাঁচটি ধাপের প্রত্যেকটির নিজস্ব ভূমিকা আছে—প্রতিজ্ঞা দাবি তোলে, হেতু কারণ দেয়, দৃষ্টান্ত সম্পর্কটি স্থাপন করে, উপনয় সেই সম্পর্ক বর্তমান ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে, আর নিগমন যুক্তিকে সমাপ্ত করে। এই পদ্ধতিতে চিন্তার প্রতিটি ধাপ স্পষ্টভাবে যাচাইযোগ্য হয়। সংক্ষেপে, পঞ্চাবয়ব অনুমান হলো এমন এক যুক্তি-পদ্ধতি, যেখানে প্রতিজ্ঞা, হেতু, দৃষ্টান্ত, উপনয় ও নিগমন—এই পাঁচটি ধারাবাহিক অংশের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য যুক্তির ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

পক্ষধর্মতা রক্ষার শেষ আশ্রয় হিসেবে 'স্তর-ভেদ' মানার প্রস্তাব করা হয়। এই মতানুসারে, ব্যাবহারিক স্তরে জগৎ ধামি (অর্থাৎ, জাগতিক বস্তুর ধর্ম আছে); কিন্তু পারমার্থিক স্তরে একমাত্র ব্রহ্মই ধামি। এই সমাধান আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক মনে হলেও, বক্তার মূল প্রত্যয় ছিল 'তত্ত্বাবেদনের দাবি'—যা পারমার্থিক, ব্যাবহারিক নয়। যদি কেউ পারমার্থিক সত্য উদ্ঘাটন করতে চায়, তাহলে ব্যাবহারিক স্তরের যুক্তি টেনে এনে পারমার্থিক সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করলে 'স্তর-সংকর' দোষে যুক্তি আক্রান্ত হয়। এই দোষকে ইংরেজিতে "category mistake" বা "level confusion" বলা যেতে পারে। এটি এক প্রকার 'সত্তা-ত্রয়সংকর' দোষের শামিল, যেখানে বিভিন্ন সত্তা-স্তরের (ontological levels) বৈশিষ্ট্যগুলিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে মিশিয়ে ফেলা হয়। এর ফলে যুক্তির আত্মবিরোধিতা (internal contradiction) বা স্ববিরোধিতা (self-contradiction) জন্ম নেয়, যা সত্যের অন্বেষণে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

পারমার্থিক সত্য হলো সেইসব মৌলিক এবং অপ্রমেয় সত্য, যা জাগতিক বা ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে অবস্থিত। এই সত্যগুলো আত্মিক, দার্শনিক বা ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে উপলব্ধ হয়, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের আওতায় পড়ে না। অন্যদিকে, ব্যাবহারিক স্তরের যুক্তি বা empiricism জাগতিক অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এই যুক্তি প্রতিষ্ঠিত। যখন এই দুই ভিন্ন স্তরের যুক্তিকে অযৌক্তিকভাবে একত্রিত করা হয়, তখন তা কেবল তাত্ত্বিক বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে না, বরং পারমার্থিক সত্যের গভীরতাকেও হ্রাস করে।

উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ চায়, তবে সে 'স্তর-সংকর' দোষে আক্রান্ত হয়। ঈশ্বর বা আত্মার মতো পারমার্থিক ধারণাগুলি প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন নয় এবং এদের অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনই, যদি কেউ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে চায়, তাহলেও একই ত্রুটি ঘটে। এই দুই স্তরের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে প্রতিটি স্তর তার নিজস্ব বিচারধারা ও পদ্ধতি অনুযায়ী পরিচালিত হতে পারে।

এই সত্তা-ত্রয়সংকর দোষের আরও উদাহরণ হতে পারে যখন আমরা বিমূর্ত ধারণাগুলোকে (abstract concepts) বস্তুগত বৈশিষ্ট্য আরোপ করি। যেমন, "ন্যায়বিচার" একটি বিমূর্ত ধারণা, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থান দখল করে না বা যার নির্দিষ্ট ওজন নেই। কিন্তু যদি কেউ ন্যায়বিচারকে একটি সাকার বস্তুর মতো করে খুঁজতে চায়, তবে সে এই দোষে পতিত হয়। একইরকমভাবে, মন এবং দেহের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় যদি আমরা মনকে কেবল মস্তিষ্কের একটি অংশ হিসেবে দেখি এবং তার পারমার্থিক বা অতীন্দ্রিয় সত্তাকে উপেক্ষা করি, তবে সেখানেও একটি 'স্তর-সংকর' দোষের সম্ভাবনা থাকে।

সুতরাং, পারমার্থিক সত্যের অন্বেষণে আমাদের অবশ্যই স্তর-সংকর দোষ পরিহার করতে হবে। প্রতিটি সত্তা-স্তরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, কার্যকারিতা এবং যুক্তি কাঠামোকে শ্রদ্ধা জানানো উচিত। পারমার্থিক সত্য উপলব্ধি করতে হলে তার নিজস্ব পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হবে, যা প্রায়শই ধ্যান, আত্মিক অনুশীলন, গভীর দার্শনিক বিচার বা ধর্মীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সম্ভব হয়। ব্যাবহারিক স্তরের যুক্তি তার নিজস্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রয়োজনীয়, কিন্তু পারমার্থিক সত্যের দরবারে এর সীমিত ভূমিকা রয়েছে। এই সচেতনতা আমাদের সত্যের পথে সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং অনর্থক বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখবে।

অদ্বৈত বেদান্তের মতে, জগতের দৃশ্যমান ধর্মাবলি ও তার আধারত্ব এক আপেক্ষিক সত্য। পরম সত্য হলো ব্রহ্ম, যেখানে জগতের ধর্মাবলি মায়ার আবরণে প্রতিভাত হয়। ব্যাবহারিক ও পারমার্থিক স্তরের পার্থক্য না করলে দার্শনিক যুক্তিতে স্ববিরোধিতা দেখা দেয় এবং ব্রহ্মের একত্ব ও অদ্বিতীয়তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই বিশ্লেষণ ভারতীয় দর্শনে সত্তাতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব এবং যুক্তিশাস্ত্রের গভীর আন্তঃসম্পর্ককে তুলে ধরে।

স্পষ্টতই, বক্তার প্রস্তাবিত হেতু “ধর্মিত্ব” খুব সাধারণ ও অতিব্যাপ্ত; অনুষঙ্গ তাই অনিবার্যভাবে উপাধি-নির্ভর হয়ে পড়ে, আর পক্ষধর্মতা পারমার্থিক স্কেলে আরোপমাত্র। অনুষঙ্গ বাঁচাতে “ধর্মিত্ব”-কে যদি চৈতন্য-স্বরূপে সীমিত করা হয়, তবে হেতু-সাধ্য মিল আত্মা-নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং জগৎ বাদ পড়ে; আর যদি জগৎজুড়ে বিস্তৃত রাখা হয়, তবে তা থেকে তত্ত্বাবেদন টেনে আনা যুক্তিগতভাবে সব্যভিচারী। দার্শনিক ফলিতার্থ এই যে—জগৎকে তত্ত্বাবেদনের পথে আনতে গেলে “ধর্মিত্ব” নয়, বরং অনুপাধি চৈতন্য-স্বরূপই যথার্থ হেতু; আর সেই হেতুর ক্ষেত্রে জগৎ নয়, আত্মাই প্রকৃত পক্ষ। এই স্থান-বদলের অনুধাবনটাই দেখায়, কেন অদ্বৈত ঐতিহ্যে তত্ত্বাবেদনকে শ্রুতি-সমর্থ অপরোক্ষানুভবে ন্যস্ত করা হয় এবং কেন জগৎ, ধর্মের আধার হয়েও, পারমার্থিক তত্ত্ব-উন্মোচনের বাহন নয়—বরং উপহরণের ক্ষেত্র।

অন্যদিকে, আত্মা চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং অবিনশ্বর সত্তা হিসেবে বিবেচিত, যা সমস্ত অস্তিত্বের মূল উৎস ও আধার। অদ্বৈত বেদান্তে, আত্মাকে পরম ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন জ্ঞান করা হয়—এক অদ্বৈত সত্তা, যা দেশ, কাল ও নিমিত্তের অতীত। এই আত্মাই সমস্ত চেতনার ভিত্তি এবং অভিজ্ঞতার সাক্ষী, কিন্তু নিজে কোনো পরিবর্তন বা বিকারের অধীন নয়। এর উপস্থিতি নিরালম্ব, স্বয়ম্ভূ এবং স্বতঃসিদ্ধ—নিজেই নিজের ভিত্তি বা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, অন্য কোনো কারণ বা সৃষ্টিকারীর দ্বারা উৎপন্ন নয় এবং একে প্রমাণ করার জন্য অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে, জগৎ যে আধারত্বের ধারণায় স্থিত, তা কি আত্মিক আধারত্বের সমতুল্য হতে পারে? জগৎকে আমরা যে রূপে দেখি, তা নামরূপের সমষ্টি, যা সর্বদা পরিবর্তনশীল ও ক্ষণস্থায়ী। এর আধারত্ব কি কেবল ব্যাবহারিক বা লৌকিক স্তরে সীমাবদ্ধ? উদাহরণস্বরূপ, একটি পাত্রে জল থাকে, এখানে পাত্র হল জলের আধার। কিন্তু এই আধারত্ব কি আত্মার 'আধারত্ব'-এর মতো, যা সমস্ত অস্তিত্বের মূল উৎস, অর্থাৎ যে-কারণে জগৎ অস্তিত্ব লাভ করে? এই দুই প্রকার আধারত্বের মধ্যে একটি মৌলিক এবং পারমার্থিক পার্থক্য বিদ্যমান। জগতের আধারত্ব প্রতীয়মান এবং আপেক্ষিক, যেখানে আত্মার আধারত্ব পরম এবং নিরঙ্কুশ।

যদি জগতের আধারত্বকে কেবল ব্যাবহারিক বা লৌকিক স্তরে সীমাবদ্ধ রাখা হয় এবং আত্মিক আধারত্বের সাথে এর কোনো মৌলিক বা পারমার্থিক সাদৃশ্য না থাকে, তাহলে একটি অনুমানের ক্ষেত্রে 'পক্ষধর্মতা' দুর্বল হয়ে যায়। পক্ষধর্মতা হলো সেই নীতি, যেখানে অনুমান প্রক্রিয়ায় হেতু (কারণ) পক্ষে (বিষয়) বর্তমান থাকতে হবে। যদি হেতুর আধারত্ব এবং পক্ষের আধারত্ব ভিন্ন প্রকৃতির হয়—একটি ব্যাবহারিক এবং অন্যটি পারমার্থিক—তাহলে হেতু তার যথার্থতা হারায় এবং অনুমানটি তার ভিত্তি হারায়। এই মৌলিক পার্থক্য উপেক্ষা করলে অনুমানটি অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং তার যৌক্তিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।