অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: ছিয়াত্তর



অদ্বৈত দর্শনে জগতের মিথ্যাত্ব প্রমাণের জন্য 'দৃশ্যত্ব' (dṛśyatva) বা 'দৃশ্যমানতা' একটি কেন্দ্রীয় হেতু হিসেবে উপস্থাপিত হয়: "জগৎ দৃশ্যমান, অতএব মিথ্যা"। কিন্তু এই যুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা দুটি প্রধান আপত্তি উত্থাপন করেন, যা এই অনুমানের যৌক্তিক ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।

প্রথমত: হেতুর অপ্রতিষ্ঠিত অবস্থা (Asiddhatva of the Hetu)

অদ্বৈতবাদীরা দাবি করেন যে, দৃশ্যমানতা মিথ্যাত্বের একটি অকাট্য প্রমাণ। কিন্তু এই দাবিটি প্রথমেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, কারণ 'দৃশ্যত্ব'-এর সংজ্ঞাই বিতর্কিত। সাধারণত, দৃশ্যত্ব বলতে বোঝায়, যা কোনো জ্ঞান বা অনুভূতির বিষয় হতে পারে, অর্থাৎ যা জ্ঞাত হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষরা প্রশ্ন তোলেন, জগৎকে আমরা কীভাবে জানি? যদি 'জানা' মানে আমাদের মনের বৃত্তি বা পরিবর্তন (vṛtti) দ্বারা উপলব্ধ হওয়া, তবে এই জ্ঞান স্বতঃসিদ্ধভাবে জগৎকে মিথ্যা প্রমাণ করে না।

যদি দৃশ্যত্বকে 'জ্ঞানযোগ্যতা' হিসেবে দেখা হয়, তবে আত্মাও এক অর্থে দৃশ্যমান হতে পারে, কারণ আত্মা সম্পর্কেও আমরা চিন্তা করি বা আলোচনা করি। কিন্তু অদ্বৈতমতে আত্মা পরমার্থ সত্য। তাহলে, যদি আত্মাও কোনো অর্থে দৃশ্যমান হয় এবং তা সত্য হয়, তবে দৃশ্যত্ব কীভাবে মিথ্যাত্বের নিশ্চিত প্রমাণ হবে? এই দ্বন্দ্বের কারণে দৃশ্যত্ব নিজেই একটি অপ্রতিষ্ঠিত হেতুতে পরিণত হয়। হেতুটির সংজ্ঞাগত অস্পষ্টতা এবং তার সর্বজনীন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, অনুমানের প্রথম ধাপেই দুর্বলতা দেখা দেয়।

দ্বিতীয়ত: হেতুর অ-নির্ণায়কত্ব (Anaikāntika / Savyabhicāra)

এমনকি যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, দৃশ্যত্ব কোনোভাবে গৃহীত হতে পারে, তাহলেও এটি মিথ্যাত্ব প্রমাণের জন্য 'অ-নির্ণায়ক' বা 'সব্যভিচারী' (Anaikāntika) হয়ে দাঁড়ায়। অনুমানের বৈধতার জন্য অপরিহার্য হলো 'ব্যাপ্তি' (Vyāpti)—অর্থাৎ হেতু (দৃশ্যত্ব) এবং সাধ্য (মিথ্যাত্ব)-এর মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকতে হবে। এই সম্পর্ক এমন হতে হবে যে, যেখানেই দৃশ্যত্ব থাকবে, সেখানেই মিথ্যাত্ব অনিবার্যভাবে উপস্থিত থাকবে। অর্থাৎ, "যা দেখা যায়, তা সর্বদাই মিথ্যা।"

‘সব্যভিচারী’ শব্দটি ভারতীয় তর্কশাস্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগত পরিভাষা, যা সাধারণত “হেতু” বা কারণের ত্রুটি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির গঠন অনুসারে, “স” অর্থ “সহ” বা “যুক্ত”, আর “ব্যভিচার” অর্থ “বিচ্যুতি” বা “অনিয়ম”। তাই “সব্যভিচারী” মানে এমন কিছু, যা সর্বত্র একইভাবে প্রযোজ্য নয়, কখনও মিলে যায়, আবার কখনও মেলে না। সহজভাবে বলতে গেলে, যে কারণ বা হেতু কখনও ফল বা সাধ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়, আবার কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই হেতুই সব্যভিচারী।

দার্শনিকভাবে, সব্যভিচারী হেতু সেই কারণ, যা সাধ্যের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে সম্পর্কিত নয়। অনুমান বা যুক্তি তখনই বৈধ হয়, যখন তার হেতু সর্বত্র সাধ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না। কিন্তু সব্যভিচারী হেতুর ক্ষেত্রে এই অনুষঙ্গ বা ব্যাপ্তি ভঙ্গ হয়, কারণ হেতু কখনও সাধ্য নির্দেশ করে, আবার কখনও করে না। ফলে যুক্তি অবৈধ হয়ে যায়, কারণ এর ভিত্তি অস্থির।

উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি বলে, “যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে”—তাহলে এখানে আগুন হেতু, আর ধোঁয়া সাধ্য। সাধারণভাবে পাহাড়ে ধোঁয়া দেখা গেলে বোঝা যায় আগুন আছে, কিন্তু কেবল আগুনেরই ফল সবসময় ধোঁয়া নয়; ধূপ, কুয়াশা বা ধুলোর মতো ক্ষেত্রেও ধোঁয়া দেখা যায়, অথচ সেখানে প্রমাণ-কারণ তথা হেতু আগুন থাকে না। যেমন, দূরের মাঠটা কীরকম জানি ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে আছে। এখানে মাঠে আগুন নেই, ধুলো বা কুয়াশা বা উভয়ই আছে। সুতরাং “ধোঁয়ার জন্য আগুন থাকতেই হবে”, এই হেতুটি সর্বত্র সত্য নয়; এটি কখনও সত্য, কখনও অসত্য। তাই এই হেতু সব্যভিচারী।

এই কারণে ন্যায়দর্শনে বলা হয় যে, বৈধ অনুমানের জন্য “অব্যভিচারী হেতু” প্রয়োজন—যে-কারণ সর্বত্র সাধ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সব্যভিচারী হেতু যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তা প্রমাণের নির্ভরযোগ্যতা নষ্ট করে দেয়। ফলে “সব্যভিচারী” শব্দটি যুক্তিতত্ত্বে সেই অস্থির ও ব্যতিক্রমযুক্ত কারণকে বোঝায়, যা মাঝে মাঝে ফল নির্দেশ করে, কিন্তু সবসময় নয়, এবং তাই সেটি সত্যপ্রমাণের উপযুক্ত নয়।

প্রতিপক্ষরা আত্মার ব্যাপ্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে এমন উদাহরণ দেন, যেখানে দৃশ্যত্ব আছে, অথচ মিথ্যাত্ব নেই। এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো আত্মা (Ātman)।

আত্মার ক্ষেত্রে দৃশ্যত্ব ও সত্যতা: অদ্বৈতমতে, আত্মা স্বপ্রকাশ (svaprakāśa)—এটি নিজেই নিজেকে উদ্‌ভাসিত করে, অন্য কোনো জ্ঞান বা আলোর প্রয়োজন হয় না। তবে সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, আত্মাও মনের বৃত্তি বা চিন্তার (vṛtti) মাধ্যমে জ্ঞানের বিষয় হতে পারে। অর্থাৎ, কোনো-না-কোনো অর্থে আত্মার ক্ষেত্রেও 'দৃশ্যত্ব' প্রযোজ্য। আমরা যখন আত্মাকে নিয়ে চিন্তা করি, তখন তা একপ্রকার মানসিক জ্ঞানের বিষয় হয়। কিন্তু অদ্বৈতমতে, আত্মা পরমার্থ সত্য, এটি কখনও মিথ্যা নয়। সুতরাং, এখানে 'দৃশ্যত্ব' আছে (যেহেতু আত্মা চিন্তার বিষয়), কিন্তু 'মিথ্যাত্ব' নেই (যেহেতু আত্মা সত্য)। এটি ব্যাপ্তির চরম লঙ্ঘন।

এই উদাহরণ প্রমাণ করে যে, দৃশ্যত্ব থাকলেও মিথ্যাত্ব না-ও থাকতে পারে। অতএব, 'দৃশ্যত্ব' হেতুটি মিথ্যাত্বকে অনিবার্যভাবে নির্দেশ করে না, অর্থাৎ এটি অ-নির্ণায়ক।

অন্যান্য প্রতিউদাহরণ:

প্রতিপক্ষরা আরও উল্লেখ করেন যে, কিছু জিনিস দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও সত্য থাকে, যেমন আত্মা বা ব্রহ্মের 'প্রতিফলন' (প্রতিবিম্ব)। একটি প্রতিফলিত বিম্ব দৃশ্যমান, কিন্তু তার মূল বস্তুটি সত্য। আবার কিছু জিনিস অদৃশ্য থেকেও মিথ্যা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শুক্তি-রজতের মতো ভ্রান্ত জ্ঞান অদৃশ্যভাবে (মনোজগতে) উদ্‌ভাসিত হয়, যা দৃশ্যমান নয়, অথচ মিথ্যা।

সুতরাং, "দৃশ্যমানতা" কখনোই মিথ্যাত্বের নির্ণায়ক চিহ্ন হতে পারে না। একটি হেতু তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তার মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম থাকে না। কিন্তু আত্মার মতো পরম সত্যের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার কারণে, দৃশ্যত্বকে মিথ্যাত্বের একমাত্র বা অবিচ্ছেদ্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।

ফলত, 'দৃশ্যত্ব'-কে ভিত্তি করে গঠিত অদ্বৈত অনুমানটি যৌক্তিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। একদিকে এর হেতু 'দৃশ্যত্ব' নিজেই অপ্রতিষ্ঠিত বা বিতর্কিত, কারণ এর সংজ্ঞা এবং সর্বজনীন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে, এর ব্যাপ্তি বা অনুষঙ্গ অ-নির্ণায়ক, কারণ এমন প্রতিউদাহরণ (যেমন আত্মা) বিদ্যমান, যেখানে দৃশ্যত্ব থাকলেও মিথ্যাত্ব নেই।

এতে দেখা যায় যে, "জগৎ দৃশ্যমান, তাই মিথ্যা"—এই আপাত-সরল যুক্তিটি আসলে নিজের ভিতরেই ভেঙে পড়ে, কারণ যা দিয়ে প্রমাণ করতে চাওয়া হচ্ছে (দৃশ্যত্ব), সেটিই প্রমাণ করার যোগ্যতা হারায়। এই বিশ্লেষণ অদ্বৈত অনুমানের একটি গভীর দার্শনিক দুর্বলতা তুলে ধরে এবং প্রতিপক্ষদের যুক্তির দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।

অদ্বৈত বেদান্ত এমন এক দার্শনিক ব্যবস্থা, যা বাস্তবতার দ্বিস্তরী ধারণা—পারমার্থিক (Pāramārthika) ও ব্যাবহারিক (Vyāvahārika)—এর উপর প্রতিষ্ঠিত। পারমার্থিক স্তরে কেবল ব্রহ্ম সত্য, উপহরণাতীত ও অবাধ্য; ব্যাবহারিক স্তরে জগৎ আপাত সত্য, পরিবর্তনশীল ও জ্ঞান দ্বারা নিবার্য। এই দ্বিস্তরী কাঠামো অদ্বৈতকে জগতের মিথ্যাত্ব ঘোষণা করেও অভিজ্ঞতার কার্যকারিতা স্বীকার করার সুযোগ দেয়।

মিথ্যাত্ব (Mithyātva)-এর মূল সংজ্ঞা হলো অনির্বচনীয়তা (Anirvacanīyatva)—জগৎ না সত্য, না মিথ্যা, বরং সৎ-অসৎ-বিলক্ষণ। তবে এই ধারণাকে ঘিরে নানা যৌক্তিক আপত্তি ওঠে—আশ্রয়াসিদ্ধি, অর্থান্তর দোষ, অপ্রসিদ্ধবিশেষণতা, সিদ্ধসাধনতা এবং দৃশ্যত্বের অ-নির্ণায়কতা—যেগুলি মিথ্যাত্ব-অনুমানের ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে।

এইসব আপত্তির জবাবে অদ্বৈত ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Sattva) ও নানা অজ্ঞান পক্ষ (Nānā Ajnāna Pakṣa)-এর ধারণা গ্রহণ করে, যাতে যুক্তিগত সামঞ্জস্য বজায় থাকে এবং অদ্বৈতহানির আশঙ্কা দূর হয়। তবু চূড়ান্ত সত্য যুক্তি নয়, বরং শ্রুতি (Śruti) দ্বারা প্রত্যক্ষিত।

‘প্রত্যক্ষিত’ শব্দটি এসেছে “প্রত্যক্ষ” শব্দ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ “ইন্দ্রিয়ের সামনে উপস্থিত” বা “সরাসরি উপলব্ধ”। “প্রতি” মানে “সামনে” বা “সরাসরি”, আর “অক্ষ” মানে “ইন্দ্রিয়”, বিশেষ করে চোখ। তাই “প্রত্যক্ষ” মানে, যা ইন্দ্রিয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে জানা যায়, এবং “প্রত্যক্ষিত” মানে সেই বস্তু বা ঘটনা, যা সরাসরি দেখা, শোনা বা অনুভব করা হয়েছে।

সহজভাবে বলতে গেলে, প্রত্যক্ষিত অর্থ “যা প্রত্যক্ষ দ্বারা জ্ঞাত”—অর্থাৎ, যা আমরা নিজের চোখে দেখি, কানে শুনি, স্পর্শে অনুভব করি বা অন্য কোনো ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সরাসরি অভিজ্ঞতা করি। এটি এমন জ্ঞান, যা কোনো অনুমান, তুলনা বা যুক্তির মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “আমি সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছি”—এখানে সূর্যোদয় প্রত্যক্ষিত বস্তু, কারণ তা চোখে দেখা হয়েছে। আবার “আমি আগুনের তাপ অনুভব করেছি”—এখানে তাপও প্রত্যক্ষিত, কারণ তা সরাসরি স্পর্শ ইন্দ্রিয় দ্বারা জানা হয়েছে। একইভাবে আমরা যেসব জিনিস প্রতিদিন দেখি, শুনি, বা অনুভব করি, সেগুলিই প্রত্যক্ষিত জগৎ বা প্রত্যক্ষিত বস্তু।

দর্শনের দৃষ্টিতে, প্রত্যক্ষ ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্বের একটি প্রধান প্রমাণ (Pramāṇa)। অর্থাৎ এটি সেই উপায়, যার মাধ্যমে সত্য জ্ঞান লাভ করা যায়। তাই প্রত্যক্ষিত মানে সেইসব বস্তু, ঘটনা বা অবস্থা, যা ইন্দ্রিয়ের সংযোগে সরাসরি জ্ঞাত হয়েছে। সংক্ষেপে, প্রত্যক্ষিত মানে “সরাসরি দেখা বা অনুভূত”, “ইন্দ্রিয় দ্বারা অভিজ্ঞ”, বা “অমধ্যস্থ জ্ঞানলব্ধ”—যা নিজের অভিজ্ঞতায় অবিকলভাবে প্রতীয়মান।

অদ্বৈত এক পরিশীলিত আদর্শবাদ, যেখানে ব্রহ্ম একমাত্র চূড়ান্ত বাস্তবতা, আর জগৎ মায়াজাত প্রতীয়মানতা, যা ব্রহ্মজ্ঞান উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উপহৃত হয়ে যায়।

বাস্তবতা ও প্রমাণের বিষয়টি দর্শনে বরাবরই এক সূক্ষ্ম, তীক্ষ্ণ ও গভীর অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছে। বাস্তবতার প্রকৃতি বোঝার ও জ্ঞানলাভের যথার্থ মাধ্যম—প্রমাণ (Pramāṇa)—এর সীমা ও শক্তিকে বিশ্লেষণ করা। বিশেষত, “জগৎ (Prapañcaḥ)” ও “আত্মা (Ātman)”—এই দুইয়ের সত্তাগত পার্থক্য এবং প্রতিটির ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রমাণ সত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম, সেই প্রসঙ্গ এখানে খুব জরুরি। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারার এক অন্তঃস্থ স্তরে প্রবেশ করা যায়, যেখানে জ্ঞান, সত্তা ও মায়া পরস্পর জটিলভাবে জড়িয়ে আছে।

প্রথমে কয়েকটি মূল শব্দ সম্পর্কে ভেঙে বলা দরকার:
পক্ষ (pakṣa) মানে হচ্ছে, যেটিকে নিয়ে যুক্তি করা হচ্ছে—এখানে সেটি হলো জগৎ (prapañca)।
সাধ্য (sādhya) মানে, যা প্রমাণ করতে চাওয়া হচ্ছে—এখানে সেটা হলো “তত্ত্বাবেদক প্রমাণের বিষয়” বা তাত্ত্বিক প্রমেয়তা (tāttvika-prameyatva); অর্থাৎ, এমন কোনো বিষয়, যাকে প্রমাণ করলে তার চূড়ান্ত সত্য প্রকৃতি (তত্ত্ব) উন্মোচিত হয়।
হেতু (hetu) মানে যুক্তির কারণ—এখানে সেটা হলো ধর্মিত্ব (dharmitva), অর্থাৎ “গুণ বা ধর্ম ধারণ করার ক্ষমতা”।
দৃষ্টান্ত (dṛṣṭānta) মানে উদাহরণ—এখানে বক্তা এনেছেন আত্মা (ātman), যাকে চূড়ান্ত সত্যের বিষয় বা তত্ত্বাবেদ্য হিসেবে ধরা হয়।

এখন দেখা যাক, যুক্তির গঠন কীভাবে হয়:

প্রতিজ্ঞা (pratijñā): বক্তা বলছেন—“জগৎ তত্ত্বাবেদক প্রমাণের বিষয়।” অর্থাৎ, জগৎ এমন এক বস্তু, যাকে যদি অনুমান, শব্দ বা অন্য প্রমাণ দ্বারা জানা যায়, তাহলে সেই জ্ঞান আমাদের কাছে তার আসল বা চূড়ান্ত রূপ উন্মোচন করতে পারে। এইভাবে বক্তা বোঝাতে চান—জগৎ কেবল ব্যাবহারিক (vyāvahārika) অর্থে নয়, তাত্ত্বিক বা চূড়ান্ত সত্যের আলোচনাতেও প্রমাণযোগ্য হতে পারে।

হেতু (hetu): এরপর তিনি বলেন—“ধর্মিত্বাত্,” অর্থাৎ “কারণ জগৎ গুণের আধার।” জগতের রং, আকার, গতি, ওজন, তাপ—এই সব গুণ বিদ্যমান। ঘটের রূপ, তক্তার দৃঢ়তা, অগ্নির দাহ্যতা—সবই জগতের মধ্যে থাকে। যেখানে গুণ আছে, সেখানে অবশ্যই কোনো “ধারক” বা “আধার” (ādhāra) আছে, যাকে ধর্মিত বলা হয়। এই গুণধারণের ক্ষমতাই বক্তার চোখে প্রমাণযোগ্যতার কারণ—যে-বস্তুর মধ্যে ধর্ম থাকে, সেই বস্তুর উপর প্রমাণ (pramāṇa) প্রয়োগ করলে সত্যের প্রকাশ সম্ভব।