অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: উনসত্তর



মোক্ষতত্ত্ব এবং সাধনপ্রণালী—মোক্ষ (স্বীকৃতি) বনাম নির্বাণ/নিব্বান (বিলোপ): অদ্বৈত বেদান্ত ও মাধ্যমক বৌদ্ধ দর্শনের মধ্যে চূড়ান্ত লক্ষ্য ও সেই লক্ষ্য অর্জনের পথ একেবারে আলাদা। এই পার্থক্যের মূল কারণ হলো—তাদের বাস্তবতা ও আত্মা সম্পর্কে মৌলিক ধারণার পার্থক্য।

অদ্বৈতে মোক্ষ—জ্ঞান মার্গের মাধ্যমে পরিচয়ের উপলব্ধি। অদ্বৈত বেদান্তের লক্ষ্য হলো মোক্ষ—অর্থাৎ মুক্তি। এই মুক্তি কোনো নতুন অবস্থা লাভ নয়, বরং আত্মার প্রকৃত পরিচয় স্বীকৃতি দেওয়া। মোক্ষ ঘটে তখন, যখন স্বতন্ত্র চেতনা (জীবাত্মা) উপলব্ধি করে যে, তার এবং ব্রহ্মের মধ্যে কোনো ভেদ নেই, এবং তার মধ্যে এই উপলব্ধি প্রকাশ পায়—“অহম্ ব্রহ্মাস্মি”—“আমিই ব্রহ্ম।” যখন এই সত্য অন্তর্দৃষ্টিতে জাগ্রত হয়, তখন সমস্ত দুঃখ, বিভ্রম এবং পুনর্জন্মের চক্রের অবসান ঘটে। দ্বৈততার ভ্রম মুছে যায়, আর সাধক অবস্থান করে পরম একত্বে।

অদ্বৈতের মতে, মুক্তির একমাত্র পথ হলো জ্ঞান মার্গ—জ্ঞানের পথ। কর্ম বা ভক্তি মুক্তি দিতে পারে না, কারণ সেগুলো কর্মফল ও দ্বৈততার মধ্যেই আবদ্ধ। মুক্তি আসে শুধু আত্ম-জ্ঞান থেকে—যে-জ্ঞান জানায়, আত্মা ও ব্রহ্ম অভিন্ন। শঙ্করাচার্যের পদ্ধতিতে এই জ্ঞানের অনুশীলন তিন ধাপে ঘটে—
শ্রবণ (শোনা)—শাস্ত্র ও গুরু থেকে ব্রহ্মতত্ত্ব জানা,
মনন (বিবেচনা)—সেই জ্ঞানকে যুক্তি ও চিন্তার মাধ্যমে স্থির করা,
নিদিধ্যাসন (ধ্যান)—সেই জ্ঞানে গভীরভাবে স্থিত হওয়া।
এই ধারাবাহিক সাধনার শেষে আসে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি—যেখানে মায়া ভেঙে যায়, আত্মা ও ব্রহ্ম এক হয়ে যায়। মোক্ষ মানে তাই কোনো পরিবর্তন নয়, বরং নিজের সত্য অবস্থার স্বীকৃতি—“আমি যা, তা-ই আছি।”

শূন্যতায় নির্বাণ/নিব্বান—প্রজ্ঞা মার্গের মাধ্যমে ধারণার অবসান। মাধ্যমক দর্শনে মুক্তি বলা হয় নির্বাণ (পালি ভাষায় ‘নিব্বান’)। কিন্তু এখানে মুক্তি মানে কোনো সত্তা বা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছানো নয়। নির্বাণ হলো সমস্ত মিথ্যা ধারণা, অহংবোধ, আসক্তি এবং মানসিক দ্বন্দ্বের সম্পূর্ণ বিলোপ।

নির্বাণে স্বাধীন “আমি”-র বিভ্রম সম্পূর্ণভাবে নির্বাপিত হয়। সমস্ত দ্বৈততা—যেমন ভালো-মন্দ, থাকা-না-থাকা, আমি-তুমি—এসব ভেদ একেবারে লুপ্ত হয়। তখন যা থাকে, তা হলো নিঃশেষ শান্তি—এক অবিচল স্থিতি, যেখানে মানসিক আলোড়ন ও বন্ধন আর কাজ করে না।

নির্বাণের পথ হলো প্রজ্ঞা মার্গ—জ্ঞানের পথ, কিন্তু অদ্বৈতের “চিরন্তন জ্ঞানের স্বীকৃতি”-র অর্থে নয়। এখানে জ্ঞান মানে সমস্ত ধারণার শূন্যতা ও নির্ভরতার প্রকৃতি গভীরভাবে বোঝা। এই জ্ঞান অ-সত্তা-ভিত্তিক অন্তর্দৃষ্টি (non-substantive insight)—যা দেখায় যে, সব কিছুই শর্তনির্ভর, কোনো কিছুরই নিজস্ব স্বভাব (শর্ত-অনির্ভরতা) নেই। এই উপলব্ধির ফলে অহং ও আসক্তি বিলুপ্ত হয়, কারণ বোঝা যায়—যে-“আমি” আঁকড়ে ধরা হচ্ছিল, তা আসলে এক ধারণা মাত্র। তাই নির্বাণ মানে “কিছু পাওয়া” নয়, বরং “সব ধারণার নিঃশেষ বিলোপ।”

অদ্বৈতের দড়ি-সাপ বনাম মাধ্যমকের প্রতিধ্বনি: অদ্বৈতের মুক্তির ধারণা বোঝাতে শঙ্করাচার্য দড়ি-সাপের উদাহরণ দেন। অল্প আলোয় কেউ দড়িকে ভুল করে সাপ ভাবে। যতক্ষণ ভুল ধারণা থাকে, ততক্ষণ ভয় ও বিভ্রমও থাকে। কিন্তু যখন আলো জ্বলে ওঠে, তখন দেখা যায়—সাপ ছিল না, দড়িই বাস্তব। সুতরাং বিভ্রম মুছে গেলেও এক বাস্তব আধার (দড়ি বা ব্রহ্ম) থেকে যায়। মুক্তি মানে এই আধারের স্বীকৃতি যে—“আমি ব্রহ্ম”, আর এই উপলব্ধিই মুক্তি।

অন্যদিকে, মাধ্যমক দর্শন প্রতিধ্বনি বা মরীচিকার উপমা ব্যবহার করে। প্রতিধ্বনি শোনা যায়, মরীচিকা দেখা যায়, কিন্তু এদের কোনো স্বতন্ত্র ভিত্তি বা স্থায়ী উৎস নেই। তারা কেবল শর্তের ওপর নির্ভর করে আপাতভাবে প্রকাশ পায়। তাই এখানে মুক্তি মানে নয়—“বাস্তব আধার চিনে ফেলা,” বরং এটা বোঝা যে—এমন কোনো আধার আদৌ নেই।

এই পার্থক্যই দুই দর্শনের মোক্ষতত্ত্বের মূল বৈষম্য। অদ্বৈতের মুক্তি মানে চিরন্তন সত্যের স্বীকৃতি—এক বাস্তব সত্তাকে জানা। মাধ্যমকের মুক্তি মানে চিরন্তন ধারণার বিলোপ—সব সত্তা-ধারণার ভাঙন। একজন বলে—“আমি ব্রহ্ম”—এক অক্ষয় বাস্তবতার স্বীকৃতি। অন্যজন বলে—“আমি কিছুই নই”—কারণ চেতনা নিজেও অনিত্য ও শূন্য। অদ্বৈতের মোক্ষ হলো চেতনার পরিপূর্ণ একত্বে স্থিতি। মাধ্যমকের নির্বাণ হলো চেতনার ধারণাগত বিলুপ্তিতে পরম শান্তি। দুটি পথ বিপরীত দিকে চলে মনে হলেও, উভয়ের লক্ষ্য এক—দুঃখ, বিভ্রম ও আসক্তির সম্পূর্ণ অবসান।

অদ্বৈত বেদান্ত ও মাধ্যমক শূন্যতা—এই দুই দর্শন ভারতীয় চিন্তার ইতিহাসে মানবমনকে দুঃখ ও বিভ্রমের সীমা অতিক্রম করে মুক্তির পথে পরিচালিত করার সর্বোচ্চ দার্শনিক প্রচেষ্টা। উভয়ই মুক্তিকে চেতনার এক গভীর রূপান্তর হিসেবে দেখে, কিন্তু তাদের চূড়ান্ত সাফল্য দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অধিবিদ্যাগত কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল।

অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে, চূড়ান্ত সত্য একক এবং ইতিবাচক—ব্রহ্ম। এটি এক চূড়ান্ত, অখণ্ড, স্বয়ংসম্পূর্ণ বাস্তবতা, যার বাইরে কোনো দ্বিতীয় সত্তা নেই। অভিজ্ঞতার জগৎ বা পরিবর্তনশীল বাস্তবতাকে এখানে বলা হয় মায়া—ব্রহ্মের ওপর অজ্ঞানতার কারণে আরোপিত নাম-রূপের প্রতিফলন। তাই অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, মুক্তি মানে এই মায়ার ভেদ করা এবং ব্রহ্মের চেতনায় অবস্থান করা—একত্বের সরল উপলব্ধি, যেখানে সব দ্বৈততার বিভ্রম বিলীন হয়ে যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি এক ঘোষণায় সংক্ষেপিত: “একটিই সত্য আছে; বাকিটা তার মায়া।”

অদ্বৈত তাই একটি অ-দ্বৈতবাদী বাস্তবতা—কিন্তু সেই অ-দ্বৈততা স্থির এক সত্তার ভিত্তিতে দাঁড়ানো। এখানে চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আত্মা ও ব্রহ্মের অভিন্নতা উপলব্ধি করা, অর্থাৎ “আমি”-র মধ্যেই “সব কিছু”-র স্বীকৃতি। মুক্তি হলো পরিচয়ের স্বীকৃতি—“অহম্ ব্রহ্মাস্মি”—যেখানে দ্রষ্টা ও দৃশ্য, জ্ঞান ও জানা, সব এক হয়ে যায়।

অন্যদিকে, মাধ্যমক শূন্যতা কোনো “সত্তা-ভিত্তিক” দর্শন নয়। এটিকে বোঝা যায় অ-সারসত্তাবাদ (non-essentialism) বা অ-সত্তা-ভিত্তিক অ-দ্বৈতবাদ (non-substantive non-dualism) হিসেবে। মাধ্যমক কোনো চূড়ান্ত সত্তা বা সারবস্তু স্বীকার করে না; বরং বলে—সব কিছুই সম্পর্কনির্ভর (pratītya-samutpanna)। কোনো কিছুরও নিজস্ব, স্বাধীন, স্থায়ী স্বভাব (svabhāva) নেই।

এই শূন্যতার দর্শন মুক্তির পথে আহ্বান জানায় নেতিকরণ (negation) ও বিনির্মাণের (deconstruction) মাধ্যমে। এটি কোনো স্থায়ী বাস্তবতার স্বীকৃতি চায় না; বরং সমস্ত ধারণা, সমস্ত দ্বৈততা, সমস্ত আসক্তির বিলোপ চায়। তাই এর ঘোষণা ভিন্ন: “কোনো স্থায়ী সত্য নেই; সব কিছুই সম্পর্কের শূন্যতা।”

অদ্বৈত বলে—সত্য আছে, কিন্তু তাকে চিনে নিতে হবে; মাধ্যমক বলে—সত্য বলতে যা ধরা হয়, সেটাই ধারণাগত বিভ্রম। অদ্বৈতের অ-দ্বৈততা আসে চূড়ান্ত পরিচয়ের স্বীকৃতির মাধ্যমে—“আমি ও ব্রহ্ম এক।” মাধ্যমকের অ-দ্বৈততা আসে সব ধারণা ও ভেদের বিলোপের মাধ্যমে—“আমি কিছুই নই, কারণ কোনো স্থায়ী ‘আমি’ নেই।”

দুইয়ের পথ তাই সম্পূর্ণ বিপরীত—অদ্বৈত এক অনন্ত বাস্তবতার দিকে এগোয়; মাধ্যমক এগোয় বাস্তবতার অনস্তিত্ব বা স্বভাবশূন্যতার উপলব্ধির দিকে। তবু তাদের লক্ষ্য এক—দুঃখ, মায়া ও অজ্ঞানতার অবসান, মন ও ভাষার সীমা অতিক্রম করে মুক্তির স্বচ্ছ নীরবতায় পৌঁছানো।

অদ্বৈত শেষপর্যন্ত বলে—“ব্রহ্মই একমাত্র সত্য।” মাধ্যমক বলে—“সব সত্যই আপেক্ষিক, তাই শূন্য।” এই মৌলিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, উভয় দর্শনই ভারতীয় চিন্তার ইতিহাসে মানুষের বোধ ও মুক্তির সন্ধানের দুটি চূড়ান্ত শিখর—একটি অস্তিত্বের পরম স্বীকৃতিতে, অন্যটি অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বিলোপে।

নেতিকরণ (Negation) ও বিনির্মাণ (Deconstruction)—এই দুটি ধারণা মূলত চিন্তা, ধারণা ও অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত উপলব্ধিকে ভেঙে দেওয়ার দার্শনিক পদ্ধতি। এরা সত্যের সন্ধান করে “যোগ” নয়, বরং “বিয়োগ”-এর মাধ্যমে—যেখানে ভুল ধারণা, আসক্তি এবং ভাষার সীমাবদ্ধতা ধীরে ধীরে বিলীন হয়।

নেতিকরণ (Negation): নেতিকরণ মানে কোনো কিছুর সত্যতা বা অস্তিত্ব অস্বীকার করা, কিন্তু ধ্বংসাত্মক অর্থে নয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল চিহ্নিতকরণগুলোকে একে একে সরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে চূড়ান্ত সত্য স্বয়ং উদ্ভাসিত হয়।

অদ্বৈত বেদান্তে নেতিকরণ হলো “নেতি নেতি”—অর্থাৎ “না এটাও, না সেটাও”। সাধক একে একে নিজের সব সীমিত পরিচয় অস্বীকার করে—“আমি দেহ নই, মন নই, ইন্দ্রিয় নই”—যতক্ষণ না কেবল চেতনা-স্বরূপ আত্মাই অবশিষ্ট থাকে। এইভাবে নেতিকরণ মিথ্যাকে দূর করে সত্যে পৌঁছানোর পদ্ধতি। মায়া ও অজ্ঞানতার পরত সরিয়ে শেষে দেখা যায়, চিরন্তন ব্রহ্মই একমাত্র বাস্তবতা।

মাধ্যমক বৌদ্ধ দর্শনে নেতিকরণের অর্থ আলাদা। এখানে কোনো “অবশিষ্ট সত্য” ধরা হয় না। বরং নেতিকরণ হলো প্রতিটি ধারণা, বস্তুর বা সত্তার স্বতন্ত্রতা অস্বীকার করা। কেউ যদি বলে “এই বস্তুটি আছে”, মাধ্যমক প্রশ্ন করবে—“কীভাবে আছে? নিজের জোরে, না সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে?” বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায়, কোনো কিছুই নিজের মধ্যে স্বাধীন নয়। সবই কারণ-শর্তনির্ভর। তাই মাধ্যমকে নেতিকরণ মানে হলো—“স্বতঃসিদ্ধ অস্তিত্ব নেই”—এই সত্যটি উপলব্ধি করা।

অদ্বৈতের নেতিকরণে লক্ষ্য থাকে এক অপরিবর্তনীয় সত্যে পৌঁছানো, আর মাধ্যমকের নেতিকরণে লক্ষ্য থাকে সব স্বভাব ও সারসত্তার ধারণা বিলোপ করা।

বিনির্মাণ (Deconstruction): বিনির্মাণ মানে কোনো কাঠামো ধ্বংস করা নয়, বরং তার ভেতরে লুকানো দ্বন্দ্ব, নির্ভরতা ও বৈপরীত্যগুলো উন্মোচন করা। এই শব্দটি পাশ্চাত্য দার্শনিক জ্যাক দেরিদা ব্যবহার করেছিলেন, তবে এর মূল ভাব অনেক আগে থেকেই বৌদ্ধ ও অদ্বৈত চিন্তায় ছিল।

মাধ্যমক দর্শনে বিনির্মাণ মানে হলো ধারণাগুলোর মধ্যে থাকা বিপরীত জোড়াগুলো—যেমন “অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব”, “সত্য-মিথ্যা”, “আমি-তুমি”—সব ভেঙে দেখা। এতে বোঝা যায়, এই ধারণাগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল; তাদের কোনো স্বতন্ত্র অর্থ নেই। এইভাবে সমস্ত দ্বন্দ্ব গলে গিয়ে প্রকাশ পায় শূন্যতা—যেখানে কিছুই নিজের জোরে থাকে না। এটি কোনো ধ্বংস নয়, বরং ধারণার সীমা অতিক্রম করে তাদের অন্তর্নিহিত নির্ভরতাকে প্রকাশ করা।

অদ্বৈত দর্শনে বিনির্মাণ মানে হলো মায়ার স্তরগুলো খোলার মতো এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভ্রান্ত ধারণা ও দ্বৈততার বিভ্রম দূর হয়ে অবশেষে প্রকাশ পায় এক চূড়ান্ত সত্তা—ব্রহ্ম। এখানে বিনির্মাণের লক্ষ্য হলো একমাত্র, চিরন্তন সত্যে স্থিত হওয়া।

দুই দর্শনের পার্থক্য ও মিল:

অদ্বৈত বেদান্তে নেতিকরণ ও বিনির্মাণের কাজ হলো মিথ্যা সরিয়ে চূড়ান্ত সত্যে পৌঁছানো। সেখানে মিথ্যা দূর করলে ব্রহ্ম নিজে থেকেই প্রকাশিত হয়। মাধ্যমকে একই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, কিন্তু লক্ষ্য উলটো—সব স্থায়ী ধারণা ভেঙে দেখানো যে, কোনো চূড়ান্ত বাস্তবতা আদৌ নেই।

অদ্বৈত বলে, “যা মিথ্যা, তা বাদ দাও—সত্য নিজেই থাকবে।” মাধ্যমক বলে, “সত্য বলে যা তুমি ধরেছ, সেটাই ধারণার ফল—তাকেও ভেঙে দাও।”

অদ্বৈতে নেতিকরণ ও বিনির্মাণের শেষে পাওয়া যায় ব্রহ্ম—এক স্থায়ী সত্য। মাধ্যমকে এই প্রক্রিয়ার শেষে যা থাকে, তা হলো শূন্যতা—যা কোনো সত্তা নয়, বরং সমস্ত সত্তা-ধারণার সীমা-অতিক্রম।

নেতিকরণ হলো মিথ্যা অপসারণের মাধ্যমে বোধের বিশুদ্ধতা অর্জন। বিনির্মাণ হলো চিন্তা ও ভাষার কাঠামোর ভেতরে থাকা নির্ভরতা ও শূন্যতাকে প্রকাশ করা। অদ্বৈতে এই প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে যায় ব্রহ্মজ্ঞান ও একত্বের উপলব্ধিতে, আর মাধ্যমকে এগুলো নিয়ে যায় সমস্ত ধারণার বিলোপে—যেখানে দেখা যায়, না কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে, না কোনো চূড়ান্ত সত্য—শুধু সম্পর্কের শূন্যতা, আর সেই নীরব উপলব্ধিতেই মুক্তি।