এটা ঠিক যেমন—ঘট (মাটির হাঁড়ি) আসলে মাটির থেকে আলাদা কোনো সত্তা নয়, বরং মাটির বিশেষ বিন্যাস। কাপড় আলাদা কোনো সত্য জিনিস নয়; সেটা কেবল সুতোগুলির এক বিশেষ রূপ, যাকে আমরা “কাপড়” বলে চিনি। এই পরিশীলিত এবং সতর্কভাবে নির্মিত অনুমানটি দর্শনের একটি মৌলিক স্তম্ভ, যা জাগতিক বস্তুর "মিথ্যাত্ব" বা আপেক্ষিক বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করে। এখানে "মিথ্যা" শব্দটি সাধারণ অর্থে সম্পূর্ণরূপে অনস্তিত্বশীল বা অবাস্তব (যেমন আকাশ-কুসুম বা শূন্যে দুর্গ) বোঝায় না, বরং এর অস্তিত্ব যে মৌলিকভাবে তার উপাদান কারণগুলি থেকে স্বাধীন নয়, সেই ধারণাকে নির্দেশ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, একটি কাপড়কে তার সুতোগুলি থেকে স্বাধীন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা হিসাবে দেখা যায় না। এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে সুতোগুলির বিন্যাস এবং সংমিশ্রণের উপর নির্ভরশীল।
"এই সুতোগুলির মধ্যে স্থিত পরম অনস্তিত্বের প্রতিযোগী"—এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রযুক্তিগত বাক্যাংশটি গভীর দার্শনিক তাৎপর্য বহন করে। এটি বোঝায় যে, কাপড়, যখন তার নিজের স্বনির্ভর সত্তা-সহ একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন সত্তা হিসাবে বিবেচিত হয়, তখন এটি এটিকে গঠনকারী সুতোগুলি থেকে পৃথক কোনো পরম বাস্তবতা ধারণ করে না। অন্যভাবে বললে, সুতোগুলি ছাড়া কাপড়ের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। কাপড় তার নিজের অধিকারে কোনো মৌলিক পদার্থ নয়, বরং সুতোগুলির একটি বিশেষ অবস্থা বা পরিবর্তন মাত্র। সংক্ষেপে, কাপড়টি দার্শনিকভাবে একটি উদ্ভূত সম্পত্তি (emergent property), একটি উপস্থিতি (manifestation), বা সুতোগুলির একটি নির্দিষ্ট বিন্যাস (arrangement) হিসেবে বোঝা যায়, একটি মৌলিকভাবে পৃথক পদার্থ হিসেবে নয়, যা তার নিজের অন্তর্নিহিত এবং অপরিবর্তনীয় সত্তা-সহ বিদ্যমান। কাপড়ের "দৃশ্যত্ব" বা উপলব্ধিযোগ্যতা (Dṛśyatvāt), অর্থাৎ এটি উপলব্ধির একটি বস্তু—এই সত্যটি এর মিথ্যাত্বের জন্য একটি বাধ্যতামূলক কারণ হিসাবে উদ্ধৃত হয়। যেহেতু এটি ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধ হয় এবং পরিবর্তনশীল, তাই এর পরম বা চূড়ান্ত সত্যতা নেই। যা-কিছু দৃশ্যমান, তা পরিবর্তনশীল এবং বিনাশী, এবং তাই পরম সত্য নয়।
এই যুক্তিটি একটি শক্তিশালী এবং অত্যন্ত চিত্রাত্মক সমান্তরাল টানে একটি ঘটের (Ghaṭa) সাথে। ঠিক যেমন একটি ঘটকে মাটির একটি সমষ্টি বা পরিবর্তন হিসাবে দেখা হয়, যা তার অংশগুলি থেকে সত্যিই স্বাধীনভাবে বিদ্যমান নেই, তেমনি কাপড়কেও সুতোগুলির একটি সমষ্টি হিসাবে দেখা হয়। ঘটের চূড়ান্ত সত্তা মাটি, এবং ঘট মাটিরই একটি রূপ। মাটি ছাড়া ঘটের কোনো অস্তিত্ব নেই। ঘটের আকার একটি উপস্থিতি মাত্র, এর পদার্থ হলো মাটি। একইভাবে, কাপড়ের চূড়ান্ত সত্তা সুতা। সুতা ছাড়া কাপড়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। কাপড়ের আকার একটি উপস্থিতি মাত্র, এর পদার্থ হলো সুতোগুলি।
এই সাদৃশ্যটি দর্শনের 'সৎকার্যবাদ' বা 'বিবর্তবাদ' ধারণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যেখানে কার্য তার কারণের মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। ‘সৎকার্যবাদ’ (Satkāryavāda) শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ—Sat (সৎ = আগে থেকেই বিদ্যমান), Kārya (কার্য = ফল, উৎপন্ন বস্তু), Vāda (বাদ = মতবাদ) থেকে। এর অর্থ: যে-কার্য (ফল) উৎপন্ন হয়, তা আগে থেকেই কোনো না কোনোভাবে কারণের (উপাদান) মধ্যে বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, কিছুই একেবারে নতুনভাবে শূন্য থেকে আসে না; ফল সবসময় কারণের মধ্যেই আংশিকভাবে বা সম্ভাবনারূপে থাকে। যা নেই, তা থেকে কিছুই হতে পারে না। কারণ ছাড়া কার্য হয় না, আর কার্য সর্বদা কারণের মধ্যেই পূর্বস্থিত থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ, মাটির হাঁড়ি (ঘট) আসলে নতুন কিছু নয়, মাটির মধ্যেই লুকিয়ে ছিল, কুম্ভকার (কুমার) কেবল আকার দিয়েছে। বীজ-অঙ্কুর—গাছের অঙ্কুর আগে থেকেই বীজের মধ্যে সম্ভাবনারূপে ছিল, অঙ্কুর আলাদা করে নতুন করে তৈরি হয় না।
বিবর্তবাদ (Evolution Theory in Indian sense): সৎকার্যবাদকে অনেক সময় বিবর্তবাদ বলা হয়, কারণ এখানে কার্যকে নতুন কিছু সৃষ্টি নয়, বরং কারণের মধ্যে পূর্বস্থিত সম্ভাবনার প্রকাশ বা বিকাশ (evolution/unfolding) হিসেবে দেখা হয়। যেমন ঘি দুধের মধ্যেই ছিল, প্রসেসের মাধ্যমে বেরিয়ে এল। কার্য বা ফল কোনো নতুন সৃষ্ট বস্তু নয়; তা আসলে কারণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এবং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে প্রকাশ পায়।
সাংখ্য দর্শন বিশেষভাবে সৎকার্যবাদ মানে। প্রকৃতি (প্রকৃতির মূল উপাদান) থেকে ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়ে জগতের সব বস্তু প্রকাশিত হয়। বেদান্ত কিছুটা ভিন্নভাবে মানে; বলে, মায়ার মধ্য দিয়ে ব্রহ্ম থেকে জগৎ প্রকাশিত—এটাও সৎকার্যবাদের সাথে সম্পর্কিত। এর বিপরীত মত হচ্ছে অসৎকার্যবাদ (Asatkāryavāda), যা বলে, কার্য আগে থেকে কারণের মধ্যে থাকে না; কার্য একেবারে নতুন সৃষ্টি। এই মতবাদ মূলত নৈয়ায়িক এবং বৈশেষিক দার্শনিকেরা গ্রহণ করেছেন। যেমন, হাঁড়ি আগে থেকে মাটিতে ছিল না, মাটির সঙ্গে শ্রম (কার্য) যুক্ত হয়ে হাঁড়ি নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে।
কাপড় তার উপাদান সুতোগুলি থেকে ভিন্ন কোনো নতুন সত্তা নয়, বরং সুতোগুলিরই একটি বিশেষ রূপ বা বিন্যাস। বেদান্ত দর্শন অনুসারে, বস্তুর বাহ্যিক রূপ (নাম ও রূপ) মিথ্যা বা আপেক্ষিক, কিন্তু তার উপাদান কারণ (উপাদান) সত্য বা পরম। এই ধারণাটি আরও বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করে যে, জগৎ এবং জাগতিক বস্তুগুলি ব্রহ্মের (পরম সত্য) উপর আরোপিত বা ব্রহ্মের বিবর্ত মাত্র। ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, এবং বাকি সব কিছু আপেক্ষিক বা মায়া। কাপড়ের এই বিশ্লেষণটি মায়া বা অবিদ্যার ধারণাকে আরও গভীর স্তরে বুঝতে সাহায্য করে, যেখানে জগৎকে সত্য বলে মনে হলেও, এর অন্তর্নিহিত কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্তিত্ব নেই, বরং এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি প্রতীয়মান বাস্তবতা।
এই উপমাটি নির্ভরশীল উৎপত্তি (Pratītyasamutpāda)-এর গভীর ধারণাটিকে অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে আলোকিত করে। যদিও এটি মূলত একটি বৌদ্ধ দার্শনিক ধারণা, এর মৌলিক আন্তঃনির্ভরশীলতার নীতিটি এখানে অদ্বৈত বেদান্ত দ্বারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অদ্বৈতবাদী ধারণাকে শক্তিশালীভাবে পুনর্বহাল করে যে, সমস্ত যৌগিক বস্তু, তাদের অন্তর্নিহিত স্ব-অস্তিত্বের (Svabhāva) অভাবের কারণে, এই দার্শনিক কাঠামোর মধ্যে চূড়ান্তভাবে মিথ্যা বলে বিবেচিত হয়। এই বস্তুগুলিকে কেবল একটি প্রচলিত, অভিজ্ঞতামূলক বা আপেক্ষিক অর্থে "বাস্তব" বলে গণ্য করা হয়। এই আপেক্ষিক বাস্তবতা লেনদেনমূলক জগতের (vyavahāra) মধ্যে ব্যাবহারিক উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করে, যেখানে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনটাকে যাপন করি এবং বস্তুর সাথে interact করি।
ব্রহ্মের সর্বোচ্চ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, যেখান থেকে পরম সত্যের বিচার করা হয়, তাদের একটি পরম, চূড়ান্ত বা ‘অতিবর্তী’ (যে-সত্তা সব পরিবর্তন, সীমাবদ্ধতা ও দ্বন্দ্বকে ছাড়িয়ে আছে; ব্রহ্মকে বলা হয় অতিবর্তী, কারণ তিনি জগৎ, কাল, দেশ, নাম-রূপ ইত্যাদি সবকিছুর ঊর্ধ্বে।) অর্থে বাস্তব বলে বিবেচিত হয় না। এখানে, দৃশ্যত্ব (Dṛśyatvāt), অর্থাৎ উপলব্ধিযোগ্যতা বা বস্তুত্ব, একটি অত্যন্ত শক্তিশালী হেতু (যুক্তিযুক্ত কারণ) হিসাবে কাজ করে, যা বস্তুর নির্ভরশীলতা এবং ফলস্বরূপ, তাদের অ-পরম বাস্তবতাকে বোঝায়। কোনো কিছুকে যদি উপলব্ধি করা যায় বা বস্তু হিসেবে দেখা যায়, তবে তা অবশ্যই অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল, এবং এই নির্ভরশীলতাই তার পরম স্ব-অস্তিত্বের অভাব প্রমাণ করে।
এই উপমাটি একটি মূর্ত সাধারণ উদাহরণ সরবরাহ করে, যা 'মিথ্যা'-র বিমূর্ত এবং প্রায়শই এড়িয়ে-যাওয়া দার্শনিক ধারণাটিকে সর্বজনীনভাবে বোধগম্য প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার সাথে দক্ষতার সাথে সেতুবন্ধন করতে সহায়তা করে। 'মিথ্যা' শব্দটিকে অদ্বৈত বেদান্তে প্রায়শই ভুল বোঝা হয়, কিন্তু এই উপমা এটিকে আরও সহজবোধ্য করে তোলে। এটি মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে, কীভাবে এমন কিছু যা উপলব্ধির কাছে অনস্বীকার্যভাবে বাস্তব বলে উপস্থিত হতে পারে, তা সত্ত্বেও একই সাথে চূড়ান্ত ও স্বাধীন অস্তিত্বের অভাব থাকতে পারে। এর ফলে 'মিথ্যা' সম্পর্কে অদ্বৈতবাদী উপলব্ধির জন্য একটি আরও শক্তিশালী, সম্পর্কযুক্ত এবং সাধারণ-জ্ঞানভিত্তিক ভিত্তি তৈরি হয়।
এই উপমাটি আমাদের দেখায় যে, আমাদের চারপাশের জগৎ, যদিও অভিজ্ঞতাজনিত স্তরে অত্যন্ত বাস্তব মনে হয়, পরম স্তরে তার নিজস্ব স্বাধীন সত্তা নেই। যেমন একটি দড়িকে অন্ধকারে সাপ বলে মনে হতে পারে—সাপটি উপলব্ধিগতভাবে বাস্তব (ভয় সৃষ্টি করে, প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে), কিন্তু চূড়ান্তভাবে তা কেবল একটি দড়ি। তেমনি, এই বিশ্ব ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল, এবং ব্রহ্মই একমাত্র পরম সত্য। বস্তুর এই নির্ভরশীল প্রকৃতিই তাদের অনিত্যতা এবং অ-পরম বাস্তবতার পরিচায়ক, যা অদ্বৈত বেদান্তের মূল বার্তাগুলির একটি।
উপমার মাধ্যমে মিথ্যাত্বের সংজ্ঞা দেওয়া: কাপড় এবং সুতোর উদাহরণ থেকে প্রাপ্ত গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং মূর্ত চিত্রণের ওপর সরাসরি ভিত্তি করে, এই সংজ্ঞাটি মিথ্যা সম্পর্কে পরিশোধিত অদ্বৈতবাদী উপলব্ধিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমগ্র গ্রন্থটির জন্য একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে কাজ করে: "মিথ্যাত্ব হলো তার নিজের আশ্রয়ের মধ্যে স্থিত পরম অনস্তিত্বের প্রতিযোগী হওয়া (স্বাশ্রয়-নিষ্ঠ-অত্যন্তাভাব্-প্রতিযোগিত্বম মিথ্যাত্বম)।"
আসুন, এই সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করি, যা যুক্তির জন্য অপরিহার্য এবং অদ্বৈত বেদান্ত জ্ঞানতত্ত্বের একটি ভিত্তিপ্রস্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে:
আশ্রয় (Svāśraya): কাপড়ের নির্দিষ্ট উদাহরণের জন্য, আশ্রয়টি স্পষ্টভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে "কেবল এই সুতোগুলি" হিসাবে শনাক্ত করা হয়। আরও ব্যাপকভাবে এবং ধারণাগতভাবে, আশ্রয়টি হলো অন্তর্নিহিত, মৌলিক বাস্তবতা বা ভিত্তি, যার ওপর মিথ্যা সত্তা বিদ্যমান বলে অনুমিত হয়। এটি হলো নির্দিষ্ট স্থান বা সত্তা, যেখানে মিথ্যা সত্তাটি অবগত এবং অভিজ্ঞতালব্ধ হয়, তবুও একই সাথে গভীর উপলব্ধি-র পরে বাতিল হয়। অদ্বৈত বেদান্তে, সমস্ত জাগতিক উপস্থিতির জন্য চূড়ান্ত এবং একক আশ্রয়, ব্যতিক্রম ছাড়া—হলো ব্রহ্ম, পরম, অদ্বৈত বাস্তবতা। আশ্রয়ের ধারণাটি গভীরভাবে জোর দেয় যে, মিথ্যা সত্তাটি (যেমন, কাপড়, বা জগৎ) একটি স্বাধীন অস্তিত্ব ধারণ করে না বরং এর মায়াময় উপস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে এর আশ্রয়ের উপর নির্ভরশীল। সমালোচনামূলকভাবে, একমাত্র আশ্রয়টিই এই সম্পর্কের মধ্যে সত্যিই বিদ্যমান এবং চূড়ান্তভাবে বাস্তব উপাদান হিসাবে স্থাপন করা হয়। কাপড়টি, উদাহরণস্বরূপ, সুতোগুলি ছাড়া কোনো সার্থক উপায়ে বিদ্যমান থাকতে পারে না; এর উপস্থিতি এবং অনুভূত বাস্তবতা সম্পূর্ণরূপে সুতোর ওপর নির্ভরশীল।
পরম অনস্তিত্ব (Atyantābhāva): এই সুনির্দিষ্ট শব্দটি কিছু সম্পূর্ণ, চিরন্তন এবং অযোগ্য অনুপস্থিতিকে বোঝায়। এটি কেবল একটি সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী অভাব নয়, বরং একটি মৌলিক, অন্তর্নিহিত অনস্তিত্ব যা সমস্ত সময় (অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ) এবং সমস্ত স্থান জুড়ে প্রযোজ্য। কাপড়ের পরম অনস্তিত্ব এর সুতোগুলিতে উপস্থিত বলে বলা হয়। এর অর্থ হলো, কাপড়টিকে, যখন সুতোগুলি থেকে পৃথক একটি স্বাধীন বাস্তবতা-সহ একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে ধারণা করা হয়, তখন এটি কখনোই একটি পরম, স্ব-নির্ভরশীল অর্থে তার সুতোগুলির মধ্যে সত্যিই বিদ্যমান থাকতে পারে না। এই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি তুলে ধরে যে, মিথ্যা সত্তা, এর শক্তিশালী উপস্থিতি এবং অভিজ্ঞতামূলক উপযোগিতা সত্ত্বেও, মৌলিকভাবে তার আশ্রয়ে বা তা থেকে পৃথক একটি স্বাধীন বাস্তবতার অভাব বোধ করে। মিথ্যা-কে অন্যান্য, কম গভীর অনস্তিত্বের রূপগুলি থেকে পৃথক করার জন্য এটি একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন প্রাথমিক অনস্তিত্ব (প্রাগাভাব, যেমন, একটি ঘট তৈরি হওয়ার আগে, যা অবশেষে বিদ্যমান থাকবে) বা পরবর্তী অনস্তিত্ব (প্রধ্বংসাভাব, যেমন, একটি ঘট ভেঙে যাওয়ার পরে, যা একবার বিদ্যমান ছিল)। মিথ্যা বোঝায় যে, সত্তাটির কখনোই তার আশ্রয় থেকে পৃথক একটি স্বাধীন অস্তিত্ব ছিল না, তবে কেবল একটি আপাত, প্রপঞ্চগত এবং চূড়ান্তভাবে নির্ভরশীল অস্তিত্ব ছিল।