এর দুইটি প্রধান রূপ:
Strong form—Linguistic Determinism—ভাষা চিন্তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে; যেমন যদি কোনো ভাষায় ভবিষ্যৎকালের জন্য আলাদা ব্যাকরণ না থাকে, তবে সেই ভাষাভাষীরা ভবিষ্যৎকে অন্যভাবে উপলব্ধি করবে।
Weak form—Linguistic Relativity—ভাষা চিন্তাকে সম্পূর্ণ বাঁধা দেয় না, তবে তা চিন্তা ও অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে।
উদাহরণ: ইনুইট (Eskimo) ভাষায় “বরফ”-এর জন্য বহু শব্দ আছে, ফলে তারা বরফের বিভিন্ন ধরন খুব সূক্ষ্মভাবে আলাদা করতে পারে। বাংলায় “তুমি/আপনি/তোরা”—একই “you”-এর তিনটি ভিন্ন ভদ্রতাজাত স্তর আছে। ফলে সামাজিক সম্পর্ক বোঝার সময় বাঙালি মন অনায়াসে শ্রদ্ধা ও ঘনিষ্ঠতার ভেদ আলাদা করে। ইংরেজিতে এই স্তরভেদ নেই। এক্ষেত্রে হোপি (Hopi) ভাষার কথা বিবেচনা করা যায়। Whorf দেখিয়েছিলেন যে, Hopi ভাষায় সময়কে আমরা যেমন “past-present-future” ভাগ করি, সেরকমভাবে ভাগ করা হয় না। তাদের ভাষায়, ‘সময় চক্রাকার’, এটা মাথায় রেখেই তাদের জীবনযাত্রা আবর্তিত হয়।
স্যাপির-হোরফ হাইপোথিসিস বলে, ভাষা কেবল প্রকাশের যন্ত্র নয়, বরং এটি আমাদের দৃষ্টি, ভাবনা ও অভিজ্ঞতার কাঠামোকে গড়ে তোলে। এবার দেখি, স্যাপির-হোরফ হাইপোথিসিসকে ভারতীয় দর্শনের আলোকে কীভাবে বোঝা যায়। পাশ্চাত্য-দর্শন (Sapir-Whorf) বলে, ভাষা আমাদের চিন্তাভাবনাকে গড়ে তোলে—আমরা যে-ভাষায় কথা বলি, সেই ভাষার কাঠামো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতাকে সীমাবদ্ধ বা প্রসারিত করে। ভারতীয় দর্শন এখানে কী বলছে, দেখা যাক।
১. নাম-রূপ (Nāma-Rūpa)—উপনিষদীয় দৃষ্টিভঙ্গি: উপনিষদে বলা হয়েছে, জগৎ “নাম-রূপ” দ্বারা গঠিত। “নাম” (নামকরণ বা ভাষা) জিনিসকে সংজ্ঞায়িত করে, আর “রূপ” (আকৃতি) জিনিসকে দৃশ্যমান করে। অর্থাৎ, আমরা বাস্তবতাকে নামকরণের মাধ্যমে উপলব্ধি করি। যেমন “গাছ” শব্দটি না থাকলে গাছকে আলাদা সত্তা হিসেবে চেনা কঠিন। এটি সরাসরি Sapir-Whorf-এর সাথে মিলে যায়, কারণ এখানে ভাষা (নাম) অভিজ্ঞতার কাঠামো নির্ধারণ করছে।
২. মায়া ও অবিদ্যা—অদ্বৈত বেদান্তে: অদ্বৈত-মতে, আমরা ব্রহ্মকে সরাসরি দেখতে পাই না; নাম-রূপের জগৎই আমাদের কাছে বাস্তব মনে হয়। ভাষা ও ধারণা এই নাম-রূপকে আরও শক্ত করে তোলে। উদাহরণ: “আমি”, “তুমি”, “গাছ”, “পাহাড়”—এসব শব্দ আমাদের দ্বৈত জগৎ নির্মাণ করে, অথচ অন্তরে সবই এক ব্রহ্ম। ভাষাকে তাই আমাদের মুক্তির পথে বাধা হিসেবেও দেখা হয়—কারণ তা অভিজ্ঞতাকে খণ্ডিত করে।
৩. বৌদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি (প্রতীত্যসমুৎপাদ ও প্রজ্ঞাপারমিতা): বৌদ্ধমতে, জগৎ কোনো স্থায়ী সত্তা নয়; সবই পরস্পরনির্ভর; কিন্তু ভাষা আমাদের মনে কিছু স্থির ধারণা তৈরি করে—যেমন “আত্মা আছে”, “পৃথিবী টেকসই” ইত্যাদি। নাগার্জুন বলেছিলেন: ভাষার জালে পড়ে আমরা আসক্ত হই, অথচ “শূন্যতা” উপলব্ধি করতে হলে ভাষার সীমা অতিক্রম করতে হয়।
উপরের সামগ্রিক তুলনা উপমা দিয়ে তুলে ধরছি।
স্যাপির-হোরফ: ভাষা হলো চশমা, সেই চশমার রঙে আমরা জগৎ দেখি।
উপনিষদ: ভাষা (নাম) ছাড়া রূপ স্পষ্ট হয় না—অর্থাৎ চশমা ছাড়া বস্তু চিনতে পারি না।
অদ্বৈত: আসল আলো (ব্রহ্ম) আড়ালে, চশমার কাঁচেই আমরা আটকে আছি।
বৌদ্ধ: চশমার রংই আসলে ভ্রম—একে ছেড়ে দিলে প্রকৃত শূন্যতা ধরা দেয়।
তাই বলা যায়, পাশ্চাত্যের স্যাপির–হোরফ হাইপোথিসিস ভারতীয় দর্শনের নাম-রূপ তত্ত্বর সঙ্গে গভীরভাবে মেলে, আবার অদ্বৈত ও বৌদ্ধ দর্শন এ ভাষার সীমাবদ্ধতাকে মুক্তির প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করে।
ভাষাগতভাবে, আমাদের ভাষার গঠনই নির্ধারণ করতে পারে আমরা কীসে মনোযোগ দিই এবং কীভাবে আমরা বাস্তবতাকে ধারণা করি। উদাহরণস্বরূপ, স্যাপির-হোরফ হাইপোথিসিস প্রস্তাব করে, আমরা যে-ভাষায় কথা বলি, তা আমাদের চিন্তাভাবনা-প্রক্রিয়া এবং বিশ্ব সম্পর্কে উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন রঙের শব্দযুক্ত ভাষাগুলি তাদের বক্তাদের রংগুলিকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করতে এবং শ্রেণীবদ্ধ করতে সাহায্য ও পরিচালিত করতে পারে। অধিবিদ্যাগতভাবে, অস্তিত্ব, কার্যকারণ এবং পরিচয় সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে মৌলিক অনুমানগুলি আমাদের বোঝার ভিত্তি তৈরি করে। আমরা একটি নিয়তিবাদী মহাবিশ্বে বিশ্বাস করি, না কি স্বাধীন ইচ্ছার একটি মহাবিশ্বে বিশ্বাস করি—তা ঘটনাগুলিকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করি এবং সেগুলির অর্থ প্রদান করি—তার উপর অনেকটাই নির্ভর করে।
জৈবিকভাবে, আমাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস নির্দিষ্ট কিছু প্রবণতা এবং ধারণাগত পক্ষপাতগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে সংযুক্ত করেছে। এই প্রবণতাগুলি আমাদের জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকরণের গভীরে প্রোথিত এবং বিশ্বের সাথে আমাদের প্রাথমিক ইন্টার-অ্যাকশনকে প্রভাবিত করে। আমাদের দৃষ্টিগত স্নায়ুতন্ত্র (visual system) বিশেষ কিছু বিবেচনায় এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে এটি দ্রুত গতি শনাক্ত করতে পারে এবং নিদর্শন (patterns) চিনতে পারে। এর পেছনে বিবর্তনীয় কারণ আছে।
মানবজাতি যখন বিবর্তিত হচ্ছিল, তখন বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—শিকারি প্রাণীর আক্রমণ দ্রুত বুঝে ফেলা, সম্ভাব্য শিকার বা সঙ্গীকে চিহ্নিত করা, হঠাৎ পরিবেশগত পরিবর্তন (যেমন ঝড়, আগুন ইত্যাদি) ধরতে পারা। এসব কারণে আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে, চোখ কোনো কিছু নড়তে দেখলেই তা তৎক্ষণাৎ ধরতে পারে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। আমাদের চোখ-মস্তিষ্কের ব্যবস্থা গতি আর নিদর্শন খুব তাড়াতাড়ি চেনে, কারণ প্রাচীন মানুষদের জন্য বেঁচে থাকা নির্ভর করত দ্রুত বিপদ বোঝা ও প্রতিক্রিয়া জানানোর ওপর।
এই অন্তর্নিহিত জৈবিক প্রবণতাগুলি 'পূর্ব জ্ঞান'-এর একটি রূপ হিসাবে কাজ করে, যা বিশ্বের সাথে আমাদের প্রাথমিক সাক্ষাৎকে একটি আকার দেয়। এগুলি আমাদের মনোযোগকে নির্দিষ্ট উদ্দীপকের দিকে পরিচালিত করে এবং আমাদের প্রাথমিক ব্যাখ্যাগুলিকে প্রভাবিত করে। যেমন, আমরা যখন একটি নতুন পরিবেশে প্রবেশ করি, আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত পরিচিত নিদর্শন এবং সম্ভাব্য হুমকির বিষয়ে স্ক্যান করে, এমনকি সচেতনভাবে তা উপলব্ধি করার আগেই। এটি কেবল আমাদের সুরক্ষাই নিশ্চিত করে না, বরং নতুন তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি ভিত্তিও তৈরি করে। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ নতুন বাসা খোঁজার ক্ষেত্রে এমন এলাকাই পছন্দ করবেন, যেটির কাছাকাছি ধর্মালয় আছে। একজন নির্জনতাপ্রিয় মানুষ কাছাকাছি কোনো ধর্মালয় থাকুক না থাকুক, এমন এলাকাকেই থাকার জন্য বেছে নিতে চাইবেন, যে-এলাকাটা নিরিবিলি। আড্ডাবাজ মানুষ যারা, তারা কোলাহল থেকে বেশিক্ষণ দূরে থাকতে চায় না, ঘুরেফিরে কোলাহলেই তারা স্বস্তি খুঁজে পায়। এই সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতগুলি আমাদের শেখার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে; আমরা এমন তথ্য সহজে শোষণ করি, যা আমাদের পূর্ব-বিদ্যমান জ্ঞানীয় কাঠামো বা বিবর্তনীয় প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের শ্রবণ ব্যবস্থা, উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি এবং পিচ সনাক্তকরণের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল, যা মানুষের কণ্ঠস্বর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত শব্দগুলি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে, আমাদের সামাজিক জ্ঞান প্রায়শই মুখভঙ্গি এবং শারীরিক ভাষা দ্রুত পাঠ করার ক্ষমতার দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা প্রাথমিক যোগাযোগ এবং সামাজিক বাঁধনের জন্য অপরিহার্য ছিল। এই সহজাত পক্ষপাতগুলি আমাদের অভিজ্ঞতার ছাঁকনি হিসাবে কাজ করে, যা আমাদের বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট, তবুও কার্যকরী, চিত্র তৈরি করতে সাহায্য করে। এই জৈবিক ভিত্তি ছাড়া, প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অজানা এবং অপ্রক্রিয়াজাত বলে মনে হত, যা আমাদের টিকে থাকার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করত।
এই ব্যাপক 'পূর্ব জ্ঞান'-এর স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের বাস্তবতার নির্মিত প্রকৃতিকে তুলে ধরে। আমরা যা বস্তুনিষ্ঠ সত্য হিসেবে গ্রহণ করি, তা সর্বদা, কিছু পরিমাণে, আমাদের পূর্ব-বিদ্যমান জ্ঞানীয় এবং সাংস্কৃতিক লেন্সগুলির মাধ্যমে ফিল্টার-করা একটি ব্যাখ্যা। এই 'পূর্ব জ্ঞান' কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে সামাজিক কাঠামো, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভাষা এবং সমষ্টিগত বিশ্বাসও অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা আমরা সচেতন বা অচেতনভাবে ধারণ করি। এই লেন্সগুলি আমাদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করা এবং বিশ্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
এটি কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার ধারণাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেয় না, বরং আমরা যে বিষয়গত পথগুলির মাধ্যমে এটির সান্নিধ্যে আসি এবং ফলে বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি করি, তার উপর জোর দেয়। বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা হয়তো বিদ্যমান, কিন্তু এর সাথে আমাদের সম্পর্ক সবসময়ই একজন মধ্যস্থতাকারীর মতো। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্কৃতির মানুষ একই বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে উপলব্ধি করতে পারে, কারণ তাদের 'পূর্ব জ্ঞান'-এর কাঠামো ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে একজন বিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করবেন তাঁর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে, একজন শিল্পী তাঁর নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এবং একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে। এই প্রতিটি ব্যাখ্যাই সেই ব্যক্তির 'পূর্ব জ্ঞান' দ্বারা প্রভাবিত।
এটি আমাদের নিজেদের অনুমান সম্পর্কে সমালোচনামূলক হতে এবং অন্যদের বেলায়, বিভিন্ন 'পূর্ব-জ্ঞান' কাঠামোর অধীনে তারা কোন উপায়ে পরিচালিত, তারা কীভাবে সত্যিই বিশ্বকে অনুভব করতে এবং বুঝতে পারে, তার বিভিন্ন উপায়গুলিকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে। যখন আমরা আমাদের নিজস্ব জ্ঞানীয় লেন্সগুলির সীমাবদ্ধতা স্বীকার করি, তখন আমরা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও খোলামনে গ্রহণ করতে পারি। এটি আমাদেরকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করে: "আমি যা সত্য বলে মনে করছি, তা কি আমার নিজস্ব পূর্বানুমান দ্বারা প্রভাবিত নয়?" এবং "অন্যরা এই পরিস্থিতিকে কেন ভিন্নভাবে দেখছে?"
এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা বৌদ্ধিক নম্রতাকে উৎসাহিত করে এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার জন্য এবং উপলব্ধি ও চিন্তাভাবনায় মানববৈচিত্র্যের আরও সূক্ষ্ম উপলব্ধির জন্য পথ খুলে দেয়। যখন আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের নিজস্ব বিশ্বদর্শন কেবল একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা, তখন আমরা অন্যান্য ব্যাখ্যাগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখি। এটি কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সামাজিক নীতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলির সমাধানে, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং প্রেক্ষাপট থেকে আসা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে একত্রিত করা অত্যাবশ্যক, এবং এই উপলব্ধিই তার ভিত্তি স্থাপন করে। এর মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র সহনশীলতাই নয়, বরং সহানুভূতি এবং সম্মিলিত প্রজ্ঞার দিকে এগিয়ে যেতে পারি, যা মানব সমাজের জন্য এক সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হবে।
"বিষয়বস্তু দ্বারা ব্যাপ্ত নয় (ফল-ব্যাপ্যত্বম)" এবং "মানসিক পরিবর্তন দ্বারা ব্যাপ্ত (বৃত্তি-ব্যাপ্যত্বম)"—এই দুটি ধারণা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের জ্ঞানতত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত, যা মন কীভাবে বাস্তবতা উপলব্ধি করে এবং নির্মাণ করে, তার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই ধারণাগুলি কেবল জটিল এবং সূক্ষ্ম জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলির গভীরে অনুসন্ধান করে না, বরং চূড়ান্ত বাস্তবতা, ব্রহ্ম, এবং সাধারণ অভিজ্ঞতামূলক বস্তুর প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তৈরি করে।
ফল-ব্যাপ্যত্বম (বিষয়বস্তু দ্বারা ব্যাপ্ত নয়): এই ধারণাটি বোঝায় যে, কোনো বস্তু বা অভিজ্ঞতা সরাসরি মনের দ্বারা ব্যাপ্ত বা সীমাবদ্ধ নয়। অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, ব্রহ্ম, অর্থাৎ চূড়ান্ত বাস্তবতা, মনের সীমার বাইরে। এটি কোনো জ্ঞান বা উপলব্ধির বিষয় নয়, যা মন দ্বারা সৃষ্ট বা প্রভাবিত হতে পারে। ব্রহ্ম স্বতঃপ্রকাশিত এবং স্বতঃসিদ্ধ; এটি কোনো জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার ফল নয়। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় আমরা যা-কিছু জানি, অনুভব করি বা উপলব্ধি করি, তা সবই মনের পরিবর্তন বা বৃত্তির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ব্রহ্ম সেই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। এটি কোনো নির্দিষ্ট ফলাফলের দ্বারা ব্যাপ্ত নয়, অর্থাৎ এটি মনের কার্যকলাপের দ্বারা উৎপন্ন বা পরিবর্তিত হতে পারে না। এই ধারণাটি ব্রহ্মের অসীমত্ব, অদ্বিতীয়ত্ব এবং মনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে।