অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: চব্বিশ



এই সূত্রটি একটি সূক্ষ্ম অথচ গভীর দার্শনিক ধারণা উপস্থাপন করে: সমস্ত নামযোগ্য জিনিস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈধ জ্ঞানের (প্রমা) বস্তু না হলেও, নামযোগ্য সব কিছুই কোনো-না-কোনো ক্ষমতা বা স্তরে জ্ঞাত বা অবগত হওয়ার যোগ্য। প্রমা হলো সুনির্দিষ্ট, ত্রুটিমুক্ত এবং অবিসংবাদিত উপলব্ধি, যা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। যখন আমরা কোনো কিছুকে 'নাম' দিই, তা সে বাস্তব হোক বা কাল্পনিক, তার অস্তিত্বের একটি ধারণা আমাদের মনোজগতে তৈরি হয়। এই ধারণাই তাকে জানার বা বোঝার যোগ্য করে তোলে, যদিও সেই জ্ঞান কখনও কখনও প্রচলিত প্রমাণের মাধ্যমে সরাসরি প্রাপ্ত না-ও হতে পারে, বা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ হতে পারে।

এই নীতির তাৎপর্য হলো, এটি জ্ঞানের পরিধিকে কেবল প্রত্যক্ষ বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং আমাদের চিন্তা, কল্পনা এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, 'চাঁদের বুড়ি' একটি লোককথা বা পৌরাণিক সত্তা, যা সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞাত নয় এবং যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তা সত্ত্বেও, এই ধারণাটি আমাদের মানসিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জ্ঞানের অংশ হতে পারে। আমরা চাঁদের বুড়িকে নিয়ে গল্প করি, ছবি আঁকি, বা তার সম্পর্কে আলোচনা করি, যা সবই একধরনের জ্ঞানগত প্রক্রিয়া। এখানে জ্ঞানটি সরাসরি প্রমা না হলেও, একটি ধারণাগত সত্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

একইভাবে, একটি যৌক্তিক অসংগতি, যেমন 'বন্ধ্যা নারীর পুত্র' বাস্তব জগতে অস্তিত্বহীন হলেও, এই ধারণাগত গঠনটি আমাদের বুদ্ধির মাধ্যমে বিচার্য ও বিশ্লেষণযোগ্য। এর অস্তিত্ব নেই, তাই এর কোনো প্রত্যক্ষ প্রমা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা এই ধারণাকে বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারি যে, এটি স্ববিরোধী এবং বাস্তবসম্মত নয়। এই বিশ্লেষণই একধরনের জ্ঞান। এটি আমাদের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে, যেখানে আমরা কেবল অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের উপর নির্ভর না করে, ধারণাগত কাঠামোর মধ্যেও সত্য-মিথ্যা বা সংগতি-অসংগতি বিচার করতে পারি।

এই ধারণাটি বিশেষত অধিবিদ্যা (Metaphysics), জ্ঞানতত্ত্ব (Epistemology) এবং ভাষাদর্শনে (Philosophy of Language) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এটি বোঝায় যে, ভাষা কেবল বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং জ্ঞান তৈরির একটি সক্রিয় হাতিয়ারও বটে। যখন আমরা কোনো কিছুকে নাম দিই, আমরা তাকে আমাদের বুদ্ধির পরিধির মধ্যে নিয়ে আসি, তাকে সংজ্ঞায়িত করি এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, এমনকি অবাস্তব বা কাল্পনিক জিনিসও আমাদের জ্ঞান-ব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠে, যদিও তাদের সত্যতা যাচাইয়ের মানদণ্ড ভিন্ন হতে পারে। সংক্ষেপে, নামযোগ্যতা জ্ঞাতযোগ্যতার প্রাথমিক শর্ত, যা প্রমা ছাড়াও জ্ঞান অর্জনের বিভিন্ন পথ উন্মোচন করে।

এই নীতিটি কেবল সম্ভাব্য জ্ঞানের একটি বিশাল এবং প্রায় অসীম ক্ষেত্রকে উন্মোচন করে না, বরং এটি আমাদের উপলব্ধি এবং অনুধাবনের সীমাবদ্ধতাকেও চ্যালেঞ্জ করে। এটি শুধুমাত্র দৃশ্যমান বা বস্তুগতভাবে বিদ্যমান সত্ত্বাকেই বোঝায় না, বরং ধারণাগতভাবে কল্পিত, এমনকি কাল্পনিক, সকল বিষয়কেও এর অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে মানুষের মনের গভীর এবং অপরিমেয় ক্ষমতাকে তুলে ধরা হয়, যা কেবল ভাষা বা চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশযোগ্য সকল কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতে এবং সেগুলিকে সুসংগঠিতভাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে সক্ষম। এই মৌলিক সূত্রটি জ্ঞানের প্রচলিত সীমাবদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং মানব উপলব্ধির দিগন্তকে নতুন উচ্চতায় প্রসারিত করে।

এই নীতি মানুষকে তাদের চারপাশের বাস্তব জগৎ এবং তাদের ভেতরের অদেখা জগৎ—উভয়কেই আরও গভীরভাবে অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করে। এই ধারণার মধ্য দিয়ে জ্ঞান কেবল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা ইন্দ্রিয়লব্ধ উপলব্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটি ভাষাগত এবং ধারণাগত কাঠামোর মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে, এমন সকল বিমূর্ত ও জটিল বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে বস্তুবাদী জ্ঞানের সংকীর্ণ গণ্ডি অতিক্রম করে বিমূর্ত চিন্তাভাবনা এবং গভীর দার্শনিক উপলব্ধির এক নতুন পথ উন্মোচিত হয়। এটি মানবচেতনার অপার সম্ভাবনা এবং তার সৃজনশীল ক্ষমতাকে প্রতিভাত করে, যেখানে জ্ঞান কেবল তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং একটি অন্বেষণমূলক যাত্রা। এই প্রক্রিয়ায়, মানুষ কেবল বাইরের জগতকে শেখে না, বরং নিজের ভেতরের অনাবিষ্কৃত মহাবিশ্বকেও আবিষ্কার করে, যা তাকে অস্তিত্বের অর্থ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি মানবজাতির জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াকে এক নতুন মাত্রা দেয়, যেখানে প্রতিটি ধারণা, প্রতিটি শব্দ, এবং প্রতিটি চিন্তা এক অপার জ্ঞানের সাগরে প্রবেশদ্বার খুলে দেয়।

প্রকৃত (যথার্থ) এবং অ-বৈধ জ্ঞানের বস্তু না হওয়া (অপ্রমাণ-জ্ঞান-গম্যত্ব)-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি বাস্তব জ্ঞান এবং প্রকৃত সত্যের একটি ব্যাপক উপলব্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি ধারণার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আমাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামোর গভীরতা এবং একটি দৃঢ় দার্শনিক ভিত্তি গঠনে এর অপরিহার্যতা সম্পর্কে আলোকপাত করে।

কোনো কিছু দ্ব্যর্থহীনভাবে 'প্রকৃত' (যথার্থ) বলে মনে করা হয়, যদি তা বৈধ, সত্য জ্ঞানের সাথে নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এর অর্থ হলো, এটি বিকৃতি, ত্রুটি বা কোনো প্রকার বিরোধিতা ছাড়াই বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার সাথে সুনির্দিষ্টভাবে মিলে যায়। প্রকৃত জ্ঞান কেবল একটি আপাত-সত্যকে উপস্থাপন করে না, বরং এটি জিনিসগুলি আসলে কেমন, তার একটি নির্ভুল এবং অসংশোধিত চিত্রণকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটি সেই জ্ঞান, যা পরীক্ষিত, যাচাইকৃত এবং সর্বসম্মতভাবে গ্রহণীয় মানদণ্ড দ্বারা প্রমাণিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা দেখি যে, একটি নির্দিষ্ট ফল মিষ্টি, এবং আমাদের একাধিক ইন্দ্রিয় (যেমন স্বাদ, গন্ধ) এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য উৎস (যেমন রাসায়নিক বিশ্লেষণ) এই তথ্যের বৈধতা নিশ্চিত করে, তাহলে সেই ফলের মিষ্টি হওয়াকে 'প্রকৃত' বা যথার্থ জ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ধরনের জ্ঞান মিথ্যা, ভ্রম বা বিভ্রমের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত।

বিপরীতভাবে, কোনো কিছু "অ-বৈধ জ্ঞানের বস্তু না হওয়া"—এই উক্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর অন্তর্নিহিত অর্থ বহন করে; এর অর্থ হলো, এর সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান অন্তর্নিহিতভাবে বৈধ, নির্ভুল এবং ত্রুটি, ভুল ধারণা বা যে-কোনো ধরনের জ্ঞানতাত্ত্বিক ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এটি বোঝায় যে, জ্ঞানটি নিজেই শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে এবং প্রমাণের মানদণ্ডের সাথে এর মিল রয়েছে। এটি কেবল একটি ধারণার অভাবকে বোঝায় না, বরং জ্ঞানের সেই অবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে সংশয়, ভ্রান্তি বা অপর্যাপ্ততার কোনো অবকাশ থাকে না। 'অ-বৈধ জ্ঞানের বস্তু না হওয়া' মানে সেই জ্ঞান, যা কোনো যুক্তিসঙ্গত পরীক্ষা বা সমালোচনার মুখেও তার সত্যতা হারায় না। এই জ্ঞানতাত্ত্বিক অবস্থানটি আমাদের নিশ্চিত করে যে, আমরা যা জানি, তা ভিত্তিহীন নয়, বরং এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রমাণের উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে।

উদাহরণস্বরূপ, "জগতের ক্ষণিকত্ব" (ক্ষণিকত্বম)—যা সমস্ত ঘটনার অনিত্যতা এবং মুহূর্তে মুহূর্তে উত্থান ও বিলুপ্তি দাবি করে, এমন নির্দিষ্ট বৌদ্ধ ধারার একটি কেন্দ্রীয় ধারণা—যখন এই ন্যায় কাঠামোর মধ্যে দাবি করা হয়, তখন এটিকে জগতের প্রকৃতি সম্পর্কে একটি বৈধ জ্ঞানের রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা ত্রুটি বা ত্রুটিপূর্ণ যুক্তির অধিভুক্ত নয়। ন্যায় দর্শন, যদিও অন্যান্য দার্শনিক ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত ধারণাগুলির সাথে সমালোচনামূলকভাবে যুক্ত হতে পারে, বিশ্লেষণ করতে পারে বা এমনকি চূড়ান্তভাবে সমালোচনা করতে পারে, তবুও এটি তাদের নিছক ভুল ধারণা বা ত্রুটিপূর্ণ যুক্তির অন্তর্ভুক্ত না হয়ে বিবেচনার যোগ্য বৈধ অন্তর্দৃষ্টি হিসাবে উপস্থাপন করার সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়। বৌদ্ধ দর্শনের ‘ক্ষণিকত্ব’ ধারণাটি দাবি করে যে, সব কিছুই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কোনো কিছুরই স্থায়ী অস্তিত্ব নেই। ন্যায় দার্শনিকরা এই ধারণাকে বিশ্লেষণ করেন, এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেন, এবং এর বৈধতা পরীক্ষা করেন। যদি এই ধারণাটি তাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক মানদণ্ড পূরণ করে, তবে তারা এটিকে 'অ-বৈধ জ্ঞানের বস্তু না হওয়া' হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত থাকেন, যদিও তারা এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলির সাথে একমত না-ও হতে পারেন।

এটি ন্যায় ব্যবস্থার পরিশীলিত আন্তঃ-ঘরানা সংলাপ, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তাবগুলির প্রতি উন্মুক্ত থাকার ক্ষমতাকে তুলে ধরে, এমনকি এমন অবস্থায়ও, যখন এটি চূড়ান্তভাবে তাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত না-ও হতে পারে। ন্যায় দর্শনের এই উদার এবং বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি তাকে কেবল একটি নির্দিষ্ট মতবাদ হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং এটিকে একটি বৃহত্তর দার্শনিক আলোচনার মঞ্চে পরিণত করে, যেখানে বিভিন্ন মতবাদকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক বৈধতা নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সত্য অনুসন্ধানের প্রতি ন্যায় দর্শনের গভীর অঙ্গীকার এবং জ্ঞান বিকাশের জন্য তার উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে।

বিপরীতভাবে এবং পরম বৈসাদৃশ্যে, একটি সত্তা বা ধারণা, যা "অবশ্যই অনস্তিত্বশীল (অসৎ)", তা এমন কিছুকে নির্দেশ করে, যার কোনো প্রকারের বাস্তবতা নেই। এটি শুধু বাস্তব বা দৃশ্যমান জগতের বাইরেই নয়, উপরন্তু ধারণাগত বা কল্পিত জগতেও এর কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, "অসৎ" এমন কিছু, যা সম্পূর্ণরূপে শূন্য, যার অস্তিত্বের কোনো সম্ভাবনাই নেই। এটি বাস্তব, বিদ্যমান বা বৈধ জ্ঞানের একটি সম্ভাব্য বস্তু হিসাবে বিবেচিত যে-কোনো কিছুর সরাসরি বিপরীত।

এই ধারণাটিকে স্পষ্টভাবে চিত্রিত করে এমন কিছু উদাহরণ:

'আকাশ-কুসুম' (আকাশ-কুসুম): এর অর্থ হল 'আকাশের ফুল'। বাস্তবে, আকাশে কোনো ফুল ফোটে না। এটি এমন একটি ধারণা, যা বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং কেবল কল্পনাতেই এর অস্তিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু সত্তাত্বিকভাবে এর কোনো ভিত্তি নেই।
'বন্ধ্যা নারীর পুত্র' (বন্ধ্যা-পুত্র): এটি এমন একটি সত্তা, যা প্রাকৃতিক নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একজন বন্ধ্যা নারীর পক্ষে পুত্রধারণ করা অসম্ভব, তাই এই ধারণাটি মৌলিকভাবে অসংগতিপূর্ণ এবং অবাস্তব।
'খরগোশের শিং' (শশ-শৃঙ্গ): খরগোশের স্বভাবগতভাবে শিং থাকে না। এটি একটি স্পষ্ট উদাহরণ, যা দেখায় যে, কীভাবে একটি বস্তুর পরিচিত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত একটি বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়, যা এটিকে "অসৎ" করে তোলে।

এই উদাহরণগুলি কেবল কাল্পনিকই নয়; তারা সত্তাতাত্ত্বিকভাবেও অসম্ভব। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের মৌলিক নিয়ম বা অস্তিত্বের কাঠামো অনুসারে এইসবের কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না।

যদি কোনো কিছুকে নিশ্চিতভাবে 'অসৎ' বলে মনে করা হয়, তবে এটির কোনো সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থান নেই, কোনো অর্থে কোনো অস্তিত্ব নেই। এর অর্থ হলো, এটি বস্তুগতভাবে, ধারণাগতভাবে, বা যৌক্তিকভাবে—কোনোভাবেই বিদ্যমান থাকতে পারে না। এর ফলস্বরূপ, এর অনুমিত অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে, এমন যে-কোনো যুক্তি বা প্রস্তাবনা মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ, অন্তর্নিহিতভাবে অবৈধ এবং চূড়ান্তভাবে অর্থহীন হবে।

এই ধারণাটি যৌক্তিক খণ্ডন এবং দার্শনিক বিতর্কের একটি সমালোচনামূলক হাতিয়ার; কারণ একটি মূল উপাদান বা ভিত্তির পরম অনস্তিত্ব প্রমাণ করা গেলে সম্পূর্ণ যুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেওয়া সম্ভব। যখন একটি যুক্তির মূলভিত্তিটি "অসৎ" প্রমাণিত হয়, তখন সেই যুক্তি তার বাস্তব আশ্রয় হারায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি কেবল ত্রুটিপূর্ণ উপসংহারের দিকেই নিয়ে যায় না, বরং এটি প্রমাণ করে যে, পুরো যুক্তির কাঠামোটিই মিথ্যা বা ভুল ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।