অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: বাইশ



ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারার অত্যন্ত জটিল এবং পদ্ধতিগত কাঠামোতে, বিশেষ করে ন্যায় ও জ্ঞানতত্ত্বের কঠোর বিশ্লেষণমূলক দর্শনে, যৌক্তিক ত্রুটিগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ সনাক্তকরণ এবং গভীর উপলব্ধি একটি যুক্তির বৈধতা মূল্যায়নের জন্য অপরিহার্য। এই দর্শনে, দুটি প্রধান যৌক্তিক ত্রুটি—'বিষয় এবং বিশেষণে অপ্রতিষ্ঠিত' (অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণত্বম) এবং 'যে-পক্ষের বিশেষণ অপ্রতিষ্ঠিত' (অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণঃ পক্ষঃ)—বিশদভাবে আলোচিত হয়। এই ধারণাগুলি কেবল শব্দার্থগত কূটতর্ক নয়, বরং যুক্তির মৌলিক কাঠামোগত দুর্বলতা নির্দেশ করে, যা এর যৌক্তিক সংহতি এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃঢ়তাকে গভীরভাবে ক্ষয় করতে সক্ষম। একটি যুক্তির শক্তি এবং প্রভাবিত করার ক্ষমতা তার উপাদানগুলির প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্ব এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত প্রকৃতির উপর অন্তর্নিহিতভাবে নির্ভরশীল।

অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণত্বম (বিষয় এবং বিশেষণে অপ্রতিষ্ঠিত): এই ত্রুটিটি ঘটে, যখন একটি যুক্তিতে ব্যবহৃত বিশেষ্য বা বিশেষণের অস্তিত্বই প্রতিষ্ঠিত নয় কিংবা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ এমন কোনো সত্তা বা গুণের উল্লেখ করে, যা বাস্তব জগতে নেই বা যার কোনো প্রমাণ নেই, তবে সেই যুক্তিটি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ন্যায় দর্শনে, প্রতিটি পদের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ এবং বাস্তব ভিত্তি থাকতে হয়। যদি কোনো পদ, বিশেষ করে, যা একটি বস্তুকে চিহ্নিত করে বা তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে, নিজেই অপ্রমাণিত বা কাল্পনিক হয়, তবে সেই পদ ব্যবহার করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসম্ভব। এই ত্রুটিটি যুক্তির ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেয়, কারণ এটি এমন ধারণার উপর নির্মিত, যা শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণঃ পক্ষঃ (যে-পক্ষের বিশেষণ অপ্রতিষ্ঠিত): এই ত্রুটিটি তখন দেখা যায়, যখন কোনো যুক্তির 'পক্ষ' (অর্থাৎ, যে-বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে) এমন একটি বিশেষণে ভূষিত হয়, যা সেই পক্ষে প্রতিষ্ঠিত নয় বা যার অস্তিত্ব সেই পক্ষের ক্ষেত্রে অপ্রমাণিত। সহজভাবে বলতে গেলে, যে-বস্তুকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার এমন একটি বৈশিষ্ট্যকে জোর দেওয়া হচ্ছে, যা হয় বস্তুতে নেই, অথবা তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বলা হয়, "আকাশ-কুসুম সুগন্ধযুক্ত," এখানে 'আকাশ-কুসুম' একটি কাল্পনিক ধারণা, এবং 'সুগন্ধযুক্ত' বিশেষণটি একটি কাল্পনিক বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, 'পক্ষ' (আকাশ-কুসুম) নিজেই অপ্রসিদ্ধ, এবং তার বিশেষণও অপ্রসিদ্ধ হয়ে যায়। এই ত্রুটিটি একটি যুক্তির প্রাসঙ্গিকতা এবং সত্যতা উভয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গুরুত্ব এবং প্রভাব: ন্যায় দর্শনে এই দুটি ত্রুটি সনাক্তকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ত্রুটিগুলি কেবল যুক্তির আনুষ্ঠানিক কাঠামোকে দুর্বল করে না, বরং জ্ঞানতত্ত্বের দিক থেকেও গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। যদি কোনো যুক্তি অপ্রসিদ্ধ উপাদানগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তবে সেই যুক্তি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নির্ভরযোগ্য হতে পারে না। এটি মিথ্যা বা ভিত্তিহীন সিদ্ধান্তের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা জ্ঞানার্জনের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। এই ত্রুটিগুলির সচেতনতা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সঠিক যুক্তির জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি আমাদের যুক্তির উপাদানগুলির বাস্তবতা এবং বৈধতা যাচাই করতে উৎসাহিত করে। এই কঠোর বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি ভারতীয় দর্শনের গভীরতা এবং তার জ্ঞানতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের প্রতি প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক। এই ত্রুটিগুলি এড়ানোর মাধ্যমে, দার্শনিকরা এমন একটি ভিত্তি স্থাপন করতে চান, যা সত্য এবং নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের দিকে নিয়ে যায়, যেখানে প্রতিটি যুক্তি তার নিজস্ব উপাদানগুলির প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্ব এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত প্রকৃতির উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।

ভারতীয় তর্কশাস্ত্রের গভীর জগতে, বিশেষ করে ন্যায় দর্শনে, কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক দাবি বা অনুমানের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপরিহার্য উপাদানগুলির একটি জটিল বিন্যাস রয়েছে। এই কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পক্ষ (pakṣa), যা সেই নির্দিষ্ট সত্তা বা গবেষণামূলক তত্ত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে, যার জন্য একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণ (সাধ্য) প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। পক্ষ হলো সেই বিষয়, যেখানে সাধ্যকে অধিষ্ঠিত বলে প্রতিপন্ন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা বলি "পাহাড়ে আগুন আছে", তবে পাহাড় হলো পক্ষ।

একইভাবে অপরিহার্য হলো বিশেষণ (viśeṣaṇa), যা সেই পক্ষকে সংজ্ঞায়িত, চিহ্নিত, সীমিত বা সংশোধন করতে কাজ করে। এটি পক্ষের একটি নির্দিষ্ট দিক বা অবস্থা নির্দেশ করে, যা প্রমাণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, "ধোঁয়াযুক্ত পাহাড়ে আগুন আছে"—এখানে "ধোঁয়াযুক্ত" বিশেষণ হিসাবে কাজ করে, যা পাহাড়ের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে এবং পক্ষকে আরও সুনির্দিষ্ট করে তোলে। বিশেষণ ছাড়া পক্ষ অস্পষ্ট বা অতিব্যাপ্ত হতে পারে, যার ফলে যুক্তির দৃঢ়তা হ্রাস পায়।

এই কাঠামোর মধ্যে একটি মৌলিক ভিত্তি হলো এই দাবি: "প্রমাণিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি (সাধ্য) প্রতিষ্ঠিত।" এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেসলাইন হিসাবে কাজ করে, যা নির্ধারণ করে যে, গুণটিকে নিজেকেই, অর্থাৎ প্রমাণের মূল বস্তুটিকে (সাধ্য), একটি বিদ্যমান বাস্তবতা ধারণ করতে হবে। এর অর্থ হলো, যে গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে আমরা প্রমাণ করতে চাই, তার অস্তিত্ব সম্পর্কে পূর্বেই একটি মৌলিক বোঝাপড়া থাকতে হবে, এমনকি যদি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এর নির্দিষ্ট প্রযোজ্যতা বা উপস্থিতি বিতর্কের বিষয় থাকে বা আরও প্রমাণের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি পাহাড়ে আগুন আছে প্রমাণ করতে চাই, তবে "আগুন" কী এবং এর অস্তিত্ব আছে, তা নিয়ে কোনো মৌলিক বিতর্ক থাকতে পারবে না। আগুন কী, তা আমরা জানি এবং এর অস্তিত্ব আমরা স্বীকার করি। কিন্তু পাহাড়ে এর উপস্থিতি আছে কি না, সেটাই প্রমাণের বিষয়।

এই মৌলিক প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্বের এই মৌলিক প্রতিষ্ঠা ছাড়া, পরবর্তী যে-কোনো যুক্তি, তা যতই জটিল, বিস্তৃত বা যৌক্তিকভাবে কাঠামোগত হোক না কেন, অনিবার্যভাবে ভিত্তিহীনতায় ভেঙে পড়ে। যদি সাধ্যের (প্রমাণীয় গুণের) অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে সেই সাধ্যকে কোনো পক্ষে প্রমাণ করার চেষ্টা অর্থহীন হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণরূপে কোনো প্রকৃত জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি বা বাস্তবতার সাথে সংযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ভারতীয় তর্কশাস্ত্রের উদ্দেশ্যই হলো প্রকৃত জ্ঞান (প্রমা) অর্জন করা, যা বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ। যদি সাধ্যের মৌলিক অস্তিত্বই না থাকে, তবে কোনো বাস্তবতার সাথে সেই যুক্তির সংযোগ থাকে না এবং তা কেবল একটি শব্দের খেলা হয়ে দাঁড়ায়।

সুতরাং, ন্যায় দর্শন অনুসারে, একটি অনুমানের বা যুক্তির বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য পক্ষ, বিশেষণ এবং সাধ্যের মৌলিক অস্তিত্বের স্বীকৃতি—এই তিনটি উপাদান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই উপাদানগুলির সঠিক প্রতিষ্ঠা ছাড়া, কোনো যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অসম্ভব। এই দর্শন প্রমাণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, সুনির্দিষ্টতা এবং বাস্তবতার সাথে সংযোগের ওপর জোর দেয়, যা জ্ঞান অর্জনের একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করে।

তার্কিক দর্শন, যা প্রধানত ন্যায়-বৈশেষিক ঐতিহ্য দ্বারা মূর্ত—বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ)-এর বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে 'অপ্রতিষ্ঠিত' বা 'সমস্যাযুক্ত' জ্ঞান কী, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও বোঝার জন্য একটি অত্যন্ত বিস্তারিত এবং ব্যাপক জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামো প্রদান করে। এই ধরনের শ্রেণীবিভাগের দিকে পরিচালিত করে, এমন দুটি প্রাথমিক কারণ বা শ্রেণীকে সতর্কতার সাথে এটি চিহ্নিত করে:

ক) প্রমাণের বিষয় না হওয়া (প্রমাণাগম্যত্বম): এই বিস্তৃত এবং গভীর শ্রেণীটি এমন সব সত্তা, ধারণা, বা অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে, যা তাদের অন্তর্নিহিত মৌলিক প্রকৃতির কারণে বৈধ জ্ঞান অর্জনের প্রচলিত, সুপ্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং যাচাইযোগ্য পদ্ধতিগুলোকে অতিক্রম করে যায়। ভারতীয় দর্শনে এই প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগুলি, সম্মিলিতভাবে 'প্রমাণ' নামে পরিচিত, জ্ঞানতাত্ত্বিক নিশ্চয়তার মূল ভিত্তি তৈরি করে এবং সাধারণত নিম্নলিখিত চারটি প্রধান প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে:

প্রত্যক্ষ (Perception): এটি জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ, মৌলিক এবং প্রায়শই স্ব-বৈধতা প্রদানকারী রূপ হিসাবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। প্রত্যক্ষ বলতে বোঝায় ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলির (যেমন চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ত্বক) তাদের নিজ নিজ 'বস্তু'-এর সাথে তাৎক্ষণিক এবং মধ্যস্থতাবিহীন মিথস্ক্রিয়া। এর মাধ্যমে বাহ্যিক বিশ্বের সরাসরি অনুভব করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি নীল ঘট দেখার প্রক্রিয়াটি কোনো মধ্যস্থতাকারী চিন্তা বা যুক্তির আশ্রয় ছাড়াই সরাসরি ঘটটির নীলত্ব এবং তার ঘটত্ব উভয়কে উপলব্ধি করায়। এটি কেবলমাত্র বাহ্যিক বস্তুর সংবেদন নয়, বরং অভ্যন্তরীণ মানসিক অবস্থা এবং অনুভূতির প্রত্যক্ষ অনুভবকেও বোঝাতে পারে। প্রত্যক্ষ জ্ঞান অভিজ্ঞতার সবচেয়ে প্রাথমিক স্তর এবং অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর নির্ভরযোগ্যতা ইন্দ্রিয় অঙ্গের সুস্থতা এবং সংবেদনশীল বস্তুর উপস্থিতির উপর নির্ভরশীল।

অনুমান (Inference): এটি একটি অত্যন্ত পরিশীলিত এবং সুসংগঠিত জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া, যেখানে বিদ্যমান পর্যবেক্ষণ, প্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক (বিশেষত 'ব্যাপ্তি', যা দুটি জিনিসের মধ্যে একটি অপরিবর্তনীয় এবং সর্বজনীন সহগামিতা নির্দেশ করে, যেমন ধোঁয়া ও আগুনের সম্পর্ক), এবং সাধারণ নীতিগুলো থেকে নতুন জ্ঞান বা উপলব্ধি আহরণ করা হয়। অনুমান জ্ঞাত বিষয় (যেমন, একটি পাহাড়ে ধোঁয়া দেখা) থেকে অজ্ঞাত বিষয়ের (যেমন, আগুনের উপস্থিতি) দিকে অগ্রসর হয়, একটি যৌক্তিকভাবে নির্ভুল এবং অভিজ্ঞতামূলকভাবে যাচাইযোগ্য সংযোগের ভিত্তিতে। এটি কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, বরং পর্যবেক্ষণের গভীরে গিয়ে কার্যকারণ সম্পর্ক বা অন্যান্য সুনির্দিষ্ট লজিক্যাল প্যাটার্ন বোঝার উপর নির্ভর করে। অনুমান প্রধানত তিন প্রকারের হয়: পূর্ববৎ (কারণ থেকে কার্য অনুমান), শেষবৎ (কার্য থেকে কারণ অনুমান), এবং সামান্যতোদৃষ্ট (সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান)। এই প্রমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

পূর্ববৎ (pūrvavat) অর্থ: কারণ দেখে কার্য অনুমান করা। উদাহরণ: কালো মেঘ দেখে আমরা অনুমান করি যে, শীঘ্রই বৃষ্টি হবে। (এখানে কারণ = মেঘ, কার্য = বৃষ্টি)।

শেষবৎ (śeṣavat) অর্থ: কার্য দেখে কারণ অনুমান করা। উদাহরণ: ভেজা রাস্তা দেখে আমরা অনুমান করি যে, আগেই বৃষ্টি হয়েছে। (এখানে কার্য = ভেজা রাস্তা, কারণ = বৃষ্টি)।

সামান্যতোদৃষ্ট (sāmānyatodṛṣṭa) অর্থ: সাধারণ বা সর্বজনীন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনুমান করা। উদাহরণ: সূর্যের উদয় দেখে আমরা অনুমান করি যে, আলো হবে। এখানে সরাসরি কারণ-কার্য সম্পর্ক নয়, বরং বহু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সাধারণ নিয়ম তৈরি হয়।

উপমান (Comparison): এটি জ্ঞান অর্জনের একটি স্বতন্ত্র এবং কার্যকর রূপ, যা ইতিমধ্যে পরিচিত কোনো কিছুর সাথে সাদৃশ্য বা তুলনার মাধ্যমে নতুন বা পূর্বে অজানা কোনো কিছুকে বোঝার সাথে জড়িত। উপমান কেবল সাদৃশ্য নির্ণয় নয়, বরং সেই সাদৃশ্যের ভিত্তিতে একটি নতুন ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা। উদাহরণস্বরূপ, একজন শহরবাসী, যিনি পূর্বে কখনও একটি 'গবয়' (বন্য গোরু) দেখেননি, তাকে যদি বলা হয় যে, এটি একটি গৃহপালিত গোরুর মতো দেখতে, তাহলে তিনি বনে একটি গবয়ের মুখোমুখি হলে সফলভাবে এটিকে চিনতে পারেন। এখানে পরিচিত গোরুর ধারণাটি অজানা গবয়কে বুঝতে সাহায্য করে। এটি সংজ্ঞা এবং নাম (নাম-করণ) জানার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একটি নতুন বস্তুর সাথে তার পরিচিত শ্রেণীর সাদৃশ্য স্থাপন করে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।