অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: একুশ



এই দৃষ্টিভঙ্গি মিথ্যাত্বের কেন্দ্রবিন্দুকে বস্তুনিষ্ঠ জগৎ থেকে আত্মগত উপলব্ধিকারীর দিকে স্থানান্তরিত করে। এটি আমাদের উপলব্ধি গঠনে জ্ঞানীয় সীমাবদ্ধতা এবং আধ্যাত্মিক অজ্ঞানের ভূমিকার ওপর জোর দেয়। এটি বোঝায় যে, জগৎ যেমনটি আমরা দেখি, তা আমাদের চেতনার অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত। যখন অবিদ্যা বিদ্যমান থাকে, তখন আমরা জগৎকে বহুত্বপূর্ণ, পরিবর্তনশীল এবং স্বাধীন সত্তা হিসেবে উপলব্ধি করি। কিন্তু যখন অবিদ্যা দূর হয়, তখন ব্রহ্মের একত্ব এবং জগতের মায়াময় প্রকৃতি প্রকাশিত হয়।

এই সংজ্ঞা অনুসারে মিথ্যাত্ব প্রমাণ করতে হলে, দুটি প্রধান বিষয় প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য:

অবিদ্যার অস্তিত্ব এবং প্রকৃতি প্রতিষ্ঠা: প্রমাণ করতে হবে যে, অবিদ্যা একটি বাস্তব সত্তা এবং এর একটি সুনির্দিষ্ট প্রকৃতি আছে, যা ব্রহ্মের জ্ঞানকে আড়াল করে এবং জগৎকে প্রক্ষেপণ করে। এর জন্য অবিদ্যাকে কেবল জ্ঞানের অভাব হিসেবে নয়, বরং একটি ইতিবাচক, যদিও অনির্বচনীয়, শক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করতে হবে।

জগৎ কীভাবে এর প্রত্যক্ষ রূপ বা প্রকাশ তা প্রদর্শন করা: দেখাতে হবে যে, জগৎ কেবল অবিদ্যার একটি মায়াময় প্রকাশ বা পরিণতি, এবং এর নিজস্ব কোনো পরম সত্তা নেই। এটি বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে করা হয়, যেমন দেশ, কাল ও নিমিত্ত দ্বারা জগৎ সীমাবদ্ধ এবং পরিবর্তনশীল; জাগ্রত অবস্থা, স্বপ্নাবস্থা ও সুষুপ্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ; এবং শ্রুতি-প্রমাণ।

মোটকথা, "অবিদ্যা-তৎ-কার্যয়োহ্ অন্যতরত্বম" সূত্রটি অদ্বৈত বেদান্তের একটি স্তম্ভ, যা আমাদের জগতের প্রকৃতি এবং আমাদের উপলব্ধির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। এটি শেষপর্যন্ত অবিদ্যা নিবারণ এবং ব্রহ্মের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধির মাধ্যমে মোক্ষপ্রাপ্তির পথ নির্দেশ করে।

এই সুনির্দিষ্ট এবং স্বতন্ত্র সংজ্ঞাগুলি দার্শনিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণরূপে সমালোচনামূলক, কারণ তারা জগতের মিথ্যাত্ব দাবি করে, এমন যে-কোনো যুক্তির জন্য প্রমাণের সঠিক উপলব্ধিকে কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করে। এই সংজ্ঞাগুলি কেবল শব্দের ব্যাবহারিক অর্থ প্রদান করে না, বরং একটি সুসংহত দার্শনিক পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করে, যা বস্তুজগতের প্রকৃতির উপর বিতর্কের একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ।

এই ধরনের একটি যুক্তি, যা জগতের মিথ্যাত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা যৌক্তিকভাবে নির্ভুল এবং দার্শনিকভাবে বৈধ হওয়ার জন্য, এটিকে প্রমাণযোগ্যভাবে এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, জগৎ প্রকৃতপক্ষে এই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে এক বা একাধিককে ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো যুক্তি দাবি করে যে, জগৎ 'অস্তিত্বহীনতা' বা 'আপেক্ষিকতা' দ্বারা চিহ্নিত, তবে তাকে অবশ্যই সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এটিকে সমর্থন করতে হবে। এই প্রমাণগুলি কেবল ধারণাগত বা অনুমানমূলক হলে চলবে না, বরং বাস্তবিক এবং অভিজ্ঞতালব্ধ হতে হবে, যাতে দার্শনিক বিতর্ক একটি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ধরনের একটি শক্তিশালী এবং স্পষ্ট প্রদর্শন ছাড়া, জগৎ মিথ্যা, এই সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন থাকে এবং ওতে দার্শনিক কঠোরতার অভাব থাকে। এটি কেবল একটি নিছক দাবি হিসেবে বিবেচিত হয়, যার কোনো প্রকৃত জ্ঞানতাত্ত্বিক মূল্য থাকে না। একটি দার্শনিক দাবিকে বৈধতা প্রদান করতে হলে, তার পেছনে থাকতে হবে শক্তিশালী প্রমাণ, যৌক্তিক ধারাবাহিকতা এবং অভিজ্ঞতার সমর্থন। অন্যথায়, এটি কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্ধ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে হবে।

জগতের মিথ্যাত্বের যুক্তির আসল ভিত্তি নির্ভর করে "মিথ্যাত্বের" কোন সংজ্ঞাটি প্রযোজ্য, তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা এবং প্রমাণ করার ওপর। প্রতিটি সংজ্ঞার জন্য ভিন্ন ধরনের প্রমাণ এবং যৌক্তিক সমর্থনের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, যদি মিথ্যাত্বের অর্থ হয় 'আপেক্ষিকতা' বা 'মায়া', তবে তার প্রমাণ অবশ্যই বস্তুর পরিবর্তনশীলতা, অনিত্যতা এবং অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে হতে হবে। অন্যদিকে, যদি মিথ্যাত্বের অর্থ হয় 'অস্তিত্বহীনতা', তবে প্রমাণ আরও মৌলিক ও মেটাফিজিক্যাল স্তরে যেতে হবে, যা বস্তুর চূড়ান্ত সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

দার্শনিক অনুসন্ধানের এই তার্কিক পদ্ধতির নির্ভুলতার ওপর আগ্রহ এর বিচার্যকে তুলে ধরে, যা একটি অত্যন্ত কাঠামোগত এবং যাচাইযোগ্য রূপের প্রতি নিবেদিত। এখানে সিদ্ধান্তগুলি নিছক দাবির ভিত্তিতে গৃহীত হয় না, বরং সু-সংজ্ঞায়িত ভিত্তি এবং কঠোর প্রমাণের প্রদর্শনমূলক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে হয়। এটি বৌদ্ধিক সততা নিশ্চিত করে এবং অনুমানমূলক ঘোষণা প্রতিরোধ করে। এর মাধ্যমে, দর্শনের চর্চা কেবল তাত্ত্বিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে, বরং একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির দিকে ধাবিত হয়, যেখানে প্রতিটি দাবি এবং সিদ্ধান্তকে কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতি দার্শনিকদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বিতর্কের একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে, যা জ্ঞানচর্চার উন্নতিতে সহায়ক।

প্রক্রিয়াটি একটি জটিল যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে "বিশেষণ (বিশেষণম্)" এবং "পক্ষ (পক্ষ)"-এর পৃথক এবং অপরিহার্য ভূমিকাগুলি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যাখ্যা করে। এই দার্শনিক আলোচনায়, পক্ষকে সেই মৌলিক বিষয় বা সত্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যার সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, গুণ বা অবস্থা প্রমাণ করার উদ্দেশ্য থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যখন "জগৎ মিথ্যা" বলা হয়, তখন "জগৎ" হলো পক্ষ, অর্থাৎ সেই সত্তা, যার প্রকৃতি অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং যার উপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হবে। এটি হলো সেই আশ্রয় বা ভিত্তি, যার সত্যতা বা মিথ্যাত্ব নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়। পক্ষকে যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা হলো যে-কোনো যৌক্তিক অনুসন্ধানের প্রথম পদক্ষেপ, কারণ এটি নির্ধারণ করে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কী।

বিশেষণ হলো সেই নির্দিষ্ট যোগ্যতা সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য বা গুণ, যা পক্ষের উপর আরোপিত হচ্ছে এবং যা প্রমাণ করার বা খণ্ডন করার চেষ্টা করা হয়। পূর্বোক্ত উদাহরণে, "দৃশ্যত্বের কারণে মিথ্যাত্ব" হলো বিশেষণ। এটি হলো সেই বিধেয়, যা পক্ষ সম্পর্কে নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার করা হয়। বিশেষণ পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করে এবং তার প্রকৃতিকে আলোকিত করে। একটি সুনির্দিষ্ট এবং সুপ্রতিষ্ঠিত বিশেষণ ছাড়া পক্ষ সম্পর্কে কোনো অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অসম্ভব। বিশেষণই যুক্তির মূল প্রস্তাবনা বহন করে এবং এর বৈধতাই যুক্তির সামগ্রিক বৈধতা নির্ধারণ করে।

এখানে চিহ্নিত যৌক্তিক ত্রুটিটি তখন আরও নির্ভুলতার সাথে পুনরাবৃত্তি করা হয়: "প্রমাণিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি (সাধ্যং) প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা সাধ্যে অপ্রতিষ্ঠিত (অপ্রসিদ্ধ-সাধ্যম্)।" এই উক্তিটির গভীর অর্থ রয়েছে। এর সহজ অর্থ হলো, মিথ্যাত্বের বৈশিষ্ট্য (সাধ্য), যা বিধেয় হিসাবে জগৎ (পক্ষ)-এর উপর আরোপিত হয়েছে, তা পর্যাপ্তভাবে প্রমাণিত, সংজ্ঞায়িত বা পর্যাপ্তভাবে সমর্থিত নয়। অর্থাৎ, জগৎকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য যে 'মিথ্যাত্ব' নামক গুণের উপর নির্ভর করা হচ্ছে, সেই গুণটি নিজেই অস্পষ্ট বা অপ্রমাণিত। এটি যুক্তির দুর্বলতম বিন্দুকে নির্দেশ করে, যেখানে প্রমাণযোগ্যতার অভাব সাধ্যের বৈধতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

আলোচনায় ব্যবহৃত চূড়ান্ত এবং আরও সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত শব্দটি হলো "বিশেষণে অপ্রতিষ্ঠিত (অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণ)"। এই শব্দটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, মূল সমস্যা এবং যুক্তিটির মৌলিক দুর্বলতা বিশেষণের (মিথ্যাত্বের ধারণা নিজেই) সাথে নিহিত রয়েছে, যা অপ্রতিষ্ঠিত, অপর্যাপ্তভাবে সংজ্ঞায়িত, অথবা দার্শনিক যুক্তির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সঠিকভাবে সমর্থিত নয়। এই বাক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জোর দেয় যে, মিথ্যাত্বের সংজ্ঞা বা প্রমাণ, যা এই যুক্তিতে সমালোচনাপূর্ণ প্রবণতা সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য হিসাবে কাজ করছে, যুক্তির শৃঙ্খলে দুর্বলতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। যদি বিশেষণ নিজেই অস্পষ্ট বা অপ্রমাণিত থাকে, তাহলে তা পক্ষকে সঠিকভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করতে পারে না, এবং এর ফলে সমগ্র অনুমানটি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

এই বিশ্লেষণ যৌক্তিক পদ্ধতির মৌলিক উপাদান, বিশেষ করে সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যগুলির গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি স্পষ্ট করে যে, এগুলি প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত না হলে একটি তার্কিক কাঠামোয় সম্পূর্ণ অনুমান অবৈধ হয়ে যায়। জগতের মিথ্যাত্বের যুক্তি ব্যর্থ হয় না, কারণ জগৎ বাস্তব, বরং এর কারণ হলো, "মিথ্যাত্বের" ধারণাটি সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত বা অপ্রমাণিত থাকে। এটি তার্কিক পদ্ধতির প্রমাণ—এমনকি মহৎ দার্শনিক দাবিগুলিও সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক বিশ্লেষণের সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থতার অর্থ হলো, ব্যবহৃত ধারণাগত সরঞ্জামটি ত্রুটিপূর্ণ, এবং এর থেকে টানা যে-কোনো সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। একটি যুক্তির সাফল্য তার ভিত্তির দৃঢ়তার উপর নির্ভরশীল, এবং অপ্রসিদ্ধ-বিশেষণ এই ভিত্তিকে দুর্বল করে সমগ্র দার্শনিক সৌধটি ধসিয়ে দেয়।

এই অংশটি দার্শনিক আলোচনায় অতিব্যাপ্তি (over-extension) ও অব্যাপ্তির (under-extension)-এর মতো যৌক্তিক ত্রুটির সূক্ষ্মতা উন্মোচন করে। এটি দেখায় যে, কীভাবে অস্পষ্ট সংজ্ঞাগুলি যৌক্তিক অসংগতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আলোচনার ভিত্তিকে দুর্বল করে। একটি ধারণা যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত না হলে তার ব্যাপ্তি ও সীমাবদ্ধতা অস্পষ্ট থাকে, যা যুক্তির অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করে। এটি তার্কিক পদ্ধতির নির্ভুলতা ও স্পষ্টতাকে তার মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে দেখে। এটি স্থানিক ব্যাপ্তির মাধ্যমে বাস্তবতা বোঝার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে। অপ্রাপ্য-বৃত্তি, অর্থাৎ যা স্থানিক বা প্রত্যক্ষভাবে বিদ্যমান নয়, তার আলোচনা বিচ্ছিন্ন বস্তুগুলির অস্তিত্বের জন্য একটি দৃঢ় দার্শনিক ভিত্তি সরবরাহ করে। এটি আমাদের উপলব্ধি এবং বাস্তবতার মধ্যকার জটিল সম্পর্ককে পুনর্বিবেচনা করতে উৎসাহিত করে, যেখানে বাস্তবতা কেবল বাহ্যিক দৃশ্যমানতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর গভীরে আরও অনেক কিছু নিহিত।

এই পাঠ্য জগতের চূড়ান্ত বাস্তবতা বা এর সম্ভাব্য মিথ্যাত্বের গভীর দার্শনিক প্রশ্নের মোকাবেলা করে। এটি ভারতীয় দর্শনের একটি কেন্দ্রীয় বিতর্ক, যা বেদান্ত, ন্যায়, সাংখ্য এবং বৌদ্ধ দর্শনের মতো বিভিন্ন দর্শন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যায় বিভক্ত। জগতের মিথ্যাত্বের প্রশ্নটি কেবলমাত্র একটি অধিবিদ্যক অনুসন্ধান নয়, বরং এর জ্ঞানতাত্ত্বিক, নৈতিক এবং মোক্ষতত্ত্বগত তাৎপর্য রয়েছে। এই জটিল প্রশ্নের একটি তার্কিক এবং সুসংবদ্ধ বিশ্লেষণ এখানে উপস্থাপিত হয়েছে, যা মৌলিক নীতির ওপর জোর দেয়।

১. কঠোর যৌক্তিক প্রমাণের অপরিহার্যতা: দার্শনিক দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য সুসংবদ্ধ এবং নির্ভুল যুক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য। যুক্তি কেবল অনুভূতি বা বিশ্বাস নয়, বরং তার্কিক কাঠামো এবং প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

২. সমস্ত দার্শনিক ধারণার সুনির্দিষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন সংজ্ঞা: অস্পষ্টতা এবং দ্ব্যর্থকতা দার্শনিক বিতর্কের প্রধান শত্রু। প্রতিটি ধারণা তার স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার মাধ্যমে তার যথাযথ অর্থ এবং প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করে।

৩. পুঙ্খানুপুঙ্খ, সমালোচনামূলক পরীক্ষার পরম প্রয়োজনীয়তা: কোনো দাবিকেই প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। প্রতিটি দাবিকে কঠোর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে এর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বা অসংগতিগুলি প্রকাশিত হয়।

জীব-বিশ্বের মিথ্যাত্ব প্রতিষ্ঠার যুক্তির দুর্বলতা ও অসংগতি প্রকাশিত হয়, বিশেষত যখন সেই মিথ্যাত্বের সংজ্ঞা এবং ভিত্তি অপর্যাপ্ত থাকে। দার্শনিক আলোচনায় নির্ভুলতা, স্পষ্টতা, এবং যৌক্তিক অখণ্ডতার গুরুত্ব অসীম। এটি দেখায় যে, দার্শনিক অগ্রগতি কেবল দাবির ওপর নয়, বরং ধারণার বিশ্লেষণ এবং প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল। তার্কিক পদ্ধতি কঠোর প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তি নির্মাণের আহ্বান জানায়, যা সত্যের সন্ধানে যুক্তি ও যুক্তির সর্বজনীন নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি যৌথ প্রচেষ্টা। দর্শনকে কেবল ধারণার জগৎ নয়, বরং কঠোর যুক্তির মাধ্যমে সত্য উন্মোচনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।