অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: বিশ




প্রত্যক্ষ (প্রত্যক্ষ উপলব্ধি): আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি (চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ত্বক) দ্বারা বাহ্যিক জগৎকে প্রত্যক্ষ করি। কিন্তু এই প্রত্যক্ষ জ্ঞান সর্বদা সীমাবদ্ধ এবং আপেক্ষিক। একটি লাঠি জলে বাঁকা দেখা গেলেও তা আসলে বাঁকা নয়। মরুভূমিতে মরীচিকা দেখা গেলেও তা জল নয়। স্বপ্নকালে আমরা যে জগৎ দেখি, তা স্বপ্নভঙ্গের পর মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ইন্দ্রিয়গুলি বস্তুর কেবল বাহ্যিক রূপকেই প্রকাশ করে, তার অন্তর্নিহিত বা চূড়ান্ত সত্যকে নয়। উপরন্তু, মায়ার প্রভাবে আমরা জগৎকে যেমন দেখি, তা তার প্রকৃত রূপ না-ও হতে পারে। অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই প্রত্যক্ষ উপলব্ধি আসলে একটি মায়াগত জগৎকে প্রকাশ করে, যা চূড়ান্তভাবে সৎ বা বাস্তব নয়।

অনুমান (অনুমান): কোনো পূর্বলব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে যখন আমরা কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হই, তাকে অনুমান বলে। যেমন, ধূম দেখে অগ্নি অনুমান করা। কিন্তু এই অনুমানও প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। যদি প্রত্যক্ষ জ্ঞানই অসম্পূর্ণ বা ভ্রান্ত হয়, তবে তার ভিত্তিতে করা অনুমানও অসম্পূর্ণ বা ভ্রান্ত হতে পারে। জাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে, আমরা কেবল তার কার্যকারণ সম্পর্কগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারি, কিন্তু তার চূড়ান্ত কারণ বা অসীম প্রকৃতি আমাদের অনুমানের বাইরে থাকে। জগৎ যদি মায়া হয়, তবে তার কার্যকারণ সম্পর্কগুলিও মায়াগত, অর্থাৎ আপেক্ষিক এবং সত্য নয়।

শব্দ (মৌখিক সাক্ষ্য/শাস্ত্রবাক্য): এটি হলো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বা শাস্ত্রের বাক্য থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান। আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান অর্জনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে, মৌখিক সাক্ষ্য বা শাস্ত্রবাক্য সেই বস্তুর চূড়ান্ত সত্যকে সবসময় প্রকাশ না-ও করতে পারে, বিশেষত যদি সেই বস্তুটি নিজেই একটি আপেক্ষিক বা মায়াগত সত্তা হয়। অদ্বৈত মতে, বেদান্তের মহাবাক্যগুলি (যেমন 'তত্ত্বমসি') আত্মার পরম সত্যকে প্রকাশ করে, যা জাগতিক জগৎ থেকে ভিন্ন। জাগতিক জগৎ সম্পর্কে যে-শাস্ত্রবাক্যগুলি আছে, সেগুলিও সাপেক্ষ বা ব্যাবহারিক স্তরের জ্ঞান প্রদান করে, কিন্তু পরম সত্যের জ্ঞান নয়।

জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রবেশাধিকারহীনতা এবং চূড়ান্ত অর্থহীনতা: এই প্রমাণের দ্বারা জগতের এই অপ্রাপ্যতা বোঝায় যে, জগৎ চূড়ান্তভাবে কোনো সত্য বা চূড়ান্ত অর্থকে অজ্ঞাত করে তোলে। এর "মিথ্যাত্ব"-কে এর জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রবেশাধিকারহীনতায় স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের উপায়গুলি দ্বারা যদি কোনো কিছুকে সম্পূর্ণভাবে জানা না যায়, তবে তার অস্তিত্ব বা বাস্তবতা মৌলিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর অর্থ এ নয় যে, জগৎ একেবারেই অস্তিত্বহীন; বরং এটি বোঝায় যে, তার অস্তিত্ব স্বাধীন বা স্বতঃসিদ্ধ নয়, বরং একটি ত্রুটিপূর্ণ জানার প্রক্রিয়ার একটি নির্মাণ হতে পারে।

এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, জগৎকে মিথ্যা বলে মনে করা যেতে পারে, কারণ এটি উপলব্ধির প্রতিষ্ঠিত সরঞ্জামগুলি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা যায় না। এটি মানুষের জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্ষমতার মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়, যখন চূড়ান্ত বাস্তবতা জানার প্রশ্ন আসে। আমরা আমাদের সীমিত ইন্দ্রিয় ও মন দিয়ে জগতের যে-অংশটুকু উপলব্ধি করি, তা তার সামগ্রিক বা পরম সত্য নয়।

বিতর্কের ক্ষেত্র: "প্রমাণাগম্যত্বম" সংজ্ঞাটি বিতর্ককে জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে ঠেলে দেয়, জগৎ সত্যিই যেমন, তা জানার সম্ভাবনাকেই প্রশ্ন করে। এটি কেবল দাবি করে না যে, জগৎ অজ্ঞাত, বরং এটি প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে যে, কেন জগৎ অন্তর্নিহিতভাবে যে-কোনো বৈধ উপায়েই অজ্ঞাত। এই প্রমাণাগম্যত্ব কি মানুষের সীমাবদ্ধতার কারণে, না কি জগতের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির কারণে—এই প্রশ্নটিই ভারতীয় দর্শনে গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে। অদ্বৈত বেদান্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, জগৎ ব্রহ্মের তুলনায় অপ্রাপ্য, কারণ এটি ব্রহ্মের মায়াগত প্রকাশ এবং পরম সত্য কেবল অদ্বয় ব্রহ্মই।

দুই। সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বম (Sad-asad-vilakṣaṇatvaṁ)—অস্তিত্বের এক অনন্য মাত্রা: "সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বম" ধারণার অর্থ হলো "অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্ব থেকে পার্থক্য।" এই গভীর দার্শনিক ধারণাটি ভারতীয় দর্শনে, বিশেষত অদ্বৈত বেদান্তে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন এক সূক্ষ্ম সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থানকে নির্দেশ করে, যা প্রচলিত দ্বৈতবাদী চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই ধারণা অনুসারে, যা-কিছু সদ-অসৎ-বিলক্ষণ, তা চূড়ান্ত অর্থে সত্যও নয়, আবার সম্পূর্ণ মিথ্যা বা অস্তিত্বহীনও নয়। এটি অস্তিত্বের একটি তৃতীয় এবং অনন্য পদ্ধতি, যা আমাদের বাস্তবতার উপলব্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

মায়া এবং বিভ্রমের সাথে সম্পর্ক: এই বৈশিষ্ট্যটি প্রায়শই 'মায়া' বা বিভ্রমের সঙ্গে যুক্ত। মায়া এমন এক শক্তি, যা আমাদের সামনে জগতের একটি আপাত বাস্তবতা উপস্থাপন করে, কিন্তু যা চূড়ান্ত অর্থে ব্রহ্মের মতো পরম সত্য নয়। আমরা জাগতিক অভিজ্ঞতাগুলিকে বাস্তব বলে মনে করি, কিন্তু অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, এগুলি মায়ারই প্রকাশ। মায়ার প্রভাবে সৃষ্ট জগৎকে 'সৎ' (বিদ্যমান) বলা যায় না, কারণ এটি ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং ব্রহ্মের মতো নিত্য নয়। আবার, এটিকে 'অসৎ' (অনস্তিত্বশীল) বা শূন্যতাও বলা যায় না, কারণ এটি আমাদের অভিজ্ঞতার বিষয়। একটি স্বপ্ন যেমন জাগ্রত অবস্থায় বিদ্যমান নয়, কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় তা আমাদের কাছে বাস্তব বলে মনে হয় এবং আমরা তা অভিজ্ঞতা করি, ঠিক তেমনই মায়া দ্বারা সৃষ্ট জগৎও। এই জগৎ পরমভাবে অনস্তিত্বশীল নয়, কারণ এর একটি আপেক্ষিক এবং ব্যাবহারিক বাস্তবতা রয়েছে, কিন্তু এটি চূড়ান্ত বা পরম অর্থে বিদ্যমানও নয়।

স্বপ্ন, মরীচিকা এবং শুক্তি-রুপার দৃষ্টান্ত: এই ধারণাটি বোঝার জন্য কিছু সুপরিচিত দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা হয়:

স্বপ্ন: একজন ব্যক্তি যখন স্বপ্ন দেখে, তখন স্বপ্নের জগৎটি তার কাছে বাস্তব বলে মনে হয়। সে হাসে, কাঁদে, ভয় পায়, আনন্দিত হয়। কিন্তু ঘুম ভাঙলে সে বুঝতে পারে যে, তা স্বপ্ন ছিল, মিথ্যা ছিল, তার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব ছিল না। তবুও, স্বপ্নের অভিজ্ঞতাটি সম্পূর্ণভাবে অনস্তিত্বশীল ছিল না, কারণ এটি ব্যক্তির দ্বারা অভিজ্ঞ হয়েছিল। স্বপ্নের এই দ্বৈত প্রকৃতি—অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের মধ্যবর্তী অবস্থা—সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

মরীচিকা: মরুভূমিতে জলের মরীচিকা দেখা যায়। পথিকের কাছে তা বাস্তব জল বলে মনে হয় এবং সে তার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু কাছে গেলে সে বুঝতে পারে যে, সেখানে কোনো জল নেই, সেটি কেবল আলোকের খেলা। মরীচিকা যেমন বাস্তব জল নয়, আবার সম্পূর্ণ অনস্তিত্বশীলও নয়, কারণ তা চাক্ষুষভাবে প্রতীয়মান হয়। এটিও সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বের উদাহরণ।

শুক্তি-রুপা (শামুকে রুপার ভ্রম): অন্ধকারে বা স্বল্প আলোতে একটি ঝিনুককে (শুক্তি) ভুল করে রুপা বলে মনে হতে পারে। যতক্ষণ এই ভ্রম থাকে, ততক্ষণ ব্যক্তি রুপাকে বাস্তব মনে করে। কিন্তু যখন আলো আসে বা পরীক্ষা করে দেখা হয়, তখন ভ্রম ভেঙে যায় এবং বোঝা যায় যে সেটি আসলে রুপা ছিল না। এই অবস্থায় রূপাটি পরম অর্থে বিদ্যমান ছিল না, আবার সম্পূর্ণ অনস্তিত্বশীলও ছিল না, কারণ এটি অনুভূত হয়েছিল।

এই দৃষ্টান্তগুলি দেখায় যে, সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বম এমন একটি বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে, যা পরমভাবে বাস্তবও নয় আবার পরমভাবে অবাস্তবও নয়, কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান।

অদ্বৈত বেদান্তে, মায়া এবং মায়া দ্বারা সৃষ্ট জগৎকে 'অনির্বচনীয়' (অ-বর্ণনীয়) হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এর অর্থ হলো, মায়াকে 'সৎ' (বিদ্যমান) বা 'অসৎ' (অনস্তিত্বশীল) কোনো একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীতে ফেলা যায় না। এটি এমন এক সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থা, যা আমাদের প্রচলিত ভাষার এবং ধারণার সীমাবদ্ধতার বাইরে। জগৎ, এই অর্থে, একটি "আকাশ-কুসুম"-এর মতো সম্পূর্ণরূপে অনস্তিত্বশীলও নয় (যেমন আকাশ-কুসুমের কোনো অস্তিত্ব নেই), আবার ব্রহ্মের মতো চূড়ান্তভাবে বাস্তবও নয়। ব্রহ্মই একমাত্র পরম সত্য, যা নিত্য, অপরিবর্তনীয় এবং স্বয়ম্ভূ।

সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বমের সংজ্ঞা অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের প্রচলিত বাইনারি উপলব্ধিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। সাধারণত আমরা কোনো বস্তুকে হয় বিদ্যমান অথবা অনস্তিত্বশীল—এই দুটি শ্রেণীতেই বিচার করি। কিন্তু এই ধারণাটি একটি আরও সূক্ষ্ম এবং জটিল সত্তাতাত্ত্বিক কাঠামো সরবরাহ করে, যা তৃতীয় একটি সম্ভাবনাকে উন্মোচন করে। এটি প্রমাণ করার জন্য দেখাতে হবে যে, জগৎকে সমস্ত প্রসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সত্যিই বিদ্যমান বা সত্যিই অনস্তিত্বশীল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় না। জগতের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি, পরিবর্তনশীলতা এবং আপেক্ষিক বাস্তবতা এই ধারণার ভিত্তি স্থাপন করে।

সংক্ষেপে, সদ-অসৎ-বিলক্ষণত্বম ভারতীয় দর্শনের একটি গভীর এবং বিপ্লবী ধারণা, যা বাস্তবতার প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায় এবং মায়ার রহস্যময় ভূমিকার উপর আলোকপাত করে। এটি ব্রহ্মের পরম সত্তাকে আরও সুস্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করে, কারণ ব্রহ্মের ব্যতিক্রম অন্য সব কিছুই এই সদ-অসৎ-বিলক্ষণ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

অবিদ্যা-তৎ-কার্যয়োহ্ অন্যতরত্বম (Avidyā-tat-kāryayoḥ anyataratvam): এই সূত্রটি গভীর দার্শনিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, যার অর্থ "অজ্ঞান (অবিদ্যা) বা অজ্ঞানের একটি প্রভাব হওয়া।" এই ব্যাখ্যাটি জগৎ, বাস্তবতা এবং আমাদের উপলব্ধির প্রকৃতি সম্পর্কে অদ্বৈত বেদান্তের একটি মৌলিক ধারণার ওপর আলোকপাত করে। এটি প্রস্তাব করে যে, আমরা যে-জগৎকে বাস্তব বলে উপলব্ধি করি, তা হয় অবিদ্যা থেকে সরাসরি উৎপন্ন, অথবা অবিদ্যারই একটি কার্য বা পরিণতি।

এই ধারণার মূলে রয়েছে অবিদ্যা, যাকে চূড়ান্ত বাস্তবতা, ব্রহ্মকে আবৃত বা অস্পষ্টকারী মৌলিক, আদিম অজ্ঞান হিসাবে বোঝা হয়। অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি সক্রিয় শক্তি, যা ভ্রান্তিকে উৎপন্ন করে এবং সত্তার প্রকৃত প্রকৃতিকে আড়াল করে রাখে। যখন বলা হয়, জগৎ অবিদ্যার অন্যতরত্ব (অন্যতর রূপ হওয়ার প্রপঞ্চ), তখন এর দুটি দিক উন্মোচিত হয়:

১. অবিদ্যার প্রত্যক্ষ প্রকাশ (Direct Manifestation of Avidyā): এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, জগৎ হলো অবিদ্যার একটি সরাসরি প্রক্ষেপণ, অনেকটা মায়ার মতোই। মায়া হল সেই শক্তি, যা ব্রহ্মের ওপর নাম ও রূপের একটি আপাতদৃষ্টিকে বাস্তব জগৎরূপে আরোপিত করে। এই আরোপিত জগৎটি নিজস্ব সত্তা দ্বারা বিদ্যমান নয়, বরং অবিদ্যার প্রভাবে আমাদের মনে উদ্ভূত হয়। যেমন, দড়িতে সাপ দেখার বিভ্রম—সাপের অস্তিত্ব কেবল পর্যবেক্ষকের মনেই থাকে, বাস্তব দড়িতে নয়। একইভাবে, জগতের আপাত বাস্তবতা অবিদ্যার কারণেই অনুভূত হয়।

২. অবিদ্যার প্রত্যক্ষ পরিণতি (Direct Consequence of Avidyā): এই ব্যাখ্যায়, জগৎ অবিদ্যার একটি পরোক্ষ ফল। ব্রহ্মের ওপর নাম ও রূপের অধ্যাস (superimposition) অবিদ্যার কারণে ঘটে। অধ্যাস মানে একটি বস্তুর ওপর অন্য একটি বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে ভুলভাবে আরোপ করা। যেমন, শুক্তিকে রৌপ্য বলে মনে করা। ব্রহ্ম, যা নির্গুণ ও নিরাকার, তার ওপর এই বহুবিধ জগৎকে আরোপিত করা হয় অবিদ্যার প্রভাবে। জগৎকে তখন ব্রহ্মের একটি বিকৃত বা অসম্পূর্ণ উপলব্ধি হিসাবে দেখা হয়, যা অবিদ্যার কারণে উৎপন্ন হয়।

এই গভীর ব্যাখ্যাটি জগতের মিথ্যাত্ব বা মায়াময় প্রকৃতিকে অবিদ্যার সাথে সরাসরি যুক্ত করে। জগতের এই অনুভূত অবাস্তবতা, যা মিথ্যাত্ব নামে পরিচিত, কোনো বস্তুনিষ্ঠ বা অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য নয়। বরং, এটি উপলব্ধিকারীর বিভ্রান্ত উপলব্ধিতে নিহিত, যা অবিদ্যা থেকে উদ্ভূত। অবিদ্যা আমাদের উপলব্ধিকে মেঘলা করে তোলে, যার ফলে আমরা বাস্তবতাকে বিকৃত, অসম্পূর্ণ বা মৌলিকভাবে ভ্রান্তভাবে উপলব্ধি করি। এর ফলস্বরূপ, আমরা প্রায়শই বাস্তবকে অবাস্তব মনে করি এবং অবাস্তবকে বাস্তব বলে ধরে নিই।