অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: ছয়



তবে, সিদ্ধান্তবাদী, অদ্বৈত বেদান্তের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক কঠোরতা ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ক্ষমতা নিয়ে, এই আপাত-স্বজ্ঞাত ব্যাখ্যাটিকে তীব্রভাবে চ্যালেঞ্জ করেন। এই চ্যালেঞ্জের মূলে রয়েছে অজ্ঞান (Ajñāna) বা অবিদ্যার প্রকৃতি এবং এর অস্তিত্বের যৌক্তিকতা নিয়ে গভীর দার্শনিক অনুসন্ধান। সিদ্ধান্তবাদীর শক্তিশালী যুক্তির মূল ভিত্তি হলো যৌক্তিক সামঞ্জস্যের (Logical Consistency) নীতি, যা ব্রহ্মসূত্রের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই নীতি অনুসারে, কোনো দুটি পরস্পরবিরোধী ধারণা একই সময়ে এবং একই স্থানে সহাবস্থান করতে পারে না।

যদি অজ্ঞান (Ajñāna) সত্যিই কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি বা অভাব (abhāva) মাত্র হয়, তাহলে এর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর। এমন পরিস্থিতিতে, একই বস্তু বা ধারণা সম্পর্কে "আমি জানি না" (অর্থাৎ, জ্ঞানের অভাব) এবং "আমি জানি" (অর্থাৎ, জ্ঞানের উপস্থিতি) উভয়ই দাবি করা হলে তা অনিবার্যভাবে একটি মৌলিক ও অখণ্ডনীয় দ্বন্দ্বের (paraspara vairuddhyaṁ) দিকে নিয়ে যাবে। এই ধরনের একটি পরিস্থিতি সুসংগত চিন্তা, আলোচনা এবং যে-কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াকে অসম্ভব করে তুলবে। কারণ, জ্ঞান এবং জ্ঞানের অভাব—এই দুটি অবস্থা একে অপরের সম্পূর্ণ বিপরীত।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি অন্ধকার ঘরে বলা হয়, "আলো নেই", তবে একই সাথে সেখানে "আলো আছে" বলা যায় না। এই দুটি উক্তি একই সময়ে সত্য হতে পারে না। ঠিক তেমনি, যদি অজ্ঞান কেবল জ্ঞানের অভাব হয়, তবে যে-মুহূর্তে জ্ঞান আসে, অজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়, যেমন আলোর আগমনে অন্ধকার দূর হয়। তাদের সহাবস্থান তাই একেবারেই অসম্ভব। সিদ্ধান্তবাদী যুক্তি দেন যে, অজ্ঞান যদি কেবল জ্ঞানের অভাব হতো, তবে ব্রহ্মের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সম্ভব হতো না। ব্রহ্ম যেহেতু স্বপ্রকাশ এবং সর্বদা বিদ্যমান জ্ঞানস্বরূপ, সেখানে জ্ঞানের অভাবের কোনো প্রশ্নই আসে না। অতএব, অজ্ঞানের প্রকৃতি অবশ্যই জ্ঞানের অভাবের চেয়ে গভীরতর কিছু হতে হবে, যা কেবল একটি নেতিবাচক অবস্থা নয়, বরং একটি ইতিবাচক সত্তা (bhāvarūpa) হিসেবে বিবেচিত। এই ইতিবাচক সত্তা বা ভাবরূপ অজ্ঞানই অদ্বৈত বেদান্তের মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

অদ্বৈতবাদীর অবস্থান, যা প্রতিপক্ষ সক্রিয়ভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে, সেটি এই যে, "আমি জানি না"-এর গভীর অনুভূত এবং সর্বজনীন অভিজ্ঞতা নিছক একটি শূন্যতার দিকে নির্দেশ করে না, বরং অজ্ঞানের একটি ইতিবাচক সত্তার দিকে নির্দেশ করে—এটি একটি স্পষ্ট শক্তি, যা সক্রিয়ভাবে জ্ঞানকে আবৃত করে। এই শক্তি কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং জ্ঞানকে আচ্ছাদিত করে রাখে। এই অবিদ্যাই হলো সেই আবরণ, যা ব্রহ্মের উপর আরোপিত হয় এবং জীবকে তার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে বাধা দেয়। এটি কেবল জ্ঞানহীনতা নয়, বরং সক্রিয়ভাবে জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে রাখা একটি শক্তি, যা মিথ্যা জগৎকে প্রক্ষিপ্ত করে।

এটা শুনে একটুও না দমে, প্রতিপক্ষ এই যৌক্তিক অচলাবস্থা এড়াতে বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়। তারা বিবৃতিটির একটি সূক্ষ্ম কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পুনঃবিবেচনার প্রস্তাব করে—এই ইঙ্গিত করে যে, আরও সঠিক ও নির্ভুল অভিব্যক্তি হওয়া উচিত: "আমি প্রমাণের মাধ্যমে আপনার বলা অর্থ জানি না" ('tvaduktam-arthaṁ pramāṇato na jānāmi')। এই পরিবর্তনটি জ্ঞানের "অভাবের" কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করার লক্ষ্য রাখে। এটি জ্ঞানের একটি অন্তর্নিহিত, ইতিবাচক অবস্থার পরিবর্তে বৈধ উপায়ে জানার (pramāṇa)—যেমন প্রত্যক্ষ, অনুমান, বা শাস্ত্রীয় সাক্ষ্যের—অনুপস্থিতির সাথে এর অনুপস্থিতিকে যুক্ত করে, যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দ্বন্দ্বকে দ্রবীভূত করার আশাপোষণ করে। প্রতিপক্ষ যুক্তি দেয় যে, যখন কেউ বলে "আমি জানি না", তখন সে বোঝায় যে, সে নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে জানতে পারছে না, জ্ঞানের অনুপস্থিতির কারণে নয়। এখানে অজ্ঞতা প্রমাণের অভাবের ফল, অজ্ঞতার নিজস্ব অস্তিত্ব নয়।

তবে, সিদ্ধান্তবাদী এটিকে মূল বিবৃতির প্রত্যক্ষ ও গভীর প্রভাব এড়ানোর একটি পরিশীলিত প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখেন, যা অদ্বৈতবাদীর দৃষ্টিকোণ থেকে, না-জানার একটি ইতিবাচক, অভিজ্ঞতামূলক অবস্থাকে দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে। সিদ্ধান্তবাদী মনে করেন, এই পরিবর্তনটি কেবল বাক্যটির অর্থকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, মূল অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করা নয়। কারণ "আমি জানি না", এই অনুভূতিটি কেবল প্রমাণের অভাবের ফলে উদ্ভূত হয় না, বরং এটি একটি অন্তর্নিহিত অভিজ্ঞতার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে জ্ঞান একটি সক্রিয় সত্তা দ্বারা আবৃত থাকে।

এই পুরো ব্যাপারটি দৈনন্দিন জীবনে ভাষাকে ঠিকভাবে ব্যবহারের গুরুত্বকে তুলে ধরে, যেখানে "আমি জানি" এবং "আমি জানি না"-এর মতো বাক্যসমূহ একই বিষয় বা বস্তুর জন্য নিয়মিত এবং অদলবদল করে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি একটি জটিল গণিতের সমস্যা সম্পর্কে প্রথমে "আমি জানি না" বলতে পারে, এবং পরে সমাধান শেখার পর "আমি জানি" বলতে পারে। যদি অজ্ঞান (Ajñāna) সত্যিই জ্ঞানাভাবের (Jñānābhāva) (জ্ঞানের নিছক অনুপস্থিতি) চেয়ে বেশি কিছু না হয়, তবে একই বস্তু সম্পর্কে "আমি জানি" এবং "আমি জানি না"-এর একই সাথে বা অনুক্রমিক সহাবস্থান যৌক্তিকভাবে অসম্ভব হবে। এই ধরনের নির্মাণ একই স্থানে একই সময়ে "আলো আছে" এবং "আলো নেই" দাবি করার মতো হবে। বৈপরীত্যের এই সহাবস্থানের অসম্ভাব্যতাই সিদ্ধান্তবাদীর প্রধান যুক্তি।

অতএব, সিদ্ধান্তবাদীর শক্তিশালী দাবি হলো যে, "আমি জানি না"-এর গভীর ও ব্যাপক অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের একটি সাধারণ শূন্যতার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুকে বোঝায়; এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে একটি ইতিবাচক, সক্রিয়, এবং আবৃত করার শক্তিকে—বাস্তবতাকে ঢেকে-রাখা একটি আবরণকে নির্দেশ করে, যা সঠিকভাবে অবিদ্যার প্রতিনিধিত্ব করে। এই অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং জ্ঞানকে সক্রিয়ভাবে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং মিথ্যা ধারণার জন্ম দেয়। এই আবরণ-শক্তিই জীবকে তার প্রকৃত আত্মস্বরূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

অবিদ্যার শাস্ত্রীয় প্রমাণের (শ্রুতিপ্রমাণ) খণ্ডন:

প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সাধারণ অভিজ্ঞতার জগতের বাইরেও প্রসারিত হয়, সরাসরি শাস্ত্রীয় কর্তৃত্বকে (শ্রুতিপ্রমাণ) চ্যালেঞ্জ করে, যাকে সিদ্ধান্তবাদী অজ্ঞানের (Ajñāna) অস্তিত্বের অখণ্ডনীয় প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। অদ্বৈতী চিন্তার জন্য মৌলিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদিক শ্লোক তীব্র বিতর্কের মুখে আনা হয়:

এক। "আদিতে অন্ধকার অন্ধকার দ্বারা আবৃত ছিল" ('Tama āsīt tamasā gūḷham agre'): ঋগ্‌বেদ (নাসদীয় সূক্ত, ১০.১২৯.৩) থেকে নেওয়া এই গভীর দার্শনিক শ্লোকটিকে সিদ্ধান্তবাদী আদিম অবিদ্যাকে সরাসরি ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নির্দেশ করছে বলে ব্যাখ্যা করেন, যা সৃষ্টির একেবারে শুরুতে ব্রহ্মনকে, অর্থাৎ চূড়ান্ত সত্যকে আবৃত করে রেখেছিল। এই "অন্ধকার" আক্ষরিক আলোর অনুপস্থিতি হিসেবে নয়, বরং মহাজাগতিক অজ্ঞানের প্রাথমিক, অবিচ্ছিন্ন অবস্থা হিসেবে বোঝা যায়। এই অবিদ্যাই সৃষ্টির মূল কারণ এবং ব্রহ্মনের উপর আরোপিত এক আবরণ। সিদ্ধান্তবাদীর মতে, এই শ্লোক সৃষ্টির পূর্বে এমন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে ব্রহ্ম নিজ মহিমায় থাকলেও অবিদ্যার আবরণে আচ্ছাদিত ছিল, যার ফলে জগৎ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদানসমূহ সুপ্ত অবস্থায় ছিল। এই "তমস" (অন্ধকার) জ্ঞানরূপী ব্রহ্মকে আচ্ছাদন করে রাখে এবং পরবর্তীকালে নামরূপময় জগৎরূপে প্রকাশিত হয়।

তবে, প্রতিপক্ষ তীব্রভাবে এই অদ্বৈতী ব্যাখ্যাটিকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা যুক্তি দেখায় যে, এই নির্দিষ্ট মহাজাগতিক প্রসঙ্গে "অন্ধকার" (tamas) শব্দটি অজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র, ইতিবাচক সত্তার পরিবর্তে পদার্থের একটি অবিচ্ছিন্ন অবস্থা, একটি আদিম শক্তি, বা মহাবিশ্বের অপ্রকাশিত সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। প্রতিপক্ষের কাছে, "তমস" মানে জ্ঞানহীনতা নয়, বরং অব্যক্ত প্রকৃতি বা আদিম উপাদান, যা এখনও প্রকাশিত হয়নি। তারা মনে করে, শ্লোকটি সৃষ্টির পূর্বের অব্যক্ত অবস্থাকে বর্ণনা করছে, যেখানে নামরূপের কোনো ভেদ ছিল না, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সেখানে কোনো ইতিবাচক অজ্ঞান শক্তি ছিল। প্রতিপক্ষ সূক্ষ্মভাবে ইঙ্গিত করে যে, সিদ্ধান্তবাদী একটি নির্দিষ্ট, পূর্ব-পরিকল্পিত আধিভৌতিক অর্থকে এমন একটি শ্লোকের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যা তাদের মতে, আরও বিস্তৃতভাবে, সম্ভবত কেবল মহাজাগতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যার জন্য একটি ইতিবাচক, অনাদি অজ্ঞানের আহ্বান করার প্রয়োজন নেই। তাদের মতে, শ্লোকটি সৃষ্টির পূর্বাবস্থা বর্ণনা করছে, অজ্ঞানের কোনো ইতিবাচক সত্তাকে নয়, বরং অব্যক্ত প্রকৃতিকে।

দুই। "মায়াকে প্রকৃতি বলে জানো" ('Māyā tu prakṛtiṁ vidyāt...'): শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (৪.১০) থেকে উদ্ভূত এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্লোকটি মায়ার অদ্বৈতী উপলব্ধির জন্য আরেকটি কেন্দ্রীয় মূলনীতি হিসেবে কাজ করে। অদ্বৈতের জন্য, মায়া ব্রহ্মনের সৃজনশীল এবং বিভ্রান্তকারী শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রায়শই অবিদ্যার সাথে অভিন্ন বলে গণ্য হয়। এটি সেই মহাজাগতিক বিভ্রম, যা নাম এবং রূপের বৈচিত্র্যময় জগতের জন্ম দেয়। মায়া ব্রহ্মনকে আচ্ছাদিত করে এবং জগতের বৈচিত্র্যকে প্রক্ষিপ্ত করে, ফলে জীব মিথ্যা জগৎকে সত্য বলে মনে করে। অদ্বৈতবাদীরা মায়াকে ব্রহ্মের এক অনির্বচনীয় শক্তি হিসেবে দেখেন, যা সৎও নয়, অসৎও নয়, যা জ্ঞান দ্বারা অপনোদনযোগ্য। এটিই জগতের মূল উপাদান এবং জীবাত্মার বন্ধনের কারণ।

তবে, প্রতিপক্ষ একটি বলিষ্ঠ বিকল্প ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে, যা সরাসরি অদ্বৈতী কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। তারা জোর দিয়ে বলে যে, এই বিশেষ প্রেক্ষাপটে মায়া শব্দটি অজ্ঞানের একটি পৃথক, স্বাধীন, এবং বিভ্রান্তকারী সত্তার পরিবর্তে পরমেশ্বরের (Parameśvara) অন্তর্নিহিত "জ্ঞান-শক্তিকে" (Jñāna-śakti) বোঝায়। প্রতিপক্ষের কাছে, মায়া কোনো আবৃতকারী বা বন্ধনকারী শক্তি নয়, বরং ঐশ্বরিকের একটি অভ্যন্তরীণ, কল্যাণকর গুণ, যা সৃষ্টি, প্রকাশ এবং মহাবিশ্বের রক্ষণাবেক্ষণের মহৎ প্রক্রিয়াগুলোকে সক্ষম করে তোলে। তারা মায়াকে ঈশ্বরের সৃজনীশক্তি হিসেবে দেখে, যা জগৎকে সৃষ্টি করে এবং ধারণ করে, কিন্তু কোনো ভ্রম সৃষ্টি করে না। এই ব্যাখ্যাটি মায়াকে একটি অনাদি, ইতিবাচক, তবুও চূড়ান্তভাবে আরোপিত এবং ক্ষণস্থায়ী অজ্ঞান হিসেবে অদ্বৈতীর দৃষ্টিভঙ্গিকে মৌলিকভাবে উলটে দেয়, যা স্বতন্ত্র আত্মাকে আবদ্ধ করে। প্রতিপক্ষের মতে, মায়া ঈশ্বরের শক্তি, যা জগৎ সৃষ্টি ও ধারণ করে, এবং এটি কোনো বন্ধনকারী উপাদান নয়, বরং ঈশ্বরের ঐশ্বর্য ও মহিমা প্রকাশকারী একটি গুণ।

এই বিস্তৃত এবং বহু-মাত্রিক খণ্ডনগুলোর ভিত্তিতে, প্রতিপক্ষ আত্মবিশ্বাসের সাথে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, এমন কোনো প্রত্যক্ষ, তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা (অনুভব) বা বাধ্যতামূলক, যৌক্তিক অনুমান নেই, যা জ্ঞানের নিছক অনুপস্থিতি (জ্ঞানাভাব) থেকে স্বতন্ত্র এবং গুণগতভাবে ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র অজ্ঞানের (Ajñāna) অস্তিত্বকে পর্যাপ্তভাবে প্রমাণ করতে পারে। প্রতিপক্ষের কাছে, ইতিবাচক, সক্রিয় অজ্ঞানের অদ্বৈতী ধারণাটি একটি বিস্তৃত, অপ্রয়োজনীয়, এবং চূড়ান্তভাবে সমর্থনবিহীন আধিভৌতিক নির্মাণ। তারা মনে করে, অদ্বৈতীরা অহেতুক একটি অতিরিক্ত সত্তার কল্পনা করছেন, যেখানে সাধারণ জ্ঞানাভাবের মাধ্যমেই সমস্ত অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা সম্ভব।

সিদ্ধান্তবাদী কর্তৃক অজ্ঞানের অস্তিত্বের পুনর্বার প্রতিষ্ঠা:

প্রতিপক্ষের পরিশীলিত পালটা-যুক্তিগুলো যত্ন সহকারে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করার পর, পুরো ঘটনাপ্রবাহটি এখন নাটকীয়ভাবে তার গতিপথ সরিয়ে নেয়, সিদ্ধান্তবাদীর আসন্ন এবং জোরালো প্রত্যুত্তরকে নির্দেশ করে। মঞ্চটি অদ্বৈতী দার্শনিকের জন্য প্রস্তুত, যিনি কেবল রক্ষা করার জন্য নয়, বরং নতুন উদ্যম ও গভীর দার্শনিকতার সাথে মৌলিক অদ্বৈত অবস্থানটিকে দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনর্বার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসবেন। সিদ্ধান্তবাদীর পরবর্তী যুক্তিগুলো পদ্ধতিগতভাবে এবং দৃঢ়ভাবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠা করবে।