অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: পাঁচ



প্রতিপক্ষের খণ্ডন: প্রতিপক্ষ এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলে যে, অবিদ্যা কোনো প্রমাণ দ্বারা ধরা যায় না, তাই এটি এক অপ্রমাণিত ধারণা। যদি এটি কোনো প্রমাণের বিষয় না হয়, তাহলে এর অস্তিত্বই-বা কীভাবে দাবি করা যায়? তাদের মতে, যা প্রমাণের দ্বারা প্রমাণিত হয় না, তার অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া অযৌক্তিক। যদি অবিদ্যাকে কোনো প্রমাণ দ্বারা জানা না যায়, তাহলে তাকে "জ্ঞানে নিবারিত" বলাও অর্থহীন, কারণ যা নেই, তা নিবারিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই চ্যালেঞ্জ অদ্বৈতের অবিদ্যা ধারণার জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

"আমি জানি না" (Na jānāmi)-এর প্রকৃতি—অভিজ্ঞতা: যেমন কেউ বলে—"তুমি যা বললে, আমি জানি না।" এই বিবৃতিতে জ্ঞানের অভাব প্রকাশ পাচ্ছে। এটি দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা, যেখানে কোনো ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট তথ্য বা বিষয় সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে।

অদ্বৈতের যুক্তি: যদি অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব হতো, তবে এক পারস্পরিক বিরোধ (mutual contradiction) তৈরি হতো। কারণ, অবিদ্যাকে ইতিবাচক সত্তা হিসেবে ধরা হয় (ভাবরূপ), আর জ্ঞানের অভাব কেবল নেগেশন (অভাবরূপ); তাই তাদের একই করা যায় না। "আমি জানি" এবং "আমি জানি না" উভয়ই বলার ক্ষমতা আমাদের আছে, যা প্রমাণ করে যে, জ্ঞানের অভাব একটি স্বতন্ত্র সত্তা নয়, বরং জ্ঞানের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির একটি অবস্থা। অবিদ্যা এই অভাবের মূল কারণ, যা জ্ঞানের অভাবে রূপান্তরিত হয় না। অদ্বৈতমতে, অবিদ্যা একটি শুরুহীন (anadi) কিন্তু বিনাশশীল (vināśya) সত্তা, যা ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা নিবৃত্ত হয়। এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি শক্তি, যা জগৎকে মিথ্যাভাবে প্রদর্শন করে।

প্রতিপক্ষের খণ্ডন: প্রতিপক্ষ বলে—"আমি জানি না" আসলে কেবল অস্থায়ী তথ্যের অভাব প্রকাশ করে, এটি কোনো গভীরতর অবিদ্যা নয়। এটি দৈনন্দিন জীবনে তথ্যের ঘাটতিকে নির্দেশ করে, যা সহজেই পূরণ করা যায়। তাদের মতে, "আমি জানি না" বলাটি কোনো অধিবিদ্যাগত অজ্ঞতার প্রমাণ নয়, বরং ব্যাবহারিক জীবনের একটি সীমাবদ্ধতা। যেমন, একজন ছাত্র যখন বলে, "আমি এই অঙ্কটি জানি না", তখন সে কেবল সেই নির্দিষ্ট অঙ্কটির সমাধানের পদ্ধতি না জানার কথা বলে, কোনো মৌলিক অজ্ঞতাকে নয়। এই অভাব সহজেই শিক্ষকের সাহায্যে পূরণ করা যায়।

শাস্ত্রপ্রমাণ (Śruti) দ্বারা অবিদ্যা:

অদ্বৈত মত: অদ্বৈতবাদীরা ঋগ্‌বেদের একটি মন্ত্র—"অন্ধকারে আচ্ছাদিত ছিল অন্ধকার" (Tama āsīt tamasā gūḷham agre)—উদ্ধৃত করে অবিদ্যার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এই মন্ত্রটি সৃষ্টির পূর্বাবস্থার বর্ণনা দেয়, যেখানে সব কিছু অন্ধকার (অবিদ্যা) দ্বারা আবৃত ছিল। অদ্বৈতীগণ এই মন্ত্রটিকে ব্রহ্মের উপর আরোপিত অবিদ্যার একটি আবরণ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন, যা সৃষ্টির আগে মহাজাগতিক অজ্ঞতার অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি প্রমাণ করে যে, সৃষ্টির শুরুতে অবিদ্যা দ্বারা আচ্ছাদিত অবস্থা ছিল, যা ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি আবরণ। এই অবিদ্যাই সৃষ্টির মূল কারণ।

প্রতিযুক্তি: প্রতিপক্ষ এই ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন—"মায়া প্রকৃতিই" (Māyā tu prakṛtiṁ vidyāt) এই বেদান্ত সূত্র অনুযায়ী, মায়া মানে ঈশ্বরের জ্ঞানশক্তি (Jñāna–śakti), অবিদ্যা নয়। তাঁদের মতে, মায়া একটি সৃজনশীল দেবশক্তি, যা জগতের বৈচিত্র্যময় রূপ সৃষ্টি করে। এটি ব্যক্তিগত অবিদ্যার মতো নেতিবাচক আচ্ছাদন বা অজ্ঞতা নয়। তাঁরা যুক্তি দেন যে, বেদের মন্ত্রগুলি ঈশ্বরের সৃষ্টিশীল শক্তিকেই নির্দেশ করে, অজ্ঞতাকে নয়। 'মায়া' শব্দটি বেদে ঈশ্বরের অলৌকিক সৃজনশক্তিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা জগতের বৈচিত্র্যময় রূপ এবং ঘটনাপ্রবাহ সৃষ্টি করে।

এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে, প্রতিপক্ষ বলেন, 'মায়া' কোনো নেতিবাচক শক্তি বা অজ্ঞতার প্রতীক নয়, বরং ঈশ্বরের ঐশ্বরিক ক্ষমতা এবং মহিমাকে তুলে ধরে। এই শক্তি নিত্য, শাশ্বত এবং ঈশ্বরের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কণায় প্রকাশ পায়। তাই, ঋগ্‌বেদের মন্ত্র বা অন্যান্য বৈদিক স্তোত্রগুলি অবিদ্যা বা অজ্ঞানতাকে নির্দেশ করে না, বরং ঈশ্বরের অপার সৃষ্টিশীলতা এবং মহিমাকে প্রশংসা করে। তাঁদের মতে, যখন আমরা মায়ার কথা বলি, তখন আমরা ঈশ্বরের লীলা এবং তাঁর অসীম ক্ষমতার প্রকাশকে বুঝি, যা আমাদের বিশ্বকে এত বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল করে তোলে।

প্রতিপক্ষের উপসংহার: অবিদ্যার স্বতন্ত্র সত্তা অস্বীকার

প্রতিপক্ষ দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে, অবিদ্যা (Ajñāna) কোনো পৃথক বা স্বাধীন সত্তা নয়। তাঁদের মতে, অবিদ্যাকে কেবল জ্ঞানের অভাব (Jñānābhāva) হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা উচিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, অবিদ্যা কোনো ইতিবাচক উপাদান নয়, বরং এটি জ্ঞানের অনুপস্থিতি মাত্র। তাঁরা এই ধারণাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন যে, কোনো প্রকার প্রমাণ, যেমন অনুমান (Anumāna) বা অন্য কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক পদ্ধতি দ্বারা অবিদ্যার একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব প্রমাণ করা অসম্ভব।অবিদ্যার প্রমাণহীনতা:

প্রতিপক্ষ তাঁদের যুক্তির সমর্থনে বলেন যে, অদ্বৈত বেদান্তীরা অবিদ্যার একটি স্বাধীন, অনাদি ও ইতিবাচক সত্তা হিসেবে যে দাবি করেন, তা ভিত্তিহীন। তাঁদের মতে, অদ্বৈতবাদীরা অবিদ্যার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য কোনো বৈধ এবং শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দার্শনিক বিতর্কের মূল নীতি হলো, যা প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, তার অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। অদ্বৈতবাদীরা অবিদ্যার একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য যে সমস্ত যুক্তি বা প্রমাণ উত্থাপন করেন, প্রতিপক্ষ সেগুলিকে দুর্বল, অপ্রমাণিত এবং যুক্তিহীন বলে মনে করেন।

মূল আপত্তির সারসংক্ষেপ:

অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব: প্রতিপক্ষ অবিদ্যাকে জ্ঞানের বিপরীত বা তার অনুপস্থিতি হিসেবে দেখেন, কোনো স্বতন্ত্র ইতিবাচক শক্তি হিসেবে নয়।

প্রমাণাভাব: তাঁরা জোর দিয়ে বলেন যে, অবিদ্যাকে একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য কোনো প্রত্যক্ষ, অনুমানসিদ্ধ বা অন্য কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই।

যুক্তির দুর্বলতা: অদ্বৈতবাদীরা অবিদ্যার অস্তিত্ব প্রমাণে যে-যুক্তি দেন, তা প্রতিপক্ষের কাছে যথেষ্ট শক্তিশালী বা প্রামাণ্য নয়।

অনাদি সত্তার অস্বীকৃতি: প্রতিপক্ষ অবিদ্যার একটি ইতিবাচক অনাদি সত্তা হওয়ার দাবিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ এর পক্ষে কোনো যুক্তিযুক্ত প্রমাণ নেই।

এইভাবে, প্রতিপক্ষ অবিদ্যাকে একটি মায়াময় বা ভ্রান্ত ধারণার উৎস হিসেবে নয়, বরং জ্ঞানের সীমিত পরিসর বা তার অনুপস্থিতি হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন। তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, অদ্বৈত বেদান্তের একটি মৌলিক ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং অবিদ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সমস্ত দার্শনিক কাঠামোকে দুর্বল প্রমাণ করা।

সিদ্ধান্তীর খণ্ডন ও অবিদ্যার সংজ্ঞা: এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে, সিদ্ধান্তী (অদ্বৈত বেদান্ত মতের সমর্থক) প্রতিপক্ষের মত খণ্ডন করেন এবং একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে অবিদ্যার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন—"অবিদ্যার সংজ্ঞা আছে।" এই উক্তিটি আলোচনায় একটি মোড়-পরিবর্তন নির্দেশ করে, কারণ এটি অবিদ্যার প্রকৃতি নিয়ে একটি গভীর দার্শনিক অনুসন্ধানের সূচনা করে। অদ্বৈতী এখন অবিদ্যার একটি কঠোর সংজ্ঞা প্রদান করতে এবং এর প্রকৃত প্রকৃতি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে অগ্রসর হবেন।

অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা মুক্তি বা মোক্ষ লাভের পথে একটি প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচিত। অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং এটি একটি সক্রিয় শক্তি, যা ব্রহ্মের একত্বকে আবৃত করে এবং বহুত্বের ভ্রম সৃষ্টি করে। সিদ্ধান্তীর এই উক্তিটি অবিদ্যার অস্তিত্ব ও তার সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে চায় এবং অদ্বৈত দর্শনে এর স্থানকে সুদৃঢ় করে।

অবিদ্যাকে প্রায়শই মায়া বা ভ্রমের সাথে তুলনা করা হয়। এটি এমন একটি শক্তি, যা আত্মাকে তার প্রকৃত স্বরূপ, অর্থাৎ ব্রহ্মের সাথে অভিন্নতা, থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। অবিদ্যার কারণে জীব নিজেকে স্বতন্ত্র এবং সীমিত মনে করে এবং জগৎকে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। সিদ্ধান্তী তাঁর সংজ্ঞার মাধ্যমে অবিদ্যার এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে স্পষ্ট করতে চান, যাতে এর কার্যকারিতা এবং মুক্তির জন্য এর অপসারণের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়।

সিদ্ধান্তী এই পদক্ষেপ নিয়ে তথা অবিদ্যার একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদানের মাধ্যমে অদ্বৈতবাদের মূল ভিত্তিগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে চান। এটি কেবল প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করার জন্য নয়, বরং অদ্বৈত দর্শনের অনুসারীদের জন্য অবিদ্যার একটি সঠিক বোঝাপড়া নিশ্চিত করার জন্যও অপরিহার্য। এই সংজ্ঞা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পথে অবিদ্যার ভূমিকা এবং তা থেকে মুক্তির পথকে আরও স্পষ্ট করবে।

মূল বক্তব্য: অদ্বৈতমতে, অবিদ্যা এক স্বতন্ত্র ইতিবাচক সত্তা (ভাবরূপ), যার কারণে জগৎ ও দুঃখের উদ্ভব হয়, এবং যা শেষপর্যন্ত ব্রহ্মজ্ঞানে নিবারিত হয়। এটি কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি শক্তি, যা ব্রহ্মকে আবৃত করে এবং জগৎকে মিথ্যাভাবে প্রকাশ করে। সিদ্ধান্তী এরপর অবিদ্যার সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করবেন, যেমন—এটি অনাদি (beginningless), অর্থাৎ এর কোনো শুরু নেই; এটি ভাবরূপ (positive entity), অর্থাৎ এটি নিছক কোনো কিছুর অভাব নয়, বরং একটি ইতিবাচক সত্তা; এটি ত্রিগুণাত্মিকা (composed of three guṇas), অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ—এই তিন গুণের দ্বারা গঠিত; এটি সদসৎবিলক্ষণা (neither real nor unreal), অর্থাৎ একে সত্যও বলা যায় না আবার মিথ্যাও বলা যায় না; এটি অনির্বচনীয়; এবং এটি জ্ঞানে নিবর্ত্য (removable by knowledge), অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান উদিত হলে অবিদ্যা বিলীন হয়।

এই বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং প্রমাণের মাধ্যমে অদ্বৈতবাদীরা অবিদ্যার একটি স্বতন্ত্র ও মৌলিক দার্শনিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের মতে, অবিদ্যাই জীবের বন্ধনের কারণ এবং মোক্ষ লাভের জন্য এই অবিদ্যার বিনাশ অপরিহার্য। এটি কেবল একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রশ্ন নয়, বরং জীবের আত্মোপলব্ধি এবং মুক্তির পথের সাথে গভীরভাবে জড়িত একটি অধিবিদ্যাগত ধারণা।

অবিদ্যার (অজ্ঞান) স্বরূপ ও প্রমাণ নিয়ে চলমান বিতর্ক:

এরপর অদ্বৈত বেদান্তের একটি কেন্দ্রীয় বিতর্কের গভীরে ঘটনাক্রম প্রবেশ করে, যেখানে সিদ্ধান্তবাদী (অদ্বৈত বেদান্তের প্রতিনিধি) এবং পূর্ব-পক্ষের (Pūrva-pakṣa) মধ্যে অবিদ্যা বা মহাজাগতিক অজ্ঞানের অস্তিত্ব, অভ্যন্তরীণ স্বরূপ এবং এর প্রমাণের ভিত্তি নিয়ে একটি তীব্র দার্শনিক যুদ্ধ চলছে। আলোচনাটি কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবতার মৌলিক উপলব্ধি এবং দুটি দর্শনের ভিত্তিগত পার্থক্যকে তুলে ধরে। এই বিশদ বিশ্লেষণটি অসংখ্য যুক্তি ও পালটা-যুক্তিকে কঠোরভাবে পরীক্ষা করে, বিশেষত দৈনন্দিন ভাষার সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা এবং নিজ নিজ দার্শনিক মতবাদের ভিত্তি স্থাপনকারী গভীর শাস্ত্রীয় শ্লোকগুলির ওপর এখানে জোর দেওয়া হয়। এই বিতর্ক অদ্বৈত বেদান্তের তত্ত্বগত কাঠামোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অবিদ্যার ধারণাটি মায়া, জগৎ এবং মোক্ষ ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

জ্ঞানাভাবের (জ্ঞানের অনুপস্থিতি) প্রমাণ হিসেবে “আমি জানি না”-এর খণ্ডন:

বিতর্কটি প্রতিপক্ষের একটি আপাতদৃষ্টিতে সরল কিন্তু জেদি বিবৃতি দিয়ে শুরু হয়: "আমি আপনার বলা অর্থ জানি না" ('tvaduktam-arthaṁ na jānāmi')। পূর্ব-পক্ষের কাছে, এই দৈনন্দিন অভিব্যক্তিটি জ্ঞানাভাবের—অর্থাৎ, যেখানে জ্ঞান থাকার কথা, সেখানে জ্ঞানের নিছক অনুপস্থিতি—অকাট্য প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। তারা যুক্তি দেয় যে, যখন কেউ "জানি না" বলে, তখন সে কেবল কোনো নির্দিষ্ট তথ্যের অভাবকে বোঝায়, কোনো ইতিবাচক সত্তাকে নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি বলে যে, সে একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলতে জানে না, তবে এটি কেবল সেই ভাষার জ্ঞানের অনুপস্থিতি নির্দেশ করে, এর বেশি কিছু নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, অজ্ঞতা কেবল জ্ঞানের শূন্যস্থান, যা জ্ঞান দ্বারা পূরণ করা যায়।