বেদের আলোয় অদ্বৈত: চৌত্রিশ



কিন্তু—

যা সমস্ত কিছুর আত্মা, যার জন্য সমগ্র বিশ্ব বিদ্যমান, যে স্বয়ম্ভূ-আনন্দসাগর, যা অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়—বলুন তো, কীভাবে সেই পরমাত্মাকে মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে বাদ দেওয়া যায়? এই আত্মাই তো আমাদের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি, প্রতিটি জীবের স্পন্দন, এবং মহাবিশ্বের প্রতিটি কণার চালিকা শক্তি। এর অনাবিল আনন্দই সৃষ্টিকে ধরে রেখেছে, এবং এর স্বয়ংপ্রকাশিত মহিমা সকল জ্ঞানের উৎস। এই আত্মাকে উপেক্ষা করা মানে আমাদের নিজস্ব অস্তিত্বের উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করা।

যা সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব, যার বাইরে যাকে ভিন্ন মনে করা হয়, সবই নিছক অনস্তিত্ব—’মানুষের কপালে শিং’-এর মতো অলীক ও বাস্তবতাবিবর্জিত—কীভাবে সেই আত্মাকে প্রত্যাখ্যান করা যায়? এই আত্মাই পরম সত্য, যা ব্যতীত অন্য সবকিছুই মায়াময় বা আপেক্ষিক। এটিই একমাত্র স্থির বিন্দু, যার উপর সমগ্র বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত। এর থেকে বিচ্যুত হয়ে ভিন্ন কিছুকে সত্য মনে করা বালির বাঁধের উপর ভিত্তি করে ঘর গড়ার মতোই নিষ্ফল। এই আত্মাই সকল দ্বৈততার অবসান ঘটায় এবং একত্বের বোধ নিয়ে আসে।

যার নিয়ন্ত্রণে সমস্ত প্রাণী—ব্রহ্মা থেকে ক্ষুদ্র কীট পর্যন্ত—যে সব কিছুর শাসক, সে স্বয়ং বিধাতা ও নিয়ন্তা—কীভাবে তাকে বাদ দেওয়া যায়? এই আত্মা কেবল একজন দর্শক নয়, বরং সক্রিয়ভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করে। এটিই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের মূল কারণ। এর নিয়ন্ত্রণ এতটাই সুক্ষ্ম ও সর্বব্যাপী যে, এর থেকে কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। এই আত্মাকে উপেক্ষা করা মানে মহাবিশ্বের মৌলিক শৃঙ্খলা এবং এর পরম নিয়ন্তাকে অস্বীকার করা।

যাকে জ্ঞানীরা জানেন সমস্ত কিছুর চক্ষু, মনের মন, আলোর আলো, উজ্জ্বল সর্বব্যাপী সত্তা হিসেবে—সেই প্রজ্ঞা ও চৈতন্যের চরম উৎসকে—কীভাবে সেই আত্মাকে অগ্রাহ্য করা যায়? এই আত্মাই আমাদের চেতনা, উপলব্ধি এবং জ্ঞানের মূল উৎস। এটিই সেই আলো, যা আমাদের মনকে আলোকিত করে এবং সত্যকে উদ্ভাসিত করে। জ্ঞানীরা এই আত্মাকেই পরম সত্য এবং পরম জ্ঞান হিসেবে উপাসনা করেন। একে অগ্রাহ্য করা মানে আমাদের নিজস্ব উপলব্ধির ক্ষমতা এবং অস্তিত্বের গভীরতম সত্যকে অস্বীকার করা।

যে-আত্মা আনন্দময়, যে দুই ডানায়—আনন্দ ও মহানন্দে—অন্ধকার ভেদ করে সমস্ত বিশ্বকে প্রাণ দান করে, সেই জীবনদায়ী, পরমানন্দময় সত্তাকে—কীভাবে সেই আত্মাকে মানুষের লক্ষ্য থেকে প্রত্যাখ্যান করা যায়? এই আত্মাই আমাদের অস্তিত্বের আনন্দ, জীবনের স্পন্দন এবং সৃষ্টির উৎসব। এটি সকল দুঃখ ও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে, এক অনাবিল ও চিরন্তন আনন্দ। এই আনন্দই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে এবং জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে অর্থবহ করে তোলে। এই আত্মাকে প্রত্যাখ্যান করা মানে জীবনের মূল আনন্দ ও উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করা।

(তুলনীয়: তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ২.৭)

আত্মবোধের অন্বেষণ: পরম আনন্দ ও চরম লক্ষ্যের পথ

সৃষ্টির গভীরতম রহস্যের কেন্দ্রে লুকিয়ে আছে এক অনির্বচনীয় আনন্দসাগর, যার একটি ক্ষুদ্রতম অংশই আমরা এই জাগতিক জীবনে অনুভব করতে পারি। ব্রহ্মলোক ও অন্যান্য সকল লোক যাঁর সুখে পরিব্যাপ্ত, সেই পরম সুখসিন্ধুকে কি কেউ প্রত্যাখ্যান করতে পারে? এই আনন্দ, যা সমস্ত দুঃখ ও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে, তা আত্মার প্রকৃত স্বরূপ। এর উপলব্ধিই জীবনের পরম প্রাপ্তি।

সেই আত্মাই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, যাঁর পরিচিতি লাভ করলে হিরণ্যগর্ভের মহিমাও তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। মানবজাতির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা, সমস্ত সাধনার চরম পরিণতি এই আত্মজ্ঞান। যে পরম সত্তা সকল অস্তিত্বের মূলে বিদ্যমান, তাঁকে কীভাবে মানুষ তার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে না? এই আত্মাই সেই পরম সত্য, যা জেনে নিলে আর কিছু জানার থাকে না, যা লাভ করলে আর কিছু পাওয়ার থাকে না। এটিই সকল মানব-লক্ষ্যের চরম সীমা, যার অনুসন্ধান মানব জীবনের শ্রেষ্ঠতম ব্রত।

এমনকি দেবরাজ ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবগণও সেই আত্মার কামনায় নিজেদের আনন্দময় লোক ত্যাগ করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যদিও তাঁরা নিজেরাই সুখী ছিলেন। তাঁদের এই ত্যাগ এবং অন্বেষণ প্রমাণ করে যে, পার্থিব সুখ বা স্বর্গীয় আনন্দও আত্মার অনির্বচনীয় সুখের কাছে ম্লান। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের প্রাপ্ত সুখ আপেক্ষিক ও ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আত্মার উপলব্ধি অবিচল ও চিরন্তন আনন্দ প্রদান করে। সুতরাং, এই পরমাত্মা কীভাবে মানুষের লক্ষ্য না হয়ে পারে? এটি সেই উচ্চতর অবস্থা, যা লাভ করার জন্য দেবতারাও তাদের সকল সুখ ও অবস্থান ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন।

বেদে যে-সকল বিভিন্ন ক্রিয়া, যেমন যজ্ঞাদি নির্দেশ করা হয়েছে, তার একমাত্র ফল হলো সেই আত্মাকে জানবার আকাঙ্ক্ষা। বেদের প্রতিটি মন্ত্র, প্রতিটি উপাসনা, প্রতিটি কর্মকাণ্ড মানবজাতিকে সেই পরমাত্মার দিকেই পরিচালিত করে। যদি বেদের মূল উদ্দেশ্যই হয় আত্মজ্ঞানের পথ উন্মোচন করা, তাহলে কীভাবে আপনি সেই আত্মাকে অগ্রাহ্য করবেন? সমস্ত ধর্মীয় অনুশাসন এবং আচারের গভীরে লুকিয়ে আছে আত্মার অন্বেষণের এক অদম্য প্রেরণা। এগুলি কেবল বাহ্যিক ক্রিয়া নয়, বরং আত্মার সাথে সংযোগ স্থাপনের একেকটি সোপান।

(তুলনীয়: তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ২.৩.৪ এবং ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৮.৭)

এই উপনিষদীয় নির্দেশগুলি আরও স্পষ্ট করে যে, আত্মার অনুসন্ধান এবং আত্মজ্ঞান-লাভই মানবজীবনের পরম উদ্দেশ্য। তৈত্তিরীয় উপনিষদে বলা হয়েছে, "আনন্দ ব্রহ্ম", অর্থাৎ আনন্দই ব্রহ্ম। ছান্দোগ্য উপনিষদে আত্মাকে সর্বব্যাপী ও সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা উপলব্ধি করলে সকল বন্ধন ছিন্ন হয় এবং পরম মুক্তি লাভ হয়। এই প্রাচীন শাস্ত্রগুলি একবাক্যে ঘোষণা করে যে, মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত আছে আত্মজ্ঞানে, যা পরম আনন্দ, শান্তি ও মুক্তির পথ খুলে দেয়।

আসলে বৈদিক যজ্ঞের প্রকৃত লক্ষ্য ক্ষণস্থায়ী স্বর্গ লাভ নয়, বরং চিত্তশুদ্ধি, যার দ্বারা আত্মাকে—চিরন্তন আনন্দরূপ—সরাসরি উপলব্ধি করা যায়। স্বর্গ কেবল মধ্যবর্তী একটি ধাপ; যে যজ্ঞ করে, অথচ এই মহান সত্য জানে না, সে কেবল অর্ধেক পথেই থাকে।

মানব জীবনের পরম লক্ষ্য কী? এই প্রশ্নটি যুগ যুগ ধরে দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক সাধকদের মনকে আলোড়িত করেছে। বিভিন্ন মতবাদ এবং বিশ্বাস এই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর প্রদান করেছে। কিন্তু অদ্বৈত বেদান্তের মতে, যে-আত্মার জ্ঞান দ্বারা মুহূর্তে সমস্ত কামনা ও দুঃখের কারণ বিলীন হয়ে যায়, সেটিই মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। কীভাবে এমন একটি পরম সত্যকে মানুষ তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অস্বীকার করতে পারে? এটি কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ থেকে বিচ্যুতিও বটে।

আত্মা কেবল একটি বিমূর্ত ধারণা নয়; এটি একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণিত সত্য। স্বপ্নহীন গভীর নিদ্রার অবস্থায় সমস্ত জীব এক অভিন্ন আনন্দরূপে আত্মাকে প্রত্যক্ষ করে। সেই অবস্থায় কোনো জাগতিক উদ্বেগ, কামনা বা দুঃখ থাকে না। এই অবস্থায় আমরা এক অখণ্ড আনন্দের সমুদ্রে নিমজ্জিত থাকি। এই আনন্দময় অভিজ্ঞতাটিই আত্মার স্বরূপের প্রমাণ। যে-ব্যক্তি এই প্রত্যক্ষ প্রমাণকে প্রত্যাখ্যান করে, সে কি পশুর মতো কেবল ইন্দ্রিয়সুখের পেছনে ছুটে চলে না? পশুতুল্য জীবন কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগকেই লক্ষ্য করে, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের ভেতরের আত্মা এক উচ্চতর লক্ষ্য ও আনন্দের সন্ধান করে।

মানবজীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির অবতারণা করেছিল: কোনো কিছুর গ্রহণযোগ্যতা তার অন্য কিছুর উপর থেকে স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, যা-কিছু স্বাবলম্বী এবং অন্যের উপর নির্ভরশীল নয়, সেটিই লক্ষ্য হওয়ার যোগ্য। এই যুক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী, কারণ প্রকৃত সুখ এবং দুঃখ-অভাব সবই আত্মার জন্য প্রযোজ্য। যদি তা না হতো, তবে মানুষ অন্যের সুখ ও দুঃখ-অভাবকেও নিজের লক্ষ্যরূপে গ্রহণ করতে পারত। কিন্তু আমরা দেখি, প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব সুখ এবং দুঃখের প্রতিই সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। অন্যের কষ্ট দেখে আমরা সহানুভূতি অনুভব করি, কিন্তু সেই কষ্টকে নিজেদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বানাতে পারি না। কারণ প্রকৃত সুখ ও দুঃখ-অভাব আমাদের আত্মার মধ্যেই নিহিত।

অতএব, এই যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায় যে, আত্মাই মানুষের সর্বোচ্চ লক্ষ্য। কারণ আত্মাই প্রকৃত সুখ এবং দুঃখ-অভাবের মূল উৎস। কিছু ব্যক্তি হয়তো এই যুক্তির বিরোধিতা করে বলতে পারেন, “আত্মা একটি ইতিবাচক সত্তা হওয়ায় দুঃখ-অভাব হতে পারে না।” তাদের এই যুক্তি অবশ্য অদ্বৈত দর্শনের গভীর উপলব্ধি থেকে বিচ্যুত। অদ্বৈত মতে, আত্মা পরম আনন্দস্বরূপ। এই পরম আনন্দই আমাদের সকল দুঃখ-অভাব দূর করে এবং চূড়ান্ত তৃপ্তি প্রদান করে। আত্মা যখন পরম আনন্দের সাথে একাত্ম হয়, তখন দুঃখ-অভাবের কোনো স্থান থাকে না। এই পরম আনন্দই মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটি কোনো বাহ্যিক অর্জন নয়, বরং নিজের অন্তর্নিহিত সত্যের উপলব্ধি।

আত্মজ্ঞানই সমস্ত কামনা ও দুঃখের বিলোপ সাধন করে এবং পরম আনন্দ ও মুক্তি প্রদান করে। যে-আত্মা সমস্ত জীবের দ্বারা স্বপ্নহীন নিদ্রার অবস্থায় আনন্দরূপে প্রত্যক্ষ প্রমাণিত হয়, তাকে অস্বীকার করা নিজেদের প্রকৃত স্বরূপকে অস্বীকার করার শামিল।

এটি আমাদের অবস্থানের একটি দুর্বলতা হতো, যদি আত্মার সঙ্গে দুঃখ বাস্তবিক ও স্বতঃসিদ্ধভাবে যুক্ত থাকত। কিন্তু তা নয়। যে-মানুষ আত্মার দর্শনকে বিষাক্ত আবেগের দাহে আক্রান্ত করেছে—যে-আবেগ সেই বিষদাঁত-স্বরূপ দেহ, ইন্দ্রিয়াদি-আত্মাভিমান থেকে উৎপন্ন, যা আবার অবিদ্যার সাপফণার মধ্য থেকে নির্গত—সে মানুষ আসলে আত্মার মধ্যে সেই সব দুঃখ কল্পনা করে, যা বাস্তবে আত্মার সঙ্গে যুক্ত নয়, বরং রৌরবাদি নরকের দুঃখসমূহ। যেমন কেউবা সূর্যের মধ্যে অন্ধকার কল্পনা করে!

আর যে-জিনিস মিথ্যাকল্পিত, তার নিবারণ আর কিছু নয়, সেই আধারটিই, যেখানে সেই ভ্রান্ত বস্তু কল্পিত হয়েছিল। কারণ কেবল আধারের সঙ্গেই অভিন্ন রূপে সেটি কল্পিত হয়েছিল; আধার থেকে পৃথক হলে তা অনস্তিত্ব মাত্র; আর অনস্তিত্বের নিবারণ মানে সত্তা (অর্থাৎ আধার) প্রকাশ।

অতএব যে-চিন্তক মনে করে—“দুঃখ-নাশই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য”—তারও প্রকৃত লক্ষ্য আসলে আত্মাই। কারণ আত্মাই এই সমগ্র দুঃখময় জগতের নাশ।

এটিও বলা যায় না—“আত্মা যেহেতু কোনো ফলরূপে সাধনযোগ্য নয়, তাই তা মানুষের লক্ষ্য হতে পারে না।” কারণ আমরা ইতোমধ্যেই দেখিয়েছি, মানুষের লক্ষ্য কোনো ফলরূপে উৎপন্ন পদার্থ হওয়া আবশ্যক নয়।

আবার বলা যায় না—“মুক্তিকামী ব্যক্তি শ্রবণাদি বিধানে প্রবৃত্ত হতেন না, যদি তার দৃষ্টি থাকত দুঃখ-অভাবের দিকে (অর্থাৎ আত্মার দিকে), যা স্বতঃসিদ্ধ এবং মানুষের প্রচেষ্টা-নিরপেক্ষ।” বরং, এটি আমাদের দৃষ্টির সঙ্গেই মেলে—কারণ মুক্তিকামী যখন আত্মাকে ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন বলে প্রত্যক্ষ করে, তখন তার জন্য আর কোনো কার্যকলাপ অবশিষ্ট থাকে না, যেহেতু কার্যফল (দুঃখ-অভাব) ইতিমধ্যেই সাধিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রত্যক্ষ উপলব্ধির পূর্বে তার সাধনা (শ্রবণ-মনন-নিদিধ্যাসন ইত্যাদি) ফলপ্রসূ হয় কেবল তখনই, যখন সেই সাধনা আত্মা-ব্রহ্ম-অভেদ-জ্ঞানকে জন্ম দেয়, যা দুঃখের পরিপূর্ণ নাশ।

আর এটাও বলা যায় না—“জ্ঞানও তো কোনো ফলরূপে উৎপন্ন পদার্থ নয়, তাই সেটিও লক্ষ্য হতে পারে না।” কারণ এখানে ‘জ্ঞান’ বলতে বোঝানো হচ্ছে মানসিক বিকার (vṛtti), যা আসলে ভ্রান্তকল্পনা, আর প্রকৃত জ্ঞান (চৈতন্য, ব্রহ্ম) নিজেই আত্মা। আর এই মানসিক বিকার মিথ্যা—এই বিচার কেবল তখনই আসে, যখন পূর্ণ জ্ঞান (অর্থাৎ আত্মা ও ব্রহ্মের অভিন্নতার প্রত্যক্ষ উপলব্ধি) উদিত হয়েছে।