বেদ ও ব্রহ্ম: চার




জ্ঞানসংক্রান্ত বিধান হচ্ছে নিজের বেদ অধ্যয়ন, অর্থাৎ বেদ অধ্যয়ন করা নিজেই একধরনের “injunction” (বিধি-বাক্য)। এটার কোনো আলাদা ফল নেই; যেমন যজ্ঞ করলে স্বর্গ পাওয়া যায়, বা বৃষ্টি কামনায় যজ্ঞ করলে ফসল হয়—এমন ফল থাকে; কিন্তু বেদ অধ্যয়নের বিধান মানলে আলাদা কোনো ফল নেই। কেন? কারণ এর ফল নিজেই অন্তর্নিহিত। যজ্ঞের অর্থ বোঝা বা আচারসমূহ বুঝতে পারা—এটাই বেদ অধ্যয়নের সরাসরি, দৃশ্যমান ফল। তাহলে এ বিধান ফল পেতে অন্য কোনো commendatory বাক্যের ওপর নির্ভর করে না। commendatory statement মানে হলো—মূল injunction-এর উদ্দেশ্য নয়, বরং প্রশংসা বা উৎসাহের জন্য কিছু বলা। যেমন: “যজ্ঞ করলে তুমি মহান হবে”—এটা মূল ফল নয়, বরং উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলা। কিন্তু বেদ অধ্যয়নকে আলাদা করে প্রশংসা-শ্লোক দিয়ে সমর্থন করার দরকার নেই, কারণ এর নিজস্ব উদ্দেশ্য পূর্ণ—যজ্ঞের অর্থ বোঝানো।

একটা উদাহরণের সাহায্যে বলা যাক। “প্রতিদিন স্কুলে যেয়ো, পড়াশোনা কোরো।” এখানে কোনো আলাদা ফল নেই, কারণ পড়াশোনা করলেই ফল পাওয়া যায় → জ্ঞান অর্জন করা। পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানলাভ। আবার— “পরীক্ষায় পাশ করলে ডিগ্রি পাবে।” এখানে একটা আলাদা ফল আছে—ডিগ্রি। পড়াশোনার উদ্দেশ্য আরেকটা ফলের দিকে নির্দেশ করছে। বেদের ক্ষেত্রে বলা যায়, বেদ অধ্যয়ন = স্কুলে প্রতিদিন পড়াশোনা করা। এর ফল আলাদা কিছু নয়, বরং বেদে বর্ণিত যজ্ঞ ও বিধির অর্থ বোঝা—এটাই সরাসরি ফল। যজ্ঞ বা হোম = পরীক্ষায় পাশ করে ডিগ্রি পাওয়া। এগুলোর ফল হলো স্বর্গ, বৃষ্টি, সন্তান, ইত্যাদি। বেদ অধ্যয়ন কোনো commendatory statement (প্রশংসা-শ্লোক) থেকে আলাদা ফল খোঁজে না। কারণ এর নিজের ফল ভেতরেই আছে—“পড়াশোনা করলেই শেখা হয়” যেমন, “বেদ অধ্যয়ন করলেই যজ্ঞ বোঝা যায়” তেমন।

খণ্ডন: উত্থাপিত মতটি ভুল, কারণ উপনিষদ যে-সত্তার কথা শেখায়—তিনি কর্তা (agent) ও ভোক্তা (enjoyer) থেকে ভিন্ন। ‘তিনি’ কে? উপনিষদে শেখানো ‘তিনি’ = আত্মা/সাক্ষীচেতনা—যিনি আসলে কোনো কাজ করেন না, কোনো ফল ভোগও করেন না। এই সত্তা সম্পর্কে জ্ঞান (আত্মজ্ঞান) আমরা পাই বেদান্ত/উপনিষদ থেকেই, অন্য কোথাও নয়। এই সত্তার জ্ঞান কোনো কর্ম উৎপন্ন করে না—আত্মজ্ঞান লাভ মানে কর্তা হওয়া নয়, বরং কর্তৃত্বের ভ্রম দূর হওয়া। তাই আত্মজ্ঞানকে যজ্ঞ/কর্মের সহায়ক বা উৎপাদক বলা যায় না।

ছান্দোগ্য, ৮.১৫.১: “তিনি কিছুই আহার করেন না” → সাক্ষীসত্তা ভোক্তা নন। মুণ্ডক, ৩.১.১: “অন্যজন কেবল দর্শন করে, খায় না” → সাক্ষীসত্তা মাত্ৰ দ্রষ্টা, কর্তা/ভোক্তা নন। দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায়, যে-‘ব্যক্তি’ যজ্ঞ করে (কর্তা) ও ফল ভোগ করে (ভোক্তা)—এই ব্যক্তিকে আমরা প্রতিদিন সরাসরি অভিজ্ঞতায় জানি। তাই এই কর্তা-ভোক্তা ব্যক্তিকে জানাতে শাস্ত্রের দরকার নেই; শাস্ত্রের কাজ ওই সাক্ষীসত্তাকে নির্দেশ করা, যিনি কর্তা-ভোক্তার অতীত। যেহেতু উপনিষদীয় আত্মা অকর্তা-অভোক্তা, তাই আত্মজ্ঞানে কোনো কর্ম উৎপন্ন হয় না। ফলে, আত্মজ্ঞানকে যজ্ঞ/কর্মের অধীন বা সহায়ক বলা ভিত্তিহীন—এখানেই উত্থাপিত মতটি খণ্ডিত।

আপত্তি: জীব (ব্যক্ত আত্মা) আর পরম আত্মা (আত্মন বা ব্রহ্ম) আসলে অভিন্ন, এক এবং অভেদ্য। এই কথাই ছান্দোগ্য উপনিষদের (৬।৩।২) বাক্যে বলা হয়েছে—“এই জীব দ্বারা, এই আত্মন দ্বারা” এর মানে কী? জীব = যে নিজেকে শরীর-মন-ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে জড়িত মনে করে, যার অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ, জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আত্মন = সেই স্বরূপ-সত্তা, যা অনন্ত, চিরসত্য, নিঃসঙ্গ, অবিনশ্বর এবং পরম চেতনা। উপনিষদ বলছে—জীব আসলে আত্মারই প্রকাশ, শরীর-মন অহংকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছোট্ট, সীমিত রূপে প্রতিভাত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জীব আর আত্মা আলাদা সত্তা নয়। সহজ উদাহরণে বোঝা যাক। আকাশে সূর্য একটাই, কিন্তু জলাশয়ে তার প্রতিফলন দেখলে মনে হয় যেন আলাদা সূর্য আছে। প্রতিফলিত সূর্য = জীব। আসল সূর্য = আত্মন। আসলে এখানে দু-জন নেই, আছে একটিই সূর্য। বিদ্যুৎ আর বাল্বের আলো দিয়ে বললে—বিদ্যুৎ সর্বত্র এক। কিন্তু প্রতিটি বাল্বে আলাদা আলাদা আলো দেখা যায়। বাল্বের আলো = জীব। বিদ্যুৎ = আত্মন। আলো আলাদা মনে হলেও উৎস এক।

ছান্দোগ্য উপনিষদের উক্তির সারকথা হলো—জীব (ব্যক্ত আত্মা) এবং আত্মন (পরম আত্মা) অভিন্ন। যে-ভেদ আমরা দেখি—“আমি ছোটো, সীমিত, অসহায়”—এটি মায়া ও অজ্ঞানের ফল। আত্মজ্ঞান লাভ করলে মানুষ বোঝে—“আমি আসলে সেই অনন্ত আত্মন ছাড়া আর কিছু নই।”

খণ্ডন: এটা সত্য; কিন্তু জীব যে-অবিদ্যার (অজ্ঞানের) সঙ্গে যুক্ত—তাকেই আমরা সরাসরি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় জানি। আর এই জীব-জ্ঞানই হলো যজ্ঞাদি কর্ম করার কারণ; এর জন্য শাস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পরম আত্মা—যিনি স্বপ্রকাশমান এবং সমস্ত ভেদ থেকে মুক্ত—তাঁকে অবশ্যই শাস্ত্রের মাধ্যমে জানতে হয়; আর এই আত্মজ্ঞান যজ্ঞকর্মের বিরোধী। ফলে, কীভাবে বলা যায় যে, যজ্ঞকর্মই এই জ্ঞানের দৃশ্যমান ফল?

একে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: যে-ব্যক্তি আত্মাকে চেনে—যিনি সর্বোচ্চ আনন্দ, যিনি এক ও অদ্বিতীয়—তিনি কেন কোনো কাজ করবেন? আর কীভাবে তিনি কোনো কাজ করবেন? কারণ তাঁর সমস্ত কামনা পূর্ণ হয়েছে, আর সেখানে কর্ম করার উপায়ই নেই… কিছু লোক ভাবে, যজ্ঞ ও জ্ঞানের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, কারণ তারা একে অপরের বিরোধী। যজ্ঞ সংশ্লিষ্ট দ্বৈততার সঙ্গে, আর জ্ঞান সংশ্লিষ্ট অদ্বৈততার সঙ্গে—কিন্তু এটা ভুল; যদি সত্যিই এমন হতো, তবে তাদের কাছে অদ্বৈত জ্ঞানের উদয় হওয়াই অসম্ভব হতো। কেননা, তাদের মতে, জ্ঞানের উপায়াদি (যেমন ইন্দ্রিয়, মন ইত্যাদি) দ্বারা ভেদসাপেক্ষ জ্ঞান এবং অদ্বৈত জ্ঞানের মধ্যে সংঘাত থাকত।

আপত্তি: যেহেতু উপায় (means) ও লক্ষ্য (end) একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে না, তাই তাদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই; অদ্বৈত-জ্ঞান উদিত হলে সব ভেদই বিলীন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই; এবং একটির কারণে অপরটি লক্ষ্য হওয়া বা উপায় হওয়া বন্ধ হয়ে যায় না। কারণ উপায় সর্বদাই কালানুক্রমে আগে ঘটে—তখনও ভেদগুলো (যেমন প্রমাণ ইত্যাদি) বিলীন হয়নি। আরও বলা যায়—ভেদই হলো অদ্বৈত জ্ঞানের উদয়ের উপায়।

খণ্ডন: যদি তা-ই হয়… যদি মেনে নেওয়া হয় যে, উপায় (means) আর লক্ষ্য (end)-এর মধ্যে কোনো সংঘাত নেই, কারণ তারা একসাথে থাকে না, বরং ক্রমানুসারে ঘটে, তবে ফল দাঁড়ায় এই—তাহলে জ্ঞানের সঙ্গেও যজ্ঞাদির কোনো সংঘাত থাকবে না। কারণ যজ্ঞগুলোও উপায় (means) হিসেবে গণ্য হয়—যেমন প্রমাণ (প্রত্যক্ষ, অনুমান ইত্যাদি) জ্ঞানের উপায়, তেমনি যজ্ঞও তখন উপায় হিসেবে ধরা হবে।

আপত্তি: যেহেতু ব্রহ্ম কোনো কিছু সম্পাদনীয় নয়, তাই তার সঙ্গে যজ্ঞের কোনো ব্যবহার নেই; এবং শ্রুতি বাক্যে বলা হয়েছে—“যা ফল নয় (অর্থাৎ ব্রহ্ম), তাকে সম্পাদিত দ্বারা (যজ্ঞ দ্বারা) আনা যায় না।” (মুণ্ডক উপনিষদ, ১।২।১২)। জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রেও এগুলো (যজ্ঞ) কার্যকর নয়, কারণ জ্ঞান নির্ভর করে জ্ঞানপ্রমাণের (means of knowledge) ওপর। যজ্ঞ জ্ঞানের সহায়কও হতে পারে না, কারণ জ্ঞানের দ্বারা সম্পাদনীয় কিছু নেই। মুক্তি জ্ঞানের দ্বারা সম্পাদনীয় নয়, কারণ যদি তা-ই হতো, তবে তা চিরন্তন থাকত না। এখন দেখি, “জ্ঞানের দ্বারা সম্পাদনীয়” মানে কী। যদি মুক্তি (মোক্ষ) এমন কিছু হতো যা জ্ঞান উৎপন্ন করে বা সৃষ্টি করে, তবে মুক্তি হতো একটি ফল (product), যা আগে ছিল না, পরে এসেছে। যে-কোনো “সৃষ্ট জিনিস” সময়ের মধ্যে জন্মায়। যা জন্মেছে, তা আবার বিনষ্টও হবে। তাই যদি মুক্তি জ্ঞানের দ্বারা নতুন করে সৃষ্টি হতো, তবে তা অস্থায়ী (impermanent) হয়ে যেত।

মুক্তি (মোক্ষ) সদা-অস্তিত্বশীল (nitya)। এটি কোনো কৃত্রিমভাবে অর্জন করার বিষয় নয়। আত্মার প্রকৃত স্বরূপই মুক্তি—এটি চিরকাল বিদ্যমান। অজ্ঞতা (avidyā) ঢেকে রাখে, জ্ঞান কেবল সেই আচ্ছাদন সরায়। মুক্তি কোনো কাজের দ্বারা সৃষ্টি হয় না। এটি আত্মার স্বভাবগত অবস্থা—চিরন্তন, অবিনশ্বর। জ্ঞান কেবল মায়া ও অজ্ঞতার আবরণ সরিয়ে সেই মুক্ত স্বরূপকে প্রকাশ করে। এভাবে বলা যেতে পারে—বন্ধনের কারণ ধ্বংস করা অবশ্যই সম্পাদনীয় কিছু, এবং তাই যখন বন্ধনের কারণ ধ্বংস হয়, তখন সেটি অনুপস্থিত থাকায় মানুষ মুক্তি লাভ করে। যদি তা-ই হয়, তবে বন্ধনের কারণ কী? যদি উত্তর দেওয়া হয়—আদিকালীন অজ্ঞতাই বন্ধনের কারণ—তাহলে এর ধ্বংস জ্ঞানের দ্বারা সম্পাদনীয়, এ ভিন্ন অন্য কোনো বিষয় নয়, কারণ জ্ঞানের উদয়ই হলো অজ্ঞতার ধ্বংস।

ধরা যাক, জ্ঞানের উদয়ই হলো সেই অজ্ঞতার (যা অপ্রত্যক্ষতা–non-apprehension—’সত্যকে ধরতে না পারা’ প্রকৃতির) ধ্বংস। কেননা, কেবল ইতিবাচক কোনো কিছুর উদয়ই তার পূর্ববর্তী অনস্তিত্বকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু জ্ঞানের উদয় ভ্রান্ত জ্ঞানকে (erroneous cognition) ধ্বংস করে না। প্রকৃতপক্ষে, একটি ইতিবাচক সত্তা অন্য একটি ইতিবাচক সত্তাকে ধ্বংস করতে পারে না, কারণ ইতিবাচক সত্তারা পারস্পরিক অনস্তিত্বের প্রকৃতি নয়; যদি তাই হতো তবে তার ফল হতো শূন্যতা (void)।

ইতিবাচক সত্তা (positive entity): যা বাস্তবে বিদ্যমান, যেমন জ্ঞান, বস্তু, অভিজ্ঞতা—সবই ইতিবাচক। পারস্পরিক অনস্তিত্ব (mutual non-existence): যদি দুইটি জিনিস একে অপরকে ধ্বংস করার প্রকৃতি বহন করে, তাহলে তারা সহাবস্থান করতে পারবে না। যেমন আলো আর অন্ধকার। যদি বলা হয়—“একটি ইতিবাচক সত্তা আরেকটি ইতিবাচক সত্তাকে ধ্বংস করতে পারে,” তাহলে একটির উপস্থিতি মানেই আরেকটির অনস্তিত্ব হতে হবে। তার মানে সব ইতিবাচক সত্তা একে অপরকে ধ্বংস করবে → শেষ পর্যন্ত কিছুই থাকবে না → তৈরি হবে শূন্যবাদ (void)।

যদি ধরা হয়, জ্ঞান (positive) আর ভ্রান্তি (positive)—দুটো সমান প্রকৃতির, আর যদি ধরা হয়, জ্ঞানের আগমনে ভ্রান্তি সরাসরি “ধ্বংস হয়”, তবে যুক্তি দাঁড়াবে—একটি ইতিবাচক সত্তা অন্য ইতিবাচক সত্তাকে ধ্বংস করতে পারে। যদি এ নীতি সর্বজনীন হয়, তবে সব কিছু পরস্পরকে ধ্বংস করতে করলে শেষমেশ কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই বলা হচ্ছে—ইতিবাচক সত্তাদের প্রকৃতি এমন নয়। ইতিবাচক সত্তারা পরস্পরের দ্বারা ধ্বংসযোগ্য নয়। যদি তারা অমন হতো, তবে সব অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত, শুধু শূন্য (void) অবশিষ্ট থাকত। তাই ভ্রান্ত জ্ঞান ধ্বংস হয় সরাসরি জ্ঞানের দ্বারা নয়, বরং অজ্ঞতার অনুপস্থিতির ফলে।

ভ্রান্ত জ্ঞানের (illusion বা ভুল ধারণা) কারণ হলো সত্যকে না জানা (অপ্রত্যক্ষতা / non-apprehension)। যেমন: দড়ি না চেনার কারণে (অপ্রত্যক্ষতা) আমরা সেটাকে সাপ মনে করি (ভ্রান্ত জ্ঞান)। তাই বলা হয়, যখন অপ্রত্যক্ষতা দূর হয় (অর্থাৎ দড়িটাকে চিনতে পারি), তখন ভ্রান্ত জ্ঞানও নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই ব্যাখ্যা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ অপ্রত্যক্ষতা নেতিবাচক (absence/অভাব), আর কোনো “অভাব” প্রকৃত অর্থে কারণ হতে পারে না। কারণ হতে হলে কোনো ইতিবাচক শক্তি বা প্রক্রিয়া থাকতে হয়। যদি সত্যিই “অপ্রত্যক্ষতা” (না দেখা, না জানা) ভ্রান্ত জ্ঞানের কারণ হতো, তাহলে যেখানে সত্য একেবারেই ধরা পড়ে না—যেমন অচেতন অবস্থা (মূর্ছা/swoon)—সেখানে ভ্রান্তি আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল—কিন্তু বাস্তবে মূর্ছায় বা ঘুমে কোনো ভ্রান্ত জ্ঞান হয় না।

শুধু “না জানা” (অপ্রত্যক্ষতা) ভ্রান্তির কারণ নয়। ভ্রান্ত জ্ঞান জন্মায়, যখন “না জানা”-র সঙ্গে কল্পনা বা ভুল-আবরণ (misapprehension) যুক্ত হয়। তাই শুধু অপ্রত্যক্ষতা (absence) দায়ী নয়, বরং অজ্ঞতার ইতিবাচক দিক (ভুল জ্ঞান সৃষ্টিকারী শক্তি) আসল কারণ। তাহলে এর কারণ কী? বলা হয়েছে—“অজ্ঞতা, যা আদিকালীন এবং উদ্দেশ্যহীন”। আর অজ্ঞতার কারণ নিয়ে প্রশ্নের কোনো স্থান নেই।